প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
উত্তরপ্রদেশের বলরামপুরে সরযু নহর জাতীয় প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
Posted On:
11 DEC 2021 6:09PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১
ভারত মাতার জয়! ভারত মাতার জয়! ভারত মাতার জয়!
আমি এই পবিত্র মাটিকে বারবার প্রণাম জানাই। আজ আমাদের আদিশক্তি মা পাটেশ্বরীর পবিত্র মাটি যা ছোট কাশী নামে বিখ্যাত, সেই বলরামপুরের মাটিতে আসার সৌভাগ্য হয়েছে। আপনাদের কাছ থেকে অনেক আশীর্বাদ পেয়েছি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রীমতী আনন্দিবেন প্যাটেল জি, উত্তরপ্রদেশের প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ, কর্মঠ ও জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথ জি, উপ মুখ্যমন্ত্রী শ্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য জি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত জি, শ্রী কৌশল কিশোর জি, রাজ্য সরকারের মন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র সিং জি, শ্রী রমাপতি শাস্ত্রী জি, শ্রী মুকুটবিহারী বর্মা জি, শ্রী ব্রজেশ পাঠক জি, শ্রী আশুতোষ ট্যান্ডন জি, শ্রী বলদেব ওলাখ জি, শ্রী পল্টুরাম জি, মঞ্চে উপস্থিত সমস্ত সাংসদ বন্ধুগণ, সমস্ত মাননীয় বিধায়কগণ, জেলা পঞ্চায়েতের সদস্যগণ আর আমার প্রিয় বলরামপুরের ভাই ও বোনেরা, বিপ্লবীদের এই মাটিতে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তাঁদের অমূল্য অবদান রেখেছেন। রাজা দেবী বক্স সিং, রাজা কৃষ্ণ দত্ত রাম এবং পৃথ্বী পাল সিং-এর মতো পরাক্রমীরা ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনও ত্রুটি রাখেননি। অযোধ্যায় নির্মীয়মান প্রভু শ্রীরামের অনিন্দ্যসুন্দর মন্দিরের প্রসঙ্গ যখনই উঠবে, তখনই বলরামপুর রিয়াসতের মহারাজা পাটেশ্বরী প্রসাদ সিংহের অবদানের কথা অবশ্যই উল্লেখ করা হবে। বলরামপুরের মানুষ এত দেশভক্ত যে তাঁরা নানাজি দেশমুখ এবং অটলবিহারী বাজপেয়ী জির মতো দুই-দু’জন ভারতরত্নকে লালন-পালন করেছেন, অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে এসেছেন।
বন্ধুগণ,
রাষ্ট্র নির্মাতাদের এবং রাষ্ট্র রক্ষকদের এই মাটি থেকে আমি আজ দেশের সেই সমস্ত বীর যোদ্ধাদেরকেও শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই যাঁরা ৮ ডিসেম্বরের দুর্ভাগ্যজনক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পরলোক গমন করেছেন। ভারতের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতজির এই প্রয়াণ প্রত্যেক ভারতপ্রেমীদের জন্য, প্রত্যেক রাষ্ট্রভক্ত-এর জন্য অনেক বড় ক্ষতি। জেনারেল বিপিন রাওয়াতজি কত বড় বীর যোদ্ধা ছিলেন, দেশের সেনাবাহিনীগুলিকে আত্মনির্ভর করে তোলার জন্য কত পরিশ্রম করতেন, গোটা দেশ তার সাক্ষী। একজন সৈনিক শুধু ততদিনই সৈনিক থাকেন না যতদিন তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। তাঁদের গোটা জীবনই একজন যোদ্ধার মতো হয়। অনুশাসন, দেশের সম্মান, শৌর্য, পরাক্রম রক্ষার জন্য তাঁরা প্রতি মুহূর্তে সমর্পিত থাকেন। গীতায় বলা হয়েছে –
“নয়নং চিন্দন্তী শাস্ত্রাণী নয়নং দোহতী পাবকঃ”
অর্থাৎ, অস্ত্র তাঁকে ছিন্নভিন্ন করতে পারে না, অগ্নিও তাঁকে দহন করতে পারে না। জেনারেল বিপিন রাওয়াত যেখানেই থাকুন না কেন, সেখান থেকে আগামীদিনে তাঁর ভারতকে নতুন সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে দেখবেন। দেশের সীমান্ত সুরক্ষা বৃদ্ধির কাজ, সীমান্ত পরিকাঠামো মজবুত করার কাজ, দেশের সেনাবাহিনীগুলিকে আত্মনির্ভর করে তোলার অভিযান, তিনটি সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সুদৃঢ় করার অভিযান – তিনি যেভাবে ভাবতেন, এরকম অনেক কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে। ভারত অত্যন্ত শোকাহত, কিন্তু এই দুঃখ সহ্য করেও আমরা নিজেদের গতি কিংবা প্রগতিকে শ্লথ হতে দেব না। ভারত থামবে না, কখনই থামবে না। আমরা সমস্ত ভারতবাসী মিলে আরও পরিশ্রম করব। দেশের মধ্যেই তৈরি, আর দেশের বাইরে থেকে আসা সমস্ত প্রতিকূলতার মোকাবিলা করব। ভারতকে ক্রমে আরও শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ করে তুলব।
বন্ধুগণ,
উত্তরপ্রদেশের সুপুত্র, দেওরিয়ার সুসন্তান গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিং-জির জীবন রক্ষার জন্য চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। আমি মা পাটেশ্বরীর কাছে তাঁর জীবন রক্ষার জন্য আকুল প্রার্থনা করি। দেশ আজ বরুণ সিং-জির পরিবারের পাশে রয়েছে। আমরা যে বীর সৈনিকদের হারিয়েছি, প্রত্যেকের পরিবারের সঙ্গে রয়েছি।
ভাই ও বোনেরা,
দেশ সবার আগে – এই ভাবনাকে সর্বোপরি রেখে দেশবাসী আজ প্রতিটি কাজ করছে। একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে যে! দেশের বিকাশের জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি যে দেশে যেন কখনও জলের অভাব না হয় সেটা দেখা। সেজন্য দেশের নদীগুলি সহ সমস্ত উৎস থেকে পাওয়া জলের যেন সদ্ব্যবহার হয়, কৃষকদের খেতে পর্যাপ্ত জল পৌঁছয় এটা দেখা আমাদের সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম। ‘সরযু নহর রাষ্ট্রীয় পরিযোজনা’র সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন প্রমাণ করে যে যখন ভাবনা-চিন্তায় সততা থাকে, তখন কাজও খুব ভালোভাবে হয়। অনেক দশক ধরে আপনারা এটি বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ঘাগড়া, সরযু, রাপ্তি, বাণগঙ্গা এবং রোহিনী নদীর জলশক্তি এখন এই এলাকায় সমৃদ্ধির নতুন পর্যায় নিয়ে আসতে চলেছে। বলরামপুরের পাশাপাশি, বহরাইচ, গোন্ডা, শ্রাবস্তী, সিদ্ধার্থনগর, বস্তি, গোরক্ষপুর, মহারাজগঞ্জ এবং কুশীনগরের সমস্ত বন্ধুদের, আমার লক্ষ লক্ষ কৃষক ভাই ও বোনেদের আজ হৃদয় থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। বর্ষা ঋতুতে এই এলাকায় যত প্রতিকূলতা আসে, এভাবে তার সমাধান বের করা সম্ভব হবে আর আমি জানি, আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমাদের এখানে ইতিহাস সাক্ষী, যদি কেউ তৃষ্ণার্তকে এক পেয়ালা জল পান করান তাহলে সেই ব্যক্তি সারা জীবন কখনও তাঁর ঋণ ভোলেন না। সারা জীবন সেই ব্যক্তিকে ভোলে না, আর আজ লক্ষ লক্ষ কৃষকের তৃষ্ণার্ত ধানখেত যখন জল পাবে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনাদের আশীর্বাদে সারা জীবন আমাদের কাজ করার শক্তি যোগাবে। আপনাদের আশীর্বাদ আমাদের সকল কাজে নতুন প্রাণশক্তি যোগাবে।
ভাই ও বোনেরা,
আজ আমি এটাই বলতে চাই, বিশেষ রূপে সেই কৃষকদের যাঁদের কাছে ২ হেক্টরেরও কম জমি রয়েছে, তাঁদের জন্য সেচের এই ব্যবস্থা জীবনে পরিবর্তন এনে দেবে। এভাবে কোনও ব্যক্তি মৃত্যুশয্যায় শুয়ে রয়েছেন, তাঁর রক্তের প্রয়োজন রয়েছে, যখনই চিকিৎসক রক্ত এনে তাঁর ধমনীতে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন, তারপরই তাঁর জীবন বেঁচে যায়। এই গোটা এলাকার খেতগুলিও এভাবেই সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন জীবন পেতে চলেছে।
বন্ধুগণ,
বলরামপুরের মুসুর ডালের স্বাদ বিগত বছরগুলিতে সারা দেশে জনপ্রিয় হয়েছে। এখন এই এলাকার কৃষকরা পারম্পরিক ফসলের পাশাপাশি অধিক মূল্য পাওয়া যায় এরকম, অধিক আয়সম্পন্ন দ্বিতীয় ফসলের চাষও ব্যাপকভাবে করতে পারবেন।
বন্ধুগণ,
জীবনের একটা দীর্ঘ সময় আমার সার্বজনিক জীবনে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমিও অনেক সরকার দেখেছি, তাঁদের কাজকর্মও দেখেছি। এই দীর্ঘ কালখণ্ডে আমার সবচাইতে বেশি যে জিনিসটা খারাপ লেগেছে, যে জন্য সবচাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছি, তা হল দেশের অর্থ, দেশের সময় ও দেশের সম্পদের অপব্যবহার, সেগুলির অপমান। সরকারি টাকা হলে খরচ হলে আমার কী? এতো সরকারি টাকা! – এই রকম ভাবনা দেশের ভারসাম্যযুক্ত সম্পূর্ণ বিকাশের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধরণের ভাবনা ‘সরযু নহর পরিযোজনা’কেও ঝুলিয়েছে, অনেক দেরি করিয়ে দিয়েছে। আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে এই ‘সরযু নহর পরিযোজনা’র কাজ শুরু হয়েছিল। আপনারা ভাবুন, ৫০ বছর পর আজ এর কাজ সম্পূর্ণ হচ্ছে। যখন এর কাজ শুরু হয়েছিল …। একথা শুধু এখানকার নাগরিক নয়, ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের বোঝা উচিৎ, ভারতের নবীন প্রজন্মের প্রতিটি মানুষের বোঝা উচিৎ। যাঁরা নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কামনা করেন, আমার দেশের সেই নতুন প্রজন্মের মানুষদের বোঝা উচিৎ।
বন্ধুগণ,
যখন এই ‘সরযু নহর পরিযোজনা’র কাজ শুরু হয়েছিল, তখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এটি সম্পূর্ণ হলে ১০০ কোটি টাকারও কম লাগত। আপনারা ভাবতে পারেন! যখন শুরু হয়েছিল তখন এটি ১০০ কোটি টাকার মধ্যেই সম্পূর্ণ করার কথা ছিল। কত ছিল? ১০০ কোটি। কত ছিল? ১০০ কোটি! আর আজ এর খরচ কোথায় পৌঁছেছে জানেন? আজ এই প্রকল্প সম্পূর্ণ করতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ১০ হাজার কোটি টাকা! কত টাকা? ১০ হাজার কোটি। কত টাকা? ১০ হাজার কোটি। কত টাকা? ১০ হাজার কোটি। আগে হওয়ার কথা ছিল ১০০ কোটিতে, আজ হয়েছে ১০ হাজার কোটিতে। এই টাকা কার ছিল ভাই? এই অর্থ কার? এই সম্পদ কার? আপনাদের টাকা নয়! এর মালিক কি আপনারা ছিলেন না? আপনাদের পরিশ্রমের এক একটি টাকা সঠিক সময়ে, সঠিক কাজের জন্য ব্যবহার হওয়া উচিৎ ছিল কি ছিল না? যাঁরা যথাসময়ে সঠিক কাজের জন্য সেই টাকা খরচ করেননি, তাঁরা কি এই গাফিলতির জন্য দোষী নয়? আপনাদের অর্থ নয়ছয় করার জন্য কি তাঁদের দায়ী করা উচিৎ নয়? এমন মানুষদের কি আপনারা সাজা দেবেন না? ঠিক দেবেন তো?
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
পূর্ববর্তী সরকারগুলির গাফিলতির ফলে ১০০ গুণেরও বেশি টাকা আজ এ দেশের মানুষকে খেসারত দিতে হচ্ছে। আমাদের এই এলাকার লক্ষ লক্ষ কৃষককে যদি এই সেচের জল ২০ বছর, ৩০ বছর আগে দেওয়া হত, তাহলে আপনারা কল্পনা করতে পারেন কী হত? ২৫-৩০ বছর আগে আমার কৃষক ভাইদের কাছে যদি জল থাকত, তাহলে তাঁরা তখন থেকেই সোনা ফলাতেন কি না? তাহলে তাঁদের ব্যক্তিগত সমৃদ্ধির পাশাপাশি, তাঁরা দেশের রাজকোষকেও কি ভরে দিতেন না? তাঁরা কি তাঁদের সন্তানদের শিক্ষাদীক্ষার দিকে আরও ভালোভাবে নজর দিতে পারতেন না?
ভাই ও বোনেরা,
অনেক দশক ধরে এই ঢিমেতালে চলার ফলে আপনাদের এলাকার কৃষক ভাই-বোনেদেরও অনেক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
এমনিতে বন্ধুগণ,
যখন আমি আজ দিল্লি থেকে রওনা দিয়েছি, সকাল থেকেই আমি অপেক্ষা করছিলাম যে কখন কেউ এসে বলবেন, দাবি করবেন যে মোদীজি এই প্রকল্পের ফিতে তো আমি কেটেছিলাম! এই প্রকল্প তো আমি শুরু করেছিলাম! অনেকেরই স্বভাব আছে এরকম বলার। এমনও তো হতে পারে, শৈশবে তিনিই এই প্রকল্পের ফিতে কেটেছিলেন!
বন্ধুগণ,
অনেক মানুষ জীবনে ফিতে কাটাকে অগ্রাধিকার দেন। কিন্তু আমাদের কাছে অগ্রাধিকার হল কোনও প্রকল্পকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পূর্ণ করা। ২০১৪ সালে যখন আমি সরকারের দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন এটা দেখে অবাক হয়েছিলাম যে দেশের ৯৯টি বড় বড় সেচ প্রকল্প দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে কয়েক দশক ধরে অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। আমরা দেখেছি যে ‘সরযু নহর পরিযোজনা’র ক্ষেত্রেও অনেক জায়গায় নহরকে যুক্ত করাই হয়নি। জল শেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছনোর কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। ‘সরযু নহর পরিযোজনা’র যতটা কাজ বিগত পাঁচ দশকে হয়েছে, তার থেকে বেশি কাজ আমরা গত পাঁচ বছরে করে দেখিয়েছি। বন্ধুগণ, এটাই তো ডবল ইঞ্জিন সরকারের যাদু, এটাই তো ডবল ইঞ্জিন সরকারের কাজের গতি, আর আপনারা মনে রাখবেন, যোগীজি আসার পর ‘বাণসাগর পরিযোজনা’ উদ্বোধন করেছি। কিছুদিন আগেই ‘অর্জুন সহায়ক নহর পরিযোজনা’র উদ্বোধন করেছি। এই সপ্তাহেই গোরক্ষপুরে যে সার কারখানা এবং এইমস হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে, সেই দুটিও অনেক বছর ধরে উদ্বোধনের অপেক্ষায় ছিল। কুশীনগর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফাইলও অনেক বছর ধরে চালাচালি হচ্ছিল। কিন্তু এই বিমানবন্দরটি চালু করার কাজও ডবল ইঞ্জিন সরকারই করেছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের সরকার কিভাবে অনেক বছরের পুরনো স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত করছে তার আর একটি বড় উদাহরণ ‘কেন-বেতোয়া লিঙ্ক পরিযোজনা’। অনেক বছর ধরে এই প্রকল্পের দাবি শোনা যাচ্ছিল। সম্প্রতি দু-তিনদিন আগেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই প্রকল্পকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই প্রকল্প বাবদ ৪৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে। এটি উত্তরপ্রদেশের জন্য একটি অনেক বড় উপহার। ৪৫ হাজার কোটি টাকা এই বাবদ খরচ করা হবে। এই প্রকল্প বুন্দেলখণ্ডকে জল সঙ্কট থেকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করবে।
ভাই ও বোনেরা,
আজ দেশে স্বাধীনতার পর প্রথম এমন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, যে সরকার ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য, ক্ষুদ্র কৃষকদের হয়ে কাজ করছে। প্রথমবার ২ হেক্টরেরও কম জমিসম্পন্ন ক্ষুদ্র কৃষকদের সরকারি লাভের জন্য সরকারি সুবিধার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে, বীজ থেকে বাজার পর্যন্ত আর খেত থেকে গুদামজাতকরণ পর্যন্ত প্রত্যেকভাবেই তাঁদেরকে সাহায্য করা হচ্ছে। এই ছোট কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ‘পিএম কিষাণ সম্মান নিধি’র হাজার হাজার কোটি টাকা প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের আয় বাড়ানোর জন্য, তাঁদেরকে কৃষির সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য বিকল্প গ্রহণ করতে প্রেরণা যোগানো হচ্ছে। এরকম বিকল্প যেখানে অনেক বড় জমির ততটা প্রয়োজন পড়ে না। তাঁদেরকে এই পথ দেখানো হচ্ছে। এই ভাবনা নিয়ে পশুপালন থেকে শুরু করে মৌ-পালন এবং মৎস্যচাষের জন্য জাতীয় স্তরে নতুন নতুন প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। আজ ভারত দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আপনারা জানলে আরও খুশি হবেন যে আজ আমরা মধু উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে নিজেদের স্থান পাকা করছি। আমাদের সরকারের প্রচেষ্টার ফলেই বিগত সাত বছরে মধুর উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশ থেকে মধুর রপ্তানি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে পড়েছে, আর এর ফলে কৃষকদের ৭০০ কোটি টাকারও বেশি রোজগার হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা,
কৃষকের আয় বৃদ্ধির জন্য আরও একটি বিকল্প হল বায়ো-ফুয়েল বা জৈব জ্বালানি। আমরা এতদিন মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল কিনে এনে কাজ চালাতাম, আর এখন আমরা আখের খেত থেকে তেল উৎপাদনের পথে এগিয়ে চলেছি। উত্তরপ্রদেশে এখন এরকম জৈব জ্বালানি উৎপাদনের অনেক কারখানা গড়ে উঠছে। বদাউন এবং গোরক্ষপুরে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের বড় বড় কমপ্লেক্স তৈরি করা হচ্ছে। এখানে আপনাদের কাছেই গোন্ডাতেও ইথানলের একটা বড় উৎপাদন কারখানা গড়ে উঠছে। এই এলাকার কৃষকরা এর মাধ্যমে অনেক লাভবান হবেন। আখ থেকে ইথানল উৎপাদনের অভিযানেও উত্তরপ্রদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালনের দিকে এগিয়ে চলেছে। বিগত সাড়ে চার বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ইথানল উত্তরপ্রদেশ থেকে কেনা হয়েছে। যোগীজির সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখন থেকে আখ ক্রয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ সালের আগে একটা সময় ছিল যখন আখ চাষীরা বছরের পর বছর ধরে বকেয়া টাকা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেন। বিগত সরকারগুলির সময় ২০টিরও বেশি চিনি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, যোগীজির সরকার ক্ষমতায় আসার পর ততগুলি চিনি কারখানাই চালু করা হয়েছে এবং আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। আমি আজ বলরামপুর থেকে সারা দেশের কৃষকদের একটি বিশেষ নিমন্ত্রণ জানাতে চাই। আমি চাই, শুধুই উত্তরপ্রদেশই নয়, সারা দেশের কৃষকরা আমার এই নিমন্ত্রণ স্বীকার করুন এবং আমার সঙ্গে যুক্ত হোন। কোন বিষয়ে আমি এই নিমন্ত্রণ জানাচ্ছি? এ মাসে আর পাঁচদিন পরেই ১৬ তারিখে, ১৬ ডিসেম্বরে, কেন্দ্রীয় সরকার প্রাকৃতিক কৃষি নিয়ে একটি অনেক বড় কর্মশালার আয়োজন করতে চলেছে। আমাদের পদ্ম পুরস্কার বিজেতা, মহারাষ্ট্রের শ্রী সুভাষজি, ‘জিরো বাজেট’ চাষের একটি ভাবনা বিকশিত করেছেন। এই ‘জিরো বাজেট’ সম্পন্ন চাষ একটি এমন প্রাকৃতিক চাষের বিষয় যা আমাদের ধরিত্রী মা-কেও বাঁচায়, আমাদের নিত্য ব্যবহার্য জল এবং ভূগর্ভস্থ জল বাঁচায় আর ফসলও আগের থেকে অনেক বেশি এবং ভালো হয়। আপনাদের মতো সমস্ত কৃষক বন্ধুদের প্রতি আমার অনুরোধ, সারা দেশের কৃষক বন্ধুদের প্রতি আমার অনুরোধ যে আপনারা ১৬ ডিসেম্বর টিভির মাধ্যমে কিংবা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের মাধ্যমে অবশ্যই এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হোন। আপনারা এখানে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় বিস্তারীত বুঝতে পারবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনারা এই পদ্ধতি নিজেদের খেতেও প্রয়োগ করবেন। এই কৃষি ব্যবস্থা আপনাদেরকে নিশ্চিত ভাবেই অনেক লাভের মুখ দেখাবে।
বন্ধুগণ,
আপনাদের প্রতিটি প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে, আপনাদের জীবন সহজ করে তোলার জন্য আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করছি। এই পরিশ্রমের ছাপ আপনারা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে গরীবদের জন্য নির্মিত বা নির্মীয়মান পাকা বাড়িগুলির মধ্যে দেখতে পাবেন। পিএম আবাস যোজনার মাধ্যমে যে বাড়িগুলি গৃহহীনদের তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলিতে ‘ইজ্জত ঘর’ অর্থাৎ, শৌচালয় আছে, ‘উজ্জ্বলা যোজনা’র রান্নার গ্যাস সংযোগ আছে, ‘সৌভাগ্য যোজনা’র বিদ্যুৎ সংযোগ আছে, ‘উজালা যোজনা’র এলইডি বাল্ব আছে, ‘হর ঘর জল যোজনা’ অনুসারে নলের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জলের সংযোগ আছে আর আমার তখনই আনন্দ হয়, কারণ আমি এই এলাকা সফর করেছি, আমি জানি। যখন এখানে আমার থারু জনজাতির ভাই-বোনেরাও এই প্রকল্প থেকে লাভবান হয়েছেন, তখন আমার এত আনন্দ হয়, আর তাই আমি নিশ্চিত যে আমরা তাঁদের থেকে আশীর্বাদও বেশি পাই।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশে অনেক শতাব্দী ধরে আরও একটি পদ্ধতি চলে আসছে যে বাড়িতে বাড়িতে একটা পরম্পরা ছিল, আমার মা ও বোনেরা আমার কথা অবশ্যই বুঝবেন। আমার পুরুষ ভাইয়েরাও তাঁদের বাড়িতে গিয়ে অবশ্যই বলবেন। আমাদের দেশে দীর্ঘ সময় ধরে একটি ব্যবস্থা চলে আসছিল যে দোকান, গাড়ি, বাড়ি, খেত – সবকিছুই বাড়ির পুরুষ সদস্যদের নামে থাকত। মহিলাদের নামে কিছু ছিল না। আপনারাই বলুন না, মহিলাদের নামে কিছু থাকত? থাকত না তাইতো? আমি আপনাদের কষ্টের কথা জানি। মা ও বোনেরা চিরকালই বঞ্চিত থাকতেন। সেজন্য আমরা কী করেছি? আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আমরা ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র মাধ্যমে যে বাড়িগুলি তৈরি হচ্ছে, সেই বাড়িগুলির অধিকাংশের মালিকানার অধিকার আমাদের প্রিয় মা ও বোনেদের, আর মেয়েদের দিয়েছি। এর ফলে দেশে এ ধরনের বোনেদের সংখ্যা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে - যাঁদের নামে ন্যূনতম একটিও সম্পত্তি নেই। এই রাজ্যে ডবল ইঞ্জিনের সরকারের প্রচেষ্টায় উত্তরপ্রদেশের ৩০ লক্ষেরও বেশি গৃহহীন গরীব পরিবার ইতিমধ্যেই পাকা বাড়ি পেয়েছেন। আগামীদিনে আরও বেশি করে নতুন ঘর ও বাড়ি নির্মাণের জন্য সম্প্রতি আমাদের সরকার ২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ রাজ্য সরকারগুলির হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। অর্থাৎ, যাঁরা এখনও পর্যন্ত পাকা বাড়ি পাননি, তাঁরা আগামী সময়ে অবশ্যই পাবেন।
বন্ধুগণ,
যখন সরকার সংবেদনশীল হয়, গরীবদের কথা শোনে, তাঁদের দুঃখ-যন্ত্রণার কথা বুঝতে পারে, তখন সমাজে পার্থক্য আসেই। পার্থক্য আসে কি আসে না? অবশ্যই আসে। পার্থক্য আসে। এখন দেশ ১০০ বছরের ভয়ঙ্করতম বিশ্বব্যাপী মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। করোনা আসার পর প্রত্যেকেই ভাবছিলেন যে কী হবে, কিভাবে হবে! করোনার ফলে প্রত্যেকেই কম বা বেশি কষ্ট সহ্য করেছেন। কিন্তু বন্ধুগণ, এই করোনাকালে আমরা সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে চেষ্টা করেছি যাতে কোনও দরিদ্র মানুষকে খালি পেটে না ঘুমোতে হয়। এখন এজন্য ‘প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা’র মাধ্যমে পাওয়া বিনামূল্যে রেশন অভিযান গ্রামে-গ্রামে, শহরে-শহরে আগামী বছর হোলি পর্যন্ত চালানো হবে।
ভাই ও বোনেরা,
পূর্ববর্তী সরকারগুলির সময়ে আপনারা সকলেই জানেন, খুব ভালোভাবেই জানেন, পূর্ববর্তী সরকারগুলি মাফিয়াদের আশ্রয় দিত আর প্রয়োজনের সময় তাদেরকে বাজারে ছাড়ত। আজ যোগীজির সরকার ওই মাফিয়াদের সাফাই অভিযানে নেমেছে। সেজন্যই উত্তরপ্রদেশের মানুষ বলেন – “ফরক সাফ হ্যায়” বা স্পষ্টভাবে পার্থক্য বোঝা যাচ্ছে। আগে যত সরকার ছিল তারা শুধু বাহুবলী মস্তানদের সংখ্যা বাড়াত। আজ যোগীজির নেতৃত্বে সরকার গরীব, দলিত, পীড়িত, পিছিয়ে পড়া মানুষ এবং বিভিন্ন জনজাতির দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। সেজন্যই উত্তরপ্রদেশের মানুষ বলেন, “ফরক সাফ হ্যায়”। আগে যাঁরা সরকারে ছিলেন, তাঁরা এখানে জমি অবৈধভাবে দখল করাতেন। আজ এই ধরনের মাফিয়াদের জরিমানা দিতে হচ্ছে, বুলডোজার চালানো হচ্ছে। সেজন্যই উত্তরপ্রদেশের মানুষ বলেন, “ফরক সাফ হ্যায়।” আগে উত্তরপ্রদেশের মেয়েরা ঘর থেকে বেরোনোর আগে বাধ্য হয়ে ১০০ বার ভাবতেন আর এখন অপরাধীরা অন্যায় কাজ করার আগে ১০০ বার ভাবে। সেজন্যই তো উত্তরপ্রদেশের জনগণ বলছেন, “ফরক সাফ হ্যায়।” আগে মেয়েরা বাড়িতে মুখ বুজে বসে থাকতে বাধ্য হতেন। এখন উত্তরপ্রদেশের অপরাধীরা জেলের মধ্যে মুখ বুজে বসে থাকেন, বসে বসে ভাবেন। সেজন্যই তো উত্তরপ্রদেশের জনগণ বলছেন, “ফরক সাফ হ্যায়।”
বন্ধুগণ,
আজ আমি আরও একটি প্রকল্প সম্পর্কে অবশ্যই বলতে চাইব, যা আমার উত্তরপ্রদেশের জনগণকে অনেক সাহায্য করতে চলেছে আর এই প্রকল্পটি হল – ‘স্বামীত্ব যোজনা’। এই ‘স্বামীত্ব যোজনা’র মাধ্যমে আজ গ্রামে-গ্রামে দ্রোন দিয়ে সম্পত্তির যথাযথ মানচিত্রায়ন করে বাড়ি ও খেতের মালিকানার অধিকারসম্পন্ন কাগজ জনগণের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই অভিযান আর কিছুদিনের মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের প্রত্যেক গ্রামে পৌঁছতে চলেছে। এর মাধ্যমে আপনারা অবৈধ জবরদখলকারীদের হাত থেকে মুক্তি পাবেন আর ব্যাঙ্ক থেকে আপনাদের ঋণ নেওয়াও অনেক সহজ হয়ে উঠবে। এখন গ্রামের যুব সম্প্রদায়কে ব্যাঙ্ক থেকে নিজেদের কাজের জন্য ঋণ নিতে আর কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।
বন্ধুগণ,
আমরা সবাই মিলে উত্তরপ্রদেশকে অবশ্যই নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেব। এর ফলে উত্তরপ্রদেশের একটা নতুন পরিচয় তৈরি হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশকে অনেক দশক ধরে পেছন দিকে ঠেলতে থাকা মানুষদের থেকে আপনাদের সর্বদাই সতর্ক থাকতে হবে। ভাই ও বোনেরা, আরও একবার আপনাদের সবাইকে ‘সরযু নহর পরিযোজনা’উদ্বোধন উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আসুন, আমার সঙ্গে দু’হাত তুলে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে বলুন – ভারত মাতার জয়! ভারত মাতার জয়! ভারত মাতার জয়!
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
CG/SB/DM/
(Release ID: 1784774)
Visitor Counter : 216
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Assamese
,
Manipuri
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam