অর্থমন্ত্রক
সংক্ষিপ্ত অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২-২০২৩ এর মূল বিষয়গুলি
বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের উপর নির্ভর করে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ৬ থেকে ৬.৮ শতাংশ হওয়ার আশা
২০২৪ অর্থবর্ষে ২০২২-২৩ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বাস্তব অর্থে ৬.৫ শতাংশ হারে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির আশা প্রকাশ করা হয়েছে
গত অর্থবর্ষে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ৮.৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধির পর চলতি অর্থবর্ষে দেশের অর্থনীতি প্রকৃত অর্থে ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধির আশা
২০২২ – এর জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রে ঋণ দানের হার গড়ে ৩০.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে
কেন্দ্রীয় সরকারের মূলধনী ব্যয় ২০২৩ অর্থবর্ষের প্রথম আট মাসে ৬৩.৪ শতাংশ হারে বেড়েছে; চলতি অর্থবর্ষে এই মূলধনী ব্যয় দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক হবে
ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২০২৩ অর্থবর্ষে মূল্য বৃদ্ধির হার ৬.৮ শতাংশ হবে বলে অনুমানের কথা জানিয়েছে, যা তাদের লক্ষ্যমাত্রার বাইরে
নির্মাণ ক্ষেত্রে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসার ফলে বাজারে অবিক্রিত আবাসনের পরিমাণ কমেছে
২০২২ অর্থবর্ষে রপ্তানী বৃদ্ধির দ্রুত হার দেশের শিল্পোৎপাদন ক্ষেত্রে গতি সঞ্চার করেছে
মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অংশ হিসাবে বেসরকারি ক্ষেত্রে চাহিদা ৫৮.৪ শতাংশ হয়েছে। বাণিজ্য, হোটেল এবং পরিবহণের মতো চুক্তি-ভিত্তিক পরিষেবার কাজে গতি আসাতেই এটা সম্ভব হয়েছে
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বিশ্ব অর্থনীতিতে বৃদ্ধির হার ২০২২ অর্থবর্ষের ৩.৫ শতাংশ থেকে কমে ২০২৩ – এ ১ শতাংশ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে
Posted On:
31 JAN 2023 2:00PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩
বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের উপর নির্ভর করে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ৬ থেকে ৬.৮ শতাংশ হওয়ার আশা।
প্রধাণত, বেসরকারি ক্ষেত্রে পণ্য দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধিজনিত কারণে শিল্পোৎপাদনে কাজকর্মে গতি সঞ্চার; মূলধনী ক্ষেত্রে উচ্চ হারে ব্যয়; সর্বোচ্চ হারে ভ্যাকসিন প্রদানের ফলে রেস্তোরাঁ, হোটেল, শপিং মল এবং সিনেমার মতো চুক্তি-ভিত্তিক পরিষেবায় মানুষের অর্থ ব্যয় বৃদ্ধির ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও, বিভিন্ন শহরে আবাসন ক্ষেত্রে পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরে আসার ফলে অবিক্রিত আবাসনের সংখ্যা কমেছে। কর্পোরেট সংস্থাগুলির আয় বৃদ্ধি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃক দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগে ঋণ দানের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির ফলেই মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির আশা দেখা দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন আজ সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের অর্থনৈতিক সমীক্ষা পেশ করেন। এতে ২০২৪ অর্থবর্ষে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির প্রকৃত হার ৬.৫ শতাংশ হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের মতো বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির অনুমান এবং দেশে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমানের সঙ্গে সমীক্ষায় উল্লিখিত বৃদ্ধির হার বহুলাংশে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
২০২৪ অর্থবর্ষে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার বাড়ার কারণ হিসাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, মূলধনী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে দেখানো হয়েছে। এছাড়াও, অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও সহায়ক ভূমিকা নিতে পারে পিএম গতিশক্তি, জাতীয় পরিবহণ নীতি, উৎপাদন ক্ষেত্রে উৎসাহ দানের বিশেষ প্রকল্পগুলি বলে মনে করা হচ্ছে।
কোভিড-১৯ এর মতো অতিমারীর ৩টি ঢেউ, রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সুদের হার ওঠা-নামার মতো ঘটনা সত্ত্বেও ভারত ২০২৩ অর্থবর্ষে বিশ্বের ৬.৫ থেকে ৭ শতাংশের মতো দ্রুততম বৃদ্ধির অর্থনীতি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় জানানো হয়েছে যে, ২০২৩ অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার প্রধাণত বেসরকারি ক্ষেত্রে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বৃদ্ধি, পুঁজি সৃষ্টির মতো ঘটনার ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে। এর ফলে, পৌর ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার কমেছে এবং কর্মী ভবিষ্যনিধি তহবিলে মোট নিবন্ধীকরণের সংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচিতে ২০০ কোটিরও বেশি মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়ার ফলে গ্রাহকদের উৎসাহ বেড়েছে এবং পণ্য দ্রব্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও, দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে আরও দ্রুত গতি আনতে বেসরকারি ক্ষেত্রে মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন।
এবারের অর্থনীতির সমীক্ষায় ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির কারণ হিসাবে যে যে বিষয়গুলিকে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হ’ল – চীনে নতুন করে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারতে এর প্রভাব স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তেমনভাবে বোঝা যায়নি। চীনের অর্থনৈতিক কাজকর্ম নতুন করে উন্মুক্ত হওয়ার পর তার প্রভাব মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে তেমনভাবে অনুভূত হয়নি। মুদ্রাস্ফীতির হার মোটামুটিভাবে ৬ শতাংশের নীচে ধরে রাখার ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈদেশিক পুঁজির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বেড়েছে।
সমীক্ষায় জানানো হয়েছে যে, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিতে ঋণ প্রদানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের জরুরি ঋণ সংযুক্ত গ্যারান্টি প্রকল্প (ইসিএলজিএস) ভূমিকা নিয়েছে। অন্যদিকে, এইসব সংস্থাগুলি পণ্য ও পরিষেবা কর প্রদানের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পটি তাদের ঋণ পরিশোধের চাপ কমিয়েছে। মোটের উপর ব্যাঙ্কের ঋণ প্রদানের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৪ অর্থবর্ষে মুদ্রাস্ফীতির হার কমলে ঋণ প্রদানের হার আরও বাড়ার আশা রয়েছে।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের মূলধনী ক্ষেত্রে ব্যয় ২০২৩ অর্থবর্ষের প্রথম আট মাসে ৬৩.৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে চলতি অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করেছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরে মূলধনী ক্ষেত্রে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে। কর্পোরেট সংস্থাগুলির লভ্যাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় তার প্রভাব ঋণ পরিশোধের উপরও পড়তে পারে।
নির্মাণ ক্ষেত্রে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসার ফলে বাজারে অবিক্রিত আবাসনের পরিমাণ কমেছে। কোভিড অতিমারীর সময়কালে নির্মাণ ক্ষেত্রে কাজের অচলাবস্থার প্রসঙ্গে এবারের সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, শ্রমিকদের ভ্যাকসিন প্রদানের ফলে তাঁরা বিভিন্ন শহরের নির্মাণ ক্ষেত্রে কাজে ফেরায় আবাসন বাজারে উন্নতি হয়েছে। ২০২৩ অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ৪২ মাস ধরে অবিক্রিত আবাসনের পরিমাণ কমে ৩৩ মাসে নেমে এসেছে।
সমীক্ষায় মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তাকরণ প্রকল্প থেকে গ্রামাঞ্চলে প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়ে চলেছে। এছাড়াও, এর ফলে গ্রামীণ পরিবারগুলির আয় বৃদ্ধির পক্ষেও তা পরোক্ষভাবে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে। পিএম কিষাণ এবং পিএম গরীব কল্যাণ যোজনার উপর কর্মসূচি রূপায়ণের ফলে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়েছে। জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা গেছে যে, ২০১৬ অর্থবর্ষ থেকে ২০২০ অর্থবর্ষের মধ্যে লিঙ্গসমতা, প্রজনন সক্ষমতার হার, পারিবারিক কাজকর্ম এবং মহিলা ক্ষমতায়নের মতো ক্ষেত্রে গ্রামীণ কল্যাণের সূচকগুলির উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে।
সমীক্ষায় জানানো হয়েছে যে, ভারতীয় অর্থনীতি অতিমারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠে ২০২২ অর্থবর্ষের অন্যান্য বহু দেশের তুলনায় হৃতশক্তি সম্পূর্ণভাবে ফিরে পেয়েছে এবং ২০২৩ অর্থবর্ষে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার অতিমারী পূর্ব বৃদ্ধির হারের রাস্তায় ফিরে এসেছে। তবুও চলতি বছরে ভারতে মুদ্রাস্ফীতিতে লাগাম পরানোর মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে হয়েছে। তবে, শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পণ্য মূল্যের হ্রাস এর ফলে মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
তবে, এবারের সমীক্ষায় টাকার মূল্যমান হ্রাস নিয়ন্ত্রণ করার মতো বিষয় নিয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। যদিও অন্যান্য দেশের মুদ্রার তুলনায় ভারতীয় টাকা তাদের মূল্যমান সাধারণভাবে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু, মার্কিন ফেডারেল ব্যাঙ্কের সুদের হার বৃদ্ধির ফলে এই সমস্যা পুনরায় দেখা দিতে পারে। চলতি খাতে ঘাটতি বিশ্ব পণ্য মূল্যের উচ্চ হারের জন্য আরও বাড়তে পারে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও ভারতীয় অর্থনীতির গতি হার জোরালো থেকেছে। চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্বব্যাপী আর্থিক বৃদ্ধির শ্লথগতি এবং বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণ হ্রাসের ফলে রপ্তানী ক্ষেত্রে চাপ বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২৩ – এ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার কমার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় এবং পরবর্তী বছরগুলিতে তা চলতে থাকায়, বিশ্বে পণ্য মূল্য হ্রাস পেলে ২০২৪ অর্থবর্ষে ভারতে চলতি খাতে ঘাটতি কমতে পারে। তবুও চলতি খাতে ঘাটতির বিষয়টির উপর নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি চালিয়ে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার পরবর্তী বছরগুলিতেও ধরে রাখার চেষ্টা চালাতে হবে।
এবারের সমীক্ষায় কোভিড অতিমারীজনিত বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা জোরালো হলেও একটি নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছে। অতিমারী ছাড়াও রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধও বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নেতৃত্বে উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির সুদের হার ওঠা-নামার ফলেও মুদ্রাস্ফীতির উপর প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভে সুদের হার বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মূল্যমান হ্রাস পেয়েছে। এর ফলেই চলতি খাতে ঘাটতি বেড়েছে এবং পণ্য আমদানির উপর নির্ভরশীল দেশগুলির মুদ্রাস্ফীতির চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সুদের হার বৃদ্ধি এবং দীর্ঘস্থায়ী মুদ্রাস্ফীতির ফলে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল ২০২২ ও ২০২৩ – এ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার কমার পূর্বাভাষ দিয়েছে। এছাড়াও, চীনের অর্থনীতির দুর্বলতাও এক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়েছে। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলিতে মুদ্রাস্ফীতির দীর্ঘস্থায়িত্ব এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলির কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় জানানো হয়েছে যে, ইউরোপ জুড়ে ভূ-রাজনৈতিক ওঠা-পড়ায় বিশ্বব্যাপী আর্থিক সঙ্কটের জন্য ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আঁটোসাঁটো আর্থিক নীতি এবং চলতি খাতে ঘাটতি বৃদ্ধি এবং রপ্তানীর হার অপরিবর্তিত থেকেছে। যেহেতু, এইসব কারণে ২০২৩ অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তারই প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্থা ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী হবে বলে পূর্বাভাষ দিয়েছে। তবে, এইসব পূর্বাভাষ সত্ত্বেও এবং জাতীয় সংখ্যাতত্ত্ব সংগঠনের অগ্রিম অনুমানের ভিত্তিতে বলা যায় যে, এই হার ৬.৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখা সম্ভব হবে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির নিম্ন হার থাকা সত্ত্বেও ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যান্য প্রধান অর্থনীতির তুলনায় বেশি রয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির হার প্রাক্-অতিমারী পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের অনুমান অনুসারে, ২০২২ – এ ভারত বিশ্বের মধ্যে দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম মর্যাদা পাবে। এইসব ঘটনা সত্ত্বেও ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হার ৬.৫ থেকে ৭ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনার মধ্যে দেশের অর্থনীতি নিহীত শক্তির প্রমাণ মিলেছে। এই শক্তির ফলে ভারতীয় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং আর্থিক বৃদ্ধির সূচকগুলি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ২০২৩ অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে রপ্তানী বৃদ্ধির হার মাঝারি মাপের হলেও পরবর্তী সময়ে তাতে উল্লেখযোগ্য গতি সঞ্চার হয়েছে।
উৎপাদন ক্ষেত্র এবং বিনিয়োগের কাজকর্ম যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে। যে সময়ে রপ্তানী বৃদ্ধি হার কমেছে, সেই সময়ে দেশের অভ্যন্তরে গ্রাহকদের পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের অর্থনীতি গতির রাস্তায় ফিরতে পেরেছে। বেসরকারি ক্ষেত্রে পণ্যের চাহিদা ও ব্যয় মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের শতাংশ হার হিসাবে ৫৮.৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যদিও বিশ্বের বহু দেশেই অতিমারী পরবর্তী সময়ে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পণ্য ও পরিষেবা চাহিদা বৃদ্ধি পায়, ভারতে এই চাহিদা বৃদ্ধির হার ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এর ফলে, দেশীয় শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়ক হয়। ২০২২ – এর নভেম্বর থেকে ২০২২ – এর ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আরবিআই – এর সাম্প্রতিকতম সমীক্ষায় জানা গেছে যে, এই চাহিদা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে, কর্মসংস্থান এবং আয় বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক হয়েছে। আবাসন ক্ষেত্রেও দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত থাকা চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাসন ঋণের চাহিদা বেড়েছে। ফলে, অবিক্রিত আবাসনগুলি বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। আবাসনের মূল্য মানেও বৃদ্ধি ঘটেছে ও নতুন আবাসন নির্মাণের কাজে গতি এসেছে। প্রায় সার্বজনীন ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যবস্থার ফলে তার প্রভাব আবাসন বাজারেও পড়েছে। এর কারণ, পরিযায়ী শ্রমিকরা নতুন নির্মাণ ক্ষেত্রে কাজে ফিরে এসেছে। অন্যদিকে, দেশের মূলধনী ব্যয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আগামী দিনে এই পরিমাণ আরও চার গুণ বৃদ্ধি পাবার আশা দেখা দিয়েছে। রাজ্য সরকারগুলিও কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় এবং সুদ বিহীন ঋণের সুবিধার ফলে সম্মিলিতভাবে মূলধনী ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ফাঁকগুলি ভরাট করতে ভারত সরকার বিগত দুটি বাজেটেই মূলধনী ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়িয়ে চলেছে। বেসরকারি সংস্থাগুলিকে মূলধনী ক্ষেত্রে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে বেশ কিছু কৌশলগত প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। মূলধনী ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াও প্রত্যক্ষ কর রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পণ্য ও পরিষেবা কর ক্ষেত্রেও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে এর ফলে বাজেটে ঘোষিত আর্থিক ঘাটতির সীমার মধ্যেই মূলধনী ক্ষেত্রে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে। একদিকে যেমন রপ্তানীর চাহিদা বেড়েছে, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বেড়েছে এবং মূলধনী ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির ফলে কর্পোরেট সংস্থাগুলির বিনিয়োগ ও উৎপাদনমূলক কাজকর্মে গতি সঞ্চার হয়েছে। ব্যাঙ্ক অফ ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টের দেওয়া ঋণ সংক্রান্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, বিগত এক দশকে বেসরকারি ক্ষেত্রে আর্থিক নয়, এই ধরনের ঋণের পরিমাণ মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অংশ হিসাবে প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। ভারতের ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রেও ২০২২ – এর জানুয়ারি থেকে মার্চ – এই ত্রৈমাসিকে বছরের হিসাবে ঋণের চাহিদা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই বহুলাংশে বেড়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। দেশের দেউলিয়া নীতির ফলে এইসব ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদ পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থায় গতিসঞ্চার হয়েছে। এছাড়াও, সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে পর্যাপ্ত পুঁজি সরবরাহ করে চলেছে।
ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২০২৩ অর্থবর্ষে মুদ্রাস্ফীতির হার ৬.৮ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে পূর্বাভাষ দিয়েছে। একই সঙ্গে, এর ফলে বেসরকারি ক্ষেত্রে পণ্যের চাহিদা অব্যাহত থাকা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বজায় রাখা সম্ভব হবে। ২০২১ অর্থবর্ষে অতিমারীর দুটি ঢেউ – এর ফলে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কমা সত্ত্বেও অতিমারীর তৃতীয় পর্যায়ে ভাইরাসের কবল থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার জন্য ২০২২ জানুয়ারি থেকে মার্চ – এই ত্রৈমাসিকে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমে। ফলে, ২০২২ অর্থবর্ষে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে প্রাক্-অতিমারী পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছয়। তবে, ইউরোপে ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কটের ফলে পুনরায় অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি ২০২৩ অর্থবর্ষে পরিবর্তনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে এবং ১০ মাস ধরে এই জায়গায় অবস্থান করে। শেষ পর্যন্ত ২০২২ – এর নভেম্বরে এই হার লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়। বিশ্বব্যাপী পণ্যের মূল্য তুলনামূলকভাবে কমলেও এখনও তা প্রাক্-অতিমারী পর্যায়ে নেমে আসেনি। এর ফলে, চলতি খাতে ঘাটতি আরও বেড়েছে এবং ভারতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হারকে প্রভাবিত করতে চলেছে। তবে, ২০২৩ অর্থবর্ষে চলতি খাতে ঘাটতির সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় রয়েছে এবং ভারতীয় টাকার মুদ্রা মানের অস্থিরতা প্রতিরোধে এই মুদ্রা ভান্ডারকে কাজে লাগানো হচ্ছে।
এবারের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় ২০২৩ – ২৪ অর্থবর্ষের পুর্বাভাষের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, অতিমারী পরবর্তী সময়ে ভারতীয় অর্থনীতির গতি পুনরুদ্ধার তুলনামূলকভাবে দ্রুত হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি ও বর্ধিত মূলধনী বিনিয়োগের ফলে আগামী বছরগুলিতে বৃদ্ধি হার বজায় রাখা সম্ভব হবে। বেসরকারি ক্ষেত্রেও পুঁজি-সৃজনের লক্ষণগুলি এইসব কারণে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গত ৭ বছরের বাজেটে মূলধনী ক্ষেত্রে ব্যয় ২.৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্য ও পরিষেবা কর চালু, দেউলিয়া বিধি রূপায়ণ অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা এনেছে এবং আর্থিক আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতা সুনিশ্চিত হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ২০২২ অর্থবর্ষে ৩.২ শতাংশ থেকে কমে ২০২৩ অর্থবর্ষে ২.৭ শতাংশ হতে পারে বলে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের পূর্বাভাষে জানানো হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে, বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ২০২২ – এর ৩.৫ শতাংশ থেকে কমে ২০২৩ – এ ১ শতাংশে পৌঁছবে। তবে, বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির এই শ্লথগতির পূর্বাভাষের মধ্যেও আশার রূপালি রেখা হিসাবে খনিজ তেলের দাম কম থাকা এবং ভারতের চলতি খাতে ঘাটতির পরিমাণ বর্তমান সময়ের তুলনায় কম হওয়ার বিষয়টিকে তুলে ধরা হচ্ছে। তবে, সার্বিকভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত, বিশ্বের অর্থনৈতিক বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সুফল কর্মসৃজনের মধ্যে প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারি উভয় সূত্র থেকেই জানা গেছে যে, চলতি অর্থবর্ষে কর্মসংস্থান বেড়েছে। পর্যায়ক্রমিক শ্রম শক্তি সমীক্ষা (পিএলএফএস) সূত্রে জানা গেছে যে, শহরাঞ্চলে ১৫ বছরের উপরে কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার ২০২১ – এর সেপ্টেম্বর মাসে ৯.৮ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ – এর তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ৭.২ শতাংশ হয়েছে। একই সঙ্গে, শ্রম শক্তি ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের হারও উন্নত হয়েছে। এর ফলে, দেশের অর্থনীতিকে অতিমারীজনিত শ্লথগতি থেকে বের করে আনার সুস্পষ্ট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
২০২১ অর্থবর্ষে সরকার জরুরি ঋণ নিশ্চয়তা প্রকল্প ঘোষণা করে দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগুলিকে আর্থিক সঙ্কট থেকে বাঁচানোর উদোগ গ্রহণ করেছিল। সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে যে, এই প্রকল্প রূপায়ণের ফলে দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে অতিমারীর ধাক্কা থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এই ধরনের সংস্থাগুলির ৮৩ শতাংশই এই প্রকল্পের সুযোগ গ্রহণ করেছে। এইসব সংস্থাগুলি পণ্য ও পরিষেবা কর প্রদানের যে হার ২০২১ অর্থবর্ষে কমেছিল, তা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ অর্থবর্ষে প্রাক্-অতিমারী পর্যায়ে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পে দ্রুতগতিতে সম্পদ সৃজনের কাজ হচ্ছে। এছাড়াও, পিএম কিষাণ প্রকল্পে গ্রামীণ জনসংখ্যার অর্ধেকই সুবিধা গ্রহণ করেছে। পিএম গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা রূপায়ণের ফলে দেশের মানুষের দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব হয়েছে।
সরকারি – বেসরকারি অংশীদারিত্বের নিরিখে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং বাজারের বিনিময় মূল্যের নিরিখে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে উঠে এসেছে। আশানুযায়ী, দেশের আয়তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারতের অর্থনীতি ২০২৩ অর্থবর্ষে তার স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করেছে, যা হারিয়েছিল তা ফিরে পাওয়া গেছে। অতিমারীর কারণে যা থেমে গিয়েছিল, তাতে নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বিশ্ব অর্থনীতির ৬টি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি চ্যালেঞ্জ হ’ল – অতিমারীজনিত কারণে অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতি; রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর কারণে খাদ্য, জ্বালানী এবং সারের মতো পণ্যের সরবরাহ-শৃঙ্খলে বিঘ্ন। অন্যদিকে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেমন সমন্বিতভাবে সুদের হার বৃদ্ধি করেছে, তাতে মার্কিন ডলার বিভিন্ন দেশের মুদ্রার তুলনায় শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আমদানির উপর নির্ভরশীল দেশগুলির চলতি খাতে ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে। চতুর্থ যে চ্যালেঞ্জের কথা এবারের সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, তা হ’ল – মুদ্রাস্ফীতিজনিত বিশ্ব অর্থনীতির গতি শ্লথতা। যেহেতু, বিভিন্ন দেশ নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে, তার ফলে সীমান্ত পারের ব্যবসা-বাণিজ্য শ্লথ হয়েছে। পঞ্চম যে চ্যালেঞ্জটির কথা সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, তা হ’ল – চীনের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য গতি শ্লথতা। ষষ্ঠ চ্যালেঞ্জ হিসাবে অতিমারীজনিত কারণে শিক্ষা ও আয়ের সুযোগ হ্রাসকে দেখানো হয়েছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতকেও এই ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে, তবুও অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে এর মোকাবিলা করেছে।
বিগত ১১ মাস ধরে বিশ্ব অর্থনীতি বহু বিঘ্নের মুখোমুখী হয়েছে। খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার এবং গমের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের দাম বেড়েছে মূলত ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কটের ফলে। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলিতে মুদ্রাস্ফীতি এবং তজ্জনিত সমস্যা ঐতিহাসিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। উন্নয়নশীল বাজার অর্থনীতির দেশগুলিতেও পণ্য মূল্য বৃদ্ধির ফলে উচ্চ হারে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। সমীক্ষায় জানানো হয়েছে যে, মুদ্রাস্ফীতি এবং আঁটোসাঁটো আর্থিক নীতির ফলে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে বন্ড থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ কমেছে, ফলে শক্তিশালী মুদ্রা হিসাবে মার্কিন ডলারেই পুঁজি সন্নিবিষ্ট হয়েছে। অন্যান্য দেশের মুদ্রার তুলনায় এর ফলে ডলারের মূল্যমান বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ – এর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মার্কিন ডলারের মূল্যমানের সূচক ১৬.১ শতাংশ বেড়েছে। ফলে, অন্যান্য দেশের মুদ্রামান হ্রাস পাওয়ায় বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে চলতি খাতে ঘাটতি বেড়েছে এবং মুদ্রাস্ফীতিও উর্ধ্বমুখী হয়েছে।
PG/PB/SB
(Release ID: 1895088)
Visitor Counter : 6239
Read this release in:
Tamil
,
Malayalam
,
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Assamese
,
Manipuri
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Telugu