প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

জম্মু ও কাশ্মীরের কাটরায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বাংলা অনুবাদ

Posted On: 06 JUN 2025 4:14PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৬ মে, ২০২৫

 

ওম মাতা বৈষ্ণো দেবী, তাঁর চরণে শতকোটি প্রণাম, জয় মাতা দি! 
জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা জি, মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ জি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী অশ্বিনী বৈষ্ণব জি, জিতেন্দ্র সিং জি, ভি সোমান্না জি, উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুরেন্দ্র কুমার জি, জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সুনীল জি, সংসদে আমার সহকর্মী যুগল কিশোর জি, অন্যান্য জনপ্রতিনিধি এবং আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা। এই ভূমি বীর জোরোয়ার সিং জি-র ভূমি, আমি এই ভূমিকে প্রণাম জানাই।

বন্ধুগণ,

আজকের এই অনুষ্ঠান, ভারতের ঐক্য এবং ভারতের ইচ্ছাশক্তির এক বিশাল উদযাপন। মাতা বৈষ্ণো দেবীর আশীর্বাদে আজ কাশ্মীর উপত্যকা ভারতের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ভারতমাতার রূপ বর্ণনা করার সময়, আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে বলতে থাকি - কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। এই কল্পনা এখন রেল নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রেও বাস্তবে পরিণত হয়েছে। উধমপুর, শ্রীনগর, বারামুল্লা, এই রেল লাইন প্রকল্পগুলি, এগুলি কেবল নাম নয়। এগুলি জম্মু ও কাশ্মীরের নতুন শক্তির পরিচয়। এগুলিই ভারতের নতুন শক্তির ঘোষণা। কিছুক্ষণ আগে আমার চেনাব সেতু এবং আঞ্জি সেতু উদ্বোধন করার সুযোগ হয়েছে। আজই জম্মু ও কাশ্মীর দুটি নতুন বন্দে ভারত ট্রেন পেয়েছে। এখানে জম্মুতে একটি নতুন মেডিকেল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। ৪৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নে নতুন গতি সঞ্চার করবে। উন্নয়নের নতুন যুগের জন্য আমি আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই। আমি এই ভূমিকে প্রণাম জানাই।

বন্ধুগণ,

জম্মু ও কাশ্মীরের বহু প্রজন্ম রেল যোগাযোগের স্বপ্ন দেখে চলে গেছে। গতকাল আমি মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ জির একটি বক্তব্য শুনছিলাম এবং একটু আগে তিনি নিজের ভাষণেও  বলেছেন যে তিনি সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকেই এই প্রকল্পের সমাপ্তির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আজ জম্মু ও কাশ্মীরের লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। এবং এটাও সত্য যে এমনই সব আরও ভালো কাজ এখনও আমার জন্য বাকি আছে।

বন্ধুগণ,

এটা আমাদের সরকারের সৌভাগ্য যে আমাদের মেয়াদে এই প্রকল্পের কাজের গতি বেড়েছে আর আজ আমরা এটি সম্পূর্ণ করেছি। এর মধ্যে, কোভিডের সময়কালে অনেক অসুবিধা এসেছিল, কিন্তু আমরা দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি।

বন্ধুগণ,

যাতায়াতের অসুবিধা, আবহাওয়ার সমস্যা, পাহাড় থেকে ক্রমাগত পাথর পড়া, এই প্রকল্পটি সম্পন্ন করা কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু আমাদের সরকার চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ করার পথ বেছে নিয়েছে। আজ, জম্মু ও কাশ্মীরে নির্মিত অনেক সর্ব-আবহাওয়া পরিকাঠামো প্রকল্প এর একটি উদাহরণ। সোনমার্গ সুড়ঙ্গের কাজ মাত্র কয়েক মাস আগে শুরু হয়েছিল। কিছুক্ষণ আগে, আমি চেনাব এবং আঞ্জি সেতুর উপর দিয়ে আপনাদের মাঝে এসে পৌঁছেছি। এই সেতুদুটির উপর দিয়ে হাঁটার সময়, আমি ভারতের দৃঢ় সংকল্প, আমাদের ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মীদের দক্ষতা এবং সাহস অনুভব করেছি। চেনাব সেতু হল বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলওয়ে আর্চ সেতু। মানুষ আইফেল টাওয়ার দেখতে ফ্রান্সের প্যারিসে যায়। এবং এই সেতুটি আইফেল টাওয়ারের চেয়ে অনেক উঁচু। এখন মানুষ শুধু চেনাব সেতু দিয়ে কাশ্মীর দেখতে যাবে না, বরং এই সেতুটি নিজেই একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে। সবাই সেলফি পয়েন্টে যাবেন এবং সেলফি তুলবেন। আমাদের আঞ্জি সেতুও কারিগরী বিদ্যার একটি দুর্দান্ত উদাহরণ। এটি ভারতের প্রথম কেবল-সমর্থিত রেলওয়ে সেতু। এই দুটি সেতু কেবল ইট, সিমেন্ট, ইস্পাত এবং লোহার তৈরি কাঠামো নয়, এগুলি পীর পাঞ্জালের দুর্গম পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকা ভারতের শক্তির জীবন্ত প্রতীক। এগুলি ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের গর্জন। এগুলি দেখায় যে উন্নত ভারতের স্বপ্ন যত বড়, আমাদের সাহস এবং আমাদের সামর্থ্য তত বেশি। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সদিচ্ছা এবং অপরিসীম প্রচেষ্টা।

বন্ধুগণ,
চেনাব সেতু হোক বা আঞ্জি সেতু, এগুলি জম্মু ও কাশ্মীরের উভয় অঞ্চলের জন্য সমৃদ্ধির মাধ্যম হয়ে উঠবে। এগুলি শুধুই রাজ্যের পর্যটন বৃদ্ধি করবে না বরং অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিকেও উপকৃত করবে। জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে রেল যোগাযোগ উভয় অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে। এটি এখানকার শিল্পকে গতি দেবে, এখন কাশ্মীরের আপেল কম খরচে দেশের বড় বাজারে পৌঁছাতে সক্ষম হবে এবং সময়মতো পৌঁছাবে। শুকনো ফল হোক বা পশমিনা শাল, এখানকার হস্তশিল্প এখন দেশের যেকোনো প্রান্তে সহজেই পৌঁছাতে সক্ষম হবে। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের জন্য দেশের অন্যান্য প্রান্তে ভ্রমণ করা খুব সহজ হবে।

বন্ধুগণ,
আমি সংবাদপত্রে সাঙ্গালদানের এক ছাত্রের মন্তব্য পড়ছিলাম। সেই ছাত্রটি লিখেছে যে তার গ্রামের হাতেগোনা যে ক’জন এলাকার বাইরে গিয়েছে তারাই এখন পর্যন্ত ট্রেন দেখেছে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই শুধু ট্রেনের ভিডিও দেখেছে। তাঁরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তাঁদের চোখের সামনে দিয়ে একটি আসল ট্রেন চলে যাবে। আমি আরও পড়েছি যে অনেক লোক ট্রেনের আগমন এবং ছাড়ার সময় মনে রাখছেন। আরেকটি মেয়ে খুব ভালো কথা লিখেছে, সেই মেয়েটি লিখেছে - এখন আর আবহাওয়া নির্ধারণ করবে না যে রাস্তা খোলা থাকবে নাকি বন্ধ থাকবে, এখন এই নতুন ট্রেন পরিষেবা প্রত্যেক ঋতুতে মানুষকে সাহায্য করবে।
বন্ধুগণ,
জম্মু ও কাশ্মীর হল ভারতমাতার মুকুট। এই মুকুটটি সুন্দর সব রত্নখচিত। এখানকার প্রাচীন সংস্কৃতি, এখানকার ঐতিহ্য, এখানকার আধ্যাত্মিক চেতনা, প্রকৃতির সৌন্দর্য, এখানকার ভেষজের জগৎ, ফল ও ফুলের প্রাচুর্য - এই নানা রঙের  রত্নগুলি জম্মু ও কাশ্মীরের শক্তি। তাছাড়া এখানকার যুবকদের মধ্যে, আপনাদের মধ্যে যে প্রতিভা রয়েছে, তা সেই মুকুটে মণির মতো জ্বলজ্বল করে।
বন্ধুগণ,
আপনারা ভালো করেই জানেন যে আমি কয়েক দশক ধরে জম্মু ও কাশ্মীর ভ্রমণ করে আসছি। এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অভ্যন্তরীণ এলাকা পরিদর্শন এবং বসবাসের সুযোগ আমার হয়েছে। আমি ক্রমাগত এই সম্ভাবনাগুলি দেখেছি এবং অনুভব করেছি, আর সেজন্যেই আমি জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছি।

বন্ধুগণ,

জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের শিক্ষা ও সংস্কৃতির গর্ব। আজ, আমাদের জম্মু ও কাশ্মীর বিশ্বের বৃহত্তম জ্ঞানকেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠছে, তাই ভবিষ্যতে জম্মু ও কাশ্মীরের অংশগ্রহণও বৃদ্ধি পাবে। এখানে আইআইটি, আইআইএম, এইমস এবং এনআইটির মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জম্মু এবং শ্রীনগরে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরেও গবেষণার বাস্তুতন্ত্র প্রসারিত হচ্ছে।

বন্ধুগণ,
 
পড়াশোনার পাশাপাশি, এখানে চিকিৎসার জন্যও অভূতপূর্ব কাজ করা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে দুটি রাজ্য স্তরের ক্যান্সার ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত পাঁচ বছরে এখানে সাতটি নতুন মেডিকেল কলেজ শুরু হয়েছে। আপনারা এটাও জানেন যে যখন একটি মেডিকেল কলেজ খোলা হয়, তখন কেবল রোগীরাই নয়, সেই এলাকার যুবকরাও এর থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হন। এখন জম্মু ও কাশ্মীরে এমবিবিএস আসনের সংখ্যা ৫০০ থেকে বেড়ে ১৩০০ হয়েছে। আমি খুশি যে এখন রিয়াসি জেলাও একটি নতুন মেডিকেল কলেজ পেতে চলেছে। শ্রী মাতা বৈষ্ণো দেবী ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল এক্সিলেন্স, এটি কেবল একটি আধুনিক হাসপাতালই নয়, এটি আমাদের দানশীলতার সংস্কৃতিরও একটি উদাহরণ। এই মেডিকেল কলেজ তৈরিতে ব্যয় করা অর্থ ভারতের প্রতিটি কোণ থেকে মাতা বৈষ্ণো দেবীর চরণে প্রণাম করতে আসা লোকেরা দান করেছেন। এই পবিত্র কাজের জন্য আমি শ্রী মাতা বৈষ্ণো দেবী শ্রাইন বোর্ড এবং এর চেয়ারম্যান মনোজ জিকে আমার শুভেচ্ছা জানাই। এই হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ৩০০ শয্যা থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে। কাটরায় মাতা বৈষ্ণো দেবীর দর্শনে আসা মানুষের জন্যও এটি খুবই সুবিধাজনক হবে।

বন্ধুগণ,

কেন্দ্রে বিজেপি-এনডিএ সরকার ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। এই ১১ বছর দরিদ্রদের কল্যাণে নিবেদিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে ৪ কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য একটি পাকা বাড়ির স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। উজ্জ্বলা যোজনা ১০ কোটি রান্নাঘরের ধোঁয়া দূর করেছে, আমাদের বোন ও কন্যাদের সুরক্ষা দিয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত যোজনা ৫০ কোটি দরিদ্র মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা প্রতিটি থালায় পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করেছে। প্রথমবারের মতো, জন ধন যোজনা ৫০ কোটিরও বেশি দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যাংকের দরজা খুলে দিয়েছে। সৌভাগ্য যোজনা অন্ধকারে বসবাসকারী আড়াই কোটি পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। স্বচ্ছ ভারত মিশনের আওতায় নির্মিত ১২ কোটি শৌচাগার মানুষকে খোলা জায়গায় মলত্যাগের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দিয়েছে। জল জীবন মিশন ১২ কোটি নতুন বাড়িতে নলের জল পৌঁছে দিয়েছে, যা মহিলাদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি ১০ কোটি ক্ষুদ্র কৃষককে সরাসরি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে।

বন্ধুগণ, 

সরকারের এই ধরণের অনেক প্রচেষ্টার ফলে, গত ১১ বছরে, ২৫ কোটিরও বেশি দরিদ্র মানুষ, আমাদের নিজস্ব দরিদ্র ভাই ও বোনেরা, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং ২৫ কোটি দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্যকে পরাজিত করে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখন তারা নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অংশ হয়ে উঠেছে। যারা নিজেদেরকে সমাজ ব্যবস্থার বিশেষজ্ঞ বলে মনে করেন, বড় বিশেষজ্ঞ, যারা অতীত ও ভবিষ্যতের রাজনীতিতে ডুবে আছেন, যারা দলিতদের নামে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জন করছেন, তারা একবার দেখে নিন যে আমি যে প্রকল্পগুলির কথা বলেছি। কারা কারা এই সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, কারা কারা স্বাধীনতার পর ৭-৭ দশক ধরে এই মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এরা আমার দলিত ভাই ও বোনেরা, এরা আমার জনজাতি ভাই ও বোনেরা, এরা আমার পিছিয়ে পড়া ভাই ও বোনেরা, এরা পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষ, এরা জঙ্গলে বসবাসকারী মানুষ, এরা এমন মানুষ যারা বস্তিতে তাঁদের পুরো জীবন কাটাযন, এরা সেই পরিবারগুলি যাঁদের জন্য মোদী তাঁর ১১ বছর শাসনকাল ব্যয় করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার দরিদ্রদের, নতুন মধ্যবিত্তদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রদানের চেষ্টা করছে। এক পদ এক পেনশন হোক, ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতন করমুক্ত হোক, বাড়ি কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হোক, সস্তা বিমান ভ্রমণে সহায়তা করা হোক, প্রতিটি উপায়ে সরকার দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটছে।
বন্ধুগণ,
দরিদ্রদের দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করা, পাশাপাশি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা, যাঁরা সৎভাবে জীবনযাপন করেন এবং সময়ে সময়ে দেশের জন্য কর প্রদান করেন, স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো, তাঁদের জন্য এত কাজ করা হয়েছে, যা আমরা করেছি।
বন্ধুগণ,
আমরা আমাদের যুবসমাজের জন্য ক্রমাগত নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করছি। আর এর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল পর্যটন। পর্যটন কর্মসংস্থান প্রদান করে, পর্যটন মানুষকে সংযুক্ত করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের প্রতিবেশী দেশ মানবতার বিরুদ্ধে, সম্প্রীতির বিরুদ্ধে, পর্যটনের বিরুদ্ধে, শুধু তাই নয়, এটি দরিদ্রদের জীবিকারও বিরুদ্ধে। ২২শে এপ্রিল পহেলগামে যা ঘটেছিল তা এর একটি উদাহরণ। পাকিস্তান পহেলগামে মানবতা এবং কাশ্মীরিয়ত উভয়কেই আক্রমণ করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভারতে দাঙ্গা বাঁধানো। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কাশ্মীরের পরিশ্রমী মানুষের উপার্জন বন্ধ করা। সেজন্যেই পাকিস্তান পর্যটকদের উপর আক্রমণ করেছে। গত ৪-৫ বছর ধরে যে পর্যটন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছিল, সেখানে প্রতি বছর রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক এখানে আসছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীরের দরিদ্রদের পরিবারগুলিকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে পর্যটন ব্যবস্থা সুফলদায়ক, তাকে পাকিস্তান লক্ষ্যবস্তু করেছিল। কেউ ঘোড়ায় চড়িয়ে যাত্রী নিয়ে যেতেন, কেউ কুলির কাজ করতেন, কেউ গাইডের কাজ করতেন, কারও গেস্ট হাউস আছে, কেউ দোকান-ধাবার মালিক; পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র ছিল তাঁদের সবার জীবিকা নষ্ট করা। যে কাশ্মীরী যুবক আদিল সন্ত্রাসবাদীদের চ্যালেঞ্জ করেছিল, সেও সেখানে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিল, কিন্তু সে পর্যটকদের যত্ন নেওয়ার জন্য কাজ করছিল। সন্ত্রাসবাদীরা আদিলকেও হত্যা করেছে।
বন্ধুগণ,
পাকিস্তানের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ আজ যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে, এবার জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ যে শক্তি দেখিয়েছে, তাতে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ কেবল পাকিস্তানকেই নয়, সমগ্র বিশ্বের সন্ত্রাসবাদী মানসিকতাকে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের যুবকরা এখন সন্ত্রাসবাদের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য মনস্থির করেছে। এই সন্ত্রাসবাদ উপত্যকার স্কুলগুলিকে পুড়িয়ে দিয়েছে, শুধু স্কুল বা ভবন নয়, দুটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ পুড়িয়ে দিয়েছে। হাসপাতাল ধ্বংস করা হয়েছে। এরা অনেক প্রজন্মকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এখানকার মানুষ তাঁদের পছন্দের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারতেন, এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারত, সন্ত্রাসবাদের কারণে এসব কিছু একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বন্ধুগণ, 
বছরের পর বছর ধরে সন্ত্রাসবাদকে সহ্য করার ফলে জম্মু ও কাশ্মীর এত ধ্বংসলীলা দেখেছে যে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছিল, এবং সন্ত্রাসবাদকে তাঁদের ভাগ্য হিসেবে মেনে নিয়েছিল। জম্মু ও কাশ্মীরকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনা প্রয়োজন ছিল, এবং আমরা তা করেছি। আজ, জম্মু ও কাশ্মীরের যুবকরা নতুন স্বপ্ন দেখছে এবং তা বাস্তবায়নও করছে। এখন কাশ্মীরের যুবকরা বাজার, শপিং মল, সিনেমা হলগুলিকে জমজমাট দেখে খুশি। এখানকার মানুষ জম্মু ও কাশ্মীরকে আবারও চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের একটি প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হতে দেখতে চায়, এই অঞ্চলটিকে খেলাধুলার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হতে দেখতে চায়। মাতা ক্ষীর ভবানীর মেলায়ও আমরা একই অনুভূতি দেখেছি। হাজার হাজার মানুষ যেভাবে মাতার মন্দিরে পৌঁছেছে, তাতে নতুন জম্মু ও কাশ্মীরের চিত্র ফুটে উঠেছে। এখন ৩ তারিখ থেকে অমরনাথ যাত্রাও শুরু হতে চলেছে। আমরা সর্বত্র ঈদের উত্তেজনাও দেখতে পাচ্ছি। জম্মু ও কাশ্মীরে যে উন্নয়নের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তা পহেলগাম হামলায় নড়বে না। জম্মু ও কাশ্মীরের সকলের কাছে এবং আপনাদের সকলের কাছে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি হল, আমি এখানে উন্নয়ন থামাতে দেব না। যদি এখানকার যুবকদের স্বপ্ন পূরণের পথে কোনও বাধা আসে, তাহলে মোদীই প্রথম সেই বাধার মুখোমুখি হবেন।

বন্ধুগণ, 
আজ ৬ই জুন, মনে আছে এক মাস আগে, ঠিক এক মাস আগে, ৬ই মে রাতে, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীদের ধ্বংস করা হয়েছিল। এখন যখনই পাকিস্তান অপারেশন সিন্দুরের নাম শুনবে, তখনই তাদের লজ্জাজনক পরাজয়ের কথা মনে পড়বে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং সন্ত্রাসবাদীরা কখনও কল্পনাও করেনি যে ভারত পাকিস্তানের শত শত কিলোমিটার ভেতরে গিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের উপর এভাবে আক্রমণ করবে। বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করে তারা যে সন্ত্রাসের ভবনগুলি তৈরি করেছিল তা কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এটি দেখে পাকিস্তান খুব উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং জম্মু, পুঞ্চ এবং অন্যান্য জেলার মানুষের উপরও তাদের ক্ষোভ বর্ষণ করে। পুরো বিশ্ব দেখেছে কিভাবে পাকিস্তান এখানে ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে, শিশুদের উপর গোলা নিক্ষেপ করেছে, স্কুল ও হাসপাতাল ধ্বংস করেছে, মন্দির, মসজিদ এবং গুরুদ্বারে গোলাবর্ষণ করেছে। দেশের প্রতিটি নাগরিক দেখেছে যে আপনারা কীভাবে পাকিস্তানের আক্রমণের প্রতিহত করেছেন। সেজন্যেই দেশের প্রত্যেক নাগরিক পূর্ণ শক্তি নিয়ে তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
বন্ধুগণ, 
কিছুদিন আগে সীমান্ত পেরিয়ে গুলিবর্ষণে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজারেরও বেশি পরিবারের দুর্ভোগ মানে আমাদেরও দুর্ভোগ। গোলাবর্ষণের পর এই পরিবারগুলিকে তাঁদের ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় সরকার এই সহায়তা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে, আমি আপনাকে এই বিষয়েও তথ্য দিতে চাই।
বন্ধুগণ, 
এখন, যেসব বাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের ২ লক্ষ টাকা এবং যেসব বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ১ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত সহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে। এর অর্থ হল, এখন তাঁরা প্রথমবারের সাহায্যের পরে এই অতিরিক্ত অর্থ পাবেন।
বন্ধুগণ, 
আমাদের সরকার সীমান্তে বসবাসকারী জনগণকে দেশের প্রথম প্রহরী হিসেবে বিবেচনা করে। গত দশকে, সরকার সীমান্ত জেলাগুলিতে উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য অভূতপূর্ব কাজ করেছে, এই সময়ের মধ্যে প্রায় দশ হাজার নতুন বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছে। অপারেশন সিন্দুরের পরে তৈরি পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচাতে এই বাঙ্কারগুলি অনেক সাহায্য করেছে। আমি আপনাদের আনন্দের সঙ্গে  জানাচ্ছি যে জম্মু ও কাশ্মীর বিভাগের জন্য দুটি সীমান্ত ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। দুটি মহিলা ব্যাটালিয়ন গঠনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে।

বন্ধুগণ, 

আমাদের আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে নতুন পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। কাঠুয়া থেকে জম্মু মহাসড়ককে ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে করা হচ্ছে, আখনুর থেকে পুঞ্চ মহাসড়কটিও প্রশস্ত করা হচ্ছে। ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ প্রোগ্রামের আওতায় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতেও উন্নয়নের কাজ ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরের ৪০০টি গ্রাম যেখানে সর্ব-আবহাওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না, ১৮০০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরি করে সেগুলির সঙ্গে সংযুক্ত করা হচ্ছে। সরকার এতেও ৪২০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে চলেছে।

বন্ধুগণ, 

আজ আমি জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ, বিশেষ করে এখানকার যুবসমাজ, এবং জম্মু ও কাশ্মীরের মাটি থেকে, আমি দেশের কাছেও একটি বিশেষ অনুরোধ করতে চাই। আপনারা দেখেছেন কিভাবে অপারেশন সিন্দুর আত্মনির্ভর ভারতের শক্তি দেখিয়েছে। আজ বিশ্ব ভারতের প্রতিরক্ষা বাস্তুতন্ত্র নিয়ে আলোচনা করছে। এবং এর পিছনে কেবল একটি কারণ রয়েছে, আমাদের সেনাবাহিনীর 'মেক ইন ইন্ডিয়া'-তে বিশ্বাস। এখন সেনাবাহিনী যা করেছে প্রত্যেক ভারতীয়কে তা পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এই বছরের বাজেটে, আমরা মিশন ম্যানুফ্যাকচারিং ঘোষণা করেছি। এই মিশনের আওতায়, সরকার ম্যানুফ্যাকচারিংকে নতুন গতি দেওয়ার জন্য কাজ করছে। আমি জম্মু ও কাশ্মীরের যুবসমাজকে বলতে চাই, আসুন এবং এই মিশনের অংশ হোন। দেশের জন্য আপনার আধুনিক চিন্তাভাবনা প্রয়োজন, দেশের জন্য আপনার উদ্ভাবনী মেধা প্রয়োজন। আপনার ধারণা, আপনার দক্ষতা ভারতের সুরক্ষা এবং ভারতের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতা দেবে। গত দশ বছরে, ভারত একটি বৃহৎ প্রতিরক্ষা রপ্তানিকারক হয়ে উঠেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য হল বিশ্বের শীর্ষ প্রতিরক্ষা রপ্তানিকারকদের মধ্যে ভারতের নাম অন্তর্ভুক্ত করা। আমরা যত দ্রুত এই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাব; যত দ্রুত সম্ভব ভারতে লক্ষ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

বন্ধুগণ, 
আমাদের আরেকটি শপথ নিতে হবে যে, প্রথমে আমরা কেবল সেই পণ্যই কিনব যা ভারতে তৈরি এবং যাতে আমাদের দেশবাসীর ঘাম ব্যয় হয় এবং এটিই দেশপ্রেম, এটিই জাতির সেবা। সীমান্তে আমাদের সেনাবাহিনীর সম্মান বৃদ্ধি করতে হবে এবং বাজারে আমাদের মেড ইন ইন্ডিয়ার গর্ব বৃদ্ধি করতে হবে।

বন্ধুগণ,
জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য এক সোনালী ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করছে এবং একে অপরকে সমর্থন করছে। আমাদের শান্তি ও সমৃদ্ধির যে পথে এগিয়ে যাচ্ছি, সেই পথকে আমাদের ক্রমাগত শক্তিশালী করতে হবে। মা বৈষ্ণো দেবীর আশীর্বাদে, উন্নত ভারত এবং উন্নত জম্মু ও কাশ্মীরের এই সংকল্প পূর্ণ হোক। এই মনোকামনা নিয়ে, আমি আবারও আপনাদের সকলকে এই অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প এবং এত সুন্দর প্রকল্পের জন্য অভিনন্দন জানাই। আপনাদের দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখুন এবং আমার সঙ্গে  আপনার সমস্ত শক্তি দিয়ে বলুন –

ভারতমাতার জয়! আপনাদের এই কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হওয়া উচিত ভারতের প্রতিটি কোণে।

ভারতমাতার জয়! 

ভারতমাতার জয়! 

ভারতমাতার জয়! 

ভারতমাতার জয়! 

অনেক ধন্যবাদ!

 

SC/SB/DM


(Release ID: 2134950)