প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে ১১তম আন্তর্জাতিক যোগা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ
Posted On:
21 JUN 2025 8:49AM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ২১ জুন ২০২৫
অন্ধ্রপ্রদেশের মাননীয় রাজ্যপাল সৈয়দ আব্দুল নাজির জি, এই রাজ্যের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী, আমার পরম মিত্র চন্দ্রবাবু নাইডু গারু, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আমার সহকর্মীবৃন্দ, কে. রামমোহন নাইডু জি, প্রতাপরাও যাদব জি, চন্দ্রশেখর জি, ভূপতি রাজু শ্রীনিবাস ভার্মা জি, রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ গারু, অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা! আপনাদের সকলকে নমস্কার!
আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষ্যে দেশ ও বিশ্বের সকলকে শুভেচ্ছা। আজ, ২১শে জুন, ১১ বারের মতো সমগ্র বিশ্ব একসঙ্গে যোগব্যায়াম করছে। যোগ মানে সংযোগ স্থাপন করা এবং যোগ কীভাবে সমগ্র বিশ্বকে সংযুক্ত করেছে তা দেখতে অসাধারণ লাগে। গত দশক ধরে যোগের যাত্রার দিকে তাকালে আমার অনেক কিছু মনে পড়ে। যেদিন ভারত জাতিসংঘে ২১শে জুনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল এবং তারপরে খুব কম সময়ের মধ্যে বিশ্বের ১৭৫টি দেশ আমাদের প্রস্তাবের সমর্থনে দাঁড়িয়েছিল। আজকের বিশ্বে এই ধরনের সংহতি এবং সমর্থন সাধারণ ঘটনা নয়। এটি কেবল একটি প্রস্তাবের সমর্থন ছিল না, এটি ছিল মানবতার কল্যাণের জন্য বিশ্বের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আজ, ১১ বছর পর, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে যোগব্যায়াম বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রার একটি অংশ হয়ে উঠেছে। আমি গর্বিত বোধ করি যখন দেখি যে আমাদের দিব্যাঙ্গ বন্ধুগণ ব্রেইল হরফে যোগশাস্ত্র পড়েন, বিজ্ঞানীরা মহাকাশে যোগব্যায়াম করেন, গ্রামের তরুণ বন্ধুগণ যোগ অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করেন। দেখুন, নৌবাহিনীর সমস্ত জাহাজে একটি খুব চমৎকার যোগ প্রোগ্রাম চলছে। সিডনি অপেরা হাউসের সিঁড়ি হোক, এভারেস্টের চূড়া হোক, অথবা সমুদ্রের বিস্তৃতি, সর্বত্রই একই বার্তা - যোগ সকলের, এবং সকলের জন্য। যোগ সকলের জন্য, নিজস্ব সীমানা ছাড়িয়ে, পটভূমি ছাড়িয়ে, বয়স বা সামর্থ্যের বাইরে।
বন্ধুগণ,
আজ আমি খুশি যে আমরা সকলে যে বিশাখাপত্তনমে রয়েছি, এই শহর প্রকৃতি এবং অগ্রগতি উভয়েরই সঙ্গমস্থল। এখানকার মানুষ এই অনুষ্ঠানটিকে এত সুন্দরভাবে আয়োজন করেছে। আমি চন্দ্রবাবু নাইডু গারু এবং পবন কল্যাণ গারুকে অভিনন্দন জানাই, আপনাদের নেতৃত্বে অন্ধ্রপ্রদেশ ‘যোগ-অন্ধ্র অভিযান’-এর একটি দুর্দান্ত উদ্যোগ নিয়েছে। আমি নরা লোকেশ গারু-র প্রচেষ্টারও বিশেষ প্রশংসা করতে চাই। যোগের সামাজিক উদযাপন কেমন হওয়া উচিত, সমাজের প্রতিটি অংশ কীভাবে সংযুক্ত থাকা উচিত, তিনি গত দেড় মাসের ‘যোগ-অন্ধ্র অভিযান’-এ তা দেখিয়েছেন এবং সেজন্য লোকেশ ভাই অনেক অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। আর আমি আমার দেশবাসীকে বলতে চাই যে, এই ধরণের সুযোগগুলিকে সামাজিক স্তরে কীভাবে গভীরে নিয়ে যাওয়া যায় তার উদাহরণ হিসাবে লোকেশ ভাইয়ের কাজকে দেখা উচিত।
বন্ধুগণ ,
আমাকে বলা হয়েছে যে দুই কোটিরও বেশি মানুষ এই ‘যোগ অন্ধ্র’ অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এটিই জনসাধারণের অংশগ্রহণের চেতনা যা উন্নত ভারতের মূল ভিত্তি। যখন জনগণ নিজেই এগিয়ে আসে এবং একটি অভিযান শুরু করে, একটি লক্ষ্য অর্জন করে, তখন সেই লক্ষ্য অর্জন থেকে জনগণকে কেউ আমাদের আটকাতে পারে না। এই অনুষ্ঠানে জনসাধারণের এই সদিচ্ছা এবং আপনাদের প্রচেষ্টা সর্বত্র দৃশ্যমান।
বন্ধুগণ ,
এবারের আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের থিম বা মূলভাবনা হল, ‘এক পৃথিবী, এক স্বাস্থ্যের জন্য যোগ’। এই প্রতিপাদ্যটি একটি গভীর সত্যকে প্রতিফলিত করে। পৃথিবীর প্রতিটি সত্তার স্বাস্থ্য পরস্পর সংযুক্ত। মানুষের কল্যাণ নির্ভর করে আমাদের খাদ্য উৎপাদনকারী মাটির স্বাস্থ্যের উপর, আমাদের জল সরবরাহকারী নদীগুলির উপর, আমাদের বাস্তুতন্ত্র ভাগ করে নেওয়া প্রাণীদের স্বাস্থ্যের উপর, আমাদের পুষ্টি জোগায় এমন উদ্ভিদের উপর। যোগ আমাদের এই আন্তর্সংযুক্ততার প্রতি জাগ্রত করে তোলে। যোগ আমাদের বিশ্বের সঙ্গে একতার পথে যাত্রা করায়।এটি আমাদের শেখায় যে আমরা কেউ বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি নই বরং প্রত্যেকেই প্রকৃতির অংশ। প্রাথমিকভাবে আমরা আমাদের নিজস্ব স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার যত্ন নিতে শিখি। ধীরে ধীরে, আমাদের যত্ন এবং উদ্বেগ আমাদের পরিবেশ, সমাজ এবং গ্রহের দিকে প্রসারিত হয়। যোগ একটি মহান ব্যক্তিগত শৃঙ্খলা। একই সঙ্গে, এটি এমন একটি ব্যবস্থা যা আমাদের ‘আমি থেকে আমাদের’ কাছে নিয়ে যায়।
বন্ধুগণ,
'আমি থেকে আমরা' এই ভাবধারাই ভারতের আত্মার মূল কথা। যখন কোন ব্যক্তি নিজের হিত থেকে উপরে উঠে সমাজ সম্পর্কে ভাবেন, তখনই সম্পূর্ণ মানবতা কল্যাণ হয়। ভারতের সংস্কৃতি আমাদের শেখায়, ‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ’ অর্থাৎ সকলের কল্যাণ সাধনই আমার কর্তব্য। 'আমি থেকে আমরা' এই যাত্রাই সেবা, সমর্পণ এবং সহঅস্তিস্থের ভিত্তি। এই ভাবনাই সামাজিক সহযোগিতাকে উৎসাহ যোগায়।
বন্ধুগণ,
দুর্ভাগ্যক্রমে, আজ গোটা বিশ্ব কোনও না কোনও উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অনেক অংশে অশান্তি এবং অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে যোগ থেকে আমরা শান্তির দিশা পাই। যোগ হল একটি ‘পজ বাটন’ যা মানবতার ভারসাম্য এবং সামগ্রিক লাভের স্বার্থে বুকভরে শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার পরিপূরক। আমি আজ এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে সমগ্র বিশ্বের মানুষের কাছে একটি অনুরোধ রাখবো, এই আন্তর্জাতিক যোগ দিবস মানবতার জন্য যোগ ২.০-এর শুভ সূচনা করুক, যেখানে মানসিক শান্তি হবে আন্তর্জাতিক নীতি। যেখানে যোগ নিছকই ব্যক্তিগত অভ্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যম হয়ে ওঠে। যেখানে প্রত্যেক দেশ, প্রতিটি সমাজ যোগকে জীবনশৈলি এবং লোকনীতির অংশ করে তুলবে। যেখানে আমরা মিলেমিশে একটি শান্ত ভারসাম্যযুক্ত এবং সুদূরপ্রসারি টেকসই বিশ্ব গঠনে গতি প্রদান করতে পারি। যেখানে যোগ বিশ্বকে সংঘাত থেকে সহযোগিতার দিকে এবং সমস্যাজাত উত্তেজনা থেকে সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে।
বন্ধুগণ,
বিশ্বে যোগের প্রসারের জন্য ভারত যোগ বিজ্ঞানকে আধুনিক গবেষণার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। দেশের বড় বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান যোগ নিয়ে গবেষণা করছে। যোগের বিজ্ঞানসম্মত বিষয়গুলি যেন আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে স্থান করে নিতে পারে সেই চেষ্টাই আমরা করছি। আমাদের দেশের চিকিৎসা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে যোগের ক্ষেত্রে প্রমাণ-ভিত্তিক থেরাপিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে দিল্লির এইমসও অনেক ভালো কাজ করে দেখিয়েছে। এইমসের গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, যোগ ‘কার্ডিয়ো অ্যান্ড নিউরোলজি ডিসঅর্ডার’ বা হৃদযন্ত্র এবং বিভিন্ন মস্তিস্ক ও স্নায়ু রোগের উপাচার ও মহিলাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বন্ধুগণ,
ন্যাশনাল আয়ুষ মিশনের মাধ্যমেও যোগ এবং সুস্থতার মন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তিও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। যোগ পোর্টাল এবং যোগঅন্ধ্র পোর্টালের মাধ্যমে সারা দেশে ১০ লক্ষেরও বেশি যোগ অনুষ্ঠান নথিভুক্ত হয়েছে। আজ দেশের কোণায় কোণায় এত বেশি জায়গায় এর আয়োজন হচ্ছে, দেখে বোঝা যায় যে আজ যোগের পরিধি ও আওতা কতটা বড় হয়ে গেছে।
বন্ধুগণ,
আমরা সবাই জানি, আজ সারা পৃথিবীতে ‘হিল ইন ইন্ডিয়া’-র মন্ত্র যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশের জন্য ভারত ‘হীলিং’-এর শ্রেষ্ঠ গন্তব্য হয়ে উঠছে। এক্ষেত্রেও যোগের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে যোগের জন্য কমন যোগ প্রোটোকল রচিত হয়েছে। যোগা সার্টিফিকেশন বোর্ডের সাড়ে ৬ লক্ষেরও বেশি প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক-সেবিকা, প্রায় ১৩০টি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এবং মেডিকেল কলেজগুলিতে ১০ দিনের যোগ মডিউল, এমনই অনেক প্রচেষ্টা একটি সার্বিক যোগ বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলছে। সারা দেশে আমাদের যত আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির রয়েছে, সেখানে প্রশিক্ষিত যোগ শিক্ষক মোতায়েন করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ যাতে ভারতের এই সুস্বাস্থ্য বাস্তুতন্ত্র থেকে লাভবান হয়, তা সুনিশ্চিত করতে বিশেষ ই-আয়ুষ ভিসা প্রদান করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
আজ যোগ দিবস উপলক্ষে আমি আপনাদের সকলের দৃষ্টি স্থুলতার দিকে আকর্ষণ করতে চাইবো। ক্রমবর্ধমান স্থুলতা আজ গোটা বিশ্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানেও এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম। সেজন্য আমাদের নিজস্ব খাদ্যাভ্যাসে ১০ শতাংশ তেল কম ব্যবহারের চ্যালেঞ্জও শুরু করেছি। আমি আর একবার দেশবাসীর কাছে, সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে এই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা খাবারের মধ্যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ ভোজ্যতেলের ব্যবহার কমান। সে জন্য সারা পৃথিবীতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তেলের ব্যবহার কমানো, অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং নিয়মিত যোগাভ্যাস এটাই উন্নত সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত মূল জরিবুটি।
বন্ধুগণ,
আসুন আমরা সবাই মিলে যোগকে একটি গণআন্দোলনে পরিণত করি। একটি এমন আন্দোলন যা বিশ্বকে শান্তি, সুস্বাস্থ্য এবং সহযোগিতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি যোগ দিয়ে দিন শুরু করবে, আর জীবনে ভারসাম্য পাবে। যেখানে প্রত্যেক সমাজ যোগের সঙ্গে যুক্ত হোক এবং এর মাধ্যমে উত্তেজনা মুক্ত হোক। যেখানে যোগ মানবতাকে একটি সুতোয় গাঁথার মাধ্যম হয়ে উঠবে। আর যেখানে 'যোগ ফর ওয়ান আর্থ, ওয়ান হেল্থ' একটি আন্তর্জাতিক সংকল্পে পরিণত হবে। আর একবার এই অনুষ্ঠানকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানিয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা যোগ অনুশীলনকারী এবং যোগপ্রেমীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে, আপনাদের সকলকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। ধন্যবাদ!
(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে)
SC/SB/AS
(Release ID: 2138557)