রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়
azadi ka amrit mahotsav g20-india-2023

সংসদে মাননীয়া রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণ

Posted On: 27 JUN 2024 12:13PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৭ জুন, ২০২৪ 

 

মাননীয় সদস্যগণ,
১) ১৮তম লোকসভায় নবনির্বাচিত সদস্যদের আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।
দেশবাসীর আস্থা ভোটে জয়লাভ করে আপনারা এখানে এসেছেন। 
খুব কম সংখ্যক মানুষই দেশ ও সাধারণ মানুষকে সেবা করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশ সর্বাগ্রে – এই মন্ত্রকে সামনে রেখে আপনারা আপনাদের দায়দায়িত্ব পালন করবেন এবং ১৪০ কোটি ভারতবাসী আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের মাধ্যম হয়ে উঠবেন।
লোকসভার অধ্যক্ষ হিসেবে শ্রী ওম বিড়লাজি যে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছেন, তার জন্য তাঁকে শুভেচ্ছা জানাই। 
তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমার বিশ্বাস, দেশের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে তিনি এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। 


মাননীয় সদস্যগণ,
২) কোটি কোটি ভারতবাসীর হয়ে আমি আজ নির্বাচন কমিশনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এটি বিশ্বের বৃহত্তম নির্বাচন। 
প্রায় ৬৪ কোটি ভোটার উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মহিলারাও বিপুল সংখ্যায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। 
এই নির্বাচনে জম্মু ও কাশ্মীরে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক দিক লক্ষ্য করা গেছে।
বহু দশক পর কাশ্মীর উপত্যকার মানুষ রেকর্ড সংখ্যায় ভোট দিয়েছেন।
গত চার দশকে কাশ্মীরে ভোটদানের হার ছিল অত্যন্ত কম।
এই প্রথম লোকসভা নির্বাচনে বাড়ি থেকে ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কর্মীদের কাজের প্রশংসা করছি এবং তাঁদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।


মাননীয় সদস্যগণ,
৩) ২০২৪ – এর লোকসভা নির্বাচন নিয়ে গোটা বিশ্বে আলোচনা হচ্ছে। 
গোটা বিশ্বের মানুষ দেখেছেন, ভারতবাসী সংখ্যা গরিষ্ঠতার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সরকারকে পর পর তিনবার নির্বাচিত করেছেন। 
দীর্ঘ ছয় দশক পর এই ঘটনা ঘটেছে।
এই নির্বাচন নীতি, ইচ্ছা, নিষ্ঠা ও সিদ্ধান্তের উপর আস্থা রেখেছে। 
শক্তিশালী সরকারের উপর আস্থা। 
সুশাসন, স্থায়িত্ব ও ধারাবাহিকতার উপর আস্থা।
সততা ও কঠোর শ্রমের উপর আস্থা।
সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির উপর আস্থা।
সরকারের গ্যারান্টির উপর আস্থা।
বিকশিত ভারতের অঙ্গীকারের উপর আস্থা।


মাননীয় সদস্যগণ,
৪) ১৮তম লোকসভা নানা দিক থেকে ঐতিহাসিক।
ভারতের সংবিধান প্রণয়নের ৭৫তম বর্ষের সাক্ষী থাকবে এই লোকসভা।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জনকল্যাণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই লোকসভা এক নতুন অধ্যায় তৈরি করবে।
আসন্ন অধিবেশনে আমার সরকার প্রথম বাজেট পেশ করবে।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক এবং সামাজিক সিদ্ধান্তের পাশাপাশি এই বাজেটে বহু ঐতিহাসিক পদক্ষেপ দেখা যাবে।
ভারতের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে দ্রুত উন্নয়ন এবং সংস্কারে গতি আনা হবে। 
আমরা বিশ্বাস করি, রাজ্যগুলির উন্নয়ন হলেই দেশের উন্নতি হবে।


মাননীয় সদস্যগণ,
৫) সংস্কার, কাজ কর এবং পরিবর্তন কর – এই অঙ্গীকার ভারতকে আজ বিশ্বের দ্রুততম বিকাশশীল অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত করেছে।
গত ১০ বছরে ভারত ১১তম থেকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
২০২১ থেকে ২০২৪ – এই তিন বছরে ভারতের বার্ষিক অগ্রগতির হার দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশ।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আমরা ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অতিমারীর মুখোমুখী হয়েছি।
বিশ্ব জুড়ে অতিমারী এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাত সত্ত্বেও ভারতের অগ্রগতি বজায় রয়েছে।
বিশ্বের অগ্রগতিতে আজ ভারতের একক অবদান ১৫ শতাংশ।
আমার সরকার এখন ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আর্থিক শক্তির দেশে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।


মাননীয় সদস্যগণ,
৬) আমরা সরকার অর্থনীতির তিনটি স্তম্ভের উপর সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। এগুলি হ’ল – উৎপাদন, পরিষেবা এবং কৃষি।
বিভিন্ন উৎসাহভাতা প্রকল্প এবং সহজে ব্যবসা করার সুবিধাদানের ফলে লগ্নি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেড়েছে।
সেমিকন্ডাক্টর বা সৌরশক্তি, বৈদ্যুতিক যান বা ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, গ্রিন হাইড্রোজেন বা ব্যাটারি, এয়ারক্র্যাফট বা যুদ্ধ বিমান – সমস্ত ক্ষেত্রেই ভারত দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।
আমার সরকার পণ্য চলাচলের খরচ কমানোর পাশাপাশি, পরিষেবা ক্ষেত্রকেও শক্তিশালী করছে।
তথ্য প্রযুক্তি থেকে পর্যটন, স্বাস্থ্য থেকে সুস্থতা – সমস্ত ক্ষেত্রেই ভারত আজ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছে।
এর ফলে, বিপুল সংখ্যক নতুন কর্মসংস্থান এবং স্বনিযুক্তির সুযোগ তৈরি হচ্ছে।


মাননীয় সদস্যগণ,
৭) গত ১০ বছরে আমার সরকার গ্রামীণ অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। 
গ্রামাঞ্চলে কৃষি-ভিত্তিক শিল্প, দুগ্ধ ও মৎস্য-ভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ঘটছে। 
এসব ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমবায়ও গঠন করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র চাষীদের বড় সমস্যা হ’ল, পণ্য মজুত করা।
এই সমস্যার সমাধানে আমরা বিশ্বের বৃহত্তম ধারণক্ষমতাসম্পন্ন মজুত ভান্ডার গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি।
কৃষকদের ছোট ছোট খরচ মেটাতে পিএম কিষাণ সম্মান নিধি যোজনায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বন্টন করা হয়েছে। 
নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি হস্তান্তর করেছে। 


মাননীয় সদস্যগণ,
৮) বর্তমান চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে আজকের ভারতে কৃষি ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
রপ্তানির মাধ্যমে কৃষকদের আয় বাড়ানো এবং স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করছে এবং সেইমতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ডাল ও তৈলবীজের ক্ষেত্রে অন্য দেশের উপর নির্ভরতা কমাতে সরকার কৃষকদের সবরকম সহায়তা করছে। 
পাশাপাশি, প্রাকৃতিক উপায়ে চাষবাস ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ-শৃঙ্খল গড়ে তুলতে আমার সরকার কাজ করে চলেছে। 


মাননীয় সদস্যগণ,
৯) আজকের ভারত শুধুমাত্র বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলাই করছে না, সেইসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের পথও প্রশস্ত করছে। 
বিশ্ব-বন্ধু হিসেবে ভারত বহু আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে। 
জলবায়ু পরিবর্তন থেকে খাদ্য সুরক্ষা, পুষ্টি থেকে ধারাবাহিক চাষবাদ – সবক্ষেত্রেই ভারত প্রয়োজনীয় সমাধানসূত্র বাতলে দিচ্ছে। 
২০২৩ সালকে আমরা আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ হিসেবে উদযাপন করেছি। 
আন্তর্জাতিক যোগ দিবস এখন গোটা দুনিয়ায় উদযাপিত হচ্ছে। 
যোগ ও আয়ুষের বিকাশের মাধ্যমে ভারত এক সুস্বাস্থ্যকর বিশ্ব গড়ে তোলার কাজে সহায়তা করছে।
নির্ধারিত সময়ের আগেই জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন লক্ষ্য পূরণে আমরা সক্ষম হয়েছি।

মাননীয় সদস্যগণ,
১০) পরিবেশ-বান্ধব শিল্পে আমরা বিনিয়োগ বাড়াচ্ছি, যার ফলে এই ক্ষেত্রের কর্মসংস্থানও বাড়ছে।
আমার সরকার আমাদের শহরগুলিকে বিশ্বের সেরা বসবাসযোগ্য স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
দূষণমুক্ত, স্বচ্ছ ও নানা সুযোগ-সুবিধা সহ শহরে বসবাস করা সকল নাগরিকের অধিকারের মধ্যে পড়ে।
গত ১০ বছরে ছোট ছোট শহর ও নগরে বিনিয়োগ নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে। 
অভ্যন্তরীণ উড়ানের ক্ষেত্রে ভারত এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশে পরিণত হয়েছে।
২০১৪ সালের এপ্রিলে ভারতে উড়ান চলাচলের রুট ছিল মাত্র ২০৯টি। ২০২৪ সালের এপ্রিলে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০৫-এ। 
গত ১০ বছরে ২১টি শহরে মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে। 
বন্দে মেট্রোর মতো বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
আমার সরকার ভারতে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গণপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। 


মাননীয় সদস্যগণ,
১১) উন্নত দেশগুলির মতোই ভারত পরিকাঠামো উন্নয়নে পরিবর্তন এনেছে।
পিএম গ্রাম সড়ক যোজনায় গত ১০ বছরে আমার সরকার ৩ লক্ষ ৮০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ করেছে। 
আজ দেশে জাতীয় সড়ক ও এক্সপ্রেসওয়েগুলির সম্প্রসারণ ঘটানো হচ্ছে।
দ্বিগুণ গতিতে জাতীয় সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে।
আমেদাবাদ ও মুম্বাইয়ের মধ্যে উচ্চগতির রেল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার কাজও এগোচ্ছে দ্রুতগতিতে। 
দেশের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বে বুলেট ট্রেন চালু করা যায় কিনা, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা চালাচ্ছে আমার সরকার।
এই প্রথম ব্যাপক মাত্রায় অভ্যন্তরীণ জলপথ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। 
গত ১০ বছরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে চার গুণেরও বেশি বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন ও কর্মসংস্থান সহ সর্বক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আসামে একটি সেমিকন্ডাক্টার প্ল্যান্ট গড়ে তোলা হচ্ছে।
এর ফলে, উত্তর-পূর্বাঞ্চল চিপ – এর প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
গত ১০ বছরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বহু পুরনো সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। 
বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিও হয়েছে।


মাননীয় সদস্যগণ,
১২) মহিলা পরিচালিত উন্নয়নের লক্ষ্যে আমার সরকার নারীর ক্ষমতায়নে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।
লোকসভা ও দেশের বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব ব্যাপক সংখ্যায় বেড়েছে।
নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়মের মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করা হয়েছে।
নারীর আর্থিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে গত এক দশকে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। 
তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে আমার সরকার ৩ কোটি নতুন গৃহ নির্মাণে অনুমোদন দিয়েছে।
এই বাড়িগুলির বেশিরভাগেরই সুবিধাপ্রাপকরা হলেন মহিলা।
গত ১০ বছরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে ১০ কোটি মহিলাকে যুক্ত করা হয়েছে।
৩ কোটি মহিলাকে লাখপতি দিদিতে পরিণত করার লক্ষ্যে আমার সরকার সর্বাত্মক প্রচার শুরু করেছে।
এই লক্ষ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য আর্থিক সহায়তাও বাড়ানো হচ্ছে।
সরকারের লক্ষ্য হ’ল – মহিলাদের দক্ষতার উন্নতি, আয় বৃদ্ধি এবং নারীর সম্মান প্রতিষ্ঠা। 
এই লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে নমো ড্রোন দিদি প্রকল্প।
এই প্রকল্পে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মহিলাদের ড্রোন প্রদান করা হচ্ছে এবং ড্রোন পাইলট হিসেবে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি আমার সরকার কৃষি সখী প্রকল্পও চালু করেছে।
এই প্রকল্পে এ পর্যন্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ৩০ হাজার মহিলাকে কৃষি সখী শংসাপত্র প্রদান করা হয়েছে।
কৃষি সখীদের আধুনিক কৃষি কার্যের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁরা চাষাবাদের আধুনিকীকরণে কৃষকদের সাহায্য করতে পারেন।
মাননীয় সদস্যগণ,
১৩) আমার সরকারের লক্ষ্য হ’ল – মহিলাদের সঞ্চয়কে সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে যাওয়া। 
আমরা সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা সম্পর্কে জানি, যে প্রকল্পে ব্যাঙ্কে জমা রাখা টাকার উপর বালিকাদের সর্বোচ্চ হারে সুদ দেওয়া হয়। 
বিনামূল্যে রেশন এবং কম দামে গ্যাস সিলিন্ডারের মাধ্যমে মহিলারা ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছেন। 
এখন আমার সরকার বিদ্যুৎ বিলকে শূন্যে নামিয়ে আনা এবং বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয়ের সংস্থানের লক্ষ্যে প্রকল্প চালু করেছে।
পিএম সূর্যঘর মুফত বিজলী যোজনার আওতায় বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল বসানো হচ্ছে। 
এই কাজে আমার সরকার পরিবারপিছু ৭৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। 
ইতিমধ্যে ১ কোটিরও বেশি পরিবার এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করেছেন।


মাননীয় সদস্যগণ,
১৪) বিকশিত ভারতের লক্ষ্য পূরণ তখনই সম্ভব, যখন দেশের গরিব, তরুণ, মহিলা ও কৃষকদের ক্ষমতায়ন করা হবে।
এই চারটি স্তম্ভকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার লক্ষ্যে আমার সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করছে।
আমাদের লক্ষ্য হ’ল – সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
একজনও যাতে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই অভিপ্রায় নিয়ে যখন কোনও সরকার কাজ করে, তখন প্রত্যেকেই তাতে উপকৃত হন।
গত ১০ বছরে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫ কোটি দেশবাসীকে দারিদ্র্যসীমার উপরে তুলে আনা হয়েছে।
এদের মধ্যে রয়েছে – তপশিলি জাতি, উপজাতি, অনগ্রসর শ্রেণী এবং সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষজন।
গত ১০ বছরে আমাদের লক্ষ্য ছিল, এঁদের জীবনযাপনের পরিবর্তনে একেবারে শেষতম ব্যক্তি পর্যন্ত সুবিধা পৌঁছে দেওয়া।
পিএম জনমন প্রকল্পে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা আদিবাসী সম্প্রদায়কে উন্নয়নের আওতায় আনতে ২৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে।


মাননীয় সদস্যগণ,
১৫) দেশের শ্রমিকদের সম্মান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁদের কল্যাণ ও ক্ষমতায়নকে আমার সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
আমার সরকার শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিকে সুসংহত করছে।
পিএম স্বনিধি যোজনার সম্প্রসারণ ঘটিয়ে গ্রামাঞ্চল ও আধা-শহরাঞ্চলের পথ বিক্রেতাদের এর আওতায় আনা হয়েছে।


মাননীয় সদস্যগণ,
১৬) বাবাসাহেব ডঃ ভীমরাও আম্বেদকর বিশ্বাস করতেন, যে কোনও সমাজের অগ্রগতি নির্ভর করে সেই সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের উন্নতির উপর। 
গরিবদের ক্ষমতায়ন আমাদের সাফল্যের ভিত্তি হয়ে উঠেছে এবং গত ১০ বছরে দেশের অগ্রগতি ঘটেছে।
করোনা অতিমারীর মতো কঠিন সময়ে পিএম গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হয়েছে।
স্বচ্ছ ভারত মিশন গরিবদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তাঁদের স্বাস্থ্য জাতীয় ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
এই প্রথম দেশের কোটি কোটি গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে।
আয়ুষ্মান ভারত যোজনায় ৫৫ কোটি সুবিধাপ্রাপককে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ দিয়েছে আমার সরকার।
দেশের নানা প্রান্তে ২৫ হাজার জন ঔষধি কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজও দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। 
এছাড়াও, এই ক্ষেত্রে সরকার আরও একটি সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। 
এখন থেকে সত্তরোর্ধ্ব নাগরিকদের আয়ুষ্মান ভারত যোজনার আওতায় আনা হবে এবং তাঁরা নিখরচায় চিকিৎসার সুযোগ পাবেন।


মাননীয় সদস্যগণ,
১৭) বিরূপ মানসিকতা ও সংকীর্ণ স্বার্থ প্রায়ই গণতন্ত্রের মূল চেতনাকে অবদমিত করে।
সংসদীয় ব্যবস্থায় উন্নয়ন যাত্রাতেও তার প্রভাব পড়ে।
কয়েক দশক ধরে থাকা অস্থিতিশীল সরকার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোনও সংস্কারমূলক পরিবর্তন বা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
দেশের মানুষ এখন তাঁদের রায়ের মাধ্যমে এই পরিস্থিতির বদল ঘটিয়েছেন।
গত ১০ বছরে এমন অনেক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশ আজ ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে।
তথাপি, এইসব সংস্কারের বিরোধিতা করা হয়েছে এবং নেতিবাচক মনোভাব ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে।
কিন্তু, কালের পরীক্ষায় সব সংস্কারই উত্তীর্ণ হয়েছে।
১০ বছর আগে ভারতে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিল।
সংস্কারের মাধ্যমে ভারতের ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র এখন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। 
২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি ১.৪ লক্ষ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।
দেশের আর্থিক উন্নয়নে ব্যাঙ্কগুলি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। 
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির এনপিএ কমছে।
আজ স্টেট ব্যাঙ্কের মুনাফা রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে।
আজ এলআইসি অনেক শক্তিশালী হয়েছে।
দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে শক্তি যোগাচ্ছে হ্যাল।
এই প্রথম এপ্রিল মাসে জিএসটি সংগ্রহ ২ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আজ গোটা বিশ্বে ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং ডিজিটাল পেমেন্ট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।


মাননীয় সদস্যগণ,
১৮) শক্তিশালী ভারতের জন্য আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণ একান্ত জরুরি।
এই লক্ষ্যে গত ১০ বছরে আমার সরকার অনেক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।
৪০টিরও বেশি অর্ডিন্যান্স কারখানাকে পুনর্গঠিত করে ৭টি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র এন্টারপ্রাইজে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এর ফলে, সেগুলির ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। 
এ ধরনের সংস্কারের ফলে ভারত এখন ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করছে।
গত এক দশকে আমাদের প্রতিরক্ষা রপ্তানি ১৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ৫০০-রও বেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 
এগুলি শুধুমাত্র ভারতীয় সংস্থাতেই তৈরি করা হচ্ছে। 
চার দশক পর আমার সরকার ‘এক পদ এক পেনশন’ নীতি কার্যকর করেছে। 
এই প্রকল্পে এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি দেওয়া হয়েছে।


মাননীয় সদস্যগণ,
১৯) দেশের তরুণ সম্প্রদায়কে বড় করে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে আমার সরকার।
এই লক্ষ্যে সহায়ক পরিবেশও গড়ে তোলা হচ্ছে।
গত ১০ বছরে বহু বাধা-বিপত্তিকে সরিয়ে তরুণদের স্বার্থে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
শংসাপত্রের প্রত্যয়িতকরণের জন্য তাঁদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হ’ত। এখন সেই ব্যবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখন তরুণরা নিজেই নিজের শংসাপত্রে স্বাক্ষর করতে পারেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘গ্রুপ-সি’ এবং ‘গ্রুপ-ডি’ পদে নিয়োগে ইন্টারভিউ তুলে দেওয়া হয়েছে। 
গত ১০ বছরে ৭টি নতুন আইআইটি, ১৬টি আইআইআইটি, ৭টি আইআইএম, ১৫টি নতুন এইমস্‌, ৩১৫টি মেডিক্যাল কলেজ এবং ৩৯০টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।


মাননীয় সদস্যগণ,
২০) তরুণরা যাতে তাঁদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারেন, সেজন্য সঠিক সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে আমার সরকার।
প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা কিংবা সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরোপুরি স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক কয়েকটি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় অবাধ তদন্তের ব্যাপারে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ এবং দোষীদের কঠোর সাজা দিতে বদ্ধ পরিকর।
অসৎ উপায়ে পরীক্ষা আটকাতে সংসদ কঠোর আইনও প্রণয়ন করেছে। 
পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থা, তাদের কাজকর্ম এবং পরীক্ষা পদ্ধতির সমস্ত ক্ষেত্রে সংস্কার ঘটানোর লক্ষ্যে আমার সরকার কাজ করে চলেছে। 


মাননীয় সদস্যগণ,
২১) দেশ গড়ার কাজে তরুণদের অংশগ্রহণ করাতে আমার সরকার ‘মেরা যুবা ভারত (মাই ভারত)’ প্রচারাভিযান চালাচ্ছে।
এ পর্যন্ত ১.৫ কোটিরও বেশি তরুণ নাম নথিভুক্ত করেছেন।
এই উদ্যোগ তরুণদের মধ্যে নেতৃত্বদানের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং দেশের সেবায় তাঁদের মধ্যে চেতনা গড়ে তোলার বীজ বপণ করবে।
ক্রীড়া ক্ষেত্রেও আমাদের তরুণরা সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে তরুণ ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা রেকর্ড সংখ্যক পদক জয় করেছেন।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্যারিস অলিম্পিক শুরু হতে চলেছে। 
প্যারিস অলিম্পিকে ভারতীয় অ্যাথলিটদের অংশগ্রহণের জন্য আমরা গর্বিত। 
এই সাফল্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থা ২০৩৬ – এ দেশে অলিম্পিক আয়োজনের চেষ্টা চালাচ্ছে। 


মাননীয় সদস্যগণ,
২২) পয়লা জুলাই থেকে দেশে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা চালু হতে চলেছে। 
ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া বহু আইনের পরিবর্তন নিয়ে দশকের পর দশক ধরে আলোচনা হয়েছে। 
কিন্তু, এই আইন পরিবর্তনের সাহস দেখিয়েছে আমার সরকার।
নতুন আইনগুলি বিচার প্রক্রিয়ায় গতি আনবে। 
আমার সরকার শরণার্থীদের সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব প্রদানের কাজ শুরু করেছে। 
এর ফলে, দেশ ভাগের শিকার বিভিন্ন পরিবার মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারবেন।


মাননীয় সদস্যগণ,
২৩) ভবিষ্যৎ নির্মাণের পাশাপাশি, আমার সরকার ভারতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও গরিমা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তৎপর হয়েছে। 
সম্প্রতি নবআঙ্গিকের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এক নতুন অধ্যায় তৈরি হয়েছে।
নালন্দা শুধুমাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, এটি আন্তর্জাতিক জ্ঞানের কেন্দ্র হিসেবে ভারতের গৌরবময় অতীতের সাক্ষ্য বহন করছে।


মাননীয় সদস্যগণ,
২৪) ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি, আমার সরকার উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছে। 
এইসব ঐতিহ্য আমাদের কাছে শুধুমাত্র গর্বের নয়, তপসিলি জাতি, উপজাতি, বঞ্চিত ও সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে সম্মানের প্রতীক হয়ে উঠেছে। 
আমার সরকার জনজাতীয় গৌরব দিবসের মাধ্যমে ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী উদযাপনের সূচনা করেছে। 
আগামী বছর দেশ জুড়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে ভগবান বিরসা মুন্ডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। 
সেইসঙ্গে, দেশ জুড়ে রানি দুর্গাবতীর ৫০০তম জন্মবার্ষিকীও পালন করা হচ্ছে। 
গত মাসে রানি অহল্যাবাঈ হোলকরের ৩০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেশ জুড়ে বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়েছে।


মাননীয় সদস্যগণ,
২৫) আমাদের ঐতিহ্যের মধ্যেই আমাদের সাফল্য নিহিত রয়েছে।
ভারত আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে।
ডিজিটাল পেমেন্টে ভারতের সাফল্য নিয়ে আমাদের গর্বিত হওয়া উচিৎ। 
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযানের অবতরণে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সাফল্য আমাদের গর্বিত করে তুলেছে।
আজ গোটা বিশ্ব গণতন্ত্রের ধাত্রীভূমিকে সম্মান করে।
ভারতীয় গণতন্ত্রের উপর দেশবাসীর পুরোপুরি আস্থা রয়েছে এবং বিভিন্ন নির্বাচিত সংস্থায় তাঁদের সেই পরিপূর্ণ আস্থার প্রকাশ ঘটেছে।
এই গণতন্ত্রকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন।
আমাদের গণতন্ত্রিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করার যে কোনও প্রয়াসের বিরুদ্ধে মিলিতভাবে নিন্দা করা উচিৎ।
আমাদের সকলেরই মনে আছে যে, সেই সময় ব্যালট পেপার লুঠ করা হ’ত। 
নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পবিত্রতা রক্ষায় ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


মাননীয় সদস্যগণ,
২৬) আপনাদের সঙ্গে আমি আমার কিছু উদ্বেগও ভাগ করে নিতে চাই।
যোগাযোগ বিপ্লবের এই যুগে কিছু বিভেদমূলক শক্তি গণতন্ত্রকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে এবং সমাজে বিভাজন তৈরি করছে।
এই শক্তি দেশের মধ্যে যেমন সক্রিয়, তেমনই দেশের বাইরে থেকেও তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
মিথ্যা গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে এইসব শক্তি দেশের মানুষকে বিপদে চালিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এই পরিস্থিতি চলতে দেওয়া যায় না।
আজ প্রতিদিন প্রযুক্তির অগ্রগতি ঘটছে। মানবতার বিরুদ্ধে এর অপব্যবহার অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।
আমাদের দায়িত্ব হ’ল – এই প্রবণতা বন্ধ করা এবং এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় নতুন পথ খুঁজে বের করা।


মাননীয় সদস্যগণ,
২৭) একুশ শতকের তৃতীয় দশকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এক নতুন চেহারা নিচ্ছে। আমার সরকারের প্রয়াসের ফলে বিশ্ব-বন্ধু হিসেবে ভারত গোটা দুনিয়ায় এক নতুন আস্থা তৈরি করছে। 
মানব-কেন্দ্রিক এই দৃষ্টিভঙ্গীর ফলে যে কোনও সঙ্কটে ভারত আজ সবার আগে তৎপর হয়ে ওঠে এবং গ্লোবাল সাউথ – এর শক্তিশালী কন্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। 
জি-২০ সভাপতিত্বকালে ভারত গোটা বিশ্বকে একজোট করেছে।  
প্রতিবেশী সর্বাগ্রে নীতির মাধ্যমে ভারত প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
৯ জুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী ৭টি দেশের রাষ্ট্র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 
এখন ভারতের লক্ষ্য হ’ল – ভারত মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপ আর্থিক করিডর গড়ে তোলা। 


মাননীয় সদস্যগণ,
২৮) আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতের প্রজাতন্ত্রের ৭৫তম বর্ষ সম্পন্ন হতে চলেছে। 
ভারতের সংবিধান প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছে এবং বিগত দশকগুলিতে প্রতিটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। 
সংবিধান চালু হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে এর উপর আঘাত হানা হয়েছে।
আজ ২৭ জুন। ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল, যা সংবিধানের উপর সবচেয়ে বড় এবং অন্ধকারতম অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে।
এতে গোটা দেশের মানুষ রুষ্ঠ হয়েছিলেন।
এই ধরনের অসাংবিধানিক শক্তির বিরুদ্ধে দেশ জয়ী হয়েছিল। কারণ, ভারতের হৃদয়ে নিহিত রয়েছে প্রজাতন্ত্রের পরম্পরা।
আমার সরকার সংবিধানকে শুধুমাত্র দেশ শাসনের মাধ্যম হিসেবে দেখে না, সেইসঙ্গে সংবিধানকে জনসচেতনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলেছে।
এই লক্ষ্য নিয়েই আমার সরকার ২৬ নভেম্বরকে সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।


মাননীয় সদস্যগণ,
২৯) ১৮তম লোকসভায় অনেক নতুন সদস্য এসেছেন, যাঁরা এই সংসদীয় ব্যবস্থার সঙ্গে প্রথমবার যুক্ত হলেন।
আগামী বছরগুলিতে সরকার অনেক সিদ্ধান্ত নেবে, অনেক নীতি প্রণয়ন করবে এবং গোটা বিশ্ব ভারতের সংসদের উপর সাগ্রহে নজর রাখবে।
আমাদের সর্বদাই মনে রাখা প্রয়োজন যে, উন্নত ভারত প্রতিটি নাগরিকের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।
এই অঙ্গীকার পূরণের পথে যাতে কোনও বাধা না আসে, আমাদের প্রত্যেককে তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সংসদের প্রতিটি মুহূর্তের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার হবে এবং মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

মাননীয় সদস্যগণ,
৩০) আমাদের বেদে রয়েছে ‘সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানি’ ।
অর্থাৎ, অভিন্ন ভাবনা ও লক্ষ্য নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। 
এটাই হ’ল সংসদের মূল সারমর্ম।
ভারত যখন তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে, তখন সেই সাফল্যের অংশীদার হবেন আপনিও।
২০৪৭ সালে যখন স্বাধীনতার শততম বর্ষপূর্তি উদযাপন করা হবে, তখন তার কৃতিত্ব দেওয়া হবে এই প্রজন্মকেও।
এই শতাব্দী হ’ল ভারতের শতাব্দী এবং আগামী হাজার হাজার বছর ধরে তা বজায় থাকবে। 
আসুন, কর্তব্য পালনে পুরোপুরি ত্যাগ ও নিষ্ঠা নিয়ে আমরা একজোট হই।
আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা!
আপনাদের ধন্যবাদ,

জয়হিন্দ!
জয় ভারত!


PG/MP/SB



(Release ID: 2029315) Visitor Counter : 89