প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

সংসদের ২০২৫-এর বর্ষাকালীন অধিবেশনের সূচনায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 21 JUL 2025 11:47AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২১ জুলাই, ২০২৫

 

নমস্কার বন্ধুরা !

আমি বর্ষাকালীন অধিবেশনে সংবাদ মাধ্যমের সকল সদস্যকে স্বাগত জানাই।

বন্ধুগণ,

বর্ষা সতেজতা এবং সৃষ্টির প্রতিরূপ। এখনও পর্যন্ত পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে আবহাওয়া এগোচ্ছে ভালোভাবেই। কৃষির জন্য ভালো মরশুমের খবর। বৃষ্টি শুধুমাত্র আমাদের কৃষকদের অর্থনীতিতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা নয়, জাতীয় অর্থনীতি, গ্রামীণ অর্থনীতি এমনকি প্রতিটি পরিবারের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ বছর জল সঞ্চয় হয়েছে গত ১০ বছরের তুলনায় ৩ গুণ বেশি, যা আগামীদিনে দেশের অর্থনীতির অনেক বেশি উপকার করবে।

বন্ধুগণ,

এই বর্ষাকালীন অধিবেশন দেশের জন্য প্রভূত গর্বের বিষয়। শুধু এই অধিবেশনই দেশের বিজয়ের এক উদযাপন। যখন আমি বলছি এই অধিবেশন জাতীয় গর্ব এবং বিজয় উদযাপন, তার বড় কারণ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্চিত পতাকার উন্মোচন- প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য প্রভূত গর্বের মুহূর্ত। এই সফল যাত্রা দেশকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের জন্য নতুন করে উৎসাহ এবং উত্তেজনায় ভরিয়ে দিয়েছে। সমগ্র সংসদ লোকসভা এবং রাজ্যসভা- দুইই- দেশের সব নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে এক স্বরে এই সাফল্যকে উদযাপন করবে। এই একত্রে অভিনন্দন ভারতের আগামী মহাকাশ অভিযান যার লক্ষ্য আরও উঁচুতে ওঠা, তাতে অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহ জোগাবে।

বন্ধুগণ,

বর্ষাকালীন অধিবেশন নিশ্চিতভাবেই বিজয়ের উদযাপন। সমগ্র বিশ্ব ভারতের সামরিক সক্ষমতা শক্তির সাক্ষী থেকেছে। অপারেশন সিন্দুরের সময় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী তাদের উদ্দেশ্য ১০০ শতাংশ সফল করতে পেরেছে। মাত্র ২২ মিনিটে এই অভিযানে শত্রুসীমানার ভিতরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত করেছে। বিহারে একটি অনুষ্ঠানের সময় আমি এটা ঘোষণা করেছিলাম এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনী খুব কম সময়ের মধ্যে তা রূপায়ণ করে। আমাদের ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ সামরিক শক্তির নতুন মুখ বিশ্বের নজর কেড়েছে। এখন যখন আমি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে দেখা করি, তখন ভারতে তৈরি দেশজ প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের প্রতি আগ্রহ দেখতে পাই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে যখন সংসদ এক সুরে এই অধিবেশনের সময়ে বিজয় বার্তা ঘোষণা করে, তখন তা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আরও শক্তিশালী এবং অনুপ্রাণিত করে তোলে। এটি দেশের প্রেরণা শক্তি হিসেবে কাজ করে এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণা, উদ্ভাবন এবং উৎপাদনের বৃদ্ধি ঘটায়। ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আরও গতি পাবে, আমাদের যুব সমাজের জন্য নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করবে।

বন্ধুগণ,

এই দশককে এমন একটা সময় বলে বর্ণনা করা যায় যখন শান্তি এবং সমৃদ্ধি হাতে হাত ধরে এগোচ্ছে। আমরা প্রতি পদক্ষেপে উন্নতি লক্ষ্য করছি। দেশ স্বাধীনতা পাওয়া থেকে নানা ধরনের হিংসার শিকার হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে- সে সন্ত্রাসবাদ হোক অথবা নকশালবাদ। এইসব কিছু কিছু বিষয় আগে হয়েছে, আবার কিছু হয়েছে পরে। তবে বর্তমানে নকশালবাদ এবং মাওবাদের প্রভাব দ্রুত কমছে। মাওবাদ এবং নকশালবাদের শিকড় উৎপাটনের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী দ্রুত গতিতে সাফল্যের দিকে এগোচ্ছে এবং নতুন আত্মবিশ্বাস নিয়ে। আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি দেশের কয়েকশো জেলা যা একদা নকশাল প্রভাবের কবলে ছিল তারা এখন মুক্তির শ্বাস নিচ্ছে। আমার একটি বিষয়ে গর্ব হয় যে আমাদের সংবিধান বোমা, বন্দুক এবং পিস্তলের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছে- আমাদের সংবিধান বিজয়ী হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, এক সময় যে অঞ্চল রেড করিডর হিসেবে চিহ্নিত ছিল, সেগুলি এখন সবুজ উন্নয়নের এলাকায় রূপান্তরিত হচ্ছে, দেশের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক হিসেবে।

বন্ধুগণ,

একের পর এক এমন ঘটনা সংসদের প্রত্যেক মাননীয় সদস্য যাঁরা দেশের কল্যাণে সেবার জন্য এই ভবনে প্রবেশ করেছেন তাঁদের কাছে গর্বের মুহূর্ত। এবং সংসদের এই অধিবেশনে সমগ্র দেশ শুনবে গর্বের কাহিনী- সংসদের প্রত্যেক সদস্য এবং প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের থেকে।

বন্ধুগণ,

যখন আপনারা ২০১৪ সালে আমাদের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করেছিলেন, দেশ সে সময় এমন পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল যখন তাকে ৫টি ভঙ্গুর অর্থনীতি হিসেবে দেখা হত। ২০১৪-র আগে বিশ্ব অর্থনীতিতে আমাদের স্থান ছিল দশম। আজ ভারত দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে ওঠার লক্ষ্যে। বর্তমানে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্রমুক্ত করা প্রশংসিত হচ্ছে একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের দ্বারা। ২০১৪-র আগে দেশে এমন একটা সময় ছিল যখন মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ২ অঙ্কে। বর্তমানে ২ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির হার সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তি এবং স্বাচ্ছন্দ্য এনেছে। মুদ্রাস্ফীতির নিম্নহারের সঙ্গে উচ্চহারে বৃদ্ধি স্বাস্থ্যকর এবং সমৃদ্ধ উন্নয়ন যাত্রার প্রতিফলন ঘটায়।

বন্ধুগণ,

বিশ্ব এখন দেখছে এবং স্বীকার করছে ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং ইউপিআই-এর মাধ্যমে ভারতের নতুন সক্ষমতা যা যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্বের আগ্রহ সৃষ্টি করছে। ইউপিআই ফিনটেক ওয়ার্ল্ডে নিজের জন্য একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি করতে পেরেছে। রিয়েল টাইম ডিজিটাল লেনদেনে ভারত এখন বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

বন্ধুগণ,

সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের বিশ্ব সম্মেলন হল যেখানে ভারত একটি বড় মাইল ফলক অর্জন করেছে। আইএলও অনুযায়ী ভারতের ৯০ কোটির বেশি মানুষ এখন সামাজিক সুরক্ষার আওতায়- একটা বড়সড় সাফল্য এটি। একইরকমভাবে ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন (ডাব্লুএইচও) ভারতকে ট্র্যাকোমা মুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে- যা একটি চোখের রোগ, সাধারণত দেখা যায় বর্ষা কালে। জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ভারতের জন্য এটা আরও একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

বন্ধুগণ,

পহেলগাঁও-এ নৃশংস হত্যা, অত্যাচার এবং গণসংহার সমগ্র বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। নজর ঘুরে গেছে সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের চক্রীদের দিকে। ওই সময় দলীয় স্বার্থ সরিয়ে রেখে জাতীয় স্বার্থে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এবং রাজ্যের প্রতিনিধিরা বিশ্বের নানা দেশে ঘুরে সারা বিশ্বের সামনে সন্ত্রাসবাদের আতুঁড়ঘর পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দিতে সফল অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমি সংসদের এবং রাজনৈতিক দলগুলির সেইসব সদস্যদের অভিনন্দন জানাতে চাই জাতীয় স্বার্থে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার জন্য। তাঁদের প্রয়াস দেশে একটি ইতিবাচক আবহাওয়া তৈরি করেছে। বিশ্ব তার দরজা খুলে দিয়েছে ভারতের কথা শোনার জন্য এবং তার পরিপ্রেক্ষিতটি বোঝার জন্য। এর জন্য সংসদ এবং রাজনৈতিক দলগুলির সদস্যদের অভিনন্দন জানানোর সুযোগ হয়েছে বলে আমি মনে করি।

বন্ধুগণ,

আমরা জানি কীভাবে একতার বার্তা এবং ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠ দেশকে বিশাল উৎসাহে ভরিয়ে দিয়েছে। বিজয়ের এই উদযাপন একই মনোভাব নিয়ে প্রতিফলিত হবে বর্ষাকালীন অধিবেশনে- প্রশংসিত হবে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি, দেশের সক্ষমতাকে গৌরবান্বিত করে তোলা হবে এবং ১৪০ কোটি ভারতীয়ের জন্য অনুপ্রেরণার নতুন উৎস হিসেবে কাজ করবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আমরা সকলে একসঙ্গে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে আমাদের প্রয়াসকে শক্তিশালী করবো এবং সশস্ত্র বাহিনীর শক্তির প্রশংসা করবো। আজ দেশের মানুষকে  এবং সব রাজনৈতিক দলকে আমি নিশ্চিতভাবে এটা বলতে চাই যে দেশ ঐক্যের শক্তি এবং ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বরের ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করেছে। সংসদের মাননীয় সদস্যরা সভাতেও এই মনোভাবকে আরও শক্তিশালী করুন এবং এগিয়ে নিয়ে চলুন। আমি বাস্তবে এটা বুঝি যে রাজনৈতিক দলগুলি ভিন্ন ভিন্ন- প্রত্যেকের  নিজস্ব কর্মসূচি আছে, নিজস্ব ভূমিকা আছে। কিন্তু আমি এই সত্যটাও মানি : যে মন দলীয় স্বার্থ নিয়ে এক হতে পারে না, জাতীয় স্বার্থে সেই মনই এক হতে পারে। এই মনোভাব নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিল- যা দেশের উন্নয়নের যাত্রাকে শক্তিশালী করবে, দেশের সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করবে এবং নাগরিকদের ক্ষমতায়ন ঘটাবে, তা এই বর্ষাকালীন অধিবেশনে প্রস্তাবিত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি সভা বিস্তারিত আলোচনা করে সেগুলি পাশ করবে।

সকল মাননীয় সংসদ সদস্যকে অর্থবহ এবং গঠনমূলক বিতর্কের জন্য আমার শুভেচ্ছা।

অনেক ধন্যবাদ !

প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি দিয়েছেন হিন্দিতে।


SC/AP/NS


(Release ID: 2146422)