প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
৭৯তম স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লার প্রাকার থেকে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ
Posted On:
15 AUG 2025 12:29PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ১৫ অগাস্ট, ২০২৫
আমার প্রিয় দেশবাসী,
স্বাধীনতার এই মহান উৎসব আমাদের ১৪০ কোটি মানুষের সংকল্পের উদযাপন। স্বাধীনতার এই উৎসব সম্মিলিত সাফল্য উদযাপনের মুহূর্ত, গর্বের মুহূর্ত, আমাদের হৃদয় আজ আনন্দে ভরে রয়েছে। সমগ্র জাতি ক্রমাগত ঐক্যের চেতনাকে শক্তিশালী করে তুলছে। আজ, ১৪০ কোটি ভারতীয় তেরঙ্গায় সেজে উঠেছে। ভারতের প্রতিটি কোণে আজ ঘরে ঘরে তেরঙ্গা উড়ছে – সে মরুভূমি, হিমালয়ের চূড়া, সমুদ্র উপকূল, অথবা ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল যাই হোক না কেন সর্বত্রই একই প্রতিধ্বনি, একই জয়জয়কার - আমাদের প্রাণের থেকেও প্রিয় মাতৃ বন্দনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
১৯৪৭ সালে, অফুরন্ত সম্ভাবনা এবং কোটি কোটি বাহুবলে বলিয়ান হয়ে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল। দেশের আশা- আকাঙ্ক্ষা ডানা মেলেছিল, কিন্তু সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। শ্রদ্ধেয় বাপুর নীতি অনুসরণ করে, গণপরিষদের সদস্যরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ৭৫ বছর ধরে, ভারতের সংবিধান আমাদেরকে আলোকবর্তিকার মতো পথ দেখিয়ে চলেছে। আমাদের সংবিধানের নির্মাতারা - ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ, বাবাসাহেব আম্বেদকর, পণ্ডিত নেহেরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের মতো বহু মহান নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। শুধু তাই নয়, আমাদের মহিলারাও এক্ষেত্রে তাদের অবদান রেখেছিলেন। হংস মেহতা এবং দাক্ষয়িনী ভেলায়ুধনের মতো বিদুষীরা ভারতের সংবিধানকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা পালন করেছিলেন। আজ, লাল কেল্লার প্রাকার থেকে এই সংবিধান প্রণেতাদের, যাঁরা দেশকে পথ দেখিয়েছিলেন, দিশা নির্দেশ করেছিলেন, তাঁদের আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রণাম জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আজ, আমরা ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীও উদযাপন করছি। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ছিলেন ভারতের সংবিধানের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গকারী প্রথম মহান ব্যক্তিত্ব। সংবিধানের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ, ৩৭০ ধারার প্রাচীর অপসারণ এবং "এক জাতি, এক সংবিধান" মন্ত্রের বাস্তবায়নই ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি। আজ লাল কেল্লায় বহু বিশিষ্ট মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। দূর-দূরান্তের গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য আছেন, "ড্রোন দিদি", "লাখপতি দিদি"-র প্রতিনিধিরা আছেন, ক্রীড়াজগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা আছেন, জাতীয় জীবনে অবদান রাখা বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বও রয়েছেন। এক দিক থেকে বললে, আমি আমার চোখের সামনে এক ক্ষুদ্র ভারতকে দেখতে পারছি। আবার প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশাল ভারতও আজ লাল কেল্লার সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। স্বাধীনতা উদযাপনের এই মহালগ্নে আমি আমার দেশবাসী, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভারতপ্রেমীদের এবং আমাদের বন্ধুদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বন্ধুরা,
প্রকৃতি আমাদের সকলের পরীক্ষা নিচ্ছে। গত কয়েকদিনে আমরা অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি—ভূমিধ্বস, মেঘ ভাঙা বৃষ্টি এবং অসংখ্য অন্যান্য দুর্যোগ আমাদের সহ্য করতে হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের আমাদের সহানুভূতি জানাই। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলি হাতে হাত মিলিয়ে উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে চালাচ্ছে।
বন্ধুরা,
আজকের ১৫ই আগস্টের একটি বিশেষ তাৎপর্য আমি দেখতে পাচ্ছি। আমার খুব গর্ব হচ্ছে যে আজ আমি লাল কেল্লার প্রাকার থেকে অপারেশন সিঁদুরের সাহসী যোদ্ধাদের অভিবাদন জানাবার সুযোগ পাচ্ছি। আমাদের বীর সাহসী সৈন্যরা শত্রুদের কল্পনাতীত শাস্তি দিয়েছে। ২২ এপ্রিল, সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিরা এসে পহেলগাঁওয়ে গণহত্যা চালায়, ধর্ম জিজ্ঞাসা করে মানুষকে হত্যা করে, স্ত্রীর সামনে স্বামীকে গুলি করে এবং সন্তানের সামনে বাবাকে হত্যা করে। এই দেখে সারা ভারত আক্রশে ভরে উঠেছিল, সমগ্র বিশ্ব এই ধরণের হত্যাকাণ্ডে হতবাক হয়ে যায়।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
অপারেশন সিঁদুর ছিল সেই আক্রশেরই বহিঃপ্রকাশ। ২২ তারিখের ঘটনার পর, আমরা সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলাম – রণনীতি তারা স্থির করবে, লক্ষ্যবস্তু তারা নির্বাচন করবে এবং সময়ও তারাই নির্বাচন করবে। আমাদের সেনাবাহিনী তাই করে দেখিয়েছে যা গত কয়েক দশকের মধ্যে ঘটেনি। শত্রুভুখণ্ডের শত শত কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে তারা জঙ্গিদের সদর দপ্তর মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে, সন্ত্রাসের পরিকাঠামোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। পাকিস্তান এখনও শান্তিতে ঘুমোতে পারছে না। পাকিস্তানে ধ্বংসযজ্ঞ এতটাই ব্যাপক হয়েছে যে আজও প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য সামনে বেরিয়ে আসছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের দেশ বহু দশক ধরে সন্ত্রাসবাদ সহ্য করে আসছে। দেশের হৃদয় বারবার বিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা এক নতুন স্বাভাবিকতা প্রতিষ্ঠা করেছি। সন্ত্রাসবাদী এবং যারা সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেয়, লালন-পালন করে, তাদের আর আলাদা করে দেখা হবে না। তারা মানবতার সমান শত্রু, তাদের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। ভারত এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আমরা আর এই পারমাণবিক হুমকি সহ্য করব না। পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল অনেক দিন ধরে চলছে, তা আর সহ্য করা হবে না। যদি আমাদের শত্রুরা ভবিষ্যতেও এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়, তাহলে আমাদের সেনাবাহিনী তার নিজের শর্তে, তার পছন্দের সময়ে, যেভাবে উপযুক্ত মনে করবে সেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে এবং তার নিশানা স্থির করবে, আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব। আমরা মুখের মতো জবাব দেবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে - রক্ত আর জল একসঙ্গে বইতে পারে না। দেশের মানুষ এখন পুরোপুরি বুঝতে পেরেছেন যে সিন্ধু জল চুক্তি কতটা অন্যায্য এবং একপেশে ছিল। ভারত থেকে উৎপন্ন নদীর জল আমাদের শত্রুদের ক্ষেত সেচ করছে, অন্যদিকে কৃষকরা এবং আমাদের নিজেদের মাটি জলের অভাবে তৃষ্ণার্ত হয়ে রয়েছে। এ এমন এক চুক্তি ছিল যা গত সাত দশক ধরে আমাদের কৃষকদের অকল্পনীয় ক্ষতি করেছে। এখন থেকে ভারতের হকের জল শুধুমাত্র ভারতের জন্যই থাকবে, শুধুমাত্র ভারতের কৃষকদের জন্য। ভারত কয়েক দশক ধরে যে সিন্ধু চুক্তি সহ্য করেছে তা আর সহ্য করা হবে না। আমাদের কৃষকদের স্বার্থে এবং জাতির স্বার্থে এই চুক্তি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
স্বাধীনতার জন্য অসংখ্য মানুষ তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের যৌবন বিসর্জন দিয়েছেন, কারাগারে জীবন কাটিয়েছেন এবং ফাঁসিকাঠকে আলিঙ্গন করেছেন - কোনো ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়, মা ভারতীর সম্মানের জন্য, কোটি কোটি মানুষের স্বাধীনতার জন্য, দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙার জন্য - তাঁদের হৃদয়ে একটিই আবেগ নিয়ে - মর্যাদা।
বন্ধুরা,
দাসত্ব আমাদের দরিদ্র করে তুলেছিল, দাসত্ব এটি আমাদের নির্ভরশীল করে তুলেছিল। অন্যের উপর আমাদের নির্ভরতা বেড়েই চলেছিল। আমরা সকলেই জানি যে স্বাধীনতার পরে কোটি কোটি মানুষকে খাওয়ানো ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। আর আমার দেশের কৃষকরাই কঠোর পরিশ্রম করে জাতির শস্যভাণ্ডার ভরে তুলেছিলেন। তারা দেশকে খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর করে তুলেছিলেন। আজও একটি জাতির জন্য আত্মসম্মানের সবচেয়ে বড় মাপকাঠি হল তার আত্মনির্ভরতা।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
বিকশিত ভারতের ভিত্তিও হল আত্মনির্ভর ভারত। অন্যের উপর কোনো জাতির নির্ভরতা যত বেশি হয়, ততই তার স্বাধীনতার উপর প্রশ্নচিহ্ন দেখা দেয়। এই নির্ভরতা যখন অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন তা দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমরা বুঝতেও পারি না কখন আমরা আত্মনির্ভরতা ত্যাগ করি আর অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি। এই অভ্যাস অত্যন্ত বিপজ্জনক, আর তাই আত্মনির্ভরতার জন্য প্রতি মুহূর্তে সজাগ থাকতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আত্মনির্ভরতা কেবল আমদানি-রপ্তানি, অথবা টাকা, পাউন্ড এবং ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর অর্থ এত সীমিত নয়। আত্মনির্ভরশীলতা আমাদের সামর্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তাই যখন আত্মনির্ভরশীলতা কমতে শুরু করে, তখন সামর্থ্যও ক্রমাগত ক্ষীণ হতে থাকে। আর সে জন্যই, আমাদের সামর্থ্যের সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং তা বাড়ানোর জন্য আত্মনির্ভরশীল হওয়া অপরিহার্য।
বন্ধুরা,
অপারেশন সিঁদুরে আমরা 'মেড ইন ইন্ডিয়া'-র বিস্ময় প্রত্যক্ষ করেছি। শত্রুপক্ষ বুঝতেই পারেনি আমাদের কাছে কী অস্ত্র এবং ক্ষমতা আছে, কোন শক্তি তাদের চোখের পলকে ধ্বংস করছে। ভাবুন তো, আমরা যদি আত্মনির্ভর না হতাম, তাহলে কি এত দ্রুততার সঙ্গে অপারেশন সিঁদুর পরিচালনা করতে পারতাম? কে আমাদের সরবরাহ করবে, আমরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাব কিনা ইত্যাদি নিয়ে আমরা চিন্তিত থাকতাম। কিন্তু যেহেতু আমরা 'মেড ইন ইন্ডিয়া'-র শক্তি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর হাতে ছিল, তাই তারা কোনও উদ্বেগ ছাড়াই, কোনও বাধা ছাড়াই এবং কোনও দ্বিধা ছাড়াই তাদের বীরত্ব প্রদর্শন করেছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে গত দশ বছর ধরে আমারা যে ধারাবাহিক মিশন চালিয়ে এসেছি, তারই ফল আজ চোখে পড়ছে।
বন্ধুরা,
আমি আরেকটি বিষয়ের দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে একবিংশ শতাব্দী হল প্রযুক্তি-চালিত শতাব্দী। ইতিহাসের দিকে নজর দিলে আমরা দেখতে পাবো যে, যসব জাতি প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করেছে, তারা উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছেছে, অর্থনৈতিক নতুন মাত্রা অর্জন করেছে। আমরা যখন প্রযুক্তির বিভিন্ন মাত্রার কথা বলি, তখন আমি সেমিকন্ডাক্টরের দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। লাল কেল্লার প্রাকারে দাঁড়িয়ে আমি কোনো ব্যক্তি বা সরকারের সমালোচনা করি না, করতেও চাই না। কিন্তু যুব সমাজের এটা জানা উচিত। আমাদের দেশে, ৫০-৬০ বছর আগেই সেমিকন্ডাক্টর সম্পর্কিত ফাইল চালাচালি হতে শুরু করেছিল। তখনই সেমিকন্ডাক্টর কারখানার ভাবনাও ভাবা হয়েছিল। কিন্তু আমার তরুণ বন্ধুরা জেনে অবাক হয়ে যাবেন, আজ যে সেমিকন্ডাক্টর এক বিশ্বব্যাপী শক্তিতে পরিণত হয়েছে, কিন্তু ৫০-৬০ বছর আগে সেই ভাবনা, সেই ফাইল আটকে দেয়া হয়েছিল। সেমিকন্ডাক্টরের ধারণাটিই বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের ৫০-৬০ বছর নষ্ট হয়ে গেলো। আমাদের পরে অনেক দেশ সেমিকন্ডাক্টরের ধারণা গ্রহণ করেছে এবং আজ বিশ্বে তাদের শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বন্ধুরা,
আজ আমরা সেই বোঝা থেকে নিজেদের মুক্ত করেছ মিশন মোডে সেমিকন্ডাক্টরের কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছি। দেশে ছয়টি আলাদা আলাদা সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট তৈরি হচ্ছে, আমরা ইতিমধ্যেই চারটি নতুন ইউনিটকে সবুজ সংকেত দিয়েছি।
এবং আমার দেশবাসী,
বিশেষ করে তরুণদের এবং বিশ্বজুড়ে যারা ভারতের প্রযুক্তির শক্তি বোঝেন, তাদের আমি বলছি - এই বছরের শেষ নাগাদ, ভারতের মানুষের তৈরি, ভারতে তৈরি 'মেড ইন ইন্ডিয়া' চিপ বাজারে পাওয়া যাবে। আমি আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। জ্বালানি খাতে, আমরা সকলেই জানি যে পেট্রোল, ডিজেল এবং গ্যাসের জন্য আমরা অনেক দেশের উপর নির্ভরশীল, আমরা সেগুলি কিনতে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছি। জ্বালানি ক্ষেত্রে আমাদের দেশকে আত্মনির্ভর করতে হবে। আমরা এই সংকল্প নিয়েছি এবং গত ১১ বছরে সৌরশক্তি উৎপাদন ৩০ গুণ বেড়েছে। জলবিদ্যুতের প্রসার যাতে ঘটে এবং আমরা যাতে দূষণমুক্ত শক্তি পেতে পারি, সেজন্য আমরা নতুন নতুন বাঁধ নির্মাণ করছি। মিশন গ্রিন হাইড্রোজেনে ভারত হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। ভবিষ্যতের জ্বালানির কথা মাথায় রেখে, ভারত পরমাণু শক্তির ক্ষেত্রেও বড় বড় উদ্যোগ গ্রহণ করছে। ১০টি নতুন পরমাণু চুল্লির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে, যে বছরটিকে আমরা বিকশিত ভারতের লক্ষ্য অর্জনের বছর হিসেবে নির্ধারণ করেছি, যখন দেশ স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্ণ করবে – তখন আমরা আমাদের পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা দশগুণেরও বেশি বৃদ্ধি করার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া - সময়ের চাহিদা এবং পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে। পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্রে, আমরা বড় বড় সংস্কার চালু করেছি। আমরা এখন বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্যও পারমাণবিক শক্তির দরজা খুলে দিয়েছি, আমরা আমাদের শক্তিগুলিকে একত্রিত করতে চাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আজ যখন সারা বিশ্ব গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, তখন আমি বিশ্বকে বলতে চাই, ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০% দূষণমুক্ত শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা অর্জনের সংকল্প নিয়েছিল। আমরা লক্ষ্য পূরণের জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় ধার্য করেছিলাম। কিন্তু আমার দেশবাসীর সক্ষমতা দেখুন, ভারতকে উন্নত করার সংকল্প পূরণে তাদের দৃঢ়তা দেখুন – ২০২৩ সালে যে ৫০% দূষণমুক্ত শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য হাতে নেওয়া হয়েছিল, তা ২০২৫ সালেই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের পাঁচ বছর আগেই। এর কারণ আমরা বিশ্বের প্রতি যতটা সংবেদনশীল, প্রকৃতির প্রতিও ততটাই দায়বদ্ধ।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
বাজেটের একটা বিরাট অংশ পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাস ইত্যাদি আনতে খরচ হয়। লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টাকা দিতে হয়। আমরা যদি জ্বালানির উপর নির্ভরশীল না হতাম, তাহলে এই টাকা আমার দেশের যুবসমাজের ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগতো, এই টাকা আমার দেশের দরিদ্রদের দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কাজে আসতো, এই টাকা আমার দেশের কৃষকদের কল্যাণে ব্যবহার করা হত, এই টাকা আমার দেশের গ্রামের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ব্যবহার করা হত, কিন্তু এই টাকা আমাদের বিদেশে দিয়ে দিতে হয়। এখন আমরা আত্মনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। দেশকে উন্নত করার জন্য, আমরা এখন 'সমুদ্র মন্থন'-এর দিকে এগিয়ে চলেছি। আমরা সমুদ্রের তলদেশে তেল, গ্যাসের মজুদ ভাণ্ডার খুঁজে বের করার লক্ষ্যে মিশন মোডে কাজ করতে চাই এবং তাই ভারত জাতীয় গভীর জল অনুসন্ধান মিশন শুরু করতে চলেছে। জ্বালানিতে স্বাধীন হওয়ার লক্ষ্যে এ আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আজ সারা বিশ্ব বিরল খনিজ পদার্থ সম্পর্কে খুব সচেতন হয়ে উঠেছে, এর সম্ভাবনা খুব ভালোভাবে বুঝতে শুরু করেছে। এই সেদিন পর্যন্ত যে বিষয়টিতে খুব একটা বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, তা আজ কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। আমাদের ক্ষেত্রেও বিরল খনিজে আত্মনির্ভরতা অর্জন করা অনিবার্য হয়েছে। জ্বালানি ক্ষেত্র হোক, শিল্প ক্ষেত্র হোক, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র হোক বা অন্য কোনও প্রযুক্তি ক্ষেত্র হোক, বিরল খনিজ পদার্থ আজ প্রযুক্তিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সেজন্য আমরা ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশন চালু করেছি। গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলেছি, ১২০০টিরও বেশি স্থানে অনুসন্ধান অভিযান চলছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
দেশের প্রতিটি নাগরিক মহাকাশ ক্ষেত্রের বিস্ময় দেখছেন, গর্বে তাঁদের বুক ভরে উঠছে। আমাদের গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ফিরে এসেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে তিনি ভারতে আসছেন। নিজেদের সামর্থে মহাকাশ ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা অর্জনের জন্য ভারত গগনযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা নিজের সামর্থে নিজস্ব মহাকাশ তৈরির জন্য কাজ করছি। সম্প্রতি মহাকাশ ক্ষেত্রে যে সংস্কার করা হয়েছে তাতে আমি খুবই গর্বিত, দেশের ৩০০টিরও বেশি স্টার্টআপ আজ কেবলমাত্র মহাকাশ ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করছে এবং এই ৩০০ স্টার্টআপে হাজার হাজার যুবক তাদের পূর্ণ সামর্থ নিয়ে কাজ করছে। এটাই আমার দেশের যুব সমাজের শক্তি এবং এটাই আমাদের দেশের যুব সমাজের প্রতি আমাদের আস্থা।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
২০৪৭ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছর উদযাপনের সময়ে উন্নত ভারতের সংকল্পপূরণের জন্য ১৪০ কোটি ভারতবাসী পূর্ণ উদ্যম নিয়ে কাজ করছে। এই সংকল্প পূরণের জন্য, ভারত আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি আধুনিক পরিমণ্ডল তৈরি করছে। এই আধুনিক পরিমণ্ডল প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের দেশকে আত্মনির্ভর করে তুলবে। আজ লাল কেল্লার প্রাকার থেকে, আমার দেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের কাছে, প্রতিভাবান যুবকদের কাছে, ইঞ্জিনিয়ার ও পেশাদারদের কাছে এবং সরকারের প্রতিটি বিভাগের কাছেও আমার আহ্বান – আমাদের নিজেদের মেড ইন ইন্ডিয়া যুদ্ধবিমানের জেট ইঞ্জিন কি আমাদের নিজেদেরই তৈরি করা হবে না? আমাদেরকে বিশ্বের ফার্মেসি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। টিকার ক্ষেত্রে আমরা নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছি, কিন্তু গবেষণা ও উন্নয়নে আরও বেশি জোর দেওয়া কি এই সময়ের দাবি নয়? আমাদের নিজস্ব পেটেন্ট থাকা উচিত, মানবজাতির কল্যাণে আমাদের সবচেয়ে সস্তা এবং কার্যকর ওষুধ নিয়ে গবেষণা করা উচিত এবং সংকটের সময়ে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই এগুলি যাতে মানবজাতির কল্যাণে কাজে আসে তা নিশ্চিত করা উচিত। ভারত সরকার BioE3 নীতি প্রণয়ন করেছে। আমি দেশের তরুণদের অনুরোধ করছি, আসুন BioE3 নীতি ভালো করে বুঝে নিয়ে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিন। আমাদের দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে এজন্য আপনাদের সমর্থন প্রয়োজন।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, আমাদের কাছে তথ্যের শক্তি আছে, এটা কি সময়ের দাবি নয়? অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে সাইবার নিরাপত্তা, গভীর প্রযুক্তি থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সবকিছুই আমাদের নিজস্ব হওয়া উচিত, যার উপর আমাদের নিজস্ব জনগণের শক্তি কেন্দ্রীভূত, আমাদের উচিত তাদের ক্ষমতার সঙ্গে বিশ্বের পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
বন্ধুরা,
আজ সোশ্যাল মিডিয়া হোক বা অন্য কোনও প্ল্যাটফর্ম, সারা বিশ্বের প্ল্যাটফর্মগুলিতে আমরা কাজ করছি। আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি, আমাদের নিজস্ব UPI প্ল্যাটফর্ম আজ বিশ্বকে অবাক করে দিচ্ছে। আমাদের ক্ষমতা আছে, ভারত একাই UPI-এর মাধ্যমে ৫০% রিয়েল টাইম লেনদেন করছে। এর অর্থ হল আমাদের শক্তি আছে। সৃজনশীল বিশ্ব হোক, সোশ্যাল মিডিয়া হোক বা যে কোনো ধরনে প্ল্যাটফর্ম হোক, আমি আমার দেশের তরুণদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, আসুন, আমাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম কেন নেই, কেন আমাদের অন্যদের উপর নির্ভর করবো, কেন ভারতের সম্পদ বাইরে চলে যাবে? আপনাদের ক্ষমতার উপর আমার বিশ্বাস আছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
জ্বালানির জন্য যেমন আমরা বিশ্বের উপর নির্ভরশীল, তেমনি দেশের দুর্ভাগ্য যে সারের জন্যও আমাদের বিশ্বের উপর নির্ভর করতে হয়। আমার দেশের কৃষকরাও সার সঠিকভাবে ব্যবহার করে মাতৃভূমির সেবা করতে পারে। সারের নির্বিচার ব্যবহারে আমরা মাতৃভূমির অনেক ক্ষতি করছি। কিন্তু একই সঙ্গে, আমি দেশের যুবসমাজকে, দেশের শিল্পমহলকে, দেশের বেসরকারি ক্ষেত্রকে বলতে চাই, আসুন আমরা সারের ভাণ্ডার ভরে দেই, নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করি এবং অন্যের উপর নির্ভর না করে ভারতের প্রয়োজন অনুসারে নিজস্ব সার প্রস্তুত করি।
বন্ধুরা,
আগামী যুগ ইভি-র। তাহলে আমরা কি ইভি ব্যাটারি তৈরি করবো না? অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবো? সৌর প্যানেল হোক বা ইলেক্ট্রিক যানবাহনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস, সবই আমাদের নিজস্ব থাকা উচিত।
বন্ধুরা,
আমার এই কথা বলার সাহস হচ্ছে কারণ দেশের যুব সমাজের ক্ষমতার উপর আমার আস্থা রয়েছে। এই আস্থার কারণ এই নয় যে তারা আমার দেশের তরুণ। কোভিডের সময়ে আমরা যখন অনেক কিছুর উপর নির্ভরশীল ছিলাম তখন আমার দেশের তরুণদের বলা হয়েছিল আমাদের নিজস্ব টিকার প্রয়োজন, তারা তা করে দেখিয়েছিলেন। কো-উইন প্ল্যাটফর্ম আমাদের নিজস্ব হওয়া উচিত, দেশ তা করে দেখিয়েছে। কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজ আমরা করেছি। সেই একই চেতনা, একই জেদ – জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়ার জন্য আমাদের সব কিছু দিতে হবে, আমাদের সেরাটা দিতে হবে।
বন্ধুরা,
গত ১১ বছরে, উদ্যোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে অসাধারণ শক্তি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আজ, টিয়ার-২ এবং টিয়ার-৩ শহরে লক্ষ লক্ষ স্টার্ট-আপ দেশের অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনকে শক্তিশালী করছে। একইভাবে, আমাদের কোটি কোটি যুবক মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার জন্য ঋণ নিয়েছে, এর মধ্যে আমাদের মেয়েরাও রয়েছে। তারা নিজেরা নিজেদের পায়ে তো দাঁড়িয়েছেই, অন্যদেরও জীবীকা অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছে। এটাও একরকমভাবে প্রতিটি ব্যক্তিকে আত্মনির্ভর হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।
আমার বন্ধুরা,
মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দিকে আগে কেউ নজর দিত না। কিন্তু গত ১০ বছরে, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি অসাধারণ কাজ করেছে। আজ, তাদের পণ্য সারা বিশ্বের বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। আমাদের মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে। আমি একবার ‘মন কি বাত’-এ খেলনা নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমরা বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকার খেলনা আমদানি করতাম। আমি ‘মন কি বাত’-এ কথাচ্ছলে বলেছিলাম, "আমার তরুণ বন্ধুরা, আমরা কি এভাবেই বিদেশ থেকে খেলনা আনতে থাকব?" আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলছি যে আমার দেশ খেলনা রপ্তানি শুরু করেছে। অর্থ দেশের সামর্থকে যদি সুযোগ দেওয়া যায়, সমস্ত বাধা থেকে মুক্ত করা যায়, তাকে প্রেরণা যোগানো যায় তাহলে দেশ করে দেখাতে পারে। আমি দেশের যুব সমাজকে বলছি, আসুন, আপনাদের উদ্ভাবনী ভাবনাগুলিকে সামনে আনুন, আপনাদের ভাবনাগুলোকে মরতে দেবেন না বন্ধুরা। আপনার আজকের ভাবনা আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত গড়ে দিতে পারে। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমি আপনাদের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত। আপনাদের সঙ্গী হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত। এগিয়ে আসুন, সাহস সঞ্চয় করুন, উদ্যোগ নিন। যারা উৎপাদনের কথা ভাবছেন তারা এগিয়ে আসুন। যদি সরকারি নিয়ম বদল করার দরকার হয়, আমাকে বলুন। দেশ এখন থামতে চায় না। ২০৪৭ খুব বেশি দূরে নয় - প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান এবং বন্ধুরা, আমরা একটি মুহূর্তও নষ্ট করতে চাই না।
বন্ধুরা,
এটা এগিয়ে যাওয়ার সময়, বড় মাপের স্বপ্ন দেখার সময়, সংকল্পের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করার সময়। যখন সরকার আপনাদের সঙ্গে রয়েছে, আমি নিজে আপনাদের সঙ্গে রয়েছি, তখন আমরা নতুন ইতিহাস তৈরি করতে পারি।
বন্ধুরা,
আজ জাতীয় উৎপাদন মিশন দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে। আমাদের MSME গুলি সালা বিশ্বে স্বীকৃত এবং সম্মানিত। সারা বিশ্বে যা কিছু বড় বড় পণ্য তৈরি হয়, তার কিছু না কিছু উপাদান আমাদের MSME গুলি থেকে আসে। আমরা এগুলি গর্বের সঙ্গে রপ্তানি করি। কিন্তু আমরা সার্বিক ও সংযুক্ত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে চাই। এজন্য আমাদের তাদের ক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। আমি একবার লাল কেল্লা থেকে বলেছিলাম – জিরো ডিফেক্ট, জিরো এফেক্ট। আজ আমি আবারও বলছি আমরা যদি বিশ্ব বাজারে নিজেদের শক্তি প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, তাহলে আমাদের ক্রমাগত গুণগত মানের নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে হবে। দুনিয়া গুণমানের কদর করে। আমাদের গুণমানকে সর্বোত্তম হতে হবে। কাঁচামাল যাতে সহজে পাওয়া যায়, উৎপাদনের খরচ যাতে কমে সেজন্য সরকারের তরফ থেকে আমাদের প্রয়াসও অব্যাহত থাকবে।
বন্ধুরা,
উৎপাদন ক্ষেত্রে যারা রয়েছেন, তাদের সকলের মন্ত্র হওয়া উচিত - "দাম কম, কিন্তু মূল্য বেশি।" আমাদের প্রতিটি পণ্যের মূল্য যাতে বেশি হয়, কিন্তু দাম কম থাকে সেই চেতনা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
দেশের স্বাধীনতার জন্য অসংখ্য মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি আগেও বলেছি - তাঁরা তাঁদের যৌবন দিয়েছেন, তাঁরা ফাঁসির দড়ি গলায় পড়েছেন - কেন? স্বাধীন ভারতের জন্য। ৭৫-১০০ বছর আগের সেই সময়ের কথা ভাবুন, যখন সমগ্র জাতি স্বাধীন ভারতের মন্ত্র নিয়ে বেঁচে ছিল। আজ সময়ের দাবি হল - যাঁরা স্বাধীন ভারতের মন্ত্র নিয়ে বেঁচে ছিলেন, তাঁরা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আজ ১৪০ কোটি ভারতবাসীর একটাই মন্ত্র হওয়া উচিত - সমৃদ্ধ ভারত। কোটি কোটি মানুষের আত্মবিসর্জন যদি আমাদের স্বাধীনতা এনে দিতে পারে, তাহলে কোটি কোটি মানুষের সংকল্পে কঠোর পরিশ্রমে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠায় "ভোকাল ফর লোকাল"-এর প্রচারে এবং স্বদেশীর মন্ত্র উচ্চারণে সমৃদ্ধ ভারতও তৈরি হতে পারে। সেই প্রজন্ম নিজের স্বাধীন ভারতের জন্য উৎসর্গ করেছিল, এই প্রজন্মকে সমৃদ্ধ ভারতের জন্য সাহসী নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে, এটাই সময়ের দাবি। এই কারণেই আমি বারবার অনুরোধ করছি, এবং দেশের সকল প্রভাবশালীদের বলতে চাই - এই মন্ত্রটি ছড়িয়ে দিতে আমাকে সাহায্য করুন। আমি সমস্ত রাজনৈতিক দল, রাজনীতিবিদ, সকলের কাছে আবেদন করছি: আসুন, এটি কোনও একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নয়। ভারত আমাদের সকলের। আসুন একসঙ্গে, "ভোকাল ফর লোকাল"-কে প্রতিটি নাগরিকের জীবনের মন্ত্র করে তুলি।
আমাদের কেবল সেই পণ্যগুলি কেনা এবং ব্যবহার করা উচিত যা ভারতীয় নাগরিকদের পরিশ্রমে তৈরি, যা আমাদের মাটির সুগন্ধ বহন করে এবং আত্মনির্ভরতার জন্য আমাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করে। এ যদি আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার হয়, তাহলে শীঘ্রই আমরা বিশ্বকে বদলে দেব। আমি আজ প্রতিটি ছোট ব্যবসায়ী এবং দোকানদারের কাছেও আবেদন জানাচ্ছি, আপনাদেরও একটি দায়িত্ব আছে। আমাদের ছোটবেলায়, আমরা দেখতাম দোকানে লেখা আছে "ঘি-এর দোকান" পরে "খাঁটি ঘি-এর দোকান" লেখা শুরু হল। একইভাবে আমি চাই সারা দেশের ব্যবসায়ী এবং দোকানদাররা বোর্ড লাগান যাতে লেখা থাকে - "এখানে স্বদেশী পণ্য বিক্রি হয়"। আসুন আমরা স্বদেশী নিয়ে গর্ব করি। বাধ্য হয়ে নয়, আমরা আমাদের শক্তির প্রকাশের জন্য এগুলি ব্যবহার করি, আমাদের নিজস্ব শক্তির জন্য এবং প্রয়োজনে অন্যদেরও এটি ব্যবহারে বাধ্য করার জন্য ব্যবহার করি। এটাই আমাদের শক্তি হওয়া উচিত। এটাই আমাদের মন্ত্র হওয়া উচিত।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
দীর্ঘদিন ধরে আমি সরকারে থেকে মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আমি অনেক উত্থান-পতন দেখেছি। সরকারগুলি যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, তার সঙ্গে আমি পরিচিত, প্রশাসনিক ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাও আমার অজানা নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের দায়িত্ব হল, অন্যের অর্জনকে খাটো করে দেখানোর জন্য আমাদের শক্তি নষ্ট না করা। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অন্যদের ছোট করার জন্য আমাদের শক্তি ব্যয় করা উচিত নয়, বরং, আমাদের নিজেদের ক্ষমতা এবং অর্জনগুলিকে উন্নত করার জন্য আমাদের সম্পূর্ণ শক্তি উৎসর্গ করা উচিত। যখন আমরা বৃদ্ধি এবং উৎকর্ষ অর্জন করব, তখন বিশ্ব আমাদের মূল্য স্বীকার করবে। আজ যখন বিশ্বজুড়ে দিনের পর দিন অর্থনৈতিক স্বার্থের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে, তখন আমাদের নিজেদের সঙ্কট নিয়ে কান্নাকাটি করে কোনো লাভ নেই এটা সময়ের দাবি। সাহসের সঙ্গে আমাদের নিজেদের শক্তি এবং মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে। আমার ২৫ বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থেকে, আমি বলতে পারি - যদি আমরা এই পথ বেছে নিই তাহলে কোনো স্বার্থ আমাদের ফাঁদে ফেলতে পারবে না।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
গত দশক সংস্কার, কর্মক্ষমতা এবং রূপান্তরের দশক। কিন্তু এখন আমাদের প্রচেষ্টায় নতুন শক্তি যোগ করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে, আমরা অনেক সংস্কার করেছি – সে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, বীমার ক্ষেত্রে, বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ভারতে ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে – অনেক সংস্কার হয়েছে। আমরা ৪০,০০০-এরও বেশি অপ্রয়োজনীয় বিধিগত বাধ্যবাধকতা আমরা বাতিল করেছি। ১,৫০০টিরও বেশি পুরনো আইন বাতিল করা হয়েছে। আমরা সংসদে ডজন ডজন আইনের সংশোধন করেছি, সর্বদা জনসাধারণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। এবারও হট্টগোলের মধ্যে, আয়কর আইনে যে খুব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হয়েছে তা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু আয়কর আইনে খুব বড় একটা সংস্কার হয়েছে। আমরা ২৮০টির মতো ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর বন্ধুরা, আমাদের সংস্কারগুলি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয় – এর লক্ষ্য হল নাগরিকদের জীবনযাপনকে সহজ করে তোলা। আয়কর রিফান্ড দ্রুত করা সংস্কারের ফলেই হয়েছে। ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট সংস্কারের ফলে হয়েছে। ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কে আয়কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া—এটা জাতি গঠনে অবদান রাখা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির কাছে অত্যন্ত আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে। আগে কেউ কখনও কল্পনাও করেনি যে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত হতে পারে, কিন্তু আমরা আজ এটি বাস্তবে রূপ দিয়েছি।
যখন দেশের শক্তি বাড়ে, তখন নাগরিকরা তার সুফল ভোগ করেন। ব্রিটিশ আমল থেকে আমরা তাদের তৈরি দণ্ডবিধির আওতায় ছিলাম, পদে পদে শাস্তির ভয়ে দেখানো হতো। স্বাধীনতার ৭৫ বছর এভাবেই কেটেছে। আমরা দণ্ডবিধি বাতিল করে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা চালু করেছি। এটি ভারতের নাগরিকদের প্রতি আস্থা, আত্মীয়তার অনুভূতি এবং সংবেদনশীলতায় পরিপূর্ণ। আমরা সংস্কারের যাত্রার গতি আরও বাড়ানোর সংকল্প নিয়েছি, আমরা দ্রুত এগিয়ে যেতে চাই। আমি আমার দেশবাসীকে বলতে চাই - আমি যা করছি তা দেশের জন্য করছি, নিজের জন্য নয়, কারও ক্ষতি করার জন্য নয়। আমি রাজনৈতিক দল, আমার প্রতিযোগী এবং সমস্ত সহ-নেতাদের জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এগিয়ে আসার এবং আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। কাঠামোগত সংস্কার, নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্কার, নীতিগত সংস্কার, প্রক্রিয়াগত সংস্কার অথবা সাংবিধানিক সংস্কার - যাই হোক না কেন, আমরা আজ সকল ধরণের সংস্কারকে আমাদের লক্ষ্য করে তুলেছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
পরবর্তী প্রজন্মের সংস্কারের জন্য, আমরা একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই টাস্ক ফোর্স একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তার কাজ সম্পন্ন করবে। বর্তমান নিয়ম, আইন, নীতি এবং পদ্ধতিগুলিকে একবিংশ শতাব্দীর সঙ্গে সাযুজ্য রেখে, বিশ্ব পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে এবং ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে একটি উন্নত জাতিতে পরিণত করার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে পুনর্গঠন করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এটি সম্পন্ন করার জন্য এই টাস্কফোর্স তৈরি করা হয়েছে।
বন্ধুরা,
যারা নতুনভাবে তাদের ভবিষ্যৎ গঠন করতে চান এই সংস্কারগুলি তাদের সকলকে সাহস যোগাবে। আমাদের স্টার্ট-আপ, আমাদের ক্ষুদ্র শিল্প, অথবা আমাদের কুটির শিল্প, সব ক্ষেত্রেই বিধিগত বাধ্যবাধকতার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে, যা তাদের নতুন শক্তি যোগাবে। রপ্তানির ক্ষেত্রেও লজিস্টিক্স এবং ব্যবস্থার পরিবর্তনে তারা সুবিধা পাবেন।
বন্ধুরা,
আমাদের দেশে এমন আইন রয়েছে, যা শুনতে অবাক লাগলেও তুচ্ছ বিষয়ে কারাদণ্ডের বিধান রাখে, এবং কেউ কখনও সেগুলিতে মনোযোগ দেয়নি। আমি নিজেই এই ধরণের অপ্রয়োজনীয় আইন বাতিল করার দায়িত্ব নিয়েছি, যা ভারতীয় নাগরিকদের কারাগারে পাঠায়। আমরা আগে সংসদে একটি বিল পেশ করেছিলাম; আমরা এবার আবার এটি এনেছি।
বন্ধুরা,
এই দীপাবলিকে আমি আপনাদের জন্য ডাবল দীপাবলি করে তুলতে যাচ্ছি। এই দীপাবলিতে আপনারা খুব বড় একটা উপহার পেতে চলেছেন। গত ৮ বছরে আমরা জিএসটি-র বড় ধরনের সংস্কার করেছি, সারা দেশে করের বোঝা কমিয়েছি, কর ব্যবস্থার সরলীকরণ করেছি। ৮ বছর পরে সময়ের দাবিতে আমরা এটি পর্যালোচনা করতে যাচ্ছি। আমরা একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে পর্যালোচনা শুরু করেছি এবং রাজ্যগুলির সঙ্গেও আলোচনা করেছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জিএসটি সংস্কার নিয়ে আসছি, এই দীপাবলিতে আপনাদের জন্য এটি একটি দারুণ উপহার হবে, সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর উপর কর উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে, আপনারা অনেক সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আমাদের MSME এবং ছোট উদ্যোক্তারা এতে লাভবান হবেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুব সস্তা হয়ে উঠবে এবং এটি অর্থনীতিতেও নতুন গতি আনবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আজ দেশ তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। আমরা দরজায় কড়া নাড়ছি এবং আমরা এটি খুব দ্রুত অর্জন করব। এমন একদিন আসবে যখন আমি আপনাদের মাঝে যাব এবং লাল কেল্লার প্রাকার থেকে এই খবর আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেবো। আজ ভারতের অর্থনীতি এবং অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতি সম্পর্কে সমগ্র বিশ্ব আস্থাশীল। এত অস্থিরতার মধ্যেও ভারতের আর্থিক শৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক শক্তি আশার আলো হয়ে রয়ে গেছে। বিশ্ব অর্থনীতি যখন সঙ্কটের কবলে, তখন ভারতই একমাত্র দেশ যা এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। সমগ্র বিশ্বেও ভারতের প্রতি এই আস্থা রয়েছে। আজ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার মজুতভাণ্ডার খুবই শক্তিশালী, আমাদের ম্যাক্রো অর্থনৈতিক সূচকগুলি খুবই মজবুত, আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থাগুলিও ক্রমাগত ভারতের প্রশংসা করছে, ভারতীয় অর্থনীতির প্রতি আরও বেশি আস্থা প্রকাশ করছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি যাতে এই বিকাশশীল অর্থনীতির সুবিধাগুলি আমার দেশের দরিদ্রদের কাছে, কৃষকদের কাছে, নারীশক্তির কাছে, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে পৌঁছে দিতে পারি এবং এটি আমার দেশের উন্নয়নের শক্তির উৎস হয়ে ওঠে।
আজ আমাদের যুবসমাজের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি হচ্ছে। দক্ষতা উন্নয়ন, স্বরোজগার, বড় বড় কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ - দেশের যুবসমাজের জন্য এক বিশাল অভিযান চলছে। দেশের যুবসমাজ - আজ আমি আপনাদের জন্যও সুসংবাদ নিয়ে এসেছি। আজ ১৫ অগাস্ট। আজকের দিনেই আমাদের দেশের যুবসমাজের জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চালু করছি। প্রধানমন্ত্রী বিকশিত ভারত রোজগার যোজনা আজ থেকেই থেকেই চালু হচ্ছে। এই যোজনার আওতায় সরকার বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরি পাওয়া প্রতিটি ছেলে বা মেয়েকে ১৫,০০০ টাকা করে দেবে। যেসব সংস্থা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে তাদেরও আর্থিক উৎসাহ দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বিকশিত ভারত রোজগার যোজনা প্রায় ৩.৫ কোটি যুবক-যুবতীর জন্য নতুন কর্মসংস্থানের দরজা খুলে দেবে। আমি যুবসমাজের সবাইকে এজন্য অনেক অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আজ ভারতে সকলেই নারী শক্তিকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে। আমাদের মহিলারা বিকাশশীল অর্থনীতির সুবিধাভোগী করেছেন, সেই সঙ্গে এই বিকাশকে গতি দিতেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের মেয়েরা স্টার্টআপ থেকে মহাকাশ ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে। তারা ক্রীড়াক্ষেত্রে নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখছে, সেনাবাহিনীতে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে, আজ তারা গর্বের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের উন্নয়ন যাত্রায় অংশগ্রহণ করছে। এনডিএ-র প্রথম মহিলা ক্যাডেটরা যখন পাস আউট হয়েছিলেন, তখন সমগ্র জাতির বুগ গর্বে ভরে উঠেছিল। সমস্ত টিভি চ্যানেল তা দেখিয়েছিল, দারুণ এক গর্বের মুহূর্ত ছিল। ১০ কোটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বোনেরা মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো কাজ করছে। নমো ড্রোন দিদি, নারী শক্তির এক নতুন পরিচয় হয়ে উঠেছে। গ্রামের এক বোনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। সে বলেছিল যে গ্রামবাসীরা এখন তাকে পাইলট বলে ডাকে। সে অনেক লেখাপড়া করেনি, কিন্তু মর্যাদা অর্জন করেছে।
বন্ধুরা,
আমরা ৩ কোটি নারীকে লাখপতি দিদি বানানোর সংকল্প নিয়েছিলাম। আমি সন্তুষ্ট যে এই ব্যাপারে দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। আমরা সময়ের আগেই ৩ কোটির লক্ষ্য অর্জন করব এবং আজ আমি আনন্দের সঙ্গে দেশকে বলতে চাই, আমার নারীশক্তির ক্ষমতা দেখুন, দেখতে দেখতে দুই কোটি নারী লাখপতি দিদি হয়ে গেছেন। আজ কিছু লাখপতি দিদি আমাদের সামনে বসে রয়েছেন। এটাই আমার শক্তি এবং আমি বিশ্বাস করি বন্ধুরা, ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় তাঁদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমার দেশের কৃষকদের ভারতের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রয়েছে। ভারতের কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমের ফল পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর, আমার দেশের কৃষকরা শস্য উৎপাদনে পূর্ববর্তী সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে, এটাই আমার দেশের সামর্থ। জমি একই রয়েছে, কিন্তু ব্যবস্থা বদলেছে, জল পৌঁছাতে শুরু করেছে, ভালো বীজ পাওয়া শুরু হয়েছে, কৃষকরা উন্নত সুযোগ-সুবিধা পেতে শুরু করেছেন, তাই তাঁরাও দেশের জন্য নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। আজ ভারত দুধ, ডাল এবং পাট উৎপাদনে বিশ্বের এক নম্বরে। আজ আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাছ উৎপাদনকারী। আমার মৎস্যজীবী ভাই ও বোনদের শক্তি দেখুন। আমরা মাছ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছেছি। আজ ভারত ধান, গম, ফলমূল এবং শাকসবজি উৎপাদনেও বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছেছে।
বন্ধুরা,
আপনারা খুশি হবেন, আমার দেশের কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য আজ বিশ্ব বাজারে পৌঁছেছে। ৪ লক্ষ কোটি টাকার কৃষিপণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। আমার দেশের কৃষকরা তাঁদের শক্তি দেখিয়েছেন। ছোট কৃষক, গবাদি পশুপালক, মৎস্যজীবী – প্রত্যেকের কাছেই আমরা দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি, বৃষ্টির জল সংগ্রহ প্রকল্প, সেচ প্রকল্প, উন্নতমানের বীজ সরবরাহ, সারের প্রয়োজনীয়তা মেটানো - প্রতিটি ক্ষেত্রেই কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে। কৃষকরা আজ ফসল বীমার উপর আস্থা রাখছেন। তিনি সাহসী হয়ে উঠছেন, দেশ তার ফলাফলও পাচ্ছে। আগে এটি কল্পনার বিষয় ছিল, আজ এটি বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের মনে আছে যে আমরা বিনামূল্যে কোভিড টিকা পেয়েছি, কিন্তু আমাদের দেশের গবাদি পশুদের বাঁচানোর জন্য আমরা এখনও পর্যন্ত পশুদের ১২৫টি ডোজ বিনামূল্যে দিয়েছি। উত্তর ভারতে 'খুরপাকা' রোগ নামে পরিচিত পা ও মুখের রোগ থেকে মুক্তি পেতে, আমরা ১২৫ কোটি ডোজ দিয়েছি এবং তাও বিনামূল্যে। কৃষির ক্ষেত্রে, দেশের যেসব জেলায় কৃষকরা কোনও না কোনও কারণে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছেন, এমন ১০০টি জেলা রয়েছে যেখানে তুলনামূলকভাবে কম কৃষিকাজ হয়, সেখানে আমরা সারা দেশ থেকে ১০০টি জেলা চিহ্নিত করেছি। সেখানকার কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে, তাঁদের ক্ষমতায়নে, তাঁদের সাহায্য করতে আমরা প্রধানমন্ত্রী ধন-ধান্য কৃষি যোজনা শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রী ধন-ধান্য কৃষি যোজনার আওতায় দেশের ওই ১০০টি জেলার কৃষকদের সামান্য একটু সাহায্য করলেই তাঁরাও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে একই স্তরে উঠে আসবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
ভারতের কৃষক, ভারতের গবাদি পশুপালক, ভারতের মৎস্যজীবী - এরা আমাদের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। ভারতের কৃষক, ভারতের মৎস্যজীবী এবং ভারতের গবাদি পশুপালকদের সঙ্গে জড়িত যেকোনো ক্ষতিকারক নীতির সামনে মোদী প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। ভারত তার কৃষক, তার পশুপালক, তার মৎস্যজীবীদের ক্ষেত্রে কোনও কোনো আপস করবে না।
প্রিয় দেশবাসী,
দারিদ্র্য কী তা আমাকে বইয়ে পড়ে জানতে হয়নি। আমি জানি। আমিও সরকারেও দীর্ঘদিন ধরে রয়েছি, তাই আমার প্রচেষ্টা হল সরকার যেন ফাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। সরকার দেশের নাগরিকদের জীবনে থাকা উচিত।
দলিত, নিপীড়িত, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য সরকারের সক্রিয়ভাবে কাজ করা উচিত, সরকারকে জনবান্ধব হতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। সমাজের প্রতিটি অভাবী ব্যক্তির জন্য, অনেকে মনে করে যে সরকারি পরিকল্পনা তো আগেও ছিল – কিন্তু না, আমরা বাস্তবের মাটিতে নেমে সরকারি পরিকল্পনার রূপায়ণ করছি। আমরা পূর্ণতার উপর জোর দিই, কারণ সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রকৃত অর্থই হল পূর্ণতা, যেখানে কোনও যোগ্য ব্যক্তি বাদ পড়বেন না, যেখানে সরকার যোগ্য ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে তাদের ন্যায্য অধিকার দিয়ে আসে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।
যখন জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল, তখন এটি কেবল একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয় ছিল না - এটি মানুষকে আত্মসম্মান দিয়েছে, এই অনুভূতি দিয়েছে যে ব্যাংকের দরজা আমার জন্যও খোলা আছে, আমিও ব্যাংকে যেতে পারি, টেবিলে হাত রাখতে পারি এবং কথা বলতে পারি। এই আত্মবিশ্বাসই আমরা তৈরি করেছি। আয়ুষ্মান ভারত মানুষকে নীরবে অসুস্থতা সহ্য করার অভ্যাস থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের উন্নতমানের স্বাস্থ্যপরিসেবা পেতে সাহায্য করেছে। যখন আমরা প্রবীণ নাগরিকদের তাঁদের স্বাস্থ্যের প্রয়োজনে ৫,০০,০০০ টাকারও বেশি সাহায্য করি, তখন এর মধ্য দিয়ে তাঁদের স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের উদ্বেগের প্রকাশ ঘটে। আজ প্রধানমন্ত্রী আবাসের মাধ্যমে, ৪ কোটি দরিদ্র মানুষ ঘর পেয়েছেন - যার অর্থ তাদের জীবনে নতুন স্বপ্ন তৈরি হয়েছে। বন্ধুরা, এগুলি কেবল চারটি দেয়াল নয়। পথ বিক্রেতাদের জন্য, প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি প্রকল্প রয়েছে, যারা একসময় চড়া সুদের চক্রে আটকা পড়েছিলেন, এই প্রকল্পের ফলে এখন তারা স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে পারছেন। আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন যে আজ রাস্তার বিক্রেতারাও UPI এর মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ এবং প্রদান করে। এই পরিবর্তন বোঝায় যে সমাজের প্রান্তিকতম ব্যক্তির জীবনেও সরকারের উপস্থিতি থাকা দরকার। এই কারণেই এই তৃণমূল স্তরের প্রকল্পগুলি তৈরি করা হয়, বাস্তবায়িত হয় এবং যখন এগুলি শিকড় গাড়ে, তখন এগুলি মানুষের জীবনে রূপান্তর আনার জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে ওঠে। একটা সময় ছিল যখন দরিদ্র, নিপীড়িত, আদিবাসী সম্প্রদায়, বঞ্চিত, দিব্যাঙ্গ এবং আমাদের বিধবা মা ও বোনদের তাদের অধিকারের জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছে, তাদের পুরো জীবন এক সরকারি অফিস থেকে অন্য সরকারি অফিসে ঘুরতে ঘুরতে কেটে গেছে। আজ সরকার আপনার দোরগোড়ায় এক পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছে। কোটি কোটি সুবিধাভোগী সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন এবং সরাসরি সুবিধা হস্তান্তর এক্ষেত্রে সত্যিকারের বৈপ্লবীক পদক্ষেপ।
বন্ধুরা,
দেশ বহুবার "গরিবি হটাও" স্লোগান শুনেছে, এমনকি লাল কেল্লা থেকেও, এবং জাতি বারবার তা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। মানুষ মেনে নিয়েছে যে দারিদ্র্য দূর করা যাবে না। কিন্তু যখন আমরা সরাসরি দরিদ্রদের ঘরে প্রকল্পগুলি পৌঁছে দিই, যখন আমরা তাদের হৃদয়ে আস্থা জাগিয়ে তুলি, তখন আমার দেশের ২৫ কোটি দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্যকে পরাজিত করে, তার ঊর্ধ্বে উঠে এক নতুন ইতিহাস তৈরি করে। আজ গত ১০ বছরে ২৫ কোটিরও বেশি দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্যের করাল গ্রাস থেকে বেরিয়ে এসেছেন, এক নতুন "নব্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণী" তৈরি হয়েছে।
বন্ধুরা,
এই নব্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণী – উভয়ের মধ্যেই আকাঙ্ক্ষা এবং প্রচেষ্টা রয়েছে, এদের যুগলবন্দী দেশকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় শক্তি হয়ে উঠবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
খুব শীঘ্রই, আমরা মহান সমাজ সংস্কারক মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন শুরু করতে যাচ্ছি। মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলের নীতি এবং তাঁর দেওয়া মন্ত্রগুলি আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় - "অনগ্রসরদের অগ্রাধিকার" মন্ত্র। অনগ্রসরদের অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা রূপান্তরের উচ্চতায় পৌঁছতে চাই। এর জন্য আমরা সর্বতো প্রয়াস চালাবো। প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে আমরা "অনগ্রসরদের অগ্রাধিকার"-কে বাস্তবে রূপ দিতে চাই, প্রতিটি অনগ্রসর ব্যক্তির জীবনে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই।
বন্ধুরা,
পথ বিক্রেতাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি প্রকল্প হোক, আমাদের দক্ষ কারিগরদের জন্য বিশ্বকর্মা প্রকল্প হোক, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেও যারা অনগ্রসর রয়ে গেছেন তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী জনমান প্রকল্প হোক অথবা পূর্ব ভারতকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে একই সারিতে আনার এবং নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা হোক - আমরা কেবল সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীগুলির সঙ্গেই জড়িত নই, আমরা পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলিকেও অগ্রাধিকার দিতে চাই। আমরা পিছিয়ে পড়া জেলাগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে চাই। আমরা পিছিয়ে পড়া ব্লকগুলিকেও অগ্রাধিকার দিতে চাই। আমরা ১০০টি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা এবং ৫০০টি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্লকের জন্য একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। পূর্ব ভারতের উন্নয়নের জন্য আমরা হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার পরিকাঠামোগত প্রকল্পের উপর জোর দিয়েছি। এর লক্ষ্য সেখানকার জীবনে বদল আনা এবং ওই অঞ্চলকে দেশের উন্নয়নের যাত্রায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী করে তোলা।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হওয়া উচিত। উন্নয়নে খেলাধুলারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একটা সময় ছিল যখন ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করলে বাবা-মায়েরা অসন্তুষ্ট হতেন, আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো হয়ে গেছে। যদি শিশুরা খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ দেখায়, তাহলে বাবা-মায়েরা গর্বে ভরে ওঠেন। আমি এটিকে একটি শুভ লক্ষণ হিসেবে দেখি। যখন আমি আমার দেশের পরিবারগুলিতে খেলাধুলার জন্য উৎসাহের পরিবেশ দেখি, তখন আমার হৃদয় গর্বে ভরে ওঠে। আমি এটিকে জাতির ভবিষ্যতের জন্য একটি অত্যন্ত শুভ লক্ষণ হিসেবে মনে করি।
বন্ধুরা,
খেলাধুলার প্রসারের জন্য আমরা জাতীয় ক্রীড়া নীতি নিয়ে এসেছি - কয়েক দশক পরে, আমরা দেশে 'খেলো ভারত নীতি' চালু করেছি, যাতে ক্রীড়া ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য একটি ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানো যায়। স্কুল থেকে অলিম্পিক পর্যন্ত আমরা একটি সম্পূর্ণ পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে চাই - কোচিং, ফিটনেস, খেলার মাঠ, খেলার সুযোগ-সুবিধা, খেলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ অথবা ক্রীড়া সামগ্রী তৈরিতে ছোট শিল্পের অংশগ্রহণ। এই সমগ্র পরিমণ্ডলকে আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের কাছেও নিয়ে যেতে চাই।
কিন্তু বন্ধুরা,
যখন আমি ফিটনেসের কথা বলি, যখন খেলাধুলার কথা বলি, তখন আমি আপনাদের সামনে একটি উদ্বেগের বিষয়ও তুলে ধরতে চাই। আমাদের দেশের প্রতিটি পরিবারের এটিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত – স্থূলতা আমাদের জাতির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুতর সংকট হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আগামী বছরগুলিতে, প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন স্থূলতায় ভুগবে। আমাদের স্থূলত্ব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। এর জন্য অনেক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আমি একটা ছোট পরামর্শ দিয়েছিলাম - প্রতিটি পরিবারে রান্নার তেলের ব্যবহার ১০% কমানো। এর মাধ্যমে আমরা স্থূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের অবদান রাখতে পারবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের দেশ ভাগ্যবান - আমরা হাজার হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী, যেখান থেকে আমরা ক্রমাগত শক্তি, অনুপ্রেরণা এবং ত্যাগ ও তপস্যার পথ গ্রহণ করি। এই বছর গুরু তেগ বাহাদুর জির ৩৫০তম শহীদ বার্ষিকী, যিনি আমাদের সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ রক্ষার জন্য সর্বস্ব উৎসর্গ করেছিলেন। আজ আমি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
বন্ধুরা,
আমাদের সংস্কৃতির শক্তি হল আমাদের বৈচিত্র্য। আমরা বৈচিত্র্য উদযাপন করতে চাই, বৈচিত্র্য উদযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলতে চাই। আমাদের গর্ব যে ভারত মা, একটি অসাধারণ বাগানের মতো অসংখ্য ধরণের ফুল দিয়ে সজ্জিত, প্রতিটি ফুল বৈচিত্র্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই বৈচিত্র্য আমাদের মহান উত্তরাধিকার এবং আমাদের মহান গর্ব। আমরা প্রয়াগরাজের 'মহা কুম্ভে' দেখেছি কীভাবে ভারতের বৈচিত্র্য উদযাপন করা হয় – এক জায়গায় কোটি কোটি মানুষ, এক আবেগে, এক চেতনায়, এক প্রচেষ্টায় সমবেত – সারা বিশ্বের কাছে এ এক আশ্চর্য ঘটনা। 'মহা কুম্ভ'-এর সাফল্য ভারতের ঐক্য এবং শক্তির এক অনন্য নজীর।
বন্ধুরা,
আমাদের দেশ ভাষাগত বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। সেই কারণেই আমরা মারাঠি, অসমীয়া, বাংলা, পালি এবং প্রাকৃত ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছি। আমার মতে, আমাদের ভাষাগুলি যত বেশি বিকশিত হবে, তত বেশি সমৃদ্ধ হবে, আমাদের সমগ্র জ্ঞান ব্যবস্থা তত শক্তিশালী হবে। এটাই আমাদের শক্তি—এবং আজকের তথ্যের যুগে, এটি বিশ্বের জন্যও একটি বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে, আমাদের ভাষাগুলির এতটাই সামর্থ রয়েছে। আমাদের সকল ভাষার জন্য গর্বিত হওয়া উচিত এবং প্রত্যেকেরই তাদের উন্নয়নে অবদান রাখা উচিত।
বন্ধুরা,
আমাদের পাণ্ডুলিপিতে জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার রয়েছে, তবুও তাদের প্রতি আমরা উদাসীন। জ্ঞান ভারতম মিশনের আওতায়, আমরা এখন দেশজুড়ে হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি এবং শতাব্দী প্রাচীন নথিপত্র খুঁজে বের করে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সেগুলি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমার স্পষ্ট বিশ্বাস হল যে দেশ সরকার তৈরি করে না, এই দেশ শাসন ক্ষমতার অধিকারীরা বানাননি, শাসন পরিচালনাকারীরাও বানাননি, এই দেশ তৈরি হয়েছে কোটি কোটি মানুষের পরিশ্রমে। ঋষি, সাধু, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, কৃষক, সৈনিক, শ্রমিক - প্রত্যেকের প্রচেষ্টা জাতি গঠনে অবদান রাখে। ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান দেশ গঠনে উভয়েরই অবদান রয়েছে। আজ অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে আমি এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করতে চাই। একশ বছর আগে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতির প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের ১০০ বছরের সেবা এক গর্বিত এবং সোনালী অধ্যায়। চরিত্র গঠনের মাধ্যমে জাতি গঠনের সংকল্প নিয়ে, মা ভারতীর সেবা করার লক্ষ্যে, স্বয়ংসেবকরা এক শতাব্দী ধরে মাতৃভূমির কল্যাণে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সেবা, সমর্পণ, সংগঠন এবং অতুলনীয় শৃঙ্খলা - এগুলিই এর বৈশিষ্ট্য। এক অর্থে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বিশ্বের বৃহত্তম এনজিও, যার শতাব্দীব্যাপী নিষ্ঠার ইতিহাস রয়েছে। আজ লাল কেল্লার প্রাকার থেকে আমি রাষ্ট্র সেবার এই শতাব্দীব্যাপী যাত্রায় অবদান রাখা সকল স্বয়ংসেবকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং জাতীয় স্বয়ংসেবক সংঘের এই মহৎ ও নিবেদিতপ্রাণ যাত্রায় জাতি গর্বিত, যা আমাদের অনুপ্রাণিত করে চলবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমরা সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু সমৃদ্ধির পথ নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। গত ১১ বছর ধরে আমরা জাতীয় নিরাপত্তা, জাতির প্রতিরক্ষা এবং নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। আমরা পরিবর্তন আনতে সফল হয়েছি। দেশ জানে যে আমাদের বিশাল আদিবাসী অঞ্চলগুলি বহু দশক ধরে নকশালবাদ এবং মাওবাদের কবলে রক্তাক্ত ছিল। সবচেয়ে বেশি কষ্ট সহ্য করেছে আমার আদিবাসী পরিবারগুলি - আদিবাসী মা ও বোনেরা তাদের উজ্জ্বল সন্তানদের হারিয়েছেন, ছোট ছেলেমেয়েদের ভুল পথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, বিভ্রান্ত করা হয়েছে এবং তাদের জীবন ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছি। এমন একটা সময় ছিল যখন নকশালবাদ ১২৫টিরও বেশি জেলায় শিকড় গেড়েছিল। আমাদের আদিবাসী এলাকা এবং যুবসমাজ মাওবাদের কবলে পড়েছিল। আজ আমরা সেই সংখ্যা ১২৫টিরও বেশি জেলা থেকে কমিয়ে মাত্র ২০টিতে নিয়ে এসেছি। এটাই আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য আমাদের সবচেয়ে বড় সেবা। একটা সময় ছিল যখন বস্তারের নাম বললেই মাওবাদ, নকশালবাদ, বোমা ও বন্দুকের আওয়াজের কথা মনে হতো। আজ মাওবাদ ও নকশালবাদ থেকে মুক্ত হওয়ার পর, বস্তারের যুবকরা অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে, হাজার হাজার তরুণ "ভারত মাতা কি জয়" বলে চিৎকার করে খেলাধুলার মাঠে নামছে, এবং পুরো পরিবেশ উৎসাহে ভরে উঠছে। দেশ এই রূপান্তর প্রত্যক্ষ করছে। একসময় "লাল করিডর" নামে পরিচিত অঞ্চলগুলি এখন উন্নয়নের সবুজ করিডরে পরিণত হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। ভারতের মানচিত্রের যে অংশগুলো এক সময়ে রক্তে লাল ছিল, এখন আমরা সেখানে সংবিধান, আইনের শাসন এবং উন্নয়নের তেরঙ্গা পতাকা উড়িয়ে দিয়েছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
এটি ভগবান বিরসা মুন্ডার ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী। এই আদিবাসী অঞ্চলগুলিকে নকশালবাদ থেকে মুক্ত করে এবং আমার আদিবাসী পরিবারের যুবকদের জীবন রক্ষা করে আমরা তাঁকে প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আজ আমি জাতিকে একটি গুরুতর উদ্বেগ এবং চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সতর্ক করতে চাই। একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশের জনবিন্যাসের পরিবর্তন করা হচ্ছে। একটি নতুন সংকটের বীজ বপন করা হচ্ছে। এই অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের যুবসমাজের জীবিকা কেড়ে নিচ্ছে। এই অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের বোন ও কন্যাদের নিশানা করছে। এটি সহ্য করা হবে না। এই অনুপ্রবেশকারীরা সরল, সাদাসিধে আদিবাসীদের বিভ্রান্ত করে তাদের জমি দখল করছে। দেশ এটা সহ্য করবে না। যখন জনবিন্যাসের পরিবর্তন ঘটে, বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় এটা দেখা যায়, তখন এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক সংকট তৈরি করে। দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা এবং অগ্রগতির ক্ষেত্রে সঙ্কট সৃষ্টি হয়। সামাজিক উত্তেজনার বীজ বপন করে। কোনও দেশ নিজেকে অনুপ্রবেশকারীদের হাতে তুলে দিতে পারে না। বিশ্বের কোনও জাতি তা করে না - তাহলে আমরা কীভাবে ভারতে তা করতে দেব? আমাদের পূর্বপুরুষরা ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন; তারা আমাদের স্বাধীন ভারতবর্ষ দিয়েছেন। সেই মহান আত্মাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য যে আমরা আমাদের জাতির মধ্যে এই ধরনের কাজ মেনে নেব না। এটিই হবে তাঁদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি। আর সেজন্য আজ লাল কেল্লার প্রাকার থেকে আমি ঘোষণা করছি যে আমরা একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন জনবিন্যাসগত মিশন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভারতের উপর বর্তমানে যে গুরুতর সংকট তৈরি হচ্ছে এই মিশনের মাধ্যমে সুচিন্তিতভাবে এবং সময়নির্দিষ্টভাবে তার মোকাবেলা করা হবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আগামীকাল জন্মাষ্টমীর শুভ উৎসব। সারা দেশে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মবার্ষিকী পালিত হবে।
বন্ধুরা,
আমি যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করি, তখন দেখতে পাই যে আজ সারা বিশ্বে যুদ্ধের পদ্ধতি পরিবর্তিত হচ্ছে। আমরা দেখেছি যে ভারত যুদ্ধের প্রতিটি নতুন পদ্ধতি পরিচালনা করতে সক্ষম। প্রযুক্তিতে আমাদের যে দক্ষতা তা আমরা অপারেশন সিঁদুরে দেখিয়েছি। পাকিস্তান আমাদের সামরিক ঘাঁটি, আমাদের বিমান ঘাঁটি, আমাদের সংবেদনশীল স্থান, আমাদের উপাসনালয়, আমাদের নাগরিকদের উপর অসংখ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের মাধ্যমে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে। দেশ তা দেখেছে, কিন্তু গত ১০ বছরে দেশকে সুরক্ষিত রাখার জন্য যে প্রচেষ্টা করা হয়েছে, সেই শক্তির ফলস্বরূপ তাদের প্রতিটি হামলা আমাদের সাহসী সৈন্য এবং আমাদের প্রযুক্তি ব্যর্থ করে দিয়েছে। তারা আমাদের সামান্যতম ক্ষতিও করতে পারেনি। সেজন্যই আজ যখন যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রসার ঘটছে, প্রযুক্তি প্রাধান্য পাচ্ছে, তখন জাতির সুরক্ষার জন্য, দেশের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য, আজ আমাদের যে দক্ষতা রয়েছে তাকে আরও বাড়াতে হবে, আরও উন্নত করতে হবে। আর তাই বন্ধুরা আমি একটি সংকল্প করেছি। আপনাদের আশীর্বাদ আমার প্রয়োজন, কোটি কোটি দেশবাসীর আশীর্বাদ প্রয়োজন। কারণ যতই সমৃদ্ধি থাকুক না কেন, যদি নিরাপত্তার প্রতি উদাসীনতা থাকে, তাহলে সমৃদ্ধি কোনও কাজে আসে না এবং তাই নিরাপত্তার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।
আর সেই কারণেই আজ আমি লাল কেল্লার প্রাকার থেকে বলছি, আগামী ১০ বছর অর্থাৎ ২০৩৫ সালের মধ্যে, দেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যার মধ্যে সামরিক এলাকার পাশাপাশি হাসপাতাল, রেল, উপাসনা কেন্দ্রের মতো অসামরিক এলাকাও রয়েছে, সেগুলিকে প্রযুক্তির নতুন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুরক্ষার আচ্ছাদন দেওয়া হবে। সুরক্ষার এই ঢাল এমন প্রসারিত হবে যে দেশের প্রতিটি নাগরিক নিরাপদ বোধ করবেন। তারা জানবেন যে প্রযুক্তিই আমাদের আক্রমণ করতে আসুক না কেন, আমাদের প্রযুক্তি তার থেকে উন্নত। আমি এই রাষ্ট্রীয় সুরক্ষাকবচ প্রসারিত করতে, একে শক্তিশালী করতে, এর আধুনিকীকরণ করতে চাই। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে, আমি শ্রীকৃষ্ণের সুদর্শন চক্রকে বেছে নিয়েছি। আপনাদের অনেকেরই মনে থাকতে পারে যে যখন মহাভারতের যুদ্ধ চলছিল, তখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে সূর্যের আলোকে আটকে রেখেছিলেন এবং দিনের বেলা অন্ধকার করে দিয়েছিলেন। সুদর্শন চক্র দিয়ে সূর্যের আলো আটকে দেওয়া হয়েছিল এবং তখন অর্জুন জয়দ্রথকে হত্যা করার জন্য যে শপথ নিয়েছিলেন তা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এটি সুদর্শন চক্রের শক্তি এবং কৌশলের সম্মিলিত ফল। এখন দেশ সুদর্শন চক্র মিশন শুরু করবে। এই মিশন সুদর্শন চক্র, এমন এক শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবস্থা, কেবল শত্রুর আক্রমণকে নিষ্ক্রিয় করবে না বরং শত্রুর উপর বহুগুণ বেশি আঘাত হানবে।
আমরা ভারতের এই মিশন সুদর্শন চক্রের জন্য কিছু মৌলিক বিষয়ও নির্ধারণ করেছি। আমরা আগামী ১০ বছরে এটিকে অত্যন্ত তীব্রতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। প্রথমত, এই সম্পূর্ণ আধুনিক ব্যবস্থা, এর গবেষণা, উন্নয়ন, এর উৎপাদন আমাদের দেশেই করা উচিত, এটি আমাদের দেশের তরুণদের প্রতিভা দিয়ে করা উচিত, আমাদের দেশের জনগণকে দিয়ে এটি তৈরি করা উচিত। দ্বিতীয়ত, এমন একটি ব্যবস্থা থাকবে যা যুদ্ধের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলি গণনা করবে এবং প্লাস ওয়ানের কৌশল তৈরি করবে। এবং তৃতীয়ত, সুদর্শন চক্রের শক্তি অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট ছিল। এটি যেখানে যাওয়ার সেখানেই গিয়েছিল এবং শ্রীকৃষ্ণের কাছে ফিরে এসেছিল। আমরা এই সুদর্শন চক্রের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানার একটি ব্যবস্থার বিকাশের দিকে এগিয়ে যাব। জাতির নিরাপত্তা এবং যুদ্ধের পরিবর্তনশীল পদ্ধতিতে নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য এই কাজটি আমি দায়বদ্ধতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমরা যখন গণতন্ত্র, স্বাধীন ভারতের কথা বলি, তখন আমাদের সংবিধান আমাদের শ্রেষ্ঠ বাতিঘর, আমাদের অনুপ্রেরণার কেন্দ্র হয়ে থাকে। কিন্তু ৫০ বছর আগে ভারতের সংবিধানকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিল। ভারতের সংবিধানের পিঠে ছুরি মারা হয়েছিল, দেশকে কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল, জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। জরুরি অবস্থার ৫০ বছর হয়ে গেছে, কিন্তু দেশের কোনও প্রজন্মই সংবিধান হত্যার এই পাপ ভুলে যেতে পারে না। সংবিধানের হত্যাকারী পাপীদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় এবং ভারতের সংবিধানের প্রতি আমাদের নিষ্ঠাকে আরও শক্তিশালী করে এগিয়ে যাওয়া উচিত, এটি আমাদের অনুপ্রেরণা।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমি এই লাল কেল্লা থেকে পঞ্চ প্রাণের কথা বলেছিলাম। আজ আমি লাল কেল্লা থেকে আমার দেশবাসীকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। বিকশিত ভারত গড়ার জন্য, আমরা থামবো না, মাথা নত করবো না, আমরা কঠোর পরিশ্রম করে যাব এবং ২০৪৭ সালে আমাদের চোখের সামনে একটি বিকশিত ভারত গড়ে তুলবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের দ্বিতীয় অঙ্গীকার হল আমরা আমাদের জীবনে, আমাদের ব্যবস্থায়, আমাদের নিয়ম, আইন এবং ঐতিহ্যে দাসত্বের এক কণাও থাকতে দেব না। সকল প্রকার দাসত্ব থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেব না।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমরা আমাদের ঐতিহ্যের জন্য গর্বিত হব। আমাদের পরিচয়ের সবচেয়ে বড় অলঙ্কার, সবচেয়ে বড় রত্ন, সবচেয়ে বড় মুকুট হল আমাদের ঐতিহ্য, আমরা আমাদের ঐতিহ্যের জন্য গর্বিত হব।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
ঐক্য হল সবচেয়ে শক্তিশালী মন্ত্র এবং তাই আমাদের সম্মিলিত সংকল্প হবে যে কেউ যেনে আমাদের ঐক্যের সুতো ছিঁড়তে পারবে না।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
মা ভারতীর প্রতি আমাদের কর্তব্য পালন করা পূজার চেয়ে কম নয়, তপস্যার চেয়ে কম নয়, আরাধনার চেয়ে কম নয়, এবং একই অনুভূতি নিয়ে, মাতৃভূমির কল্যাণের জন্য, আমরা কঠোর পরিশ্রম করার পাশাপাশি ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারতের লক্ষ্য অর্জনে আত্মনিয়োগ করব। আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে, তা প্রয়োগ করব। আমরা কোনও সুযোগই ছাড়ব না, শুধু তাই নয়, আমরা নতুন সুযোগ তৈরি করব এবং সেগুলি তৈরি করার পরে, আমরা ১৪০ কোটি দেশবাসীর শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাব, এগিয়ে যাব, এগিয়ে যাব।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের মনে রাখতে হবে, ১৪০ কোটি দেশবাসীকে মনে রাখতে হবে, কঠোর পরিশ্রম করলে তবেই ইতিহাস সৃষ্টি হয়। যিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তিনিই ইতিহাস রচনা করেছেন। যিনি ইস্পাতের চাঁই ভেঙেছেন, তিনিই সময়কে বাঁকিয়েছেন এবং এটাই সময়কে বাঁকিয়ে দেওয়ার সময়, এটাই সঠিক সময়।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আবারও, স্বাধীনতার এই মহান উৎসবে আপনাদের সকলকে আমার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনাদের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা আমার সঙ্গে বলুন,
জয় হিন্দ! জয় হিন্দ! জয় হিন্দ!
ভারত মাতা কি জয়! ভারত মাতা কি জয়! ভারত মাতা কি জয়!
বন্দে মাতরম! বন্দে মাতরম! বন্দে মাতরম!
আপনাদের অনেক ধন্যবাদ!
SC/SD/SKD
(Release ID: 2157059)
Read this release in:
Malayalam
,
Nepali
,
Marathi
,
Hindi
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Telugu
,
Kannada
,
Manipuri
,
Odia
,
English
,
Urdu
,
Tamil