প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 12 MAY 2020 10:14PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১২ই মে, ২০২০

 

 


সকল দেশবাসীকে সাদর নমস্কার।


করোনা সংক্রমণের মোকাবিলায় বিশ্ববাসীর ৪ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সারা পৃথিবীতে ৪২ লক্ষেরও বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। পৌনে ৩ লক্ষ মানুষের দুঃখজনক মৃত্যু হয়েছে। ভারতেও অনেক মানুষ তাঁদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। আমি সকলের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই।

বন্ধুগণ,

একটি ভাইরাস বিশ্বকে তছনছ করে দিয়েছে। সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি জীবন সঙ্কটের সম্মুখীন। গোটা বিশ্ব জীবন বাঁচানোর যুদ্ধে ব্যতিব্যস্ত। আমরা এমন সঙ্কট দেখি নি, শুনিও নি। নিশ্চিতভাবে মানব জাতির জন্য এসব কিছু অকল্পনীয়। এই সঙ্কট অভূতপূর্ব।


কিন্তু ক্লান্তি, হেরে যাওয়া, ভেঙ্গে পড়া মানুষ মেনে নিতে পারে না। সতর্ক থেকে, এমন যুদ্ধের সকল নিয়ম পালন করে, এখন আমাদের বাঁচতে হবে, এগিয়েও যেতে হবে। আজ যখন বিশ্ব সঙ্কটে তখন আমাদের সংকল্প আরো মজবুত করতে হবে। আমাদের সংকল্পকে এই সঙ্কট থেকে বড়ো করে তুলতে হবে।

বন্ধুগণ,

আমরা বিগত শতাব্দী থেকে শুনে আসছি, একবিংশ শতাব্দ- ভারতের শতাব্দী। আমরা করোনাপূর্ব বিশ্বকে, বিশ্ব ব্যবস্থাগুলিকে বিস্তারিতভাবে দেখা ও বোঝার সুযোগ পেয়েছি। করোনা সঙ্কটের পরেও বিশ্বে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটাও আমরা নিরন্তর দেখছি। উভয় কালখন্ডকে যখন আমরা ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, তখন মনে হয়, একবিংশ শতাব্দী, ভারতের শতাব্দী হবে, এটা আমাদের স্বপ্ন নয়, এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব। কিন্তু তার পথ কেমন হবে, বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের শেখাচ্ছে, এর একটাই পথ, তা হল আত্মনির্ভর ভারত। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে, - ‘এষঃ পন্থাঃ’ অর্থাৎ এটাই পথ – আত্মনির্ভর ভারত।

বন্ধুগণ,

একটি দেশ হিসেবে আমরা আজ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে। এতো বড় বিপদ, ভারতের জন্যে একটি সঙ্কেত নিয়ে এসেছে, একটি বার্তা নিয়ে এসেছে, একটি সুযোগ নিয়ে এসেছে।

আমি একটি উদাহরণ সহ আমার বক্তব্য রাখবো, যখন করোনা সঙ্কট শুরু হয়েছে, তখন ভারতে একটিও পিপিই কিট উৎপাদন হত না। এন-৯৫ মাস্ক, ভারতে নামমাত্র উৎপাদনের ব্যবস্থা ছিল। এখন পরিস্থিতি এমন যে, ভারতেই রোজ ২ লক্ষ পিপিই, আর ২ লক্ষ এন-৯৫ মাস্ক তৈরি হচ্ছে।

এটা আমরা এজন্যে করতে পেরেছি, কারণ ভারত বিপদকে সুযোগে রূপান্তরিত করেছে। বিপদকে সুযোগে পরিবর্তিত করার ভারতের এই দৃষ্টিকোণ, আত্মনির্ভর ভারতের জন্যে, আমাদের সঙ্কল্পের জন্য ততটাই ফলপ্রসূ হয়ে উঠবে।


বন্ধুগণ,

আজ বিশ্বে ‘আত্মনির্ভর’ শব্দটির অর্থ বদলে গেছে, ‘গ্লোবাল ওয়ার্ল্ড’-এ আত্মনির্ভরতার সংজ্ঞা বদলে গেছে। অর্থকেন্দ্রিক বিশ্বায়ন বনাম মানবকেন্দ্রিক বিশ্বায়নের আলোচনা প্রকট হচ্ছে। বিশ্বের সামনে ভারতের মৌলিক দর্শন আশার কিরণ নিয়ে আসছে। ভারতের সংস্কৃতি, ভারতের শিষ্টাচার, সেই আত্মনির্ভরতার কথা বলে যেখানে আত্মা - ‘বসুধৈব কুটুম্বকম!’ ভারত যখন আত্মনির্ভরতার কথা বলে, তখন আত্মকেন্দ্রিক ব্যবস্থার ওকালতি করে না।


 ভারতের আত্মনির্ভরতা, বিশ্ববাসীর সুখ, সহযোগিতা এবং শান্তির চিন্তা থাকে। যে সংস্কৃতি জগৎ-এর জয়ে বিশ্বাস রাখে, সকল জীবের কল্যাণ চায়, গোটা বিশ্বকে নিজের পরিবার বলে মানে, নিজের বিশ্বাসে ‘মাতা ভূমীঃ পুত্র অহম পৃথিব্যঃ’ এর ভাবনা রাখে, বিশ্বকে মা বলে মনে করে, সেই সংস্কৃতি, সেই ভারত ভূমি, যখন আত্মনির্ভর হয়ে ওঠে, তখন তা থেকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ বিশ্বের সম্ভাবনাও সুনিশ্চিত হয়।


ভারতের উন্নয়নে সর্বদাই বিশ্বের উন্নয়ন সমাহিত থাকে। ভারতের লক্ষ্যের প্রভাব, ভারতে কার্যের প্রভাব, বিশ্ব কল্যাণকে প্রভাবিত করে। যখন ভারত, উন্মুক্তস্থানে শৌচকর্ম মুক্ত হয়ে ওঠে, তখন বিশ্বের চেহারা বদলে যায়। যক্ষ্মা, অপুষ্টি, পোলিও ইত্যাদির প্রতিরোধে ভারতের অভিযানের প্রভাব, গোটা বিশ্বকে প্রভাবিত করে। আন্তর্জাতিক সৌরসংঘ, বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধে ভারতের উপহার।


আন্তর্জাতিক যোগা দিবসের উদ্যোগ, মানব জীবনকে দুশ্চিন্তামুক্ত করার ক্ষেত্রে ভারতের উপহার। সারা পৃথিবী যখন জীবন – মৃত্যু লড়াইয়ে পর্যুদস্থ, তখন সারা পৃথিবীতে ভারতের ওষুধ একটি নতুন আশা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে। ভারতের এই পদক্ষেপ সারা পৃথিবীর প্রশংসা কুড়িয়েছে, এজন্য প্রত্যেক ভারতীয় গর্বিত।


বিশ্ববাসী বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, ভারত খুব ভালো করতে পারে, মানব জাতির কল্যাণের জন্য অনেক ভালো কিছু দিতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, কিভাবে তা সম্ভব? এই প্রশ্নেরও উত্তর হল – ১৩০ কোটি দেশবাসীর, আত্মনির্ভর ভারতের সংকল্প।


বন্ধুগণ,


আমাদের অনেক শতাব্দীর গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। ভারত যখন সমৃদ্ধ ছিল, একে ‘সোনার পাখি’ বলা হতো। ভারত যখন সম্পন্ন ছিল, তখন সর্বদা বিশ্বের কল্যাণের পথে চলেছে। সময় বদলে গেছে। দেশ দাসত্বের  শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়েছে, আমরা উন্নয়নের জন্যে বুভুক্ষু হয়ে ছিলাম।

আজ ভারত উন্নয়নের পথে সফল পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে, তখনও বিশ্বের কল্যাণের পথে অটল রয়েছে। স্মরণ করুন, এই শতাব্দীর শুরুতে যখন বিশ্ব ‘ওয়াই-২কে’ সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছিল, ভারতের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা তখন বিশ্বকে সেই সঙ্কট থেকে বের করে এনেছে। আজ আমাদের সম্পদ আছে, আমাদের সামর্থ্য আছে, আমাদের কাছে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মেধা আছে, আমরা শ্রেষ্ঠ পণ্য উৎপন্ন করবো, আমাদের উৎকর্ষ আরো বৃদ্ধি করবো, সরবরাহ শৃঙ্খলকে আরো আধুনিক করবো – এটা আমরা করতে পারি এবং আমরা অবশ্যই করবে।


বন্ধুগণ,


আমি নিজের চোখে কচ্ছের ভূমিকম্পের দিনগুলি দেখেছি। চারিদিকে শুধু ধ্বংস আর ধ্বংসাবশেষ। সব কিছু বিধ্বস্ত হয়ে গেছিল। এমন মনে হচ্ছিল, যেন কচ্ছ, মৃত্যুর চাদর মুড়িয়ে শুয়ে পড়েছে। সেই পরিস্থিতিতে কেউ ভাবতেও পারেনি যে, কখনও পরিস্থিতি বদলাতে পারবে। কিন্তু দেখতে দেখতে কচ্ছ উঠে দাঁড়িয়েছে। চলতে শুরু করেছে, কচ্ছ এগিয়ে গেছে।


এটাই আমাদের ভারতীয়দের সংকল্প শক্তি। আমরা যদি দৃঢ় সংকল্প করি, তাহলে কোনো লক্ষ্যই অসম্ভব নয়, কোনো পথই মুশকিল নয়। আর আজ তো চাহিদাও আছে, পথও আছে, তা হল ভারতকে আত্মনির্ভর করে তোলা। ভারতের কল্পনাশক্তি এমনই যে ভারত, আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে পারে।


বন্ধুগণ,


আত্মনির্ভর ভারতের এই সুন্দর ইমারত ৫টি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে। প্রথম স্তম্ভ, অর্থনীতি, একটি এমন অর্থনীতি, যা পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন নয়, ‘কোয়ান্টাম জাম্প’-এ সক্ষম হবে। দ্বিতীয় স্তম্ভ, পরিকাঠামো, একটি এমন পরিকাঠামো যা আধুনিক ভারতের পরিচয় হয়ে উঠবে। তৃতীয় স্তম্ভ, আমাদের ব্যবস্থা, একটি এমন ব্যবস্থা যা বিগত শতাব্দীর রীতি – নীতি নয়, একবিংশ শতাব্দীর স্বপ্ন সফল করার ক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থার ভিত্তিতে গড়ে তুলছে। চতুর্থ স্তম্ভ, আমাদের ডেমোগ্রাফি – বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রে আমাদের স্পন্দিত ডেমোগ্রাফি আমাদের শক্তি। আত্মনির্ভর ভারতের জন্যে আমাদের প্রাণশক্তির উৎস। পঞ্চম স্তম্ভ, চাহিদা – আমাদের অর্থনীতিতে চাহিদা এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের যে চক্র রয়েছে, যে শক্তি রয়েছে, তা সম্পূর্ণ ব্যবহার করার প্রয়োজন আছে।


দেশে চাহিদা বৃদ্ধির জন্যে, চাহিদা পূরণের জন্যে , আমাদের সরবরাহ শৃঙ্খলের সংশ্লিষ্ট সকলের ক্ষমতায়ণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের সরবরাহ শৃঙ্খল, আমাদের চাহিদা পূরণের সেই ব্যবস্থাকে আমরা শক্তিশালী করবো, যাতে আমাদের দেশের মাটির গন্ধ থাকবে, আমাদের শ্রমিকদের ঘামের গন্ধ থাকবে।


বন্ধুগণ,


করোনা সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রেখে নতুন সংকল্প নিয়ে আজ আমি একটি বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এই আর্থিক প্যাকেজ, ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’-এর গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়রূপে কাজ করবে।


বন্ধুগণ,


সম্প্রতি সরকার, করোনা সঙ্কটের মোকাবিলা করতে যে আর্থিক ঘোষণাগুলি করেছিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছিল, আজ যে আর্থিক প্যাকেজগুলি ঘোষণা করা হচ্ছে, সেগুলিকে একসঙ্গে জুড়লে, প্রায় ২০ লক্ষ কোটি টাকার হয়। এই প্যাকেজ ভারতে জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ।


এসবের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ, অর্থ ব্যবস্থার সৈনিকরা ২০ লক্ষ কোটি টাকার সাহায্য পাবেন, সহায়তা পাবেন। ২০ লক্ষ কোটি টাকার এই প্যাকেজ, ২০২০-তে দেশের উন্নয়ন যাত্রাকে, ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’কে একটি নতুন গতি দেবে। আত্মনির্ভর ভারতের সংকল্পকে বাস্তবায়িত করার জন্যে এই প্যাকেজে- জমি, মজুর, লিকুইডিটি এবং আইন(ল্যান্ড, লেবার, লিকুইডিটি এবং ল’স) - সমস্ত কিছুর উপর জোর দেওয়া হয়েছে।


এই আর্থিক প্যাকেজ, আমাদের কুটিরশিল্প, গৃহনির্মাণ শিল্প, আমাদের ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প, আমাদের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্যে কোটি কোটি মানুষের পেশার সম্পদ যারা আমাদের আত্মনির্ভর ভারতে সংকল্পের মজবুত ভিত্তি। এই আর্থিক প্যাকেজ দেশের সেই শ্রমিকের জন্যে, দেশের সেই কৃষকের জন্যে, যাঁরা প্রত্যেক পরিস্থিতিতে, প্রত্যেক ঋতুতে দেশবাসীর জন্যে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। এই আর্থিক প্যাকেজ আমাদের দেশের মধ্যবিত্তের জন্যে, যারা সততার সঙ্গে কর দেন, দেশের উন্নয়নে নিজেদের অবদান রাখেন, এই আর্থিক প্যাকেজ, ভারতের শিল্প জগৎ-এর জন্যে, যারা ভারতের আর্থিক সামর্থকে শীর্ষে পৌঁছে দেবার জন্যে সংকল্পবদ্ধ। আগামীকাল থেকে শুরু করে, আগামী কয়েকদিনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয়া, ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’-এর প্রেরণা থেকে রচিত, এই আর্থিক প্যাকেজ সম্পর্কে বিস্তারিত ঘোষণা করবেন।


বন্ধুগণ,


আত্মনির্ভর ভারত নির্মাণের জন্যে সাহসী সংস্কারের দায়বদ্ধতা নিয়ে এখন দেশের এগিয়ে যাওয়া অনিবার্য। আপনারাও অনুভব করেছেন, যে বিগত ৬ বছরে যে সব সংস্কার হয়েছে, সেগুলির ফলে আজ এই সঙ্কটের সময়ও ভারতের ব্যবস্থাগুলি  অধিক সক্ষম হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। না হলে কে ভাবতে পেরেছিল, যে কেন্দ্রীয় সরকার যত টাকা পাঠাবে, তা সম্পূর্ণরূপে গরীবের পকেটে, কৃষকের পকেটে পৌঁছবে ! কিন্তু এটা সম্ভব হয়েছে। তা-ও এমন সময় হয়েছে, যখন সমস্ত সরকারী দপ্তর বন্ধ, যানবাহন বন্ধ। জন-ধন, আধার, মোবাইল – জেএএম এর ত্রিশক্তির সঙ্গে যুক্ত এই সামান্য সংস্কারের ফল আমরা এখন দেখেছি। এখন সংস্কারের সেই পরিধিকে সম্প্রসারিত করতে হবে, নতুন উচ্চতা দিতে হবে।


কৃষি সংক্রান্ত সমগ্র সরবরাহ শৃঙ্খলে এই সংস্কার সম্পন্ন হবে। যাতে কৃষকের ক্ষমতায়ন হয়, আর ভবিষ্যতে করোনার মতো অন্য কোনো সঙ্কটে, কৃষিতে নূন্যতম প্রভাব পড়ে। এই সংস্কারগুলি যুক্তিযুক্ত কর ব্যবস্থা, সরল এবং স্পষ্ট নিয়মকানুন, উন্নত পরিকাঠামো, সমর্থ এবং সক্ষম মানব সম্পদ, আর মজবুত অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যে হবে। এই সংস্কারগুলি ব্যবসাকে উৎসাহিত করবে, বিনিয়োগকে আকর্ষণ করবে, আর আমাদের মেক-ইন-ইন্ডিয়ার সংকল্পকে ক্ষমতায়িত করবে।


বন্ধুগণ,


আত্মবল এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা গড়ে ওঠে। আত্মনির্ভরতা, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে কড়া প্রতিযোগিতার জন্যেও ভারতকে প্রস্তুত করে। আর আজ এটা সময়ের চাহিদা যে ভারত, প্রত্যেক প্রতিযোগিতায় জিতবে, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে বড় ভূমিকা পালন করবে। এসব কিছু মাথায় রেখে বুঝে এই আর্থিক প্যাকেজে অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে আমাদের সকল ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং উৎকর্ষও সুনিশ্চিত হবে।


বন্ধুগণ,


এই সঙ্কট এতো বড় যে বড় বড় রাষ্ট্র ব্যবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের দেশের গরীব ভাই – বোনদের সংঘর্ষ শক্তি, তাঁদের সংযম শক্তিকে দেখতে পেয়েছি। বিশেষ করে আমাদের ফেরিওয়ালা ভাই – বোনেরা, ঠেলাওয়ালা ভাই – বোনেরা, যারা রেল পথের ধারে জিনিস বিক্রি করেন, আমাদের শ্রমিক বন্ধুরা, যে ভাই – বোনেরা বাড়িতে বাড়িতে কাজ করেন, এই সঙ্কটকালে তারা অনেক তপস্যা করেছেন, ত্যাগ করেছেন। এমন কে আছেন, যারা তাদের অভাব টের পান নি!


এখন আমাদের কর্তব্য হল, তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, তাদের আর্থিক হিতে, কিছু বড় পদক্ষেপ গ্রহণ। একথা মাথায় রেখে গরীব, শ্রমিক, প্রবাসী মজুর, পশুপালক, আমাদের মৎসজীবী ভাই – বোনেরা, সংগঠিত ক্ষেত্র হোক বা অসংগঠিত -  প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষের জন্যে এই আর্থিক প্যাকেজে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।


বন্ধুগণ,


করোনা সঙ্কট আমাদের স্থানীয় উৎপাদন, স্থানীয় বাজার, স্থানীয় সরবরাহ শৃঙ্খলের গুরুত্ব বুঝিয়েছে। সঙ্কটের সময়ে স্থানীয় উৎপাদনই আমাদের চাহিদা পূরণ করেছে। ‘এই স্থানীয়ই আমাদের বাঁচিয়েছে’, স্থানীয় শুধু প্রয়োজন নয়, আমাদের দায়িত্ব, সময় আমাদের শিখিয়েছে, যে এই স্থানীয়কেই আমাদের জীবনের মন্ত্র করে তুলতে হবে।


আপনারা আজ যেগুলিকে ‘গ্লোবাল ব্র্যান্ড’ বলে জানেন, সেগুলিও কখন এরকম ‘লোকাল ছিল’। কিন্তু যখন সেখানকার মানুষ সেগুলি ব্যবহার করতে শুরু করেছেন, সেগুলি প্রচার করেছেন, সেগুলির ব্র্যান্ডিং করেছেন, সেগুলি নিয়ে গর্ব করেছেন, তখনই সে সব পণ্য ‘লোকাল’ থেকে ‘গ্লোবাল’ হয়ে উঠেছে। সেজন্যে আজ থেকে প্রত্যেক ভারতবাসীকে নিজেদের ‘লোকাল’-এর জন্যে ‘ভোকাল’ হতে হবে। শুধু স্থানীয় পণ্য কিনলেই হবে না, তার জন্যে সগর্বে প্রচারও করতে হবে।


আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের দেশ এরকম করতে পারবে। আপনাদের নানা প্রচেষ্টা, প্রত্যেকবারই আপনাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাকে আরো বাড়িয়েছে। আমি গর্বের সঙ্গে একটি বিষয়ে অনুভব করি, স্মরণ করি, যখন আমি আপনাদের কাছে দেশের খাদি কেনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম, একথা বলেছিলাম যে দেশের হস্ততাঁত কর্মীদের সাহায্য করুন ! আপনারা দেখুন, অত্যন্ত কম সময়ে খাদি এবং হস্ততাঁত উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা এবং বিক্রি রেকর্ড স্তরে পৌঁছে গেছে। শুধু তাই নয়, আপনারা সেগুলির বড় ব্র্যান্ড তৈরি করে দিয়েছেন। অত্যন্ত ছোট প্রচেষ্টা, কিন্তু কত ভালো পরিণাম পেয়েছি।


বন্ধুগণ,


সমস্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈজ্ঞানিকেরা বলছেন, যে করোনা দীর্ঘকাল আমাদের জীবনের অংশ হয়ে থাকবে। কিন্তু পাশাপাশি আমরা এমন হতে দিতে পারি না, যে আমাদের জীবন শুধুই করোনার চারপাশে সঙ্কুচিত হয়ে থেকে যায়। আমরা মাস্ক পড়বো, দুই গজ দূরত্ব পালন করবো। কিন্তু নিজেদের লক্ষ্যকে দূরে সরে যেতে দেব না।


সেই জন্যে লকডাউনের চতুর্থ পর্যায়, লকডাউন – ৪, সম্পূর্ণরূপে নতুন রঙ-রূপ সম্পন্ন হবে। নতুন, নিয়ম সম্পন্ন হবে। রাজ্যগুলি থেকে আমরা যে পরামর্শ পেয়েছি, সেগুলির ভিত্তিতে লকডাউন – ৪ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের ১৮ই মে-র আগে দেওয়া হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যে আমরা নিয়মগুলি পালন করে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করবো এবং এগিয়ে যাবো।


বন্ধুগণ,


আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘সর্বম আত্ম বশং সুখম’, অর্থাৎ যা আমাদের বশে রয়েছে, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তাই সুখ। আত্মনির্ভরতা আমাদের সুখ এবং সন্তোষ প্রদানের পাশাপাশি ক্ষমতায়িত করবে। একবিংশ শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দী করে তোলার আমাদের যে দায়িত্ব, তা ভারতকে আত্মনির্ভর করে তোলার প্রতিজ্ঞার মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে। এই দায়িত্ব ১৩০ কোটি ভারতবাসীর প্রাণ শক্তি থেকেই জ্বালানী পাবে। আত্মনির্ভর ভারতের এই যুগ, প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য নতুন প্রতিজ্ঞা হবে, নতুন পর্ব হবে।


এখন একটি নতুন প্রাণশক্তি, নতুন সংকল্প শক্তি নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যখন আচার-বিচার কর্তব্যভাবে পরিপূর্ণ থাকে, কর্মঠতার পরাকাষ্ঠা হয়ে ওঠে, দক্ষতার পুঁজি সঙ্গে থাকে, তখন ভারতের আত্মনির্ভর হয়ে ওঠাকে কে রুখতে পারবে ? আমরা, ভারতকে আত্মনির্ভর ভারত করে তুলতে পারবো। আমরা ভারতকে আত্মনির্ভর করে তুলবই। এই সংকল্প নিয়ে, এই বিশ্বাসের সঙ্গে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

আপনারা নিজেদের স্বাস্থ্য, নিজেদের পরিবার এবং কাছের মানুষদের প্রতি লক্ষ্য রাখুন। অনেক অনেক ধন্যবাদ।


অনেক অনেক ধন্যবাদ।
 

 



CG/SB/SFS



(Release ID: 1623441) Visitor Counter : 663