প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

গতি শক্তি ও গতিময়তাই হল নতুন ভারত গড়ে তোলার পূর্ব শর্ত


গান্ধীনগর-মুম্বাই রুটে ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ ট্রেন এবং আমেদাবাদ মেট্রো রেল প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের সূচনা অনুষ্ঠানে মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর

Posted On: 30 SEP 2022 5:24PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

 

ভারতমাতা কি জয়! 

ভারতমাতা কি জয়!

ভারতমাতা কি জয়!

আত্মনির্ভর ভারত গঠনের লক্ষ্যে একুশ শতকে আজ হল একটি বিশেষ দিন। একইসঙ্গে দেশের শহরাঞ্চলগুলির মধ্যে যোগাযোগ প্রসার কর্মসূচির পক্ষেও এটি একটি বিশেষ মুহূর্ত। কিছুক্ষণ আগেই গান্ধীনগর-মুম্বাই রুটে দ্রুতগামী ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ ট্রেনটির যাত্রী হিসেবে আমি এক বিশেষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। মাত্র কয়েক মিনিটের যাত্রা হলেও তা আমার কাছে ছিল এক গর্বের মুহূর্ত। এটি হল ভারতের তৃতীয় এবং গুজরাটের প্রথম ‘বন্দে ভারত’ ট্রেন। আমার ক্ষণিকের এই যাত্রাপথে দপ্তরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা এই ট্রেনের গতি এবং ব্যবস্থা সম্পর্কে নানারকম তথ্য আমাকে দিয়েছেন। শুধুমাত্র গতি নয়, এই ট্রেনটির যাত্রাপথে আওয়াজও সেরকমভাবে আমার কানে এসে পৌঁছেয়নি। একটি যাত্রীবাহী বিমানের যাত্রীর মতো এই ট্রেনটিতে যাত্রা করার সমান অভিজ্ঞতা আমি আজ অর্জন করলাম। কখনও কখনও আমার মনে হয়েছে, বিমান যাত্রাপথে যে আওয়াজ আমরা শুনে থাকি তা বোধহয় ‘বন্দে ভারত’ ট্রেন চলার আওয়াজের থেকে অনেকগুণ বেশি। গতির সাথে সাথে এই শব্দের বিষয়টিও যদি কেউ লক্ষ্য করে থাকেন তাহলে আমার মনে হয় যে বিমান যাত্রী হওয়ার পরিবর্তে ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনের যাত্রী হওয়াকেই তাঁরা বেশি পছন্দ করবেন। 

ভাই ও বোনেরা,

একুশ শতকের ভারত নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলেছে এবং তাতে উৎসাহ সঞ্চারিত হয়েছে দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলি থেকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দেশের শহরাঞ্চলকে আমরা নিরন্তরভাবে আধুনিক করে তোলার চেষ্টা করছি। এই কারণে শহরগুলিতে আধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকগুণ। সহজ ও মসৃণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবহণ মাধ্যম একে অপরের সম্পূরক। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আমেদাবাদে বিভিন্ন ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা সম্পর্কিত এক আন্তর্জাতিক শীর্ষ বৈঠকের আমি আয়োজন করেছিলাম। আমার যে মূল লক্ষ্য ছিল তা আজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। শহরগুলিতে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে গত আট বছরে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। গত আট বছরে দেশের ২৪টিরও বেশি শহরে মেট্রো প্রকল্পের কাজ রূপায়িত হয়েছে বা রূপায়িত হওয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। দেশের ছোট ছোট অনেকগুলি শহরকেই আজ আকাশপথে যুক্ত করা হয়েছে। ছোট ছোট শহরগুলির মধ্যে চালু হয়েছে ‘উড়ান’ কর্মসূচিটিও। গান্ধীনগর স্টেশন আজ বিশ্বমানের যে কোনো আধুনিক বিমানবন্দরের সঙ্গে তুলনীয়। মাত্র দু’দিন আগেই আমেদাবাদ রেল স্টেশনটিকেও আধুনিক করে গড়ে তোলার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বন্ধুগণ,

আগামী ২৫ বছরে দেশের শহরগুলি ভারতকে এক উন্নত রাষ্ট্র রূপে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। আমেদাবাদ, সুরাট, বরোদা, ভোপাল, ইন্দোর, জয়পুর ইত্যাদির মতো শহরগুলি আগামী ২৫ বছরে ভারতের ভাগ্য নিয়ন্তা হয়ে দাঁড়াবে। মনে রাখতে হবে যে এই বিনিয়োগ শুধুমাত্র সংযোগ ও যোগাযোগ গড়ে তোলার স্বার্থেই নয়, একইসঙ্গে বহু শহরে প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধা সহ স্মার্ট সুযোগ-সুবিধাও সম্প্রসারিত হবে এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে। শহরগুলির সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়ন ঘটবে শহরতলিগুলিরও। দুটি শহর একসঙ্গে কি করে গড়ে তোলা যায়, গান্ধীনগর ও আমেদাবাদ হল তার দুটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। আমরা এতদিন পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক-নিউ জার্সি – এই দ্বৈত শহরের কথাই শুনে এসেছি। কিন্তু, ভারতও এখন এদিক থেকে আর পিছিয়ে নেই। আমেদাবাদ-গান্ধীনগর দ্বৈত শহরের মডেলে আনন্দ-নাদিয়াদ, ভারুচ-আঙ্কোলেশ্বর, ভালসাদ-নাদিয়াদ, ভালসাদ-ভাপি, সুরাট-নবসারি, ভাদোদরা-হালোল কালোল, মোর্বি-ওয়াঙ্কানার এবং মেহসানা-কড়ি-র মতো আরও দ্বৈত শহর গড়ে উঠতে চলেছে গুজরাটে। প্রাচীন শহরগুলির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন শহরগুলিকেও গড়ে তোলা হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্যের দাবি পূরণের লক্ষ্যে। ‘গিফট সিটি’ হল এরই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ২০০৫-০৬ আর্থিক বছরে ‘গিফট সিটি’ গড়ে তোলার একটি ছক আমি প্রস্তুত করেছিলাম। অনেকের মনেই তখন সন্দেহ ছিল যে ভারতের মতো একটি দেশে এই ধরনের শহর গড়ে তোলা আদৌ সম্ভব কিনা। কিন্তু, সেই ‘গিফট সিটি’ আজ গড়ে উঠেছে আপনাদের চোখের সামনেই যা এখন দেশের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের এক বিশেষ কেন্দ্র রূপে চিহ্নিত হয়েছে। এক সময় আমেদাবাদে পরিবহণ বলতে ছিল শুধুমাত্র রেড বাস ও রিকশা। কিন্তু আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় পরিবহণের সার্বিক চিত্রটাই এখন বদলে গেছে। স্বপ্ন কিভাবে সত্যি হয়ে উঠতে পারে তা এখন আমরা প্রত্যক্ষ করছি। এই কাজকে সফল করে তোলার জন্য আপনাদের সকলকেই জানাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন।

আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা,

আমেদাবাদ-মুম্বাই যাত্রাপথে ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনের সূচনা এই দুটি শহরের মধ্যে যাতায়াতকে এক আরামদায়ক ও সুখকর অভিজ্ঞতা এনে দেবে। সাধারণ এক্সপ্রেস ট্রেনে আমেদাবাদ থেকে মুম্বাই যেতে সময় লাগে প্রায় ৭-৮ ঘন্টা। কখনও কখনও বা তারও বেশি। শতাব্দী এক্সপ্রেসে একই যাত্রাপথে যেতে সময় লাগে ৬-৭ ঘন্টা। কিন্তু, ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি আমেদাবাদ থেকে যাত্রীদের মুম্বাই পৌঁছে দেবে মাত্র সাড়ে পাঁচ ঘন্টার মধ্যে। এর গতি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল। বর্তমানে ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনটি নির্মিত হচ্ছে চেন্নাইতে। আজ আমি এই ট্রেনটির সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে এই ট্রেনটি প্রসঙ্গে এক আলোচনায় মিলিত হয়েছিলাম। তাঁরা আমাকে জানান যে তাঁরা শুধু সরকারের আদেশ বা নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনটিকে আরও দ্রুতগামী ও উন্নততর করে তুলতে তাঁরা সর্বতোভাবে প্রস্তুত। তাঁদের এই সঙ্কল্প আমাকে উৎসাহিত করেছে। আমি প্রাণিত হয়েছি তাঁদের এই আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে। একবার আমি কাশীর এক স্টেশনে রেলকর্মীদের প্রশ্ন করেছিলাম ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। তাঁরা আমাকে জানিয়েছিলেন যে মানুষ এখন অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় এই ট্রেনটিতে যাত্রা করতে বেশি পছন্দ করেন। আমি এর কারণ জিজ্ঞাসা করায় তাঁরা আমাকে বলেছিলেন যে দেশের দরিদ্র মানুষ এবং সাধারণ কর্মীদেরও পছন্দের তালিকায় রয়েছে এই ট্রেনটি। এর পেছনে তাঁদের যুক্তিও রয়েছে দুটি। প্রথমত, এই ট্রেনটির পরিসর বেশ বড়। ফলে, যাত্রীদের মালপত্র রাখারও যথেষ্ট সুবিধা সেখানে রয়েছে এবং দ্বিতীয়ত, তাঁরা খুব তাড়াতাড়ি তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। ফলে, তাঁদের কাজকর্মেরও অনেক সুবিধা হয়। ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ ট্রেনের এটিই হল মূল শক্তি।

বন্ধুগণ,

দেশে ‘ফেম’ কর্মসূচির আওতায় বৈদ্যুতিক বাস নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। এর ফলে বাস থেকে নির্গত ধোঁয়ার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। ফলে, পরিবেশও থাকবে সুরক্ষিত এবং সাধারণ মানুষ ধোঁয়া ও দূষণমুক্ত পরিবেশে বাসযাত্রা করতে পারবেন। বিদ্যুৎচালিত বাসগুলির গতিও হবে অনেক বেশি। এই কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত ৭ হাজারেরও বেশি বিদ্যুৎচালিত বাস চালু করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এর পেছনে প্রায় ৩,৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। গুজরাট শহরটির জন্য ইতিমধ্যেই ৮,৫০০টি বৈদ্যুতিক বাস চালু করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের বেশ কিছু বাস আজ এখানে তাদের যাত্রা শুরু করেছে। 

ভাই ও বোনেরা,

দীর্ঘদিন ধরে শহরগুলিকে যানজট থেকে মুক্ত করার কোনো প্রচেষ্টাই সেভাবে হয়নি। কিন্তু, বর্তমান ভারতে দ্রুত উন্নয়নের একটি পূর্ব শর্তই হল দ্রুতগতি। ‘গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান’-এর মাধ্যমে এবং ‘জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি’র আওতায় এই গতির বিষয়টি বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রেলপথে বিভিন্ন ট্রেনের গতি বৃদ্ধিও সরকারের এই আন্তরিক প্রচেষ্টারই একটি সফল বাস্তবায়ন। ভারতেই নির্মিত ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি গতির ক্ষেত্রে এক নতুন সংযোজন। ঘন্টায় ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে যাত্রার মাধ্যমে ভারতীয় রেলে এক নতুন দিশা আমরা গড়ে তুলতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য রয়েছে, আগামী বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে দেশে ৩৫টি ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ ট্রেন চালু করার। এই ট্রেনের একটি অপূর্ব বৈশিষ্ট্য হল এই যে মাত্র ৫২ সেকেন্ডের মধ্যে তা ১০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার মতো ক্ষমতা রাখে। চিতাগুলিকে যখন ভারতে নিয়ে আসা হয়, তখন তার গতির কথা, তার ক্ষিপ্রতার কথা আলোচিত হচ্ছিল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু এই ট্রেনটিও ৫২ সেকেন্ডের মধ্যে ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে সেই গতি ও ক্ষিপ্রতারই আরও একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। 

বন্ধুগণ,

পণ্যবাহী ট্রেনগুলির গতিও যখন বৃদ্ধি পাবে, তখন গুজরাট সহ দেশের বিভিন্ন বন্দরের কাজকর্মও আরও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হবে। ভারত তখন এক তীব্র গতিময়তার মধ্য দিয়ে পৌঁছে যাবে বিশ্বের নানা প্রান্তে। কারণ, আমাদের পণ্য রপ্তানি তখন শুধুমাত্র বৃদ্ধি পাবে তাই নয়, দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে যাবে বিভিন্ন গন্তব্যে। 

বন্ধুগণ,

গতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিকাঠামো প্রসার ও উন্নয়নের বিষয়টিকেও আজ বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গত আট বছরে দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিকাঠামো ব্যবস্থাকেও আমরা অত্যাধুনিক করে তুলেছি। মনে রাখতে হবে যে নিরন্তর উন্নয়ন ও অগ্রগতির পূর্ব শর্তই হল উপযুক্ত মানের শক্তিশালী পরিকাঠামো নির্মাণ। তাই, আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়টিকে আরও জোর দেওয়ার সময় এখন এসেছে কারণ, স্বাধীনতার অমৃতকালের যাত্রাপথে আমরা এখন এগিয়ে চলেছি এক স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। আমি বিশ্বাস করি যে ‘সবকা প্রয়াস’-এর মধ্য দিয়েই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্য পূরণের কাজেও আমরা সফল হব।

বন্ধুগণ,

আমি মনে করি যে ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনটি তার যাত্রা শুরু করেছে ভারতমাতার এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্য পূরণের অঙ্গীকার নিয়ে। 

ভারতমাতা কি জয়! 

ভারতমাতা কি জয়!

ভারতমাতা কি জয়!

অসংখ্য ধন্যবাদ!

প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে।

 

PG/SKD/DM/



(Release ID: 1864697) Visitor Counter : 133