রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়
azadi ka amrit mahotsav

৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু-র দেশবাসীর প্রতি ভাষণ

Posted On: 14 AUG 2024 7:37PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, অগাস্ট ১৪, ২০২৪

 

স্বাধীনতা দিবস প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান মাননীয়া রাষ্ট্রপতি শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মু।

১.    দেশজুড়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন,  লালকেল্লা, রাজ্যগুলির রাজধানী অথবা স্থানীয় প্রতিবেশী, যেখানেই হোক না কেন, এই উপলক্ষে তিরঙ্গার উত্তোলন প্রত্যক্ষ করা সবসময়েই আমাদের হৃদয়কে রোমাঞ্চিত করে। ১৪০ কোটির বেশি দেশবাসীর সঙ্গে আমাদের এই মহান দেশের আনন্দের অংশীদার হওয়ার বহিঃপ্রকাশ হল, এই উদযাপন। আমাদের পরিবারের সঙ্গে আমরা যেমন বিভিন্ন উৎসব উদযাপন করি, তেমনই আমরা পরিবার ও নাগরিকদের সঙ্গে মিলে স্বাধীনতা দিবস ও প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করি।

২.    শ্রীমতি মুর্মু বলেন, ১৫ অগাস্ট গোটা দেশ এবং বিদেশেও ভারতীয়রা পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অংশ নেন, দেশাত্মবোধক গান করেন এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। ছোট ছোট শিশুরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। যখন আমরা আমাদের এই মহান দেশ  এবং নাগরিক হিসেবে গর্বিত হওয়ার কথা তাদের বলতে শুনি, তখন আমরা আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতিধ্বনি শুনতে পাই। তখন আমরা উপলব্ধি করতে পারি, আমরা এক শৃঙ্খলের অংশ, যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারীদের স্বপ্ন এবং সেইসব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, যা আগামী দিনগুলিতে পূর্ণ গৌরবের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হবে।

৩.    রাষ্ট্রপতি বলেন, ইতিহাসের এই শৃঙ্খলের যোগসূত্র হিসেবে আমরা গর্বিত। এটি আমাদের সেইসব দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন আমাদের দেশ বিদেশী শাসনে ছিল। দেশপ্রেমিক এবং নির্ভীক সন্তানরা প্রভূত ঝুঁকি নিয়েছিলেন এবং জীবন বলিদান করেছিলেন। তাঁদের আমরা কুর্নিশ জানাই। তাঁদের নিরলস শ্রম শত শত বছরের জড়তা থেকে ভারত-আত্মাকে জাগরিত করেছিল। নানা ধরনের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ, কয়েক প্রজন্ম ধরে মহান নেতাদের ছোঁয়া এক নতুন অনুভূতি এনে দিয়েছিল। বৈচিত্র্যময় পরম্পরাকে একত্রিত করা এবং জাতির জনক ও আমাদের ধ্রুবতারা মহাত্মা গান্ধীর মাধ্যমে তার প্রকাশ ঘটেছিল।

৪.    এছাড়া সর্দার প্যাটেল, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বাবাসাহেব আম্বেডকর, ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ এবং আরও অনেক মহান নেতার নাম উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, এটি ছিল দেশজোড়া আন্দোলন, যাতে অংশ নিয়েছিলেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ। আদিবাসীদের মধ্যে ছিলেন, তিলকা মাঞ্জি, বিরসা মুন্ডা, লক্ষ্মণ নায়েক এবং ফুলো-ঝানো। এছাড়া, আরও অনেকে ছিলেন, যাঁরা আত্মত্যাগ করেছিলেন। ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্ম জয়ন্তীকে জনজাতীয় গৌরব দিবস হিসেবে উদযাপন করছি আমরা। আগামী বছর তাঁর ১৫০তম জন্ম বার্ষিকী আমাদের জাতীয় পুনর্জাগরণে তাঁর অবদানকে আরও একবার সম্মান প্রদর্শনের সুযোগ এনে দেবে।

৫. দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, আজ ১৪ অগাস্ট, দেশে বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস উদযাপিত হচ্ছে,  যা আমাদের দেশ ভাগের বিভীষিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। একটি মহান দেশকে বিভাজিত করা হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ মানুষকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়ে ছিলেন। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের একদিন আগে আমরা সেই বিভীষিকাময় ঘটনার কথা স্মরণ করি এবং যাঁরা বিভাজনের শিকার হয়েছিলেন, সেইসব পরিবারের পাশে দাঁড়াই।

৬. সংবিধানের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনের কথা উল্লেখ করে শ্রীমতি মুর্মু বলেন, নতুন স্বাধীন ভারতের যাত্রাপথ বাধাবিঘ্নহীন ছিল না। ন্যায়, সাম্য, স্বাধীনতা এবং সৌভ্রাতৃত্ব – সংবিধানের এই আদর্শের উপর ভর করে আমরা ভারতকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে যথার্থ স্থান দখলের লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে চলেছি।

৭.     এই বছর দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, প্রায় ৯৭ কোটি ভোটার তাঁদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। রাষ্ট্রপতির মতে, এটি একটি ঐতিহাসিক রেকর্ড, যা মানব সমাজে সবচেয়ে বেশি ভোটারের অংশগ্রহণের নজির তৈরি করেছে। এই ব্যাপক আকারে নির্বাচন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানান তিনি।  প্রবল গরম উপেক্ষা করে এবং ভোটারদের সাহায্য করার কাজে নিযুক্ত সমস্ত আধিকারিক ও নিরাপত্তা কর্মীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।  রাষ্ট্রপতি বলেন, বিপুল সংখ্যক নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগ আমাদের গণতান্ত্রিক আদর্শকে মজবুত করেছে। ভারতের এই সফল নির্বাচন বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিকে মজবুত করেছে।


৮.    দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ২০২১ থেকে ২০২৪, ভারত বিশ্বের দ্রুততম আর্থিক বিকাশশীল দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে। বার্ষিক  অগ্রগতির গড় হার দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশ। এটি শুধুমাত্র মানুষের হাতে আরও অর্থ জোগানের সংস্থান করেনি, সেই সঙ্গে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে। যাঁরা দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করছেন, তাঁদের সাহায্যের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাই করা হচ্ছে না, পাশাপাশি তাঁদের দারিদ্র মুক্ত করার চেষ্টাও চলছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন,  কোভিড ১৯ -এর গোড়ার পর্বে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা চালু করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে এখনও দেশের প্রায় ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে যাঁরা সাম্প্রতিককালে দারিদ্রের কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন, তাঁদের আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হচ্ছে না।

৯.    শ্রীমতি মুর্মু বলেন, এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে উঠে এসেছে এবং আমরা খুব শীঘ্রই বিশ্বের তিনটি শীর্ষ অর্থনীতির দেশের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠতে চলেছি। কৃষক এবং শ্রমিকদের নিরলস কঠোর শ্রম, পরিকল্পনা রচয়িতা ও সম্পদ সৃষ্টিকারীদের দূরদর্শিতা এবং নেতৃত্বের দূরদৃষ্টির জন্যই এটি সম্ভব হয়েছে।

১০.    কৃষকদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমাদের অন্নদাতা কৃষকরা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কৃষি উৎপাদন বজায় রেখেছেন। এর ফলে, কৃষিক্ষেত্রে ভারতকে স্বনির্ভর করার ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন এবং আমাদের দেশবাসীর জন্য খাদ্যের সংস্থান করছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যাপক গতি এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেন, কৌশলী পরিকল্পনা এবং যথার্থ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার ফলে সড়ক ও মহাসড়ক, রেল এবং বন্দরের সম্প্রসারণ ঘটেছে। আগামী দিনে প্রযুক্তির ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে সরকার সেমিকন্ডাক্টর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্রকে তুলে ধরছে, যা স্টার্টআপ-এর বিকাশে গতির সঞ্চার করছে। এর ফলে, ভারত লগ্নির গন্তব্যের ক্ষেত্রে ক্রমশ আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, ব্যাপক স্বচ্ছতার ফলে ব্যাঙ্কিং এবং আর্থিক ক্ষেত্রে আরও বেশি দক্ষতা এসেছে। এইসব ব্যবস্থার ফলে আগামী প্রজন্মের জন্য আর্থিক সংস্কার ও আর্থিক সমৃদ্ধির পথ তৈরি হচ্ছে, যা ভারতকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করবে।

১১.    রাষ্ট্রপতি বলেন, দ্রুত এবং সামগ্রিক অগ্রগতির ফলে ভারত এখন আন্তর্জাতিক স্তরে এক বিশেষ সমীহ আদায় করে নিয়েছে। জি২০ সভাপতিত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভারত এখন গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। আন্তর্জাতিক শান্তি এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারত প্রভাববিস্তারকারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বলে মন্তব্য করেন শ্রীমতি মুর্মু।

১২. তাঁর প্রিয় দেশবাসীকে সম্বোধন করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের সংবিধান প্রণেতা ডঃ বি আর আম্বেদকরের কথা আমাদের মনে রাখা উচিৎ। আম্বেদকর যথার্থই বলেছিলেন, “আমাদের উচিৎ, রাজনৈতিক গণতন্ত্রকে সামাজিক গণতন্ত্রে পরিণত করা। সামাজিক গণতন্ত্র ভিত্তি না হয়ে উঠলে রাজনৈতিক গণতন্ত্র স্থায়ী হতে পারে না”। রাজনৈতিক গণতন্ত্র যেভাবে বিকশিত হয়েছে, তা সামাজিক গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়ে ওঠার প্রমাণ দেয় বলে রাষ্ট্রপতি মনে করেন। তিনি বলেন, সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তির মানসিকতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বৈচিত্র্য এবং বহুত্ববাদ বজায় রেখে আমরা ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি হিসেবে এগিয়ে চলেছি। অন্তর্ভুক্তির প্রণালী হিসেবে ইতিবাচক পদক্ষেপ শক্তিশালী হওয়া দরকার। রাষ্ট্রপতি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে, আমাদের মতো বিশাল দেশে যেসব প্রবণতা সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসের নাম করে বিভেদ আনতে চায়, তাদের পরিহার করা উচিৎ। 

১৩. সামাজিক ন্যায়বিচার সরকারের অন্যতম সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে তিনি সমাজের তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর কল্যাণে একের পর এক নজিরবিহীর উদ্যোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। উদাহরণ-স্বরূপ বলা যেতে পারে, প্রান্তিক মানুষের কাছে সরাসরি আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রধানমন্ত্রী সামাজিক উত্থান এবং রোজগার আধারিত জনকল্যাণ, অর্থাৎ, পিএম সুরজ, কিংবা প্রধানমন্ত্রী জনজাতি আদিবাসী ন্যায় মহাঅভিযান বা পিএম জনমন, যা বিশেষভাবে সঙ্কটাপন্ন আদিবাসী গোষ্ঠী বা পিভিটিজি-র আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের একটি জনআন্দোলন হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন যে, ন্যাশনাল অ্যাকশন ফর মেকানাইজড্‌ স্যানিটেশন ইকো সিস্টেম বা নমস্তে প্রকল্প নিশ্চিত করবে, যাতে কোনও সাফাই কর্মীকে ব্যক্তিগতভাবে স্বহস্তে পয়ঃপ্রণালী কিংবা সেপ্টিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার কাজ না করতে হয়। 

১৪. রাষ্ট্রপতি মনে করেন, প্রসারিত অর্থে ‘ন্যায় বিচার’ শব্দটির মধ্যে বিবিধ সামাজিক বিষয় জড়িয়ে থাকে। তার মধ্যে দুটি বিষয়ের উপর তিনি জোর দেন – লিঙ্গসাম্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন। 

১৫. রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাজে মহিলাদের শুধুমাত্র সমানই নয়, এমনকি সমানের চেয়েও বেশি বলে ভাবা হয়। কিন্তু, বছরের পর বছর ধরে প্রচলিত নানা রীতিনীতির জেরে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সরকার মহিলাদের কল্যাণ ও ক্ষমতায়নে সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। বিগত দশকে এই লক্ষ্যে বাজেট বরাদ্দ তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। শ্রম শক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণও ঊর্ধ্বমুখী। রাষ্ট্রপতি বলেন, এক্ষেত্রে সবচেয়ে সন্তোষজনক প্রবণতাটি হ’ল – জন্মের সময় লিঙ্গানুপাতে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন। মহিলাদের অগ্রাধিকারের কেন্দ্রে রেখে একের পর এক বিশেষ বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম মহিলাদের প্রকৃত ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রণীত। 

১৬. জলবায়ু পরিবর্তন অবশ্যই বাস্তব একটি সমস্যা বলে রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলির কাছে এই পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিমুখ পরিমার্জন করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু, ভারত এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই প্রত্যাশার চেয়েও অগ্রগতি করেছি। বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়ঙ্করতম প্রভাব থেকে আমাদের বাসগ্রহকে রক্ষা করার যে লড়াইয়ে মানবসভ্যতা সামিল, তাতে ভারত রয়েছে পুরোভাগে। নিজেদের জীবনশৈলীতে সামান্য অথচ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় অবদান রাখতে রাষ্ট্রপতি সকলকে অনুরোধ করেন। 

১৭. ন্যায়বিচারের প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি সর্বাগ্রে উল্লেখ করেন, এ বছরের জুলাইয়ে কার্যকর হওয়া ভারতীয় ন্যায় সংহিতা প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ঔপনিবেশিক আমলের আরও একটি চিহ্ন মুছে ফেলেছে ভারত। নতুন বিধি কেবলমাত্র দোষীর শাস্তি বিধানে নয়, ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। এই পরিবর্তন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য বলে রাষ্ট্রপতি মনে করেন। 

১৮. তাঁর প্রিয় দেশবাসীকে সম্বোধন করে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগে এই ২৫ বছরের অমৃতকালের দিশা স্থির করার দায়িত্ব আজকের তরুণ প্রজন্মের। তাঁদের শক্তি ও উৎসাহকে ভিত্তি করে দেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। তরুণ প্রজন্মের মানসিক প্রেক্ষাপটকে পরিমার্জিত করে তুলে অতীতের ইতিবাচক অংশটুকু গ্রহণ এবং একই সঙ্গে আধুনিক মননে ঋদ্ধ করা আমাদের অগ্রাধিকার। এই লক্ষ্যে ২০২০ সালে সূচিত জাতীয় শিক্ষা নীতি ইতিমধ্যেই উৎসাহব্যঞ্জক প্রবণতা স্পষ্ট করে তুলেছে।

১৯. তরুণ প্রজন্মের প্রতিভার যথাযথ বিকাশে সরকার দক্ষতা বিকাশ, কর্মসংস্থান এবং আরও নানা সুযোগ-সুবিধার সংস্থানে উদ্যোগী বলে রাষ্ট্রপতি জানান। তিনি বলেন, কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বিকাশের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ৫টি প্রকল্পের সমাহার আগামী পাঁচ বছরে ৪.১ কোটি তরুণ-তরুণীকে উপকৃত করবে। সরকারের নতুন একটি উদ্যোগের অঙ্গ হিসেবে ১ কোটি তরুণ-তরুণী দেশের শীর্ষ স্থানীয় বাণিজ্য সংস্থাগুলিতে আগামী পাঁচ বছর প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। এইসব উদ্যোগ বিকশিত ভারত গড়ে তোলার দিশায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। 

২০. ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জ্ঞানান্বেষণের পাশাপাশি, মানবতা সমৃদ্ধ প্রগতির প্রকৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলে রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন। উদাহরণ-স্বরূপ তিনি বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগে আমাদের সাফল্য এখন অন্য দেশগুলির কাছে অনুসরণীয় হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মহাকাশ অভিযানের প্রশ্নে নজিরবিহীনভাবে এগিয়েছে ভারত। সকলের সঙ্গে তিনিও আগামী বছর গগনযান অভিযানের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। এর সুবাদে ভারতের প্রথম মানবারোহী মহাকাশ যান মহাকাশে নিয়ে যাবে ভারতীয় মহাকাশচারীদের।

২১. রাষ্ট্রপতি বলেন, খেলাধূলা হ’ল এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে দেশ বিগত দশকে অসাধারণ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়েছে। সরকার ক্রীড়া পরিকাঠামোর বিকাশে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলি সঠিকভাবে চিহ্নিত করায় তার সুফলও মিলছে। সম্প্রতি প্যারিস অলিম্পিক্সে নিজেদের সবটুকু উজার করে দিয়েছেন ভারতের ক্রীড়াবিদরা। তাঁদের নিষ্ঠা এবং কঠোর পরিশ্রমকে রাষ্ট্রপতি সাধুবাদ জানান। তাঁরা যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করেছেন বলে রাষ্ট্রপতি মনে করেন। ক্রিকেটে ভারত টি-২০ বিশ্বকাপ জয় এবং তার জেরে দেশের মানুষের আনন্দোৎসবের কথাও রাষ্ট্রপতির ভাষণে উঠে আসে। তিনি বলেন, দাবায় দেশকে গর্বিত করেছেন আমাদের প্রতিভাসম্পন্ন দাবারুরা। বলা হচ্ছে যে, দাবায় ভারতীয় যুগ শুরু হয়েছে। ব্যাডমিন্টন, টেনিস এবং অন্য খেলাতেও দেশের যুবক-যুবতীরা বিশ্বের আঙ্গিনায় উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন। তাঁদের এই সাফল্য পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। 

২২. তাঁর প্রিয় দেশবাসীকে সম্বোধন করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারত স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য প্রস্তুত। আরও একবার সকলকে শুভেচ্ছা জানান তিনি। বিশেষত, সশস্ত্র বাহিনীর সেই সাহসী জওয়ানদের, যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করছেন। দেশ জুড়ে যাঁরা নজরদারির কাজে সামিল, সেই পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীদের রাষ্ট্রপতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি কৃতজ্ঞতা জানান, বিচার বিভাগ, প্রশাসন এবং আমাদের দূতাবাস কর্মীদের। তিনি শুভেচ্ছা জানান, বিদেশে বসবাসরত ভারতীয়দের: বলেন যে, তাঁরা আমাদের পরিবারের অংশ, সাফল্যের নিদর্শন রেখে আমাদের গর্বিত করে চলেছেন তাঁরা। তাঁরা ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি। 

রাষ্ট্রপতি আরও একবার দেশবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান!

 


(Release ID: 2045401) Visitor Counter : 105