প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav g20-india-2023

ব্যাঙ্ক ডিপোজিট ইন্সুরেন্স প্রোগ্রামে আমানতকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 12 DEC 2021 4:43PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২১
 
মঞ্চে উপস্থিত মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয়া, মাননীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর, নাবার্ডের চেয়ারম‍্যান, ডিপোজিট ইন্সুরেন্স এবং ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন আর দেশের বিশাল ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের আধিকারিকগণ, ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের অনেক স্থানে উপস্থিত আমার মন্ত্রিসভার মাননীয় সদস্যবৃন্দ, সেখানকার মাননীয় সাংসদ, মাননীয় বিধায়ক এবং সেখানে বসবাসকারী সমস্ত ডিপোজিটর্স, আমাদের সমস্ত আমানতকারী ভাই ও বোনেরা, 
 
আজ দেশের ব্যাঙ্কিং সেক্টরের জন্য, আর দেশের কোটি কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। অনেক দশক ধরে চলে আসা একটি বড় সমস্যার সমাধান কিভাবে বের করা হয়েছে, আজকের দিনটি তার সাক্ষী হয়ে উঠছে। আজকের আয়োজনের যে নাম দেওয়া হয়েছে, তাতে ‘ডিপোজিটর্স ফার্স্ট’, বা আমানতকারীদের আগ্রাধিকার সর্বাগ্রে। এই ভাবনাকে সবার আগে রাখা এই প্রক্রিয়াকে আরো যথাযথ এবং নিখুঁত করে তুলছে। বিগত কিছু দিন ধরে এক লক্ষেরও বেশি ডিপোজিটরের বহু বছর ধরে আটকে থাকা অর্থ, তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে গেছে। আর এই টাকা প্রায় ১৩০০ কোটিরও বেশি। আজ এখানে এই কর্মসূচিতে আর তারপরও ৩ লক্ষ এরকম আরো আমানতকারীর ব্যাঙ্কে আটকে থাকা অর্থ তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হতে চলেছে। ঐ টাকা তারা পেতে চলেছেন। এটা কম কথা নয়। আর আমি বিশেষ করে আমাদের দেশের সমস্ত সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুদের বলতে চাই, আজ আমি তাদের এটা অনুরোধ করতে চাই, আমার অভিজ্ঞতা অনুসারে যখন আমরা সারা দেশে পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে “স্বচ্ছ ভারত অভিযান” চালু করেছিলাম, তখন সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুদের ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। তখন আমি যে রকম অনুরোধ করেছিলাম, সেই অনুযায়ী আপনারা অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আজ আর একবার তাদের প্রতি আমি অনুরোধ রাখছি। আমরা জানি যে কোনো ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে যেতে থাকে তখন অনেক দিন ধরেই খবর ছড়াতে থাকে। টিভিতে, সংবাদপত্রে খবর ছড়ায় এটাই অত্যন্ত স্বাভাবিক। আর এরকম হয়ও। বড় বড় সংবাদ শিরোনাম হয়। এই সংবাদ শিরোনাম তৈরি হওয়ায় অত্যন্ত স্বাভাবিক। দেখুন আজ যখন দেশ একটি অনেক বড় সংস্কার এনেছে। একটি অনেক বড় শক্তিশালী ব্যবস্থা চালু করেছে। ডিপোজিটর্স বা আমানতকারীদের টাকা ফেরৎ দেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমি চাইবো যে, এই বিষয়টা নিয়েও আলাপ আলোচনা বা লেখালেখি সংবাদ মাধ্যমে হোক, বার বার হোক। এজন্যে নয়, যে মোদী এটা করেছে। আমার নাম বলার দরকার নেই। এই আলোচনা এজন্যে জরুরী যে দেশের আমানতকারীদের মনে তাহলে বিশ্বাস তৈরি হবে। এমনও হতে পারে যে কিছু মানুষের ভুলের কারণে, ভুল অভ্যাসের কারণে ব্যাঙ্কগুলি ডুবেছে বা ডুববে, এমনটা তো হতেই পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে তবু আমানতকারীদের জমা করা টাকা ডুববে না। আমানতকারীদের টাকা সুরক্ষিত থাকবে। এই বার্তার মাধ্যমে দেশের  আমানতকারীদের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি হবে। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার ওপর ভরসা বাড়বে, আর এটা অত্যন্ত জরুরী।
 
ভাই ও বোনেরা, 
 
কোনো দেশ যথা সময়ে সমস্যাগুলির সমাধান করেই সেই দেশকে ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচানো যেতে পারে। কিন্তু আপনারা খুব ভালোভাবে জানেন, অনেক বছর ধরে আমাদের এখানে একটি প্রবৃত্তি ছিল। যে ভাই সমস্যাকে এড়িয়ে যাও, শতরঞ্জির নিচে লুকিয়ে দাও। আজকের নতুন ভারত অনেক সমস্যার সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছে। আজকের ভারত সমস্যাগুলিকে আর এড়িয়ে যাচ্ছে না। আপনারা মনে করে দেখুন যে একটা সময় ছিল, যদি কোনো ব্যাঙ্কে সঙ্কট আসতো, আমানতকারীদের টাকা, আমানতকারীদের নিজস্ব টাকা তখন যেন আর তাদের টাকা নয়। তাদের নিজস্ব টাকা পেতে নাভিশ্বাস উঠতো।  কত সমস্যায় ভুগতে হতো। আর চারদিকে যেন হাহাকার শুরু হয়ে যেতো, এই হাহাকার শুরু হয়ে যাওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। যে কোনো ব্যক্তি অত্যন্ত বিশ্বাস নিয়ে ব্যাঙ্কে টাকা জমান। বিশেষ করে আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবার, যারা ফিক্সড স্যালারি বা  নির্দিষ্ট বেতন পান, আর যাদের ফিক্সড ইনকাম বা নির্দিষ্ট আয় রয়েছে। তাদের জীবনে ব্যাঙ্কই তাদের শেষ আশ্রয়। কিন্তু কিছু মানুষের ভুল নীতির কারণে যখন ব্যাঙ্কগুলি ডুবতো, তখন শুধু এই পরিবারগুলির পয়সাই ডুবতো না, একদিকে তাদের সম্পূর্ণ জীবনই তছনছ হয়ে যেত। গোটা জীবন, এক রকম অন্ধকার হয়ে যেত। এখন তারা কি করবে ? ছেলে মেয়েদের কলেজের ফি দিতে হবে, তা কোথা থেকে দেবেন ? ছেলে – মেয়েদের বিয়ে দিতে হবে ? – কোথা থেকে টাকা আসবে ? কোনো বয়স্ক মানুষের চিকিৎসা করাতে হবে – কোথা থেকে টাকা আনবেন ? একটু আগেই এক বোন বলছিলেন তার পরিবারের একজনের হার্টের অপারেশন করানোর প্রয়োজন হয়েছিল, কি ধরনের সমস্যা এসেছিল, আর এখন কিভাবে সহজেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। এসব প্রশ্নের আগে কেউ কোনো জবাব দিতেন না। জনগণকে ব্যাঙ্ক থেকে নিজেদেরই টাকা পেতে বা তুলতে অনেক বছর লেগে যেতো। আমাদের গরীব ভাই – বোনেরা, নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষেরা, আমাদের মধ্যবিত্তরা কয়েক দশক ধরে এই পরিস্থিতিতে ভুগেছেন, এখনও ভুগছেন। বিশেষ করে কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে সমস্যা আরো বেশি বেড়ে যেতো। আজ যে মানুষেরা ভিন্ন ভিন্ন শহর থেকে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তারা এই ব্যথা, এই কষ্টকে অত্যন্ত ভালোভাবে বোঝেন। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্যেই আমাদের সরকার অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সংস্কার এনেছে, আইনে পরিবর্তন এনেছে। আজকের এই অনুষ্ঠান, এই সিদ্ধান্তগুলিরই একটি পরিণাম। আর আমার খুব ভালোভাবে মনেই আছে, আমি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন ব্যাঙ্কগুলিতে এরকম ডুবে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হতো। তখন আমাদেরকে দায়ী করা হতো। হয় কেন্দ্রীয় সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হতো, অথবা সেই ব্যাঙ্কগুলিকে ধরা উচিত ছিল। কিন্তু সংবাদ মাধ্যম ধরতো মুখ্যমন্ত্রীকে। আমাদের অর্থের সদ্ব্যবহার করুন। সেই সময় আমাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হতো। আর তাদের কষ্ট ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক। আর সেই সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে বার বার অনুরোধ জানাতো যে এক লক্ষ টাকার জায়গায় আমাদের ৫ লক্ষ টাকা বাড়ানো উচিত। আমাদের টাকার সমস্যা নিয়ে কিছু করুন। সেই সময় আমাকে অনেক অনুরোধে জর্জরিত করা হয়েছিল। আর তাদের কষ্ট থাকাটাও স্বাভাবিক। আর সেই সময় আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে বার বার অনুরোধ করতাম যে, ১ লক্ষ টাকা খরচ করে আমাদের ৫ লক্ষ টাকা দেখাতে হবে। আর সে সময় আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে বার বার অনুরোধ জানাতাম, যে ১ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা বাড়ানো উচিত। যাতে আমরা অধিকাংশ পরিবারকে সন্তুষ্ট করতে পারি। কিন্তু যদি আমার কথা মানা না হয়, এমনটি যদি তারা না করেন, তাহলে জনগণই বেশি সমস্যায় পড়ছেন। আর যারা আমার কাছে সমস্যা তুলে ধরেছেন, আমাকে পাঠিয়েছেন, তাদের কাজ তো করে দিয়েছি। 
 
বন্ধুগণ,
 
আমাদের দেশের ব্যাঙ্ক আমানতকারীদের জন্য বীমার ব্যবস্থা ৬০ এর দশকে তৈরি করা হয়েছিল। অর্থাৎ তারও প্রায় ৬০ বছর হয়ে গেছে। আগে ব্যাঙ্কে জমা টাকা মধ্য থেকেই মাত্র ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রদত্ত টাকার গ্যারান্টি ছিল।  তার পর এই চাহিদা আরো বাড়ায় একে ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যদি ব্যাঙ্ক ডোবে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা মাত্র ১ লক্ষ টাকাই পেতেন। কিন্তু তারও কোনো গ্যারান্টি থাকতো না। এই গ্যারান্টি কবে পাওয়া যাবে। ৮/৮ এবং ১০ / ১০ বছর ধরে এই প্রক্রিয়া ঝুলে থাকতো। কোনো সময়সীমা ছিল না। গরীবদের চিন্তাকে বুঝে উঠে মধ্যবিত্তদের চিন্তাকে মাথায় রেখে আমরা এই অর্থকে ১ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করে দিয়েছি। অর্থাৎ আজকের তারিখে কোনো ব্যাঙ্ক যদি সঙ্কটে পড়ে, তাহলে আমানতকারীদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অবশ্যই ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আর এই ব্যবস্থা থেকে প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ রূপে কভার করা হয়েছে। মাত্র ২ শতাংশই সামান্য থেকে যাবে। ৯৮ শতাংশ জনগণের যতটা অর্থ রয়েছে, সেই অর্থের যে মূল্য তা দিয়ে সব কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু আজ অধিকাংশ আমানতকারীর জন্য এই পরিসংখ্যান অনেক বড়। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব, অমৃত মহোৎসব চলছে। এই যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এর ফলে ৭৬ লক্ষ কোটি টাকা সম্পূর্ণ রূপে বীমা করা হয়েছে। এতো ব্যাপক সুরক্ষাকবচ নিশ্চিতভাবে উন্নত দেশগুলির কাছেও নেই। 
 
বন্ধুগণ,
 
আইন সংশোধন করে, সংস্কার এনে আর একটি সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছি। আগে যেখানে টাকা ফিরিয়ে দেবার কোনো সময়সীমা ছিল না। এখন আমাদের সরকার এটি ৯০ দিন অর্থাৎ ৩ মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আইনসম্মত ভাবে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আমরাই সমস্ত বন্ধন এর উপর চাপিয়েছি। কারণ এদেশের সাধারণ মানুষ, এদেশের মধ্যবিত্ত, এদেশের দরিদ্রদের জন্য আমাদের অনেক ভাবনা রয়েছে। এর মানে হল, যদি ব্যাঙ্ক দুর্বল হয়ে পড়ে, ব্যাঙ্কের যদি দেউলিয়া হওয়ার পরিস্থিতি এসে যায়, তাহলে ৯০ দিনের মধ্যে আমানতকারীরা তাদের টাকা ফেরৎ পেয়ে যাবেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আইনের সংশোধনের ৯০ দিনের মধ্যেই হাজার হাজার আমানতকারীর ক্লেইম সেট্ল করা হয়েছে। 
 
বন্ধুগণ, 
 
অনেক বড় বড় বিদ্যান, বুদ্ধিমান, অর্থনীতিবিদরা তাদের কথা মতো করে আমাদের বোঝান। আমি অত্যন্ত সহজ ভাষায় আপনাদের বলছি। প্রত্যেক দেশই উন্নয়ন চায়। প্রত্যেক দেশ বিকাশ চায়, প্রগতি চায়। কিন্তু একথা আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের সমৃদ্ধিতে ব্যাঙ্কের বড় ভূমিকা রয়েছে। আর ব্যাঙ্কগুলির সমৃদ্ধির জন্য আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত থাকা ততটাই প্রয়োজন। আমাদের ব্যাঙ্কগুলিকে বাঁচাতে আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে হবে। আর আমরা এ কাজ করে ব্যাঙ্কগুলিকেও বাঁচিয়েছি, আমানতকারীদেরও বাঁচিয়েছি। আমাদের ব্যাঙ্কগুলি আমানতকারীদের পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতির জন্য ভরসার প্রতীক। এই ভরসা, এই বিশ্বাসকে আরো শক্তিশালী করার জন্য বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা লাগাতর প্রচেষ্টা করে যাচ্ছি। বিগত বছরগুলিতে অনেক ছোট ছোট সরকারী ব্যাঙ্ককে বড় ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে মার্জ করে, মিলিয়ে  দিয়ে তাদের ক্যাপাসিটি, ক্যাপাবিলিটি এবং ট্রান্সফারেন্সি অর্থাৎ তাদের ক্ষমতা ও আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা, সব রকমভাবে শক্তিশালী করা হয়েছে। যখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলির তদারকি করবে, তখন তা থেকেও এদের প্রতি সাধারণ আমানতকারীদের ভরসা আরো বৃদ্ধি পাবে। আমরা কো-অপারেটিভ ব‍্যাঙ্কগুলির জন্যে একটি নতুন ব্যবস্থা করেছি, একটি নতুন মন্ত্রক গড়ে তুলেছি। এর পেছনেও কো-অপারেটিভ সংস্থাগুলিকে শক্তিশালী করে তোলার ইচ্ছা রয়েছে। কো-অপারেটিভ মিনিস্ট্রি রূপে বিশেষ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার ফলেও কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলি আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে। 
 
বন্ধুগণ, 
 
অনেক দশক ধরে দেশে এই ধারণা গড়ে উঠেছিল যে, ব্যাঙ্ক শুধুই বেশি অর্থবান মানুষদের জন্য, শুধুই ধনীদের জন্য – এরকমই মনে হতো। যাদের কাছে বেশি টাকা আছে, তারাই জমা করতে পারে। যাদের বড় ব্যবসা রয়েছে, তারাই দ্রুত এবং বেশি ঋণ নিতে পারে। এটাও মনে করা হতো যে পেনশন ও বীমার মতো সুবিধা শুধু তাদের জন্যই, যারা অর্থবান, যাদের ধন সম্পত্তি রয়েছে। বিশ্বের সর্ব বৃহৎ গণতন্ত্রের জন্য এটা ঠিক ছিল না। এই ব্যবস্থা এবং ভাবনা কোনোটাই ঠিক ছিল না। আমরা এই ব্যবস্থা ও ভাবনা পরিবর্তনের জন্যে ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছি। আজ কৃষক, ছোট দোকানদার, ক্ষেতমজুর, নির্মাণকর্মী, শ্রমিক বন্ধুদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আজ দেশের কোটি কোটি গরীব মানুষের জন্য ২ লক্ষ টাকা দুর্ঘটনা, আর জীবন বীমা সুরক্ষাকবচের পরিষেবা চালু করা হয়েছে। পিএম জীবনজ্যোতি যোজনা আর পিএম সুরক্ষা যোজনার মাধ্যমে প্রায় ৩৭ কোটি দেশবাসী এই সুরক্ষাকবচের আওতায় এসে গেছেন। অর্থাৎ এক ভাবে এখন দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে, দেশের ব্যাঙ্কিং সেক্টরের প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্রীকরণ হয়েছে। 
 
বন্ধুগণ,
 
আমাদের দেশে সমস্যা শুধুই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ছিল না। দূর দুরান্তের গ্রামগুলিতে ব্যাঙ্ক পরিষেবা পৌঁছে দেবার সবিধা  ছিল না। আজ দেশের প্রায় প্রত্যেক গ্রামে ৫ কিলোমিটার মধ্যে কোনো ব্যাঙ্কের শাখা বা ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্সের পরিষেবা পৌঁছে গেছে। গোটা দেশে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ ব্যাঙ্কিং টাচপয়েন্ট রয়েছে।  ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মাধ্যমে আমরা দেশে ব্যাঙ্কিং এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছি। আজ ভারতের সাধারণ নাগরিক যখন খুশি, যেখানে খুশি ৭ X ২৪ ঘন্টা ছোট খাঁটো আর্থিক লেনদেনও ডিজিটাল মাধ্যমে করতে পারছেন। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এসম্পর্কে ভাবাও যেত না। ভারতের সামর্থ নিয়ে যারা অবিশ্বাস করতেন, তারা আমাদের উদ্যোগ নিয়ে ব্যঙ্গ - বিদ্রুপ করতেন। 
 
বন্ধুগণ,
 
ভারতের ব্যাঙ্কগুলির সামর্থ দেশের নাগরিকদের সামর্থ বাড়ানোর জন্য আমাদের সরকার ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে। আগে কি কেউ কখনো ভেবেছিল যে ঠেলাওয়ালা, ফেরিওয়ালা, রেল স্টেশনগুলিতে রেল লাইনের দু-পাশে পসরা সাজিয়ে বসা মানুষ, কিংবা রাস্তার হকাররাও ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতে পারেন, তারা কখনই ভাবতে পারেননি, আমরাও ভাবতে পারিনি। কিন্তু আজ আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলছি, আজ এরকম মানুষরা “স্বনিধি যোজনা” –র মাধ্যমে ঋণ পাচ্ছেন। আর নিজেদের ব্যবসাও সম্প্রসারণ করতে পারছেন। আজ মুদ্রা যোজনা দেশের সেই ক্ষেত্রগুলিতে, সেই পরিবারগুলিকেও স্বরোজগারের সঙ্গে যুক্ত করছে। যারা কখনও এসম্পর্কে ভাবতেও পারেননি। আপনারা সবাই এটাও জানেন যে, আমাদের দেশে ছোট জমির মালিক কৃষকরা, আমাদের দেশের ৮৫ শতাংশ কৃষকই ক্ষুদ্র কৃষক। অনেক ছোট ছোট জমির মালিক, দেশে এতো ব্যাঙ্ক থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই ক্ষুদ্র কৃষকরা বাজার থেকে কোনো সুদখোর মহাজন থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হতেন। আমরা এমন কোটি কোটি ক্ষুদ্র কৃষককেও কিষাণ ক্রেডিট কার্ড পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করেছি। আর এর আওতায় পশুপালন এবং মৎসজীবীকেও এনেছি। আজ ব্যাঙ্কগুলি থেকে লক্ষ কোটি টাকা সহজ এবং সুলভ ঋণ এই বন্ধুদের জীবনকে সহজ করে তুলছে। 
 
বন্ধুগণ, 
 
বেশি সংখ্যক দেশবাসীকে ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে যুক্ত করা থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক ঋণ সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা করা, ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং, ডিজিটাল পেমেন্টস ব্যবস্থা দ্রুত গতিতে সম্প্রসারণ, এমন অনেক সংস্কার আমরা করেছি, যা ১০০ বছরের বৃহত্তম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েও ভারতের ব্যাঙ্কিং সিস্টেমকে সুচারু রূপে পরিচালনায় সাহায্য করেছে। আমি ব্যাঙ্কগুলিতে কর্মরত প্রত্যেক বন্ধুকে এই কাজের জন্য শুভ কামনা জানাই। সঙ্কটকালে তারা যেভাবে সাধারণ মানুষকে অসহায় হয়ে পড়তে দেননি, যখন বিশ্বের উন্নত দেশগুলি তাদের নাগরিকদের সাহায্য পৌঁছে দেবার ক্ষেত্রে হিমসিম খাচ্ছিল, তখন ভারত দ্রুত গতিতে দেশের প্রায় প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষের কাছে সরাসরি সাহায্য পৌঁছে দিয়েছে। দেশের ব্যাঙ্কিং সেক্টরে যে সামর্থ বিগত বছরগুলিতে আমরা বিকশিত করেছি, সেই আত্মবিশ্বাসের ফলে দেশবাসীর জীবন বাঁচানোর জন্য সরকার বড় সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে। আজ আমাদের অর্থনীতিতে দ্রুত গতিতে সংস্কার তো আসছেই , এর পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য অনেক ইতিবাচক সঙ্কেতও আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি। 
 
ভাই ও বোনেরা,
 
অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং “ইজ অফ অ্যাকসেস টু ক্রেডিট বা সহজে অল্প সুদে ঋণ পাওয়ার সুবিধা” এতে সব থেকে বড় লাভবান হয়েছেন, আমাদের দেশের বোনেরা, আমাদের মাতারা এবং কন্যারা। এদেশের দুর্ভাগ্য ছিল, স্বাধীনতার পর এতো দশক ধরে আমাদের অধিকাংশ মা – বোনেরা এই লাভ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এমন অবস্থা ছিল যে, মা – বোনেরা তাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে রান্না ঘরে রেশনের কৌটোগুলিতে রাখতেন। তাদের জন্য টাকা রাখার জায়গা সেটাই ছিল। সর্ষের মধ্যে টাকা রাখা অনেকে তো এটা উদযাপনও করতেন। যে সাশ্রয়কে সুরক্ষিত রাখার জন্য ব্যাঙ্কগুলির রাষ্ট্রায়ত্ত্বকরণ হয়েছিল, সেগুলির ব্যবহার দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা করতেই পারেনি। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত চিন্তার বিষয় ছিল। জনধন যোজনার পেছনে এই চিন্তার সমাধান করার ইচ্ছাও আজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর সাফল্য আমাদের সামনে রয়েছে। জনধন যোজনার মাধ্যমে যে কোটি কোটি নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে অর্ধেকের থেকে বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আমাদের মা – বোনেদের জন্য রয়েছে। মহিলাদের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি মহিলাদের আর্থিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে যে প্রভাব ফেলেছে, তা আমরা সম্প্রতি হাতে পাওয়া ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে রিপোর্টে দেখেছি। যখন এই সার্ভে করা হয়েছিল, তখন পর্যন্ত দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মহিলাদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল। সব থেকে বড় বিষয় হল যে, যত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট শহুরে মহিলাদের জন্যে খোলা হয়েছিল, প্রায় ততোটাই গ্রামীণ মহিলাদের জন্য খোলা হয়েছে। এটা থেকে প্রমাণিত হয় যে, যখন ভালো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, তখন সমাজে যে অসাম্য থাকে তাকে দূর করার ক্ষেত্রেও অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্ট হওয়ার ফলে মহিলাদের মধ্যে আর্থিক সচেতনতা তো বেড়েছেই। পাশাপাশি পরিবারে আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অংশীদারিত্ব বেড়েছে। এখন পরিবার কিছু সিদ্ধান্ত নিলে সেখানে মা – বোনেদেরও ডেকে বসানো হয়, তাদের মতামত নেওয়া হয়। 
 
বন্ধুগণ, 
 
মুদ্রা যোজনাতেও মহিলারাই প্রায় ৭০ শতাংশ উপকৃত হয়েছেন। আমাদের অভিজ্ঞতা হল, যখন মহিলারা ঋণ নেন, তখন তারা সেই ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও অধিক সচেতন থাকেন। তাদের ট্র্যাক রেকর্ড অত্যন্ত প্রশংসনীয়। যদি কোনো বুধবার তাদের টাকা পরিশোধের শেষ দিন হয়, তাহলে তারা ২ দিন আগেই সোমবারে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে আসেন। তেমনি, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ঋণ পরিশোধের ট্র্যাক রেকর্ড খুবই ভালো। তারা প্রায় কড়ায় গন্ডায় ঋণ পরিশোধ করেন। আমাদের মা ও বোনেরা এক্ষেত্রে এতটাই সচেতন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, তাদের সকলের প্রচেষ্টায়, সকলের অংশীদারিত্বে আর্থিক ক্ষমতায়নের এই অভিযান অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে। আর আমরা সবাই এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। 
 
বন্ধুগণ, 
 
আজ সময়ের চাহিদা হল ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টর দেশের লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে আগে থেকে বেশি সক্রিয়তার সঙ্গে কাজ করুক। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে প্রত্যেক ব্যাঙ্কের শাখা বিগত ৭৫ বছরে তারা যত কাজ করেছেন, সেই সমস্ত রেকর্ডকে পেছনে ফেলে তার দেড়গুণ, ২ গুণ করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাবেন। দেখুন, পরিস্থিতি বদলায় কি বদলায় না ! পুরোনো অভিজ্ঞতার ফলে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে আপনাদের যে দ্বিধা, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের দূর দুরান্ত এলাকায়, গ্রামে গ্রামে, মফস্বল শহরগুলিতে, ছোট শহরগুলিতে বড় সংখ্যায় দেশবাসী নিজেদের স্বপ্নগুলি পূরণ করার জন্য ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান। আজ যদি আপনারা এগিয়ে এসে জনগণকে সাহায্য করেন, তাহলে অধিকাংশ মানুষের আর্থিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আর পাশাপাশি তাদের এই ক্ষমতায়ন আপনাদের শক্তিও নিঃসন্দেহে বাড়িয়ে দেবে। আপনাদের এই প্রচেষ্টা দেশকে আত্মনির্ভর করে তুলতে, আমাদের ক্ষুদ্র শিল্পপতিদের, মধ্যবিত্ত যুবক – যুবতীদের জীবনের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। ব্যাঙ্ক এবং আমানতকারীদের ভরসা নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। আর আজকের এই উপলক্ষটি কোটি কোটি আমানতকারীর মনে একটি নতুন বিশ্বাস সৃষ্টি করার উপলক্ষ। আর এর ফলে ব্যাঙ্কগুলির “রিস্ক টেকিং ক্যাপাসিটি বা ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা” অনেক গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এখন ব্যাঙ্ক গুলির জন্যে এই সুযোগ, আমানতকারীদের জন্য এই সুযোগ। এরকম শুভ সুযোগের জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভ কামনা, আবার অনেক অনেক শুভ কামনা ! ধন্যবাদ ! 
 
CG/SB/SFS


(Release ID: 1780983) Visitor Counter : 260