প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের দেদিয়াপাড়ায় ধরতি আবা ভগবান বিরসা মুণ্ডার ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জনজাতীয় গৌরব দিবসের অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন
প্রধানমন্ত্রী ৯,৭০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের বিভিন্ন পরিকাঠামো ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন
Posted On:
15 NOV 2025 5:28PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ গুজরাটের দেদিয়াপাড়ায় ধরতি আবা ভগবান বিরসা মুন্ডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জনজাতিয় গৌরব দিবসের অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। এই উপলক্ষে তিনি ৯,৭০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের বিভিন্ন পরিকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মা নর্মদার পবিত্র ভূমি আজ আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হচ্ছে একথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন যে ৩১শে অক্টোবর, ভারতের ঐক্য ও বৈচিত্র্য উদযাপনের জন্য এই একই স্থানে সর্দার প্যাটেলের ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছিলে এবং ভারত পর্বের সূচনা হয়েছিল। আজ ভগবান বিরসা মুন্ডার ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের মাধ্যমে আমরা ভারত পর্বের সমাপ্তি প্রত্যক্ষ করছি। তিনি এই উপলক্ষে ভগবান বিরসা মুন্ডার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং সমগ্র আদিবাসী অঞ্চলে স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রতকারী গোবিন্দ গুরুর আশীর্বাদও এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তিনি গোবিন্দ গুরুকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। তিনি আরও বলেন যে, কিছুক্ষণ আগে দেবমোগরা মাতার মন্দিরে যাওয়ার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছিল এবং আবারও তাঁর চরণে প্রণাম করেছেন।
দেদিয়াপাড়া এবং সাগবারা অঞ্চল সন্ত কবীরের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে তিনি সন্ত কবীরের ভূমি বারাণসীর সাংসদ এবং তাই সন্ত কবীর তাঁর জীবনে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। মঞ্চ থেকে তিনি সন্ত কবীরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রী মোদী বলেন যে আজ জাতীয় উন্নয়ন এবং আদিবাসী কল্যাণ সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। পিএম-জনমন এবং অন্যান্য প্রকল্পের আওতায়, এই অঞ্চলের এক লক্ষ পরিবারকে স্থায়ী ঘর প্রদান করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক একলব্য মডেল স্কুল এবং আশ্রম স্কুলের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান যে বিরসা মুন্ডা আদিবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রী গোবিন্দ গুরু চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট এবং পরিবহন সম্পর্কিত আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্পেরও সূচনা হয়েছে। তিনি এই উন্নয়ন এবং পরিষেবা উদ্যোগের জন্য সকলকে অভিনন্দন জানান।
২০২১ সালে ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জনজাতিয় গৌরব দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়েছিল একথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন যে, হাজার হাজার বছর ধরে আদিবাসী গর্ব ভারতের চেতনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যখনই দেশের সম্মান, আত্মমর্যাদা এবং স্বাধীনতা ঝুঁকির মুখে পড়ে, তখন আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে এর মোকাবিলা করে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম এই চেতনার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের অসংখ্য সাহসী ব্যক্তিত্ব স্বাধীনতার মশাল এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি আদিবাসী সমাজের অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিলকা মাঝি, রানী গাইদিনলিউ, সিধো-কানহো, ভৈরব মুর্মু, বুদ্ধু ভগত এবং আল্লুরি সীতারাম রাজুর নাম উল্লেখ করেন। তিনি মধ্যপ্রদেশের তান্ত্য ভিল, ছত্তিশগড়ের বীর নারায়ণ সিং, ঝাড়খণ্ডের তেলঙ্গা খাদিয়া, আসামের রূপচাঁদ কোনয়ার এবং ওড়িশার লক্ষ্মণ নায়ককে বীর ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁরা ভারতের স্বাধীনতার জন্য অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে আদিবাসী সম্প্রদায় অসংখ্য বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য তাদের রক্তপাত করেছে।
গুজরাটও আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেক বীর দেশপ্রেমীকের আবাসস্থল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ভগত আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী গোবিন্দ গুরু; পঞ্চমহলে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই করা রাজা রূপসিংহ নায়ক; এই আন্দোলনের সূচনাকারী মতিলাল তেজাওয়াত; এবং আদিবাসী সমাজে গান্ধীজির নীতিকথা তুলে ধরা দশরীবেন চৌধুরীর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে স্বাধীনতা সংগ্রামের অসংখ্য অধ্যায় আদিবাসীদের বীরত্বে সজ্জিত।
শ্রী মোদী স্বাধীনতা আন্দোলনে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অবদান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্বের উপর আরও জোর দেন। তিনি জানান যে দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি আদিবাসী জাদুঘর স্থাপন করা হচ্ছে। গুজরাটে, রাজপিপলায় ২৫ একর জমির উপর একটি বিশাল আদিবাসী জাদুঘর নির্মিত হচ্ছে। তিনি আরও জানান যে কয়েকদিন আগে তিনি ছত্তিশগড় সফর করেছিলেন এবং সেখানে শহীদ বীর নারায়ণ সিং আদিবাসী জাদুঘর উদ্বোধন করেছেন। তিনি রাঁচিতে যে কারাগারটিতে বিরসা মুন্ডাকে বন্দী করা হয়েছিল, সেই কারাগারটিকে একটি আদিবাসী জাদুঘরে রূপান্তরিত করার কথাও উল্লেখ করেন।
আদিবাসী ভাষা উন্নয়ন কেন্দ্রের জন্য শ্রী গোবিন্দ গুরু চেয়ার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করে শ্রী মোদী বলেন যে এই কেন্দ্রটিতে ভিল, গামিত, ভাসাভা, গড়াসিয়া, কোঙ্কানি, সাঁওতাল, রাথওয়া, নায়ক, ডাবলা, চৌধুরী, কোকনা, কুম্ভী, ওয়ারলি এবং ডোডিয়ার মতো আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপভাষাগুলি অধ্যয়ন করা হবে। এই সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত গল্প এবং গান সংরক্ষণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে আদিবাসী সমাজের কাছে হাজার হাজার বছরের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান রয়েছে। তিনি বলেন যে তাদের জীবনযাত্রা বিজ্ঞানের প্রতীক, তাদের গল্প দর্শনের প্রতিফলন ঘটায় এবং তাদের ভাষা পরিবেশের ধারণা বহন করে। শ্রী গোবিন্দ গুরু চেয়ার নতুন প্রজন্মকে এই সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করার কাজ করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনজাতিয় গৌরব দিবস আমাদের কোটি কোটি আদিবাসী ভাই-বোনের প্রতি করা অবিচারের কথাও মনে করিয়ে দেয়। তিনি বলেন যে, ছয় দশক ধরে দেশ শাসনকারী বিরোধী দল আদিবাসী সম্প্রদায়কে তাদের ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছে। আদিবাসী অঞ্চলগুলি অপুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবার অভাব, অপর্যাপ্ত শিক্ষা এবং দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার শিকার। এই ঘাটতিগুলি আদিবাসী অঞ্চলের প্রধান সমস্যা হওয়া সত্ত্বেও পূর্ববর্তী সরকারগুলি নিষ্ক্রিয় ছিল। আদিবাসী কল্যাণ সর্বদা তাদের দলের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করে, শ্রী মোদী আদিবাসী সম্প্রদায়ের মুখোমুখি হওয়া অবিচারের অবসান এবং উন্নয়নের সুফল তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য সরকারের অটুট সংকল্পের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীজির শাসনকালে, তাদের দল আদিবাসী বিষয়ক একটি পৃথক মন্ত্রক প্রতিষ্ঠা করেছিল বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, অটলজির শাসনকালের পর, পরবর্তী সরকার দশ বছর ধরে এই মন্ত্রককে অবহেলা করেছে। তিনি মন্তব্য করেন যে, ২০১৩ সালে তৎকালীন সরকার আদিবাসী কল্যাণের জন্য মাত্র কয়েক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন যে, তাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর, আদিবাসী স্বার্থের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্নবীকরণ করা হয়েছে এবং মন্ত্রকের বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে আদিবাসী জনগণের কল্যাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের বাজেট বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এক সময় গুজরাটের আদিবাসী অঞ্চলের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না একথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, আম্বাজি থেকে উমরগাম পর্যন্ত আদিবাসী অঞ্চলে একটিও বিদ্যালয়েও বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সুযোগ ছিল না। দেদিয়াপাড়া এবং সাগবাড়ার মতো অঞ্চলে ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ ছিল না। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি দেদিয়াপাড়া থেকেই কন্যা কেলাবনী মহোৎসব শুরু করেছিলেন বলে শ্রী মোদী মন্তব্য করেন। তিনি জানান যে, সেই সময় অনেক শিশু তার সঙ্গে দেখা করত - কেউ কেউ ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করত, কেউ কেউ ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করত। তিনি তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করতেন এবং তাদের আশ্বস্ত করতেন যে তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে যে বাধা রয়েছে তা দূর করা হবে।
এই পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন যে এর ফলস্বরূপ, গুজরাটের আদিবাসী অঞ্চলে এখন ১০,০০০ এরও বেশি স্কুল রয়েছে। গত দুই দশক ধরে, আদিবাসী এলাকায় কয়েক ডজন বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং কলা বিভাগের কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে তাদের সরকার আদিবাসী শিশুদের জন্য শত শত হোস্টেল তৈরি করেছে এবং গুজরাটে দুটি আদিবাসী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এই ধরনের প্রচেষ্টা এই অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। তিনি স্মরণ করেন যে, ২০ বছর আগে, শিশুরা তাদের চোখে স্বপ্ন নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করত - কেউ কেউ ডাক্তার, কেউ কেউ ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করত। আজ, সেই শিশুদের অনেকেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং গবেষক হয়ে উঠেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে সরকার আদিবাসী শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য দিনরাত কাজ করছে। গত পাঁচ থেকে ছয় বছরে, কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশে একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয়ের জন্য ১৮,০০০ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করেছে। মেয়েদের জন্য স্কুলগুলিতে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। ফলস্বরূপ, এই স্কুলগুলিতে আদিবাসী শিশুদের ভর্তির সংখ্যা ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আদিবাসী যুবসমাজকে সুযোগ দেওয়া হলে, তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের শক্তি পায় বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, তাদের সাহস, কঠোর পরিশ্রম এবং সামর্থ্য ঐতিহ্য থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। তিনি বলেন, বর্তমানে ক্রীড়াঙ্গন একটি স্পষ্ট উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে আদিবাসী যুবসমাজ বিশ্বজুড়ে ত্রি-বর্ণ রঞ্জিত পতাকার সম্মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তিনি বলেন, মেরি কম, থোনাকাল গোপী, দূতী চাঁদ এবং ভাইচুং ভুটিয়ার মতো নামগুলি সুপরিচিত হলেও, এখন প্রতিটি বড় প্রতিযোগিতায় আদিবাসী অঞ্চল থেকে উদীয়মান ক্রীড়াবিদদের দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল সম্প্রতি বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে ইতিহাস তৈরি করেছে এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক কন্যা এই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সরকার আদিবাসী অঞ্চলে নতুন প্রতিভা চিহ্নিত এবং প্রচারের জন্য ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে বলে তিনি জানান। শ্রী মোদী বলেন যে, আদিবাসী অঞ্চলে ক্রীড়াক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধাও সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।
তাদের সরকার বঞ্চিতদের অগ্রাধিকার দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী নর্মদা জেলাকে একটি প্রধান উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নর্মদাকে একসময় পিছিয়ে পড়া জেলা হিসেবে বিবেচনা করা হত। এই জেলাটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল এবং আজ এটি বিভিন্ন উন্নয়নের মাপকাঠিতে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এই রূপান্তর এই অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়কে ব্যাপকভাবে উপকৃত করেছে। শ্রী মোদী আরও বলেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কয়েকটি প্রকল্প সরাসরি আদিবাসী-অধ্যুষিত রাজ্য এবং বঞ্চিত শ্রেণীর জন্য চালু করা হয়েছে। বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য ২০১৮ সালে আয়ুষ্মান ভারত চালু করার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন যে এই প্রকল্পটি ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে শুরু হয়েছিল। বর্তমানে সারা দেশের কোটি কোটি আদিবাসী ভাই-বোনেরা এই প্রকল্পের আওতায় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন যে আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির উদ্যোগটিও আদিবাসী-অধ্যুষিত ছত্তিশগড় থেকে শুরু হয়েছিল এবং এটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করছে।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে তাদের সরকার বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে, এই বিষয়টি তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন যে স্বাধীনতার কয়েক দশক পরেও এমন কিছু অঞ্চল ছিল যেখানে বিদ্যুৎ, জল সরবরাহ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট বা হাসপাতালের সুবিধা ছিল না। এই অঞ্চলগুলির উন্নয়নের জন্য, ঝাড়খণ্ডের খুন্তি থেকে পিএম - জনমন প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। তিনি জানান যে এই উদ্যোগে ২৪,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধরতি আবা আদিবাসী গ্রাম উৎকর্ষ অভিযানও পিছিয়ে পড়া আদিবাসী গ্রামগুলিতে উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায় রচনা করছে। তিনি জানান যে সারা দেশের ৬০,০০০-এরও বেশি গ্রাম এই অভিযানে যোগ দিয়েছে। এই হাজার হাজার গ্রাম প্রথমবারের মতো পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয় জল পেয়েছে এবং শত শত গ্রাম টেলিমেডিসিন পরিষেবার সুবিধা পেয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এই অভিযানের আওতায় গ্রামসভাগুলিকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, কৃষি এবং জীবিকার উপর জোর দিয়ে গ্রামে সম্প্রদায়-চালিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী পরিশেষে বলেন যে এই অভিযান প্রমাণ করে যে দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে, সবচেয়ে অসম্ভব লক্ষ্যগুলিও অর্জন করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী বলেন যে সরকার আদিবাসী জীবনের প্রতিটি দিক মোকাবেলায় একটি বিস্তৃত পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে। তিনি জানান যে ক্ষুদ্র বনজ পণ্যের সংখ্যা ২০ থেকে প্রায় ১০০-তে উন্নীত করা হয়েছে এবং বনজ পণ্যের উপর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন যে সরকার সক্রিয়ভাবে মোটা শস্য - শ্রী অন্ন - প্রচার করছে যা আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ উপকারী। গুজরাটে চালু করা বনবন্ধু কল্যাণ যোজনার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্প আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে নতুন অর্থনৈতিক শক্তি প্রদান করেছিল। এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, এখন জনজাতিয় কল্যাণ যোজনা শুরু করা হচ্ছে।
সিকেল সেল রোগ দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রোগ মোকাবেলায় আদিবাসী অঞ্চলে ডিসপেনসারি, চিকিৎসা কেন্দ্র এবং হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সিকেল সেল রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দেশব্যাপী একটি অভিযান চলছে এবং এই উদ্যোগের আওতায় ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে ছয় কোটি আদিবাসী ভাইবোনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।
শিক্ষা সম্পর্কে শ্রী মোদী বলেন যে, নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতির আওতায় স্থানীয় ভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, ভাষাগত বাধার কারণে এতদিন পিছিয়ে থাকা আদিবাসী শিশুরা এখন স্থানীয় ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে এবং দেশের উন্নয়নে আরও সক্রিয়ভাবে অবদান রাখছে।
গুজরাটের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধ শৈল্পিক ঐতিহ্য তুলে ধরে, তাদের চিত্রকর্ম এবং শিল্পকর্ম অনন্য বলে মন্তব্য করেন শ্রী মোদী। তিনি এই শিল্পধারাগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া শিল্পী পরেশভাই রাথওয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং জানান যে সরকার তাকে পদ্ম পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন যে, যেকোনো সমাজের অগ্রগতির জন্য গণতন্ত্রে অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ অপরিহার্য। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হলো আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যদের শীর্ষ পদে উন্নীত করা এবং দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া। তিনি বলেন যে, বর্তমানে ভারতের রাষ্ট্রপতি একজন আদিবাসী মহিলা। তিনি আরও বলেন যে, তাদের দল এবং জোট দল ও সরকারে আদিবাসী নেতাদের শীর্ষ পদে উন্নীত করার জন্য ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছে। তিনি ছত্তিশগড়ে শ্রী বিষ্ণুদেব সাই, ওড়িশায় শ্রী মোহন চরণ মাঝি, অরুণাচল প্রদেশে শ্রী পেমা খান্ডু এবং নাগাল্যান্ডে শ্রী নেইফিউ রিওর উদাহরণ তুলে ধরেন, বলেন যে, বেশ কয়েকটি রাজ্যে আদিবাসী নেতাদের মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, অনেক রাজ্য বিধানসভায় আদিবাসী অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন যে, গুজরাটের শ্রী মাঙ্গুভাই প্যাটেল বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আরও বলেন যে, আসামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এখন তাদের মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের উন্নয়নে এই নেতাদের ভূমিকা অতুলনীয় এবং অসাধারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী বলেন যে, বর্তমানে দেশ 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ' মন্ত্রের শক্তি ধারণ করে আছে। এই মন্ত্র বছরের পর বছর ধরে কোটি কোটি মানুষের জীবনকে রূপান্তরিত করেছে, জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করেছে এবং দীর্ঘকাল ধরে অবহেলিত আদিবাসী সম্প্রদায়কে মূলধারায় নিয়ে এসেছে। ভগবান বিরসা মুন্ডার ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে, প্রধানমন্ত্রী সকলকে এই মন্ত্রের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করার আহ্বান জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, উন্নয়নে কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন যে, এটাই হবে ধরতি আবার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। তিনি বলেন যে, একসঙ্গে আমরা এগিয়ে যাব এবং একটি উন্নত ভারতের স্বপ্ন পূরণ করব এবং এই সংকল্পের সঙ্গে তিনি সকলকে জনজাতিয় গৌরব দিবসের শুভেচ্ছা জানান।
শ্রী মোদী আরও বলেন, জনজাতিয় গৌরব দিবস আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের প্রকৃত মর্ম বহন করে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আকাঙ্ক্ষাও ধারণ করে। তাই, সমগ্র ভারতে ১৫ নভেম্বর, ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী, জনজাতিয় গৌরব দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন যে, দেশাত্মবোধের সঙ্গে প্রোথিত হয়ে আমাদের নতুন শক্তি ও প্রাণশক্তি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত এবং গৌরবের নতুন শিখর অর্জন করা উচিত।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গুজরাটের রাজ্যপাল শ্রী আচার্য দেবব্রত, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেল।
প্রেক্ষাপট -
দেদিয়াপাড়ায় এই কর্মসূচি চলাকালীন, প্রধানমন্ত্রী এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়ন এবং এই অঞ্চলের গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী, পি এম জনজাতি আদিবাসী ন্যায় মহা অভিযান এবং ধরতি আবা জনজাতিয় গ্রাম উৎকর্ষ অভিযান এর অধীনে নির্মিত ১ লক্ষ বাড়ির গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য ৪২টি একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয় ( ইএমআরএস) উদ্বোধন করেন। এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী আদিবাসী অঞ্চলে যোগাযোগ উন্নত করার জন্য গুজরাটের ১৪টি আদিবাসী জেলার জন্য ২৫০টি বাসের সূচনা করেন।
SC/PM/AS
(Release ID: 2190458)
Visitor Counter : 4