প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

বেঙ্গালুরুর প্রযুক্তি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 16 NOV 2022 11:02AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৬ নভেম্বর ২০২২

 

প্রযুক্তি জগতের নেতৃবৃন্দ, আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বন্ধুগণ,

एल्लारिगू नमस्कारा ভারতে আপনাদের সকলকে স্বাগত! नम्म कन्नडा नाडिगे स्वागता, नम्म बेन्गलुरिगे स्वागता।

বেঙ্গালুরু প্রযুক্তি সম্মেলনে আরও একবার বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। আপনাদের মধ্যে ভালোবাসা ও আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই আমি জানি। আমি পরিচিত কর্ণাটকের প্রাণবন্ত সংস্কৃতির সঙ্গেও।

বন্ধুগণ,

বেঙ্গালুরু হল প্রযুক্তির আবাসভূমি। মননশীলতার শীর্ষেও রয়েছে এই শহরটি। এটি হল এক অন্তর্ভুক্তিমূলক চিন্তাভাবনার শহর। একইসঙ্গে তা আবার এক উদ্ভাবন নগরীও। ভারতের উদ্ভাবন সূচকে বহু বছর ধরেই বেঙ্গালুরু শীর্ষ স্থানটি অধিকার করে রয়েছে।

বন্ধুগণ,

ভারতের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন শক্তি সমগ্র বিশ্বকেই মন্ত্রমুগ্ধ করেছে। এর মধ্য দিয়ে দেশ বর্তমানের থেকেও আরও এক বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে প্রবেশ করতে চলেছে। কারণ, ভারতের রয়েছে যুবশক্তির উদ্ভাবন প্রতিভা এবং সেইসঙ্গে দেশের প্রযুক্তি ক্ষেত্রের ক্রমপ্রসারও ঘটে চলেছে।

বন্ধুগণ,

ভারতের যুবশক্তির কথা সুপরিচিত সমগ্র বিশ্বেই। আমাদের যুবশক্তি মেধা ও প্রযুক্তির বিশ্বায়ন ঘটিয়েছে। স্বাস্থ্য পরিচর্যা, পরিচালন ও ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি – সর্বত্রই অনেকগুলি ক্ষেত্রের শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় তরুণরা। বিশ্বের কল্যাণে আমরা কাজে লাগিয়েছি দেশের মেধাশক্তিকে। এমনকি দেশের মধ্যেও তাঁদের প্রভাব দিন দিন আরও বেশি মাত্রায় অনুভূত হচ্ছে। বিশ্বের উদ্ভাবন সূচকে ২০১৫ সালে দেশের অবস্থান ছিল ৮১-তে। কিন্তু বর্তমানে, অর্থাৎ ২০২২ সালে ভারত উন্নীত হয়েছে ৪০তম স্থানটিতে। ২০২১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ভারতে স্টার্ট-আপ-এর সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে সরকারিভাবে স্বীকৃত ৮১ হাজার স্টার্ট-আপ সংস্থা নিয়ে ভারত এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্থানটি অধিকার করে রয়েছে। ভারতীয় মেধাশক্তি আন্তর্জাতিক স্তরের বহু সংস্থাকে গবেষণা ও উন্নয়নের পথ দেখিয়েছে। ভারতের মেধাশক্তির যে সুশৃঙ্খল গড়ে উঠেছে, তার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

বন্ধুগণ,

প্রযুক্তিক্ষেত্রে উত্তরোত্তর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ভারতীয় তরুণদের ক্ষমতায়ন ঘটেছে।  মোবাইল ও ডেটা বিপ্লবেরও সূচনা হয়েছে আমাদের দেশে। গত আট বছরে ব্রডব্যান্ড সংযোগ ৬ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ কোটিতে। অন্যদিকে, স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৫ কোটি থেকে ৭৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। শহরগুলির তুলনায় দেশের গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এইভাবে এক নতুন জনগোষ্ঠী প্রযুক্তির হাত ধরে তথ্যের দোড়গোড়ায় পৌঁছে গেছে।

বন্ধুগণ,

দীর্ঘকালযাবৎ প্রযুক্তিক্ষেত্রটি ছিল সাধারণ মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সমাজের উচ্চস্তরের ক্ষমতাবান মানুষদের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু প্রযুক্তিক্ষেত্রেও কিভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হয় তা প্রমাণ করেছে আমাদের দেশ। মানুষের হাতের স্পর্শে কিভাবে প্রযুক্তির প্রসার ঘটতে পারে তা ভারত বাস্তবে করে দেখিয়েছে। আমাদের দেশে প্রযুক্তি হল মানুষে মানুষে সমতার প্রসার ও ক্ষমতায়নের এক বিশেষ হাতিয়ার। বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য বিমা কর্মসূচি ‘আয়ুষ্মান ভারত’ দেশের ২০ কোটি পরিবারের কাছে এক সুরক্ষা বলয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোভিড-১৯ টিকাকরণের ক্ষেত্রে বিশ্বের বৃহত্তম অভিযানটি পরিচালিত হয় আমাদের দেশেই। ‘COWIN’ নামে এক প্রযুক্তিচালিত মঞ্চে বিশ্বের এই বৃহত্তম টিকাকরণ অভিযানটির সূচনা হয়। স্বাস্থ্য থেকে এবার শিক্ষার প্রসঙ্গে আসা যাক।

মুক্ত পাঠক্রমের এক বৃহত্তম অনলাইন ভাণ্ডার তৈরি হয়েছে আমাদের দেশে। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সেখানে হাজার হাজার পাঠক্রমের সন্ধান পাওয়া যায়। পাঠক্রমে সফলদের মধ্যে ১ কোটি শংসাপত্রও বন্টন করা হয়েছে। এ সমস্ত কিছুই ঘটেছে অনলাইন ব্যবস্থায় এবং বিনামূল্যে। আমাদের দেশে ডেটা মাশুলের হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ন্যূনতম। কোভিড-১৯ অতিমারীকালে এর সাহায্যে দরিদ্র ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন ক্লাসে পঠনপাঠনের সুযোগ লাভ করেছে। কারণ, এই ব্যবস্থা ছাড়া দু-দুটি বছর তাদের হারাতে হত।

বন্ধুগণ,

দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেছে একটি অস্ত্র হিসেবে। ‘স্বামীত্ব’ কর্মসূচির আওতায় দেশের গ্রামাঞ্চলে জমি পরিমাপের কাজে আমরা ড্রোনের ব্যবহার চালু করেছি। এর ভিত্তিতেই গ্রামবাসীদের মধ্যে সম্পত্তির বিশদ বিবরণ সম্বলিত কার্ড বিলি করা হয়। ফলে, জমি সংক্রান্ত বিবাদ-বিসংবাদও অনেকটাই কমে এসেছে। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে আর্থিক তথা ঋণ সহায়তার সুযোগ লাভ করছেন দেশের দরিদ্র সাধারণ মানুষ। কোভিড-১৯ অতিমারীকালে সমস্যায় জর্জরিত ছিল বিশ্বের বহু দেশ। সাহায্য ও সুফল হস্তান্তরের প্রয়োজন সম্পর্কে ঐ দেশগুলি ওয়াকিবহাল ছিল। কিন্তু, সাধারণ মানুষের কাছে সুফল পৌঁছে দেওয়ার মতো পরিকাঠামো তখন তাদের কাছে ছিল না। ভারত তখন তাদের করে দেখিয়েছে যে মানবকল্যাণে প্রযুক্তিকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়। আমাদের ‘জন ধন-আধার-মোবাইল’ – এই ত্রিশক্তির সমন্বয়ে প্রত্যক্ষ সুফল হস্তান্তরের কাজ যে কতটা সহজ হয়ে উঠতে পারে তা আমরা করে দেখিয়েছি। এই ব্যবস্থায় কোটি কোটি টাকা পৌঁছে গেছে সংশ্লিষ্ট সুফলগ্রহীতাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে। কোভিড-১৯-এর সেই অতিমারীর দিনগুলিতে ছোটখাট ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তাঁদের সাহায্য করেছি যাতে তাঁরা সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেন। রাস্তার হকার এবং ফুটপাতের বিক্রেতাদের চলতি মূলধন যুগিয়ে আমরা সাহায্য করেছি যাতে তাঁরা আবার বিক্রিবাটার কাজ শুরু করতে পারেন। যাঁরা ডিজিটাল লেনদেন পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন, তাঁদের আমরা নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি। আর এইভাবেই ডিজিটাল ব্যবস্থায় লেনদেন জীবনযাত্রার এক অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ,

কোনো দেশের সরকার সাফল্যের সঙ্গে একটি ই-কমার্সের মঞ্চ চালিয়েছে, এ ঘটনার কথা অতীতে কখনও শুনেছেন আপনারা? কিন্তু এই ঘটনা সত্যিই ঘটেছে বর্তমান ভারতে। ‘জিইএম’ নামে একটি সরকারি উদ্যোগে একটি ই-বাজার আমরা গড়ে তুলেছি। এটি হল এমন একটি মঞ্চ যেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দোকানদাররা সরকারি চাহিদা পূরণ করার সুযোগ পেয়েছেন। প্রযুক্তির হাত ধরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বড় বড় গ্রাহক তথা ক্রেতার সন্ধান লাভ করেছেন। একইসঙ্গে তা আবার হ্রাস করেছে দুর্নীতির মাত্রাও। অনলাইন টেন্ডার ব্যবস্থাতেও প্রযুক্তি নানাভাবে সাহায্য করেছে। ফলে, স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে গতি সঞ্চার ঘটেছে দেশের প্রকল্প ও কর্মসূচিগুলিতেও। এর মধ্য দিয়ে গত বছর পণ্য সংগ্রহ ও পরিবহণের মাত্রা অর্থের নিরিখে ১ লক্ষ কোটির মতো দাঁড়িয়েছে।

বন্ধুগণ,

উদ্ভাবনের বিষয়টি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর সঙ্গে যখন মানুষের সংহতি যুক্ত হয়, তখন তা একটি শক্তি হয়ে ওঠে। অলসতা থেকে মুক্ত হয়ে কর্মপ্রচেষ্টায় সামিল হতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে প্রযুক্তি। কারণ, একটি মিলিত মঞ্চে আর সকলের থেকে পৃথক থাকা বা অলস হয়ে বসে থাকার কোনো অবকাশ বা পরিসর নেই। ‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান’-এর আওতায় আগামী কয়েক বছরের জন্য ভারত বিনিয়োগ করছে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা। অতীতে ভারতে বড় বড় প্রকল্প রূপায়ণের কাজ সম্পূর্ণ হতে বহু বছর সময় লেগে যেত। ফলে, একদিকে যেমন ব্যয়বাহুল্য ঘটত, অন্যদিকে তেমনই নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রম করে যাওয়ার বিষয়টিও ছিল খুবই সাধারণ ঘটনা। কিন্তু, আমরা এখন গতি শক্তির মাধ্যমে এক মিলিত মঞ্চ গড়ে তুলতে পেরেছি। কেন্দ্র, রাজ্য, জেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন দপ্তরের একটি মিলিত মঞ্চ হল গতি শক্তি যেখানে পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে কাজ করে যেতে হয়। এখানে প্রত্যেকে বুঝতে পারে, জানতে পারে অন্যরা কি করছে। বিভিন্ন প্রকল্প, সেজন্য জমির ব্যবহার এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিকতার বিষয় এখন একটিমাত্র জায়গা থেকেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। ফলে, সংশ্লিষ্ট সকলেই একই তথ্য ও পরিসংখ্যানের সুযোগ পেতে পারেন। এর মধ্য দিয়ে সমন্বয়ের কাজও আরও উন্নত হয়ে উঠেছে। সমস্যার আগেই সমাধান চলে আসছে আমাদের হাতের মুঠোয়। প্রস্তাব অনুমোদন ও ছাড়পত্র দেওয়ার কাজ এখন আরও দ্রুততর হয়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ,

ভারত এখন আর দীর্ঘসূত্রিতার একটি দেশ নয় বরং, বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের কাছে তা এখন উষ্ণ অভ্যর্থনার একটি দেশ রূপেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংস্কার কর্মসূচি, ড্রোন সম্পর্কিত নিয়ম-নীতির উদারীকরণ, সেমি-কন্ডাক্টরের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, বিভিন্ন কর্মপ্রচেষ্টার ক্ষেত্রে উৎপাদন-ভিত্তিক সুযোগ-সুবিধার প্রসার এবং বাণিজ্যিক কাজকর্ম সহজতর করে তোলার ক্ষেত্রে ভারত এখন সম্মিলিত শক্তির এক বিশেষ আধার হয়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ,

বর্তমানে একসঙ্গে কাজ করার একটি চমৎকার দেশ হল ভারত। আপনাদের বিনিয়োগ এবং আমাদের উদ্ভাবনশক্তির মিলিত ফল কিন্তু বিস্ময়কর। আপনাদের আস্থা এবং আমাদের প্রযুক্তিগত মেধাশক্তি অসম্ভবকেও সম্ভব করে তুলতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে আমরা এখন নেতৃত্ব দেওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছি। আপনাদের আলাপ-আলোচনা ও বক্তব্য বেঙ্গালুরুর এই প্রযুক্তি সম্মেলনে যথেষ্ট আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসূ হয়ে উঠবে বলেই আমার বিশ্বাস। আপনাদের সকলের জন্যই আমার শুভেচ্ছা রইল।

 

PG/SKD/DM/



(Release ID: 1876532) Visitor Counter : 141