প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

গুজরাটের রাজকোটে ৫,৮৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী


‘লাইট হাউজ’ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ১,১০০টি বাসস্থান তিনি উৎসর্গ করলেন রাজ্যের দরিদ্র মানুষের কল্যাণে

Posted On: 19 OCT 2022 8:17PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৯ অক্টোবর, ২০২২

 

গত আট বছরে ৩ কোটিরও বেশি পাকা বাড়ি বন্টন করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের দরিদ্র মানুষদের মধ্যে। ১০ লক্ষ পাকা বাড়ি মঞ্জুর করা হয়েছে শুধুমাত্র গুজরাটের বিভিন্ন শহরের দরিদ্র মানুষের জন্য। এর মধ্যে ৭ লক্ষ বাড়ির নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই ও তাঁর কর্মীরা দরিদ্র কল্যাণে গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কাজ করছেন। শুধুমাত্র দরিদ্রদের জন্যই নয়, সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষদের নিজেদের একটি বাসস্থানের স্বপ্নকেও আমরা বাস্তবায়িত করেছি। এই লক্ষ্যে গুজরাটের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লক্ষ লক্ষ মানুষকে ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, রুটি-রুজির খোঁজে যে সমস্ত শ্রমিক ও কর্মী বিভিন্ন শহরে এসে বসবাস করছেন, তাঁদেরও কম ভাড়ায় আরও ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থা করা উচিৎ বলেই আমি মনে করি। এই কারণে দ্রুতগতিতে তাঁদের কল্যাণেও একটি কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে। 

গুজরাটের রাজকোটে আজ ৫,৮৬০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস ও তা উৎসর্গকালে এই তথ্য পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘লাইট হাউজ’ প্রকল্পের আওতায় ১,১০০টিরও বেশি বাড়ি নির্মিত হয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রী এদিন গুজরাটের ২৭ নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর রাজকোট-গোন্দাল-জেটপুর সেকশনের চার লেনের রাস্তাকে ছয় লেনের রাস্তায় রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির শিলান্যাসও করেন। এছাড়াও, মোরবী, রাজকোট, বোতাড়, জামনগর এবং কচ্ছ-এর বিভিন্ন অঞ্চলে ২,৯৫০ কোটি টাকার জিআইডিসি শিল্প এস্টেটেরও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে অন্যান্য যে সমস্ত প্রকল্পের এদিন শিলান্যাস করেন তার মধ্যে রয়েছে - গাধকায় আমূলের একটি ডেয়ারি প্ল্যান্ট, রাজকোটে একটি ইন্ডোর স্পোর্টর্স কমপ্লেক্সের নির্মাণ, দুটি পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প এবং রেল ও সড়ক পথের আরও বেশ কয়েকটি কর্মসূচি।

এই উপলক্ষে এক সমাবেশে ভাষণদানকালে শ্রী মোদী বলেন যে বছরের এই সময়টিতে বেশ কিছু নতুন নতুন সঙ্কল্প আমরা গ্রহণ করে থাকি এবং সেগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মযজ্ঞেরও সূচনা হয়। তিনি বলেন, দেশের ছয়টি স্থানের মধ্যে রাজকোট হল অন্যতম যেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নির্মিত ১,১৪৬টি বাড়ি আজ উৎসর্গ করা হয়েছে। দীপাবলীর আগে এই ঘটনাকে এক আনন্দময় মুহূর্ত বলে বর্ণনা করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ২১ বছরে কেন্দ্র ও গুজরাট সরকার মিলিতভাবে স্বপ্নের বাস্তবায়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে তাও বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। রাজকোট থেকে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। এই অঞ্চলেরই একটি বিদ্যালয়ে আমার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। এই শহরটিতে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে একদা এসেছিলেন স্বয়ং মহাত্মা গান্ধীও। তাই এই শহরটির ঋণ আমি কোনদিনই পরিশোধ করতে পারব না। 

রাজকোট সহ সমগ্র গুজরাটের উন্নত আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে শ্রী মোদী বলেন, এখানকার তরুণরা বর্তমানে গভীর রাত পর্যন্ত নির্ভয়ে বাইরের কাজ করতে পারেন। এই ঘটনা আমাদের মনে এক ধরনের সন্তোষ এনে দিয়েছে কারণ, এক সময় দাগী অপরাধী, মাফিয়ারাজ, দাঙ্গাবাজ, সন্ত্রাসবাদী এবং অন্যান্য কুখ্যাত অপরাধীদের মোকাবিলা করতে আমাদের ব্যস্ত থাকতে হত। আমাদের সেই চেষ্টা বিফল হয়নি। 

শ্রী মোদী বলেন, বিগত দশকগুলিতে প্রতিনিয়ত আমাদের প্রচেষ্টাই ছিল গুজরাটবাসী যেন একাধারে দক্ষ ও কাজকর্মে চৌখস হয়ে উঠতে পারেন। এজন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তা আমরা করেছি এবং এখনও করে যাচ্ছি। ‘এক উন্নত ভারত গঠনের লক্ষ্যে উন্নত গুজরাট গড়ে তোলা’কে আমাদের কর্মযজ্ঞের একটি মঞ্চ বলেই আমরা মনে করেছি। একদিকে যেমন আমরা শিল্পোন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছি, অন্যদিকে তেমনই ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাট’ অভিযানের মধ্য দিয়ে বিনিয়োগ প্রচেষ্টাকেও আমরা উৎসাহিত করেছি। ‘কৃষি মহোৎসব’ এবং গরীব কল্যাণ মেলা’র মাধ্যমে দরিদ্র গ্রামবাসীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যেও আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা লক্ষ্য করেছি যে দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়ন তাঁদের দ্রুত দারিদ্র্যের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। যদি কোনো মানুষের জীবনে প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদার অভাব ঘটে, তাহলে সে কখনই দারিদ্র্যকে জয় করতে পারে না। উপযুক্ত শৌচাগার, বিদ্যুতের সুবিধা, পাইপলাইনের মাধ্যমে জলের যোগান, রান্নার গ্যাস এবং ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যে সমস্ত বাড়ি গড়ে তোলা হচ্ছে এবং হয়েছে, তা দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নের লক্ষ্যেই রূপায়িত। একইভাবে রোগ-ব্যাধি একটি দরিদ্র পরিবারকে চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখে এনে দাঁড় করায়। এই ধরনের শোচনীয় পরিস্থিতির যাতে ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেই লক্ষ্যে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ এবং পিএমজেএওয়াই-এমএ-র মতো কর্মসূচিগুলি রূপায়িত হচ্ছে যার আওতায় দরিদ্র পরিবারগুলির জন্য নিখরচায় উন্নতমানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারগুলি দরিদ্র মানুষের শোচনীয় পরিস্থিতির কোনো খোঁজখবর রাখত না। দরিদ্র মানুষের জন্য তাদের মধ্যে কোনরকম অনুভূতিই কাজ করত না। সেই কারণে ‘গরীবি হটাও’ এবং ‘রোটি কাপড়া অউর মাকান’-এর মতো স্লোগানগুলি শুধুমাত্র স্লোগানই থেকে গিয়েছিল। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন যে সড়ক, বাজার, শপিং মল এবং প্লাজা ছাড়াও নগর জীবনের উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের আরও একটি দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের সরকার উপলব্ধি করেছে যে রাস্তায় বসে যাঁরা পণ্য বিক্রি করেন তাঁদের জন্যও আমাদের কিছু করা প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে আমরা তাঁদের সঙ্গে ব্যাঙ্কগুলির একটি যোগসূত্র স্থাপন করে দিয়েছি। খুব সহজ শর্তেই তাঁরা এখন ঋণের সুবিধা পাচ্ছেন ব্যাঙ্কগুলি থেকে। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন সম্পর্কেও তাঁরা এখন আরও বেশি মাত্রায় সচেতন হয়ে উঠছেন। এর ফলে, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিটিও ক্রমপ্রসারিত হচ্ছে। 

রাজকোটে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অণু শিল্পের প্রসার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে শ্রী মোদী বলেন, একটি শিল্প নগরী হিসেবে রাজকোটের বিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে। সেইসঙ্গে এখানকার ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অণু শিল্প সংস্থাগুলির জন্যও শহরটি বিশেষভাবে পরিচিত। গত দু’দশকে রাজকোট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং উৎপাদন সামগ্রীর রপ্তানির মাত্রা ৫ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করে গেছে। ঐ সময়কালের মধ্যে এখানকার কলকারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ এবং শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে আরও বহুগুণ। এখানে কাজের পরিবেশ অনুকূল হওয়ায় হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানও সম্ভব হয়েছে। মোরবীর সেরামিক টালি আজ বিশ্ব বিখ্যাত। বিশ্বের সেরামিক উৎপাদনের মোট চাহিদার ১৩ শতাংশই উৎপাদিত হয় এখানে। রপ্তানির দিক থেকেও মোরবীর বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। মোরবী-তে উৎপাদিত সামগ্রী ছাড়া ঘরের মেঝে, বাথরুমের দেওয়াল এবং শৌচাগার নির্মাণ বোধহয় অসম্পূর্ণই থেকে যায়। এই কারণে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে মোরবী-তে গড়ে তোলা হচ্ছে একটি সেরামিক্স পার্ক।

পরিশেষে, প্রগতিশীল শিল্পনীতি গ্রহণ করার জন্য গুজরাট সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল, কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী হরদীপ সিং পুরী, আবাসন ও নগর বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শ্রী কৌশল কিশোর, গুজরাটের প্রাক্তন রাজ্যপাল শ্রী বাজিভাই ভালা, রাজ্যের ভূতপূর্ব মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিজয় রুপানি এবং সাংসদ শ্রী মোহনভাই কুন্ডরিয়া ও শ্রী রামাভাই কুমারিয়া।

 

PG/SKD/DM/



(Release ID: 1870636) Visitor Counter : 145