প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
প্রধানমন্ত্রী বিহারে পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করলেন
Posted On:
13 SEP 2020 2:47PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লী, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিহারে পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে, পারাদ্বীপ-হলদিয়া-দূর্গাপুর পাইপলাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের দূর্গাপুর-বাঁকা শাখা এবং ২টি এলপিজি বটলিং প্ল্যান্ট। এই প্রকল্পগুলি কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ইন্ডিয়ান অয়েল এবং হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড রূপায়ণ করেছে।
এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েক বছর আগে বিহারের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। এই বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে রাজ্যের পরিকাঠামো ক্ষেত্রের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, বিশেষ প্যাকেজের আওতায় বিহারে পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত ১০টি বড় প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়। এই প্রকল্পগুলি খাতে খরচ ধরা হয় ২১ হাজার কোটি টাকা। আজ যে প্রকল্পগুলির সূচনা হয়েছে সেগুলি ওই ১০টি প্রকল্পের অন্যতম এবং সপ্তম প্রকল্প। ইতিমধ্যেই বিহারে অন্য যে ৬টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে সেগুলির কথাও শ্রী মোদী উল্লেখ করেন। আজ দূর্গাপুর-বাঁকা পর্যন্ত প্রায় ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ যে গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পটির সূচনা হয়েছে, দেড় বছর আগে তারই শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী। ধার্য সময়সীমার মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য তিনি ইঞ্জিনিয়ার ও শ্রমিকদের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের সক্রিয় সহযোগিতার প্রশংসা করেন। শ্রী মোদী বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে বলেন, একটা সময় ছিল যখন বিহারের কর্মসংস্কৃতি ছিল এক প্রজন্ম কাজ শুরু করবে এবং সেই কাজ শেষ করবে পরের প্রজন্ম, এই কর্মসংস্কৃতি থেকে রাজ্যকে তিনি বের করে নিয়ে এসেছেন। শ্রী মোদী আরও বলেন, বিহারের নতুন এই কর্মসংস্কৃতিকে আরও সুসংহত করতে হবে এবং এরফলে বিহার ও পূর্ব ভারত অগ্রগতির পথে নিরন্তর এগিয়ে চলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার মূল উৎসই হল শক্তি এবং শ্রম শক্তি যেকোন দেশের উন্নয়নের ভিত্তি। তিনি বলেন, বিহার সহ পূর্ব ভারতে শ্রম শক্তির অভাব নেই। এমনকি এই অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদেও পরিপূর্ণ। কিন্তু এ সত্ত্বেও বিহার ও পূর্ব ভারত দশকের পর দশক ধরে উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এবং রাজনীতি, অর্থনীতি ও অন্যান্য অগ্রাধিকারের জন্য অন্তহীন বিলম্ব সহ্য করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক যোগাযোগ, রেল যোগাযোগ, বিমান যোগাযোগ ও ইন্টারনেট পরিষেবার ক্ষেত্রে আগে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। এমনকি গ্যাস ভিত্তিক শিল্প ও পেট্রোপণ্যের আদান-প্রদানের বিষয়ে কোনও পরিকল্পনাই করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, বিহার স্থল সীমাবেষ্টিত রাজ্য হওয়ায় গ্যাস ভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কারণ রাজ্যে গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামের সরবরহে ঘাটতি ছিল, অন্যদিকে সমুদ্র লাগোয়া রাজ্যগুলিতে এর সুবিধা ছিল বেশী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাস ভিত্তিক শিল্প এবং পেট্রোপণ্যের সরবরাহের সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। এমনকি এই ধরণের শিল্প স্থানীয় এলাকার মানুষের জীবন-যাপনের মানোন্নয়নে সাহায্য করে। এমনকি, লক্ষ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, আজ যখন বিহার ও পূর্ব ভারতের বহু শহরে সিএনজি এবং পিএনজি পৌঁছে যাচ্ছে তখন এই এলাকার মানুষের পেট্রোপণ্যের সুবিধাও সহজে পৌঁছে যাওয়া উচিত। শ্রী মোদী বলেন, পূর্বাঞ্চলীয় সমুদ্রতটের পারাদ্বীপের সঙ্গে পূর্ব ভারতের যোগাযোগ এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় সমুদ্রতট কান্ডালার সঙ্গে পূর্ব ভারতের যোগাযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী উর্জা গঙ্গা যোজনার আওতায় প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ লাইন বসানো হচ্ছে। এই পাইপ লাইন যে ৭টি রাজ্যের ওপর দিয়ে যাবে তারমধ্যে বিহারও রয়েছে। ইতিমধ্যেই ৩ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই গ্যাস পাইপ লাইনের পারাদ্বীপ-হলদিয়া শাখাটি পাটনা ও মুজফ্ফরপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা হয়েছে। একইভাবে, কান্ডালা থেকে যে পাইন লাইনটি আসছে সেটি ইতিমধ্যেই গোরক্ষপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এখান থেকেই পাটনা ও মুজাফ্ফরপুরকেও পাইপ লাইনে জুড়ে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, যখন সমগ্র প্রকল্পটি রূপায়ণ সম্পূর্ণ হবে তখন এটি বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাস পাইপ লাইন হয়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই গ্যাস পাইপ লাইনগুলির দরুন বিহারে বৃহদায়তন বটলিং প্ল্যান্ট গড়ে উঠছে। আজ বাঁকা ও চম্পারনে দুটি নতুন বটলিং প্ল্যান্টেরও সূচনা হয়েছে। এই বটলিং প্ল্যান্ট দুটি থেকে প্রতি বছর ১২৫ মিলিয়ন সিলিন্ডারের বেশি গ্যাস সিলিন্ডার ভরা যাবে। দুটি বটলিং প্ল্যান্ট চালু হলে বিহারের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির এলপিজি চাহিদা মেটানো যাবে।
তিনি আরও বলেন বিহারে নতুন গ্যাস পাইপ লাইন বসানোর ফলে হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে, সেইসঙ্গে নতুন গ্যাস ভিত্তিক শিল্প সংস্থাও গড়ে উঠছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বারাউনির সার কারখানাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গ্যাস পাইপ লাইনগুলির নির্মাণকাজ শেষ হলেই এই সার কারখানাটির উৎপাদন পুনরায় শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে উজ্জ্বলা কর্মসূচির আওতায় ৮ কোটি দরিদ্র পরিবার রান্নার গ্যাস সংযোগ পেয়েছেন। করোনার সময় এই কর্মসূচি দরিদ্র মানুষের জীবনে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এরফলে, দরিদ্র মানুষ করোনার সময় বাড়িতেই থেকেছেন এবং তাদের কাঠ বা অন্যান্য জ্বালানী সংগ্রহের জন্য বাড়ির বাইরে যেতে হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার সময় উজ্জ্বলা কর্মসূচির আওতায় লক্ষ লক্ষ দরিদ্র পরিবারকে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়েছে। শ্রী মোদী জটিল করোনা পরিস্থিতির সময় পর্যাপ্ত পরিমানে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস দপ্তরের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারি সংস্থাগুলির ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার ডেলিভারির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি সত্ত্বেও গ্রাহকের বাড়িতে গ্যাস পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন বিহারে রান্নার গ্যাস সংযোগকে সমৃদ্ধশালী পরিবারের প্রতীক হিসেবে দেখা হতো। সাধারণ মানুষকে গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য সুপারিশ করতে হতো। কিন্তু এখন উজ্জ্বলা কর্মসূচি চালু হওয়ার ফলে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। বিহারে প্রায় ১ কোটি ৫ লক্ষ দরিদ্র পরিবারকে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের জীবনে পরিবর্তন এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বিহারের যুব সম্প্রদায়ের প্রশংসা করে বলেন, এই রাজ্য দেশের মেধা শক্তির অন্যতম উৎস কেন্দ্র। তিনি বলেন, প্রতিটি রাজ্যের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিহারের শ্রমিকদের ছাপ স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে বিহার উপযুক্ত সরকার ও প্রশাসন পেয়েছে, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং সুষ্পষ্ট নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এরফলে, প্রত্যাশিত ভাবেই অগ্রগতি ঘটেছে এবং তার সুফল প্রত্যেকের কাছে পৌঁছেছে। একসময় এরকম ধারণা ছিল যে বিহারের যুব সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন নেই। তারা জমিতে বা মাঠে-ঘাটে কাজ করবে। এরকম চিন্তা-ভাবনার দরুন রাজ্যে বৃহদায়তন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়নি। ফলস্রুতি স্বরূপ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের উচ্চতর শিক্ষার বা কাজের জন্য বাইরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। যুব সম্প্রদায়ের প্রতি এ ধরণের চিন্তাভাবনা কখনোই কাম্য নয় বলে প্রধানমন্ত্রী অভিমত প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজ বিহারে শিক্ষার বড় বড় প্রতিষ্ঠান চালু করা হচ্ছে। রাজ্যে এখন কৃষি, চিকিৎসা ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সংখ্যা বাড়ছে। আইআইটি, আইআইএম-এর মতো প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বিহারের যুব সম্প্রদায়ের স্বপ্ন পূরণ করছে। রাজ্যে পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩ গুন করার জন্য শ্রী মোদী বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। রাজ্যে ইতিমধ্যেই দুটি বৃহদায়তন বিশ্ববিদ্যালয়, একটি আইআইটি, একটি আইআইএম, একটি এনআইএফটি এবং একটি জাতীয়স্তরের আইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হতে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে যুব সম্প্রদায়ের স্বনিযুক্তির ক্ষেত্রে স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া, মুদ্রা যোজনা ও অন্যান্য কর্মসূচিগুলি বড় ভূমিকা নিয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিহারের শহর ও গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ বেড়েছে। বিদ্যুৎ, পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস ক্ষেত্রে আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে, সংস্কার সাধন করা হচ্ছে এবং এর ফলস্বরূপ শিল্প সংস্থা ও আর্থিক গতি ত্বরান্বিত হচ্ছে। শ্রী মোদী আরও বলেন, করোনার সময় পেট্রোলিয়াম সম্পর্কিত পরিকাঠামো নির্মাণের কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দেশে ৮ হাজারেরও বেশি কর্মসূচি রূপায়ণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই কর্মসূচিগুলির রূপায়ন বাবদ আগামী দিনগুলিতে ৬ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা বাইরে থেকে নিজের গ্রামে ফিরে এসেছেন এবং তাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপি মহামারীর সময়েও দেশে বিশেষ করে, বিহারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজকর্ম থেমে থাকেনি। তিনি জানান, ১০০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি জাতীয় স্তরে পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণের যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে তাতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ত্বরান্বিত হবে বলেও শ্রী মোদী অভিমত প্রকাশ করেন। বিহার ও পূর্ব ভারতকে উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে ও দ্রুততার সাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
CG/BD/NS
(Release ID: 1653813)
Visitor Counter : 304
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam