স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
azadi ka amrit mahotsav

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ নতুন দিল্লিতে ‘ভারত মন্থন – ২০২৫: নকশাল মুক্ত ভারত – প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে লাল আতঙ্কের অন্ত’-এর সমাপ্তি অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন

Posted On: 28 SEP 2025 9:15PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

 


কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ আজ নতুন দিল্লিতে ‘ভারত মন্থন – ২০২৫: নকশাল মুক্ত ভারত – প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে লাল আতঙ্কের অন্ত’-এর সমাপ্তি অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন।

এই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ বলেছেন, যে ৩১ মার্চ, ২০২৬-এর মধ্যে ভারত নকশালবাদ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ভারতীয় সমাজ নকশালবাদকে যাঁরা আদর্শগত, আইনী এবং আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে তাদের সম্পর্কে সঠিক ধারণা না করতে পারছেন ততক্ষণ নকশালবাদের বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, আমাদের আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা ও দেশের সুরক্ষা। তিনি আরও বলেন, আমাদের দলের আদর্শের কেন্দ্রে আছে তিনটি উদ্দেশ্য : দেশের অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃনিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় সংস্কৃতির সব ধরনের বৈশিষ্ট্যের পুনরুদ্ধার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তাঁর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন তাঁদের সকলের উদ্দেশ্যে যাঁরা ১৯৬০ থেকে বামপন্থী হিংসার কারণে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, প্রিয়জনদের হারিয়েছেন এবং শারীরিক ও মানসিক কষ্ট ভোগ করেছেন। তিনি বলেন যে, পশ্চিমবঙ্গে নকশালবাদের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে যতক্ষণ না পর্যন্ত বাম দলগুলি ক্ষমতায় এসেছে এবং যখনই তারা ক্ষমতায় এসেছে নকশালবাদ সেখান থেকে দূর হয়ে গেছে। 

শ্রী অমিত শাহ বলেন, যখন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অশান্ত এলাকা – জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপূর্ব এবং বামপন্থী করিডোর – মারাত্মকভাবে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করছিল। তিনি বলেন যে, প্রায় চার থেকে পাঁচটি দশকে কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, এই তিন অঞ্চলে অশান্তির ছড়ানোর কারণে। উল্লেখযোগ্যভাবে সম্পত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের বাজেটের একটি বড় অংশ গরিবদের উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট সেই অর্থ সরিয়ে নিয়ে এই অশান্ত জায়গাগুলিতে শান্তিস্থাপনে কাজে লাগাতে হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীরও অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। তিনি জানান যে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শ্রী নরেন্দ্র মোদী ওই তিনটি অশান্ত জায়গার উপর নজর দেন এবং স্পষ্ট, দীর্ঘমেয়াদী রণনীতি নিয়ে কাজ করেন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন যে, মোদী সরকারের ১০ বছরে উল্লেখযোগ্য রূপান্তর ঘটেছে। তিনি জানান, ১৯৭০-এর গোড়ার দিকে নকশালবাদ এবং সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৯৭১-এ স্বাধীন ভারতে সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ৬২০টি হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। এর পরে, ১৯৮০-তে পিপলস ওয়ার গ্রুপ মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গনা, ছত্তিশগড়, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, বিহার এবং কেরলে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন যে, ১৯৮০-র পর বামপন্থী গোষ্ঠীগুলি একে অপরের সঙ্গে মিশে যেতে শুরু করে এবং ২০০৪-এ প্রধান সিপিআই (মাওবাদী) গ্রুপ তৈরি হয়, যার থেকে নকশাল হিংসা অতি ভয়ঙ্কর চেহারা নেয়। তিনি বলেন যে পশুপতি থেকে তিরুপতি করিডোরটি পরিচিত ছিল রেড করিডোর হিসেবে।

শ্রী অমিত শাহ বলেন যে, দেশের মোট অঞ্চলের ১৭ শতাংশ পড়তো রেল করিডোরের মধ্যে। প্রভাব ফেলেছিল ১২০ মিলিয়ন মানুষের উপর। সেই সময়ে জনসংখ্যার ১০ শতাংশ নকশালবাদের বিভীষিকার মধ্যে বসবাস করতো। শ্রী শাহ বলেন যে, তুলনামূলকভাবে অন্য দুটি অশান্ত জায়গা – কাশ্মীর, দেশের ১ শতাংশ জমি নিয়ে সন্ত্রাসবাদের প্রকোপে ছিল এবং উত্তরপূর্ব ৩.৩ শতাংশ জমি নিয়ে অশান্তিতে জর্জরিত ছিল। তবে সেগুলি তত বিস্তৃত নয়। তিনি বলেন যে শ্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৪-য় যখন প্রধানমন্ত্রী হন, মোদী সরকার আলোচনা, নিরাপত্তা এবং সমন্বয় এই তিন বিষয় নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। এর ফলে, ২০২৪-এর ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে সশস্ত্র নকশালবাদ দূরীভূত হবে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী বলেন, যে আগে যেখানে কাজ করা হতো খাপছাড়াভাবে, নির্দিষ্ট ঘটনার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হতো, স্থায়ী কোনো নীতি ছিল না। একদিক দিয়ে বলা যায়, সরকারের মোকাবিলার পরিকল্পনা চালিত হতো নকশালদের দ্বারা। শ্রী শাহ বলেন যে, ২০১৪-র পর সরকারের প্রচারাভিযান এবং কর্মসূচি চালনা হচ্ছে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দ্বারা এবং এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত পরিবর্তন।

শ্রী অমিত শাহ বলেন যে, বিচ্ছিন্নভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিবর্তে মোদী সরকার একটি একীকৃত এবং নির্মম দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন যে, আমাদের সরকারের নীতি যারা অস্ত্র নামিয়ে রেখে আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য লাল কার্পেট পেতে স্বাগত জানানো। কিন্তু কেউ যদি নিরীহ জনজাতিকে মারার জন্য অস্ত্র তুলে নেয়, সরকারের কর্তব্য নিরীহ জনজাতিকে রক্ষা করা এবং সশস্ত্র নকশালপন্থীদের মোকাবিলা করা।

শ্রী অমিত শাহ বলেন যে, এই প্রথম ভারত সরকার কোনো ধোঁয়াশাছাড়াই একটি স্পষ্ট নীতি নিয়েছে। তিনি বলেন, যে রাজ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে ও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান নিয়ে সমন্বয়ের জন্য ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে বাস্তবিক একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, নকশালদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র যাতে না পৌঁছয় তার জন্য কড়া নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে। ২০১৯-এর পরে আমরা তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা ৯০ শতাংশের বেশি বন্ধ করতে পেরেছি। তিনি বলেন যে, এনআইএ এবং ইডি নকশালদের অর্থ সাহায্যকারীদের গলায় ফাঁস আরও আঁটোসাটো করেছে এবং আমরা শহুরে নকশালদের সমর্থন, তাদের আইনি সাহায্যের নেটওয়ার্ক এবং তাদের নিয়ে সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদনের বিরুদ্ধেও আমাদের লড়তে হয়েছে। তিনি বলেন যে, আমরা সেন্ট্রাল কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং ২০১৯-এর অগাস্ট থেকে এপর্যন্ত ১৮ জনের বেশি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ফাঁক ভরাট করা হয়েছে এবং অপারেশন অক্টোপাস ও অপারেশন ডাবল বুলের মতো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, ডিআরজি, এসটিএফ, সিআরপিএফ এবং কোবরা বাহিনীর যৌথ প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছে। ওই চার বাহিনী এখন একসঙ্গে অভিযান চালায় এবং তাদের নির্দেশশৃঙ্খল খুবই স্পষ্ট। তিনি বলেন যে, সুসংহত প্রশিক্ষণ আমাদের সাফল্যে একটা বড় তফাৎ গড়ে দিয়েছে। এর পাশাপাশি ফরেন্সিক তদন্ত শুরু হয়েছে, লোকেশন ট্র্যাক করার ব্যবস্থা হয়েছে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, সায়েন্টিফিক কল লগ অ্যানালিসিস সফটওয়ার তৈরি হয়েছে এবং সোশাল মিডিয়া অ্যানালিসিস ব্যবহার করা হয়েছে তাদের গুপ্ত সমর্থকদের খোঁজ পেতে। এতে নকশাল বিরোধী অভিযান গতি পেয়েছে তাই নয়, এটি আরও সফল হয়েছে এবং ভালো ফল পাওয়া সম্ভব হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, যে ২০১৯-এর পরে জোর দেওয়া হয় রাজ্যগুলির সক্ষমতা বৃদ্ধির উপরেও। এসআরই এবং এসআইএস কর্মসূচিতে মোটামুটি ৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, যা ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধির সমান। এর মাধ্যমে অতি-সুরক্ষিত পুলিশ থানার সংখ্যা বেড়েছে। এর জন্য ১ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। তিনি বলেন যে, গত ৬ বছরে মোদী সরকার নিরাপত্তায় ফাঁক বোজাতে ৩৩৬টি নতুন সিএপিএফ ক্যাম্প বসিয়েছে। ফলে ২০০৪-১৪-র তুলনায় নিরাপত্তা বাহিনীতে মৃত্যুর সংখ্যা ৭৩ শতাংশ এবং সাধারণ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা ৭৪ শতাংশ কমেছে। শ্রী শাহ বলেন, আগে ছত্তিশগড়ে বিরোধী সরকার থাকার কারণে সাফল্য ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে, তবে ২০২৪-এ আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সবচেয়ে বেশি নকশালপন্থী ২৯০ জনকে – এক বছরে নিকেশ করা সম্ভব হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন যে, আমরা কাউকে মারতে চাই না। ২৯০ জন নকশালপন্থী নিহত হয়েছে, সে তুলনায় ১ হাজার ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮৮১ জন আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি বলেন যে, এতে বোঝা যায় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি। প্রত্যেকটি প্রয়াসে নকশালপন্থীদের আত্মসমর্পণ করার অথবা গ্রেপ্তার হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে, যখন নকশালবাদীরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে নিরীহ ভারতীয়দের হত্যা করতে উদ্যত হয়, তখন নিরাপত্তা বাহিনীর বলপ্রয়োগ করা ছাড়া উপায় থাকে না। শ্রী শাহ বলেন যে, ২০২৫-এ পর্যন্ত ২৭০ জন নকশালবাদীর মৃত্যু হয়েছে, ৬৮০ জন গ্রেপ্তার রয়েছে এবং ১২২৫ জন আত্মসমর্পণ করেছে। দুটি বছরে আত্মসমর্পণকারী এবং গ্রেপ্তার হওয়ার সংখ্যা, নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। আত্মসমর্পণের সংখ্যা বৃদ্ধি ইঙ্গিত দেয় যে, নকশালদের জন্য সময় এখন সিমিত।

শ্রী অমিত শাহ বলেন, যে নকশালপন্থীরা তেলঙ্গনা-ছত্তিশগড় সীমান্তে কারেগুটা পাহাড়ে একটি বড়সড় আস্তানা গেড়েছিল, যেখানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র, দু বছরের মতো রেশন এবং অস্ত্র ও আইইডি তৈরি করার কারখানা ছিল এবং জায়গাটি ছিল অত্যন্ত দুর্গম। তিনি জানান, ২০২৫-এর ২৩ মে, অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্টে ওই আস্তানাটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ২৭ জন কট্টর নকশালপন্থী মারা পড়ে। এছাড়া বিজাপুরে ২৪ জন কট্টর নকশালপন্থী নিহত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন যে, এই অভিযানের মাধ্যমে ছত্তিশগড়ের বাকি নকশালপন্থীদের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। শ্রী শাহ উল্লেখ করেন যে, ২০২৫-এ যেসমস্ত নকশালপন্থী নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন আঞ্চলিক কমিটির সদস্য, ৫ জন উপ আঞ্চলিক কমিটির সদস্য, ২ জন রাজ্য কমিটির সদস্য, ৩১ জন ডিভিশনাল কমিটির সদস্য এবং ৫৯ জন এরিয়া কমিটির সদস্য।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী বলেন যে, ১৯৬০ থেকে ২০১৪-র মধ্যে ৬৬টি বিশেষভাবে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ স্টেশন ছিল এবং মোদী সরকারের ১০ বছরে ৫৭৬টি নতুন অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত পুলিশ স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। ২০১৪-য় ১২৬টি নকশাল প্রভাবিত জেলা ছিল, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১৮-য়। সবচেয়ে প্রভাবিত জেলার সংখ্যা ৩৬ থেকে কমে ৬ হয়েছে। পুলিশ স্টেশনের সংখ্যা ৩৩০ থেকে কমে ১৫১ হয়েছে প্রায়, যার মধ্যে ৪১টি নতুন। গত ৬ বছরে ৩৩৬টি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প বসানো হয়েছে। রাত্রে নামার জন্য ৬৮টি হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও ৭৬টি রাতে নামার জন্য হেলিপ্যাড তৈরি হয়েছে সিআরপিএফ আধিকারিকদের জন্য। তিনি জানান যে, নকশালপন্থীদের আর্থিক সাহায্য আটকাতে এনআইএ, ইডি এবং রাজ্য সরকারগুলি কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন যে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য তার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের ১২ বার বৈঠক হয়েছে। তার মধ্যে বিশেষ করে ৮টি বৈঠক হয়েছে ছত্তিশগড়ে। ছত্তিশগড় সরকার আত্মসমর্পণকারীদের জন্য আকর্ষণীয় প্যাকেজের সূচনা করেছে। তিনি বলেন যে, বাম চরমপন্থী অধ্যুষিত এলাকায় একাধিক উন্নয়ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মন্তব্য করেন যে বিশ্বের যেখানেই বামপন্থী আদর্শবাদ শিকড় গেড়েছে সেখানে হিংসার সঙ্গে তাদের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক দেখা গেছে, এটাই নকশালপন্থীদের শিকড়।

শ্রী অমিত শাহ বলেন যে, যারা এমন ধারণা ছড়ান যে বাম চরমপন্থীর মূল কারণ উন্নয়নের অভাব তাঁরা দেশকে বিপথে চালিত করছেন। তিনি বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ৬০ কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য একাধিক কর্মসূচি চালু করেছে। কিন্তু নকশাল প্রভাবিত এলাকায় মানুষের কাছে এই কর্মসূচি পৌঁছতে কারা বাধা দিচ্ছে? তার প্রশ্ন, যদি সুগমা অথবা বিজাপুরে স্কুল না পৌঁছে থাকে তাহলে কে দায়ী? কেন বামপন্থী প্রভাবিত এলাকায় সড়ক নির্মাণ করা যায়নি? তার কারণ নকশালরা ঠিকাদারদের খুন করেছে। শ্রী শাহ প্রশ্ন করেন, বুদ্ধিজীবীরা যাঁরা সরকারকে পরামর্শ দিতে লম্বা লম্বা নিবন্ধ লেখেন তাঁরা কেন নিপীড়িত জনজাতির হয়ে লিখছেন না? কেন তাদের সহমর্মিতা বেছে বেছে হয়? তিনি বলেন যে, নকশালপন্থীদের সমর্থকরা না জনজাতিদের উন্নয়ন চান, না তাদের জন্য প্রকৃতই সমব্যথী। বদলে তাঁদের বেশি মাথা ব্যথা তাদের আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে যা সারা বিশ্বে পরিত্যায্য হয়েছে। শ্রী শাহ জানান, এইসব জায়গায় উন্নয়ন না পৌঁছনোর একটাই কারণ, সেটা হল বামপন্থী আদর্শ। 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন যে, নকশালপন্থীরা প্রথমে সংবিধানকে, পরে বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণ করে। তারা একটা সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি করে, পরে রাজ্যের মূল আদর্শকে আক্রমণ করে এবং সেই রাজ্যে একটি শূন্যতা তৈরি করে। তিনি বলেন যে, যারা তাদের সঙ্গে যোগ দেয় না, তাদের তারা ইনফর্মার হিসেবে দাগিয়ে দেয় এবং তথাকথিত জনআদালতে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তারা এমনকি সমান্তরাল সরকারও গড়ে। শ্রী শাহ বলেন যে, দেশের ভালোর জন্য কোনো একটি আদর্শকে আঁকড়ে না থেকে তা ছাড়িয়ে উপরে ওঠা জরুরি। তিনি আরও বলেন, সুস্পষ্টভাবে এই প্রশাসনিক শূন্যতার কারণে উন্নয়ন, সাক্ষরতা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা ওইসব এলাকায় পৌঁছতে পারেনি।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্টের সময়ে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলি চিঠি লিখে এই অভিযান বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছিল। তাতে তাদের আসল মুখটি প্রকাশ পেয়ে গেছে। তিনি বলেন যে, নকশালপন্থীদের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষ বিরতি নয়। যদি তারা আত্মসমর্পণ করতে চায়, তাহলে সংঘর্ষ বিরতির প্রয়োজন নেই – তারা শুধু তাদের অস্ত্র নামিয়ে রাখুক। পুলিশ একটাও গুলি ছুড়বে না এবং তাদের সমাজের সঙ্গে মিশিয়ে দেবে। তিনি বলেন যেই অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট শুরু হয়, তখনই নকশালপন্থী সমর্থকদের গোপন সমবেদনা প্রকাশ হয়ে পড়ে। 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী বলেন যে, ২০১৪ এবং ২০২৪-এর মধ্যে ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা নির্মিত হয়েছে বাম চরমপন্থী প্রভাবিত এলাকায়। বাজেট অনুমোদিত হয় ১৭ হাজার ৫০০টি রাস্তার জন্য। ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় ৫ হাজার মোবাইল টাওয়ার বসানো হয়। তিনি বলেন যে, ১ হাজার ৬০টি ব্যাঙ্কের শাখা হয়েছে, ৯৩৭টি এটিএম বসানো হয়েছে, ৩৭ হাজার ৮৫০ জন ব্যাঙ্কিং করেসপনডেন্ট নিযুক্ত হয়েছেন, ৫ হাজার ৮৯৯টি ডাক ঘর খোলা হয়েছে, ৮৫০টি স্কুল হয়েছে এবং ১৮৬টি সমস্ত উপকরণ সমৃদ্ধ স্বাস্থ্য কেন্দ্র বসানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, নিয়াদনেল্লানার কর্মসূচিতে ছত্তিশগড় সরকার আয়ুষ্মান ভারত কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড দেওয়া এবং স্কুল স্থাপন, রেশন দোকান ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র খোলার কাজ করছে। 

উত্তরপূর্বে অনুপ্রবেশের উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন যে, ২০০৪-১৪-র তুলনায় ২০১৪-২০২৪-এ নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের মৃত্যু কমেছে ৭০ শতাংশ। একইরকমভাবে ২০০৪-২০১৪-র তুলনায় ২০১৪-২০২৪-এ সাধারণ মানুষের মৃত্যু কমেছে ৮৫ শতাংশ। মোদী সরকার ১২টি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি চুক্তির ব্যবস্থা করেছে এবং ১০ হাজার ৫০০ সশস্ত্র যুবাকে আত্মসমর্পণ করিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন সমগ্র উত্তরপূর্ব গোটা দেশ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন মনে করতো। কিন্তু আজ এটি ট্রেন, রেল পথ এবং আকাশ পথে সংযুক্ত হয়েছে। শ্রী শাহ বলেন যে, মোদী সরকার দিল্লি এবং উত্তরপূর্বের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব কমিয়েছে তাই নয়, অনুভূতির দূরত্বও কমিয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, আজ উত্তরপূর্ব এগিয়ে চলেছে শান্তি এবং উন্নয়নের পথে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন যে, জম্মু ও কাশ্মীরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ২০১৯-এ ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়। তার পরে, সরকার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে ধাপে ধাপে। তিনি বলেন যে, কাশ্মীরে পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদের পরিপ্রেক্ষিতে মোদী সরকার একটি সুপরিকল্পিত নীতি নিয়ে কাজ করেছে। শ্রী শাহ জানান যে, ২০০৪-১৪-য় ৭ হাজার ৩০০টি হিংসাত্মক ঘটনার তুলনায় ২০১৪-২০২৪-এ ১ হাজার ৮০০টি হিংসাত্মক ঘটনা হয়েছে। জওয়ানদের মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে ৬৫ শতাংশ এবং সাধারণ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে ৭৭ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, দেশের প্রতিটি আইন সেখানে এখন রূপায়িত হচ্ছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম জম্মু ও কাশ্মীরে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে, ভোটদানের হার ৯৯.৮ শতাংশ। শ্রী শাহ বলেন, যে আমরা জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা সমাধানের পথে ক্রমশ এগিয়ে চলেছি।

 


SC/AP/SKD


(Release ID: 2172671) Visitor Counter : 5