প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

উত্তরপ্রদেশের কানপুরের পরৌঁখ গ্রামে একটি জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 03 JUN 2022 9:39PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩ জুন, ২০২২

 

নমস্কার!

এই গ্রামের সন্তান পরৌঁখ গ্রামের মাটিতে জন্মগ্রহণকারী আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি মাননীয় শ্রী রামনাথ কোবিন্দজি, অনুষ্ঠানে উপস্থিত মাননীয়া শ্রীমতী কবিতা কোবিন্দজি, উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল মাননীয়া শ্রীমতী আনন্দিবেন প্যাটেলজি, উত্তরপ্রদেশের জনপ্রিয় এবং প্রাণশক্তিতে ভরপুর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথজি, মঞ্চে উপস্থিত আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শ্রদ্ধেয় বন্ধুগণ, উত্তরপ্রদেশ রাজ্য মন্ত্রিসভার মাননীয় মন্ত্রীগণ, মাননীয় সাংসদগণ, মাননীয় বিধায়কগণ আর বিপুল সংখ্যায় আগত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা।

রাষ্ট্রপতিজি যখন আমাকে বলেছিলেন যে আমাকে আজ এখানে আসতে হবে, তখন থেকে আপনাদের কাছে এসে গ্রামের সবার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। আজ এখানে এসে সত্যিই মনে অনেক শান্তি পেয়েছি, খুব ভালো লেগেছে। এই গ্রামের মানুষ আমাদের মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের শৈশবকেও দেখেছে, আর বড় হওয়ার পর তাঁকে প্রত্যেক ভারতবাসীর গর্ব হয়ে উঠতেও দেখেছে।

এখানে আসার আগে রাষ্ট্রপতিজি আমার কাছে এই গ্রামের অনেক স্মৃতিচারণ করেছেন। আমি জানতে পেরেছিলাম যে পঞ্চম শ্রেণী উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই তাঁকে ৫-৬ মাইল দূরের একটি গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি খালি পায়ে দৌড়তে দৌড়তে স্কুল পর্যন্ত যেতেন, আর এই দৌড় স্বাস্থ্য ভালো করার জন্য দৌড় ছিল না। প্রচন্ড গরমে উত্তপ্ত পায়ে চলা রাস্তার তাপ যেন পায়ে কম লাগে, জ্বালা যেন ন্যূনতম হয়, সেজন্যই তাঁকে এই দৌড় দৌড়তে হত!

আপনারা ভাবুন! এরকমই উত্তপ্ত দুপুরে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া কোনও বালক খালি পায়ে তার স্কুলে যাওয়ার জন্য ছুটছে। জীবনে এমন সংঘর্ষ, এমন তপস্যাই একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে। আজ রাষ্ট্রপতিজির গ্রামে আসার এই অভিজ্ঞতা আমার জীবনের একটি অত্যন্ত সুখকর স্মৃতি হয়ে থাকবে।

ভাই ও বোনেরা,

যখন আমি মাননীয় রাষ্ট্রপতিজির সঙ্গে এই গ্রামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম, তখন আমি এই পরৌঁখ গ্রামে আজকের ভারতের গ্রামের অনেক আদর্শ চিত্র অনুভব করছিলাম। এখানে এসে সবার আগে আমার পাথরী মাতার আশীর্বাদ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এই মন্দির এই গ্রামের, এই এলাকার আধ্যাত্মিক আভার পাশাপাশি ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এরও একটি উজ্জ্বল প্রতীক, আর আমি বলতে পারি যে এটি এমন একটি মন্দির, যেখানে দেবভক্তিও আছে, দেশভক্তিও আছে। দেশভক্তি এজন্য বলছি যে রাষ্ট্রপতিজির বাবার ভাবনাকে আমি প্রণাম জানাই। তাঁর অদ্ভূত কল্পনাশক্তিকে প্রণাম জানাই। তিনি তাঁর জীবনে তীর্থাটন বা অনেক তীর্থস্থান ভ্রমণ করতে গিয়েছেন। ভিন্ন ভিন্ন যাত্রায় দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে গিয়েছেন। ঈশ্বরের আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তেন। কখনও বদ্রীনাথ গিয়েছেন, কখনও কেদারনাথ গিয়েছেন। কখনও অযোধ্যা গিয়েছেন, কখনও কাশী গিয়েছেন। কখনও মথুরা গিয়েছেন আবার কখনও ভারতের এরকম অন্যান্য অনেক পবিত্র স্থানে গিয়েছেন।

সেই সময় তাঁর আর্থিক পরিস্থিতি এমন ছিল না যে গ্রামের সকলের জন্য প্রত্যেক তীর্থ থেকে তিনি প্রসাদ কিনে আনতে পারেন, আর গ্রামের সবাইকে বিতরণ করতে পারেন। তখন তাঁর মাথায় এই অদ্ভূত ভাবনা আসে, এই অদ্ভূত কল্পনা করেন যে প্রত্যেক তীর্থের পাথর তাঁদের গ্রামে আনবেন। এরপর থেকে তিনি যে তীর্থেই যেতেন, সেই মন্দির পরিসরের দু-একটা নুড়ি বা ছোট পাথর সেখান থেকে নিয়ে আসতেন, আর সেই পাথরগুলি গ্রামে এনে এখানে গাছের নিচে রেখে দিতেন। এভাবে ভারতের বিভিন্ন তীর্থযাত্রায় গিয়ে সেসব পবিত্র স্থান থেকে তিনি পাথর নিয়ে এসেছেন, ভারতের নানা প্রান্ত থেকে পাথর এনেছেন। এগুলির প্রতি তাঁর ভক্তিভাব গ্রামবাসীর মনে এমন একটি পবিত্রভাব জাগিয়ে তুলেছিল যে গ্রামবাসীরা এই পাথরগুলিকে মন্দির রূপেই পূজা করেন, আর প্রত্যেকেই জানেন যে এটা অমুক তীর্থক্ষেত্রের পাথর, তমুক মন্দির পরিসরের পাথর, কিংবা অমুক পবিত্র নদীর পাড় থেকে তুলে আনা পাথর। সেজন্য আমি বলছি যে এতে দেবভক্তি যেমন আছে, পাশাপাশি দেশভক্তিও আছে।

রাষ্ট্রপতিজির বাবা স্বয়ং এই মন্দিরে পুজো করতেন। এই পবিত্র মন্দিরের দর্শন করার পর স্বাভাবিকই আমার মনে অনেক ধরনের ভাবনা খেলা করছে, আর আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি যে আমার এই পবিত্র মন্দির দর্শন করার সৌভাগ্য হয়েছে।

বন্ধুগণ,

পরৌঁখ-এর মাটি থেকে রাষ্ট্রপতিজি যে শিষ্টাচার পেয়েছেন, তার সাক্ষী আজ হয়ে উঠছে গোটা বিশ্ব, আর আমি আজ দেখছিলাম যে একদিকে সংবিধান, আর অন্যদিকে শিষ্টাচার। আজ পরৌঁখ গ্রামে এসে রাষ্ট্রপতিজি তাঁর পদের সমস্ত মর্যাদা থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে যেভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তা আমাকে অভিভূত করে দিয়েছে। ভাবা যায়, তিনি স্বয়ং হেলিপ্যাডে আমাকে স্বাগত জানাতে এসেছিলেন! আমি অত্যন্ত লজ্জা অনুভব করছিলাম যে তাঁর নেতৃত্বে, তাঁর পথ প্রদর্শন অনুসারে আমরা কাজ করছি, তাঁর পদের একটি গরিমা রয়েছে, একটি বরিষ্ঠতা রয়েছে। তিনি সেগুলিকে এক পাশে রেখে দিয়ে আমাকে স্বাগত জানাতে এসেছেন। আমি বললাম রাষ্ট্রপতিজি, আপনি আজ আমার সঙ্গে অন্যায় করলেন। তখন তিনি অত্যন্ত সহজভাবে বললেন – সংবিধানের মর্যাদাগুলিকে তো আমি পালন করিই, কিন্তু কখনও কখনও শিষ্টাচারেরও যে নিজস্ব শক্তি রয়েছে তা পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। আজ আপনারা আমার গ্রামে এসেছেন, আর আমি এখানে এসেছি অতিথি সৎকার করার জন্য। আমি এখানে রাষ্ট্রপতি রূপে আসিনি, আমি এই গ্রামের মাটিতে একটি শিশু রূপে নিজের জীবন শুরু করেছি। সেই গ্রামের নাগরিক রূপে আজ আমি আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। ‘অতিথি দেব ভবঃ’ – এই শিষ্টাচার ভারতে কিভাবে আমাদের শিরায়, ধমনীতে প্রবাহিত হয় তার উত্তম উদাহরণ আজ এখানে আমাদের শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রপতিজি তুলে ধরেছেন। আমি মাননীয় রাষ্ট্রপতিজিকে সাদর প্রণাম জানাই।

মাননীয় রাষ্ট্রপতিজি পরৌঁখ গ্রামে তাঁর পৈতৃক বাড়িটিকে একটি মিলন কেন্দ্র রূপে বিকশিত করার জন্য দান করেছেন। আজ সেটি একটি সভাঘর এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রূপে এই গ্রামে নারী ক্ষমতায়নকে নতুন শক্তি প্রদান করছে। তাঁরই প্রচেষ্টায় এখানে আম্বেদকর ভবন রূপে বাবা আম্বেদকরের আদর্শ এবং প্রেরণার কেন্দ্রও গড়ে তোলা হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভবিষ্যতে পরৌঁখ গ্রামটি মাননীয় রাষ্ট্রপতির প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল গ্রামবাসীর মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নয়নের পথে আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে,  আর দেশের সামনে গ্রামীণ বিকাশের একটি নতুন মডেল হিসেবে নিজেকে তুলে ধরবে।

বন্ধুগণ,

আমরা বড় হয়ে যে যেখানেই পৌঁছে গিয়ে থাকি না কেন, দেশের বড় বড় শহর, মহানগর কিংবা বিশ্বের যে কোনও প্রান্তেই গিয়ে বসবাস শুরু করি না কেন, যদি আমরা নিজেদের গ্রামকে ভালোবেসে থাকি, তাহলে আমাদের গ্রাম কখনও আমাদের ভেতর থেকে বেরিয়ে যায় না। প্রত্যেকের গ্রাম তাঁদের শিরায়, ধমনীতে আজীবন প্রবাহিত হতে থাকে। আমাদের ভাবনায় সব সময় অনির্বাণ প্রদীপের মতো জ্বলতে থাকে। আমরা সেজন্য বলি যে ভারতের আত্মা গ্রামে বসবাস করে। কারণ, এ দেশের গ্রামগুলিই আমাদের আত্মায় বসবাস করে।

আজ যখন দেশ তার স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে, তখন গ্রামীণ ভারতের জন্য, আমাদের গ্রামগুলির জন্য আমাদের স্বপ্নগুলি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মহাত্মা গান্ধী ভারতের স্বাধীনতাকে ভারতের গ্রামের সঙ্গে যুক্ত করে দেখতেন। ভারতের গ্রাম মানেই হল, যেখানে আধ্যাত্মও থাকবে, আদর্শও থাকবে। ভারতের গ্রাম মানেই হল, যেখানে পরম্পরাও থাকবে আর প্রগতিশীলতাও থাকবে। ভারতের গ্রাম মানেই হল, যেখানে শিষ্টাচারও থাকবে আর সমবায়ও থাকবে, ভারতের গ্রাম মানেই হল, যেখানে সমতাও থাকবে আর মমতাও থাকবে!

আজ স্বাধীনতার অমৃতকালে এমনই গ্রামগুলির পুনর্গঠন করা, এমনই গ্রামগুলির পুনর্জাগরণ করা আমাদের সকলের কর্তব্য। আজ এই পুনর্গঠন আর পুনর্জাগরণের সঙ্কল্প নিয়ে দেশ গ্রাম, গরীব, কৃষি, কৃষক এবং পঞ্চায়েতি গণতন্ত্রের বিভিন্ন মাত্রায় কাজ করছে। আজ ভারতের গ্রামগুলিতে সবচাইতে দ্রুতগতিতে সড়কপথ গড়ে উঠছে। আজ ভারতের গ্রামগুলিতে সবচাইতে দ্রুতগতিতে অপটিক্যাল ফাইবার পাতা হচ্ছে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে সেই অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে যুক্ত করা হচ্ছে। আজ ভারতের গ্রামগুলিতে দ্রুতগতিতে গৃহহীনদের জন্য গৃহ তৈরি হচ্ছে। এলইডি স্ট্রিট লাইট লাগানো হচ্ছে। শহরগুলির পাশাপাশি আমাদের গ্রামগুলিও উন্নয়নের প্রত্যেক পথে পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। এটাই নতুন ভারতের ভাবনা, আর নতুন ভারতের সঙ্কল্পও। আপনারা ভাবুন! কেউ কী কখনও কল্পনা করেছিলেন যে একদিন কৃষি সংক্রান্ত অনেক জটিল কাজও ড্রোনের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব হবে! গ্রামে গ্রামে মানুষ কৃষির জন্য ড্রোন ব্যবহার করবে! কিন্তু আজ দেশ এই লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আমাকে বলা হয়েছে যে এই পরৌঁখ গ্রামেও ৩০০ জনেরও বেশি বাড়ির মালিককে ‘স্বামীত্ব’ যোজনার মাধ্যমে ড্রোনে মাপা সম্পত্তির কাগজ বা পরচা বিতরণ করা হয়েছে। অন্যদেরকেও দ্রুত সম্পত্তির কাগজ যাতে দেওয়া যায় সেই কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে কিভাবে প্রত্যেক কৃষককে নানা রকম পরিষেবা প্রদান করা যায়, আর কিভাবে তাঁদের রোজগার বাড়ানো যায় – উভয় লক্ষ্য নিয়েই দ্রুতগতিতে কাজ চলেছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের গ্রামগুলির কাছে সবচাইতে বেশি সামর্থ্য রয়েছে। আমাদের গ্রামগুলির কাছে সবচাইতে বেশি শ্রমশক্তি রয়েছে। আমাদের গ্রামগুলিতে সবচাইতে বেশি মানুষ সমর্পণ ভাব নিয়ে কাজ করেন। সেজন্য ভারতের গ্রামগুলির ক্ষমতায়ন আমাদের সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের অন্যতম। ‘জন ধন যোজনা’ থেকে শুরু করে ‘আবাস যোজনা’, ‘উজ্জ্বলা যোজনা’র মাধ্যমে পাওয়া রান্নার গ্যাসের সংযোগ, প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে পরিশ্রুত জল পৌঁছে দেওয়ার অভিযান, ‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’ – এই সবকিছুর সুফল কোটি কোটি গ্রামবাসী পাচ্ছেন। সারা দেশে দরিদ্র কল্যাণের জন্য দেশ যে গতিতে কাজ করছে তা অভূতপূর্ব।

এখন দেশের একটাই লক্ষ্য – প্রত্যেক প্রকল্পের ১০০ শতাংশ সুফল ১০০ শতাংশ সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছয়। অর্থাৎ, আমরা চাই জনগণের ১০০ শতাংশ ক্ষমতায়ন। সেখানে কোনও বৈষম্য থাকবে না, কোনও পার্থক্য থাকবে না। এটাই তো সামাজিক ন্যায়। বাবাসাহেব আম্বেদকর তো এই সাম্য ও বৈষম্যহীনতার স্বপ্নই দেখেছিলেন। এই স্বপ্নকে ভিত্তি করেই তিনি আমাদেরকে আমাদের সংবিধান সৃষ্টি করে দিয়ে গেছেন। বাবাসাহেবের সেই স্বপ্নগুলি আজ এতদিনে বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশ আজ সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।

বন্ধুগণ,

আজকের এই উপলক্ষ আরও একটি কারণে অত্যন্ত ঐতিহাসিক। আর এখন যে কথাটা বলব সেটা সবাই নোট করে নিন, কারণ, এই বিষয়টা দেশের গণতন্ত্রের শক্তি, দেশের গ্রামগুলির শক্তিকে একসঙ্গে দেখায়। এখানে, এই মঞ্চে আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি মাননীয় শ্রী রামনাথ কোবিন্দজি, অনুষ্ঠানে উপস্থিত মাননীয়া শ্রীমতী কবিতা কোবিন্দজি, উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল মাননীয়া শ্রীমতী আনন্দিবেন প্যাটেলজি, উত্তরপ্রদেশের জনপ্রিয় এবং প্রাণশক্তিতে ভরপুর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথজি উপস্থিত রয়েছেন। আমাকেও আপনারা, সমস্ত দেশবাসী এ দেশের সেবার এত বড় দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। আমরা চারজনই কিন্তু দেশের কোনও না কোনও ছোট গ্রাম কিংবা মফঃস্বল শহর থেকে উঠে এসে আজ এখানে পৌঁছেছি।

আমার জন্মও গুজরাটের একটি ছোট্ট মফঃস্বল শহরে হয়েছিল। সেখানে গ্রামের সংস্কৃতি, শিষ্টাচার নিয়েই আমি বড় হয়েছি। আমাদের এখানে উপস্থিত সকলকেই নানা সংঘর্ষের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হয়েছে। আমাদের শিষ্টাচারকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হয়েছে। এটাই আমাদের গণতন্ত্রের আসল শক্তি। ভারতের বিভিন্ন গ্রামে জন্মগ্রহণ করে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তিও এখন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল কিংবা মুখ্যমন্ত্রী পদে পৌঁছতে পারছেন।

কিন্তু ভাই ও বোনেরা,

আজ যখন আমরা গণতন্ত্রের এই মহান শক্তি নিয়ে আলোচনা করছি, তখন আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পরিবারতন্ত্র ও স্বজনপোষণের মতো সমস্যাগুলি থেকে সাবধান থাকারও প্রয়োজন রয়েছে। এই পরিবারতন্ত্র ও স্বজনপোষণ শুধু রাজনীতি নয়, দেশের প্রত্যেক ক্ষেত্রের প্রতিভাগুলির গলা টিপে ধরে, আর তাঁদেরকে এগিয়ে যেতে দেয় না।

এমনিতে বন্ধুগণ,

আমি যখন পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলি, তখন কিছু মানুষের মনে হয় যে এটি কোনও রাজনৈতিক বিবৃতি। আমি নাকি কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেই কথা বলছি, এমনটি প্রচার করা হয়। কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি যে যাঁরা আমার এই পরিবারতন্ত্রের সংজ্ঞায় পড়েন, বা আমার মনে পরিবারতন্ত্র বলতে আমি যা বুঝি, তাঁরা সকলেই আমার কারণে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন, রেগে আছেন! দেশের কোণায় কোণায় এই পরিবারতন্ত্রের ধ্বজা বাহকেরা আমাদের বিরুদ্ধে এখন একজোট হচ্ছেন। তাঁরা রেগে আছেন যে দেশের যুব সম্প্রদায় কেন মোদীজির পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলা কথাগুলিকে এত গুরুত্ব দিয়ে শোনে ও মানে?

বন্ধুগণ,

আমি এই মহান ব্যক্তিদের বলতে চাই যে আমার কথার ভুল অর্থ বের করবেন না। আমি কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে অখুশি নই। আমি তো চাই যে দেশে একটি শক্তিশালী বিপক্ষ থাকুক। গণতন্ত্রের প্রতি সমর্পিত রাজনৈতিক দল থাকুক। আমি তো চাই যে পরিবারতন্ত্রের থাবায় আটকে পড়া রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদেরকে এই রোগ থেকে মুক্ত করুক, তারা নিজেরাই নিজেদের দলের চিকিৎসা করুক। তবেই ভারতের গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। দেশের যুব সম্প্রদায় রাজনীতিতে বেশি করে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

যাই হোক না কেন, আমার মনে হয় পরিবারতান্ত্রিক দলগুলি থেকে আমি একটু বেশিই আশা করে ফেলেছি। সেজন্য আমি আপনাদের মধ্যে দাঁড়িয়েও বলব যে এটা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব যে আমরা দেশে পরিবারতন্ত্রের মতো গণতন্ত্র বিরোধী কু-রীতিগুলিকে অঙ্কুরিতই যেন হতে না দিই। গ্রামের গরীবের ছেলে-মেয়েরা বিশেষ করে গ্রামের গরীবের মেয়েরাও যেন দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন সেজন্য এই দেশে পরিবারতান্ত্রিক দলগুলিকে থামানো অত্যন্ত প্রয়োজন।

বন্ধুগণ,

রাষ্ট্রপতিজির এই গ্রামে আমি আজ আপনাদের কাছে উপহারস্বরূপ কিছু চাইতে এসেছি। হ্যাঁ, আমি কিছু চাইতে এসেছি! আপনারা হয়তো ভাবছেন যে এ কেমন প্রধানমন্ত্রী যিনি আমাদের গ্রামে এসেছেন, সঙ্গে কিছু আনেননি, তার ওপর আমাদের থেকেই চাইছেন! হ্যাঁ ভাই ও বোনেরা, আমি চাইছি! আপনারা দেবেন তো? আমি এই পরৌঁখ গ্রামের জনগণের কাছে যা চাইব, তা পাব তো? পরৌঁখ-এর পাশাপাশি এখানে আমাদেরকে আশীর্বাদ করতে পার্শ্ববর্তী যত গ্রামের মানুষেরা এসেছেন, আমি তাঁদের কাছেও চাইছি। আপনারা দেবেন তো? দেখুন, আপনারা নিজেদের গ্রামে এত উন্নয়নের কাজ করেছেন।

আজ যখন দেশ তার স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে তখন আপনাদের নিজস্ব প্রচেষ্টাকে আরও বাড়াতে হবে। অমৃতকালে দেশবাসী সঙ্কল্প গ্রহণ করেছে যে দেশের প্রত্যেক জেলায় ৭৫টি করে ‘অমৃত সরোবর’ খনন করা হবে, আর একটু আগেই যোগীজি বলছিলেন যে এখানে পরৌঁখ গ্রামেও দুটি ‘অমৃত সরোবর’ নির্মাণ করা হচ্ছে। আপনাদেরকে এই ‘অমৃত সরোবর’ নির্মাণের জন্যও সাহায্য করতে হবে, কর সেবা করতে হবে, আর এভাবেই এর গরিমা বজায় রাখতে হবে।

আমি আপনাদের কাছে আরও একটি বিষয় চাইছি, আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনারা আমার এই আবদারকেও সম্পূর্ণ রূপে পূরণ করবেন; আর তা হল ন্যাচারাল ফার্মিং বা প্রাকৃতিক চাষ। পরৌঁখ গ্রামের অধিকাংশ কৃষক যদি এই প্রাকৃতিক চাষকে আপন করে নেন, ন্যাচারাল ফার্মিং-কে আপন করে নেন, তাহলে এই গ্রাম দেশের জন্য একটি অনেক বড় উদাহরণ হয়ে উঠবে।

বন্ধুগণ,

ভারতের সাফল্যের একটাই পথ – ‘সবকা প্রয়াস’। এই ‘সবকা প্রয়াস’ বা সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্নগুলিও বাস্তবায়িত হবে, আর আত্মনির্ভর ভারতের অর্থ হল আত্মনির্ভর গ্রাম, আত্মনির্ভর যুব সম্প্রদায়। আমাদের গ্রামগুলির উন্নয়ন যদি দ্রুতগতিতে হতে শুরু করে তাহলে দেশের উন্নয়নও দ্রুতগতিতে হতে শুরু করবে। আমাদের গ্রামগুলি উন্নত হবে, তাহলে দেশ উন্নত হবে।

মাননীয় কোবিন্দজি রূপে দেশকে একজন রাষ্ট্রপতি প্রদানকারী গ্রাম পরৌঁখ-এর জনগণ এটা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে এই গ্রামের মাটিতে কতটা সামর্থ্য রয়েছে। আমাদের এই সামর্থ্যকে, এই প্রতিভাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে, আমাদের সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। তবেই আমরা দেশের স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত করতে পারব।

এই সঙ্কল্প নিয়ে আমি আরও একবার মাননীয় রাষ্ট্রপতিজিকে অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই যে, তিনি তাঁর সঙ্গে আমাকেও এখানে তাঁর গ্রামে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি আপনাদের সবাইকে আরও একবার হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাই, আর গ্রামের প্রত্যেক অলিতে, গলিতে যেখানে যেখানে গিয়েছি, সেখানেই যতটা উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে গ্রামবাসী আমাকে অভিবাদন জানিয়েছেন, পুষ্প বর্ষণ করেছে, ভালোবাসা বর্ষণ করেছেন, সেজন্যও আমি আপনাদের মতো সকল গ্রামবাসীকে অন্তর থেকে অভিনন্দন জানিয়ে নিজের বাণীকে বিরাম দিচ্ছি।

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1832814) Visitor Counter : 127