প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
উচ্চশিক্ষা বিষয়ক কনক্লেভ-এ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
Posted On:
07 AUG 2020 1:07PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ৭ আগষ্ট, ২০২০
নমস্কার! আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীমণ্ডলের সহযোগী শ্রী রমেশ পোখরিয়া নিশঙ্কজী, শ্রী সঞ্জয় ধোত্রেজী, ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি - জাতীয় শিক্ষানীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী দেশের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ড. কস্তুরি রঙ্গনজী এবং তাঁর টিম, এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী উপাচার্যগণ, অন্যান্য সমস্ত শিক্ষাবিদ, সমস্ত সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ এবং আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন।
ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি - জাতীয় শিক্ষানীতির প্রেক্ষিতে আজকের এই অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কনক্লেভ থেকে ভারতের শিক্ষার জগতে ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি - জাতীয় শিক্ষানীতির প্রভাবের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারীত আলোচনা হবে। এই আলোচনা যত বেশি স্পষ্ট হবে ততই জাতীয় শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন সহজ হবে।
বন্ধুগণ, ৩-৪ বছর ধরে ব্যাপক আলাপ আলোচনার পর লক্ষ লক্ষ পরামর্শ নিয়ে দীর্ঘ মন্থনের পর এই জাতীয় শিক্ষানীতিকে মঞ্জুর করা হয়েছে। আজ সারা দেশে এটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষজন ভিন্ন ভিন্ন বিচার ধারার ব্যক্তিগণ তাঁদের মতামত দিচ্ছেন, জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে পর্যালোচনা করছেন। এটা একটা স্বাস্থ্যকর বিতর্ক। এই বিতর্ক যত বেশি হবে, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ততটাই লাভবান হবে। এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে জাতীয় শিক্ষানীতি দেশের কোনও ক্ষেত্র থেকে কোনও বর্গ থেকে এই অভিযোগ আসেনি যে এটা পক্ষপাতদুষ্ট শিক্ষানীতি বা এটা কোনও বিশেষ দিকে ঝুঁকে আছে। এটা একটা সূচকও যে জনগণ বছরের পর বছর ধরে চলে আসা শিক্ষা ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন চাইছিলেন, সেটা তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন।
এমনিতে কারো কারো মনে এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে এত বড় সংস্কার কাগজে কলমে তো করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু একে কেমনভাবে বাস্তবায়িত করা হবে! অর্থাৎ সকলের নজর এর বাস্তবায়নের দিকে। এই চ্যালেঞ্জকে দেখে, আমাদের ব্যবস্থাকে সূচারুভাবে এর উপযোগী করে তুলতে যেখানে যেখানে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে তা আমাদের সকলকে মিলেমিশে করতে হবে, আর করতেই হবে। আপনারা সবাই জাতীয় শিক্ষানীতির বাস্তবায়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আর সেজন্যে আপনাদের ভূমিকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যতদূর পর্যন্ত রাজনৈতিক ইচ্ছা শক্তির প্রশ্ন রয়েছে, আমি সম্পূর্ণরূপে দায়বদ্ধ, আমি সম্পূর্ণরূপে আপনাদের সঙ্গে রয়েছি।
বন্ধুগণ, প্রত্যেক দেশ নিজের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিজেদের জাতীয় মূল্যবোধের সঙ্গে যুক্ত করে, নিজেদের জাতীয় লক্ষ্য অনুসারে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে করতে এগিয়ে চলে। উদ্দেশ্য থাকে যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, তার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি রাখবে, ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করবে। ভারতের ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি - জাতীয় শিক্ষানীতির ভিত্তিও এই ভাবনা থেকে উদ্ভুত। জাতীয় শিক্ষানীতি, একবিংশ শতাব্দীর ভারতের, নতুন ভারতের ভিত্তি প্রস্তুত করবে। একবিংশ শতাব্দীর ভারতের, আমাদের নবীন প্রজন্মের যে ধরণের শিক্ষা চাই, যে ধরণের দক্ষতা চাই এই জাতীয় শিক্ষানীতি সেদিকে গুরুত্ব দিয়েছে।
ভারতকে শক্তিশালী করে তুলতে উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে ভারতের নাগরিকদের আরও ক্ষমতায়িত করতে তাঁদের যত বেশি সম্ভব সুযোগ পাওয়ার জন্য উপযুক্ত করে তুলতে এই শিক্ষানীতিতে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। যখন ভারতের ছাত্ররা নার্সারি পর্যায় থেকে শুরু করে মহাবিদ্যালয় পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা করবে, দ্রুত পরিবর্তনশীল সময় এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রয়োজনের নিরিখে পড়াশোনা করবে, তবেই তারা জাতি গঠনে দৃষ্টিশীল ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারবে।
বন্ধুগণ, বিগত অনেক বছর ধরে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরণের পরিবর্তন হয়নি। পরিণাম স্বরূপ আমাদের সমাজের জিজ্ঞাসা এবং কল্পনাকে মূল্যবোধে রূপান্তরিত করার জায়গায় পৌত্তলিকতাকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছিল। কখনও ডাক্তার হওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ, কখনও ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ আবার কখনও উলিক হওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ। ছাত্রের নিজস্ব রুচি, পছন্দ, ক্ষমতা এবং চাহিদাগুলিকে ম্যাপিং না করেই প্রবৃত্তি থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বের করে আনার প্রয়োজন ছিল। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের শিক্ষায় আবেগ থাকবে না, শিক্ষার দর্শন থাকবে না, শিক্ষার উদ্দেশ্য থাকবে না, ততক্ষণ আমাদের ছাত্রদের মধ্যে, আমাদের যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে, জটিল ভাবনা এবং উদ্ভাবক ভাবনা কিভাবে বিকশিত হবে!
বন্ধুগণ, আজ গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়ানদিবসও। তিনি বলতেন – “উচ্চতম শিক্ষা হল সেটাই যা আমাদের শুধু তথ্য দেয় না, আমাদের জীবনের সমস্ত অস্তিত্বের সঙ্গে সদ্ভাব নিয়ে আসে”।
নিশ্চিতভাবেই জাতীয় শিক্ষানীতির বৃহৎ লক্ষ্য গুরুদেবের এই বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটা বুঝতে বিচ্ছিন্নভাবে না ভেবে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। জাতী শিক্ষানীতি সেই সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরতে সফল হয়েছে।
বন্ধুগণ, আজ যখন জাতীয় শিক্ষানীতি মূর্ত রূপ নিয়েছে, তখন আমি সেই সময় আর প্রশ্নগুলি নিয়েও আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই, যা আমাদের সামনে, আমাদের শাসনকালের গোড়ার দিকে তুলে ধরা হয়েছিল। সেই সময় যে দুটি প্রশ্ন সব থেকে বড় ছিল, তা হল যে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, আমাদের যুব সম্প্রদায়কে সৃষ্টিশীল, জিজ্ঞাসু এবং দায়বদ্ধ জীবন বাঁচার জন্য প্রেরণা জোগায় কি? আপনারা সবাই এত বছর ধরে এই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত আছেন। আপনারা এই প্রশ্নের জবাব খুব ভালোভাবেই জানেন।
বন্ধুগণ, আমাদের সামনে দ্বিতীয় প্রশ্ন হল যে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের যুব সম্প্রদায়কে ক্ষমতায়িত করে, দেশে একটি ক্ষমতায়িত সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করে কি? আপনারা সবাই এই প্রশ্নগুলির সঙ্গে পরিচিত আর এর জবাবগুলি সম্পর্কেও জানেন। বন্ধুগণ, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে ভারতের ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি - জাতীয় শিক্ষানীতিকে রচনার সময় নিবিড়ভাবে এই প্রশ্নগুলি নিয়ে কাজ হয়েছে।
বন্ধুগণ, এই পরিবর্তনশীল সময়ের পাশাপাশি একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা, একটি নতুন রংরূপ এবং ব্যবস্থাগুলিতে পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। একটি নতুন বিশ্বমানও নির্ধারিত হচ্ছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় আত্মনবীকরণের অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে উঠেছিল। স্কুল কারিকুলামের ১০+২ কাঠামো থেকে এগিয়ে এখন ৫+৩+৩+৪ কারিকুলামের কাঠামোতে পরিবর্তন করা, এই লক্ষ্যেই একটি পদক্ষেপ। আমাদের ছাত্রদের বিশ্ব নাগরিকও করে তুলতে হবে, আবার সেদিকেও নজর রাখতে হবে যে, তাঁরা যাতে বিশ্ব নাগরিক হয়ে ওঠার পাশাপাশি নিজেদের শেকড়ের সঙ্গেও যুক্ত থাকেন। তার মানে শেকড় থেকে বিশ্বজগৎ, মানুষ থেকে মানবতা পর্যন্ত, অতীত থেকে আধুনিকতা পর্যন্ত সমস্ত বিষয়কে একত্রিত করে এই জাতীয় শিক্ষানীতির স্বরূপ নির্ণয় করা হয়েছে।
বন্ধুগণ, এই বিষয়ে কোনো বিবাদ নেই যে বাচ্চারা বাড়িতে যে ভাষায় কথা বলে, তার সঙ্গে স্কুলে পড়াশোনার ভাষা এক হলে তাদের শিক্ষার গতি উন্নত হয়। এটা একটা অত্যন্ত বড় কারণ যেজন্যে যতটা সম্ভব, পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিশুদের তাদের মাতৃভাষায় পড়াশোনার ক্ষেত্রে সকলেই সহমত প্রকাশ করেছেন। এর ফলে, শিশুদের শিক্ষার ভিততো শক্তিশালী হবেই, প্রত্যেকের পরবর্তী পড়াশোনার ক্ষেত্রেও ভিত মজবুত হবে।
বন্ধুগণ, এখন পর্যন্ত আমাদের যে শিক্ষা ব্যবস্থা, এতে কী নিয়ে ভাবতে হবে সে দিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন শিক্ষানীতিতে কিভাবে ভাবতে হবে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এটা আমি এজন্য বলছি আজ আমরা যে সময়ে বসবাস করছি সেখানে তথ্য এবং বিষয়ের কোনো অভাব নেই। একপ্রকার তথ্য ও বিষয়ের বন্যা এসেছে, আপনাদের মোবাইল ফোনেই সমস্ত ধরণের তথ্য পেয়ে যাবেন। এটা জানা প্রয়োজন যে কোন্ তথ্যটা রপ্ত করতে হবে, কোন্ তথ্যটা পড়তে হবে। এদিকে লক্ষ্য রেখেই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে দীর্ঘ পাঠক্রম এবং অনেক অনেক বই ঘেটে পড়াশোনা করার অনিবার্যতাকে কিভাবে কম করা যায় সেই চেষ্টা করা হয়েছে। এখন চেষ্টা করা হচ্ছে শিশুদের শেখার জন্য জিজ্ঞাসা ভিত্তিক, আবিষ্কার ভিত্তিক, আলোচনা ভিত্তিক এবং বিশ্লেষণ ভিত্তিক পদ্ধতিগুলিতে জোর দেওয়া। এর ফলে শিশুদের শেখার ইচ্ছে বৃদ্ধি পাবে এবং শ্রেণীকক্ষে তাদের অংশগ্রহণও বৃদ্ধি পাবে।
বন্ধুগণ, প্রত্যেক ছাত্রের এই সুযোগ পাওয়া উচিত, সে যেন তার আবেগকে অনুসরণ করতে পারে। সে নিজের সুবিধা এবং প্রয়োজন অনুসারে কোনো ডিগ্রি অথবা কোর্স অনুসরণ করতে পারে আর তার ভালো না লাগলে ছেড়েও দিতে পারে। অনেক সময় এরকম হয় যে কোনো কোর্স করার পর ছাত্র যখন চাকরি প্রার্থী হয় তখন সে জানতে পারে যে সে যা যা পড়াশোনা করেছে তা চাকরির প্রয়োজন মেটায় না। অনেক ছাত্রকে ভিন্ন ভিন্ন কারণে কোনও কোর্স ছেড়ে দিয়ে চাকরিতে ঢুকতে হয়, এমন ছাত্র-ছাত্রীদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে ‘মাল্টিপিল এন্ট্রি - এগজিট’-এর ‘অপশন’ দেওয়া হয়েছে। এখন ছাত্র বা ছাত্রীটি ফিরে গিয়ে তাঁর পুরনো কোর্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাঁর চাকরির প্রয়োজনের হিসেব থেকে বেশি কার্যকরি পদ্ধতিতে পড়াশোনা করতে পারবে, শিখতে পারবে। এর আরেকটি দিক রয়েছে।
নতুন ব্যবস্থায় এখন ছাত্রদের এই স্বাধীনতাও থাকবে যে তাঁরা যদি কোনও কোর্স মাঝখানে ছেড়ে অন্য কোর্সে ভর্তি হতে চান, সেটাও তাঁরা করতে পারবেন। সেজন্যে তাঁরা আগের কোর্স থেকে একটি নিশ্চিত সময় পর্যন্ত ‘ব্রেক’ নিয়ে অন্য কোর্সে যোগ দিতে পারবেন। উচ্চতর শিক্ষাকে ‘স্ট্রীম’-এর ভাবনা থেকে মুক্ত করতে, ‘মাল্টিপল এন্ট্রি’ এবং ‘এগজিট, ক্রেডিট ব্যাঙ্ক’ এর প্রয়োগের পেছনে এটাই মূল ভাবনা। আমরা সেই যুগের দিকে এগিয়ে চলেছি যেখানে কোনও ব্যক্তি সারা জীবন ধরে নির্দিষ্ট কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না, পরিবর্তন নিশ্চিত এটা মেনে চলতে হবে। সেজন্য তাঁকে নিরন্তর নিজেকে পুনর্দক্ষ এবং দক্ষতা উন্নয়ণ করে যেতে হবে। ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি - জাতীয় শিক্ষানীতিতে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
বন্ধুগণ, যে কোনো দেশের উন্নয়নে একটি বড় ভূমিকা থাকে – সমাজের প্রত্যেক বর্গের গরিমা, তাঁদের আত্মসম্মানবোধ। সমাজের কোনো ব্যক্তি যে কাজই করুন না কেন, কেউই কারও থেকে নিচু হন না! আমাদের এটা ভাবতে হবে যে ভারতের মতো সাংস্কৃতিক দৃষ্টিতে সমৃদ্ধ দেশে এই কু-সংস্কার কোথা থেকে এসেছে? এই উঁচু-নীচু ভাব, যাঁরা পরিশ্রম করেন, মজুরি করেন তাঁদের প্রতি হীনভাব – এধরণের বিকৃতি আমাদের মধ্যে কিভাবে বাসা বেঁধেছে? এই উল্টো দৃষ্টি, দৃষ্টিভঙ্গীতে এই বৈপরীত্বের ভাবনা কিভাবে এসেছে? এর একটা বড় কারণ হল, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সমাজের এই বিরাট অংশের দীর্ঘকালীন যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা। যখন কেউ দেশের গ্রামগুলিতে যাবেন, কৃষক, শ্রমিক, মজুরদের কাজ করতে দেখবেন তখনই তাঁদের সম্পর্কে জানতে পারবেন, তাঁদেরকে বুঝতে পারবেন। তাঁরা প্রতিদিন সমাজে কতবড় অবদান রাখছেন, সমাজের প্রয়োজনগুলি মেটানোর জন্য তাঁরা কিভাবে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করছেন! আমাদের প্রজন্মের মানুষদের তাঁদেরকে সম্মান করা শিখতে হবে। সেজন্য নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে ছাত্রদের শিক্ষা এবং শ্রমের মর্যাদার উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ, একবিংশ শতাব্দীর ভারত থেকে গোটা বিশ্বের অনেক প্রত্যাশা। ভারতের মেধা এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের সমস্ত সমস্যার সমাধান করার সামর্থ আছে! আমাদের এই আন্তর্জাতিক দায়িত্বের দিকেও আমাদের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি লক্ষ্য রেখেছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে যে সমাধানগুলির কথা বলা হয়েছে, সেগুলিতে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির প্রতি একটি মুক্ত মানসিকতা বিকাশের ভাবনা রয়েছে। এখন প্রযুক্তি আমাদের অত্যন্ত দ্রুত গতিতে, খুব ভালোভাবে, অত্যন্ত সুলভে, সমাজের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এই সুবিধাকে আমাদের যত বেশি সম্ভব কাজে লাগাতে হবে।
এই শিক্ষানীতির মাধ্যমে প্রযুক্তি নির্ভর, উন্নত বিষয় এবং পাঠক্রম রচনায় অত্যন্ত সহায়ক হবে। ‘বেসিক কম্পিউটিং’এ জোর দিতে হবে, ‘কোডিং’কে গুরুত্ব দিতে হবে এবং গবেষণাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এটা নিছকই শিক্ষা ব্যবস্থা নয়, গোটা সমাজের দৃষ্টিকোণ পরিবর্তনের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। ‘ভাচ্যুয়াল ল্যাব’-এর মতো ধারণা, এধরণের লক্ষ লক্ষ বন্ধুদের জীবনে উন্নত শিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করবে, যাঁরা আগে যাতে গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে এই ধরণের বিষয় পড়তেই পারতেন না! ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি - জাতীয় শিক্ষানীতি, আমাদের দেশে গবেষণা এবং শিক্ষার এ ধরণের শূন্যস্থান পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বন্ধুগণ, যখন প্রতিষ্ঠানগুলিতে এবং পরিকাঠামোতেও এই সংস্কার প্রতিফলিত হবে তখন জাতীয় শিক্ষানীতিকে আরও বেশি কার্যকরী এবং দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে। আজ সময়ের চাহিদা হল উদ্ভাবন এবং অভিযোজনের যে মূল্যবোধগুলি আমরা সমাজে গড়ে তুলতে চাই, সেগুলি নিজে নিজেই আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে অঙ্কুরিত হওয়া শুরু হবে, সেগুলির নেতৃত্ব আজ আপনাদের সকলের হাতে রয়েছে। আমরা যখন শিক্ষা এবং বিশেষ করে উচ্চতর শিক্ষাকে ক্ষমতায়িত সমাজের নির্মাতারূপে দাঁড় করাতে চাই, তখন তার জন্য উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকেও ক্ষমতায়িত করা প্রয়োজন। আর আমি জানি, যখনই প্রতিষ্ঠানগুলিকে ক্ষমতায়িত করার কথা ওঠে তখন তার সঙ্গে আর একটি শব্দ চলে আসে সেটি হল স্বায়ত্তশাসন। আপনারও জানেন যে স্বায়ত্তশাসন নিয়ে আমাদের দেশে দু’ধরণের মতামত রয়েছে। একদল বলেন যে সব কিছুকে কঠোরভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণে চালানো উচিত। আর অন্যরা বলেন যে সকল প্রতিষ্ঠানকে ‘বাই ডিফল্ড’ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া উচিত।
প্রথম দৃষ্টিভঙ্গিতে অসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি অনাস্থা প্রদর্শিত হয় আর দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বায়ত্তশাসনকে অধিকাররূপে প্রয়োগ করা হয়। ভালো উৎকৃষ্ট শিক্ষার পথ এই দুটি দৃষ্টিভঙ্গির মাঝামাঝি রয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলি উৎকৃষ্ট শিক্ষার জন্যই বেশি কাজ করে, তাদের বেশি স্বাধীনতা প্রদানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করা উচিত। এতে উৎসাহকে অনুপ্রাণিত করা হবে আর সকলকে বৃদ্ধির জন্য অনুদানও দেওয়া হবে। ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি - জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের আগে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আপনারা দেখেছেন, কিভাবে আমাদের সরকার অনেক প্রতিষ্ঠানকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জাতীয় শিক্ষানীতি যেভাবে বিস্তারিত হতে থাকবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির স্বায়ত্তশাসনের প্রক্রিয়াও তত ত্বরান্বিত হবে।
বন্ধুগণ, দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মহান বৈজ্ঞানিক ড. এ.পি.জে. আব্দুল কালাম বলতেন – ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য হল ভালো, দক্ষ এবং পারদর্শী মানুষ তৈরি করা .... শিক্ষকরাই পারেন এই আলোকপ্রাপ্ত মানুষদের তৈরি করতে’। সত্যিই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই পরিবর্তন, দেশকে ভালো ছাত্র, ভালো পেশাদার এবং উন্নতমানের নাগরিক জোগানের অনেক বড় মাধ্যম। এখানে আপনারা সবাই শিক্ষক, প্রত্যেকেই অধ্যাপক, শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকায় আপনারাই এই কাজ সব থেকে ভালোভাবে করেন এবং করতে পারেন। সেজন্য ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি - জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের মর্যাদের দিকেও বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। আর চেষ্টা করা হয়েছে যাতে ভারতের যত মেধা তা ভারতেই থেকে গিয়ে আগামী প্রজন্মগুলিকে আরও উন্নত করে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষক শিক্ষণ নিয়েও অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, শিক্ষকরা যেন দ্রুত নিজেদের দক্ষতাকে লাগাতার উন্নত করেন সেদিকেও অত্যন্ত জোর দেওয়া হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, যখন একজন শিক্ষক ভালভাবে শিক্ষা গ্রহণ করেন, একটি জাতি নেতৃত্বের পথে এগিয়ে যায়।
বন্ধুগণ, ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি - জাতীয় শিক্ষানীতিকে বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সকলকে একসঙ্গে সংকল্পবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিদ্যালয় শিক্ষা বোর্ড, ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য, ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য বার্তালাপ এবং সমন্বয়ের নতুন প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। আপনারা সকলেই পরস্পরকে সাহায্য করবেন, কারণ উচ্চতর শিক্ষার সর্বাধিক শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলির সর্বোচ্চ পদে আপনারা আসীন, সেজন্য আপনাদের দায়িত্ব বেশি। আমার অনুরোধ, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আপনারা নিয়মিত ওয়েবিনার করুন, আলোচনা করে যান। নীতি প্রণয়নের জন্য রণনীতি গড়ে তুলুন, রণনীতির বক্তব্য বাস্তবায়িত করার জন্য রোড ম্যাপ তৈরি করুন। এই রোড ম্যাপের সঙ্গে নিজের টাইমলাইনকে যুক্ত করুন। একে বাস্তবায়িত করতে সমস্ত সম্পদ এবং মানব সম্পদ সমস্ত কিছুকে যুক্ত করার পরিকল্পনা করুন, আর এই সমস্ত বিষয় সমন্বিত করে আপনাদেরকেই নতুন নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
জাতীয় শিক্ষানীতি নিছকই একটি সার্কুলার নয়, আবার জাতীয় শিক্ষানীতি শুধু সার্কুলার জারি করে, নোটিফাই করে বাস্তবায়িত হবে না। এর জন্য মনের পরিবর্তন আনতে হবে। আপনাদের প্রত্যেকের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি দেখাতে হবে। ভারতের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য আপনাদের এই কাজ একটি মহাযজ্ঞের মতো। এতে আপনাদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই কনক্লেভকে দেখতে থাকা, শুনতে থাকা প্রত্যেক সম্মানিত ব্যক্তির সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজনীয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই কনক্লেভে আপনারা জাতীয় শিক্ষানীতির কার্যকরী বাস্তবায়ন নিয়ে উন্নত পরামর্শ, উন্নত সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসবেন ।আর, বিশেষ করে আজ আমাকে এখানে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। সার্বজনিক ক্ষেত্রে ড. কস্তুরিরঙ্গনজী এবং তাঁর গোটা টিমকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।
CG/SB/SKD
(Release ID: 1644258)
Visitor Counter : 346
Read this release in:
Punjabi
,
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Assamese
,
Manipuri
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam