প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

নতুন দিল্লিতে ইকোনোমিক ওয়ার্ল্ড লিডার্স ফোরামে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ

Posted On: 31 AUG 2024 10:13PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ৩১ অগাস্ট ২০২৪

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লিতে ইকোনোমিক ওয়ার্ল্ড লিডার্স ফোরামে ভাষণ দেন। তাঁর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে এই ফোরামে আলোচিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর আস্থা ব্যক্ত করেন এবং বলেন যে, এমন একটা সময়ে এই আলোচনা হচ্ছে, যখন গোটা বিশ্ব ভারতের ওপর আস্থা জ্ঞাপন করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত আজ সাফল্যের এক নতুন কাহিনী লিখছে এবং আর্থিক ক্ষেত্রে সাফল্যের মধ্যে দিয়ে ওই সংস্কারের প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে ভারতে আর্থিক বিকাশ ঘটেছে ৯০ শতাংশ, আর গোটা বিশ্বে এই বিকাশের হার ৩৫ শতাংশ। 

বিগত বছরগুলিতে সরকারের কাজের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি প্রয়াস কোটি কোটি নাগরিকের জীবনযাত্রাকে ছুঁয়ে গিয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, "সংস্কার, সম্পাদন এবং রূপান্তর আমাদের মন্ত্র হয়ে উঠেছে।" তিনি বলেন, গত ১০ বছরে দেশের সাফল্য দেখতে পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সেই কারণে মানুষের মনে এক নতুন বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছেন। অন্যদিকে, ৬০ বছরের মধ্যে এই প্রথম ভারতীয় ভোটাররা একটি সরকারকে হ্যাট্রিক করার সুযোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের উচ্চাকাঙ্খী তরুণ এবং মহিলারা রাজনৈতিক স্থায়িত্ব এবং আর্থিক অগ্রগতির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

শ্রী মোদী বলেন, "ভারতের বিকাশ এখন আন্তর্জাতিক শিরোনাম হয়ে উঠেছে"। তিনি বলেন, "গত এক দশকে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্রসীমার উপরে তুলে আনা হয়েছে এবং এক নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছে।" যে গতিতে এবং যে মাত্রায় এটি হয়েছে, তা এক কথায় ঐতিহাসিক এবং বিশ্বের কোন গণতান্ত্রিক সমাজে আগে কখনও এই ঘটনা ঘটেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে, গরিবদের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তনের কারণেই। তিনি বলেন, নানা বাধা দূর করে গরিবদের ক্ষমতায়ন এবং সহায়তার পথ বেছে নিয়েছিল সরকার। এর ফলে, গরিবদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে। শ্রী মোদী বলেন, গ্যারান্টি মুক্ত ঋণের ফলে বহু গরিব আজ শিল্পোদ্যোগী হয়ে উঠছেন। যে সব মানুষ দারিদ্রসীমার ওপর উঠে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প রয়েছে। তিনি বলেন, তাঁদের সৃজনশীলতা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে নতুন পথ দেখাচ্ছে, তাঁদের দক্ষতা শিল্পের দিক নির্দেশ করছে। শ্রী মোদী বলেন, "ভারতের নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী দেশের বিকাশের বৃহত্তম শক্তি হয়ে উঠেছে।"

পরপর তিনবার তার সরকার ক্ষমতায় আসার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ নাগরিকদের মতোই সরকারের মধ্যে নতুন বিশ্বাস ও আশার সঞ্চার হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের ক্ষমতায় আসার এখনও ১০০ দিন পূর্ণ হয়নি। এর মধ্যেই আধুনিক পরিকাঠামো এবং সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত তিন মাসে গরিব, তরুণ, মহিলা এবং কৃষকদের জন্য সরকার বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে গরিবদের জন্য ৩ কোটি পাকা বাড়ি নির্মাণ, ইউনিফায়েড পেনশন প্রকল্প, কৃষি পরিকাঠামো সম্প্রসারণে ১ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল, ৪ কোটির বেশি তরুণকে প্রত্যক্ষ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ২ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের পিএম প্যাকেজ এবং গ্রামাঞ্চলে ১১ লক্ষ নতুন লাখপতি দিদির কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

তিন দিন আগে ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ১২টি নতুন শিল্পনগরীর বিকাশ, ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ৯টি উচ্চগতির করিডর নির্মাণ এবং ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পুণে, থানে এবং ব্যাঙ্গালোর মেট্রোর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন শ্রী মোদী। 

আজ তিনটি নতুন বন্দে ভারত ট্রেন চালুর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়নে এটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, "আমাদের কাছে পরিকাঠামোর অর্থ শুধুমাত্র দৈর্ঘ্য, প্রস্ত এবং উচ্চতা বৃদ্ধি নয়, আমাদের কাছে এর অর্থ হল, ভারতের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন।" এ প্রসঙ্গে বন্দে ভারত ট্রেনগুলির গতি ও স্বাচ্ছন্দ্যের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "দেশে আগেও সড়ক নির্মাণ হয়েছে, কিন্তু আমরা দেশজুড়ে আধুনিক মহাসড়কের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি।" তিনি বলেন, দেশের সব অঞ্চলের মানুষ যাতে আধুনিক পরিবহণের সুবিধা পেতে পারেন, সেজন্য টিয়ার-২, টিয়ার-৩ শহরগুলিকে বিমান পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী পিএম গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যানের কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, সরকারের প্রয়াসের ফলে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে এবং আমাদের অর্থনীতি ও শিল্পে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। 

শ্রী মোদী বলেন, যৌথ দায়িত্বের ফলে সরকারের কাজে গতি এসেছে এবং দেশের সমস্ত নাগরিকদের কাছে উন্নয়নের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গীকে সামনে রেখে সরকার যাবতীয় উদ্যোগ নিচ্ছে। তাঁর মতে, "সমৃদ্ধ 
ভারতই আন্তর্জাতিক সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করতে পারে।"

শ্রী মোদী বলেন, প্রত্যেক ভারতীয়ের আকাঙ্খা হল ভারতকে আন্তর্জাতিক উৎপাদনের হাব হিসেবে গড়ে তোলা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোটা বিশ্ব আজ ভারতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তিনি জানান, অতীতের তুলনায় এমএসএমই-গুলি এখন অনেক বেশি সরকারি সহায়তা পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি পিএলআই প্রকল্পের সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমাদের সমৃদ্ধির মূল ভিত্তি হল আমাদের জ্ঞান আহরণ ব্যবস্থা, যা উন্নত ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভও বটে। এবারের বাজেটে ১ লক্ষ কোটি টাকার গবেষণা তহবিলের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবারগুলি সন্তানদের বিদেশে পড়াশোনার জন্য প্রচুর অর্থ খরচ করে থাকে। এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে দেশবাসীকে সাহায্যের জন্য সরকার শীর্ষ বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্যাম্পাস ভারতে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে। শ্রী মোদী বলেন, গত এক দশকে প্রায় ১ লক্ষ নতুন এমবিবিএস-এমডি আসন সৃষ্টি করা হয়েছে। আগামী ৫ বছরে মেডিক্যালে ৭৫ হাজার নতুন আসন তৈরির কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে ভারত স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

শ্রী মোদী বলেন, জৈব ও প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদকে উৎসাহ দিতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। সেই সঙ্গে দুগ্ধজাত ও সামুদ্রিক খাদ্যের গুণগত মানোন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন তিনি। শ্রী মোদী বলেন, ভারত আজ বিশ্বের বৃহত্তম মিলেট উৎপাদনকারী দেশ। খাদ্য শিল্পে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত ৫ মিলিয়ন টন গ্রিন হাইড্রোজেন তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। সেই সঙ্গে একই সময়ের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার কথা জানান শ্রী মোদী। 

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন। ভারতের জি-২০ সভাপতিত্বকালে এব্যাপারে গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন শ্রী মোদী। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, "আমরা এমন এক বিশ্ব ব্যবস্থা চাই, যেখানে সকলের বিশেষত গ্লোবাল সাউথের উন্নয়ন সুনিশ্চিত হবে।"

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হল আগামীদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশকে প্রস্তুত করে তোলা। এপ্রসঙ্গে মহাকাশ প্রযুক্তির বিকাশে সরকারের এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

তাঁর ভাষণের সমাপ্তি পর্বে প্রধানমন্ত্রী ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন। এই যাত্রায় সামিল হওয়ার জন্য তিনি সমস্ত নাগরিক এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে আর্জি জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমরা চাই বিশ্বের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিক ভারত।" দেশ-বিদেশে বসবাসকারী প্রতিটি ভারতবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, "আসুন আমরা একসঙ্গে এই পথে হাঁটি, ভারতের সমৃদ্ধির মধ্যেই নিহিত রয়েছে গোটা বিশ্বের সমৃদ্ধি।"

 

PG/MP/AS



(Release ID: 2050718) Visitor Counter : 2