প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

প্রধানমন্ত্রী অরুণাচল প্রদেশের ইটানগরে ৫১০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছেন

Posted On: 22 SEP 2025 1:14PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২২  সেপ্টেম্বর, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ অরুণাচল প্রদেশের ইটানগরে ৫১০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছেন। এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি পবিত্র ডোনাই পোলোর কাছে সকলের জন্য আর্শীবাদ প্রার্থনা করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেলিপ্যাড থেকে মাঠে আসার সময় অগণিত মানুষের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন। অরুণাচল প্রদেশের অতিথি বৎসল নাগরিকরা তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন। শিশু, কিশোররা জাতীয় পতাকা হাতে তাঁর সামনে উপস্থিত ছিল। অরুণাচল ভারতের উদীয়মান সূর্যের অঞ্চল। এই রাজ্যের নাগরিকরা দেশ প্রেমিক। জাতীয় পতাকার প্রথম যে রং গেরুয়া, সেই গেরুয়া অরুণাচল প্রদেশের মানুষের ভাবনার প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অরুণাচলের প্রতিটি নাগরিক সারল্য ও শৌর্যের প্রতীক। রাজ্যের প্রতি তাঁর ভালবাসার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যখনই তিনি এই রাজ্য সফর করেন তখন অনাবিল এক আনন্দ অনুভব করেন। রাজ্যের মানুষের সঙ্গে যখন তিনি সাক্ষাৎ করেন, সেই মুহুর্তগুলি তাঁর কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। “তাওয়াং গুম্ফা থেকে নামসাই-এর গোল্ডেন প্যাগোডা – সর্বত্রই অরুণাচল প্রদেশের শান্তি এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন পাওয়া যায়।” প্রধানমন্ত্রী এই পবিত্র ভূমির প্রতি প্রণাম জানিয়ে বলেন, ভারতমাতার অত্যন্ত গর্বের স্থান এটি। 

অরুণাচল প্রদেশের সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর সঙ্গে ৩ টি কারণ রয়েছে। আজ পবিত্র নবরাত্রির প্রথম দিন। আজকের দিনে এই সুন্দর পার্বত্য অঞ্চলে আসার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছে। হিমালয় কন্যা মা শৈলপুত্রীর ভক্তরা আজ তাঁর আরাধনা করছেন। দ্বিতীয়ত, দেশজুড়ে আজ থেকে পরবর্তী প্রজন্মের জিএসটি সংস্কার কার্যকর হয়েছে। তিনি বলেন, জিএসটি সাশ্রয় উৎসবের সূচনা হল আজ। উৎসবের এই মরশুমে নাগরিকরা দ্বিগুণ আনন্দ পাবে। তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী বলেন, অরুণাচল প্রদেশে বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যটন ও স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন হল আজ। কেন্দ্রে এবং রাজ্যে একই সরকার থাকলে তার থেকে যে দ্বিগুণ সুবিধা পাওয়া যায়, এর মাধ্যমে তার প্রমাণ মেলে। জিএসটি সাশ্রয়ের উৎসব ভারতবাসীর মধ্যে আনন্দ, সমৃদ্ধি এবং সাফল্য নিয়ে আসবে। 

অরুণাচল প্রদেশ সূর্যের প্রথম রশ্মি গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের যে দ্রুত উন্নয়নের সুফল এই অঞ্চলে এসে পৌঁছায়নি। ২০১৪ সালের আগেও প্রধানমন্ত্রী বহুবার অরুণাচল প্রদেশে এসেছেন। সেই সময় জমি, কঠোর পরিশ্রমী নাগরিক এবং বিপুল সম্ভাবনার এই রাজ্যে তিনি দেখেছেন প্রকৃতির অপার আশীর্বাদ রাজ্যের উপর বর্ষিত হয়েছে। অথচ সেই সময়ে দিল্লির শাসকরা অরুণাচলকে অবহেলা করেছেন। এই রাজ্যের জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে এখানে লোকসভার মাত্র ২ টি আসন রয়েছে। তিনি সেই সব রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করেন, যারা সাংসদ কম থাকার কারণে এই রাজ্যকে অবহেলা করত। অরুণাচল সহ সমগ্র উত্তর পূর্বের সম্পর্কে এই মনোভাবের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। সেই মনোভাবের কারণেই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলিতে উন্নয়ন হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে দেশের জন্য সেবা করার সুযোগ পাওয়ায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন দেশকে বৈষম্যের এই ভাবনা থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। তাঁর সরকারের নীতি ‘দেশ সর্বাগ্রে।’ লোকসভার আসন বা তাঁর দল কত ভোট পেয়েছে – এই বিষয়গুলিকে বিবেচনা করে তাঁরা সরকার চালান না। তাঁর সরকারের মূল মন্ত্র ‘নাগরিক দেব ভব’। যারা অতীতে তাঁদের কাজের স্বীকৃতি পেতেন না, আজ তাঁরা মোদী তাঁদের বন্দনা করছেন। বিরোধী শাসনে থাকার সময় উত্তরপূর্বাঞ্চল অবহেলার শিকার হয়েছে। ২০২৪-এর পরবর্তী সময়কালে এই অঞ্চল উন্নয়নের তালিকায় অগ্রাধিকার পেয়েছে। উত্তরপূর্বাঞ্চলের বাজেট বরাদ্দ বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার আর দিল্লির মধ্যে আবদ্ধ নেই। উত্তরপূর্বাঞ্চলে মন্ত্রী ও আধিকারিকরা ঘন ঘন সফর করেন।  
      
পূর্বতন সরকারের আমলে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দুই থেকে তিন মাস অন্তর মাত্র একবার উত্তর-পূর্বাঞ্চল সফর করতেন,। শ্রী মোদী বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা ৮০০ বারেরও বেশি উত্তর-পূর্বাঞ্চল সফর করেছেন। এই সফরগুলি প্রতীকী নয়; মন্ত্রীরা এখানে রাত্রিযাপন করে এই অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। তিনি নিজে ৭০ বারেরও বেশি উত্তর-পূর্বাঞ্চল সফর করেছেন। গত সপ্তাহে তিনি মিজোরাম, মণিপুর এবং আসাম ভ্রমণ করেছেন এবং গুয়াহাটিতে রাত কাটিয়েছেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে তিনি বলেন যে, তাঁর সরকার এই অঞ্চলের সঙ্গে মানসিক ব্যবধান দূর করেছে এবং দিল্লিকে জনগণের আরও কাছে নিয়ে এসেছে।

উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যকে অষ্টলক্ষ্মী হিসেবে সম্মান জানানো হয়।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলকে উন্নয়ন যাত্রায় পিছিয়ে রাখা যাবে না। কেন্দ্রীয় সরকার এই অঞ্চলের অগ্রগতির জন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করছে। সেই প্রসঙ্গে তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের সংগৃহীত করের একটি অংশ রাজ্যগুলিকে দেওয়া হয়। পূর্ববর্তী শাসনকালে, অরুণাচল প্রদেশ দশ বছরে কেন্দ্রীয় কর থেকে মাত্র ৬,০০০ কোটি টাকা পেয়েছিল। বিপরীতে, তাদের সরকারের সময়কালে, এই রাজ্য একই সময়ে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি পেয়েছে – যা ১৬ গুণ বেশি। এই পরিমাণ কেবল করের অংশের সঙ্গে সম্পর্কিত।   রাজ্যে বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্প এবং প্রধান প্রধান পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির আওতায় অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমাণের অন্তর্ভুক্ত নয়। এই কারণেই আজ অরুণাচল প্রদেশ এত ব্যাপক এবং দ্রুত উন্নয়নের সাক্ষী হচ্ছে।

উদ্দেশ্য যখন মহৎ এবং প্রচেষ্টা যখন সৎ হয়, তখন ফলাফল সকলেই অনুভব করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ সুশাসনের উপর এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাঁর সরকারের কাছে নাগরিকদের কল্যাণের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। জীবনযাত্রাকে সহজ করার জন্য, সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য অসুবিধা কমাতে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ সকলের কাছে পৌঁছে দিতে,  এবং ব্যবসা বাণিজ্যকে সহজতর করার জন্য,  নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারগুলি সক্রিয়ভাবে এই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে। যেসব অঞ্চলে একসময় রাস্তাঘাট ছিল না,  সেখানে এখন উন্নতমানের মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সেলা টানেলের মতো পরিকাঠামো, যা একসময় অসম্ভব বলে ভাবা হত, তা আজ  অরুণাচলের উন্নয়নের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

উড়ান প্রকল্পের আওতায় অরুণাচল প্রদেশ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হেলিপোর্ট স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগী হয়েছে। শ্রী মোদী জানান,  হলঙ্গি বিমানবন্দরে একটি নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মিত হয়েছে, ফলে দিল্লির জন্য সরাসরি বিমান পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে নিয়মিত যাত্রী, শিক্ষার্থী এবং পর্যটকরা যেমন উপকৃত হচ্ছেন, পাশাপাশি স্থানীয় কৃষক এবং ক্ষুদ্র শিল্পও লাভবান হচ্ছে। দেশের প্রধান প্রধান বাজারে ফল, শাকসবজি এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহন এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন , ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশকে  উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করা হচ্ছে। এই লক্ষ্য তখনই  বাস্তবায়িত হবে,  যখন প্রতিটি রাজ্য জাতীয় লক্ষ্যের সঙ্গে  সামঞ্জস্য রেখে এগিয়ে যাবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে অচিরাচরিত উৎস থেকে ৫০০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ। অরুণাচল প্রদেশ এই লক্ষ্য পূরনে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখছে। তিনি দুটি নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস করেন,  যা বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী রাজ্য  হিসেবে অরুণাচল প্রদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে, হাজার হাজার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যয়সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।  প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের দীর্ঘমেয়াদী  উন্নয়নমূলক কাজ এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতার সমালোচনা করেন, কারণ  অরুণাচল প্রদেশ  এবং সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উপর এর ফলে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। পার্বত্য অঞ্চল, বনাঞ্চল -- এই অঞ্চলগুলিকে প্রায়শই বিরোধী দলগুলি  পশ্চাদপদ এবং অবহেলিত বলে ঘোষণা করে।  উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উপজাতি অঞ্চল এবং জেলাগুলি এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সীমান্ত সন্নিহিত  গ্রামগুলিকে "শেষ গ্রাম" হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।  পূর্ববর্তী সরকারগুলি এভাবে তাদের দায়িত্ব এড়াতে এবং  ব্যর্থতা গোপন করতে চায়। এই অবহেলার ফলেই উপজাতি এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলি থেকে ক্রমাগত বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যাওয়া শুরু করেছিলেন।

শ্রী মোদী বলেন, তাঁর সরকার আঞ্চলিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পূর্বতন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বীকার করে না। আগে যে অঞ্চলগুলিকে “পিছিয়ে পড়া অঞ্চল” হিসেবে চিহ্নিত করা হত, এখন সেগুলিকেই “উচ্চাকাঙ্খী জেলা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি অতীতে “শেষ গ্রাম” এর তকমা পেত, এখন এগুলিকে “প্রথম গ্রাম” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রাণবন্ত গ্রাম কর্মসূচির আওতায় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। অরুণাচল প্রদেশে এধরণের ৪৫০ গ্রামে সড়ক, বিদ্যুৎ এমনকি ইন্টারনেট পরিষেবাও পৌঁছে গেছে। ফলে অতীতে এই গ্রামগুলি থেকে শহরে বাসিন্দারা চলে যেতেন। আর আজ এই গ্রামগুলি পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে।      
অরুণাচল প্রদেশে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, নতুন নতুন অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা্র প্রসার ঘটার ফলে পর্যটন শিল্পের ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দশকে অরুণাচল প্রদেশে পর্যটকের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। অরুণাচলের পর্যটন শিল্পের ক্ষমতা প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বাইরেও বিস্তৃত।  সম্মেলন এবং কনসার্ট পর্যটনকে কাজে লাগানোর উপর তিনি গুরুত্ব দেন। শ্রী মোদী মনে করেন,  তাওয়াংয়ে আধুনিক কনভেনশন সেন্টার রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে নতুন এক মাত্রা যোগ করবে। ভারত সরকারের প্রাণবন্ত গ্রাম কর্মসূচির আওতায়  সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে যথেষ্ট উন্নতি হচ্ছে, যা অরুণাচল প্রদেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়ক হবে।  


অরুণাচল প্রদেশে এখন যে দ্রুত উন্নয়ন নজরে আসছে তা দিল্লি এবং ইটানগর ─ দুই জায়গায় তাদের সরকারের কাজের যৌথ উদ্যোগে সম্ভব হয়েছে। কেন্দ্র এবং রাজ্যের সম্মিলিত প্রয়াস এই উন্নয়নে সহায়ক হচ্ছে। একটি ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের কাজ শুরু এবং মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী আরও বলেন আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় বিপুল সংখ্যক নাগরিক বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা  পেয়েছেন। কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকারের যৌথ প্রয়াসের মাধ্যমেই এই সাফল্য অর্জিত  হয়েছে।

শ্রী মোদী বলেন,  কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রয়াসে অরুণাচল প্রদেশ কৃষি ও উদ্যানপালনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছে। কিউই, কমলা, এলাচ এবং আনারসের মতো স্থানীয় উৎপাদিত ফল রাজ্যকে একটি নতুন পরিচয় দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী-কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্প এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য অত্যন্ত লাভজনক বলে প্রমাণিত হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন যে মা ও বোনেদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা তাঁর সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। দেশজুড়ে তিন কোটি "লাখপতি দিদি" তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু এবং তাঁর দল সক্রিয়ভাবে এই লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে চলেছে। তিনি রাজ্যে কর্মজীবী মহিলাদের জন্য হস্টেল শুরু করার   কথাও উল্লেখ করেছেন, যার ফলে মহিলারা প্রভূত উপকৃত হবেন। 
 
অনুষ্ঠানে বিপুল পরিমাণে মহিলাদের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে এবং জিএসটি সাশ্রয়ী  উৎসবের জন্য আবারও অভিনন্দন জানিয়ে শ্রী মোদী বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের জিএসটি সংস্কারের সুবিধাগুলি তাদের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। রান্নাঘরের নানা সরঞ্জাম, শিশুদের জন্য শিক্ষা উপকরণ এবং জুতো এবং পোশাকের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আরও কমবে।

প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালের পূর্ববর্তী সময়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেই সময়  মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বড় বড় কেলেঙ্কারি নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। তদানীন্তন সরকার জনসাধারণের উপর করের বোঝা বৃদ্ধি করেছিল। সেই সময় ২ লক্ষ টাকার বার্ষিক আয়ের উপরও আয়কর আরোপ করা হত। তখন অনেক অত্যাবশ্যক সামগ্রীর উপর ৩০ শতাংশের বেশি হারে কর ধার্য করা হত।  
 
নাগরিকদের আয় এবং সঞ্চয় বৃদ্ধির প্রতি তাঁর অঙ্গিকারের কথা স্মরণ করে শ্রী মোদী বলেন, বছরের পর বছর বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, তাঁর সরকার ধারাবাহিকভাবে আয়করের হার হ্রাস করেছে। এই বছর, ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত করা হয়েছে। জিএসটির এখন মাত্র দুটি স্ল্যাব - ৫ % এবং ১৮% । অনেক জিনিসপত্রকে করমুক্ত করা হয়েছে এবং বিভিন্ন পণ্যের উপর কর উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা হয়েছে। বাড়ি বানানো, স্কুটার বা বাইক কেনা, বাইরে খাওয়া এবং বেড়াতে যাওয়া - সবকিছুই এখন আরও সস্তা হয়ে উঠেছে। জিএসটি  সাশ্রয়ী উৎসব জনগণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।
অরুণাচল প্রদেশের জনসাধারণের দেশপ্রেমের চেতনার প্রশংসা করে শ্রী মোদী বলেন,  এখানকার মানুষ "নমস্কার" বলার আগে "জয় হিন্দ" বলেন। অর্থাৎ তারা নিজের আগে দেশকে অগ্রাধিকার দেন। দেশ যখন সম্মিলিতভাবে একটি উন্নত রাষ্ট্র গড়ে তোলায় উদ্যোগী হয়,  তখন আত্মনির্ভর হয়ে ওঠা একটি রাষ্ট্রীয় প্রত্যাশায় পরিণত হয়। ভারত তখনই উন্নত হবে যখন সে আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে। এর জন্য "স্বদেশী" মন্ত্র অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রী নাগরিকদের স্বদেশী পণ্য ব্যবহারের আহ্বান জানান।  শুধুমাত্র ভারতে তৈরি পণ্য কেনা-বেচার উপর গুরুত্ব দেওয়া এবং গর্বের সঙ্গে সেগুলিকে স্বদেশী হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব দেন তিনি। এই মন্ত্র অনুসরণ করলে দেশ, অরুণাচল প্রদেশ এবং সমগ্র উত্তর-পূর্বের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। আজ যে প্রকল্পগুলির উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হল, তার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

অনুষ্ঠানে অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যপাল, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে টি পারনায়ক, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী পেমা খান্ডু, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী কিরেন রিজিজু এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রেক্ষাপট 

জলবিদ্যুতের প্রচুর সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ইটানগরে ৩,৭০০ কোটি টাকার দুটি প্রধান জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাওয়াং-এ একটি অত্যাধুনিক কনভেনশন সেন্টারেরও শিলান্যাস করেন তিনি। এই সেন্টারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের সম্মেলন, সাংস্কৃতিক উৎসব এবং প্রদর্শনীর আয়োজন করা যাবে। এতে দেড় হাজারেরও বেশি প্রতিনিধির যোগদানের ব্যবস্থা থাকবে।   
 
এছাড়া যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, অগ্নি সুরক্ষা, কর্মরত মহিলাদের হস্টেল সহ ১,২৯০ কোটি টাকার বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রকল্পেরও সূচনা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় করদাতা, ব্যবসায়ী এবং শিল্পমহলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জিএসটি সংস্কারের প্রভাব নিয়ে আলোচনায় মিলিত হন।

 

SC/CB/SG


(Release ID: 2169734)