প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আইএনএস বিক্রান্ত-এ দেওয়ালি উদযাপন করলেন

Posted On: 20 OCT 2025 12:53PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২০ অক্টোবর ২০২৫

 

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ আইএনএস বিক্রান্ত-এ চেপে দেওয়ালি উদযাপনের সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর আধিকারিকদের উদ্দেশে ভাষণ দন। আজ একটি উল্লেখযোগ্য দিন, একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত এবং একটি উল্লেখযোগ্য দৃশ্য বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, একদিকে বিশাল সমুদ্র, অন্যদিকে মাদার ইন্ডিয়ার সাহসী সেনাদের প্রবল শক্তি। তিনি বলেন, যখন একটা দিক অসীম দিগন্ত এবং অনন্ত আকাশ দেখাচ্ছে, তখন অন্যদিকে আইএনএস বিক্রান্ত-এর বিপুল শক্তি প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, সমুদ্রে সূর্যের ঝিকিমিকি সাহসী সেনাদের দীপাবলিতে জ্বালানো প্রদীপের মতো, আলোর ঐশ্বরিক মালা। তিনি ভারতীয় নৌবাহিনীর সাহসী সেনাদের মধ্যে দেওয়ালি উদযাপন করতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

 

আইএনএস বিক্রান্ত-এ একটি রাত কাটানো স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই অভিজ্ঞতা ভাষায় বর্ণনা করা খুব শক্ত। আইএনএস বিক্রান্ত-কে যখন জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়, সেই মুহূর্তটি স্মরণ করে শ্রী মোদী বলেন, তিনি সেই সময় বলেছিলেন – বিক্রান্ত মহান, প্রবল, অভিনব এবং ব্যতিক্রমী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিক্রান্ত একটা যুদ্ধ জাহাজই নয়, এটা একবিংশ শতাব্দীতে ভারতের কঠোর পরিশ্রম, প্রতিভা এবং দায়বদ্ধতার প্রমাণ।” তিনি জানান, ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন পতাকা নিয়েছে নৌ বাহিনী।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আইএনএস বিক্রান্ত আজ দাঁড়িয়ে আছে আত্মনির্ভর ভারত এবং মেড ইন ইন্ডিয়ার শক্তিশালী প্রতীক রূপে।” সম্পূর্ণ দেশজ প্রযুক্তিতে তৈরি আইএনএস বিক্রান্ত যখন সমুদ্রের জল কেটে এগিয়ে যায় তখন ভারতের সামরিক শক্তিমত্তার প্রকাশ ঘটে। বিক্রান্ত নামটি কয়েক মাস আগে পাকিস্তানের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএনএস বিক্রান্ত যুদ্ধ জাহাজটির নামটিই শত্রুর স্পর্ধা শেষ করতে যথেষ্ট।

 

প্রধানমন্ত্রী এই উপলক্ষে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে বিশেষ অভিবাদন জানান। তিনি বলেন, যেভাবে তিন বাহিনী ভয় ধরিয়ে দিয়েছে, দক্ষতা দেখিয়েছে, সাহস দেখিয়েছে এবং ব্যতিক্রমী সমন্বয় প্রদর্শন করেছে তাতে বাধ্য হয়ে পাকিস্তান অপারেশন সিঁদুরের সময় দ্রুত আত্মসমর্পণ করে।

 

শ্রী মোদী বলেন, যখন সামনে শত্রু এবং যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী, তখন যে পক্ষ স্বাধীন ভাবে লড়াইয়ের ক্ষমতা রাখে তারই সুবিধা হয়। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর শক্তিশালী এবং স্বনির্ভর হওয়া প্রয়োজনীয়। গত এক দশকে ভারতের বাহিনী দ্রুত আত্মনির্ভর হওয়ার পথে এগিয়েছে। কয়েক হাজার রকম জিনিস আর আমদানি করতে হচ্ছে না, দেশেই তৈরি হচ্ছে। গত ১১ বছরে ভারতে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উদ্ভাবন তিন গুণ বেড়েছে। গতবছর ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৪ থেকে ভারতীয় জাহাজ কারখানা থেকে দেশজ প্রযুক্তিতে তৈরি ৪০-টি যুদ্ধজাহাজ এবং ডুবজাহাজ নৌবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ব্রহ্মস এবং আকাশ-এর মতো ক্ষেপণাস্ত্র অপারেশন সিঁদুরের সময় প্রমাণ করেছে তাদের সক্ষমতা। সারা বিশ্বের একাধিক দেশ এখন এই ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানিকারকদের অন্যতম হয়ে ওঠা ভারতের লক্ষ্য।” শ্রী মোদী বলেন, গত এক দশকে ৩০ গুণ বেড়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের রপ্তানি।

 

“জ্ঞান দান চ রক্ষণ্য”- এই নীতিতে ভারতে ঐতিহ্যগত শক্তি এবং ক্ষমতা নিহিত। তিনি বলেন, বর্তমানে সংযুক্ত বিশ্বে যেখানে দেশের অর্থনীতি এবং অগ্রগতি বহুল ভাবে নির্ভর করে সমুদ্র পথের ওপর ভারতীয় নৌসেনা বিশ্বের সুস্থিরতা রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। শ্রী মোদী জানান, বিশ্বের তেল সরবরাহের ৬৬ শতাংশ এবং কন্টেনার চলাচলের ৫০ শতাংশ হয় ভারত মহাসাগরে। এই সমুদ্রপথের রক্ষায় ভারতীয় নৌবাহিনী মোতায়েন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের দ্বীপগুলির সুরক্ষা ও সংহতি নিশ্চিত করতে ভারতীয় নৌবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ২৬ জানুয়ারি প্রত্যেকটি ভারতীয় দ্বীপে গর্বের সঙ্গে ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা তোলে নৌবাহিনী।”

 

প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারতের অগ্রগতি হচ্ছে দ্রুত, তাই চেষ্টা চালানো হচ্ছে যাতে গ্লোবাল সাউথের সবকটি দেশ একসঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে। তিনি জানান, ‘মহাসাগর মেরিটাইম ভিশন’ নিয়ে কাজ করছে ভারত এবং অনেক দেশেই উন্নয়নের অংশীদার হয়ে উঠছে। তিনি জানান, যখনই প্রয়োজন ভারত বিশ্বের যেকোন জায়গায় মানবিক সাহায্য করতে প্রস্তুত। আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিপর্যয়ের সময় বিশ্ব ভারতকে দেখেছে সঙ্গী হিসেবে। ২০১৪-য় মালদ্বীপে জল সঙ্কটের সময় নৌবাহিনী সেদেশে পরিস্রুত জল পাঠিয়েছিল। ২০১৭-য় শ্রীলঙ্কায় বিধ্বংসী বন্যার সময় ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। ২০১৮-য় সুনামির পরে ইন্দোনেশিয়ার মানুষের ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে ভারত কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছিল। একইরকম ভাবে মায়ানমারে ভূমিকম্পের সময় ২০১৯-এ মোজাম্বিকে সঙ্কটে, ২০২০-তে মাদাগাস্কার সঙ্কটে প্রত্যেক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল সেবার মনোভাব নিয়ে।

 

শ্রী মোদী বলেন, “ভারতের সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যেক পরিস্থিতিতে আকাশে, সমুদ্রে, স্থলে দেশকে সেবা করেছে।” তিনি জানান, ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সাহ ও শৌর্যের কারণে দেশ একটি বড় মাইলফলক অর্জন করেছে, তা হল মাওবাদী সন্ত্রাস দূরীকরণ। দেশ এখন প্রায় নকশাল-মাওবাদ চরমপন্থা থেকে মুক্তির পথে। ২০১৪-র আগে ১২৫-টির বেশি জেলা মাওবাদী সন্ত্রাসের দ্বারা পীড়িত ছিল, সেই সংখ্যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১১। তার মধ্যে তিনটি জেলা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত। ১০০-র বেশি জেলা পুরোপুরি মাওবাদী সন্ত্রাসের ছায়া থেকে বেরিয়ে এসেছে। এই প্রথম খোলা মনে নিঃশ্বাস নিচ্ছে এবং দেওয়ালি উদযাপন করছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ কয়েক প্রজন্ম ভয়ের মধ্যে কাটানোর পর এখন উন্নয়নের মূল স্রোতে যোগ দিচ্ছে। আগে যেখানে মাওবাদীরা রাস্তা, স্কুল, হাসপাতাল, মোবাইল টাওয়ার তৈরিতে বাধা দিতো, সেখানে এখন নতুন নতুন শিল্প তৈরি হচ্ছে।

 

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, “ভারত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে এবং ১৪০ কোটি নাগরিকের স্বপ্ন পূরণ করছে। মাটি থেকে মহাকাশ যেখানে সাফল্য চিন্তাই করা যেত না, তা এখন বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।” তিনি জানান, দেশ গঠনের মহান কাজে সশস্ত্রবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। তিনি বলেন, বাহিনী শুধু স্রোতের অনুগামী নয়, তাদের দিক নির্দেশ করারও ক্ষমতা আছে। সাহস আছে সময়কে নেতৃত্ব দেওয়ার, শৌর্য আছে অসীমকে পেরিয়ে যাওয়ার, অধরাকে ছোঁয়ারও ক্ষমতা আছে। তিনি জানিয়ে দেন, পর্বত শিখর যেখানে সেনাবাহিনী দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকে সেটাই ভারতের বিজয় স্তম্ভ এবং মহাসাগরের শক্তিশালী তরঙ্গ থাকে তাদের নচে, যা ভারতের জয় ঘোষণা করে। এই গর্জনের মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ সুর জেগে উঠবে – ‘ভারত মাতার জয়!’ এই উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শেষ করেন আরও একবার সকলকে দেওয়ালির আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে। 

***************

 

SSS/AP/AS


(Release ID: 2181028) Visitor Counter : 5