প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

বিহারের কারাকাটে ৪৮,২০০ কোটি টাকারও বেশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর

Posted On: 30 MAY 2025 1:11PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩০ মে, ২০২৫

 

বিহারের কারাকাটে আজ ৪৮,২০০ কোটি টাকারও বেশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, বিহারের পবিত্র ভূমিতে এইসব উন্নয়নমূলক প্রকল্প রাজ্যের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিপুল  জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী তাঁর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিহারের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা জানান। 

সাসারামের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভগবান রামের পরম্পরার সঙ্গে এই স্থান যুক্ত। তিনি বলেন, একবার কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূরণ করা দরকার। এই দর্শনই বর্তমানে নব ভারতের নীতি বলে তিনি জানান। পহলগাঁও-এ সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের কেবলমাত্র একদিন পরেই তিনি বিহারে এসে দেশের কাছে শপথ করেছিলেন, এই সন্ত্রাসের কুচক্রীদের ন্যায়বিচার হবেই। তাদের এমন শাস্তি দেওয়া হবে যা তাদের কল্পনাতীত। আজ তিনি বিহারে দাঁড়িয়ে পুনরায় বলেন, তিনি তাঁর শপথ রক্ষা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানে বসে যারা আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছেছে, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের ঘাঁটিগুলিকে সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ভারতের মেয়েদের কপালের সিঁদুরের কী শক্তি তা পাকিস্তান এবং সারা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় যেসব জঙ্গী একসময় নিজেদের নিরাপদ মনে করতো, ভারতীয় সেনাশক্তির একটি আঘাতেই তারা পদানত হয়ে পড়েছে। শ্রী মোদী বলেন, পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি এবং সামরিক ক্ষেত্রগুলিকে কয়েক মিনিটের মধ্যে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এটাই নতুন ভারত এবং পরাক্রমশালী নতুন ভারতের পরিচয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিহারের যুবাদের অনেকেই ভারতের সামরিক বাহিনী এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে কর্মরত। অপারেশন সিঁদুরে বিএসএফ যে অসাধারণ শৌর্য এবং সাহসিকতা প্রদর্শন করেছে সারা বিশ্ব তা দেখেছে। তিনি বলেন, ভারতীয় সীমান্তে মোতায়েন বিএসএফ জওয়ানরা দেশের সুরক্ষার এক অলঙ্ঘনীয় ঢাল হিসেবে কাজ করছেন। ১০ মে সীমান্তে প্রহরায় দায়িত্বনিষ্ঠ থেকে দেশের জন্য মৃত্যু বরণ করা বিএসএফ সাব ইন্সপেক্টর ইমতিয়াজের প্রতি তিনি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী পুনরায় বলেন, অপারেশন সিন্দুরে ভারতীয় শক্তির যে নমুনা প্রদর্শিত 
হয়েছে, তা কেবল ধনুক থেকে ছোঁড়া একটি তীর  মাত্র। 

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, দেশের প্রতিটি শত্রুর বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই, তা সীমান্তের ওপারেই হোক বা দেশের ভিতরেই হোক। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলিতে বিহার দেখেছে হিংসাশ্রয়ী এবং বিচ্ছিন্নতাকারী শক্তিগুলিকে কীভাবে নির্মূল করা হচ্ছে। তিনি সাসারাম, কৈমুর এবং সংলগ্ন জেলাগুলির উল্লেখ করে বলেন, অতীতে এইসব জেলাগুলিতে নকশালবাদের ভয়ভীতির বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেও তা নকশাল প্রভাবিত গ্রামগুলিতে পৌঁছতে পারতো না। সেখানে কোনো হাসপাতাল বা মোবাইল টাওয়ার ছিল না। বিদ্যালয়গুলিকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাস্তা নির্মাণের কাজে যুক্ত শ্রমিকদের হত্যা করা হত। তিনি বলেন, বাবাসাহেব আম্বেদকরের সংবিধানে এইসব সামাজিক বিচ্ছিন্নতাকামী শক্তির কোনো বিশ্বাস ছিল না। নীতিশ কুমারের নেতৃত্বে এই অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। জঙ্গলরাজ সরকার থেকে বিহারে এখন উন্নয়নের সরকার রাজ্যকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ভাঙাচোরা মহাসড়ক, বিপর্যস্ত রেল ব্যবস্থা, সীমিত উড়ান সংযোগ এখন অতীতের বিষয়। বিহারে এক সময় একটিমাত্র বিমান বন্দর  ছিল পাটনাতে। কিন্তু আজ দ্বারভাঙা বিমান বন্দর থেকে সরাসরি বিমান যোগে দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরুও যাওয়া যায়। পাটনা বিমান বন্দরের টার্মিনালের আধুনিকীকরণের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। এই টার্মিনাল তৈরি হওয়ায় এই বিমান বন্দর এখন ১ কোটি যাত্রী পরিবহনে সক্ষম। বিহারে বিহতা বিমান বন্দরে ১,৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

বিহার জুড়ে ৪ লেন ৬ লেনের সড়ক উন্নয়ন রাজ্যের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে দ্রুত সহায়ক হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাটনা থেকে বক্সা, গয়া থেকে ধোবি এবং পাটনা থেকে বুদ্ধগয়া মহা সড়কের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। পাটনা-আরা-সাসারামে গ্রিনফিল্ড করিডরের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। গঙ্গা, সোন, গণ্ডক, কোশি প্রভৃতি নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মাণ বিহারের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে বলে তিনি জানান। কোটি কোটি টাকার নানা প্রকল্পে বিনিয়োগ, তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান, পর্যটনের প্রসার এবং এলাকায় বাণিজ্যে সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিহারে রেল পরিকাঠামোর রূপান্তর ঘটেছে। বিশ্বমানের বন্দে ভারত ট্রেন চালু করা হয়েছে। ছাপড়া, মুজাফ্ফরপুর, কাটিহার প্রভৃতি জায়গায় রেল পথ সম্প্রসারণের কাজ এগিয়ে চলেছে। শ্রী মোদী বলেন, সাসারামে ১০০রও বেশি ট্রেন দাঁড়াবে যার মধ্যে দিয়ে এলাকার অগ্রগতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়। রেল নেটওয়ার্ককে আধুনিক করে তোলার ওপরও জোর দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিহারে এইসব উন্নয়নের কাজ অতীতেও করা যেত। তবে বিহারের রেল পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণের সঙ্গে যুক্তরা ব্যক্তিগত স্বার্থে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি করেছে। রাজ্যের মানুষকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। কোনোরকম প্রবঞ্চনা এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে বিহারের মানুষকে তিনি সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ ছাড়া উন্নয়ন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপরেই নির্ভর করে শিল্পের অগ্রগতি এবং জীবনযাত্রার সাচ্ছন্দ্য। তিনি বলেন, বিহারে বিদ্যুৎ ক্রয় বর্তমানে বিগত দশকের তুলনায় ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নবীনগরে ৩০,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এনটিপিসি-র নির্মীয়মান বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন পিএম কুসুম প্রকল্প থেকে কৃষকরা নানাভাবে উপকৃত। সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে তাঁরা উপার্জন করতে পারছেন। তাঁদের কৃষি উৎপাদনের কাজেও তা লাগছে বলে তিনি জানান। আধুনিক পরিকাঠামো গ্রামে নানা সুবিধা নিয়ে আসে। গ্রামের গরিবরা, কৃষকরা, ছোট ব্যবসায়ীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। তিনি বলেন, ৩ কোটি মহিলার লাখপতি দিদি উদ্যোগের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন ঘটেছে। ৪ কোটি নতুন আবাসন প্রদান করা হয়েছে। ১২ কোটিরও বেশি গৃহে পাইপ বাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ৭০ বছরের বেশি প্রবীণ নাগরিকরা ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিখরচায় যাতে চিকিৎসা পান তার সংস্থান করা হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো গ্রাম বা পরিবার যাতে পিছিয়ে না থাকে তা সুনিশ্চিত করাই সরকারের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য নিয়ে বিহার ডঃ ভীমরাও আম্বেদকর সমগ্র সেবা অভিযান শুরু করেছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, সরকার  সুবিধাপ্রাপকদের কাছে সরাসরি পৌঁছলে দুর্নীতি এবং বৈষম্যকে দূর করা যায়। বাবা সাহেব আম্বেদকর, কর্পুরী ঠাকুর, বাবু জগজীবন রাম এবং জয়প্রকাশ নারায়ণের আদর্শ পথে বিহারের রূপান্তরের ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিহারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত উন্নত ভারত গড়ে তুলতে রাজ্যের অবদানকে সুনিশ্চিত করা। তিনি বলেন, বিহারের যখনই উন্নতি হয়েছে, ভারত উন্নয়নের নতুন শিখর স্পর্শ করেছে। উপস্থিত জনসাধারণকে উন্নয়নমূলক উদ্যোগের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শেষে পুনরায় আস্থার সঙ্গে বলেন, একত্রে উন্নয়নের পথকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। 

বিহারের রাজ্যপাল শ্রী আরিফ মহম্মদ খান, মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে শ্রী জিতন রাম মাঝি,  শ্রী গিরিরাজ সিং, শ্রী রাজীব রঞ্জন সিং, শ্রী চিরাগ পাসওয়ান, শ্রী নিত্যানন্দ রাই, শ্রী সতীশচন্দ্র দুবে, ডঃ রাজ ভূষণ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

 


SC/AB /NS….  


(Release ID: 2132785)