প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

মধ্যপ্রদেশের শেওপুরে আয়োজিত মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 17 SEP 2022 5:47PM by PIB Kolkata

 

নয়াদিল্লি, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ভারতমাতা কি - জয়,

ভারতমাতা কি - জয়,

ভারতমাতা কি - জয়,

মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রদ্ধেয় শ্রী মঙ্গুভাই প্যাটেল, মধ্যপ্রদেশের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় শ্রী শিবরাজ সিং চৌহান, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহকর্মীগণ, মধ্যপ্রদেশ সরকারের মাননীয় মন্ত্রীগণ, উপস্থিত অন্যান্য সাংসদ ও বিধায়ক বন্ধুগণ, বিপুল সংখ্যায় সমাগত অন্যান্য সকল শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ এবং আজ এই কর্মসূচির মধ্যমণি যাঁরা, যাঁদের জন্য এই কর্মসূচি, বৃহৎ সংখ্যায় উপস্থিত এহেন মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যুক্ত মা ও বোনেদের প্রণাম।

 

আজ সকলকে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী সম্মেলনে স্বাগত জানাই। একটু আগেই আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এবং আমাদের নরেন্দ্র সিং তোমরজী আমার জন্মদিনের কথা স্মরণ করছিলেন। আমার বেশি মনে থাকে না। কিন্তু যদি সুযোগ-সুবিধা হয়, যদি সেইদিন কোনও বিশেষ কর্মসূচির দায়ভার না থাকে, তা হলে সাধারণত আমি সেইদিন মায়ের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি। তাঁর পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করি। আজ আমি মায়ের কাছে যেতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু মধ্যপ্রদেশের জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার ও অন্যান্য সমাজের গ্রামে গ্রামে পরিশ্রম করে সংসার প্রতিপালন করা এই লক্ষ লক্ষ মায়েরা আজ আমাকে আশীর্বাদ দিচ্ছেন। এই দৃশ্য আজ আমার মা যখন দেখবেন, তখন তিনি অবশ্যই খুব খুশি হবেন। তিনি ভাববেন, আমার ছেলে আজ আমার কাছে না এলেও লক্ষ লক্ষ মায়েরা তাঁকে আশীর্বাদ দিয়েছেন। আজ যখন এত বিপুল সংখ্যায় মা-বোন ও কন্যারা এসেছেন, আপনাদের আশীর্বাদ আমাদের সকলের জন্য অনেক বড় শক্তি। একটি অনেক বড় প্রাণশক্তি – একটি প্রেরণা। আমার জন্য দেশের মা ও বোনেরা, দেশের কন্যারা আমার সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ, শক্তির উৎস, আমার প্রেরণা।

এত বিপুল সংখ্যায় সমাগত ভাই ও বোনেরা, আপনারা সকলে জানেন যে, আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ বিশ্বকর্মা পুজো হচ্ছে। এই বিশ্বকর্মা জয়ন্তীতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির এত বড় সম্মেলনকে আমি বিশেষ দৃষ্টিতে দেখছি। আমি আপনাদের সকলকে এবং আপনাদের মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসীকে বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আজ আমি আরেকটি কারণে খুব খুশি, তা হ’ল – ভারতের মাটিতে ৭৫ বছর পর চিতা আবার ফিরে এসেছে। কিছুক্ষণ আগেই আমার কুনো ন্যাশনাল পার্কে সেই চিতাগুলিকে অর্গলমুক্ত করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমি আপনাদের একটি অনুরোধ জানাতে চাই, জানাবো? আপনারা জবাব দিন, তা হলেই জানাবো। কি অনুরোধ করবো? সবাইকে অনুরোধ করবো? এই মঞ্চে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদেরকেও অনুরোধ করবো? আপনাদের সকলকে বলতে হবে, হ্যাঁ করুন? আজ এই ময়দান থেকে আমি গোটা বিশ্বকে একটি বার্তা দিতে চাই। আজ যখন ৮টি চিতা প্রায় ৭৫ বছর পর আমাদের দেশের মাটিতে ফিরে এসেছে, সুদূর আফ্রিকা থেকে এসেছে, দীর্ঘ সফর করে এসেছে, আমাদের অনেক আদরের অতিথিরা এসেছে – এই অতিথিদের সম্মানে আমি একটি কাজের কথা বলতে চাই, করবেন? এই অতিথিদের সম্মানে আমরা সবাই নিজের জায়গায় উঠে দাঁড়িয়ে দু’হাত উপরে তুলে হাততালি দিয়ে স্বাগত জানাবো। জোরে হাততালি দিন, আর যাঁরা আমাদের এই চিতাগুলি দিয়েছেন, সেই দেশের জনগণকেও আমরা ধন্যবাদ জানাবো। যাঁরা দীর্ঘ অন্তরালের পর আমাদের এই কামনা পূরণ করেছে, জোরে জোরে হাততালি দিন বন্ধুগণ। আমি আপনাদের সকলের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।

আমি দেশের জনগণকে, মধ্যপ্রদেশের নাগরিকদের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। কিন্তু এর থেকেও বেশি শুভেচ্ছা আমি জানাই আপনাদের সকলকে, এই এলাকার নাগরিকদের বিশেষ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ভারত তো অনেক বড় দেশ। অরণ্যও অনেক রয়েছে। অনেক অরণ্যেই বন্যপশুরা রয়েছে। কিন্তু, কেন্দ্রীয় সরকার এই চিতাগুলিকে আপনাদের অরণ্যে আনার সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছে? আপনারা কি কখনও ভেবে দেখেছেন? এটাই তো আসল কথা। এই চিতাগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকার আপনাদের দায়িত্বে এজন্য দিয়েছে, কারণ আপনাদের উপর আমাদের ভরসা রয়েছে। আপনারা নিজেরা শত কষ্ট সহ্য করে হলেও এই চিতাদের উপর কোনও আঁচ আসতে দেবেন না – এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সেজন্য আজ আমি আপনাদের সবাইকে এই ৮টি চিতার দায়িত্ব অর্পণ করার জন্য এসেছি। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এদেশের মানুষ কখনও আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করেননি। মধ্যপ্রদেশের মানুষ কখনও আমার বিশ্বাসে আঁচ লাগতে দেননি। আর এই শেওপুর এলাকার জনগণের উপর আমার সম্পূর্ণ ভরসা রয়েছে। আজ মধ্যপ্রদেশের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে রাজ্যে ১০ লক্ষ বৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার প্রতি আপনাদের সকলের এই সংগঠিত প্রচেষ্টা ভারতের পরিবেশ প্রেম, বৃক্ষ-গুল্মের মধ্যেও যেদেশ পরমাত্মা দর্শন করে, আমার সেই দেশের জন্য আপনাদের এই প্রচেষ্টা একটি নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চার করবে।

বন্ধুগণ,

বিগত শতাব্দীর ভারত আর বর্তমান শতাব্দীর নতুন ভারতের মধ্যে অনেক বড় ব্যবধান সৃষ্টি করেছে আমাদের নারী শক্তি। আজকের নতুন ভারতে পঞ্চায়েত ভবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত নারী শক্তির জয় পতাকা উড়ছে। আমাকে বলা হয়েছে যে, এই শেওপুর জেলাতেও একজন জনজাতি ভগিনী জেলা পঞ্চায়েতে অধ্যক্ষা রূপে কাজ করছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সমগ্র মধ্যপ্রদেশে প্রায় ১৭ হাজার ভগিনী জনপ্রতিনিধি রূপে নির্বাচিত হয়েছেন। এটা অনেক বড় বদলের সংকেত, বড় পরিবর্তনের আহ্বান।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতা আন্দোলনে সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে শুরু করে সত্যাগ্রহ পর্যন্ত কোনও ক্ষেত্রেই দেশের নারীরা পিছিয়ে ছিলেন না। আজ যখন ভারত তার স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে, তখন আমরা সবাই দেখেছি, কিভাবে বাড়িতে বাড়িতে ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের সমস্ত মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সদস্যরাও এক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে। আপনাদের তৈরি করা ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকাগুলি আমাদের জাতীয় গৌরবের এই মুহূর্তকে উজ্জ্বলতর করে তুলেছে। করোনাকালে সংকটের সেই কঠিন সময়ে সকল মানুষের সেবার ইচ্ছে নিয়ে আপনারা অনেক বেশি সময় পরিশ্রম করে বিপুল পরিমাণে মাস্ক বানিয়েছেন, পিপিই কিটস্‌ বানিয়েছেন, আর তারপরই এই লক্ষ লক্ষ ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা অর্থাৎ একের পর এক প্রতিটি কাজে দেশের নারীশক্তি প্রত্যেক চ্যালেঞ্জকে নিজেদের পরিশ্রমের মাধ্যমে মোকাবিলা করেছে আর দেশবাসীর মনে নতুন বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছেন। এভাবেই আপনারা নিজেদের নারীশক্তির পরিচয়ও তুলে ধরেছেন। সেজন্য আজ আমি অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে একটি মন্তব্য করতে চাই। বিগত ২০-২২ বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলতে চাই। আপনাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির যখন জন্ম হয়, সাধারণত ১০-১২ জন বোন একত্রিত হয়ে কোনও কাজ শুরু করেন। যখন আপনাদের কাজ শুরু হয়, আপনারা একেকটি লক্ষ্য রেখে সেই লক্ষ্য পূরনের চেষ্টা করতে থাকেন। কিছু টাকা এখান থেকে – কিছু টাকা ওখান থেকে জোগাড় করার চেষ্টা করেন। সেজন্যই তো স্বনির্ভর গোষ্ঠী। কিন্তু আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, আপনাদের প্রবল ইচ্ছা শক্তি, আপনাদের সংকল্প ও ক্রমে গড়ে ওঠা কর্মদক্ষতার ফলে দেখতে দেখতে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি রাষ্ট্র সহায়ক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির এই শক্তি স্বাধীনতার অমৃতকালে বিকশিত ভারত, আত্মনির্ভর ভারত নির্মাণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য আজ দায়বদ্ধ।

বন্ধুগণ,

আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যে যে ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে, সেই ক্ষেত্রগুলিতে, সেই কাজে সাফল্য সুনিশ্চিত হয়ে যায়। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সাফল্য এর সবেচেয়ে বড় উদাহরণ। সারা দেশের মহিলারাই এই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজ গ্রামে গ্রামে কৃষি, পশুপালন, ডিজিটাল পরিষেবা, শিক্ষা, ব্যাঙ্কিং, বীমা, মার্কেটিং, গুদামজাতকরণ, পুষ্টি অভিযান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবস্থাপনার সঙ্গে আমাদের বোন ও মেয়েদের যুক্ত করা হচ্ছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এই ক্ষেত্রে দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমাদের বোন ও মেয়েরা কিভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন; কেউ পশু সখী রূপে, কেউ কৃষি সখী রূপে, কেউ ব্যাঙ্ক সখী রূপে, কেউ পুষ্টি সখী রূপে, অন্যরা এরকমই বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নিয়ে অসাধারণ কাজ করছেন। আপনাদের সফল নেতৃত্ব, সফল অংশীদারিত্বের আরেকটি উজ্জ্বল উদাহরণ হ’ল – জল জীবন মিশন। কিছুক্ষণ আগে আমার একজন বোনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার এই অভিযানে মাত্র তিন বছরে ৭ কোটি বাড়িতে নতুন নল বাহিত জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মধ্যপ্রদেশেও ৪০ লক্ষ পরিবারে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে গেছে। এভাবে যেখানে যেখানে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে যাচ্ছে, সেখানকার মা ও বোনেরা আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকারকে অনেক আশীর্বাদ দিচ্ছেন। আমি এই সফল অভিযানে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব আমার দেশের মা ও বোনেদের দিতে চাই। আমাকে বলা হয়েছে যে, মধ্যপ্রদেশে তিন হাজারেরও বেশি নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্পগুলির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আজ মহিলা চালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি নিয়েছে। এভাবে তাঁরা রাষ্ট্র সহায়ক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। ‘পানী সমিতি’গুলিতে বোনেদের অংশীদারিত্ব পাইপলাইনের দেখভাল থেকে শুরু করে জলের গুণমান পরীক্ষা – এই সকল ক্ষেত্রে আমাদের বোনেরা প্রশংসনীয় কাজ করছেন। তাঁরা যাতে এই কাজ আরও ভালোভাবে করতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করতে আজ এখানে প্রত্যেককে কিটস্‌ দেওয়া হয়েছে।

বন্ধুগণ,

বিগত ৮ বছরে আমরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে সবধরনের চেষ্টা করেছি। আজ সারা দেশে ৮ কোটিরও বেশি বোনেরা এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ, একভাবে বলতে গেলে, ৮ কোটি পরিবার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আমাদের লক্ষ্য হ’ল – প্রত্যেক গ্রামীণ পরিবারে ন্যূনতম একজন মহিলা, একজন বোন, মেয়ে কিংবা মা যাতে এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হন। আমাদের মধ্যপ্রদেশেরও ৪০ লক্ষেরও বেশি বোন স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। রাষ্ট্রীয় আজীবিকা মিশনের মাধ্যমে ২০১৪ সালের আগে ৫ বছরে যত সাহায্য করা হয়েছে, বিগত ৭ বছরে তার প্রায় ১৩ গুণ বেশি সাহায্য করা হয়েছে। আগে যেখানে প্রত্যেক স্বনির্ভর গোষ্ঠী কোনও গ্যারান্টি ছাড়া ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেত, এখন সেই সীমা দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২০ লক্ষ করা হয়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ক্ষেত্রে নতুন ইউনিট খুলতে ১০ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত সাহায্য করা হচ্ছে। দেখুন, আমাদের সরকার দেশের মা-বোনেদের সততার উপর তাঁদের প্রচেষ্টা ও ক্ষমতার উপর কতটা ভরসা করে যে, ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে প্রস্তুত।

বন্ধুগণ,

গ্রামের অর্থ ব্যবস্থায় মহিলা শিল্পোদ্যোগীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, তাঁদের জন্য নতুন নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে আমাদের সরকার নিরন্তর কাজ করে চলেছে। ‘এক জেলা, এক পণ্য’ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা প্রত্যেক জেলার স্থানীয় পণ্যকে বড় বাজারগুলিতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এর ফলে, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি অত্যন্ত লাভবান হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে এখানে ‘এক জেলা, এক পণ্য’ অভিযানের সঙ্গে যুক্ত বোনেদের সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তাঁদের উৎপাদিত কিছু পণ্য দেখার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু পণ্য তো আমাকে উপহারও দেওয়া হয়েছে। গ্রামের বোনেদের তৈরি করা এই পণ্যগুলি শুধু আমার জন্য নয়, সারা দেশের জন্য অমূল্য। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, মধ্যপ্রদেশে আমাদের শিবরাজজীর নেতৃত্বাধীন সরকার আপনাদের উৎপাদিত পণ্যগুলিকে বাজারজাত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। মধ্যপ্রদেশ সরকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যুক্ত বোনেদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার স্বার্থে অনেক নতুন গ্রামীণ বাজার গড়ে তুলেছে। আমাকে বলা হয়েছে যে, এই বাজারগুলিতে ইতিমধ্যেই রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি ৫০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের পণ্য বিক্রি করেছে। অর্থাৎ, এই পরিমাণ টাকা আপনাদের পরিশ্রমের ফলেই আপনাদের হাতে এসে পৌঁছেছে।

বন্ধুগণ,

জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে যত অরণ্য সম্পদ রয়েছে, সেগুলিকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে আমাদের আদিবাসী বোনেরা প্রশংসনীয় কাজ করছেন। মধ্যপ্রদেশ সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে লক্ষ লক্ষ জনজাতি বোনেরা প্রধানমন্ত্রী বন ধন যোজনার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন। মধ্যপ্রদেশে বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের বোনেদের উৎপাদিত অসাধারণ সব পণ্য অনেক বেশি প্রশংসা কুড়িয়েছে। ‘পিএম কৌশল বিকাশ যোজনা’র মাধ্যমে জনজাতি এলাকাগুলিতে নতুন নতুন দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে, যা এই প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।

মা ও বোনেরা,

আজকাল অনলাইন কেনাকাটার প্রচলন বাড়ছে। সেজন্য সরকারও জেম বা গভর্নমেন্ট ই-মার্কেট পোর্টাল চালু করেছে। সেখানেও আপনাদের উৎপাদিত পণের জন্য ‘সরস’ নাম একটি বিশেষ স্থান রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে আপনারা আপনাদের উৎপাদিত পণ্য সরকারি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগকে বিক্রি করতে পারবেন। যেমন এই শেওপুরের কাঠের কারুকার্য অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। সারা দেশে এর চাহিদা রয়েছে। আমার অনুরোধ যে, আপনারা সকলে নিজেদেরকে এবং নিজেদের পণ্যকে এই জেম পোর্টালে নথিভুক্ত করান।

বন্ধুগণ,

এই সেপ্টেম্বর মাসটি পুষ্টি মাস হিসাবে পালন করা হচ্ছে। ভারতের প্রচেষ্টায় রাষ্ট্রসংঘ ২০২৩ সালকে আন্তর্জাতিক স্তরে মোটা দানাশস্য বর্ষ রূপে পালনের কথা ঘোষণা করেছে। মধ্যপ্রদেশ তো এহেন পুষ্টি সমৃদ্ধ মোটা দানা শস্য চাষের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে অগ্রণী রাজ্যগুলির অন্যতম। আমাদের জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে এই মোটা দানা শস্যের জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমাদের সরকার কোদো, কুটকি, জোয়ার, বাজরা এবং রাগির মতো মোটা দানার শস্য চাষকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে। আমি তো ঠিক করেছি যে, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনও বিদেশি অতিথিকে আপ্যায়ন করার সময় তাঁর খাবার টেবিলে কোনও না কোনও মোটা দানার শস্য থেকে তৈরি রান্নার পদ রাখবো। কারণ, আমার দেশের ক্ষুদ্র কৃষকরাই এই মোটা দানার শস্য চাষ করেন। সেজন্য বিদেশি অতিথিদের থালায় সেই শস্যের পদই পরিবেশন করা উচিৎ। আমি নিশ্চিত, এক্ষেত্রে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য অনেক সম্ভাবনার দরজা খুলবে।

বন্ধুগণ,

একটা সময় ছিল, যখন বাড়ির মধ্যেই মা ও বোনেদের অনেক সমস্যা ছিল। বাড়ির বিভিন্ন সিদ্ধান্তে তাঁদের ভূমিকা অত্যন্ত সীমিত ছিল। অনেক বাড়ি তো এমন ছিল, যেখানে পিতা-পুত্র ব্যবসা নিয়ে কথা বলার সময় যদি মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতেন, তখন ছেলে কিংবা বাবা বলে দিতেন, তুমি রান্নাঘরে যাও, এখানে নাক গলিও না। আজ আর সেই দিন নেই। আজ মা ও বোনেদের পরামর্শ পরিবারে তাঁদের গুরুত্ব বাড়াচ্ছে। এই গুরুত্ব বৃদ্ধির পেছনে আমাদের সরকারের সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা রয়েছে। আগে এরকম সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা আগে কখনও হয়নি। ২০১৪ সালের পর থেকেই দেশ মহিলাদের গরিমা বৃদ্ধি, তাঁদের সামনে উঠে আসা সমস্যাগুলির সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে। শৌচালয়ের অভাবে মহিলাদের যত সমস্যা হ’ত। রান্নাঘরে কাঠের উনুনে ধোঁয়ায় যে সমস্যা হ’ত, জলের জন্য যেভাবে ২-৪ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হ’ত – আপনারা এই সমস্যাগুলির কথা খুব ভালোভাবেই জানেন। দেশে ১১ কোটিরও বেশি শৌচালয়ের মাধ্যমে, উজ্জ্বলা যোজনায় ৯ কোটিরও বেশি রান্নার গ্যাস সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে আর কোটি কোটি পরিবারে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দিয়ে আপনাদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে।

মা ও বোনেরা,

গর্ভাবস্থায় কত রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হ’ত, তা আপনারাই সবচেয়ে ভালো জানেন। ভালো খাদ্য ও পানীয় পাওয়া যেত না, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। এই সমস্ত সমস্যা দূর করার কথা মাথায় রেখে আমাদের সরকার মাতৃ বন্দনা যোজনা চালু করেছে। এর মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি সরাসরি গর্ভবতী মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রত্যক্ষ নগর হস্তান্তরের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মায়েরাও এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা পেয়েছেন। আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থাও গরীব পরিবারের বোনেদের অনেক সাহায্য করেছে।

মা ও বোনেরা,

‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযানের সুপরিণাম আজ দেশ বুঝতে পারছে। মেয়েরা যাতে সুশিক্ষিত হয়ে ওঠেন, তাদের যাতে স্কুলছুট না হতে হয়, তা সুনিশ্চিত করতে প্রত্যেক বিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে। স্যানিটারি ন্যাপকিনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার মাধ্যমে প্রায় আড়াই কোটি ছাত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

বন্ধুগণ,

আজ জন ধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি দেশে মহিলাদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অনেক বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। করোনা সঙ্কটকালে সরকার যে আপনাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠাতে পেরেছে, তার পেছনে এই জন ধন অযাকাউন্টেরই শক্তিকে কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। আমাদের দেশে সম্পত্তির মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষমতা পুরুষদের হাতেই ছিল। কৃষি ক্ষেত্র, দোকান, বাড়ি-গাড়ি, স্কুটার - সবকিছুই পুরুষের নামে। মহিলাদের নামে কিছুই না। স্বামীর অবর্তমানে এই সবকিছুই পুত্রের নামে চলে যেত। আমরা এই ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে আমার মা ও বোনেদের শক্তি যুগিয়েছি। আজ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে যত বাড়ি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলি আমরা সরাসরি মহিলাদের নামে দিচ্ছি। আমাদের সরকার দেশের ২ কোটিরও বেশি মহিলাকে নিজের বাড়ির মালিকানা দিয়েছে। এটা অনেক বড় পদক্ষেপ মা ও বোনেরা। মুদ্রা যোজনার মাধ্যমেও সারা দেশে এখনও পর্যন্ত ১৯ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ কোনও রকম গ্যারান্টি ছাড়া অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে। যাঁরা ছোট ছোট ব্যবসা বা শিল্প উৎপাদনের কাজ করছেন, এই ঋণের প্রায় ৭০ শতাংশ প্রদান করা হয়েছে আমার মা ও বোনেদের, যাঁরা ব্যবসা কিংবা ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত, সরকারের এ ধরনের প্রচেষ্টার ফলেই আজ বাড়ির অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলির ক্ষেত্রে মহিলাদের ভূমিকা ক্রমে বাড়ছে।

বন্ধুগণ,

মহিলাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তাঁদেরকে সমাজে ততটাই শক্তিশালী করে তোলে। আমাদের সরকার মেয়েদের জন্য যত ধরনের দরজা বন্ধ ছিল, সমস্ত দরজার কপাট উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এখন মেয়েরা সৈনিক স্কুলগুলিতেও ভর্তি হচ্ছে। পুলিশ কমান্ডোতে প্রশিক্ষিত হয়ে দেশের সেবা করছে। শুধু তাই নয়, দেশের সীমান্তে এখন ভারত মায়ের সন্ততিরা দেশ মাতৃকার সুরক্ষার কাজে অংশগ্রহণ করছেন, সীমা সুরক্ষা বল ও সেনাবাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে। বিগত ৮ বছরে সারা দেশে পুলিশ সেবায় মহিলাদের সংখ্যা ১ লক্ষ থেকে বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। অর্থাৎ, ২ লক্ষেরও বেশি মহিলারা এখন পুলিশে কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে যত আধা-সামরিক বাহিনী রয়েছে, সেখানেও আজ আমাদের ৩৫ হাজারেরও বেশি কন্যা দেশের শত্রু ও সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তাঁরা সন্ত্রাসবাদীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন। এই সংখ্যা ৮ বছর আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থাৎ, পরিবর্তন আসছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আসছে। আমি আপনাদের শক্তিকে সম্পূর্ণ ভরসা করি। সকলের প্রচেষ্টায় একটি উন্নত সমাজ ও শক্তিশালী দেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই সফল হব। আপনারা সবাই এত বিপুল সংখ্যায় এখানে এসে আমাদেরকে আশীর্বাদ দিয়েছেন। এভাবে আপনাদের জন্য আরও অনেক বেশি কাজ করার প্রেরণা পেয়েছি। আপনারা আমাকে শক্তি দিয়েছেন, সেজন্য আমি আপনাদেরকে হৃদয় থেকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

আমার সঙ্গে দু’হাত উপরে তুলে উচ্চস্বরে বলুন -

ভারতমাতা কি - জয়,

ভারতমাতা কি - জয়,

ভারতমাতা কি - জয়,

ভারতমাতা কি – জয়।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

PG/SB/SB



(Release ID: 1860844) Visitor Counter : 149