প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘‘মন কি বাত’’ (১২৭ তম পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ
Posted On:
26 OCT 2025 11:40AM by PIB Kolkata
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। মন কি বাতে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই। গোটা দেশে এখন উৎসবের উল্লাস চলেছে। আমরা সবাই কিছুদিন আগে দীপাবলী উদযাপন করেছি আর এখন ছট্ পূজায় ব্যস্ত রয়েছেন বড় সংখ্যক মানুষজন। বাড়িতে-বাড়িতে ঠেকুয়া বানানো চলছে। নানা জায়গায় সেজে উঠছে ঘাট। বাজারে দারুণ জাঁকজমক। সর্বত্র শ্রদ্ধা, আত্মীয়তা আর পরম্পরার মিলন দেখা যাচ্ছে। ছটের ব্রত পালন করা মহিলারা যে সমর্পণ আর নিষ্ঠার সঙ্গে এই পর্বের জন্য প্রস্তুতি নেন তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক।
বন্ধুরা, ছটের মহাপর্ব সংস্কৃতি, প্রকৃতি আর সমাজের মধ্যে গভীর ঐক্যের প্রতিচ্ছবি। ছটের ঘাটে সমাজের সব শ্রেণী একসঙ্গে উপস্থিত হয়। এই দৃশ্য ভারতের সামাজিক ঐক্যের সবথেকে সুন্দর উদাহরণ। আপনি দেশ বা দুনিয়ার যে কোনও প্রান্তে থাকুন, সুযোগ পেলে ছট উৎসবে অবশ্যই অংশ নিন। এক অসামান্য অভিজ্ঞতার স্বাদ নিন নিজে। ছটি মাইয়াকে প্রণাম জানাই আমি। সব দেশবাসী বিশেষ করে বিহার, ঝাড়খণ্ড আর পূর্বাঞ্চলের মানুষদের ছট মহাপর্বের শুভকামনা জানাই।
বন্ধুরা, উৎসবের এই উপলক্ষে আমি আপনাদের সবার নামে একটি চিঠি লিখে নিজের মনের ভাবনা ভাগ করে নিয়েছিলাম। আমি চিঠিতে দেশের সেইসব সাফল্যের কথা বলেছি যার ফলে এবারের উৎসবের জাঁকজমক আগের থেকে বেশি হয়েছে। আমার চিঠির জবাবে দেশের অনেক নাগরিক তাঁদের বার্তা পাঠিয়েছেন আমাকে। সত্যিই, অপারেশন সিঁদুর প্রত্যেক ভারতীয়কে গর্বে পূর্ণ করেছে। এবার ওইসব এলাকাতেও আনন্দের দীপ জ্বালানো হয়েছে যেসব জায়গাকে এক সময় মাওবাদী আতঙ্কের বিভীষিকা ঢেকে রাখত। মানুষজন সেই মাওবাদী আতঙ্ককে শেকড় থেকে উপড়ে ফেলতে চায় যা তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎকে সঙ্কটময় করে তুলেছিল।
জিএসটি বচত উৎসব নিয়েও মানুষের মধ্যে প্রচুর উৎসাহ রয়েছে। এবার উৎসবের মধ্যে আর এক আনন্দের বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে। বাজারে স্বদেশী জিনিসপত্রের কেনাকাটা খুব ভালোভাবে বেড়েছে। মানুষজন আমাকে যেসব বার্তা পাঠিয়েছেন তাতে তাঁরা বলেছেন যে এবারে তাঁরা কোন-কোন স্বদেশী জিনিসপত্র কিনেছেন।
বন্ধুরা, আমি আমার চিঠিতে খাওয়ার তেল দশ শতাংশ কম ব্যবহার করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম, এই ব্যাপারেও সবাই খুব সদর্থক মনোভাব দেখিয়েছেন।
বন্ধুরা, স্বচ্ছতা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখার প্রয়াস, এই ব্যাপারেও অনেক বার্তা পেয়েছি আমি। আমি আপনাদের সঙ্গে দেশের আলাদা-আলাদা শহরের এমন ঘটনা ভাগ করে নিতে চাই যেগুলো অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক। ছত্তিশগড়ের অম্বিকাপুরে শহরের প্লাস্টিক আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য এক অভূতপূর্ব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অম্বিকাপুরে গার্বেজ কাফে চালানো হচ্ছে। এটা এমন একটা কাফে যেখানে প্লাস্টিক আবর্জনা নিয়ে গেলে ভরপেট খাবার খাওয়ানো হয়। যদি কোনও ব্যক্তি এক কিলোগ্রাম প্লাস্টিক নিয়ে যান তবে তাঁকে দুপুরবেলার বা রাতের খাবার দেওয়া হয় আর যদি কেউ আধ কিলোগ্রাম প্লাস্টিক নিয়ে যান তবে জলখাবার পান তিনি। এই কাফে চালায় অম্বিকাপুর মিউনিসিপাল কর্পোরেশন।
বন্ধুরা বেঙ্গালুরুতে ঠিক এরকমই দারুন কাজ করেছেন ইঞ্জিনিয়ার কপিল শর্মা। বলা হয় বেঙ্গালুরু হ্রদের শহর, আর কপিল জি এখানকার এই হ্রদগুলির পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন। কপিল-জি ও তার সঙ্গী-সাথীরা বেঙ্গালুরু এবং তার আশপাশের এলাকায় ৪০-টি জলকূপ এবং ৬টি জলাশয়ে পুনরায় প্রাণ সঞ্চার করেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তিনি তার এই লক্ষ্যে কর্পোরেট এবং স্থানীয় মানুষজনকেও সামিল করে নিয়েছেন।
তাঁর সংস্থা বৃক্ষরোপন কর্মসূচির সঙ্গেও যুক্ত। বন্ধুরা, অম্বিকাপুর এবং বেঙ্গালুরুর এই প্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত আমাদের দেখিয়ে দেয় যে প্রতিজ্ঞা দৃঢ় হলে পরিবর্তন আসতে বাধ্য।
বন্ধুরা, পরিবর্তন আনার এই প্রচেষ্টার আরো একটা উদাহরণ আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেবো। আপনারা সকলেই জানেন যে পাহাড় এবং সমতল অঞ্চলে যে বনভূমি থাকে, সেই বনভূমি মাটিকে ধরে রাখে; সমুদ্র উপকূলে ঠিক একইরকম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ম্যানগ্রোভ। ম্যানগ্রোভ সাগরের নোনা জল এবং কাদা-ভূমিতে জন্মায় এবং এটা সামুদ্রিক বাস্তু-তন্ত্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুনামি বা সাইক্লোনের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় ম্যানগ্রোভ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তা প্রমানিত।
বন্ধুরা, গুজরাতের বন-বিভাগ ম্যানগ্রোভের এই গুরুত্বের কথা খেয়াল রেখে একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে বন বিভাগের টিম আমেদাবাদের কাছাকাছি ধোলেরা'য় ম্যানগ্রোভ লাগানোর কাজ শুরু করেছিল, আর এখন ধলেরার তীরে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর অঞ্চল জুড়ে ম্যানগ্রোভ বিস্তার লাভ করেছে। এই ম্যানগ্রোভের প্রভাব এখন সমগ্র অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে। সেখানকার ইকো-সিস্টেমে ডলফিনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। কাঁকড়া এবং অন্যান্য জলচর প্রাণীর সংখ্যাও আগের তুলনায় বেড়েছে। শুধু তাই নয় এখন এখানে পরিযায়ী পাখিরাও প্রচুর সংখ্যায় আসছে।
এর ফলে সেখানকার পরিবেশের উপর একটা ভালো প্রভাব তো পড়েছেই একই সঙ্গে ধোলেরার মৎস্যজীবীরাও লাভবান হচ্ছেন।
বন্ধুরা, ধোলেরা ছাড়া গুজরাতের কচ্ছ-তেও ম্যানগ্রোভ লাগানোর কাজ খুব দ্রুততার সঙ্গে চলছে, সেখানকার 'কোরী ক্রীক'-এ Mangrove Learning Centre তৈরী করা হয়েছে।
বন্ধুরা, গাছপালা ও বৃক্ষর এটাই তো বিশেষত্ব। যে কোনো স্থানেই তা প্রত্যেক জীবের উপকারে আসে। এই জন্য আমাদের পুঁথি-পত্রে বলা হয়েছে-
"ধন্য মহীরূহ্ যেভ্যোয়,
নিরাশাং য়ান্তি নার্থিনঃ।"
অর্থাৎ, ধন্য সেই বৃক্ষ ও বনস্পতি, যারা কাউকেই নিরাশ করে না। আমাদেরও উচিত যে এলাকাতেই থাকি না কেন, অবশ্যই বৃক্ষরোপণ করা। 'এক পেড় মাকে নাম' এই কর্মসূচিটিকে আমাদের আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী আপনারা কি জানেন যে মন কি বাত অনুষ্ঠানে আমরা যে সব বিষয় নিয়ে কথা বলি, সেখানে আমার জন্য সবচেয়ে সুখকর কোনটা হয়? তাহলে আমি এই বিষয়ে এটাই বলতে পারি যে মন কি বাত অনুষ্ঠানে আমরা যে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করি সেখান থেকে মানুষ সমাজের জন্য কিছু ভালো, কিছু সৃজনশীল কাজের অনুপ্রেরণা পায়। এতে আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের দেশের অনেক বিষয় উঠে আসে।
বন্ধুরা আপনাদের মধ্যে অনেকেরই হয়তো মনে আছে যে প্রায় ৫ বছর আগে আমি এই অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রজাতির কুকুরদের নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমি দেশবাসীর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তারক্ষায় নিযুক্ত সৈনিকদেরও অনুরোধ করেছিলাম যে তারা যেন ভারতের নিজস্ব প্রজাতির কুকুরদের কাজে লাগান কারণ তারা আমাদের পরিবেশ এবং পরিস্থিতির সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। আমার এটা বলতে খুব আনন্দ হচ্ছে যে আমাদের নিরাপত্তা রক্ষায় নিযুক্ত সংস্থাগুলি এই লক্ষ্যে যথেষ্ট প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা করেছে। বিএসএফ এবং সিআরপিএফ নিজেদের ব্যাটালিয়নে ভারতীয় প্রজাতির কুকুরের সংখ্যা বাড়িয়েছে। কুকুরদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বিএসএফের ন্যাশনাল ট্রেনিং সেন্টার গোয়ালিয়ারের টেকনপুরে অবস্থিত। এখানে উত্তরপ্রদেশের রামপুরহাউন্ড, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের মুধোলহাউন্ডদের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। এই সেন্টারে প্রশিক্ষকরা প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী শক্তির সাহায্যে এই ধরনের কুকুরদের আরও ভালো ভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ভারতীয় প্রজাতির কুকুরদের জন্য ট্রেনিং ম্যানুয়াল নতুন করে লেখা হয়েছে ডগ ব্রিডিং অ্যান্ড ট্রেনিং স্কুলে মোঙ্গ্রেলস, মুধোলহাউন্ড, কোম্বাই এবং পান্ডিকোনার মতো ভারতীয় প্রজাতির কুকুরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বন্ধুরা গত বছর লখনৌয়ে অল ইন্ডিয়া পুলিস ডিউটি মিট আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সময় রিয়া নামের ভারতীয় প্রজাতির একটি কুকুর তার প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করায়। এটি একটি মুধোল হাউন্ড যাকে বিএসএফের তরফে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। রিয়া এখানে অনেক বিদেশি প্রজাতির কুকুরকে পেছনে ফেলে প্রথম পুরস্কার জিতেছিল।
বন্ধুরা এখন বিএসএফ নিজেদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরদের বিদেশী নামে ডাকার পরিবর্তে ভারতীয় নাম দেওয়ার পরম্পরা শুরু করেছে। আমাদের এখানকার দেশী প্রজাতির কুকুরেরা আশ্চর্য সাহসের পরিচয় দিয়েছে। গতবছর ছত্তিশগড়ের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় অভিযান চালানোর সময় সিআরপিএফ এর একটি ভারতীয় প্রজাতির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ৮ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক উদ্ধার করেছিল। বিএসএফ এবং সিআরপিএফ এই লক্ষ্যে যে প্রচেষ্টা করেছে তার জন্য আমি ওদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। তবে আমি ৩১ শে অক্টোবরের জন্য অপেক্ষা করছি।ওই দিন লৌহ-পুরুষ সর্দার প্যাটেলের জন্মজয়ন্তী। এই উপলক্ষে প্রতিবছর গুজরাটের একতানগরের স্ট্যাচু অফ ইউনিটির কাছে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এখানেই একতা দিবসের প্যারেড আয়োজিত হয় এবং এই প্যারেডে আবার ভারতীয় প্রজাতির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরদের বিশেষ ক্ষমতার প্রদর্শনী হবে। আপনারাও সময়-সুযোগ করে এটা অবশ্যই দেখবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সরদার প্যাটেলের ১৫০ তম জন্মদিন সমগ্র দেশের জন্য একটি বিশেষ দিন। আধুনিক সময়ে দেশের মহান ব্যক্তিদের মধ্যে সর্দার প্যাটেল একজন। ওর বিরাট ব্যক্তিত্বে অনেক গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। উনি একজন অত্যন্ত প্রতিভা বান ছাত্র ছিলেন। ভারত এবং ব্রিটেন দুই জায়গাতেই পড়াশোনাতে উনি উল্লেখযোগ্য মেধার পরিচয় রেখেছেন। তাঁর সময়কালের সফলতম উকিলদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। ওকালতিতে উনি আরো খ্যাতি অর্জন করতে পারতেন কিন্তু গান্ধীজীর অনুপ্রেরণায় উনি নিজেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে পুরোপুরি সমর্পণ করে দেন। খেড়া সত্যাগ্রহ থেকে বোরসদ সত্যাগ্রহ পর্যন্ত বহু আন্দোলনে ওর অবদান আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। আহমেদাবাদ মিউনিসিপালিটি-র প্রধান রূপে তার কার্যকাল এক ঐতিহাসিক সময়। স্বচ্ছতা এবং সুশাসনকে উনি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রূপে তাঁর অবদানের কারণে আমরা সর্বদা তার কাছে ঋণী হয়ে থাকবো।
বন্ধুরা সর্দার পাটেল ভারতবর্ষের bureaucratic framework- কে এক মজবুত ভিত প্রদান করেন। দেশের একতা এবং অখন্ডতার জন্য তিনি অসামান্য প্রচেষ্টা করেন। আপনাদের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ ৩১ শে অক্টোবর সর্দার সাহেবের জন্মদিনে সমগ্র দেশে আয়োজিত হতে চলা run for unity তে আপনিও যোগদান করুন। একলা নয় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যোগদান করুন। একতার এই দৌড়কে যুব চেতনার এক সুযোগ হয়ে উঠতে হবে। যা একতাকে মজবুত করবে।
ওই মহান মনীষী, যিনি ভারতকে একতার সূত্রে বেঁধেছিলেন, তাঁর প্রতি এটাই হবে আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, চায়ের সঙ্গে আমার যোগ তো আপনারা সকলেই জানেন, কিন্তু আমি আজকে ভাবছি 'মন কি বাতে' একটু কফি নিয়ে আলোচনা করা যায় না? আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে গত বছর আমরা 'মন কি বাতে' আরাকু কফি নিয়ে কথা বলেছিলাম। কিছুদিন আগে ওড়িশার অনেক মানুষ আমাকে কোরাপুট কফি নিয়ে তাঁদের চিন্তা ভাবনা আমাকে জানিয়েছেন। তাঁরা চিঠি লিখে 'মন কি বাত' এ কোরাপুট কফি নিয়ে আলোচনা জন্য আমাকে অনুরোধ করেছেন।
বন্ধুরা, আমাকে বলা হয়েছে যে কোরাপুট কফি স্বাদে অতুলনীয়। স্বাদ ছাড়াও এই কফির চাষ থেকেও মানুষ অনেক লাভবান হচ্ছেন। কোরাপুটে কিছু এমন লোক আছেন যাঁরা নিজেদের শখে কফি চাষ করছেন। Corporate world এ বেশ ভালো চাকরি করতেন , কিন্তু কফি তাঁদের এতটাই প্রিয় যে তাঁরা এই field এ এসেছেন এবং সফলতার সঙ্গে এতে কাজ করছেন। এমন কিছু মহিলাও আছেন, কফি থেকে যাঁদের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে, জীবন সুখময় হয়েছে। কফি থেকে তাঁদের সম্মান এবং সমৃদ্ধি প্রাপ্তি হয়েছে। এটা সত্যি কথা এই যে কোরাপুট কফি অত্যন্ত সুস্বাদু। এটি সত্যিই ওড়িশার গৌরব।
বন্ধুরা, সমগ্র বিশ্বে, ভারতীয় কফি খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। কর্নাটকের চিকমঙ্গলুরু হোক বা কুর্গ বা হাসান । তামিলনাড়ুর পুলনি, শেবরায়। নীলগিরি আর আন্নামালাই অঞ্চল বা কর্ণাটক তামিলনাড়ু সীমানায় বিলিগিরি অঞ্চল অথবা কেরালায় ওয়ায়নাড, ত্রাবাঙ্কর এবং মালাবার অঞ্চল ভারতীয় কফির বিবিধতা লক্ষ্যণীয়। আমাকে জানানো হয়েছে যে আমাদের উত্তর- পূর্ব ক্ষেত্রেও কফির চাষে অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। এর ফলে ভারতীয় কফির পরিচয় সমগ্র বিশ্বে আরো সুদৃঢ় হচ্ছে।। সেই কারণেই যাঁরা কফি পছন্দ করেন তাঁরা বলেন।
কফির মধ্যে ভারতীয় কফি শ্রেষ্ঠ। এটা ভারতে তৈরি হয় এবং সারা বিশ্ব একে ভালোবাসে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবার 'মন কি বাত' এ এমন একটা বিষয় নিয়ে কথা হবে যেটা আমাদের মনের খুবই কাছের। এই বিষয়টা হচ্ছে আমাদের জাতীয় গান। ভারতের জাতীয় গান মানে, বন্দেমাতরম। এমন একটা গান যার প্রথম শব্দ আমাদের মনে উদ্বেলিত ভাবনাকে জাগিয়ে তোলে। বন্দেমাতরম এই এক শব্দের কত রকম অর্থ আছে, কতটা শক্তি আছে! সহজ অর্থে এটি আমাদের ভারত মাতার বাৎসল্য স্নেহের অনুভূতি দেয়। এটি ভারত মাতার সন্তান রূপে আমাদের দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলে। দুর্যোগপূর্ণ সময়ে বন্দেমাতরম ধ্বনি ১৪০ কোটি ভারতীয়র মধ্যে ঐক্যের শক্তি জাগ্রত করে।
বন্ধুরা, রাষ্ট্রভক্তি, মা ভারতীর প্রতি প্রেম, এ যদি এক বর্ণনাতীত ভাবনা হয়, তবে সেই অমূর্ত ভাবনাকে সাকার স্বর দিতে পারার মতো গান এই 'বন্দেমাতরম'। এটি রচনা করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কয়েক শতাব্দীর গোলামীতে বিধ্বস্ত ভারতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। 'বন্দেমাতরম' উনবিংশ শতাব্দীতে লেখা হয়ে থাকলেও তার ভাবনার সঙ্গে যোগ রয়েছে ভারতের হাজার বছরের পুরোনো অমর চেতনার। বেদ যে ভাবকে "মাতা ভুমিঃ পুত্র অহং পৃথিব্যাঃ" (Earth is the mother and I am her child) বলে ভারতীয় সভ্যতার ভিত গড়ে তুলেছিল। বঙ্কিমচন্দ্র 'বন্দেমাতরম' লিখে মাতৃভূমি ও তার সন্তানদের মধ্যে এই সম্পর্ককে সারা বিশ্বে যেন এক মন্ত্রের মতো পরিব্যপ্ত করে দিলেন।
বন্ধুরা, আপনারা হয়ত ভাবছেন আমি হঠাৎ বন্দেমাতরম নিয়ে এত কথা কেন বলছি। আসলে কিছুদিনের মধ্যেই, ৭ নভেম্বর আমরা বন্দেমাতরমের সার্ধ্বশতবর্ষ উদযাপন করতে চলেছি। ১৫০ বছর আগে 'বন্দেমাতরম' রচনা করা হয়েছিল, এবং ১৮৯৬ সালে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম এই গানটি গেয়েছিলেন।
বন্ধুরা, এই 'বন্দেমাতরম' গানে আমাদের কোটি কোটি দেশবাসী অপার, উদ্বেলিত রাষ্ট্রপ্রেম উপলব্ধি করেছেন। প্রতিটি প্রজন্ম 'বন্দেমাতরম'-এর প্রতিটি শব্দে ভারতের এক জীবন্ত মনোরম স্বরূপের প্রকাশ দেখেছে।
সুজলাং সুফলাং মলয়জ শীতলাং,
শস্যশ্যামলাং মাতরম!
বন্দে মাতরম!
আমাদের এইরকম ভারতই গড়ে তুলতে হবে। 'বন্দেমাতরম' আমাদের এই প্রয়াসে সততই প্রেরণা হয়ে উঠবে। এইজন্যেই বন্দেমাতরমের এই সার্ধ্বশতবর্ষটিকেও স্মরণীয় করে রাখতে হবে। আগামী প্রজন্মের জন্যে ঐতিহ্যের এই প্রবাহকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আগামী দিনগুলিতে 'বন্দেমাতরম'কে কেন্দ্র করে বহু অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। আমি চাইব, আমরা সকল দেশবাসী 'বন্দেমাতরম'-এর গৌরবগাথাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রয়াসী হই। আপনারা আমাকে এব্যাপারে আপনাদের পরামর্শ পাঠান, 'হ্যাশট্যাগ বন্দেমাতরম ১৫০'এর সঙ্গে । # VandeMatram১৫০। আমি আপনাদের পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করব, এবং আমরা সবাই এই সময়টিকে ঐতিহাসিক করে তোলার জন্য কাজ করে যাব।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, সংস্কৃতের কথা শুনলেই আমাদের মন এবং মস্তিষ্কে যে ভাবনাগুলি এসে পড়ে, তা হল, আমাদের ধর্মগ্রন্থ, বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, শাস্ত্র, প্রাচীন জ্ঞান বিজ্ঞান, অধ্যাত্ম এবং দর্শন। কিন্তু এক সময়ে, এসবের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃত ছিল কথোপকথনেরও ভাষা। সে যুগে অধ্যয়ন এবং গবেষণা সংস্কৃতেই করা হত।
সংস্কৃত ভাষাতেই নাটকের মঞ্চায়ন হত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, পরাধীনতার সময়কালে, এবং স্বাধীনতার পরেও সংস্কৃত ভাষা দীর্ঘদিন ধরেই উপেক্ষার শিকার হয়ে এসেছে। এই কারণেই তরুণ প্রজন্মের কাছে সংস্কৃতের আকর্ষণও ক্রমশই কমে এসেছে। কিন্তু বন্ধুরা , এখন সময় বদলাচ্ছে, সেইসঙ্গে সংস্কৃতেরও সময় পরিবর্তন হচ্ছে। সংস্কৃতি এবং সামাজিক মাধ্যমের এই দুনিয়া সংস্কৃত ভাষাকেও নতুন প্রাণবায়ু জুগিয়ে চলেছে। ইদানিং সংস্কৃতকে নিয়ে তরুণদের অনেকেই খুব আকর্ষণীয় কাজকর্ম করছেন। আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় গেলে বেশ কিছু রিলস দেখতে পাবেন, যেখানে তরুণদের সংস্কৃত ভাষায়, বা সংস্কৃতের সম্পর্কে কথাবার্তা বলতে দেখা যাবে। অনেকে তো নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলে সংস্কৃত শেখাচ্ছেনও। এমনই একজন যুবক কনটেন্ট ক্রিয়েটর হলেন ভাই যশ সালুঙ্কে। যশের বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি কনটেন্ট ক্রিয়েটারও বটে আবার সেইসঙ্গে ক্রিকেটারও। সংস্কৃতে কথা বলতে বলতে তাঁর ক্রিকেট খেলার রিল দর্শকদের দারুন পছন্দ হয়েছে। আপনারা শুনুন –
Audio:-
বন্ধুরা, কমলা ও জাহ্নবী - এই দুই বোনের কাজও চমৎকার। এই দুই বোন অধ্যাত্মবাদ, দর্শন ও সঙ্গীত বিষয়ক কনটেন্ট বানায়। ইনস্টাগ্রামে আরো এক যুবকের চ্যানেল আছে - "সংস্কৃত ছাত্রোহম"। এই চ্যানেল যে যুবাবন্ধুরা চালান ,তারা সংস্কৃত সম্বন্ধীয় তথ্য তো দেনই, পাশাপাশি সংস্কৃতে হাস্যরসের video বানান। সংস্কৃতে এই ধরনের video-ও তরুণ প্রজন্ম খুব পছন্দ করে। আপনাদের মধ্যে অনেক বন্ধুই সমষ্টির video-ও নিশ্চয়ই দেখেছেন। সমষ্টি সংস্কৃতে নিজের গানগুলি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রস্তুত করে। আরেক যুবক আছেন -
ভাবেশ ভীমনাথনি। ভাবেশ সংস্কৃত শ্লোক, আধ্যাত্মিক দর্শন ও সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলে।
বন্ধুরা, ভাষা যেকোনো সভ্যতার মূল্য ও পরম্পরার বাহক। সংস্কৃত এই কর্তব্য হাজার হাজার বছর ধরে পালন করে এসেছে। এটা খুবই আনন্দের যে এখন সংস্কৃতের জন্যও কিছু যুবা নিজ কর্তব্য পালন করছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবার আমি আপনাদের একটু ফ্ল্যাশব্যাকে নিয়ে যাব। আপনারা কল্পনা করুন বিংশ শতকের সেই সূচনাকাল । তখন বহু দূর পর্যন্ত স্বাধীনতার কোন আশা নজরে আসছিল না। সমগ্র ভারতে ইংরেজরা শোষণের সব সীমা পার করেছিল, আর সেই সময়ে হায়দ্রাবাদের দেশপ্রেমী মানুষদের প্রতি দমন পীড়ন আরো ভয়ানক ছিল। তারা ক্রূর ও নির্দয় নিজামের অত্যাচার সহ্য করতেও বাধ্য হচ্ছিলেন। দরিদ্র, বঞ্চিত ও জনজাতি সম্প্রদায়ের ওপর তো অত্যাচারের কোন সীমাই ছিল না। তাদের জমি ছিনিয়ে নেওয়া হতো, একইসঙ্গে বড় অংকের করও ধার্য করা হতো। এমনকি যদি সেই অন্যায়ের কেউ প্রতিবাদ করতো তাহলে তার হাতও কেটে নেওয়া হতো।
বন্ধুরা , এই কঠিন সময়ে প্রায় কুড়ি বছরের এক নব্যযুবা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। আজ এক বিশেষ কারণে আমি সেই যুবকের বিষয়ে আলোচনা করছি। তাঁর নাম বলার আগে আমি তার বীরত্বের কথা আপনাদের বলব। বন্ধুরা, সেই সময় যখন নিজামের বিরুদ্ধে একটা শব্দ বলাও অপরাধ ছিল,তখন সেই যুবক নিজামের এক পদস্থ কর্মচারী সিদ্দিকীকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। নিজাম সিদ্দিকীকে কৃষকদের ফসল বাজেয়াপ্ত করার জন্য পাঠিয়েছিল, কিন্তু অত্যাচারবিরোধী সেই সংঘর্ষে ওই যুবক সিদ্দিকীকে মৃত্যুর ঠিকানায় পৌঁছে দেন এবং তিনি গ্রেফতারি এড়াতেও সফল হন। নিজামের অত্যাচারী পুলিশের থেকে বেঁচে সেই যুবক সেখান থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অসমে পৌঁছন।
বন্ধুরা, আমি যেই মহান মনিষীর কথা বলছি তার নাম কোমরম ভীম (Komaram Bheem)। এই ২২শে অক্টোবর তার জন্মজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে। কোমরম ভীমের আয়ু খুব দীর্ঘ ছিল না। তিনি মাত্র 40 বছর জীবিত ছিলেন, কিন্তু নিজের জীবদ্দশায় তিনি অগণিত মানুষের, বিশেষ করে আদিবাসী সমাজের হৃদয়ে অনপনেয় ছাপ রেখে গিয়েছেন। নিজামের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করছিলেন, সেই সব মানুষদের মধ্যে তিনি নতুন শক্তির সঞ্চার করেন। তাঁর রণনৈতিক কৌশলের জন্যও তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। নিজামের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে তিনি খুব বড় বিপদ হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৪০ এ নিজামের লোকজন তাঁকে হত্যা করে। তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ তারা যেন ওঁর সম্বন্ধে যত বেশি সম্ভব জানার চেষ্টা করে।
কোমারম ভীমজি কে আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই। উনি চিরকাল মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
বন্ধুরা, আগামী মাসের ১৫ তারিখ আমরা ‘জনজাতীয় গৌরব দিবস’ উদযাপন করব। এই দিনটি ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মতিথির শুভক্ষণ। আমি ভগবান বিরসা মুন্ডার প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই। দেশের স্বাধীনতার জন্য, জনজাতি সম্প্রদায়ের অধিকারের জন্য উনি যে কাজ করেছেন তা অতুলনীয়। এটা আমার জন্য সৌভাগ্যের বিষয় যে আমি ঝাড়খণ্ডের ভগবান বিরসা মুন্ডার গ্রাম উলিহাতু পরিদর্শন করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি ঐ স্থানের মাটি আমার কপালে লাগিয়ে প্রণাম জানিয়েছিলাম। ভগবান বিরসা মুন্ডাজি এবং কোমারম ভীমের মতো, আমাদের জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও অনেক মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আমার অনুরোধ যে আপনারা ওঁনাদের সম্পর্কে অবশ্যই পড়ুন। আমার প্রিয় দেশবাসী, "মন কি বাত" এর জন্য আমি আপনাদের কাছ থেকে অসংখ্য বার্তা পাই। এই বার্তাগুলির মধ্যে অনেকেই তাঁদের চারপাশে প্রতিভাশালী ব্যক্তিত্বদের সম্পর্কে আলোচনা করে থাকেন। আমি বার্তা গুলি পড়ে খুব আনন্দিত হই যে আমাদের ছোট শহর, শহরতলী এবং গ্রামেও উদ্ভাবনী ধারণার ওপর কাজ হচ্ছে। যদি আপনার জানা এমন ব্যক্তি বা সংগঠন থাকে, যারা সেবার মনোভাব নিয়ে সমাজকে পরিবর্তনের কাজে নিয়োজিত, তাহলে অবশ্যই আমাকে জানান।
আমি আপনাদের বার্তার জন্য সর্বদা অপেক্ষা করে থাকব । আগামী মাসে, আমি, ‘মন কি বাত’ এর আরও একটি পর্বে কিছু নতুন বিষয় নিয়ে মিলিত হব , ততক্ষণ পর্যন্ত আমি বিদায় নিচ্ছি। আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
(Release ID: 2182582)
Visitor Counter : 22
Read this release in:
Punjabi
,
Telugu
,
Manipuri
,
Assamese
,
English
,
Urdu
,
Marathi
,
हिन्दी
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Kannada
,
Malayalam