নতুন দিল্লি, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

প্রথম বিশ্ব দৃশ্যশ্রাব্য বিনোদন সম্মেলন – ওয়েভস-এর আগে আজ একগুচ্ছ উদ্যোগের ঘোষণা করলো তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। নতুন দিল্লির জাতীয় মিডিয়া সেন্টারে তথ্য ও সম্প্রচার, রেল এবং বৈদ্যুতিন ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী শ্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত এই সব উদ্যোগের কথা জানান। 

তথ্য ও সম্প্রচার সচিব শ্রী সঞ্জয় জাজু, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সচিব শ্রী অরুণিশ চাওলা, চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্রী শেখর কাপুর, প্রসার ভারতীর সিইও শ্রী গৌরব দ্বিবেদী প্রমুখ মিডিয়া সেন্টারে উপস্থিত ছিলেন। 

ভারতকে সৃজনশীল অর্থনীতির বিশ্ব রাজধানীতে পরিণত করা –

দাভোস ইকোনমিক ফোরামের ধাঁচে বিশ্ব দৃশ্যশ্রাব্য বিনোদন সম্মেলনকে আন্তর্জাতিক মানের করে তোলার যে ভাবনা প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে, তার প্রতিধ্বনি করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, এটি ভারতের সৃজনশীল অর্থনীতিকে তুলে ধরার বৃহত্তর কৌশলের একটি অঙ্গ। ভারতে গল্প বলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে। বিশ্বজুড়ে একেই ‘অরেঞ্জ ইকোনমি’-র উপাদান বলে মনে করা হয়।

শ্রী বৈষ্ণব বলেন, আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, যা একদা স্বামী বিবেকানন্দের কন্ঠে শিকাগোর বিশ্ব মেলার হলগুলিতে অনুরণিত হয়েছিল, আমাদের প্রধানমন্ত্রী যোগ, সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা ও আয়ুর্বেদের মাধ্যমে সেই ধারাকেই বহন করছেন। ওয়েভস এই প্রয়াসেরই একটি অঙ্গ। এর লক্ষ্য হল, ভারতকে সৃজনশীল অর্থনীতির বিশ্ব রাজধানী করে তোলা। 

দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ওয়েভস বাজার, তিনটি ক্রিয়েট ইন ইন্ডিয়া চ্যালেঞ্জ, ওয়েভস পুরস্কার এবং আরও একটি চ্যালেঞ্জের ঘোষণা করেন। 

ওয়েভস বাজার : সৃজনশীল অর্থনীতির সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার –

অনুষ্ঠানে ওয়েভস বাজারের সূচনা করা হয়। এটি একটি বিশ্বজনীন ই-মার্কেটপ্লেস, এর লক্ষ্য ভারতের বিপুল সৃজনশীল প্রতিভার সঙ্গে বিশ্ববাজারের সংযোগসাধন। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাঁদের বিষয়বস্তু ও প্রকল্প তুলে ধরে ভৌগোলিক গন্ডি অগ্রাহ্য করে বিশ্বের সঙ্গে সংযোগসাধন করতে পারবেন। এখানে প্রয়োজনমাফিক সম্পদ ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে বিশ্বজনীন ব্যবসায়িক আদান-প্রদানকে সহজ করা হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের পরিধি বাড়িয়ে বিকাশ ও সাফল্যের নতুন সুযোগ আবিষ্কার করার সুবিধা পাবে।

তথ্য ও সম্প্রচার সচিব বলেন, ওয়েভস বাজারে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, সঙ্গীত, ক্রীড়া, অ্যানিমেশন, ভিজুয়াল এফেক্টস, গেমিং, কমিকস সহ বিনোদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সৃজনকারী, ক্রেতা ও সহযোগী সংস্থাগুলি একত্রিত হতে পারবে। এটি ভৌগোলিক দূরত্ব দূর করে সৃজনকারীদের নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরতে সাহায্য করবে। 

ওয়েভস বাজারে ব্র্যান্ড সংক্রান্ত সহযোগিতা, অর্থের যোগান এবং সরবরাহের ক্ষেত্রেও সাহায্য করা হবে। এর ফলে সৃজনকারীরা তাঁদের ধারণার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারবেন। 

ওয়েভস পুরস্কার –

ওয়েভস পুরস্কারের জন্য মনোনয়নপত্র পেশের সময়সীমা চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে। এতে বছরের সেরা গেম, সেরা চলচ্চিত্র, সেরা বিজ্ঞাপনী প্রচার প্রভৃতি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়া বিশেষ পুরস্কার, জীবনকৃতি সম্মান, প্রযুক্তি ও সামাজিক প্রভাবের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান প্রভৃতি পুরস্কারেরও ব্যবস্থা রয়েছে। 

তিনটি নতুন ক্রিয়েট ইন ইন্ডিয়া চ্যালেঞ্জ -

১. ওয়াহ উস্তাদ :
কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক ও দূরদর্শনের সহযোগিতায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের ভাবনায় এই চ্যালেঞ্জের আওতায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিমপ্রাপ্ত তরুণ কন্ঠশিল্পীরা তাঁদের প্রতিভা প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যে কেউ এতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। দুটি পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। গ্র্যান্ড ফিন্যালে হবে ওয়েভস ২০২৫-এ। এর জন্য নথিভুক্তিকরণ আজ থেকে শুরু হচ্ছে। প্রসার ভারতীর ওয়েবসাইটে প্রতিযোগীরা নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। (https://prasarbharati.gov.in/wah-ustad/)

২. বিশ্বকে খাদি পরানোর চ্যালেঞ্জ :
এই চ্যালেঞ্জের আওতায় খাদিকে একটি বিশ্বজনীন ব্র্যান্ডে পরিণত করার লক্ষ্যে উদ্ভাবনী প্রচারাভিযান চালাতে বিজ্ঞাপন ক্ষেত্রের পেশাদার ও ফ্রিল্যান্সারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারতের মধ্যে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে খাদির প্রসার ঘটানো এর লক্ষ্য। অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন আঙ্গিকে (ডিজিটাল, প্রিন্ট, ভিডিও প্রভৃতি) প্রচারের উদ্ভাবনী ধারণা পেশ করতে হবে। এই চ্যালেঞ্জে সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনা এবং কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গীকে উৎসাহ দেওয়া হবে। 

৩. অনুরণন : ইলেক্ট্রনিক ডান্স মিউজিক চ্যালেঞ্জ : 
ইন্ডিয়ান মিউজিক অ্যাসোসিয়েশনের এই চ্যালেঞ্জের আওতায় সারা বিশ্বের শিল্পী, সুরস্রষ্টা, যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের তাঁদের প্রতিভা প্রদর্শনের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। 

ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পর্যটনের প্রসারে নতুন চ্যালেঞ্জ – 

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক আরও একটি নতুন চ্যালেঞ্জের ঘোষণা করেছে। যে সব চলচ্চিত্র ভারতের সমৃদ্ধ পর্যটন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরছে, সেগুলিকে এর আওতায় উৎসাহ দেওয়া হবে। 

ওয়েভস : ভারতের সাংস্কৃতিক দক্ষতার বিশ্বব্যাপী প্রদর্শন -

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী শ্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত ভারতকে কথক, সঙ্গীতকার, বিষয়বস্তু রচয়িতা এবং ধর্মীয় বৈচিত্র্যের এক সঙ্গমস্থল হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কেবল আমাদের গৌরবজনক অতীতের নিদর্শনই নয়, বিশ্ব মঞ্চে আমাদের ভবিষ্যতের মেরুদন্ডও বটে। সমৃদ্ধ এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরতেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক ওয়েভসের মতো গতিশীল প্ল্যাটফর্মের সূচনা করেছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে এই সাংস্কৃতিক দক্ষতাই আমাদের সব থেকে বড় সম্পদ। এই উদ্যোগের জন্য তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

ক্রিয়েট ইন ইন্ডিয়া চ্যালেঞ্জ – 

ক্রিয়েট ইন ইন্ডিয়া চ্যালেঞ্জে সারা বিশ্ব থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে। এপর্যন্ত ৭০ হাজারেরও বেশি পেশাদার ও উঠতি সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব এই চ্যালেঞ্জে তাঁদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। সংখ্যাটা ক্রমশই বাড়ছে। এপর্যন্ত ৩১টি ক্রিয়েট ইন ইন্ডিয়া চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টিতে এখনও নাম নথিভুক্তি করার সময় রয়েছে। ২২টিতে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারেন। 

ভারত : গল্পকথনের দেশ –

বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখর কাপুর বলেন, ভারত সাংস্কৃতিক ও ডিজিটাল বিষয়বস্তু নির্মাণের এক শক্তি কেন্দ্র। চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে গেমিং সর্বত্রই এর বিস্তার। সে জন্যই এই দক্ষতাকে আমরা আমাদের ‘সফট পাওয়ার’ বলি। সুবিস্তৃত এই সৃজনশীল শক্তি আসন্ন ওয়েভস সম্মেলনে আত্মপ্রকাশের মঞ্চ খুঁজে পাবে এবং এটি বিশ্বের সৃজনশীল অর্থনীতিতে ভারতের নেতৃত্ব প্রদর্শনের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে বলে শ্রী কাপুর আশা প্রকাশ করেন। 

এ সুযোগ হারানো চলবে না -

এই প্রথম এমন এক সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে, যেখানে অডিও, ভিডিও এবং বিনোদন এক মঞ্চে এসে দাঁড়াচ্ছে। সারা বিশ্বের সৃজনশীল মানুষের কাছে নিজেদের প্রতিভা প্রদর্শনের এ এক অনন্য সুযোগ। এই সুযোগ কোন ভাবেই হারানো চলবে না বলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব মন্তব্য করেন। 

SC/SD/AS