প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী রাজস্থানের বিকানের-এ ২৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছেন

Posted On: 22 MAY 2025 1:48PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২২ মে, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ রাজস্থানের বিকানের-এ ২৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন। এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানে ১৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বহু মানুষ অনলাইনে অংশগ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-রাজ্যপাল ছাড়াও জনপ্রতিনিধিরা এখানে উপস্থিত রয়েছেন। শ্রী মোদী দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিশিষ্টজনদের এবং নাগরিকদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করণি মাতার থেকে আশীর্বাদ গ্রহণের পর তিনি এই অনুষ্ঠানে এসেছেন। এই আশীর্বাদ উন্নত ভারত গড়তে দেশের সঙ্কল্পকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। আজ ২৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের যে প্রকল্পগুলির উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হয়েছে, সেগুলি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই সংস্কারমূলক উদ্যোগগুলির জন্য তিনি নাগরিকদের অভিনন্দন জানান।

ভারতে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের সংস্কারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ আধুনিকীকরণের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। বিগত ১১ বছর ধরে সড়ক, বিমানবন্দর, রেলপথ এবং রেল স্টেশনগুলির দ্রুতহারে সংস্কার চলছে। “পূর্ববর্তী বছরগুলির তুলনায় ভারত এখন পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে ছ’গুণ বেশি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে, এই বিষয়টি সারা বিশ্বের নজরে এসেছে।” এই প্রসঙ্গে তিনি দেশের কিছু উল্লেখযোগ্য পরিকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরে চেনাব সেতু, পূর্বে অরুণাচল প্রদেশে সেলা সুড়ঙ্গ, আসামে বোগিবিল সেতু এবং পশ্চিমে মুম্বইয়ে অটল সেতু আর দক্ষিণে পাম্বান ব্রিজ।

রেল পরিষেবার ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের যে নিরবচ্ছিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেই বিষয়টি উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, দেশে এখন বন্দে ভারত, অমৃত ভারত এবং নমো ভারতের মতো ট্রেন চলছে। এগুলি আসলে ভারতের দ্রুততম উন্নয়নের প্রতীক। বর্তমানে প্রায় ৭০টি রুটে বন্দে ভারত ট্রেন চলাচল করছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আধুনিক রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা পৌঁছেছে। গত এক বছরে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বহু জায়গায় ওভারব্রিজ এবং আন্ডারব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। ৩৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি রেলপথ বসানো হয়েছে। ব্রডগেজ লাইনে প্রহরীবিহীন লেভেল ক্রসিং তুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর গড়ে তোলা হয়েছে। ভারতে প্রথম বুলেট ট্রেন প্রকল্পের কাজও চলছে। এগুলি ছাড়াও, দেশে ১,৩০০-র বেশি রেল স্টেশনে আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। এর ফলে, যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অমৃত ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিক রেল স্টেশনগুলি গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ১০০-র বেশি রেল স্টেশনের পুনর্গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে এই স্টেশনগুলির সংস্কারের বিভিন্ন ছবি তুলে ধরা হচ্ছে। স্টেশনগুলি নবরূপে সজ্জিত করার সময় স্থানীয় চিত্রকলা এবং ইতিহাসকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজস্থানের মণ্ডলগড় স্টেশনে রাজপুত ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটেছে। বিহারে থাওয়ে স্টেশনে মা থাওয়েওলির উপস্থিতি যাতে অনুভূত হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় স্থাপত্য গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও এখানে মধুবনী শিল্পকলা ব্যবহৃত হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ওরছা রেল স্টেশনে ভগবান রাম-এর আধ্যাত্মিক উপস্থিতি যাত্রীরা উপলব্ধি করতে পারবেন। শ্রীরঙ্গম রেল স্টেশনটি শ্রী রঙ্গনাথ স্বামী মন্দিরের আদলে তৈরি করা হয়েছে। গুজরাটের ডাকোর স্টেশনে রনচ্ছোড়রাইজিকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে। তিরুভান্নামালাই স্টেশনে দ্রাবিড় স্থাপত্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কাকাতিয়া যুগের অনুকরণে স্থাপত্যশৈলী ব্যবহৃত হয়েছে বেগমপেট স্টেশনে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অমৃত ভারত স্টেশনগুলি শুধুমাত্র দেশের হাজার হাজার বছরের সংস্কৃতিকেই সংরক্ষণ করছে না, পাশাপাশি রাজ্যগুলির পর্যটন শিল্পের প্রসারেও অনুঘটকের কাজ করবে। এছাড়াও, এখান থেকে যুব সম্প্রদায়ের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে উঠবে। এই স্টেশনগুলি যাতে পরিচ্ছন্ন থাকে এবং এখানে সুরক্ষা সংক্রান্ত সব নিয়মাবলী যাতে মেনে চলা হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে তিনি জনসাধারণের উদ্দেশে আহ্বান জানান।  

পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন তৈরি হয়, পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইসব প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর সুফল প্রত্যক্ষভাবে শ্রমিক, দোকানদার, কারখানার শ্রমিক এবং পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা পাচ্ছেন। পরিকাঠামোমূলক এই প্রকল্পগুলির কাজ শেষ হলে তার সুফল বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য কম খরচে বাজারে নিয়ে যেতে পারবেন। উন্নত সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা নতুন নতুন শিল্প সংস্থাকে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি, পর্যটন শিল্পেরও প্রসার ঘটায়। এক কথায়, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে তার সুফল প্রতিটি পরিবারের কাছে পৌঁছয়, যুব সম্প্রদায় এর থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়।

শ্রী মোদী বলেন, পরিকাঠামো সংক্রান্ত এই প্রকল্পগুলি থেকে রাজস্থান যথেষ্ট লাভবান হবে। গ্রামাঞ্চলে এবং সীমান্ত অঞ্চলে উন্নতমানের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। গত ১১ বছরে এই রাজ্যে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা সড়ক পরিকাঠামো খাতে ব্যয় করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের রেলপথগুলির জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এই অর্থ ২০২৪ সালের আগে পরিকাঠামো নির্মাণে যে অর্থ ব্যয় করা হত, তার ১৫ গুণ। বিকানের-এর সঙ্গে মুম্বইয়ের নতুন রেল পরিষেবা সূচনা করার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এছাড়াও, স্বাস্থ্য, জল সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হয়েছে আজকের অনুষ্ঠানে। ফলস্বরূপ, রাজস্থানের শহর ও গ্রামাঞ্চলে উন্নয়নে গতি আসছে। এর মধ্য দিয়ে যুব সম্প্রদায় তাদের নিজেদের শহরেই কাজের সুযোগ পাবেন। 

রাজস্থানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শিল্পায়নে গতি এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভজনলাল শর্মার নেতৃত্বে প্রশাসন বিভিন্ন শিল্পের জন্য নতুন নীতি ঘোষণা করেছে। এর ফলে, শুধু বিকানের-এরই লাভ হবে না, পাশাপাশি অন্যান্য জায়গাও এর সুফল পাবে। বিকানের-এর ভুজিয়া এবং রসগোল্লা আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেলে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প শক্তিশালী হবে। এই রাজ্যের শোধনাগার প্রকল্পের কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। ফলে, এখানে পেট্রোলিয়াম-ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। অমৃতসর থেকে জামনগর পর্যন্ত ছয় লেনের অর্থনৈতিক করিডরের তাৎপর্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রীগঙ্গানগর, হনুমানগড়, বিকানের, যোধপুর, বারমেঢ় এবং জালোর-এর মধ্য দিয়ে এই রাস্তা গেছে। এছাড়াও, দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ের রাজস্থান অংশের কাজ প্রায় শেষের দিকে। যোগাযোগ রক্ষার জন্য এই প্রকল্পগুলির কাজ শেষ হলে রাজ্যে শিল্পায়ন নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছবে।

শ্রী মোদী রাজস্থানে পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনার দ্রুত বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই প্রকল্পগুলি থেকে ইতিমধ্যেই রাজ্যের ৪০ হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছেন। তাঁদের বিদ্যুতের বিল কমে গেছে। তাঁরা সৌরশক্তি উৎপাদনের মধ্য দিয়ে বাড়তি রোজগার করতে পারছেন। যেসব বিদ্যুৎ-ভিত্তিক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হয়েছে সেগুলি রাজস্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে। এই রাজ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করার ফলে শিল্পোন্নয়ন ঘটবে।

রাজস্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মহারাজা গঙ্গা সিং-এর দূরদর্শীতার প্রসঙ্গটি আলোচনা করেন। মহারাজ মরুভূমিকে ঊর্বর অঞ্চলে কিভাবে পরিণত করেছেন, সেই বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন। এই অঞ্চলে জলের গুরুত্বের কথা তাঁর ভাষণে স্থান পেয়েছে। বিকানের, শ্রীগঙ্গানগর, হনুমানগড় সহ পশ্চিম রাজস্থানে জলের কারণে উন্নয়ন দ্রুত হচ্ছে। সরকার এই অঞ্চলে সেচ প্রকল্পগুলির কাজ দ্রুত শেষ করতে উদ্যোগী হয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন নদীর মধ্যে সংযোগ ঘটানো হচ্ছে। পার্বতী-কালিসিন্ধ-চম্বল লিঙ্ক প্রকল্পের ফলে রাজস্থানের বহু জেলা উপকৃত হবে। এই অঞ্চলের কৃষকদের কৃষিকাজেও সুবিধা হবে।

রাজ্যের মানুষের অদম্য মনোভাবের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ এবং জনসাধারণের কথাই সবার প্রথমে বিবেচনা করতে হবে। ২২ এপ্রিল জঙ্গি হানার নিন্দা করে তিনি বলেন, ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পহেলগাঁও-এ যে বুলেট ছোড়া হয়েছে তা ১৪০ কোটি ভারতবাসীর হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। এর ফলে গোটা দেশ ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছে। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর নির্ণায়ক ভূমিকার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিন বাহিনীর একত্রিত আক্রমণে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা ধ্বসে পড়ে। ২২ এপ্রিলে জঙ্গি হামলার জবাব ভারত মাত্র ২২ মিনিটে দিয়েছে। জঙ্গিদের ন’টি ঘাঁটিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। “এর মধ্য দিয়ে দেশের শক্তি প্রদর্শিত হয়েছে। পবিত্র সিঁদুর অস্ত্রশক্তিকে শক্তিশালী করেছে, যার ফল নিশ্চিতভাবে অনুভূত হয়েছে।” এই প্রসঙ্গে তিনি পাঁচ বছর আগে বালাকোটে বিমানবাহিনীর অভিযানের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেন। সেই ঘটনার পরও রাজস্থানেই তিনি প্রথম জনসমাবেশ করেছিলেন। আর একইভাবে অপারেশ সিন্দুরের পরেও তিনি রাজস্থানে আবারও জনসমাবেশ করছেন যা এই অঞ্চলের শৌর্য ও দেশাত্মবোধকে তুলে ধরে। 

প্রধানমন্ত্রী চুরুতে তাঁর ভাষণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “এই মাটিতে শপথ নিয়ে আমি বলছি, দেশকে কখনও সমস্যায় পড়তে দেব না, দেশ কখনও মাথা নত করবে না।” যারা পবিত্র সিঁদুরকে মুছে দিয়েছে, যাদের জন্য ভারতের রক্তক্ষরণ হয়েছে, তাদের এর মূল্য চোকাতে হবে। যারা ভেবেছিল ভারত চুপচাপ থাকবে, তারা এখন আত্মগোপন করে রয়েছে, যারা তাদের অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনিয়েছিল, তারা এখন ধ্বংসস্তুপের নিচে শুয়ে আছে। অপারেশন সিন্দুর-এর মাধ্যমে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হয়নি, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটি কোনো ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়, ভারতের শক্তি এবং একনিষ্ঠ মানসিকতার প্রতীক। দেশ এখন দৃঢ় একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। শত্রুর ওপর সরাসরি আঘাত হানা হবে। “সন্ত্রাসবাদকে ধ্বংস করা এখন কোনো কৌশল নয়, এটি একটি নীতি যা ভারত গ্রহণ করেছে। এটিই নতুন ভারত।”

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অপারেশন সিন্দুর-এর মাধ্যমে তিনটি নীতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। প্রথম নীতি হল, কোনো জঙ্গি গোষ্ঠী ভারতে হামলা চালালে সে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে যথাযথ জবাব পাবে। দ্বিতীয়ত, ভারতকে পারমাণবিক হানার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। তৃতীয়ত, সন্ত্রাসবাদী এবং যেসব সরকার সেই সন্ত্রাসবাদীদের সহায়তা করে, ভারত তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করবে না। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে পাকিস্তানের আঁতাতের বিষয়টিকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে হবে। তাই, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সাতটি দল পাকিস্তানের প্রকৃত চরিত্র তুলে ধরতে বিশ্বের দরবারে উপস্থিত হয়েছে।

শ্রী মোদী বলেন, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সম্মুখ সমরে কখনই জয়ী হতে পারবে না। এই প্রসঙ্গে তিনি অতীতের সংঘাতের কথা উল্লেখ করেন। পাকিস্তান কোনো যুদ্ধে সাফল্য অর্জন করতে পারেনি, দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে মদত দিয়ে আসছে। হিংসা এবং ভয়ের এক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। পাকিস্তান ভারতের সঙ্কল্পের শক্তিকে খাটো করে দেখেছিল। তাঁর নেতৃত্বে দেশ এক শক্তিশালী নীতি গ্রহণ করেছে। “ভারতের ওপর যে কোন জঙ্গি হামলার ফল হবে মারাত্মক, পাকিস্তানকে সামরিক এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এর মূল্য চোকাতে হবে।” 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিকানেরে আসার সময় তিনি নাল বিমানবন্দরে নামেন। এই বিমানবন্দরটিতে পাকিস্তান হামলা চালায়। কিন্তু, বিমানবন্দরের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে পাকিস্তানের রহিম ইয়ার খান বিমানঘাঁটিটি দীর্ঘদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। ভারতের সামরিক বাহিনীর আক্রমণই এর মূল কারণ। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য বা আলাপ-আলোচনা হবে না। পাকিস্তানের সঙ্গে এখন যে কোন আলোচনার মূল বিষয়বস্তু থাকবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর। পাকিস্তান যদি জঙ্গি রপ্তানি করে তাহলে তার অর্থনীতি গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। পাকিস্তানকে ভারতের রক্তপাতের কড়া মূল্য দিতে হবে, পাকিস্তান এখন আর জল পাবে না। “বিশ্বের কোনো শক্তি ভারতকে এই অঙ্গীকার থেকে সরাতে পারবে না।”

শ্রী মোদী বলেন, উন্নত ভারত গড়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি দুটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ। দেশের প্রতিটি অংশ যখন শক্তিশালী হবে, তখনই এই লক্ষ্য পূরণ করা যাবে। ভারতের সুষম ও দ্রুত উন্নয়ন আদর্শ হয়ে থাকবে। পরিশেষে, প্রধানমন্ত্রী শৌর্যের এই ভূমিতে উপস্থিত সকলকে আবারও অভিনন্দন জানান।

অনুষ্ঠানে রাজস্থানের রাজ্যপাল শ্রী হরিভাও কিষাণরাও বাগাড়ে, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভজনলাল শর্মা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও শ্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল সহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রেক্ষাপটঃ-
দেশের রেল পরিকাঠামোর ক্রমোন্নয়নের যে সংকল্প প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন, তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে শ্রী মোদী আজ দেশের ১৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৮৬টি জেলায় ১০৩টি নবসাজে সজ্জিত অমৃত স্টেশনের উদ্বোধন করেন। এগুলির জন্য ১,১০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়েছে। অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পের আওতায় ১,৩০০-র বেশি স্টেশনের আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। স্টেশনগুলিতে আঞ্চলিক স্থাপত্যের ছাপ যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি জোর দেওয়া হয়েছে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির ওপর। করণি মাতার মন্দির দেখতে বহু তীর্থযাত্রী ও পর্যটক দেশনোক রেল স্টেশনে আসেন। স্টেশনটিকে মন্দিরের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে। তেলেঙ্গানার বেগমপেট রেল স্টেশন গড়ে উঠেছে কাকাতীয় স্থাপত্যের অনুকরণে। বিহারের থাওয়ে স্টেশনে ৫২টি শক্তিপীঠের অন্যতম মা থাওয়েওয়ালির ম্যুরাল ও মধুবনী চিত্রকলার নিদর্শন রয়েছে। গুজরাটের ডাকোর স্টেশন গড়ে উঠেছে রাঞ্চোর রাইজি মহারাজের আদর্শে। দেশ জুড়ে নতুন করে গড়ে তোলা এই অমৃত স্টেশনগুলিতে আধুনিক পরিকাঠামোর সঙ্গে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের মেলবন্ধন ঘটেছে। দিব্যাঙ্গদের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে স্টেশনগুলিতে। যাত্রীদের ভ্রমণকে আরও আনন্দের করে তুলতে যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

রেল যাত্রাকে আরও মসৃণ ও পরিবেশবান্ধব করে তোলার লক্ষ্যে ভারতীয় রেল ১০০ শতাংশ বৈদ্যুতিকীকরণের দিকে এগোচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী চুরু-সাদুইপুর রেললাইনের (৫৮ কিলোমিটার) শিলান্যাস করেন। জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন সুরতগড়-ফালোদি (৩৩৬ কিলোমিটার), ফুলেরা-দেগানা (১০৯ কিলোমিটার), উদয়পুর-হিম্মতনগর (২১০কিলোমিটার), ফালোদি-জয়সলমীর (১৫৭ কিলোমিটার) এবং সামদারি-বারমের (১২৯ কিলোমিটার) রেলপথের বৈদ্যুতিকীকরণ। 
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় মহাসড়ক চওড়া করার কাজ এবং আন্ডারপাসের শিলান্যাস করেন। ৭টি সড়ক প্রকল্পের সূচনা করেন তিনি। ৪,৮৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্পগুলির জেরে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ আরও সহজ হবে। এই মহাসড়কগুলি ভারত-পাক সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো আরও মজবুত হবে। 

সবার কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া এবং দূষণমুক্ত বিদ্যুতের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বিকানীর ও নাওয়ায় সৌর প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। তিনি পাওয়ার গ্রিড সিরোহি ট্রান্সমিশন লিমিটেড ও পাওয়ার গ্রিড মেওয়ার ট্রান্সমিশন লিমিটেডের বিদ্যুৎ পরিবহন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। বিকানেরে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি।  

প্রধানমন্ত্রী রাজ্য সরকারের ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পেরও শিলান্যাস ও সূচনা করেছেন। এগুলি রাজ্য জুড়ে পরিকাঠামো, সংযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও জল সরবরাহের উন্নতি করবে। ৩,২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ১২টি রাজ্য সড়কের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের সূচনা করবেন তিনি। বিকানীর ও উদয়পুরে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং রাজসমন্দ, প্রতাপগড়, ভিলওয়াড়া ও ঢোলপুরে নার্সিং কলেজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ঝুনঝুনু জেলায় গ্রামীণ জল সরবরাহ প্রকল্প ও ফ্লুরোসিস মোকাবিলা প্রকল্পের সূচনা করেছেন তিনি। পালি জেলার ৭টি শহরে অমৃত ২.০-র আওতায় নগর জল সরবরাহ প্রকল্পের আধুনিকীকরণের সূচনাও করেন শ্রী মোদী।   

 

SC/CB/DM


(Release ID: 2130559)