প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ঘূর্ণিঝড় আমফানে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 22 MAY 2020 2:54PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২২ মে, ২০২০

 

 

 

আরেকবার একটি ঘূর্ণিঝড় ভারতের সমুদ্র তটবর্তী অঞ্চল, বিশেষ করে পূর্বতটকে বিপর্যস্ত করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গের ভাইবোন, পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের বাড়িঘর সম্পত্তি বিধ্বস্ত হয়েছে।

এই ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা জানার পর থেকে আমি লাগাতার সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছিলাম। কেন্দ্রীয় সরকারও নিয়মিত সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। এই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি যাতে ন্যূনতম হয়, তা সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে রাজ্য সরকারগুলি এবং কেন্দ্রীয় সরকার মিলেমিশে কাজ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৮০ জনের জীবন রক্ষা করতে পারিনি। সেজন্য আমরা সবাই অত্যন্ত দুঃখিত। যে পরিবারগুলি তাঁদের স্বজন হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার এবং আমাদের সকলের সমবেদনা প্রকাশ করছি। এই বিপদের সময় আমরা তাঁদের পাশে রয়েছি।

সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি অনেক হয়েছে। কৃষি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ক্ষেত্র, টেলিকম্যুনিকেশন, অসংখ্য বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়া; পরিকাঠামো ক্ষেত্র থেকে শুরু করে বাণিজ্য জগতের অনেক মানুষ, কৃষির সঙ্গে যুক্ত অনেক মানুষের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে।

আজ আমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীজী এবং রাজ্যপালজীর সঙ্গে আকাশপথে ঘুরে ঘুরে বিপর্যস্ত এলাকাগুলি ভালো করে দেখেছি। এখন রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়া আমাকে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক পরিসংখ্যান দিয়েছেন, এর বিবরণ দিয়েছেন। আমরা ঠিক করেছি, যত দ্রুত সম্ভব বিস্তারিত ক্ষেত্র সমীক্ষা করাবো। কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ক্ষেত্র, টেলি কম্যুনিকেশন, বাড়িঘর ধ্বংসের পরিস্থিতি, পরিকাঠামো ক্ষেত্র কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা খতিয়ে দেখবো।

জরুরি-ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল আসবে। তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী পুনর্বাসন থেকে শুরু করে ত্রাণ ও পুনর্নির্মাণের ব্যাপক প্রকল্প রচনা করে আমরা পশ্চিমবঙ্গের সঙ্কটের সময়ে পাশে থাকবো, সহযোগিতা করবো, যাতে পশ্চিমবঙ্গ দ্রুত উঠে দাঁড়াতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্য কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। আর যখন যেমন প্রয়োজন হবে, সেই প্রয়োজন মেটাতে কেন্দ্রীয় সরকারের যে নীতি-নিয়ম রয়েছে, তা পূর্ণরূপে ব্যবহার করে আমরা পশ্চিমবঙ্গের পাশে দাঁড়াবো।

এখন এই সঙ্কটের সময়ে রাজ্য সরকার যাতে সমস্যায় না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে অগ্রিম সহায়তা রূপে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি, যে পরিবারগুলি তাঁদের স্বজন হারিয়েছে, সেই পরিবারগুলিকে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে ২ লক্ষ টাকা করে এবং যাঁরা গুরুতর আহত তাঁদের জন্য মাথাপিছু সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

গোটা বিশ্ব একটি সঙ্কটের সম্মুখীন। ভারতও লাগাতার করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মন্ত্র আরও ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মন্ত্র পরস্পর বিরোধী।

করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মন্ত্র হ’ল – যে যেখানে আছেন, সে সেখানেই থাকুন, প্রয়োজন না হলে বাড়ি থেকে বেরোবেন না, আর যেখানেই যান না কেন, অন্য ব্যক্তির সঙ্গে দু’গজ দূরত্ব বজায় রাখবেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মন্ত্র হ’ল – ঘূর্ণিঝড় আসছে, দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন, সেখানে পৌঁছনোর চেষ্টা করুন, নিজের বাড়ি খালি করুন; অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গকে দুটি পরস্পর বিরোধী লড়াই একসঙ্গে লড়তে হয়েছে।

তা সত্ত্বেও মমতাজীর নেতৃত্বে রাজ্য সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারও এই সঙ্কট মোকাবিলায় অগ্রিম যা যা করা সম্ভব, রাজ্য সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে তা করে গেছে। আগামী দিনেও যখন যেমন প্রয়োজন হবে, আমরা তা পূরণে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো।

আজ গোটা দেশ যার জন্য গর্বিত, সেই রাজা রামমোহন রায়ের জন্মজয়ন্তী আজকের দিনে পশ্চিমবঙ্গের পবিত্র মাটি স্পর্শ করে আমি ধন্য। কিন্তু আজ যখন আমরা সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, আমি প্রার্থনা করবো, এই লড়াইয়ে রাজা রামমোহন রায় আমাদের সবাইকে আশীর্বাদ দিন, যাতে তাঁর সময়োপযোগী সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়িত করতে আমরা মিলেমিশে, একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য, সমাজ সংস্কারের প্রক্রিয়া জারি রাখবো; আর সেটাই হবে আমাদের রাজা রামমোহন রায়ের প্রতি শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আমি আমার পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত ভাইবোনদের আশ্বস্ত করতে চাই, এই সঙ্কটের সময় গোটা দেশ আপনাদের পাশে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগামী সমস্ত প্রয়োজনে পাশে থাকবে। এই সঙ্কটের সময়ে আপনাদের সবার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। কিন্তু করোনা সংক্রমণ প্রতিহত করতে সমস্ত নাগরিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্ভব হচ্ছে না। মনে একটা ক্ষোভ থেকে যাবে। এখান থেকে আমি ওডিশায় যাবো আর সেখানেও আকাশপথে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবো, সেখানকার মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীজী এবং রাজ্য সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলবো।

আমি আরেকবার বলছি, পশ্চিমবঙ্গের এই সঙ্কটের সময়ে আপনাদের পাশে আছি। আপনারা যাতে দ্রুত এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করতে আপনাদের পাশে থাকবো।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

 

 

 

CG/SB/SB


(Release ID: 1626320) Visitor Counter : 260