প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

নতুন দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ঈশা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘সেভ সয়েল’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 05 JUN 2022 2:14PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৫ জুন, ২০২২

 

নমস্কার!

আপনাদের সবাইকে, গোটা বিশ্বকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। শ্রদ্ধেয় সদগুরু এবং ঈশা ফাউন্ডেশনও আজ ধন্যবাদের পাত্র। মার্চে তাঁদের সংস্থা এই ‘সেভ সয়েল’ বা মাটি বাঁচাও অভিযান শুরু করেছিল। ২৭টি দেশ হয়ে তাঁদের এই ‘সেভ সয়েল’যাত্রা আজ ৭৫তম দিনে নতুন দিল্লিতে, এখানে পৌঁছেছে। আজ যখন দেশ তার স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি পালন করছে, এই অমৃতকাল উপলক্ষে নতুন নতুন সঙ্কল্প গ্রহণ করছে, তখন এ ধরনের গণ-অভিযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ,

আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে দেশে গত আট বছর ধরে যে প্রকল্পগুলি চালু রয়েছে, যে যে কর্মসূচি চলছে, সবক’টির মধ্যেই কোনও না কোনভাবে পরিবেশ রক্ষার প্রতি যত্ন ও আগ্রহ রয়েছে। স্বচ্ছ ভারত মিশন থেকে শুরু করে ‘ওয়েস্ট টু ওয়েলথ’ বা বর্জ্য থেকে সম্পদ সংক্রান্ত কর্মসূচি,  অমৃত মিশনের মাধ্যমে শহরগুলিতে আধুনিক সিউয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট-এর নির্মাণ থেকে শুরু করে ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ থেকে মুক্তির অভিযান,  কিংবা ‘নমামী গঙ্গে’ কর্মসূচির মাধ্যমে গঙ্গা পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ‘ওয়ান সান, ওয়ান গ্রিড’ বা এক সূর্য, এক গ্রিড কর্মসূচির মাধ্যমে সৌরশক্তি উৎপাদনকে গুরুত্ব দেওয়া কিংবা ইথানল উৎপাদন এবং মেশানো দুটিতেই বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় ভারতের প্রচেষ্টা বহুমাত্রিক হয়ে উঠেছে, আর ভারত এই প্রচেষ্টা তখন করছে, যখন গোটা বিশ্বের জনগণ আজ পরিবেশ দূষণ ও বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় রয়েছে। এই ধ্বংসলীলায় আমাদের কোনও ভূমিকা নেই, ভারতের কোনও ভূমিকা নেই।

বিশ্বের বড় বড় এবং আধুনিক দেশগুলি শুধু মাটি ও মাটির নিচের সমস্ত সম্পদকে গ্রহণ করেই থামছে না, তারাই তাদের কারখানাগুলির মাধ্যমে সবচাইতে বেশি কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করছে। কার্বন নিঃসরণের আন্তর্জাতিক গড় পরিমাণ হল ব্যক্তিপ্রতি চার টন। যেখানে ভারতে ব্যক্তিপ্রতি কার্বন ফুটপ্রিন্ট প্রতি বছর অর্ধেক টনের কাছাকাছি। কোথায় চার টন, আর কোথায় আধা টন! তা সত্ত্বেও পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে ভারত একটি সার্বিক দৃষ্টিকোণ নিয়ে দেশের মধ্যে কাজ করছে পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রভূত অবদান রাখছে, সারা পৃথিবীর পরিবেশ কর্মীদের সঙ্গেও হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক স্তরে ভারত ‘কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ বা সিডিআরআই, আর যেমনটি একটু আগেই সদগুরুজি বললেন, ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স বা আন্তর্জাতিক সৌর জোট বা আইএসএ-এর গঠনের নেতৃত্ব দিয়েছে। গত বছর ভারত এই সঙ্কল্প নিয়েছিল যে আমাদের দেশ ২০৭০-এর মধ্যে ‘নেট জিরো’ কার্বন উৎসরণের লক্ষ্য পূরণ করবে।

বন্ধুগণ,

মাটি কিংবা এই ভূমি আমাদের জন্য পঞ্চতত্ত্বের অন্যতম। আমরা মাটিকে গর্বের সঙ্গে নিজেদের কপালে ঠেকাই। এই মাটিতে উঠে, পড়ে, গড়িয়ে, খেলতে খেলতে আমরা বড় হই। এই মাটিকে সম্মান জানাতে আমরা কোনও ত্রুটি রাখি না। এই মাটির গুরুত্ব বোঝার ক্ষেত্রেও আমাদের কোনও ত্রুটি নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মানবজাতি মাটির কত ক্ষতি করছে তা বোঝার ক্ষেত্রে একটা গ্যাপ থেকে যাচ্ছে। সেজন্যই একটু আগে সদগুরুজি বলছিলেন যে সবাই জানে সমস্যা কী এবং কোথায়।

আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন সিলেবাসে, বইয়ে, পাঠক্রমে আমাদের একটি পাঠ পড়ানো হত। আমি গুজরাটিতে পড়েছি, আপনারা হয়তো নিজের নিজের মাতৃভাষায় পড়েছেন! কোথাও পথের মধ্যে একটা পাথর পড়ে ছিল। সেই পথ দিয়ে অনেক মানুষ যাতায়াত করছিল। কারোর মনে রাগ হলে সে পাথরে লাথি মারছিলো! কেউ কেউ বলছিল, কে এখানে পাথর রেখেছে? কোথা থেকে এই পাথর এসেছে? এরা কিছুই বোঝে না, ইত্যাদি। কিন্তু কেউই সেই পাথরটাকে উঠিয়ে পথের কিনারে রাখছিল না। তখন এক ভদ্রলোক সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর মনে হয় যে চলো আমি এই কাজটা করি। তিনি সেই পাথরটাকে উঠিয়ে পথের কিনারে রাখলেন। অর্থাৎ আমাদের সদগুরুর মতো কোনও এক সজ্জন তখন সেখানে এসে গিয়েছিলেন।

আমাদের দেশে যুধিষ্ঠির এবং দুর্যোধনের মধ্যে সাক্ষাৎ নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন দুর্যোধন সম্পর্কে যে বর্ণনা আমরা পড়ি সেখানে লেখা রয়েছে – “জানম ধর্মং ন চ মেঁ প্রবৃত্তি।।” অর্থাৎ, আমি ধর্মকে জানি, কিন্তু আমার প্রবৃত্তি নেই, আমি করতে পারব না। এর পেছনে সত্য কী তা আমি জানি, কিন্তু আমি সেই পথে চলতে পারব না। এই ধরনের প্রবৃত্তি যখন সমাজে বৃদ্ধি পায়, তখন এমন সঙ্কট আসে যে তার মোকাবিলা সামুহিক অভিযানের মাধ্যমেই করতে হয়, এভাবেই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হয়।

আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে বিগত আট বছরে আমাদের দেশ মাটিকে জীবন্ত করে রাখার জন্য লাগাতার কাজ করে চলেছে। মাটিকে বাঁচানোর জন্য আমরা পাঁচটি প্রধান বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। প্রথম, মাটিকে কিভাবে রাসায়নিক মুক্ত করব। দ্বিতীয়, মাটিতে যত জীব রয়েছে যেগুলিকে প্রযুক্তির ভাষায় আপনারা ‘সয়েল অর্গ্যানিক ম্যাটার’ বলেন, এই জৈব পদার্থগুলিকে আমরা কিভাবে বাঁচাব। তৃতীয়ত, মাটির আর্দ্রতা কিভাবে বজায় রাখব, মাটি পর্যন্ত কিভাবে জলের স্থায়ী সরবরাহ বজায় রাখব। চতুর্থত, ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমে নেমে যাওয়ার ফলে মাটির যত লোকসান হচ্ছে তা কিভাবে দূর করব, আর পঞ্চমত, অরণ্যের পরিধি হ্রাস পাওয়ার ফলে যেভাবে নিয়মিত মাটির ক্ষয় হচ্ছে তাকে কিভাবে থামাব।

বন্ধুগণ,

এই সকল বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে আমরা দেশে বিগত বছরগুলিতে দেশের কৃষিনীতিতে সবচাইতে বেশি পরিবর্তন এনেছি । আগে আমাদের দেশের কৃষকদের কাছে এসব তথ্যের অভাব ছিল যে তাঁদের জমির প্রকৃতি কী, সেই মাটিতে কিসের অভাব রয়েছে, কতটা অভাব রয়েছে? এই সমস্যাকে দূর করার জন্য দেশের কৃষকদের মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড প্রদানের অনেক বড় অভিযান শুরু করা হয়েছে। যদি আমরা কাউকে, যে কোনও মানুষকে কোনও হেলথ কার্ড দিই, তাহলে খবরের কাগজে শিরোনাম হিসেবে ছাপা হবে যে মোদী সরকার কিছু ভালো কাজ করেছে। কিন্তু আমাদের দেশ এত অদ্ভূত যে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের জনে জনে মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়ার পরেও সেদিকে সংবাদমাধ্যমের নজর তেমন পড়েনি। গোটা দেশে ২২ কোটিরও বেশি কৃষকদেরকে মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হয়েছে। আর শুধুই কার্ড বিতরণ করে আমরা থেমে থাকিনি, বরং সারা দেশে মাটি পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত একটি অনেক বড় নেটওয়ার্কও গড়ে উঠেছে। আজ দেশের কোটি কোটি কৃষক মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ডের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সার এবং মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টস প্রয়োগ করছেন। এর ফলে, কৃষকদের বিনিয়োগে ৮-১০ শতাংশ সাশ্রয় যেমন হয়েছে, তেমনই ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ৫-৬ শতাংশ বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। অর্থাৎ, যখন মাটি সুস্থ হয়ে উঠছে তখন উৎপাদনও আগের থেকে অনেক বাড়ছে।

মাটির স্বাস্থ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইউরিয়াকে ১০০ শতাংশ নিম কোটিং করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। এতে কৃষকরা খুবই লাভবান হয়েছেন। মাইক্রো-ইরিগেশন বা ক্ষুদ্র সেচকে উৎসাহ দেওয়ার ফলে, ‘অটল ভূ যোজনা’র কারণে দেশের অনেক রাজ্যে মাটির স্বাস্থ্য অনেক উন্নত হয়েছে। কখনও কখনও কিছু জিনিস আমাদের মেনে নিতে হয়। যেমন যদি কোনও দেড়-দু’বছরের বাচ্চা অসুস্থ হয়, তার শরীর ঠিক না থাকে, ওজন না বৃদ্ধি পায়, উচ্চতা না বাড়ে, এরপরেও যদি কেউ মা-কে বলে যে এর জন্য কোনও চিন্তা করবেন না আর তাঁকে উপদেশ দেওয়া হয় যে ভাই, স্বাস্থ্যের জন্য দুধ খাওয়ালে ভালো হয়ে যাবে, আর মনে করুন প্রত্যেকদিন তাকে পেট ভরে দুধ খাওয়ানো হল, এমনকি তাকে ১০ লিটার দুধ দিয়ে স্নান করানো হল, তাহলে কি তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে? কিন্তু যদি কোনও বুদ্ধিমতী মা এক এক চামচ দুধ তাকে একটু একটু করে খাওয়ায়, তার প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে দু’বার, পাঁচবার কিংবা সাতবার, তাহলে দেখবেন এই এক এক চামচ করে খাওয়ানো দুধেই তার স্বাস্থ্যে পার্থক্য আসতে শুরু করবে, তার ওজন ও উচ্চতা বাড়বে।

ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এটা সত্য। বেশি করে জল দিয়ে ফসলকে ডুবিয়ে দিলে যে ফসল ভালো হবে তা ঠিক নয়। বিন্দু বিন্দু জল যদি তাকে দেওয়া হয়, তাহলেই ফসল সবচাইতে ভালো হবে। ‘পার ড্রপ মোর ক্রপ’, প্রতি বিন্দুতে অধিক ফসল। একজন অশিক্ষিত মা-ও তাঁর শিশুকে ১০ লিটার দুধ দিয়ে স্নান করান না। অথচ আমরা লেখাপড়া শিখেও পুরো খেত জল দিয়ে ভরে দিই! যা হোক, এই সমস্ত ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে।

আমরা ‘ক্যাচ দ্য রেইন’ বা বৃষ্টির জল সংরক্ষণের অভিযানের মাধ্যমে দেশের জল সংরক্ষণ অভিযানে প্রত্যেক নাগরিককে যুক্ত করার চেষ্টা করছি। এ বছর মার্চেও দেশে ১৩টি বড় নদী সংরক্ষণের অভিযান শুরু হয়েছে। এতে জল দূষণকে কমানোর পাশাপাশি নদীগুলির দু’পাড়ে বনসৃজনের কাজও করা হচ্ছে। এর ফলে ভারতে বনসৃজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়েছে। আনুমানিকভাবে ফরেস্ট কভার ৭ হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। বিগত আট বছরে ভারত দেশের মধ্যে ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি নতুন বনসৃজন করেছে। এখন এই নদী সংরক্ষণ অভিযান এক্ষেত্রে আরও বনসৃজনে সক্ষম হবে।

বন্ধুগণ,

ভারত আজ বায়ো-ডাইভার্সিটি বা জৈববৈচিত্র্য ও ওয়াইল্ড লাইফ বা বন্যপ্রাণ সংশ্লিষ্ট যে নীতি নিয়ে চলছে সেখানে বন্যপ্রাণের সংখ্যাও রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। বাঘ থেকে শুরু করে সিংহ, চিতা কিংবা হাতি – এইসব প্রাণীর সংখ্যা আমাদের দেশে বাড়ছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের গ্রাম ও শহরগুলিকে পরিচ্ছন্ন করা, জ্বালানির ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি, কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত আয় সুনিশ্চিত করা এবং মৃত্তিকার স্বাস্থ্যকে উন্নত করার অভিযানকে আমরা একসঙ্গে যুক্ত করার কাজও দেশে প্রথমবার হয়েছে। আমাদের ‘গোবর্ধন যোজনা’ প্রকল্পটিও এরকমই আরেকটি প্রচেষ্টা। আমি যখন এই ‘গোবর্ধন যোজনা’র কথা বলেছি তখন কিছু সেকুলার মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন যে, নরেন্দ্র মোদী কোন গোবর্ধনের কথা বলছেন! তাঁরা আমার জবাব শুনে অবাক হয়ে যান।

এই ‘গোবর্ধন যোজনা’র মাধ্যমে আমরা বায়ো-গ্যাস প্ল্যান্টগুলি থেকে গোবর এবং চাষের খেতের অন্যান্য বর্জ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করছি। কখনও আপনারা যদি কাশী বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন করতে যান তাহলে মন্দির থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি গোবর্ধন প্রকল্পের প্ল্যান্ট দেখতে পাবেন। আমার অনুরোধ, আপনারা অবশ্যই সেটি ঘুরে দেখে আসুন। সেখান থেকে যে জৈব সার উৎপন্ন হয় তা কৃষির উন্নতিতে কাজে লাগছে। সেই এলাকার মাটিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ ফসল উৎপাদন করতে পারছি। সেজন্য গত ৭-৮ বছরে ১ হাজার ৬০০-রও বেশি নতুন বৈচিত্র্যসম্পন্ন বীজও কৃষকদের বিতরণ করা হয়েছে।

আমাদের আজকের সমস্যার বড় সমাধানও রয়েছে প্রাকৃতিক চাষের মধ্যে। সেজন্য এ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে গঙ্গার দুই পাড়ের সমস্ত গ্রামগুলিকে প্রাকৃতিক চাষের জন্য উৎসাহিত করব। এই গোটা এলাকাতে আমরা প্রাকৃতিক চাষের একটি বড় করিডর তৈরি করব। আমাদের দেশে আগে আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডরের কথা শুনেছি, ডিফেন্স করিডরের কথাও আমরা শুনেছি, কিন্তু এবার আমরা গঙ্গার দুই পাড়ে একটি নতুন করিডর গড়ে তোলার কাজ শুরু করে দিয়েছি, আর সেই করিডরটি হল এগ্রিকালচার করিডর, আর সেখানে শুধুই প্রাকৃতিক চাষ হবে। এর ফলে আমাদের খেতগুলিও রাসায়নিক মুক্ত হবে, আর এই খেতগুলির মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গার জলেও কম রাসায়নিক মিশবে। ফলে ‘নমামী গঙ্গে’ অভিযান আরও শক্তিশালী হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ২৬ মিলিয়ন হেক্টর ঊষর ভূমিকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্য নিয়ে ভারত কাজ করে চলেছে।

বন্ধুগণ,

পরিবেশ রক্ষার জন্য আজ ভারত নতুন নতুন উদ্ভাবন ও পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তিকে আপন করে নেওয়ার ক্ষেত্রে জোর দিচ্ছে। আপনারা সবাই এটা জানেন যে পরিবেশ দূষণ কম করার জন্য আমরা এখন আর BS-V বি. এস. ফাইভ নর্মস মেনে চলছি না। আমরা এখন বি.এস. ফোর থেকে সরাসরি বি.এস. সিক্স-এ লাফ দিয়েছি। আমরা সারা দেশে যে এলইডি বাল্ব লাগানোর উদ্দেশ্য নিয়ে ‘উজালা যোজনা’ কর্মসূচি চালু করেছিলাম তার ফলেই এখন সারা দেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ মিলিয়ন টন কার্বন উৎসরণ হ্রাস পেয়েছে। শুধু বাল্ব বদলালেই যদি বাড়িতে পরিবর্তন আসে, সমাজের সবাই যদি এর সঙ্গে যুক্ত হন, তাহলে সকলের প্রচেষ্টায় কত বড় পরিবর্তন আসতে পারে!

ভারত ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নিজেদের নির্ভরতা ন্যূনতম রাখার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের জ্বালানি প্রয়োজনীয়তা যাতে পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎসগুলি থেকে পূরণ করতে পারি তা সুনিশ্চিত করতে আমরা দ্রুতগতিতে বড় বড় লক্ষ্য নিয়ে সেগুলি পূরণের কাজ করছি। আমরা নিজেদের ‘ইন্সটল্ড পাওয়ার জেনারেশন ক্যাপাসিটি’র ৪০ শতাংশ নন-ফসিল ফুয়েল বেসড বা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর ভিত্তি না করেই নিজেদের প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্য রেখেছি। এই লক্ষ্য ভারত নির্দিষ্ট সময় থেকে ৯ বছর আগেই পূরণ করে নিয়েছে। আজ আমাদের সৌরশক্তি উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হাইড্রোজেন মিশন হোক কিংবা সার্কুলার পলিসি সংক্রান্ত বিষয় – এই সকল বিষয়গুলি আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণে দায়বদ্ধতার প্রমাণ। আমরা পুরনো গাড়িগুলির জন্য নতুন স্ক্র্যাপ পলিসি এনেছি। সেই স্ক্র্যাপ পলিসি নিজেই সমাজে একটি বড় কাজ করতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের এই প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যেই আজ পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ভারত আরও একটি সাফল্য অর্জন করেছে, আর এটা আমার সৌভাগ্য যে দেশবাসীকে এই শুভ সংবাদ দেওয়ার জন্য আজ আমি একটি যথোচিত মঞ্চ পেয়ে গেলাম। ভারতে একটা পরম্পরা রয়েছে যে যাঁরাই কোন যাত্রা সম্পন্ন করে আসেন, তাঁদেরকে স্পর্শ করলেই অন্যরা অর্ধেক পূণ্য অর্জন করেন। এই আনন্দ সংবাদ আজ আমি অবশ্যই দেশবাসীকে শোনাব আর একথা শুনে বিশ্ববাসীও খুবই আনন্দ পাবেন। হ্যাঁ, কিছু মানুষ আনন্দ তো পাবেনই। আজ ভারত পেট্রোলে ১০ শতাংশ ইথানল ব্লেন্ডিং এর লক্ষ্য পূরণ করে নিয়েছে।

আপনারা একথা জেনেও গর্ব অনুভব করবেন যে ভারত এই লক্ষ্য নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মাসে আগেই পূরণ করে নিয়েছে। এই সাফল্য কতটা বড় সাফল্য তা তখনই আপনারা বুঝতে পারবেন, যখন আপনারা ২০১৪ সালের সঙ্গে তুলনা করবেন, তখন ভারতে মাত্র ১.৫ শতাংশ ইথানলই পেট্রোলের সঙ্গে ব্লেন্ডিং হত।

লক্ষ্যে পৌঁছনোর ফলে ভারতের সরাসরি তিনটি লাভ হবে। প্রথমত এর ফলে দেশে প্রায় ২৭ লক্ষ টন কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, এর ফলে ভারতে ৪১ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে, আর তৃতীয়ত এবং সবচাইতে বড় লাভ হয়েছে দেশের কৃষকদের, কারণ, এই ইথানল ব্লেন্ডিং বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে গত আট বছরে তাঁদের ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি লাভ হয়েছে। আমি দেশের জনগণকে, বিশেষ করে দেশের কৃষকদেরকে, আর দেশের তেল কোম্পানিগুলিকে এই সাফল্যের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

বন্ধুগণ,

দেশ আজ যে ‘পিএম গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’ অনুযায়ী কাজ করছে সেখানেও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ‘পিএম গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’-এর কারণে দেশে লজিস্টিক্স সিস্টেম আধুনিক হয়ে উঠছে, ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এগুলির মাধ্যমে বায়ু দূষণ কম করার ক্ষেত্রেও অনেক দ্রুত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। দেশে মাল্টি-মডেল কানেক্টিভিটি স্থাপন করতে ১০০টিরও বেশি নতুন জলপথ চালু করার কাজ চলছে। এই সমস্ত পদক্ষেপ পরিবেশের সুরক্ষা এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের সমস্যার মোকাবিলায় ভারতকে সাহায্য করবে।

বন্ধুগণ,

ভারতের এই প্রচেষ্টাগুলির ফলে এই অভিযানগুলির মাধ্যমে আরও একটি দিক তৈরি হয়েছে যেগুলি সম্পর্কে খুব কম আলোচনা হয়। এই দিকটি হল ‘গ্রিন জবস’। ভারত যে ধরনের পরিবেশ-বান্ধব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেগুলিকে যত দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত করছে, তা বড় সংখ্যায় ‘গ্রিন জবস’-এর সুযোগও তৈরি করছে। এটাও একটি অধ্যয়ন এবং গবেষণার বিষয় যা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা যেতে পারে।

বন্ধুগণ,

পরিবেশ রক্ষার জন্য, মাটি রক্ষার জন্য, পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য জনসচেতনতা যত বেশি বাড়বে, তার পরিণামও তত ভালো হবে। আমাদের দেশ এবং দেশের সমস্ত রাজ্য সরকার, সমস্ত স্থানীয় প্রশাসনকে, সমস্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে আমি অনুরোধ জানাব যে তাদের সমস্ত পরিবেশ-বান্ধব প্রচেষ্টার সঙ্গে দেশের স্কুল-কলেজগুলিকেও যুক্ত করুন। এনএসএস ও এনসিসি-র মতো সংস্থাগুলিকেও যুক্ত করুন।

স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে জল সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত আরও একটি অনুরোধও আমি আপনাদের করতে চাই। আগামী বছর ১৫ আগস্টের মধ্যে দেশের প্রত্যেক রাজ্যের প্রত্যেক জেলায় কম করে ৭৫টি ‘অমৃত সরোবর’ খননের কাজ চলছে। ৫০ হাজারেরও বেশি ‘অমৃত সরোবর’ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জল সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। এই অমৃত সরোবরগুলি তাদের চারপাশের মাটির আর্দ্রতা বাড়াবে, ভূগর্ভস্থ জলস্তরকে ওপরে তুলতে সাহায্য করবে, আর এক্ষেত্রে জৈববৈচিত্র্যও বজায় থাকবে বা আরও উন্নত হবে। এই বিরাট সঙ্কল্পে কিভাবে আপনাদের সকলের অংশীদারিত্ব বাড়ানো যায় তা নিয়ে একজন নাগরিক হিসেবে আপনাদের সকলেরই ভাবনাচিন্তা করা উচিৎ।

বন্ধুগণ,

পরিবেশের সুরক্ষা এবং দ্রুত উন্নয়ন, সকলের প্রচেষ্টায়,  সম্পূর্ণতার দৃষ্টিকোণ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেই সম্ভব। এক্ষেত্রে আমাদের লাইফস্টাইল বা জীবনশৈলী পরিবর্তনের কতটা ভূমিকা রয়েছে, আমরা কিভাবে সেই পরিবর্তন সাধন করব, তা নিয়ে আমি আজ সন্ধ্যায় একটি অনুষ্ঠানে আলাপ-আলোচনা করতে যাচ্ছি। অনেক বিস্তারিতভাবে বলব, কারণ সেটি একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চ। সেখানেই এই কর্মসূচি আয়োজিত হতে চলেছে। ‘লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট’, ‘মিশন লাইফ’ এই শতাব্দীর চিত্র, এই শতাব্দীতে প্রকৃতির ভাগ্য পরিবর্তনের একটি মিশনের শুভ সূচনা হতে চলেছে। এই কর্মসূচি পি-৩ বা ‘প্রো প্ল্যানেট পিপল’ বা পৃথিবী বান্ধব আন্দোলনে পরিণত হবে। আজ সন্ধ্যায় ‘লাইফস্টাইল ফর দ্য এনভায়রনমেন্ট’-এর বা পরিবেশ বান্ধব জীবনশৈলী আপন করে নেওয়ার ‘গ্লোবাল কল ফর অ্যাকশন’-আন্তর্জাতিক আহ্বান এর শুভ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে চলেছে। আমার অনুরোধ যে পরিবেশ রক্ষার জন্য সচেতন প্রত্যেক ব্যক্তিকে অবশ্যই এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিৎ, না হলে আমরা এয়ার কন্ডিশনারও চালাব আর লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমোব, আর তারপর পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে সেমিনারে বড় বড় ভাষণ দেব। এই ভন্ডামি চলতে থাকবে।

বন্ধুগণ,

আপনারা সবাই মানবতার অনেক বড় সেবা করছেন। আপনারা যেন সেই সাফল্য পান। সদগুরু যে দীর্ঘ অভিযান চালিয়েছেন, যে পরিশ্রম করে যাত্রা করছেন, যেভাবে বাইক অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এমনিতে এরকম বাইক অভিযান তাঁর ছোটবেলার শখ কিন্তু, এই বাইক নিয়ে সারা পৃথিবী ঘোরা অনেক কঠিন কাজ, কারণ, আমি যখন একসময় দলের জন্য এ ধরনের অভিযান অর্গানাইজ করতাম, তখন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার দলের লোকেদের বলতাম যে একটি অভিযান চালানোর মানে ৫-১০ বছর বয়স হ্রাস পাওয়া। এতটাই পরিশ্রম করতে হয়। সদগুরুজি এ ধরনের অভিযান নিজে পরিচালনা করছেন। এটা অনেক বড় কথা। এভাবে তিনি দেশ ও বিশ্বের জন্য, তথা মানবতার জন্য অনেক বড় কাজ করছেন। আমার দৃঢ বিশ্বাস যে এই অভিযানের মাধ্যমে পৃথিবীর মাটির প্রতি মানুষের মনে যে ভালোবাসা থাকা উচিৎ তা আবার গড়ে উঠবে, এই সচেতনতার প্রসার দেশ তথা বিশ্বের মাটিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করবে। ভারতের মাটির শক্তির সঙ্গে সবার পরিচিত ঘটাবে।

আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা।

ধন্যবাদ!
 
CG/SB/DM/


(Release ID: 1831381) Visitor Counter : 331