প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘‘মন কি বাত’’ (১২৪ তম পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ
Posted On:
27 JUL 2025 11:39AM by PIB Kolkata
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ‘মন কি বাত’ এ আবার একবার কথা হবে দেশের সাফল্য, দেশবাসীর অভিজ্ঞতা নিয়ে। গত কয়েক সপ্তাহে sports, science, সংস্কৃতি ইত্যাদি অনেক বিষয়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যার জন্য প্রত্যেক ভারতবাসী গর্বিত। অতি সম্প্রতি শুভাংশু শুক্লার মহাকাশ থেকে প্রত্যাবর্তন নিয়ে দেশে জোরদার আলোচনা হয়েছে। যখন শুভাংশু সুরক্ষিতভাবে পৃথিবীতে অবতরণ করেছেন, লোকজন উৎসাহে ফেটে পড়েছে। তাদের মনে খুশির ঢেউ উঠেছে। পুরো দেশ গর্বে ভরে গেছে। আমার মনে আছে, ২০২৩ সালের অগাস্ট মাসে যখন চন্দ্রযান ৩-এর সফল অবতরণ হয়েছিল, তখন দেশে এক নতুন উদ্দীপনা তৈরী হয়েছিল। Science নিয়ে, space নিয়ে বাচ্চাদের মধ্যে এক নতুন কৌতুহল জেগে উঠেছিল। এখন ছোট ছোট বাচ্চারা বলে আমিও space এ যাবো, আমিও চাঁদে অবতরণ করবো, space scientist হবো।
বন্ধুরা, আপনারা INSPIRE -MANAK প্রকল্পের নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। এই প্রকল্প শিশুদের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। এই প্রকল্পে প্রতি স্কুল থেকে পাঁচজন শিশুকে নির্বাচন করা হয়। প্রত্যেক শিশু একটি নতুন idea নিয়ে আসে। এই প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত লক্ষ-লক্ষ শিশু যুক্ত হয়েছে। আর চন্দ্রযান-৩ এর পর তো এদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। দেশে space start-up- ও জোরকদমে এগিয়ে চলেছে। পাঁচ বছর আগে ৫০ এরও কম start up ছিল। আজ শুধু space sector-এ ২০০- রও বেশী হয়ে গেছে। বন্ধুরা, সামনের মাসে ২৩শে অগাস্ট National Space Day। আপনারা কীভাবে এই দিনটি পালন করবেন, কোনো নতুন idea আছে কি? আমাকে NaMo App-এ অবশ্যই মেসেজ পাঠাবেন।
বন্ধুরা, একবিংশ শতাব্দীতে ভারত আজ science-এ এক নতুন উৎসাহের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। কিছুদিন আগে আমাদের ছাত্র international Chemistry Olympiad -এ মেডেল জিতেছে। দেবেশ পঙ্কজ, সন্দীপ কুচী, দেবদত্ত প্রিয়দর্শী আর ঊজ্জ্বল কেসরি, এই চারজন ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছে। গণিতের জগতে ভারত নিজের পরিচয় আরও মজবুত করেছে। অস্ট্রেলিয়াতে International Mathematical Olympiad-এ আমাদের ছাত্ররা ৩টে গোল্ড, ২টো সিলভার আর একটা ব্রোঞ্জ মেডেল জিতেছে।
বন্ধুরা, আগামী মাসে মুম্বাইতে Astronomy আর Astrophysics Olympiad হতে চলেছে। এতে ৬০-এর বেশী দেশের ছাত্ররা অংশগ্রহন করবে। বৈজ্ঞানিকরাও আসবেন। এটি এখনও পর্যন্ত সব থেকে বড় Olympiad হবে। একদিক থেকে দেখলে ভারত এখন olympic এবং Olympiad, দুক্ষেত্রেই এগিয়ে চলেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, UNESCO-র একটি খবর এসেছে যা আমাদের সবাইকে গর্বিত করবে। UNESCO ১২টি মারাঠা দুর্গকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা দিয়েছে। এরমধ্যে ১১টা দুর্গ মহারাষ্ট্রতে আর একটি দুর্গ তামিলনাড়ুতে। প্রতিটা দুর্গর সঙ্গে ইতিহাসের এক এক অধ্যায় জুড়ে আছে। প্রতিটা পাথর, এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। সল্হের দুর্গোয় মুঘলদের পরাজয় হয়েছিল। শিবনেরী দুর্গোয় ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের জন্ম হয়েছিল। এমন দুর্গ যা কিনা শত্রুরা জয় করতে পারবে না। খানদেরী দুর্গ সমুদ্রের মাঝে তৈরী এক চমকপ্রদ দুর্গ। শত্রুরা তাঁকে রুখে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু শিবাজী মহারাজ অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। প্রতাপ গড় দুর্গ, যেখানে আফজল খানকে পরাজিত করা হয়েছিল, ওই দুর্গর দেওয়ালে আজও সেই কাহিনীর প্রতিধ্বনি শোনা যায়।
বিজয় দুর্গে, যেখানে গোপন সুড়ঙ্গও ছিল, সেখানে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের দূরদর্শিতার প্রমাণ পাওয়া যায়। আমি কিছুদিন আগে রায় গড়ে গিয়েছিলাম। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের মূর্তির সামনে আমি মাথা নত করেছিলাম। এই অনুভূতি সারা জীবন আমার সঙ্গে থাকবে।
বন্ধুরা, দেশের অন্য জায়গাতেও এমন চমকপ্রদ দুর্গ আছে, যা অসংখ্য আক্রমণ সহ্য করেছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার মোকাবিলা করেছে, কিন্তু কখনও আত্মসম্মান বিসর্জন দেয়নি। রাজস্থানের চিতোরগড়ের দুর্গ, কুম্ভলগড় দুর্গ, রণথম্বোর দুর্গ, আমের দুর্গ, জয়শলমিরের দুর্গ তো বিশ্বখ্যাত। কর্ণাটকের গুলবর্গার দুর্গও অনেক বড়। চিত্রদুর্গের দুর্গর ব্যাপ্তিও আপনাকে কৌতূহলী করে তুলবে - ওই সময়ে এত বড়ো দুর্গ কীভাবে তৈরী হলো !
বন্ধুরা, উত্তরপ্রদেশের বান্দায় আছে কালিঞ্জর দুর্গ। মহমুদ গজনবী অনেকবার এই দুর্গয় হামলা করেও, প্রতিবার ব্যর্থ হয়েছিল। বুন্দেলখণ্ডে এরকম বেশ কিছু দুর্গ আছে - গোয়ালিয়র, ঝাঁসি, দতিয়া, অজয়গড়, গঢ়কুণ্ডার, চন্দেরী। এই সব দুর্গ শুধু ইঁট-পাথরই নয়, এগুলো আমাদের সংস্কৃতির প্রতীক। আজও এইসব দুর্গর উঁচু উঁচু দেওয়াল, সংস্কার আর আত্মমর্যাদার প্রতীক হয়ে রয়েছে। আমি সকল দেশবাসীকে বলবো এইসব দুর্গ দেখতে, নিজেদের ইতিহাসকে জানতে, নিজেদের গৌরব উপলব্ধি করতে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা কল্পনা করুন, একদম ভোরবেলা, বিহারের মজঃফরপুর শহর- ১৯০৮ সালের ১১ই অগাস্ট, প্রতিটা রাস্তা, প্রতিটা চৌরাস্তা, সমস্ত কোলাহল ওই সময় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। জনসাধারণের চোখে ছিল অশ্রু, কিন্তু হৃদয়ে জ্বলছিল আগুন। লোকজন ঘিরে রেখেছিল জেলখানা, যেখানে ১৮ বছরের এক যুবক, ইংরেজদের বিরুদ্ধে নিজের দেশপ্রেম ব্যক্ত করার মূল্য দিচ্ছিল।
জেলের ভেতরে, ইংরেজ অফিসাররা, এক যুবককে ফাঁসি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই যুবকের চোখেমুখে ভয় ছিল না, বরং তা গর্বে ভরা ছিল। সেই গর্ব, যা দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারীদের হয়। সেই বীর, সেই সাহসী যুবক ছিলেন, ক্ষুদিরাম বসু। মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি সেই সাহস দেখিয়েছিলেন, যা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তখন খবরের কাগজগুলোও লিখেছিল – “ক্ষুদিরাম বসু যখন ফাঁসির দড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন, তখন তাঁর মুখে ছিল হাসি”। এমনই অগণিত বলিদানের পর, শত শত বছরের তপস্যার পর, আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম। দেশপ্রেমীরা তাদের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনকে সিঞ্চিত করেছিল।
বন্ধুরা, অগাস্ট মাস এই কারণেই বিপ্লবের মাস। পয়লা অগাস্ট লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলকের প্রয়াণ দিবস। এই মাসেই, ৮ই অগাস্ট গান্ধীজির নেতৃত্বে ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’ শুরু হয়েছিল। তারপর আসে ১৫ই আগস্ট, আমাদের স্বাধীনতা দিবস, আমরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণ করি, তাদের থেকে প্রেরণা পাই, কিন্তু বন্ধুরা, আমাদের স্বাধীনতার সঙ্গে দেশের বিভাজনের যন্ত্রণাও জড়িয়ে আছে, তাই আমরা ১৪ই অগাস্টকে ‘বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস’ হিসাবে পালন করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ৭ই অগাস্ট ১৯০৫ সালে আরও একটি বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল। স্বদেশী আন্দোলন স্থানীয় পণ্য এবং বিশেষ করে handloom-কে এক নতুন শক্তি দিয়েছিলো। এই স্মৃতিতে দেশ প্রতি বছর ৭ই অগাস্ট ‘National Handloom Day’ উদযাপন করে। এই বছর ৭ই অগাস্ট ‘National Handloom Day’-র দশ বছর পূর্ণ হচ্ছে। স্বাধীনতার লড়াইয়ের সময় যেমন আমাদের খাদি স্বাধীনতা আন্দোলনকে নতুন শক্তি দিয়েছিল, তেমনই আজ যখন দেশ বিকশিত ভারত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে, তখন ‘textile sector’ দেশের শক্তি হয়ে উঠছে। এই দশ বছরে দেশের পৃথক পৃথক অংশে এই sector-এর সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ সাফল্যের অনেক কাহিনী রচনা করেছেন। মহারাষ্ট্রের পৈঠন গ্রামের কবিতা ধবলে আগে একটা ছোট ঘরে কাজ করতেন - না ছিল জায়গা, না ছিল কোনো সুবিধা। সরকারের থেকে সাহায্য পেলেন, আর এখন তাঁর দক্ষতা ডানা মেলছে। তিনি তিন গুণ বেশি আয় করছেন। নিজেই নিজের তৈরি পৈঠনী শাড়ি বিক্রি করছেন। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জেও সাফল্যের এমনই কাহিনী আছে। এখানে ৬৫০ জনেরও বেশি জনজাতি মহিলা সাঁওতালি শাড়িকে আবার পুনর্জীবিত করেছেন। এখন এই মহিলারা প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করছেন। এরা শুধু কাপড় তৈরি করছেন না, নিজেদের পরিচয় তৈরি করছেন। বিহারের নালন্দা থেকে নবীন কুমারের কৃতিত্বও প্রেরণাদায়ক। তাঁর পরিবার বংশ পরম্পরায় এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। তবে সবচেয়ে ভালো দিক হলো, তাঁর পরিবার এখন এই field-এ আধুনিকতারও সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে। এখন তাঁর ছেলেমেয়েরা handloom technology নিয়ে পড়াশোনা করছে। বড় বড় brand-এ কাজ করছে। এই পরিবর্তন শুধু একটি পরিবারের নয়, এটি আশেপাশের অনেক পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বন্ধুরা, ভারতে 'textile' কেবলমাত্র একটা sector নয়। এটা আমাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের একটি দৃষ্টান্ত। আজ textile এবং apparel market খুব দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং এই প্রগতির সবথেকে সুন্দর দিক হলো--গ্রামের মহিলারা, শহরের ডিজাইনাররা, অভিজ্ঞ বস্ত্রবয়ন শিল্পীরা এবং start up শুরু করা আমাদের যুবরা সকলে মিলে একসঙ্গে এটিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এখন ভারতে তিন হাজারেরও বেশি textile start up কার্যরত রয়েছে। অনেক start ups-ই ভারতের Handloom শিল্পের পরিচয়কে বিশ্বমঞ্চে একটা নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বন্ধুরা, ২০৪৭ সালের 'বিকশিত ভারত'-এর লক্ষ্য পথ স্বনির্ভরতার ভাবনাকে পাথেয় করে এগিয়ে চলেছে এবং আত্মনির্ভর ভারতের সবচেয়ে বড় ভিত্তিই হল 'vocal for local'। যা যা ভারতে তৈরি হয়েছে, যেগুলো বানাতে গিয়ে ভারতীয়দের ঘাম ঝরেছে, সেগুলোই কিনুন, সেগুলোই বিক্রি করুন। এটাই আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতের বৈচিত্রের সবচেয়ে সুন্দর প্রতিচ্ছবি দেখা যায় লোকগীতি এবং ঐতিহ্যে, আর তারই একটা অংশ হলো আমাদের ভজন এবং কীর্তন। কিন্তু আপনি কি কখনো এরকম শুনেছেন যে কীর্তনের মধ্যে দিয়ে দাবানল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা হয়? আপনাদের হয়তো বিশ্বাস হবে না, কিন্তু ওড়িষার কেওনঝর জেলায় এমনই এক অভূতপূর্ব কাজ হচ্ছে। এখানে, 'রাধা-কৃষ্ণ সংকীর্তন মন্ডলী' নামের একটি দল আছে। ভক্তির সঙ্গে সঙ্গে, এই দলটি এখন পরিবেশ সংরক্ষণের নাম-গান'ও করছে। এই উদ্যোগের অনুপ্রেরণা - প্রমিলা প্রধান জি। অরণ্য ও পরিবেশ রক্ষার জন্য তিনি প্রচলিত গানগুলোয় নতুন কথা ও নতুন ভাবনা জুড়েছেন। তার দল গ্রামে গ্রামে যাচ্ছে। গানের মধ্যে দিয়ে মানুষকে বোঝাচ্ছে যে জঙ্গলে আগুন লাগলে কতটা ক্ষতি হয়। এই দৃষ্টান্ত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমাদের লোক-ঐতিহ্য কেবল অতীতেই সীমাবদ্ধ নয়, এগুলোর মধ্যে আজও সমাজকে পথ দেখানোর শক্তি আছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতের সংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের উৎসব এবং ঐতিহ্য, কিন্তু আমাদের এই সংস্কৃতির আরো একটি প্রাণোচ্ছল দিক আছে- সেটি হল আমাদের বর্তমান ও আমাদের ইতিহাসকে নথিবদ্ধ করতে থাকা। সেই জ্ঞান-ই আমাদের আসল শক্তি যা শত শত বছর ধরে পুঁথি-পান্ডুলিপির মধ্যে দিয়ে সংরক্ষিত করা হয়েছে। এই পুঁথি-পান্ডুলিপিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান, রয়েছে চিকিৎসা পদ্ধতি, সংগীত, দর্শন এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো সেই চিন্তাদর্শ রয়েছে যা মানবতার ভবিষ্যৎকে আরো উজ্জ্বল করে তুলতে পারে। বন্ধুরা, এই অসামান্য জ্ঞান এবং এই ঐতিহ্যর সংরক্ষণ করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের দেশে প্রত্যেক যুগেই এমন কিছু মানুষ জন্মেছেন যাঁরা এটাকে নিজেদের সাধনা করে তোলেন। অনুপ্রাণিত করার মতো এমনই একজন ব্যক্তিত্ব হলেন তামিলনাড়ুর থাঞ্জাভুর জেলার মণি মারন জি। তাঁর মনে হয়েছিল যে বর্তমান প্রজন্ম যদি তামিল পান্ডুলিপি পড়তে না শেখে তাহলে আগামী দিনে এই মহামূল্যবান ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে। সেজন্য তিনি সান্ধ্যকালীন ক্লাস শুরু করেন। ছাত্র, চাকরিজীবী যুবক-যুবতী, গবেষক সকলেই সেখানে গিয়ে শিখতে শুরু করলেন। মনি মারণজি সকলকে তামিল শুভদিয়াল অর্থাৎ তালপাতার পুঁথি পড়তে এবং পাঠোদ্ধারের নিয়ম কী হয় তা শিখিয়েছেন। আজ ওঁর প্রচেষ্টায় অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা এই ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠেছেন। কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী তো এই পাণ্ডুলিপিটির উপর ভিত্তি করে প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে গবেষণাও শুরু করে দিয়েছেন। বন্ধুরা, ভাবুন যদি এমন প্রচেষ্টা সমগ্র দেশ জুড়ে হয় তাহলে আমাদের প্রাচীন বিদ্যা, শুধুমাত্র চার দেওয়ালেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা নতুন প্রজন্মের চেতনার অংশ হয়ে উঠবে। এই ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ভারত সরকার এই বছর বাজেটে একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেছে, জ্ঞান ভারতম মিশন। এই প্রকল্পের আওতায় প্রাচীন পান্ডুলিপি গুলো ডিজিটাইজ করা হবে। তারপর একটি ন্যাশনাল ডিজিটাল রিপোসিটোরি গড়ে তোলা হবে যেখানে সমগ্র বিশ্বের শিক্ষার্থী, গবেষক, ভারতের জ্ঞান, ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। আমারও আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ যে যদি আপনারা এমন কোন প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত থাকেন অথবা যুক্ত হতে চান তাহলে My Gov অথবা সংস্কৃতি মন্ত্রকের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করুন, কারণ এগুলি শুধুমাত্র পান্ডুলিপি নয়, এগুলি ভারতের অন্তরাত্মার সেই অধ্যায় যার সম্বন্ধে আমাদের আগামী প্রজন্মকে জানাতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যদি আপনাদের জিজ্ঞেস করা হয় যে আপনাদের আশেপাশে কত ধরনের পাখি আছে, তাহলে আপনারা কি বলবেন? হয়তো এটাই যে, ৫-৬ টা পাখি তো রোজই আমার চোখে পড়ে - কিছু চেনা-পরিচিত, কিছু অজানা। আমাদের আশেপাশে কোন কোন প্রজাতির পাখি আছে, এটা জানাও খুবই আকর্ষণীয় একটি বিষয় । সম্প্রতি এরকমই একটা অসাধারন প্রচেষ্টা করা হয়েছে, জায়গাটা হলো-আসামের কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান। এমনিতে এই এলাকা এখানকার গণ্ডারদের জন্য বিখ্যাত, কিন্তু এইবার আলোচনার বিষয় হলো সেখানকার তৃণভূমি আর সেখানে বসবাসকারী পাখি। এখানে প্রথমবার grassland bird census হয়েছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন এই census -এর ফলে, ৪০-এর বেশি পাখিদের প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। এতে অনেক দুর্লভ প্রজাতির পাখিও অন্তর্ভুক্ত। আপনারা ভাবছেন এত পাখির সন্ধান কিভাবে পাওয়া গেল ? এক্ষেত্রে বাজিমাত করেছে প্রযুক্তি। census-এর টিম পাখির ডাক রেকর্ড করার যন্ত্র লাগিয়েছিল। তারপর কম্পিউটার সেই ডাক বিশ্লেষণ করে, AI এর সাহায্য নেয়। শুধু ডাকের মাধ্যমেই পাখিদের চেনা গেছে - তাও তাদেরকে বিরক্ত না করে। ভাবুন, যখন প্রযুক্তি এবং সংবেদনশীলতার মেলবন্ধন ঘটে, তখন প্রকৃতিকে গভীর ভাবে বোঝা কতটা সহজ হয়ে ওঠে । আমাদের এরকম প্রচেষ্টাকে আরো উৎসাহ দেওয়া উচিত, যাতে আমরা, আমাদের জীব বৈচিত্রের সঙ্গে পরিচিত হতে পারি ও ভবিষ্যত প্রজন্মকেও এর সঙ্গে যুক্ত করতে পারি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অন্ধকার যেখানে সবথেকে বেশি ঘনায়, কখনও কখনও আলো সেখান থেকেই উৎসারিত হয় । এরকমই একটা উদাহরণ হলো ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলা। একটা সময় ছিল যখন এটি মাওবাদী হিংসার জন্য কুখ্যাত ছিল। বাসিয়া ব্লকের গ্রাম জনশূন্য হয়ে যাচ্ছিল। মানুষ ভয়ে ভয়ে বেঁচে থাকত।
রোজগারের কোন আশা ছিল না, জমি ফাঁকা পড়েছিল এবং যুবক-যুবতীরা পালিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে, শান্ত সুস্থির পরিবর্তনের সূত্রপাত হয়। ওম প্রকাশ শাহু নামের এক যুবক হিংসার পথ ছেড়ে দেয়। তিনি মাছ চাষ শুরু করেন। তারপর নিজের মত অনেক বন্ধুদেরও এই কাজের জন্য অনুপ্রাণিত করেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার ফলও পাওয়া গেল। যারা একসময় অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, তারাই এখন মাছ ধরার জাল হাতে তুলে নিয়েছেন।
বন্ধুরা, ওম প্রকাশ সাহুর এই সূচনা সহজ ছিল না। বিরোধিতা হয়, তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়, কিন্তু তাঁর মনোবল ভাঙ্গেনি। যখন প্রধানমন্ত্রী মৎস্যসম্পদা যোজনা কার্যকর হয়, তখন ওঁর কাজে নতুন শক্তি সঞ্চারিত হয়। সরকারের থেকে প্রশিক্ষণ পান, পুকুর তৈরিতে সাহায্য পান এবং দেখতে দেখতে গুমলায় মৎস্য বিপ্লবের শুরু হয়। আজ বাসিয়া ব্লকের ১৫০টিরও বেশি পরিবার মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এমন অনেকে আছেন যারা কখনো নকশালপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এখন ওরা গ্রামেই আছেন, সম্মানের সঙ্গে জীবন কাটাচ্ছেন এবং অন্যদের রোজগারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। গুমলার এই যাত্রা আমাদের শেখায় যদি পথ সঠিক থাকে এবং মনে বিশ্বাস থাকে তাহলে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতির মধ্যেও বিকাশের আলো প্রজ্জ্বলিত হতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা কি জানেন যে অলিম্পিকসের পরই সব থেকে বড় খেলার আয়োজন কোনটা? এর উত্তর ওয়ার্ল্ড পুলিশ এন্ড ফায়ার গেমস। সারা পৃথিবীর পুলিশ কর্মী , ফায়ার ফাইটার্স, নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত থাকা লোকেদের নিয়ে হওয়া স্পোর্টস টুর্নামেন্ট। এইবার এই টুর্নামেন্ট আমেরিকায় আয়োজিত হয়েছে এবং এখানে ভারত ইতিহাস রচনা করেছে। ভারত প্রায় ৬০০ টি পদক জিতেছে। ৭১ টি দেশের মধ্যে আমরা প্রথম তিনের মধ্যে স্থান দখল করেছি। সেই উর্দিধারীদের পরিশ্রম সফল হয়েছে যাঁরা দিনরাত দেশের জন্য সেবায় নিবেদিত।
আমাদের এই বন্ধুরা এখন খেলার মাঠেও দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। আমি সকল খেলোয়াড়দের এবং coaching team-কে অভিনন্দন জানাই। আপনারা এটা জেনেও হয়তো চমৎকৃত হবেন যে, দু হাজার ঊনত্রিশে এই খেলা ভারতে অনুষ্ঠিত হবে। সারা বিশ্ব থেকে খেলোয়াড়রা আমাদের দেশে আসবেন। আমরা তাঁদের ভারতের আতিথেয়তা দেখাবো, আমাদের ক্রীড়া সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করাবো।
বন্ধুরা, গত কয়েকদিনে, আমি, অনেক young athletes এবং তাদের অভিভাবকদের বার্তা পেয়েছি। এগুলোর মধ্যে ‘খেলো ভারত নীতি দু হাজার পঁচিশের’ খুব প্রশংসা করা হয়েছে। এই নীতির লক্ষ্য স্পষ্ট - ভারতকে sporting super power বানানো। গ্রামবাসী, দরিদ্রমানুষজন এবং মেয়েরা, এই নীতির আওতায় অগ্রাধিকার পাবেন। খেলাধুলাকে, School এবং college, তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তুলবে। খেলাধুলা সংক্রান্ত startups, তা সে sports managements হোক বা manufacturing-এর সঙ্গে যুক্ত হোক - তাদের সব রকম ভাবে সাহায্য করা হবে। ভাবুন, যখন দেশের যুবরা নিজেদের তৈরি racket, bat আর ball নিয়ে খেলবে, তখন আত্মনির্ভরতার মিশন কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠবে। বন্ধুরা, খেলাধুলা team spirit তৈরি করে। এটা fitness, আত্মবিশ্বাস এবং একটি শক্তিশালী ভারত গড়ার পথ। তাই মনের আনন্দে খেলাধুলা করুন ও ভালো থাকুন ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছু মানুষের কাছে কখনো কখনো কোনো কাজ অসম্ভব মনে হয়। তারা ভাবেন, এটা কি আদৌ সম্ভব? কিন্তু, যখন দেশ একটি চিন্তায় ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন অসম্ভবও সম্ভব হয়ে যায়। ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। শীঘ্রই এই মিশনের এগারো বছর পূর্ণ হবে। কিন্তু, এর শক্তি এবং এর প্রয়োজন আজও তেমনই রয়েছে। এই এগারো বছরে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ এক জন-আন্দোলন হয়ে উঠেছে। যা মানুষ নিজের কর্তব্য বলে মনে করেন এবং এটাই প্রকৃত জন-অংশগ্রহণ।
বন্ধুরা, প্রতি বছর হয়ে চলা স্বচ্ছতা নিরীক্ষণ এই ভাবনাকে আরও বেশী উদ্বুদ্ধ করেছে। এই বছর দেশের ৪৫০০-এর থেকে বেশি শহর এবং শহরতলী-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ১৫কোটির বেশী মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেছে। যেটা কোন সামান্য সংখ্যা নয়। এটা স্বচ্ছ ভারতের কণ্ঠস্বর।
বন্ধুরা, স্বচ্ছতা নিয়ে আমাদের শহর ও শহরতলী, নিজেদের প্রয়োজন এবং পরিবেশ অনুযায়ী আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে কাজ করছে। আর এর প্রভাব শুধুমাত্র এই শহরগুলীর মধ্যেই সীমিত নেই, পুরো দেশ এই পদ্ধতি অবলম্বন করছে। উত্তরাখণ্ডে কীর্তিনগরের মানুষেরা, পাহাড়ে waste management এর নতুন নজির স্থাপন করছেন । এইভাবেই ম্যাঙ্গালুরুতে প্রযুক্তির মাধ্যমে organic waste management এর কাজ শুরু হয়েছে। অরুণাচলে রোয়িং বলে একটা ছোট্ট শহর আছে। একটি সময় ছিল যখন এই অঞ্চলের মানুষদের সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য waste management অনেক বড় challenge ছিল। এইখানকার মানুষেরা এই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নিয়েছেনা । ‘Green Rowing Intiative’ শুরু হয়েছে এবং recycled waste থেকে একটা সম্পূর্ণ পার্ক বানানো হয়েছে। একইভাবে, কাড়ারে, বিজয়ওয়াড়াতে, water management এর অনেক নতুন উদাহরণ তৈরী হচ্ছে। আহমেদাবাদে River Front এ স্বচ্ছ অভিযান প্রত্যেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বন্ধুরা, ভূপালের একটা team এর নাম ‘ইতিবাচক ভাবনা’। এতে ২০০জন মহিলা আছে। এরা শুধু সাফাই করেন তা নয়, ভাবনারও বদল ঘটান। একসঙ্গে মিলে শহরের ১৭টি পার্ক পরিষ্কার করা, কাপড়ের থলে বিলি করা, এদের প্রতিটি পদক্ষেপে একটা করে বার্তা থাকে। এইরকম প্রচেষ্টার কারণেই ভূপাল শহর এখন স্বচ্ছতা নিরীক্ষণে অনেক এগিয়ে গেছে। লখনৌর গোমতী নদী team এর কথা বলাও জরুরী। ১০বছর ধরে প্রতি রবিবার, অক্লান্তভাবে, না থেমে, এই team এর সদস্যরা স্বচ্ছতার কাজে নিয়োজিত। ছত্তিশগড়ের বিলহার উদাহরণও বেশ চমৎকার। এইখানে মহিলাদের waste management নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আর ওরা সকলে মিলে, শহরের চিত্রটাই বদলে দিয়েছে। গোয়ার পানাজী শহরের দৃষ্টান্ত প্রেরণাদায়ক সেখানে বর্জ্য পদার্থকে ১৬রকম category তে ভাগ করা হয়েছে এবং এর নেতৃত্বও মহিলারাই দিচ্ছে । পানাজি তো রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছে।
বন্ধুরা, স্বচ্ছতা কোন নির্দিষ্ট সময় বা কোন একটা নির্দিষ্ট দিনের কাজ নয়। যখন আমরা প্রত্যেক বছরে প্রতি দিন, প্রতি মুহূর্তে স্বচ্ছতাকে গুরুত্ব দেবো তখনই দেশ স্বচ্ছ থাকবে। বন্ধুরা, শ্রাবণের বারিধারার মাঝে, দেশ আরও একবার উৎসবের রোশানাইতে সাজতে চলেছে। আজ হরিয়ালি তিজ, তারপরে নাগ পঞ্চমী এবং রাখী বন্ধন, এরপর জন্মাষ্টমী আমাদের দুষ্টু গোপালের জন্মোৎসব। এইসব পূজাপার্বন আমাদের ভাবনার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে, এই উৎসব আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ এবং ভারসাম্য বজায় রাখার বার্তা দেয়। আপনাদের সকলকে এই পূজা পার্বনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমার প্রিয় বন্ধুরা, নিজেদের চিন্তা ভাবনা, অনুভূতি ভাগ করতে থাকুন। আগামী মাসে আবার কথা হবে দেশবাসীর কিছু নতুন অভিজ্ঞতা এবং অনুপ্রেরণার কাহিনী নিয়ে। নিজেদের খেয়াল রাখুন। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
(Release ID: 2149006)
Read this release in:
Urdu
,
Manipuri
,
English
,
Marathi
,
Hindi
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Kannada
,
Malayalam