প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

আসামের ডিফু-তে শান্তি ও উন্নয়ন র‍্যালি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 28 APR 2022 4:16PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৮ এপ্রিল, ২০২২

 

ভারতমাতা কী জয়! ভারতমাতা কী জয়!

“কার্বী আঙ-লঙ কোরটে ইঙ্গজির, কে-ডো অং অপহান্তা, নেলী কারডোম পজীর ইগলো।”

আসামের মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী জগদীশ মুখীজি, আসামের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাজি, কার্বী রাজা মাননীয় শ্রী রামসিঙ্গ রোঙ্গহাঙ্গজি, কার্বী আঙ-লঙ অটোনমাস কাউন্সিলের মাননীয় সভাপতি শ্রী তুলিরাম রোঙ্গহাঙ্গজি, আসাম সরকারের মাননীয় মন্ত্রী শ্রী পীযূষ হাজারিকাজি, মাননীয় শ্রী যোগেন মোহনজি, সংসদে আমার মাননীয় সহকর্মী শ্রী হরেন সিঙ্গ বে-জি, মাননীয় বিধায়ক শ্রী ভবেশ কলিতাজি, অন্যান্য সকল জনপ্রতিনিধিগণ আর আমার প্রিয় কার্বী আঙ-লঙ-এর ভাই ও বোনেরা!

এটা অত্যন্ত সুখকর সংযোগ যে আজ যখন দেশ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে তখন আমরা এই ধরিত্রীর মহান সুপুত্র লচিত বড়ফুকনজির ৪০০তম জন্মজয়ন্তীও পালন করছি। তাঁর জীবন দেশভক্তির মূর্ত স্বরূপ এবং দেশভক্তির প্রেরণা। কার্বী আঙ-লঙ-এর পবিত্র ভূমিতে দাঁড়িয়ে আমি এই মহান নায়ককে সাদর প্রণাম জানাই, তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।

বন্ধুগণ,

ভারতীয় জনতা পার্টির ডবল ইঞ্জিনের সরকার যেখানেই রয়েছে সেখানেই ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস অউর সবকা প্রয়াস’ – এই ভাবনা নিয়ে কাজ করে চলেছে। আজ এই সঙ্কল্প কার্বী আঙ-লঙ-এর এই পবিত্র ভূমিতেও আরও একবার শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আসামের স্থায়ী শান্তি এবং দ্রুত উন্নয়নের জন্য যে চুক্তি হয়েছিল তাকে আজ বাস্তবায়িত করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সেই চুক্তি অনুসারে এখানে আজ ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে বেশ কিছু প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডিগ্রি কলেজ, ভেটেরেনারি কলেজ, এগ্রিকালচার কলেজ – এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান, যেগুলি এখানকার যুব সম্প্রদায়ের সামনে নতুন নতুন সুযোগের দরজা খুলে দিতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

আজ যে শিলান্যাস কর্মসূচি হল তা নিছকই কোনও ভবনের শিলান্যাস নয়, এটা নিছকই কোনও কলেজ, কোনও মহাবিদ্যালয় বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের শিলান্যাস নয়। এটা আমার এই এলাকার নবীন প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের শিলান্যাস। এখানে উচ্চশিক্ষার জন্য এখন একটা যথোচিত ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, আর তার ফলে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম পরিবারের সন্তানরাও এখানে উচ্চতর শিক্ষা নিতে পারবে। তেমনই কৃষকদের এবং পশুপালকদের জন্যও এই প্রতিষ্ঠানগুলি এখানেই উন্নত পরিষেবা দিতে পারবে। এই প্রকল্পগুলি ছাড়া চুক্তি অনুসারে দ্বিতীয় যে দিকটি রয়েছে, তা নিয়েও আসাম সরকার নিয়মিত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অস্ত্র সমর্পণ করে যে বন্ধুরা দেশ নির্মাণের জন্য মূলস্রোতে ফিরে এসেছিলেন, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য নিরন্তর কাজ করা হচ্ছে।

ভাই ও বোনেরা,

স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে দেশ যে সঙ্কল্পগুলি নিয়েছে, সেগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কল্প হল ‘অমৃত সরোবর’ খননের সঙ্কল্প। দেশের প্রত্যেক জেলায় কম করে ৭৫টি ‘অমৃত সরোবর’ খননের লক্ষ্য। এত বড় লক্ষ্য নিয়ে আজ দেশ এগিয়ে চলেছে। কিছুদিন আগেই জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আমি এই প্রকল্পের শুভ সূচনা করেছিলাম। আমি অত্যন্ত আনন্দিত আজ আসামেও ২ হাজার ৬০০-রও বেশি ‘অমৃত সরোবর’ খননের কাজ শুরু হচ্ছে। এই সরোবরগুলি সম্পূর্ণভাবে গণ-অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে। এ ধরনের সরোবর তো আমাদের দেশের জনজাতি সমাজের একটি সমৃদ্ধ পরম্পরার অন্তর্গত। এগুলির মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে জল সংরক্ষণও হবে, পাশাপাশি রোজগারের উৎসও গড়ে উঠবে। আসামে মৎস্যচাষ খাদ্য এবং পেশার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এই ‘অমৃত সরোবর’গুলির মাধ্যমে এই রাজ্যে মৎস্যচাষও অত্যন্ত উপকৃত হবে।

ভাই ও বোনেরা,

আপনারা সবাই বিগত দশকগুলিতে একটি দীর্ঘ সময় ধরে অত্যন্ত সমস্যার মধ্যে কাটিয়েছেন। কিন্তু ২০১৪ সালের পর উত্তর-পূর্ব ভারতে ক্রমাগত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হচ্ছে, মানুষের উন্নয়ন হচ্ছে। আজ যখন কেউ আসামের জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে আসেন, কিংবা উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে যান, তখন অনেক পরিবর্তিত পরিস্থিতি দেখে তাঁদেরও ভালো লাগে। কার্বী আঙ-লঙ হোক কিংবা অন্যান্য জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল, আমরা এই সমস্ত এলাকার উন্নয়ন এবং বিশ্বাস বৃদ্ধির নীতি নিয়েই কাজ করে চলেছি।

বন্ধুগণ,

আপনারা খুব ভালোভাবেই জানেন যে আমি আপনাদের সমস্যাগুলিকে, এই এলাকার বিভিন্ন সমস্যাকে আপনাদেরই পরিবারের একজন সদস্য রূপে, আপনাদেরই একজন ভাইয়ের মতো, আপনাদেরই একজন পুত্রের মতো প্রতিটি সমস্যাকে আমি নিজের মনে করে বোঝার চেষ্টা করেছি, আর আপনারা আমাকে বুদ্ধি দিয়ে কম, হৃদয় দিয়ে বেশি গভীরভাবে বুঝিয়েছেন। আপনারা প্রত্যেকবার আমার অন্তর স্পর্শ করেছেন, আমার হৃদয়কে জিতে নিয়েছেন। যখন পরিবারের একজন সদস্য রূপে আমরা সবাই একটি পরিবারের কোনও সমস্যার সমাধান খুঁজি তখন তাতে একটি সংবেদনশীলতা থাকে, ব্যথা এবং যন্ত্রণায় সহমর্মিতা থাকে, অনুভব থাকে। আপনাদের স্বপ্নগুলিকে বোঝার চেষ্টা করি, আপনাদের সঙ্কল্পগুলিকে বুঝতে পারি। আপনাদের সৎ প্রচেষ্টাগুলিকে সম্মান জানানোর জন্যই জীবন উৎসর্গ করার ইচ্ছা হয়।

বন্ধুগণ,

প্রত্যেক মানুষকে, আসামের এই বন্ধুর প্রান্তিক এলাকাগুলির মানুষকেও, অরণ্যে জীবন কাটানো আমার নবীন প্রজন্মের বন্ধুদের মনেও এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, ভাবনা থাকে, আর এই ভাবনাকে বুঝে আপনাদের স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়নের জন্য, আপনাদের স্বপ্নগুলিকে আমাদের সকলের সঙ্কল্পে পরিণত করেছি, আর আপনারা এবং আমরা সবাই মিলে প্রতিটি সঙ্কল্পকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে কাজে নেমে পড়েছি। আপনারাও নেমেছেন। এখন আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করছি, আর আমরা সবাই মিলেমিশে জয়লাভও করব।

ভাই ও বোনেরা,

আজ গোটা দেশ এটা দেখছে যে বিগত বছরগুলিতে হিংসা, অরাজকতা এবং অবিশ্বাসের অনেক দশক পুরনো সমস্যাগুলির কিভাবে সমাধান করা হচ্ছে, কিভাবে পথ খুঁজে বের করা হচ্ছে। কখনও এই এলাকা নিয়ে ভয় মিশ্রিত আলোচনা হত, কখনও বোমার আওয়াজ শোনা যেত, কখনও গুলির আওয়াজ শোনা যেত, আর আজ এখানে হাততালির আওয়াজ আকাশে-বাতাসে গুঞ্জরিত হচ্ছে, জয়জয়কার শোনা যাচ্ছে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে কার্বী আঙ-লঙ-এর অনেক সংগঠন শান্তি এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে আসার সঙ্কল্প নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ২০২০-তে আসামে বোড়ো চুক্তিও এই এলাকায় আঞ্চলিক শান্তির নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। আসাম ছাড়াও ত্রিপুরাতে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা বা এনএলএফটি শান্তির পথে পা বাড়িয়েছে। প্রায় আড়াই দশক ধরে যে ব্রু-রিয়াং সংক্রান্ত সমস্যা চলছিল, সেটিরও সমাধান করা হয়েছে। বাকি জায়গাতেও শান্তি স্থাপনের জন্য আমাদের লাগাতার প্রচেষ্টা চলছে। আমরা ঐকান্তিকভাবে এই সমস্যাগুলি সমাধানের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।

বন্ধুগণ,

হিংসার মাধ্যমে, অশান্তির ফলে যাঁরা সবচাইতে বেশি প্রভাবিত হন, যাঁদের সবচাইতে বেশি দুঃখ সহ্য করতে হয়, যাঁদের অশ্রু কখনও শুকোয় না, তাঁরা হলেন আমাদের মা ও বোনেরা, আমাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা। আজ আমি যখন অস্ত্র সমর্পণ করে অরণ্যের ডেরা থেকে ফিরে আসা নবীন প্রজন্মের মানুষদের তাঁদের পরিবারের সঙ্গে থাকতে দেখি, পরিবারের কাছে ফিরে আসতে দেখি, আর আমি যখন সেই মায়েদের চোখের দিকে তাকাই, সেই মায়েদের চোখে যে আনন্দ অনুভূত হয়, যে খুশির অশ্রু বইতে শুরু করে তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। মায়েরা যখন জীবনে একটি সান্ত্বনা পান, আনন্দ পান, তখন আমি তাঁদের আশীর্বাদ অনুভব করি। আজ এখানে এত বড় সংখ্যায় মা ও বোনেরা এসেছেন। এই মা ও বোনেদের এখানে আসা, আমাদেরকে আশীর্বাদ দেওয়া, এটাও শান্তি প্রক্রিয়াকে নতুন শক্তি জোগাবে, নতুন প্রাণশক্তি জোগাবে। এই এলাকার মানুষের জীবন, এখানকার ছেলে-মেয়েদের জীবন যাতে উন্নত হয়, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের ডবল ইঞ্জিন সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাজ করে চলেছে, সম্পূর্ণ সমর্পণ ভাবে নিয়ে কাজ করে চলেছে, সেবার ভাব নিয়ে কাজ করে চলেছে।

ভাই ও বোনেরা,

আসামে, উত্তর-পূর্ব ভারতে, সরকার এবং সমাজের সমবেত প্রচেষ্টায় যেভাবে শান্তির আবহ ফিরে আসছে, সেভাবেই পুরনো নিয়মগুলিও পরিবর্তিত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের অনেক রাজ্যে আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট বা আফস্পা চালু রয়েছে। কিন্তু বিগত আট বছরে স্থায়ী শান্তি এবং উন্নত আইন ব্যবস্থা চালু হওয়ায় আমরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেক এলাকা থেকে এই আফস্পা আইনকে সরিয়ে দিয়েছি। বিগত আট বছরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হিংসার ঘটনা প্রায় ৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এটাই কারণ যে সবার আগে ত্রিপুরায়, আর তারপর মেঘালয়ে আফস্পা তুলে দেওয়া হয়েছে। আসামেও এই আইন তিন দশক ধরে জারি ছিল। পরিস্থিতি উন্নত না হওয়ার কারণে পূর্ববর্তী সরকারগুলি বারবার এর সময়সীমা বাড়িয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বিগত বছরগুলিতে পরিস্থিতিকে এভাবে সামলানো হয়েছে যে আজ আসামের ২৩টি জেলা থেকে আফস্পা-কে তুলে নেওয়া হয়েছে। অন্য এলাকাগুলিতেও আমরা দ্রুতগতিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি, যাতে সেখান থেকেও আফস্পা-কে তুলে নেওয়া যায়। নাগাল্যান্ড এবং মণিপুরেও এই লক্ষ্যে অনেক দ্রুতগতিতে কাজ করা হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যেকার সমস্যাগুলি সমাধান তো করা হচ্ছেই, তাছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে যে অনেক দশক পুরনো যে সীমা বিবাদ ছিল, সেগুলিকেও অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সমাধান করা হচ্ছে। আমি, হিমন্তজি এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীদেরও আজ শুভেচ্ছা জানাব যে আজ তাঁদের প্রচেষ্টায় উত্তর-পূর্ব ভারত এখন দেশের একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক একক হয়ে ওঠার পথে অগ্রসর হচ্ছে। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর ভাবনা নিয়ে আজ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খোঁজা হচ্ছে। আসাম এবং মেঘালয়ের মধ্যে গড়ে ওঠা সহমতই অন্যান্য এমন সমস্যার সমাধানকেও উৎসাহ জোগাবে। এর ফলে এই গোটা এলাকায় উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা আরও প্রবল হয়ে উঠবে।

ভাই ও বোনেরা,

বোড়ো চুক্তি থেকে শুরু করে কার্বী আঙ-লঙ চুক্তি, লোকাল সেলফ গভর্ন্যান্স-এর ওপর আমরা অনেক বেশি জোর দিয়েছি। কেন্দ্রীয় সরকার বিগত ৭-৮ বছর ধরে নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছে, যাতে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও শক্তিশালী করে তোলা যায়, সেগুলির কাজকর্মকে আরও বেশি স্বচ্ছ করে তোলা যায়। কার্বী আঙ-লঙ অটোনমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল হোক কিংবা অন্যান্য স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের ওপরও এখন অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলির বিভিন্ন প্রকল্পকে দ্রুতগতিতে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার অনেক বড় দায়িত্ব এই স্থানীয় সংস্থাগুলির মাধ্যমেই, তাঁদের সহযোগিতাতেই সম্পূর্ণ করা যাবে। গণ-সুবিধা, জনকল্যাণ এবং গণ-অংশীদারিত্ব – এটা আমাদের সকলের অগ্রাধিকার।

ভাই ও বোনেরা,

দেশের উন্নয়নের জন্য রাজ্যের উন্নয়ন আর রাজ্যের উন্নয়নের জন্য প্রত্যেক গ্রামের উন্নয়ন, প্রত্যেক শহরের উন্নয়ন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। গ্রামগুলিতে এই উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন স্থানীয় প্রয়োজন অনুসারে, স্থানীয় পরিস্থিতি অনুসারে উন্নয়ন প্রকল্পগুলি তৈরি হয়, আর সেগুলিকে সম্পূর্ণ রূপে গুরুত্বও দেওয়া হয়। সেজন্য বিগত বছরগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে আমরা স্থানীয় প্রয়োজনগুলির দিকে অনেক লক্ষ্য রেখেছি। এখন যেরকম দরিদ্রদের বাসস্থান সংক্রান্ত প্রকল্পগুলি যেমনটা আগে চলত, তাদের থেকে নকশা নিয়ে মেটেরিয়াল পর্যন্ত সবকিছু দিল্লিতেই স্থির হত। কিন্তু কার্বী আঙ-লঙ-এর মতো আদিবাসী এলাকাগুলির পরম্পরা ভিন্ন। তাঁদের বাড়ি তৈরির সংস্কৃতিও ভিন্ন। এই এলাকায় বাড়ি তৈরির কাঁচামালের সহজলভ্যতাও ভিন্ন। সেজন্য একটি বড় পরিবর্তন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় করা হয়েছে যে সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা জমা করা হবে। তারপর সেই সুবিধাভোগী নিজের পছন্দ অনুসারে, নিজের ইচ্ছা অনুসারে নিজের বাড়ি বানাবে, আর তারপর বুক উঁচু করে বিশ্ববাসীকে বলবে – এটা আমার বাড়ি, এটা আমি বানিয়েছি। আমাদের জন্য এই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, এটা কোনও সরকারের কৃপার কর্মসূচি নয়। আমাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা গরীব মানুষের স্বপ্নের মহল গড়ে তোলার স্বপ্ন। গরীবদের ইচ্ছা অনুসারে গড়ে তোলার স্বপ্ন। গ্রামের উন্নয়নে গ্রামের মানুষদের অধিক অংশীদারিত্বের এই ভাবনা প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্পের মধ্যেও রয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে যে পাইপ এবং জল পৌঁছচ্ছে, তাকে গ্রামের ‘পানী সমিতি’গুলি রক্ষণাবেক্ষণ করবে, আর সেখানেও সমিতিগুলিতে অধিকাংশ সদস্য মা ও বোনেরা থাকবেন। কারণ, জলের গুরুত্ব কতটা সে সম্পর্কে মা ও বোনেরা যতটা বোঝেন, ততটা পুরুষরা বুঝতে পারেন না। আর সেজন্য আমাদের মা ও বোনেদের কেন্দ্রে রেখে এই জলের প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে যে এই প্রকল্প শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত যেখানে ২ শতাংশেরও কম গ্রামের বাড়িগুলি থেকে এখানে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দিয়েছিল। এখন প্রায় ৪০ শতাংশ পরিবার পর্যন্ত নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে গেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে অতি সত্ত্বর আসামের প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে যাবে।

ভাই ও বোনেরা,

জনজাতি সমাজের সংস্কৃতি, সেখানকার ভাষা, সেখানকার কলা, সংস্কৃতি, সেখানকার হস্তশিল্প – এই সকল শুধু এখানকার নয়, আমার ভারতের ঐতিহ্য। আপনাদের এই ঐতিহ্যের জন্য প্রত্যেক ভারতবাসী গর্বিত, আর আসাম তো অনেক সমৃদ্ধ রাজ্য। আসামের প্রত্যেক জেলা, প্রত্যেক এলাকা, প্রত্যেক জনজাতির সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভারতকে যুক্ত করে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর ভাবকে শক্তিশালী করে তোলে। সেজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রচেষ্টা ছিল যে জনজাতি কলা সংস্কৃতি, আর্ট ও ক্র্যাফটকে সংরক্ষণ করা হোক, সেগুলিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। আজ সারা দেশে যে জনজাতি মিউজিয়াম তৈরি করা হচ্ছে, জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামে যে সংগ্রহালয়গুলি বিকশিত করা হচ্ছে, সেগুলির পেছনের ভাবনাও এটাই। কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা জনজাতি প্রতিভার সমাদর, জনজাতি সমাজের স্থানীয় পণ্যের সমাদরকেও উৎসাহিত করা হচ্ছে। কার্বী আঙ-লঙ সহ সমগ্র আসামে হস্ত তাঁতে বোনা সুতির কাপড়, বাঁশের নানা পণ্য, কাঠ দিয়ে তৈরি নানা পণ্য এবং ধাতব বাসন, অন্যান্য কলাকৃতির একটি অদ্ভূত উৎকর্ষ ও পারিপাট্য আছে। এই স্থানীয় পণ্যগুলির জন্য উচ্চকিত হওয়া, লোকালের জন্য ভোকাল হওয়া এখানে অত্যন্ত প্রয়োজন। এই পণ্যগুলিকে দেশ এবং বিশ্বের সমস্ত বাজারে পৌঁছে দিতে হবে, প্রত্যেক বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে। সেজন্য সরকার সব ধরনের প্রয়োজনীয় প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলছে, আর দূরদুরান্তের অরণ্যে বসবাসকারী আমার ভাই ও বোনেরা, কলা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত আমার ভাই ও বোনেরা, হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত আমার ভাই ও বোনেরা, আমি প্রত্যেক জায়গায় গিয়ে আপনাদের কথা বলি। ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এ প্রত্যেক জায়গায় গিয়ে বলি, কারণ, আপনারা যা করেন সেগুলি যাতে ভারতের সমস্ত বাড়িতে স্থান পায়, বিশ্ববাসীর কাছে যেন সেগুলি সমাদর পায়, সেগুলির সম্মান বাড়ে।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার এই অমৃতকালে কার্বী আঙ-লঙ-এর জনগণও শান্তি এবং উন্নয়নের নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে। এখন এখান থেকে আমাদের পেছন ফিরে তাকালে চলবে না। আগামী কয়েক বছরে আমাদের মিলেমিশে সেই উন্নয়নকে সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে, যা আমরা বিগত দশকগুলিতে করতে পারিনি। সেই খামতি পূরণ করতে হবে। আসামের উন্নয়নের প্রচেষ্টায় আমরা সম্পূর্ণ রূপে আপনাদের পাশে রয়েছি। আমি আরও একবার এত বড় সংখ্যায় আমাকে আশীর্বাদ দিতে আসার জন্য আপনাদের সবাইকে শ্রদ্ধা জানাই। আমি আরও একবার আপনাদের মনে বিশ্বাস জাগাতে চাই, যেমনটি আমি আগেও বলেছি, আপনাদের এই যে ভালোবাসা, এই ভালোবাসাকেও সুদ সমেত ফিরিয়ে দেব। উন্নয়নের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনব। এটাই আপনাদের সকলের প্রতি আমার শুভকামনা।

“কারডোম।”

ধন্যবাদ!

ভারতমাতা কী জয়!

ভারতমাতা কী জয়!

ভারতমাতা কী জয়!

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

‘কারডোম’!

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1821741) Visitor Counter : 149