প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

হলদোয়ানিতে বিবিধ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 30 DEC 2021 6:31PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১

 

ভারতমাতার জয়, ভারতমাতার জয়, ভারতমাতার জয়! উত্তরাখণ্ডের রাজ্যপাল শ্রী গুরমিত সিং-জি, এখানকার যুব ও কর্মঠ এবং জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী পুষ্কর সিং ধামীজি, ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য অধ্যক্ষ শ্রী মদন কৌশিকজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী অজয় ভট্টজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য শ্রী রমেশ পোখরিয়াল ‘নিশাঙ্ক’জি, শ্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতজি, শ্রী তীরথ সিং রাওয়াতজি, শ্রী বিজয় বহুগুণাজি, উত্তরাখণ্ড সরকারের মন্ত্রী শ্রী সতপাল মহারাজজি, শ্রী হরক সিং রাওয়াতজি, শ্রী সুবোধ উনিয়ালজি, শ্রী মুন্সিধর ভগতজি, সংসদে আমার সাথী শ্রীমতী মালা রাজ্যলক্ষ্মীজি, শ্রী অজয় টমটাজি, অন্যান্য সাংসদ ও বিধায়কগণ, আর আমার কুমায়ুনের প্রিয় ভাই ও বোনেরা!

যএখানে যাঁরা ওপরের দিকে দাঁড়িয়ে আছেন সবাই ঠিকঠাক দাঁড়াতে পেরেছেন তো? আমাকে শুনতে পাচ্ছেন তো? আপনারা এত বেশি সংখ্যক মানুষ ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন, আমার ভয় করছে, আপনারা আর এগোবেন না কিন্তু। চারিদিকে সমস্ত বাড়ির ছাদে মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। আপনাদের এই ভালোবাসা, আপনাদের এই আশীর্বাদ, এর জন্য আমি আপনাদের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ। “গোলজ্যূকি ইয় পবিত্র ধরতী কুমায়ুঁ মে, আঁপূ সবৈ, ভাই বৈণিন কো ম্যার নমস্কার, ওয় সবৈ নানাতিনাকৈঁ মোর পেয়ার ওয় আশীষ!” অর্থাৎ, পবিত্র কুমায়ুনের গোলজ্যুকির মাটিতে আপনাদের সবাইকে, সমস্ত ভাই-বোনেদের আমার নমস্কার, আর যারা আমার থেকে বয়সে ছোট, তাদেরকে আমার ভালোবাসা ও আশীর্বাদ। উত্তরাখণ্ডের জাগেশ্বর-বাগেশ্বর-সোমেশ্বর-রামেশ্বর – এই তীর্থস্থানগুলির সমস্ত শিবস্থানকে আমার শত শত প্রণাম। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও কুমায়নের অনেক বড় অবদান ছিল। এখানকার পণ্ডিত বদ্রীদত্ত পাণ্ডেজির নেতৃত্বে উত্তরায়ণী মেলায় কুলি-বেগার প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল এবং এর সমাপ্তি হয়েছিল।

বন্ধুগণ,

আজ আবার আমার যখন কুমায়ুন আসার সৌভাগ্য হয়েছে, তখন আপনাদের সবার সঙ্গে আমার যে পুরনো সম্পর্ক রয়েছে, যে গভীর  জানি বন্ধুগণ! উত্তরাখণ্ডে ক্রমবর্ধমান আধুনিক পরিকাঠামো, ‘চারধাম মহাপরিযোজনা’, নব-নির্মীয়মান রেল, রেলের নতুন নতুন রুট এই দশককে উত্তরাখণ্ডের দশক করে গড়ে তুলবে। উত্তরাখণ্ডে নির্মীয়মান নতুন নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, উত্তরাখণ্ডে ক্রমবর্ধমান শিল্পোদ্যোগ ক্ষমতা এই দশককে উত্তরাখণ্ডের দশক করে তুলবে। উত্তরাখণ্ডে পর্যটন ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হচ্ছে, গোটা বিশ্বে যোগ-এর প্রতি ক্রমবর্ধমান আকর্ষণ তাঁদেরকে উত্তরাখণ্ডের মাটির দিকে টেনে আনছে, আনতে চলেছে। পর্যটকদের জন্য নানারকম সুবিধা ক্রমে বাড়ছে। তাছাড়া,  ‘হোম-স্টে অভিযান’ এই দশককে উত্তরাখণ্ডের দশক করে ছাড়বে। উত্তরাখণ্ডে ক্রমবর্ধমান ন্যাচারাল ফার্মিং বা প্রাকৃতিক চাষ, এখানকার ভেষজ পণ্য কৃষিক্ষেত্রেও এই দশককে উত্তরাখণ্ডের দশক করে তুলবে এবং উত্তরাখণ্ডের এই দশক ভারতের জন্য গৌরবপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। আজ যে প্রকল্পগুলির উদ্বোধন হল কিংবা শিলান্যাস হল, এগুলিও এই দশককে উত্তরাখণ্ডের দশক করে তোলার অনুকূল পরিকাঠামো গড়ে তুলবে। আমি উত্তরাখন্ডের জনগণকে, আজ হলদোয়ানির এই মাটি থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

বন্ধুগণ,

আমরা সবাই হিমালয়ের শক্তিকে জানি। আমরা এটাও জানি যে উত্তরাখণ্ডে কতগুলি নদীর উৎস রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই এখানকার জনগণ আরও দুটি ধারা দেখেছেন। একটি ধারা হল - পাহাড়কে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রাখো! আর দ্বিতীয় ধারা হল – পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করো। প্রথম ধারার লোকেরা আপনাদেরকে সব সময় উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রাখতে চেয়ে আসছেন। পাহাড়ে সড়কপথ, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং জল সরবরাহের জন্য যতটা পরিশ্রম করা প্রয়োজন ছিল, তাঁরা সর্বদাই এর থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। এখানকার শত শত গ্রামে কত প্রজন্মের মানুষ যে ভালো সড়কের অভাবে, ভালো পরিষেবার অভাবে আমাদের প্রিয় উত্তরাখণ্ড ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে বসবাস শুরু করেছেন। আজ আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট যে উত্তরাখণ্ডের জনগণ দেশের এই ধরনের মানুষদের প্রকৃত সত্য জেনে ফেলেছেন। আজ আমাদের সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর মন্ত্র নিয়ে তীব্র গতিতে দেশকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে দিন-রাত কাজ করে চলেছে। আজ উধমসিং নগর জেলায় গড়ে ওঠা এইমস, ঋষিকেশের স্যাটেলাইট কেন্দ্র এবং পিথোরাগড়ে জগজীবন রাম সরকারি মেডিকেল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এই দুই হাসপাতালে কুমায়ুন এবং তরাই অঞ্চলের জনগণের অনেক সুবিধা হবে। আলমোড়া মেডিকেল কলেজকে দ্রুত শুরু করার জন্য তীব্র গতিতে কাজ চলছে। উত্তরাখণ্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করার দ্রুত চেষ্টা করা হচ্ছে কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কানেক্টিভিটির সমস্যা অনেক বড় প্রতিকূলতা হয়ে উঠেছে। আমরা তাকেও দূর করার লাগাতার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আজকের এই কর্মসূচিতে এই সভামঞ্চ থেকেই প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার সড়ক নির্মাণ প্রকল্প-বাবদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মাধ্যমে ১,২০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। এই সড়কগুলি ছাড়াও ১৫১টি স্কুল নির্মাণের কাজ করা হবে।

ভাই ও বোনেরা,

আপনাদের সুখ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখার ক্ষেত্রে যাঁরা ভাবনাচিন্তা করেছেন, তাঁদের কারণেই মানস-খণ্ড, যা মানস সরোবরের প্রবেশদ্বার ছিল, সেটি যথাযথ পথ না থাকায় সমস্ত সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। আমরা শুধুই টনকপুর-পিথোরাগড় অল ওয়েদার রোড নির্মাণের জন্য কাজ করিনি, বরং লিপুলেখ পর্যন্ত সড়ক তৈরি করেছি এবং এতে ভবিষ্যতেও অনেক বিস্তারিত কাজ হতে চলেছে। এমনিতে আজ যখন জনগণেশ এই মানুষদের প্রকৃত সত্য জেনে নিয়েছে, ততদিনে এই মানুষেরা আবার একটি নতুন দোকান খুলে ফেলেছে। এই দোকানটা হল গুজব রটানোর দোকান। গুজব উৎপাদন করো আর তা ছড়িয়ে দাও আর এই গুজবটিকে সত্যি প্রমাণ করার জন্য দিন-রাত চিৎকার করতে থাকো। আমাকে বলা হয়েছে যে, এখানে টনকপুর-বানেশ্বর রেললাইন নিয়েও উত্তরাখণ্ড-বিরোধী নতুন গুজব রটানো হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

টনকপুর-বানেশ্বর রেললাইনের ফাইনাল লোকেশন সার্ভে এই প্রকল্পের অনেক বড় ভিত্তি, আর এই রেললাইনে যাতে দ্রুতগতিতে কাজ করা যায় তা সুনিশ্চিত করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। আমি আপনাদের সবাইকে আজ এখানে ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস প্রদানের জন্য এসেছি। আজ ঋষিকেশ-কর্ণপ্রয়াগ রেল রুট তৈরি হচ্ছে। কাল টনকপুর-বানেশ্বর রুটও এভাবেই তৈরি হবে। আমার উত্তরাখণ্ডের ভাই ও বোনেরা, এই শিলান্যাস কেবলই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন নয়, এটি শুধুই পাথর নয়, এটি সেই সঙ্কল্পশিলা যা ডবল ইঞ্জিন সরকার সিদ্ধ করে দেখাবে।

বন্ধুগণ,

উত্তরাখণ্ড রাজ্য স্থাপনের দুই দশক পূর্ণ হয়েছে। এই বছরগুলিতে আপনারা এরকম সব  সরকার পরিচালনকারীদের দেখেছেন? যাঁরা বলতেন, প্রয়োজনে উত্তরাখণ্ডকে লুটে নাও, কিন্তু আমার সরকারকে বাঁচিয়ে দাও। এই মানুষেরা দু’হাত দিয়ে উত্তরাখণ্ডকে লুটেছেন। যাঁদের উত্তরাখণ্ডের প্রতি ভালোবাসা থাকবে, তাঁদের এরকম ভাবনা থাকতে পারে না। যাঁরা কুমায়ুনকে ভালোবাসেন, তাঁরা কুমায়ুন ছেড়ে যান না। এটা তো দেবভূমি! এখানকার জনগণের সেবা করা, উত্তরাখণ্ডের সেবা করা, দেবী-দেবতাদের সেবা করার সমান। পূণ্য অর্জন হয়। এই ভাবনা নিয়েই আমাদের সরকার কাজ করছে। আমি স্বয়ং আপ্রাণ পরিশ্রম করে চলেছি। আগেকার অসুবিধা এবং অভাবগুলি এখন সুবিধা ও সদ্ভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। তাঁরা আপনাদের মৌলিক সুবিধার ক্ষেত্রেও অনেক অভাবে রেখেছেন। আমরা প্রত্যেক শ্রেণী, প্রত্যেক ক্ষেত্রের আপামর জনগণকে ১০০ শতাংশ বুনিয়াদি সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য দিন-রাত এক করে কাজ করে চলেছি।

ভাই ও বোনেরা,

মানুষকে অভাবে রাখার রাজনীতিতে সবচাইতে বেশি লোকসান যদি কারোর হয়, তাঁরা হলেন আমাদের মা, বোন ও মেয়েরা। রান্নাঘরে ধোঁয়া থাকলে সবচাইতে বেশি সমস্যায় পড়েন মা ও বোনেরা, বাড়িতে শৌচালয় না থাকলে সবচাইতে বেশি সমস্যায় পড়েন বোন ও মেয়েরা, পাকা ছাদ না থাকলে বর্ষায় যখন ঘরের মধ্যে জল পড়ে তখন সবচাইতে বেশি সমস্যা হয় মায়ের। বাচ্চার অসুস্থ হলে চিকিৎসার টাকা নেই, পরিষেবা নেই, সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় মায়ের। পানীয় জল সংগ্রহের জন্য সবচাইতে বেশি পরিশ্রম এবং সময় লাগে আমাদের মা ও বোনেদের। বিগত সাত বছরে মাতৃশক্তির এই সমস্যাগুলিকে আমরা শিকড় থেকে দূর করার চেষ্টা করেছি। ‘জল জীবন মিশন – হর ঘর জল, হর ঘর নল’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দু’বছরে এই অভিযানের মাধ্যমে দেশের ৫ কোটিরও বেশি পরিবারকে নলের মাধ্যমে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আজও যে ৭০টির বেশি প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে, সেগুলির মাধ্যমে ১৩টি জেলার বোনেদের জীবন সহজ হতে চলেছে। শুধু তাই নয়, হলদওয়ানি এবং জগজিৎপুরের চারপাশের এলাকাতেও এখন পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাতে মানুষের পানীয় জলের অভাব না থাকে।

বন্ধুগণ,

যখন আমরা কোনও ঐতিহাসিক স্থানে যাই, তখন সেখানে আমাদের বলা হয় যে অমুক স্থানটি এত বছর আগে তৈরি করা হয়েছে, এই ইমারত এতটা পুরনো। কিন্তু অনেক দশক ধরে অবস্থা এমন ছিল যে বড় বড় প্রকল্পগুলির প্রসঙ্গ উঠলে আমাদের এখানে কী বলা হত? আমাদের এখানে বলা হত – অমুক প্রকল্প এত বছর ধরে আটকে আছে কিংবা তমুক প্রকল্প এত দশক ধরে অসম্পূর্ণ রয়েছে। আগে যে সব সরকার ছিল, এসব কথা তাদের পার্মামেন্ট ট্রেডমার্ক ছিল। আজ এখানে, উত্তরাখণ্ডে যে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হল, সেগুলির এরকমই ইতিহাস রয়েছে। আজ ভাবুন বন্ধুগণ! উত্তরাখণ্ডে, আজ এখানে মানুষ বসে আছেন, তাঁরা প্রায় চার দশক বা তার চাইতেও বেশি সময় ধরে অপেক্ষায় আছেন। এতদিন ধরে শুনে আসছেন, আপনারা জেনেও অনেকে হয়তো ভুলে গেছেন যে কারণটা কি ছিল। এই প্রকল্প সম্পর্কে প্রথমবার ১৯৭৬ সালে ভাবা হয়েছিল। এখন প্রায় ৫০ বছর হতে চলল। আজ ৪৬ বছর পর আমাদের সরকার এই কাজের শিলান্যাস করেছে। আমি উত্তরাখণ্ডের ভাই-বোনেদের একটা জিনিস জিজ্ঞাসা করতে চাই। যে কাজ ১৯৭৬-এ ভাবা হয়েছিল, ৪৬ বছর লেগে গেছে। এটা কি তারা পাপ করেছেন, নাকি করেননি? এ ধরনের পাপ যাঁরা করেছেন, তাঁদের কি সাজা পাওয়া উচিৎ নয়? আপনারাই বলুন তাঁদের সাজা পাওয়া উচিৎ কিনা। এভাবে দেরি করে দিয়ে আপনাদের তো ক্ষতি করেছে, তাই না? উত্তরাখণ্ডের অনেক ক্ষতি করেছে, তাই না? দু-দুটি প্রজন্ম ধরে আপনারা এই ক্ষতি সহ্য করেছেন। তাই কিনা? আপনারা কি এমন পাপীদের ভুলে যাবেন? এই ধরনের অন্যায়, পাপ যাঁরা করেছে তাঁদেরকে ভুলে যাবেন? নাকি তাঁদের বড় বড় কথার জালে আবার ভ্রমিত হবেন? কোনও দেশ ভাবতেও পারে না, এমন পাঁচ পাঁচটি দশক ধরে একটি প্রকল্প ফাইল চাপা পড়ে, এই টেবিল থেকে ওই টেবিল ঘুরে ঘুরতে প্রকল্পটাই ঝুলে ছিল। একের পর এক নির্বাচন এসেছে, বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কিছুই আপনাদের কাজে লাগেনি।

ভাই ও বোনেরা,

আমার সাত বছরের রেকর্ড দেখে নিন। খোঁজখবর করে এ ধরনের পুরনো জিনিসগুলিকে ঠিক করার কাজ আমার সময়কালে করা হচ্ছে। এখন আমি সমস্ত কাজকে ঠিক করছি। আপনারাও আজ সেগুলিকে ঠিক করুন। যাঁরা আগের সরকারে ছিলেন, তাঁদের যদি আপনাদের জন্য বিন্দুমাত্র চিন্তা থাকত তাহলে কি এই প্রকল্পগুলি চার দশক ধরে ঝুলে থাকত? তাঁদের যদি আপনাদের প্রতি ভালোবাসা থাকত, তাহলে যে কাজগুলি না হওয়ার ফলে আপনাদের এত দুর্দশা ভুগতে হত কি? সত্য হল এটাই যে যাঁরা আগের সরকারে ছিলেন, তাঁদের উত্তরাখণ্ডের সামর্থ্য নিয়ে কখনই কোনও চিন্তা ছিল না, পরোয়া ছিল না। পরিণাম এটা হল যে, আমরা পর্যাপ্ত বিদ্যুতও পাইনি, কৃষকরা যথাযোগ্য সেচের জল পাননি আর দেশের অধিকাংশ গ্রামের জনগণকে নলের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জলের অভাবে জীবন কাটাতে হয়েছে। পরিশ্রুত পানীয় জলের অভাব স্বীকার করেই জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে।

বন্ধুগণ,

বিগত সাত বছর ধরে ভারত তার পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে আর আপনারা প্রাকৃতিক সামর্থ্যের প্রকৃত ব্যবহার করে যাচ্ছেন। আজ যে প্রকল্পগুলি শুরু হয়েছে, সেগুলি উত্তরাখণ্ডের পরিচয়কে একটি ‘পাওয়ার সারপ্লাস’ রাজ্য রূপে তুলে ধরবে। পাশাপাশি, এখানকার কৃষকরা সেচের পর্যাপ্ত সুবিধা পাবেন। এই বিদ্যুৎ আমাদের শিল্পোদ্যোগগুলি পাবে, এই বিদ্যুৎ আমাদের স্কুল-কলেজগুলি পাবে, এই বিদ্যুৎ আমাদের হাসপাতালগুলি পাবে, এই বিদ্যুৎ আমাদের প্রত্যেক পরিবার পাবে।

বন্ধুগণ,

উত্তরাখণ্ডে গঙ্গা-যমুনার স্বাস্থ্য, এখানকার জনগণের পাশাপাশি দেশের অনেক বড় জনসংখ্যার স্বাস্থ্য এবং সমৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলে। সেজন্য গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত আমরা একটি অভিযান শুরু করেছি। শৌচালয় নির্মাণ থেকে শুরু করে উন্নত পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা, নোংরা জলের ট্রিটমেন্টের আধুনিক ব্যবস্থা, গঙ্গায় যে নোংরা নালাগুলির প্রদূষণ ছড়ায় সেগুলির সংখ্যা দ্রুতগতিতে কমছে। আজও এখানে ‘নমামী গঙ্গে যোজনা’র মাধ্যমে উধমসিং নগর-রামনগর-নৈনিতাল সিওয়্যার লাইন এবং সিওয়্যার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হয়েছে। নৈনিতালের অসাধারণ সুন্দর ঝিলটির সংস্কার আগে কেউ করেনি। এখন এটি সংরক্ষণের কাজও করা হবে।

বন্ধুগণ,

বিশ্বের যে কোনও স্থানের পর্যটনে ততদিন পর্যন্ত উন্নতি হবে না যতদিন পর্যন্ত সেখানে পর্যটকদের যাতায়াত ও থাকার সুব্যবস্থা না হয়। আমাদের আগে যাঁরা সরকারের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা এই বিষয়টা নিয়ে ভাবেনইনি। আজ উত্তরাখণ্ডে যে নতুন নতুন সড়কপথ তৈরি হচ্ছে, অনেক সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে, নতুন রেলপথ তৈরি হচ্ছে, সেগুলি তাদের সঙ্গে নতুন পর্যটকও নিয়ে আসবে। আজ উত্তরাখণ্ডের প্রধান স্থানগুলিতে যে রোপওয়ে তৈরি হচ্ছে, সেগুলিও তাদের সঙ্গে নতুন পর্যটক নিয়ে আসবে। আজ উত্তরাখণ্ডে যেভাবে মোবাইল ফোনের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে, জায়গায় জায়গায় নতুন টাওয়ার স্থাপন করা হচ্ছে, এগুলি নিশ্চিতভাবেই পর্যটকদের সঙ্গে নিয়ে আসবে। আজ উত্তরাখণ্ডে যেভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি হচ্ছে, এই নতুন ব্যবস্থা নিশ্চিতভাবে পর্যটকদের মনে ভরসা বাড়াবে আর এই সবকিছুর ফলে কারা সবচাইতে বেশি লাভবান হবেন? এগুলির মাধ্যমে সবচাইতে বেশি লাভবান হবেন উত্তরাখণ্ডের যুব সম্প্রদায়, আমাদের পাহাড়গুলির নব যুবক-যুবতীরা। উত্তরাখণ্ডের জনগণ সাক্ষী আছেন, যখন কেদারনাথজি দর্শনের সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন ওখানে যাওয়ার জন্য শ্রদ্ধাবান মানুষদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে মানুষ সেখানে গেছেন। এভাবে আজ দেশ দেখছে যে কাশী বিশ্বনাথধাম তৈরি হওয়ার ফলে সেখানেও শ্রদ্ধাবান মানুষদের সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে কুমায়ুনেও জাগেশ্বরধাম ও বাগেশ্বরের মতো পবিত্র গন্তব্য রয়েছে। এগুলির উন্নয়ন এই এলাকার উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। কেন্দ্রীয় সরকার নৈনিতালের দেবস্থলে ভারতের সর্ববৃহৎ অপটিক্যাল টেলিস্কোপও স্থাপন করেছে। এর ফলে দেশ-বিদেশ থেকে আগত বৈজ্ঞানিকেরা যেমন নতুন সুবিধা পেয়েছেন, তেমনই এই এলাকার নতুন পরিচয়ও গড়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ,

আজ উন্নয়ন প্রকল্পগুলির জন্য ডবল ইঞ্জিন সরকার যত টাকা খরচ করছে, এর আগে কোনও সরকার এরকম খরচ করেনি। যখন এই সড়কপথগুলি তৈরি হয়, নতুন নতুন ভবন তৈরি হয়, পিএম আবাস যোজনার মাধ্যমে গরীব মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ হয়, নতুন রেল রুট তৈরি হয়, তখন তাতেও স্থানীয় শিল্পোদ্যোগের জন্য, আমাদের উত্তরাখণ্ডের শিল্পোদ্যোগীদের জন্য নতুন সম্ভাবনা গড়ে ওঠে। উত্তরাখণ্ডের কোনও ব্যবসায়ীই যেমন এর জন্য সিমেন্টের যোগান দেন, তেমনই এখানকার কোনও ব্যবসায়ীই এর জন্য লোহা ও পাথরের কুচি সরবরাহ করেন। উত্তরাখণ্ডের কোনও প্রকৌশলী এর নকশা সংক্রান্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে যান। উন্নয়নের এই প্রকল্পগুলি আজ এখানে রোজগারের অনেক সুযোগ তৈরি করছে। উত্তরাখণ্ডের যে যুবকরা নিজেদের ক্ষমতায় নিজেরাই রোজগার করতে চান, তাঁদের জন্য ডবল ইঞ্জিনের সরকার সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উত্তরাখণ্ডের যে যুব সম্প্রদায় নিজেদের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে নিজেরা রোজগার করতে চান, ‘মুদ্রা যোজনা’র মাধ্যমে তাঁদের কোনরকম ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়াই সুলভ হারে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। যে নবীন বন্ধুরা চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাঁদেরকে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সাহায্য করা হচ্ছে। এখানে ছোট দোকানদার ভাই-বোনেদের ‘স্বনিধি যোজনা’র মাধ্যমে সাহায্য করা হচ্ছে। উত্তরাখণ্ডের দরিদ্রদের জন্য, মধ্যবিত্ত যুবকদের জন্য আমাদের সরকার ব্যাঙ্কের দরজা খুলে দিয়েছে। তাঁরা যাতে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন, কোনও বাধা যেন তাঁদের পথে না আসে সেজন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি, দিন-রাত কাজ করছি। এখানে উত্তরাখণ্ডে আয়ুষ এবং সুগন্ধী পণ্যের সঙ্গে যুক্ত শিল্পেরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশ এবং বিশ্বে এর জন্য একটি অনেক বড় বাজার রয়েছে। কাশীপুরার অ্যারোমা পার্ক উত্তরাখণ্ডের এই শক্তিকে বল দেবে, কৃষকদের সম্বল দেবে। হাজার কোটি নব যুবক-যুবতীদের রোজগার দেবে। এভাবে প্লাস্টিক শিল্পোদ্যোগ পার্কও রোজগারের ক্ষেত্রে অনেক বড় সুযোগ সৃষ্টি করবে।

ভাই ও বোনেরা,

আজ দিল্লি এবং দেরাদুনে ক্ষমতার ভাব নিয়ে নয়, সেবাভাব নিয়ে সরকারগুলি চলছে। সীমান্তবর্তী রাজ্য হওয়া সত্ত্বেও পূর্ববর্তী সরকারগুলি এই এলাকার কোনও উন্নয়ন করেনি। পূর্ববর্তী সরকারগুলির এ ধরনের মনোভাব রাষ্ট্র রক্ষার জন্য সন্তানদের সমর্পণকারী কুমায়ুনের বীর মাতারা কখনও ভুলতে পারবেন না। যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি, জাতীয় সুরক্ষার প্রতিটি দিককে অবহেলা করা হয়েছে। আমাদের সেনা এবং অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের শুধুই অপেক্ষা করিয়েছে। ‘এক পদ এক পেনশন’-এর জন্য প্রতীক্ষা, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের জন্য প্রতীক্ষা, বুলেট প্রুফ জ্যাকেটের মতো প্রয়োজনীয় সুরক্ষা কবচের জন্য প্রতীক্ষা, সন্ত্রাসবাদীদের কড়া জবাব দেওয়ার জন্য প্রতীক্ষা। কিন্তু এই নেতারা সেনা এবং আমাদের বীর অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের অপমান করার ক্ষেত্রে সবার আগে ছিলেন, তৎপর ছিলেন। উত্তরাখণ্ডের বীরাঙ্গনা মায়েরা, যাঁরা সেনাকে কুমায়ুন রেজিমেন্টের মতো একটি পরাক্রমশালী রেজিমেন্ট উপহার দিয়েছেন, তাঁরা এই অপমান কখনও ভুলতে পারবেন না।

বন্ধুগণ,

উত্তরাখণ্ডের জনগণ এই রাজ্যের উন্নয়নের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে চায়, আরও দ্রুত করতে চান। আপনাদের স্বপ্নগুলি যাতে সফল হয় এটাই আমাদের সঙ্কল্প। আপনাদের প্রত্যেকটি ইচ্ছাই  আমাদের প্রেরণা। আপনাদের প্রতিটি প্রয়োজন পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব। ডবল ইঞ্জিনের সরকারের ওপর আপনাদের এরকম আশীর্বাদ বজায় থাকলে উত্তরাখণ্ড নিশ্চিতভাবেই এই দশককে উত্তরাখণ্ডের দশক করে তুলতে পারবে। এই উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলির শুভ উদ্বোধন ও শিলান্যাসের জন্য আপনাদের সবাইকে, গোটা উত্তরাখণ্ডকে আমি অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আপনাদের সকলকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।

“পোঁরু বটী সাল ২০২২ উনের ছু, আঁপূ সব উত্তরাখণ্ডিন কে, নয়ি সালৈ কী বধৈ, তথা দগাড় মে ওণী ঘুঘুতি ত্যারেকি লৈ বধৈ!!” অর্থাৎ, সামনেই আগত ২০২২ সালের জন্য আপনাদের সমস্ত উত্তরাখণ্ডবাসীদের নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। এই নতুন বছর আপনাদের জীবনে অনেক সমৃদ্ধি নিয়ে আসুক।

ভারতমাতার জয়! ভারতমাতার জয়! ভারতমাতার জয়! অনেক অনেক ধন্যবাদ।


CG/SB/DM/



(Release ID: 1786853) Visitor Counter : 165