প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
প্রধানমন্ত্রী দিল্লির লালকেল্লায় প্রথম ভারতীয় শিল্প, স্থাপত্য ও নকশা সংক্রান্ত দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনী, ২০২৩-এর উদ্বোধন করেছেন
Posted On:
08 DEC 2023 7:40PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ দিল্লির লালকেল্লায় ভারতীয় শিল্প, স্থাপত্য ও নকশা সংক্রান্ত দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনী, ২০২৩-এর উদ্বোধন করেছেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি আত্মনির্ভর ভারত সেন্টার ফর ডিজাইনেরও উদ্বোধন করেন। এছাড়াও, স্টুডেন্ট বিয়েনাল-এ সমুন্নতিরও সূচনা করেন তিনি। শ্রী মোদী এই উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেন। তিনি প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখেন।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর ভাষণে লালকেল্লার ঐতিহ্যশালী স্থানে সকলকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই জায়গাটির ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এর একটি ইতিহাস রয়েছে, ভারতের স্বাধীনতার পরেও যার গুরুত্ব অপরিসীম।
শ্রী মোদী বলেন, প্রত্যেক দেশের নিজেকে পরিচিত করার একটি প্রতীক থাকে, যে প্রতীকের মাধ্যমে সেই দেশের শিকড় এবং অতীত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। শিল্প, স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের এই প্রতীকগুলির সঙ্গে একটি সম্পর্ক রয়েছে। রাজধানী দিল্লিতে বিভিন্ন প্রতীকের যে রত্নশালা আছে তার মধ্য দিয়ে এ দেশের সমৃদ্ধশালী স্থাপত্যের ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারতীয় শিল্প স্থাপত্য ও নকশা সংক্রান্ত দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনীতে যে নিদর্শনগুলি রাখা হয়েছে, সেগুলির প্রশংসা করে তিনি বলেন, এগুলির মধ্য দিয়ে রং, সৃজনশীলতা, সংস্কৃতি এবং সম্প্রদায়ের একটি নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। সফলভাবে এই প্রদর্শনী আয়োজন করার জন্য তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত সকলকে ধন্যবাদ জানান। “বই হল জগতের জানালা। মানবসভ্যতার মহান যাত্রাপথ হল শিল্পকলা।”
ভারতের গৌরবোজ্জ্বল অতীতের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে ভারতের আর্থিক সমৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হত। এ দেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি আজও সারা বিশ্ব আকৃষ্ট হয়। তিনি কেদারনাথ এবং কাশীকে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতার অমৃতকালে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য তাঁর সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগের আওতায় মহাকাল লোককে নবরূপে সজ্জিত করা হচ্ছে। ভারতীয় শিল্প, স্থাপত্য ও নকশা সংক্রান্ত দ্বিবার্ষিক এই প্রদর্শনী সেই লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে। ২০২৩-এর মে মাসে আন্তর্জাতিক মিউজিয়াম এক্সপোর আয়োজন করা হয়, আর আগস্ট মাসে গ্রন্থাগার উৎসবের। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকার কথা তিনি উল্লেখ করেন। এই দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনী আয়োজন করার মধ্য দিয়ে ভেনিস, সাও পাওলো, সিঙ্গাপুর, সিডনি এবং শারজায় দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনী ও দুবাই এবং লন্ডনে শিল্প উৎসবের পাশাপাশি, এটিও চর্চিত হবে বলে তিনি আশা করেন। “মনকে অন্তরাত্মার সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রে শিল্প ও সংস্কৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্য দিয়ে মানসিক শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।”
আত্মনির্ভর ভারত সেন্টার ফর ডিজাইনের প্রসঙ্গে শ্রী মোদী বলেন, এ দেশের অনন্য ও বিরল শিল্পকলা সম্পর্কে এখান থেকে ধারণা পাওয়া যাবে। ডিজাইনারদের সঙ্গে শিল্পীরা এই কেন্দ্রে একটি অভিন্ন মঞ্চ পাবেন। এর ফলে তাঁদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীও সহজেই বাজারজাত করা সম্ভব হবে। “শিল্পীরা নকশা তৈরির ক্ষেত্রে যেমন অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন, পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং করার ক্ষেত্রেও তাঁরা দক্ষ হয়ে উঠবেন।” প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, সময়োপযোগী জ্ঞান ও সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় হস্তশিল্পীরা আন্তর্জাতিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ এক স্থান দখল করবেন।
শ্রী মোদী জানান, দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই, আমেদাবাদ এবং বারাণসী শহরে বিশেষ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার ঐতিহাসিক এক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই শহরগুলি স্থানীয় শিল্পকলাকে প্রচার করবে। আগামী সাতদিন এই প্রদর্শনী সাতটি গুরুত্বপূর্ণ মূল ভাবনা বা থিম থাকবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ‘দেশজ ভারত ডিজাইন : ইন্ডিজিনাস ডিজাইন্স’ এবং ‘সমত্ব : শেপিং দ্য বিল্ট’। যুব সম্প্রদায়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনের অঙ্গ হিসেবে দেশীয় পদ্ধতিতে নকশা তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। স্থাপত্যে মহিলাদেরও সমান অংশগ্রহণ প্রয়োজন, কারণ তাঁদের সৃজনশীলতা একে উচ্চস্তরে উন্নীত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের জীবনে শিল্প, শিল্পের প্রতি অনুরাগ এবং রং অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে।” প্রাচীনযুগে আমাদের পূর্বপুরুষরা যে সাহিত্য, সঙ্গীত ও শিল্পকলা রচনা করেছেন, তার মধ্য দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রাণী জগতের অন্যদের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। “শিল্প, স্থাপত্য ও সঙ্গীত মনুষ্যজীবনে নতুন মাত্রা নিয়ে আসে।” চতুষষ্ঠকলার সঙ্গে যুক্ত আমাদের জীবনের বিভিন্ন চাহিদা ও কর্তব্যবোধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উদক বাদ্যম’ যন্ত্রটিতে জলের ঢেউয়ের আওয়াজ সৃষ্টি করা হয় যা সঙ্গীত পরিবেশনার পাশাপাশি, নৃত্যকলারও সহায়ক। ‘গন্ধ যুক্তি’র মাধ্যমে সেন্ট বা পারফিউম তৈরি করা হয়। এনামেলের জন্য ‘তক্ষকর্ম’ শিল্পের প্রসঙ্গও তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়াও, সীবন শিল্পের জন্য ‘সুচিবন কর্মানি’ শিল্পকলার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। প্রাচীন যুগে ভারতে তৈরি পোশাক-পরিচ্ছদ বিশ্বে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল। এ দেশে তৈরি মসলিনের কাপড় একটি আংটির ছিদ্র দিয়ে বের করা যেত।
প্রধানমন্ত্রী কাশী শহরের শাশ্বত সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, এই শহরে সাহিত্য, সঙ্গীত ও শিল্পকলার চর্চা প্রাচীন যুগ থেকেই হয়ে আসছে। “কাশীর শিল্প ভগবান শিবের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেছে। শিবকে শিল্পকলার মূল কারিগর বলে বিবেচনা করা হয়। শিল্প এবং সংস্কৃতি মানবসভ্যতার জন্য বিশেষ শক্তির সঞ্চার করে। এই শক্তি অবিনশ্বর, মানুষের চেতনা শাশ্বত। তাই, কাশীও অমর।” সম্প্রতি যে গঙ্গা বিলাস নৌ-বিহারের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে যাত্রীরা কাশী থেকে তাঁদের যাত্রা শুরু করেন। গঙ্গাতীরের বিভিন্ন শহর অতিক্রম করে এই যাত্রা আসামে শেষ হয়।
শ্রী মোদী বলেন, “শিল্প যেভাবেই উপস্থাপিত হয়, তার উৎপত্তি সবসময়েই প্রকৃতির কাছাকাছি জায়গা থেকে হয়ে থাকে। তাই বলা যায়, শিল্প হল প্রকৃত-বান্ধব, পরিবেশ-বান্ধব ও জলবায়ু-বান্ধব।” বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নদীমাতৃক সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাজার হাজার বছর ধরে এ দেশের নদীগুলিতে ঘাট নির্মিত হয়েছে। ভারতে বেশিরভাগ উৎসবই এই নদীঘাটকে কেন্দ্র করে। আমাদের দেশে পুকুর ও জলাশয়ের একটি সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্য রয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি গুজরাটের রানি কি ভাও এবং রাজস্থান ও দিল্লির বিভিন্ন স্থানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, দিন কয়েক আগে সিন্ধু দুর্গ ঘুরে দেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে জয়সলমীরের পাটোয়া কি হাভেলির কথাও তিনি উল্লেখ করেন। এই হাভেলিতে পাঁচটি ভবন এমনভাবে নির্মিত আছে যেখানে প্রাকৃতিকভাবেই শীতলতার স্পর্শ পাওয়া যায়। “এই স্থাপত্যগুলি যেমন দীর্ঘদিন টিকে রয়েছে, পাশাপাশি এগুলি পরিবেশের নিরিখে স্থিতিশীলও।”
শ্রী মোদী বলেন, “মানবসভ্যতার জন্য শিল্প, স্থাপত্য ও সংস্কৃতি বৈচিত্র্য ও ঐক্যের প্রতীক।” বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ এই ভারত। এ দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এই বৈচিত্র্যকে শক্তিশালী করেছে। কোনও সমাজে মুক্ত চিন্তার কারণেই সেই সমাজে শিল্প, স্থাপত্য ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটে। “বিতর্ক এবং মতবিনিময়ের ঐতিহ্যের কারণে বৈচিত্র্য সঙ্গত কারণেই প্রসারিত হয়। আমরা যে কোনও রকমের বৈচিত্র্যকে সব সময়েই সহায়তা করে এসেছি।” তিনি দেশের বিভিন্ন শহরে জি-২০ গোষ্ঠীর নানা কর্মসূচি আয়োজনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এর মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের কাছে ভারতের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরা হয়েছে।
শ্রী মোদী বলেন, ভারত বৈষম্যে বিশ্বাসী নয়। এ দেশের মানুষ সারা বিশ্বের কথা বলেন। ভারত যখন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে, তখন সকলেই উন্নত এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন। “ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সারা বিশ্বের প্রগতির সঙ্গে যুক্ত। আত্মনির্ভর ভারতের ভাবনা নতুন নতুন সুযোগকে কাছে নিয়ে আসে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্প ও স্থাপত্যে ভারতের পুনরুজ্জীবন এ দেশের সংস্কৃতির মানোন্নয়নে সহায়ক হবে। তাঁর ভাষণে যোগ এবং আয়ুর্বেদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুস্থায়ী জীবনযাত্রার কথা বিবেচনা করে মিশন লাইফ-এর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তাঁর ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সভ্যতার সমৃদ্ধির জন্য সকলের সঙ্গে মতবিনিময় ও সহযোগিতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। দ্বিবার্ষিক এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের তিনি ধন্যবাদ জানান।
কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী শ্রী জি কিষাণ রেড্ডি, দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল ও শ্রীমতী মীনাক্ষী লেখি, ডায়ানা কেলগ আর্কিটেক্ট-এর মুখ্য স্থপতি শ্রীমতী ডায়ানা কেলগ সহ বিশিষ্টজনেরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
******
SSS/CB/DM
(Release ID: 2178575)
Visitor Counter : 2
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Marathi
,
हिन्दी
,
Manipuri
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam