অর্থমন্ত্রক

কোভিড মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয় অর্থনীতিকে সাহায্য করতে অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ৬,২৮,৯৯৩ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন

• কোভিড প্রভাবিত ক্ষেত্রের জন্য ১.১ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ নিশ্চয়তা প্রকল্প
• আপৎকালীন মূলধন নিশ্চয়তা প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা
• মাইক্রো ফিন্যান্স ইনস্টিটিউশনস (এমএফআইএস) –এর মাধ্যমে ঋণ নিশ্চয়তা প্রকল্পের আওতায় ২৫ লক্ষ মানুষের জন্য ঋণদানের ব্যবস্থা করা হবে
• ১১,০০০ নিবন্ধীকৃত পর্যটন / গাইডদের সংস্থাগুলিকে আর্থিক সহায়তা
• প্রথম ৫ লক্ষ পর্যটককে বিনামূল্যে ১ মাসের পর্যটক ভিসা
• আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনার সময়সীমা ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হল
• ডিএপি ও পিওকে সারের জন্য ১৪,৭৭৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত ভর্তুকি
• ২০২১ এর মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার (পিএমজিকেএওয়াই) সময়সীমা বৃদ্ধি
• শিশুদের যত্ন ও হাসপাতালে শয্যার জন্য গুরুত্ব দিয়ে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ২৩,২২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে
• জাতির উদ্দেশে পুষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা প্রতিরোধী ২১ ধরণের জৈব সংশোধিত শস্য নিবেদন করা হল
• নর্থ ইস্টার্ণ রিজিওনাল এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কর্পোরেশনের (এনইআরএএমএসি) পুনরুজ্জীবনের জন্য ৭৭ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকার প্যাকেজ
• ন্যাশনাল এক্সপের্ট ইন্সুরেন্স অ্যাকাউন্টের (এনইআইএ) মাধ্যমে রপ্তানিতে উৎসাহ দানের জন্য ৩৩,০০০ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ
• রপ্তানি সামগ্রীর বীমার জন্য ৮৮,০০০ কোটি টাকার সংস্থান
• ভারতনেট পিপিপি মডেলের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে ব্রডব্যান্ডের জন্য ১৯,০৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ
• ২০২৫ – ২৬ পর্যন্ত বৃহৎ আকারের বৈদ্যুতিন সামগ্রীর নির্মাণে উৎপাদন ভিত্তিক উৎসাহ প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানো হল
• সংস্কার ভিত্তিক বিদ্যুৎ বন্টন ব্যবস্থাপনার জন্য ৩.০৩ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ
• সরকারী, বেসরকারী অংশীদারিত্বে (পিপিপি) প্রকল্পে এবং বিভিন্ন সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে অতিরিক্ত আয়ের জন্য নতুন ব্যবস্থা

Posted On: 28 JUN 2021 6:53PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২৮শে জুন, ২০২১

 

কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমণ কোভিড – ১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেই অবস্থার উন্নতির জন্য একগুচ্ছ পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। জরুরী পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির জন্য এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এই উদ্যোগগুলি সহায়ক হবে। এই আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার সময় মন্ত্রীর সঙ্গে  কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শ্রী অনুরাগ সিং ঠাকুর, অর্থ সচিব ড. টি ভি সোমানাথন, আর্থিক পরিষেবা দপ্তরের সচিব শ্রী দেবাশিষ পান্ডা, রাজস্ব সচিব শ্রী তরুণ বাজাজ  উপস্থিত ছিলেন। 
৬,২৮,৯৯৩ কোটি টাকার এই প্যাকেজে ১৭ টি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। ডিএপি এবং পিওকে সারের জন্য অতিরিক্ত ভর্তুকি এবং বর্তমান বছরের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ব্যবস্থার কথা আগেই ঘোষিত হয়েছিল। 
আজ যে পদক্ষেপগুলির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলিকে ৩টি স্তরে ভাগ করা যায়। 
১) মহামারীর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আর্থিক সুবিধা  
২) জনস্বাস্থ্য ব্য়বস্থার উন্নতি 
৩) উৎপাদিত সামগ্রীর পরিমাণ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে সুবিধা হবে

 ১) মহামারীর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আর্থিক সুবিধা – 
আজ যে ১৭টি প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে, তার মধ্যে ৮ টিতে কোভিড – ১৯ মহামারীতে যারা প্রভাবিত হয়েছেন, তাদের জন্য আর্থিক ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পর্যটন ক্ষেত্রের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 
ক) কোভিড প্রভাবিত ক্ষেত্রের জন্য় ১.১ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ নিশ্চয়তা প্রকল্প - 
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের অতিরিক্ত ১.১ লক্ষ কোটি টাকার বাড়তি ঋণের ব্য়বস্থা করা হবে। এর মধ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এবং পর্যটন সহ অন্যান্য ক্ষেত্রের জন্য ৬০ হাজার কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে। 

চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অবহেলিত দিকগুলির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং এর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য / চিকিৎসার অন্যান্য পরিকাঠামোকে সাহায্য করতে এই তহবিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৮টি মহানগর ছাড়া অন্যান্য শহরে নতুন প্রকল্প এবং পুরানো প্রকল্পের সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া যাবে। সম্প্রসারিত প্রকল্পগুলির জন্য মোট প্রকল্পের ৫০ শতাংশ অর্থ এবং নতুন প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে মোট প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ অর্থ এই ব্যবস্থা থেকে পাওয়া যাবে। উচ্চাকাঙ্খী জেলাগুলির ক্ষেত্রে নতুন প্রকল্প এবং সম্প্রসারিত প্রকল্প – উভয় ক্ষেত্রেই ৭৫ শতাংশ তহবিলের যোগান এই যোজনার মাধ্যমে পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকার ঋণ পাওয়া যাবে। এই ঋণের নিশ্চয়তার সময়সীমা ৩ বছর। ব্যাঙ্কগুলি এই খাতে সর্বোচ্চ ৭.৯৫ শতাংশ সুদের হারে  ঋণ দিতে পারবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে সুদের হার বার্ষিক ৮.২৫ শতাংশ হবে। অর্থাৎ বর্তমানে ১০ থেকে ১১ শতাংশ হারে যে ঋণ পাওয়া যায়, নতুন এই যোজনায় সুদের হার কম হবে। 

খ) আপৎকালীন মূলধন নিশ্চয়তা প্রকল্প (ইসিএলজিএফ) 
২০২০ সালের মে মাসে সরকার ১.৫ লক্ষ কোটি টাকার আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজের সূচনা করেছিল। এই প্যাকেজের আওতায় আপৎকালীন মূলধন নিশ্চয়তা প্রকল্পকে (ইসিএলজিএফ) সম্প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইসিএলজিএফ –এর সূচনার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রকল্পের বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ দেখা দেয়। ইতিমধ্যেই ২.৭৩ লক্ষ কোটি টাকার ঋণের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে এবং ২.১০ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ বন্টনও হয়েছে। সম্প্রসারিত প্রকল্পটিতে গ্রহণযোগ্য নিশ্চয়তা এবং ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান হারের ২০ শতাংশ বেশি এখন থেকে ঋণ পাওয়া যাবে। বিভিন্ন চাহিদা বিবেচনা করে ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি  নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর ফলে বর্তমান ৩ লক্ষ কোটি টাকা থেকে গ্রহণযোগ্য নিশ্চয়তা ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪.৫ লক্ষ কোটি টাকা করা হল। 

গ) মাইক্রো ফিন্যান্স ইনস্টিটিউশনগুলির জন্য ঋণ নিশ্চয়তা প্রকল্প – 
এটি একটি নতুন প্রকল্প যেখানে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহিতারা উপকৃত হবেন। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে  ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা থেকে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঋণ নিশ্চয়তার জন্য ননব্যাঙ্কিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা মাইক্রো ফিন্যান্স ইনস্টিটিউশনসগুলিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ৩ বছর। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নির্ধারিত সর্বোচ্চ সুদের হারের থেকে কমপক্ষে ২ শতাংশ কমে ঋণ দাতারা সুদ দেবেন। বর্তমান রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নীতি নির্দেশিকা অনুযায়ী সব নিয়ম মেনে চলতে হবে। ৩১শে মার্চ পর্যন্ত নিশ্চয়তার সুবিধে ননব্যাঙ্কিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা মাইক্রো ফিন্যান্স ইনস্টিটিউশনগুলি পাবে। তবে সরকার, এর আগে  ৭৫০০ কোটি টাকার অর্থের গ্যারান্টির ব্যবস্থা করলে সেই সময় পর্যন্ত এই সুবিধা পাওয়া যাবে। সরকার, ন্যাশনাল ক্রেডিট গ্যারান্টি ট্রাস্টি কোম্পানীর (এনসিজিটিসি) মাধ্যমে ৩ বছর পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ অর্থের যোগান দেবে। এনসিজিটিসি এর জন্য কোনো গ্যারান্টি ফি নিতে পারবে না। 

ঘ) পর্যটক গাইড এবং পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রকল্প – 
পর্যটন ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সুবিধা করে দিতে আর একটি প্রকল্প চালু হয়েছে। কোভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষেত্রগুলির জন্য ঋণ নিশ্চয়তা প্রকল্পের আওতায় পর্যটন ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও সংস্থাদের কার্যকরি মূলধন / ব্যক্তিগত ঋণ দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকারগুলির অনুমোদিত পর্যটকদের গাইড যারা রয়েছেন, এরকম ১০,৭০০ জন এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের স্বীকৃত ১০০০টি পর্যটন সংস্থাও এই প্রকল্পের সুবিধে পাবে। সংস্থাগুলি সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা এবং পর্যটক গাইডরা সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা ঋণ পাবেন। এর জন্য কোনো প্রসেসিং ফি সহ অন্যান্য অর্থ ব্যয় করতে হবে না। এনসিজিটিসি –র মাধ্যমে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করবে।  

ঙ) ৫ লক্ষ পর্যটকের জন্য ১ মাস বিনামূল্যে টুরিস্ট ভিসা – 
পর্যটন ক্ষেত্রের বিকাশের জন্য এই প্রকল্পটির পরিকল্পনা করা হয়েছে। আবারও যখন ভিসা দেওয়া শুরু হবে, তখন ভারতে আসার জন্য যে সমস্ত পর্যটকরা আবেদন করবেন, তাদের মধ্যে প্রথম ৫ লক্ষ পর্যটকের ভিসার জন্য কোনো অর্থ নেওয়া হবে না। ৩১শে মার্চ পর্যন্ত অথবা যতদিন পর্যন্ত ৫ লক্ষ ভিসা দেওয়া হচ্ছে, সেই সময় পর্যন্ত এই সুবিধা পাওয়া যাবে। এর জন্য সরকারের ১০০ কোটি টাকা ভিসা বাবদ কম আয় হবে। তবে, একেক জন পর্যটক একবারই এই সুযোগ পাবেন।   

চ) আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনার সম্প্রসারণ –  
২০২০র পয়লা অক্টোবর আত্মনির্ভর ভারত রোজগার অভিযান (এএনবিআরওয়াই) –এর সূচনা হয়েছিল। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং কর্মচারী ভবিষ্য নিধি সংগঠনের আওতায় থাকা যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা কাজ হারিয়েছেন, তাদের পুনর্বহাল করতে এই প্রকল্প শুরু করা হয়েছিল। এই প্রকল্পে সদ্য নিযুক্ত কর্মচারীদের মধ্যে যারা ১৫,০০০ টাকার কম বেতন পান, তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ২ বছর সরকার দেবে। এক্ষেত্রে যে সব সংস্থায় কর্মী সংখ্যা ১০০০ এর কম, সেই সব সংস্থার কর্মচারীদের বেতনের ২৪ শতাংশ অর্থাৎ নিয়োগকারী সংস্থা এবং কর্মচারীর প্রদেয় অর্থ সরকার দেবে। তবে, যে সব সংস্থায় ১০০০ এর বেশি কর্মী রয়েছেন, সেখানে শুধুমাত্র কর্মচারীর অংশটি অর্থাৎ বেতনের ১২ শতাংশ অর্থ সরকার দেবে। এ পর্যন্ত ১৮ই জুন পর্যন্ত ৭৯,৫৭৭ টি সংস্থার ২১ লক্ষ ৪২ হাজার সুবিধাভোগী এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়েছেন। সরকারের এপর্যন্ত এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৯০২ কোটি টাকা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পের সময়সীমা ৩০শে জুন থেকে বাড়িয়ে ২০২২ এর মার্চ পর্যন্ত করা হল।  

ছ) ডিএপি এবং পিওকে সারের জন্য অতিরিক্ত ভর্তুকি – 
ডিএপি এবং পিওকে সারের জন্য সম্প্রতি অতিরিক্ত ভর্তুকির ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ২০২০ – ২১ অর্থ বর্ষে এনবিএস ভর্তুকি বাবদ ২৭,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। ২০২১ – ২২ অর্থ বর্ষে তা বাড়িয়ে ৪২,২৭৫ কোটি টাকা করা হল। কৃষকরা অতিরিক্ত ১৪,৭৭৫ কোটি টাকার ভর্তুকির সুবিধে পাবেন। এর মধ্যে ডিএপির জন্য ৯১২৫ কোটি টাকা এবং এনপিকে ভিত্তিক মিশ্র সারের জন্য ৫৬৫০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ভর্তুকির সংস্থান থাকছে।  

জ) মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনার আওতায় বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে 
গত অর্থ বছরে সরকার প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনায় (পিএমজিকেওয়াই) ১,৩৩,৯৭২ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। কোভিড – ১৯ মহামারীর কারণে দরিদ্র মানুষরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় তাদের সাহায্যের জন্য এই যোজনা শুরু করা হয়। প্রথমে ২০২০র এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত যোজনার সময়সীমা ধার্য হলেও পরে তা বাড়িয়ে নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়। কোভিড – ১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ফলে মে মাস থেকে এই প্রকল্প আবারও চালু হয়েছে। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় থাকা সুবিধাভোগীরা প্রতি মাসে ৫ কেজি খাদ্যশস্য বিনামূল্যে পাবেন।  এর ফলে সরকারের আরো ৯৩,৮৬৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে। অর্থাৎ পিএমজিকেওয়াই –এর জন্য মোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়াল ২,২৭,৮৪১ কোটি টাকা। 

২) জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলা হবে – 
ক) শিশুদের চিকিৎসার উপর গুরুত্ব দিয়ে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামোর জন্য ২৩,২২০ কোটি টাকার সংস্থান
ঋণ নিশ্চয়তা প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সাহায্য করার পাশাপাশি ২৩,২২০ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে। এই প্রকল্পে শিশুদের চিকিৎসার পরিকাঠামো সহ আপৎকালীন পরিস্থিতির প্রস্তুতির জন্য় প্রয়োজনীয় অর্থ ব্য়য় করা হবে। বর্তমান অর্থ বছরে চিকিৎসা ক্ষেত্রে মানব সম্পদের উন্নয়নে স্বল্প মেয়াদী বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি, নার্সিং পাঠক্রমে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি, সর্বস্তরের হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা, অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার সুবিধাযুক্ত শয্যার সংখ্যা বাড়ানো হবে। এছাড়াও চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ, টেলিমেডিসিন পরিষেবা, চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এই অর্থ ব্যয় করা হবে। এর ফলে নমুনা পরীক্ষার ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে, জিন বিন্যাস সংক্রান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার পরিকাঠামো বাড়বে এবং মহামারী পরিস্থিতির দিকে নজরদারীর কাজে গতি আসবে।   

৩) উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের প্রতি সরকারের বিশেষ গুরুত্ব আরোপ। এর জন্য ৮টি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে 
ক)প্রতিকূল জলবায়ুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য শস্যবীজ 
আগে অধিক ফলনসীল শস্য বীজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হতো। সেই সময় বিরূপ আবহাওয়া ফসল নষ্ট হওয়া বা পুষ্টির যথাযথ উপাদান না থাকার বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া হত না। বর্তমানে শস্যে পুষ্টিকর উপাদানের উপস্থিতির উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আইসিএআরের সাহায্যে প্রোটিন, লোহা, দস্তা, ভিটামিন এ সমৃদ্ধ শস্য বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। এই বীজগুলি থেকে  বিভিন্ন অসুখ, পোকামাকড়ের আক্রমণ ছাড়াও খরা, লবণাক্ত জল, বন্যার মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে ।  ধান, মটর, জোয়ার, বাজরা, রাগি, সোয়াবিনের মতো ২১ ধরণের বহু গুন সম্পন্ন বীজ জাতিকে উৎসর্গ করা হয়েছে। 

খ) নর্থ ইস্টার্ণ রিজিওনাল এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কর্পোরেশনের (এনইআরএএমএসি) পুনরুজ্জীবন 
 নর্থ ইস্টার্ণ রিজিওনাল এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কর্পোরেশনের (এনইআরএএমএসি) ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। উত্তর – পূর্বাঞ্চলের কৃষকরা যাতে কৃষিকাজ ও উদ্যান পালন থেকে যথেষ্ট আয় করতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য এই কর্পোরেশনের থেকে পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।  এনইআরএএমএসি –র সঙ্গে ৭৫টি কৃষিপণ্য উৎপাদক সংগঠন যুক্ত রয়েছে। উত্তর – পূর্বাঞ্চলের কৃষিকাজ, খাদ্যশস্য সংগ্রহ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং বাজারজাতকরণের জন্য এই সংস্থা সাহায্য করে। উত্তর – পূর্বাঞ্চলের ১৩ ধরণের শস্যের ভৌগলিক নির্দেশকের জন্য নিবন্ধীকরণের ব্যবস্থা করতে এই সংস্থা সাহায্য করেছে। কৃষকদের, মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে বাঁচাতে  এই সংস্থা সাহায্য করে। এর জন্য কৃষকদের আয় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ  বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর – পূর্বাঞ্চলের কৃষি শিল্পে শিল্পোদ্যোগীদের সাহায্য করতে নর্থ ইস্টার্ণ সেন্টার ফর অরগ্যানিক কাল্টিভেশন গড়ে তোলা হবে। এর জন্য এনইআরএএমএসি ৭৭ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকার একটি পুনরুজ্জীবন প্যাকেজের ব্যবস্থা করবে। 

গ) ন্যাশনাল এক্সপের্ট ইন্সুরেন্স অ্যাকাউন্টের (এনইআইএ) মাধ্যমে রপ্তানিতে উৎসাহ দানের জন্য ৩৩,০০০ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ
দীর্ঘ ও মাঝারী মেয়াদী রপ্তানি প্রকল্পে ন্যাশনাল এক্সপের্ট ইন্সুরেন্স অ্যাকাউন্ট (এনইআইএ) সাহায্য করে। এক্সিম ব্যাঙ্ক ক্রেতাদের ঋণের ব্যবস্থা করে, যাতে রপ্তানিকারকরা উপকৃত হন। এনইআইএ ট্রাস্ট ৬৩টি বিভিন্ন ভারতীয় রপ্তানিকারকদের প্রকল্পে ৫২ টি দেশে ৫২,৮৬০ কোটি টাকা সাহায্য করেছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আগামী ৫ বছরে এনইআইএ এধরণের উদ্যোগ বজায় রাখবে এবং রপ্তানি প্রকল্পগুলির জন্য় অতিরিক্ত ৩৩,০০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। 

ঘ) রপ্তানি সামগ্রীর বীমার জন্য ৮৮,০০০ কোটি টাকার সংস্থান- 
এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন (ইসিজিসি) ঋণ নিশ্চয়তা প্রকল্পে ভারতীয় পণ্য সামগ্রীর রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রায় ৩০ শতাংশ সাহায্য করে। রপ্তানিতে উৎসাহ দিতে ইসিজিসি ৫ বছরে  ৮৮,০০০ কোটি টাকা অর্থের যোগান দেবে। 

ঙ) ডিজিটাল ইন্ডিয়া : ভারতনেট পিপিপি মডেলের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে ব্রডব্যান্ডের জন্য ১৯,০৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ –
দেশে ২ লক্ষ ৫০ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩১শে মের মধ্যে ব্রডব্যান্ড পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তহবিলের ঘাটতি পূরণের জন্য  ভারতনেট ১৬টি রাজ্যে সরকারী, বেসরকারী অংশীদারিত্বে  গ্রামে গ্রামে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা পৌঁছে দেবে। এর জন্য অতিরিক্ত ১৯,০৪১ কোটি টাকা দেওয়া হবে। অর্থাৎ ভারতনেট মোট ৬১,১০৯ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত করবে। যার ফলে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে ভারতনেটের মাধ্যমে ডিজিটাল পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। 

চ) বৃহৎ আকারের বৈদ্যুতিন সামগ্রীর নির্মাণে উৎপাদন ভিত্তিক উৎসাহ প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানো হল 
উৎসাহ ভিত্তিক উৎপাদন প্রকল্পে পণ্য সামগ্রীর উপর ভিত্তি করে ৬ থেকে ৪ শতাংশ উৎসাহমূলক সহায়তা দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৯ – ২০ -কে অর্থ বর্ষ ধরে ২০২০র পয়লা আগস্ট থেকে ভারতে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বিক্রির ক্ষেত্রে এই প্রকল্প কার্যকর হবে। তবে, মহামারির জন্য লকডাউনের ফলে পণ্য উৎপাদন, পরিবহণ, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ – ২৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েচে। অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলি এই সময়কালে যে কোনো ৫ বছর তাদের উৎপাদন দেখিয়ে এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবে। 

ছ) সংস্কার ভিত্তিক বিদ্যুৎ বন্টন ব্যবস্থাপনার জন্য ৩.০৩ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ
সংস্কার ভিত্তিক ফলাফল নির্ভর বিদ্যুৎ বন্টন প্রকল্পের আওতায় বন্টন সংস্থাগুলিকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। সংস্থাগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন, ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০২১ – ২২ অর্থ বর্ষে এই প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছিল। এর ফলে “একটি নির্দিষ্ট নিয়ম সব সংস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য” – এই নীতির পরিবর্তে বিভিন্ন জায়গায় আলাদা আলাদা নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। যারা এই প্রকল্পে যুক্ত হতে চায়, সেই সব সংস্থাগুলিকে আর্থিক ব্যয় বরাদ্দের হিসেব পরীক্ষা, রাজ্য সরকারগুলির বকেয়া অর্থ বা ভর্তুকি মেটাবার জন্য প্রয়োজনে বিলগ্নীকরণের মাধ্যমে  অর্থের সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এই প্রকল্পে ২৫ কোটি স্মার্ট মিটার, ১০ হাজার ফিডার, ৪ লক্ষ কিলোমিটার লো টেনশন ওভারহেড লাইন বসানোর কাজ করতে হবে। আইপিডিএস, ডিডিইউজিজেওয়াই এবং সৌভাগ্য প্রকল্পের কাজগুলিকে এই প্রকল্পে যুক্ত করতে হবে। প্রকল্পের জন্য় ৩,০৩,০৫৮ কোটি টাকার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কেন্দ্রের এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯৭,৬৩১ কোটি টাকা। রাজ্যগুলির মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ০.৫ শতাংশ হারে ঋণের ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাকি অর্থ সংগ্রহ করা যাবে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংস্কারের মধ্য দিয়ে চার বছর ধরে এই অর্থ পাওয়া যাবে। এবছর ১,০৫,৮৬৪ কোটি টাকা  ঋণ নেওয়া যেতে পারে।  

জ) সরকারী, বেসরকারী অংশীদারিত্বে (পিপিপি) প্রকল্পে  এবং বিভিন্ন সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে অতিরিক্ত আয়ের জন্য নতুন ব্যবস্থা 
সরকারী, বেসরকারী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়া সময় সাপেক্ষের ব্যাপার। এর জন্য নতুন একটি নীতি তৈরি করা হবে। যার মাধ্যমে পিপিপি-র প্রস্তাবগুলি অনুমোদিত হবে এবং আইএনভিআইটির মধ্য দিয়ে সম্পদের বিলগ্নিকরণ করা হবে। এই নীতির ফলে আর্থিক পুনর্গঠন এবং পরিকাঠামোর ব্যবস্থাপনার জন্য বেসরকারী ক্ষেত্রের দক্ষতাকে কাজে লাগানো হবে।

 

CG/CB/SFS



(Release ID: 1731098) Visitor Counter : 437