প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে রুদ্রাক্ষ কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ‘এক বিশ্ব যক্ষ্মা শীর্ষ সম্মেলন’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 24 MAR 2023 2:33PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৪ মার্চ, ২০২৩

 

হর হর মহাদেব।

উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল শ্রীমতী আনন্দিবেন প্যাটেল মহোদয়া, জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথজী, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডাঃ মনসুখ মান্ডব্যজী, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ব্রিজেশ পাঠকজী, বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীগণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্ষেত্রীয় নির্দেশক, উপস্থিত সকল সম্মানীত ব্যক্তিবর্গ, ‘স্টপ টিভি পার্টনারশিপ’ সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!

আমার জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে এবার ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড টিভি সামিট’ বা ‘এক বিশ্ব যক্ষ্মা শীর্ষ সম্মেলন’ আমাদের কাশীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সৌভাগ্যবশত আমি কাশীর সাংসদও। এই কাশী নগরী সেই শাশ্বত ধারা বহন করছে, যা কয়েক হাজার বছর ধরে মানবতার সপক্ষে গ্রহণ করা সমস্ত প্রচেষ্টা এবং পরিশ্রমের সাক্ষী। কাশী এই জীবন দর্শনেরও সাক্ষী যে সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন, যখন সকলে মিলে এর সমাধানের চেষ্টা করেন, তখন নতুন পথ অবশ্যই বেরিয়ে আসে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, যক্ষ্মার মতো মারণ রোগের বিরুদ্ধে আমাদের আন্তর্জাতিক সংকল্পকে কাশী একটি নতুন প্রাণশক্তি যোগাবে। 

আমি ‘এক বিশ্ব যক্ষ্মা শীর্ষ সম্মেলন’ – এ অংশগ্রহণকারী দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাগত সমস্ত অতিথিদেরকেও হৃদয় থেকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

ভারতীয় দর্শনের প্রতিফলন পরিস্ফুট হয় ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’ বা সমস্ত বিশ্ব একটি পরিবার – এই ভাবনায়। এই প্রাচীন দর্শন আজ আধুনিক বিশ্বকে একটি ‘ইন্টিগ্রেটেড ভিশন’ বা সংহত দূরদৃষ্টি প্রদান করছে, যা থেকে বেরিয়ে আসছে নানা ‘ইন্টিগ্রেটেড সলিউশন’ বা সংহত সমাধান। সেজন্য সভাপতি হিসাবে ভারত এবার জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের মূল ভাবনা রেখেছে ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ – এই মূল ভাবনা একটি পরিবার রূপে গোটা বিশ্বের সম্মিলিত ভবিষ্যতের সংকল্পও। কিছু দিন আগেই ভারত ‘এক বিশ্ব, এক স্বাস্থ্য’-র দূরদৃষ্টিকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আর আজ ‘এক বিশ্ব যক্ষ্মা শীর্ষ সম্মেলন’ – এর মাধ্যমে ভারত ‘গ্লোবাল গুড’ বা বিশ্বের ভালোর জন্য আরেকটি সংকল্প বাস্তবায়িত করছে। 

বন্ধুগণ,

২০১৪’র পর থেকে ভারত যে নতুন ভাবনা এবং দৃষ্টিকোণ নিয়ে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করেছে, তা সত্যিই অভূতপূর্ব। ভারতের এই প্রচেষ্টা সম্পর্কে আজ গোটা বিশ্বকে এজন্য অবহিত করা উচিৎ কারণ, এটা যক্ষ্মার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লড়াইয়ের একটি নতুন মডেল। বিগত ৯ বছরে ভারত যক্ষ্মার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে অনেক দিক থেকে একসঙ্গে কাজ করেছে। যেমন – গণঅংশীদারিত্ব, পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য বিশেষ অভিযান, চিকিৎসার জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবন কৌশল, আধুনিক প্রযুক্তির সম্পূর্ণ ব্যবহার আর ‘টেক ইন্টিগ্রেশন’ বা আধুনিক প্রযুক্তির সংহত ব্যবহার এবং ‘ওয়েলনেস অ্যান্ড প্রিভেনশন’ সুনিশ্চিত করে সুস্বাস্থ্যকে উৎসাহ যোগাতে ফিট ইন্ডিয়া, খেলো ইন্ডিয়া এবং যোগ – এর অভিযান। 

বন্ধুগণ,

যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত যে কাজটি সবচেয়ে সাফল্যের সঙ্গে করেছে, তা হ’ল গণঅংশীদারিত্ব। ভারত কিভাবে একটি অভিনব অভিযান সম্পাদনের মাধ্যমে এই সাফল্য অর্জন করেছে, তার বর্ণনা বিদেশ থেকে আগত আমাদের অতিথিদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। 

আমার বিদেশি বন্ধুগণ,

আমরা যক্ষ্মা মুক্ত ভারত অভিযানের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য দেশের জনগণকে ‘নি-ক্ষয় মিত্র’ হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছিলাম। ভারতে যক্ষ্মাকে হিন্দি ভাষায় ‘ক্ষয়’ রোগ বলা হয়। সেজন্য এরকম নামকরণ। এই অভিযানের মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষেরা প্রায় ১০ লক্ষ যক্ষ্মা রোগীকে দত্তক নিয়েছেন। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, আমাদের দেশের অনেক ১০-১২ বছরের শিশুও ‘নি-ক্ষয় মিত্র’ হয়ে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াইকে প্রাণশক্তি প্রদান করছে। এরকম অনেক শিশু তাদের ‘পিগি ব্যাঙ্ক’ ভেঙ্গে যক্ষ্মা রোগীদের দত্তক নিয়েছে। যক্ষ্মা রোগীদের জন্য এই ‘নি-ক্ষয় মিত্র’দের আর্থিক সহযোগিতা ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি হয়ে গেছে। যক্ষ্মার বিরুদ্ধে বিশ্বে এত বড় সামাজিক উদ্যোগ সকলকে প্রেরণা যোগাচ্ছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, বিদেশে বসবাসকারী অনেক প্রবাসী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূতরাও এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন। সেজন্য আমি আপনাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা আজ বারাণসীর যে ৫ জনের নাম ঘোষণা করেছেন – তার জন্যও আমি কৃতজ্ঞ। 

বন্ধুগণ,

এই নিক্ষয় মিত্র অভিযান যক্ষ্মা রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। যক্ষ্মা রোগীদের পুষ্টি সুনিশ্চিত করতে ২০১৮ সালে আমরা যক্ষ্মা রোগীদের জন্য প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তর ব্যবস্থা চালু করেছি। তখন থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা সরাসরি যক্ষ্মা রোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিয়েছি। এর ফলে, প্রায় ৭৫ লক্ষ যক্ষ্মা রোগী উপকৃত হয়েছেন। এখন ‘নিক্ষয় মিত্র’ বন্ধুদের থেকে পাওয়া শক্তি যক্ষ্মা রোগীদের জীবনে নতুন প্রাণশক্তি যোগাচ্ছে। 

বন্ধুগণ,

পুরনো দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে এগিয়ে চললে নতুন পরিণাম পাওয়া কঠিন হয়। কোনও যক্ষ্মা রোগী যেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন, তা সুনিশ্চিত করার রণনীতি নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। যক্ষ্মা রোগীদের স্ক্রিনিং ও চিকিৎসার জন্য আমরা আয়ুষ্মান ভারত যোজনায় বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছি। যক্ষ্মা রোগীদের বিনামূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আমরা সারা দেশে গবেষণাগারের সংখ্যা বাড়িয়েছি। যে এলাকাগুলিতে যক্ষ্মা রোগীদের সংখ্যা বেশি, সেই এলাকাগুলিকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। আজ এই অভিযানের নতুন উদ্যোগ হিসাবে ‘যক্ষ্মা মুক্ত পঞ্চায়েত’ অভিযান শুরু করেছি। প্রত্যেক গ্রামের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সম্মিলিতভাবে সংকল্প গ্রহণ করবেন যে, এখন থেকে আমাদের গ্রামে একজনঅ যক্ষ্মা রোগী থাকবেন না। আমরা তাঁদের সুস্থ করেই ছাড়বো। আমরা যক্ষ্মা প্রতিরোধের জন্য ছ’মাসের কোর্সের জায়গায় মাত্র ৩ মাসের চিকিৎসা শুরু করেছি। আগে ছ’মাস ধরে রোজ তাঁদের যে ওষুধ নিয়মিত খেতে হ’ত, এখন নতুন ব্যবস্থায় রোগীরা সপ্তাহে একবার করে তিন মাস খেলেই চলবে। অর্থাৎ, রোগীদের সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি, ওষুধ পাওয়াটাও সহজ হবে।

বন্ধুগণ,

যক্ষ্মা মুক্ত ভারত গড়তে আমরা যথাসম্ভব আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করছি। প্রত্যেক যক্ষ্মা রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসাকে তদারকি করতে আমরা ‘নি-ক্ষয় পোর্টাল’ তৈরি করেছি। এর জন্য ডেটা সায়েন্সের বিভিন্ন আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করছি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং আইসিএমআর – এর যৌথ উদ্যোগে ‘সাব-ন্যাশনাল ডিজিজ সার্ভাইলেন্স’ – এর একটি নতুন পদ্ধতির নক্শা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছাড়া ভারতই একমাত্র এ ধরনের মডেল অনুসরণ করে কাজ করছে। 

বন্ধুগণ,

এ ধরনের অসংখ্য প্রয়াসের ফলেই আজ ভারতে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা অনেক কমেছে। আর আজ এখানে কর্ণাটক ও জম্মু – কাশ্মীর রাজ্যকে সম্পূর্ণ যক্ষ্মা মুক্ত সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। জেলাস্তরেও ভালো কাজ করার জন্য অনেক রাজ্যের বিভিন্ন জেলাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আমি এই সাফল্যের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের সাফল্য থেকে প্রেরণা নিয়ে ভারত একটি বড় শপথ নিয়েছে। যক্ষ্মা নির্মূল করার জন্য আন্তর্জাতিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৩০ সালকে। ভারত সেখানে ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক লক্ষ্য থেকে ৫ বছর আগেই এত বড় দেশে যক্ষ্মা নির্মূল করার শপথ আমরা নিতে পেরেছি আমাদের দেশবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণের ভরসায়। ভারতে আমরা কোভিডের সময় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর যে ক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ করেছি তা ব্যবহার করে আমরা পাঁচটি ‘টি’ বা ‘ট্রেস টেস্ট, ট্র্যাক, ট্রিট এবং টেকনোলজি’ ভিত্তিক কাজ করছি। এই কৌশল আমাদের যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। আমাদের ভারতের এই স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গীতে অনেক বড় ‘গ্লোবাল’ বা আন্তর্জাতিক সম্ভাবনা রয়েছে, যা আমাদের সকলকে মিলেমিশে ব্যবহার করতে হবে। আজ যক্ষ্মার বিরুদ্ধে চিকিৎসার ৮০ শতাংশ ওষুধ ভারতেই প্রস্তুত হয়। ভারতের ফার্মা কোম্পানিগুলির এই সামর্থ্য যক্ষ্মার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অভিযানের অনেক বড় শক্তি যোগায়। আমি চাই যে, ভারতের এই সকল অভিযান থেকে সমস্ত উদ্ভাবন থেকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের নানা প্রচেষ্টা থেকে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ উপকৃত হোক। আমরা যে ‘গ্লোবাল গুড’ – এর জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সমস্ত দেশ একটি প্রক্রিয়া উন্নীত করতে পারে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমাদের এই শপথ অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। হ্যাঁ, আমরা যক্ষ্মাকে নির্মূল করতে পারবো, ‘যক্ষ্মা হারবে, ভারত জিতবে’ আর আপনারা সকলে বলতে পারেন ‘যক্ষ্মা হারবে, বিশ্ব জিতবে’। 

বন্ধুগণ,

আপনাদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমার একটি পুরনো উক্তি মনে পড়ছে। যা আমি আপনাদের বলতে চাই। আমাদের রাষ্ট্রপিতা মহাত্মা গান্ধী কুষ্ঠ নির্মূল করার জন্য অনেক কাজ করেছেন। তিনি যখন সাবরমতী আশ্রমে থাকতেন, তখন একবার তাঁকে আহমেদাবাদে একটি কুষ্ঠ হাসপাতাল উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। গান্ধীজী সেখানে যেতে চাননি। তাঁর একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি বলেন, আমি হাসপাতাল উদ্বোধনের জন্য যাব না। আপনারা যখন আমাকে এই কুষ্ঠ হাসপাতালে তালা লাগানোর জন্য ডাকবেন, তখন আমি মহানন্দে সেখানে যাব। অর্থাৎ, তিনি কুষ্ঠ নির্মূল করে হাসপাতালও বন্ধ করতে চাইছিলেন। কিন্তু, গান্ধী হত্যার পরও সেই হাসপাতাল অনেক দশক ধরে কাজ করেছে। ২০০১ সালে যখন গুজরাটের জনগণ আমাকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছিলেন, তখন আমার মনে গান্ধীজীর সেই তালা লাগানোর অপূর্ণ ইচ্ছা বাস্তবায়নের মন চাইলো। আমি গুজরাটে কুষ্ঠ নির্মূল অভিযানকে গতি প্রদানের চেষ্টা করি। ফলস্বরূপ, কয়েক বছরের মধ্যেই গুজরাটে কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ২৩ শতাংশ থেকে কমে ১ শতাংশেরও নীচে হ’ল। ২০০৭ সালে আমি মুখ্যমন্ত্রী থাকতেই সেই কুষ্ঠ হাসপাতালে তালা লাগাই। সেই হাসপাতাল বন্ধ হয় আর গান্ধীজীর স্বপ্ন সাকার হয়। এক্ষেত্রে অনেক সামাজিক সংগঠন ও গণঅংশীদারিত্ব বড় ভূমিকা পালন করেছে। এই অভিজ্ঞতা থেকেই আমি আজ যক্ষ্মার বিরুদ্ধে ভারতের সাফল্য নিয়ে এতটা আশ্বস্ত অনুভব করছি। 

বন্ধুগণ,

আজকের নতুন ভারত নতুন নতুন লক্ষ্য পূরণের জন্য সুবিদিত। ভারত উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম মুক্ত হওয়ার সংকল্প নিয়েছে আর তা সেই লক্ষ্য পূরণ করেও দেখিয়েছে। সৌরশক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যও ভারত নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জন করেছে। ভারত পেট্রোলে নির্ধারিত অনুপাতে ইথানল মিশ্রণের লক্ষ্যও নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জন করেছে। গণঅংশীদারিত্বের এই শক্তি গোটা বিশ্বে ভারতের প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে। যক্ষ্মার বিরুদ্ধেও ভারতের লড়াই যেভাবে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে, এতেও গণঅংশীদারিত্বের শক্তিই প্রধান। হ্যাঁ, আপনাদের কাছে আমার একটি অনুরোধ রয়েছে। তা হ’ল – যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে আপনাদের এগিয়ে আসতে হব এ। কিছু পুরনো সামাজিক ভাবনার কারণে অনেকেই রোগটিকে লুকোনোর চেষ্টা করেন। এভাবে লুকোতে দিলে চলবে না। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাঁদের চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। 

বন্ধুগণ,

বিগত বছরগুলিতে কাশীতে স্বাস্থ্য পরিষেবা যত দ্রুতগতিতে বিস্তারলাভ করেছে, তার ফলে যক্ষ্মা সহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়তে থাকা মানুষেরা উপকৃত হয়েছেন। আজ এখানে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোলের বারাণসী শাখার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে। পাবলিক হেলথ সার্ভাইলেন্স ইউনিটের কাজও শুরু হয়েছে। আজ বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে চাইল্ড কেয়ার ইন্সটিটিউট স্থাপন, ব্লাড ব্যাঙ্কের আধুনিকীকরণ, আধুনিক ট্রমা সেন্টার নির্মাণ, সুপার স্পেশালিটি ব্লক স্থাপন - বারাণসীর জনগণকে উপকৃত করছে। পণ্ডিত মদন মোহন মালব্য ক্যান্সার সেন্টারে ইতিমধ্যেই ৭০ হাজারেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। এই রোগীদের আর চিকিৎসার জন্য লক্ষ্ণৌ, দিল্লি কিংবা মুম্বাই যেতে হয়নি। এভাবেই বারাণসীতে কবীর চৌরা হাসপাতাল থেকে শুরু করে জেলা হাসপাতালেও ডায়ালিসিস ও সিটি স্ক্যান – এর মতো অনেক পরিষেবা চালু হয়েছে। কাশী এলাকার বিভিন্ন গ্রামেও আধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা বিকশিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে অক্সিজেন প্ল্যান্ট গড়ে তোলা হয়েছে। ওক্সিজেন পরিষেবা সম্বলিত শয্যারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই জেলায় সমস্ত ‘হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস’ সেন্টারগুলিতেও অনেক আধুনিক পরিষেবা চালু করা হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে বারাণসীর দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করে বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হয়েছে। প্রায় ৭০টি স্থানে জনঔষধি কেন্দ্রের মাধ্যমে রোগীরা সুলভ মূল্যে ওষুধ কিনতে পারছেন। এই সকল প্রচেষ্টার ফলে এই জেলা ছাড়াও উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষ, বিহার থেকে আগত অসংখ্য রোগী উপকৃত হচ্ছেন। 

বন্ধুগণ,

ভারত তার অভিজ্ঞতা নিজস্ব বিশেষজ্ঞতা আর নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি নিয়ে আন্তরিকভাবে যক্ষ্মা মুক্ত অভিযানে সামিল হয়েছে। ভারত বিশ্বের প্রত্যেক দেশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার জন্যও সদা তৎপর। যক্ষ্মার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সকলের প্রচেষ্টাতেই সফল হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমাদের আজকের প্রচেষ্টা আমাদের সুরক্ষিত ভবিষ্যতের ভিত্তিকে শক্তিশালী করবে। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি উন্নত পৃথিবী উপহার দিতে পারবো। আপনাদের সকলকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা ভারতের এই উদ্যোগগুলিকে সমর্থন জানিয়েছেন, প্রশংসা করেছেন, আমাকে আপনাদের দেশে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি হৃদয় থেকে আপনাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই। এই একটি শুভ সূচনার মাধ্যমে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস দিনে আপনাদের সকলের সাফল্য কামনা করছি। একটি দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সকলকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। 

অনেক অনেক ধন্যবাদ! 

 

PG/SB/SB


(Release ID: 1910818) Visitor Counter : 268