প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলাপচারিতা

Posted On: 19 AUG 2025 11:32AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৯ অগাস্ট, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গতকাল নতুন দিল্লিতে মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মহাকাশ যাত্রার অনন্যতার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যাত্রা যিনি করেন, তার মধ্যে নানাবিধ রূপান্তর ও পরিবর্তন আসে, এ সম্পর্কে তিনি জানতে আগ্রহী। এর উত্তরে শুভাংশু বলেন, মহাকাশের পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি না থাকাটা খুব বড় ফারাক গড়ে দেয়। 

প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, যাত্রার পুরো সময়টায় মহাকাশযানের ভিতরে কি একইভাবে বসে থাকতে হয়, নাকি মহাকাশ যাত্রীরা তাঁদের বসার জায়গা পরিবর্তন করতে পারেন? উত্তরে শুভাংশু জানান, ২৩-২৪ ঘণ্টা একইভাবে থাকতে হয়। মহাকাশে পৌঁছে যাওয়ার পর যাত্রীরা তাঁদের সিট বেল্ট খুলে ক্যাপসুলের ভিতরে ঘোরাফেরা করতে পারেন। 

মহাকাশযানের ভিতরে যথেষ্ট পরিসর থাকে কি না- প্রধানমন্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাবে শুভাংশু বলেন, খুব একটা বড় না হলেও কিছুটা জায়গা থাকে। ফাইটার জেটের ককপিটের থেকে মহাকাশযান স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ কি না, প্রধানমন্ত্রী তা জানতে চাইলে শুভাংশু বলেন, এটি ককপিটের থেকে অনেক ভালো। 

মহাকাশে পৌঁছনোর পর শারীরিক পরিবর্তনের প্রসঙ্গে শুভাংশু বলেন, হৃদযন্ত্রের গতি অনেকটা কমে যায়, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য শরীরকে অনেক সমঝোতা করতে হয়। তবে ৪-৫ দিনের মধ্যেই মহাকাশের পরিবেশের সঙ্গে শরীর নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। পৃথিবীত ফিরে আসার পর একই সমস্যা দেখা দেয়। শরীরকে আবারও নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যার শারীরিক সক্ষমতা যেমনই থাকুক না কেন, হেঁটে-চলে বেড়ানো খুব কঠিন হয়। শুভাংশু নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তিনি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও পৃথিবীতে আসার পর হাঁটতে পারেন নি, এজন্য তাঁকে অপরের সাহায্য নিতে হয়েছে। এক্ষেত্রে মস্তিষ্ককেও নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাকাশ যাত্রার জন্য শুধু শারীরিক প্রশিক্ষণ নেওয়াই যথেষ্ট নয়, এজন্য মানসিক প্রস্তুতিও নিতে হয়। শুভাংশু প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করে বলেন, শরীর ও মাংসপেশী সবল থাকলেও মস্তিষ্ককে নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। 

কোনও মহাকাশ মিশনে সবথেকে বেশি কতটা সময় মহাকাশচারীরা মহাশূন্যে কাটিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই প্রশ্নের উত্তরে শুভাংশু বলেন, বর্তমানে মহাকাশচারীরা টানা ৮ মাস পর্যন্ত মহাকাশে থাকেন। তাঁর সঙ্গী মহাকাশচারীদের কেউ কেউ ডিসেম্বরে পৃথিবীতে ফিরবেন।

শ্রী মোদী মহাকাশ কেন্দ্রে মুগ ও মেথি ফলানো নিয়ে শুভাংশু যে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে প্রশ্ন করেন। শুভাংশু বলেন, মহাকাশে খাদ্য বহন করা এক বড় চ্যালেঞ্জ। মহাকাশযানে জায়গা কম, খাবার বয়ে নিয়ে যাওয়ার খরচও অনেক বেশি। সেজন্য সব থেকে কম জায়গায় কীভাবে সব থেকে বেশি ক্যালরি ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার নিয়ে যাওয়া যায়, তার ওপর জোর দেওয়া হয়। তাঁর পরীক্ষায় দেখা গেছে একটা ছোট্ট থালায় সামান্য একটু জল দিলে ৮ দিনের মধ্যেই অঙ্কুর ফুটে ওঠে। ভারতের অনন্য কৃষি উদ্ভাবন আগামীদিনে মহাকাশচারীদের খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় বিশেষ অবদান রাখবে। এর থেকে পৃথিবীর প্রান্তিক মানুষজনও উপকৃত হবেন বলে শুভাংশু দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 

অন্যান্য দেশের মহাকাশচারীরা ভারতীয় মহাকাশচারীর প্রতি কেমন ব্যবহার করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই প্রশ্নের উত্তরে শুভাংশু বলেন, তিনি যেখানেই গেছেন, সেখানেই মানুষজন উদগ্রীব হয়ে তাঁর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তাঁরা ভারতের মহাকাশ অভিযান সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বিশেষত গগনযান মিশন নিয়ে বহু মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বহু মহাকাশচারী ভারতীয় মহাকাশযানে চড়ে অন্তরীক্ষে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে শুভংশু জানান। 

শুভাংশুকে সবাই অসাধারণ প্রতিভাবান আখ্যা দেন কেন, প্রধানমন্ত্রী এই প্রশ্নের উত্তরে শুভাংশু বিনয়ের সঙ্গে বলেন, মানুষ ভালোবাসে এমনটা বলেন। তাঁর সাফল্যের পিছনে রয়েছে প্রথম ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট এবং পরবর্তীকালে স্পেস পাইলট হিসেবে তাঁর নেওয়া কঠোর প্রশিক্ষণ। স্পেস পাইলট হওয়া ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার থেকে কোনও অংশে কম নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা তাঁকে এই মিশনের জন্য প্রস্তুত হতে প্রভূত সাহায্য করেছেন বলে শুভাংশু জানান। 

তিনি শুভাংশুকে যে ‘হোমওয়ার্ক’ দিয়েছিলেন, তার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। শুভাংশু বলেন, যে কাজ তাঁকে দেওয়া হয়েছিল, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর এই যাত্রা মহাকাশ নিয়ে সচেতনতার সৃষ্টি করেছে। মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করে গোটা টিম নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরেছে- কিন্তু এটা শেষ নয়, এ হল এক সূচনা। শুভাংশু বলেন এই মিশনের উদ্দেশ্যই ছিল, যতটা পারা যায় শেখা এবং সেই শিক্ষাকে প্রয়োজন মতো কাজে লাগানো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত বেশকিছু মহাকাশচারীকে তৈরি করতে চায়, যেকোনও মিশনে যাওয়ার জন্য ৫০-৬০ জন মহাকাশচারী যাতে প্রস্তুত থাকেন, তেমন জায়গায় পৌঁছতে চায় ভারত। এখনও পর্যন্ত খুব কম শিশুই ভবিষ্যতে মহাকাশচারী হতে চায়, কিন্তু শুভাংশুর এই যাত্রা বহু শিশুকে প্রেরণা যোগাবে এবং তাদের মহাকাশের প্রতি আকৃষ্ট করবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেন। 

শুভাংশু তাঁর ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মা যখন মহাকাশে গিয়েছিলেন তখন জাতীয় স্তরে তাঁর তেমন প্রচার না হওয়ায় এর তেমন কোনও প্রভাব জনজীবনে পড়েনি। কিন্তু তাঁর এই মহাকাশযাত্রা এখনকার শিশুদের মনে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। তিনি নিজে ৩ বার সরাসরি শিশুদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তখন একজন শিশু তাঁর কাছে জানতে চেয়েছে, মহাকাশচারী কীভাবে হওয়া যায়। শুভাংশু বলেন, মহাকাশে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে তিনি গর্বিত। এখন তাঁর দায়িত্ব আরো বেশি মানুষকে এই মাইলফলকে পৌঁছতে সাহায্য করা। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সামনে এখন মহাকাশকেন্দ্রিক দুটি বৃহৎ মিশন রয়েছে। একটি হল, নিজস্ব মহাকাশ কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং অপরটি গগনযান মিশন। শুভাংশুর অভিজ্ঞতা দুটি ক্ষেত্রেই বিপুলভাবে কাজে লাগবে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।

শুভাংশু বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে দেশ মহাকাশ ক্ষেত্রের ওপর যে জোর দিয়েছে, তা এক নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। চন্দ্রযান-২ মিশন ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও সরকার ক্রমাগত অর্থের জোগান দিয়ে মহাকাশ কর্মসূচিকে সমর্থন করে গেছে। এর সুবাদেই চন্দ্রযান-৩ মিশনের সাফল্য এসেছে। 

মহাকাশ ক্ষেত্রের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা অর্জনের যে আহ্বান প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে দিয়েছিলেন, তার উল্লেখ করে শুভাংশু বলেন, গগনযান, মহাকাশ কেন্দ্র, চাঁদে অবতরণ- প্রতিটি উপাদানই পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত এবং এক বিশাল উচ্চাকাঙ্খী স্বপ্নের অঙ্গ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত যদি আত্মনির্ভরতার সঙ্গে এই লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য প্রয়াস চালায়, তবে তা সফল হবেই।  

 

SC/SD/NS…


(Release ID: 2157972)