প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপচারিতায় গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা

মহাকাশে বিশ্বের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করতে চলেছে ভারত : প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 28 JUN 2025 8:22PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২৮ জুন ২০২৫

 

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রাখা প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লার সঙ্গে আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুভাংশু যদিও এখন তাঁর মাতৃভূমি থেকে অনেক দূরে রয়েছেন, তথাপি তিনি সমস্ত ভারতবাসীর হৃদয়ের সবচেয়ে কাছে রয়েছেন। শুভাংশুর নামের মধ্যে বিশেষত্ব রয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর এই যাত্রা এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। শ্রী মোদী বলেন, দুজন ব্যক্তির মধ্যে এই কথাবার্তা হলেও, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ১৪০ কোটি দেশবাসীর আবেগ ও উদ্দীপনা। শুভাংশুকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন। 

প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা ধন্যবাদ জানিয়ে শুভাংশু বলেন, তিনি ভালো রয়েছেন এবং সকলের ভালোবাসা এবং আশীর্বাদে তিনি অভিভূত। পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে থাকা এই মহাকাশচারী অগণিত ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্খার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তাঁর শৈশবের স্মৃতিচারণ করে শুভাংশু বলেন, তিনি যে একজন মহাকাশচারী হবেন, তা কখনও কল্পনা করননি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এই স্বপ্নপূরণ সফল হয়েছে। শুভাংশু একে এক বড় সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং বলেন যে, মহাকাশে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে তিনি গর্বিত। 

প্রধানমন্ত্রী কৌতুকের ছলে জানতে চান, ভারত থেকে নিয়ে যাওয়া গাজরের হালুয়া তিনি অন্য মহাকাশচারীদের সঙ্গে ভাগ করে খেয়েছেন কিনা। শুভাংশু গাজরের হালুয়া, মুগ ডালের হালুয়া এবং আমরস সহ বেশ কিছু ভারতীয় খাবার সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান, অন্য মহাকাশচারীরাও ভারতীয় খাবারের স্বাদ পেয়ে আপ্লুত। 

প্রধানমন্ত্রী শুভাংশুকে বলেন, পরিক্রমা হল ভারতের শত শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য।শুভাংশু ধরিত্রীকে পরিক্রমা করার সৌভাগ্যের অধিকারী হয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে শ্রী মোদীকে শুভাংশু জানান, কিছুক্ষণ আগে তিনি জানালার বাইরের দিকে তাকিয়েছিলেন। তখন তাঁরা হাওয়াইয়ের ওপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। শুভাংশু জানান, কক্ষপথ থেকে তিনি ১৬ বার  সূর্যোদয় এবং ১৬ বার সূর্যাস্ত দেখছেন এবং গোটা প্রক্রিয়াটিকে অত্যন্ত বিস্ময়কর আখ্যা দেন। কক্ষপথে ঘন্টায় প্রায় ২৮০০০ কিলোমিটার বেগে তাঁরা পরিক্রমা করছেন বলে জানান ভারতীয় মহাকাশচারী। তবে ভিতরে থাকায় এই গতি বুঝতে পারছেন না। 

মহাকাশের অসীম অনন্ত রূপ দেখে শুভাংশুর উপলব্ধির কথা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। তাঁর অনুভূতির কথা ব্যক্ত করে শুভাংশু বলেন, বাইরে থেকে পৃথিবীকে দেখার পর প্রথমে মনে হয়েছিল পৃথিবী পুরোপুরি একইরকম দেখতে, অর্থাৎ কোনও সীমারেখা নেই। দ্বিতীয় যে জিনিসটি তাঁর অত্যন্ত নজরে এসেছে, তা হল,  প্রথমবারের জন্য মহাকাশ থেকে ভারতকে দেখা। শুভাংশু বলেন, ভারতকে প্রকৃত অর্থেই অত্যন্ত বড় দেশ।  মানচিত্রে যা দেখা যায়, ভারত তার চেয়ে অনেক বড়।  একাত্মতার অনুভূতির কথা প্রকাশ করে শুভাংশু বলেন, বাইরে থেকে বিশ্বকে দেখে মনে কোনও সীমানা নেই, কোনও রাষ্ট্র নেই, কোনও দেশের অস্তিত্ব নেই, শেষ পর্যন্ত সবাই মানবতার একটি অংশ এবং পৃথিবী হল,  আমাদের ঘর এবং আমরা সবাই এর নাগরিক। মহাযাত্রায় শুভাংশুর কঠোর পরিশ্রম এবং দীর্ঘ প্রশিক্ষণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান,  মহাকাশের পরিস্থিতি কতটা আলাদা এবং তিনি কীভাবে তার সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছেন?

উত্তরে শুভাংশু বলেন,  সেখানে সবকিছুই আলাদা। পৃথিবীতে মাধ্যাকর্ষণের টান থাকে এবং এর মাধ্যমে সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হতো। কিন্তু সেখানে মাধ্যাকর্ষণ নেই, তাই ছোট ছোট জিনিসও অত্যন্ত কঠিন হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁকে পা বেঁধে রাখতে হয়েছে, তা না হলে উপরের দিকে চলে যাবেন এবং মাইকটিও চলে যাবে। জল খাওয়া, হাঁটা, ঘুমানো সবকিছুই সেখানে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। তবে এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে একদিন বা দুইদিন সময় লাগে, তারপর সবকিছু ঠিক হয়ে যায়,  সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে।


শ্রী মোদী বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতা, উভয়ের মধ্যে ভারতের শক্তি নিহিত থাকার প্রসঙ্গ টেনে ওই পরিবেশে ধ্যান এবং একাগ্রতার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সহমত পোষণ করে শুভাংশু বলেন, ভারত ইতিমধ্যে ছুটতে শুরু করেছে এবং এই মিশন হল, সেই লম্বা দৌড়ের প্রথম পদক্ষেপ মাত্র। সাধারণ প্রশিক্ষণ বা উৎক্ষেপণের সময় এমন অনেক পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা অত্যন্ত চাপের এবং এই রকম পরিস্থিতিতে একাগ্রতার সঙ্গে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মানসিক স্থিরতা এবং একাগ্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মহাকাশে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রসঙ্গে শুভাংশু জানান, এই প্রথম ভারতীয় বিজ্ঞানীরা ৭টি অনন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছেন, যেগুলো তিনি নিয়ে গিয়েছেন। প্রথম স্টেম সেল নিয়ে পরীক্ষা চালাবেন। মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ থাকে না, ওজন কমে যায় এবং পেশীর জোর কমে যায়। তাই পরিপূরক খাদ্যের মাধ্যমে পেশীর ক্ষতি বন্ধ করা বা আটকানো যায় কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখবেন। বয়সের কারণে পেশীর শক্তি কমে আসে। তাই, এ ধরনের পরীক্ষা কার্যকর হতে পারে। সেই সঙ্গে অন্য পরীক্ষাটি হল আণুবীক্ষণিক শ্যাওলার বৃদ্ধি। এই সব শ্যাওলা অত্যন্ত ক্ষুদ্র হলেও অত্যন্ত পুষ্টিদায়ক। তাই সেগুলি যদি এখানে বৃদ্ধি করানো যায় এবং এমন এক প্রক্রিয়া যদি আবিস্কার করা যায়, যাতে এগুলি বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি করানো যায় এবং পুষ্টি পূরণ করা যায়, তখন বিশ্বে খাদ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত উপযোগী হবে। শুভাংশু বলেন, মহাকাশের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এখানে প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ঘটে। তাই, মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় না। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চন্দ্রযানের সাফল্যের পর, দেশের শিশু এবং তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে নতুন উৎসাহ, মহাকাশ অভিযানের আগ্রহ বেড়েছে। এই ঐতিহাসিক যাত্রা সেই অঙ্গীকারকে আরও শক্তিশালী করছে। তরুণ প্রজন্মের প্রতি শুভাংশুর বার্তা হল, সাফল্যের জন্য শুধু একটিমাত্র পথ খোলা নেই, কখনও কখনও কেউ অন্য পথও বেছে নিতে পারে। কিন্তু একটি জিনিস এক রাখতে হবে, তা হল, চেষ্টা থেকে কখনও সরে আসা যাবে না, এটিই মূল মন্ত্র। কখনও হাল ছাড়া যাবে না। সেটি মেনে চললে, আজ বা কাল  নিশ্চিতভাবেই সাফল্য আসবে।

শুভাংশু আরও বলেন, তিনি যে শিক্ষালাভ করেছেন, স্পঞ্জের মতো আত্মস্থ করেছেন। এই অভিযানে যে শিক্ষালাভ করবেন, ফিরে আসার পর, সেগুলির ১০০% প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন।

প্রধানমন্ত্রী শুভাংশুকে বলেন, এটি হল ভারতের গগনযান মিশনের প্রথম অধ্যায়। এই ঐতিহাসিক যাত্রা শুধুমাত্র মহাকাশে সীমাবদ্ধ নেই, উন্নত ভারত গড়ার যাত্রাপথে এটি আমাদের গতি ও নতুন শক্তি যোগাবে। শ্রী মোদী বলেন, মহাকাশ ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের জন্য নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। এখন ভারত শুধু উড়বে না, ভবিষ্যতে নতুন উড়ানের জন্য প্ল্যাটফর্মও তৈরি করবে। প্রধানমন্ত্রীর আর্জিতে নিজের অনুভূতির কথা প্রকাশ করতে গিয়ে শুভাংশু বলেন, এটি হল আমাদের দেশের কাছে একটি অত্যন্ত বড় সমষ্টিগত সাফল্য। যেসব শিশু এটি দেখছে, যেসব তরুণ এটি দেখছেন, তাঁরাও চেষ্টা করলে উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে পারবেন। 

তাতে দেশেরও ভবিষ্যৎ ভালো হবে। শুভাংশুর কথায়, একটি মাত্র জিনিস মাথায় রাখতে হবে। তা হল, আকাশের কখনও সীমা নেই। এই ভাবনা নিয়ে এগোলেই, ভবিষ্যৎ আলোয় উজ্জ্বল হবে, দেশের ভবিষ্যৎ-ও  আলোকিত হবে। প্রধানমন্ত্রীকে শুভাংশু বলেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে তিনি অত্যন্ত আবেগাপ্লুত এবং অত্যন্ত খুশি। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে তিনি ১৪০ কোটি দেশবাসীর সঙ্গেও কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর পিছনে থাকা তেরঙ্গা দেখিয়ে শুভাংশু বলেন, দু'দিন আগেও সেটি ওখানে ছিল না, তিনিই প্রথমবারের জন্য সেটি  উত্তোলন করেন। 

প্রধানমন্ত্রী শুভাংশু এবং তাঁর সমস্ত সহকর্মীদের এই মিশনের সাফল্য কামনা করেন এবং বলেন যে, শুভাংশু এবং অন্যদের সবার ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে ১৪০ কোটি দেশবাসীকেও ধন্যবাদ জানান শুভাংশু।

 

SC/MP/AS


(Release ID: 2140677)