প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন দিল্লিতে ইকোনমিক টাইমস ওয়ার্ল্ড লিডার্স ফোরামে ভাষণ দেন “সংস্কার, সম্পাদন ও রূপান্তরই আমাদের মন্ত্র”
“গত এক দশকে ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং একটি নব্য-মধ্যবিত্ত
শ্রেণি তৈরি হয়েছে”
“ভারতকে বিশ্ব উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করা প্রত্যেক ভারতীয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা”
“পরিকাঠামো আমাদের নাগরিকদের জন্য সুবিধা এবং জীবনযাত্রার স্বাচ্ছন্দ্যের উন্নতির এক
মাধ্যম”
“একবিংশ শতাব্দীর এই তৃতীয় দশক ভারতের জন্য এক উত্থান-উত্থানের দশকের মতো”
Prime Minister Shri Narendra Modi addresses Economic Times World Leaders Forum in
New Delhi
Posted On:
31 AUG 2024 10:13PM by PIB Agartala
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লিতে ইকোনমিক টাইমস ওয়ার্ল্ড লিডার্স ফোরামে ভাষণ দেন।
অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আস্থা ব্যক্ত করে বলেন যে, দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ইকোনমিক টাইমস ওয়ার্ল্ড লিডার্স ফোরামে চমৎকার আলোচনা হয়ে থাকবে এবং এই আলোচনা এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন সমগ্র বিশ্ব ভারতের উপর আস্থা রেখে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত আজ এক নতুন সাফল্যের কাহিনী লিখে চলেছে এবং অর্থনীতিতে অর্জিত সাফল্যের মাধ্যমে সংস্কারের প্রভাব লক্ষ্য করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ভারত কখনও কখনও প্রত্যাশার চেয়েও ভালো করে দেখিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, গত ১০ বছরে ভারতের অর্থনীতি ৯০ শতাংশ প্ৰবৃদ্ধি পেয়েছে এবং যেখানে বিশ্ব অর্থনীতি দেখেছে ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি । এর জন্য তিনি কৃতিত্ব দেন প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সুস্থায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জনের উপর এবং সবাইকে আস্বস্ত করে বলেন যে ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
জনগণের জীবনযাপন উন্নততর করার জন্য বিগত বছরগুলিতে সরকার যে সামগ্রিক পরিবর্তন এনেছে, তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রচেষ্টা কোটি কোটি নাগরিকের জীবনকে প্রভাবিত করেছে। শ্রী মোদী বলেন, “জনগণের কাছে সুশাসন পৌঁছে দেওয়াই হলো সরকারের সংকল্প, এবং আমাদের মন্ত্র হলো সংস্কার, সম্পাদন এবং রূপান্তর"। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১০ বছরে দেশের মানুষ সরকারের সেবার মনোভাব দেখেছেন এবং দেশের সাফল্য প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই ভারতের মানুষ আজ নতুন এক বিশ্বাস নিয়ে ভরপুর । তাঁদের নিজেদের ওই বিশ্বাস এর উপর, দেশের অগ্রগতি, নীতি, সিদ্ধান্ত এবং সরকারের উদ্দেশ্যের উপর আস্থা রাখা উচিত। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, যেখানে বেশ কয়েকটি দেশের সরকারকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অন্যদিকে, তিনি বলেন, ৬০ বছরের মধ্যে এই প্রথম ভারতীয় ভোটাররা কোনও সরকারকে হ্যাট্রিক দিয়েছেন। ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবসমাজ এবং মহিলারা ধারাবাহিকতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ভোট দিয়েছেন বলে পুনরায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের অগ্রগতির কথা বিশ্বব্যাপী শিরোনামে পরিণত হচ্ছে। যদিও পরিসংখ্যানের নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে, বলে শ্রী মোদী মন্তব্য করেন যে, “কতজন মানুষের জীবন পরিবর্তিত হয়েছে তা দেখাও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক”। তিনি আরও বলেন যে, ভারতের ভবিষ্যতের রহস্য পরেরটির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, “গত এক দশকে ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং এক নব্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, এর গতি ও মাত্রা ঐতিহাসিক এবং বিশ্বের কোনও গণতান্ত্রিক সমাজে এর আগে কখনও তা ঘটেনি। শ্রী মোদী ব্যাখ্যা করেন যে, দরিদ্র মানুষদের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ফলেই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আকাঙ্ক্ষা ও লড়াইয়ের মনোভাব থাকা সত্ত্বেও দরিদ্ররা মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাবের মতো অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গরিবদের প্রতিবন্ধকতা দূর করে এবং তাঁদের সমর্থন করে তাঁদের ক্ষমতায়নের পথ বেছে নিতে মদত করে চলেছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল লেনদেন এবং গ্যারান্টিমুক্ত ঋণের মতো সুবিধার মাধ্যমে দরিদ্রদের জীবনযাত্রার রূপান্তর ঘটিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আজ অনেক দরিদ্র মানুষ উদ্যোগী হয়ে উঠছেন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ও যন্ত্রপাতির সাহায্যে তাঁরা এখন ‘উন্নত-জ্ঞাত নাগরিক’ হয়ে উঠছেন। শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন, যাঁরা দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসছেন, তাঁদের মধ্যে অগ্রগতির প্রবল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং তাঁদের আকাঙ্ক্ষা নতুন পরিকাঠামোর বিকাশের দিকে পরিচালিত করেছে। তিনি আরও বলেন, যখন তাঁদের সৃজনশীলতা উদ্ভাবনের নতুন পথ তৈরি করছে, তাঁদের দক্ষতা শিল্পের দিক নির্ধারণ করছে, তাঁদের চাহিদা বাজারের দিক নির্ধারণ করছে এবং তাঁদের আয়ের প্রবৃদ্ধি বাজারে চাহিদা বাড়িয়ে তুলছে। শ্রী মোদী বলেন, “ভারতের নব্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণী দেশের অগ্রগতির জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি হিসাবে প্রমাণিত হচ্ছে”।
নির্বাচনের ফলাফলের দিনটির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন সেদিন তিনি বলেছিলেন, তৃতীয় মেয়াদে সরকার আগের তুলনায় তিনগুণ গতিতে কাজ করবে। টি নি সবাইকে আস্বস্ত করে বলেন, সেই অভিপ্রায় এখন আরো মজবুত । তিনি বলেন, নাগরিকদের মতো সরকারও নতুন বিশ্বাস ও আশায় পূর্ণ। সরকারের তৃতীয় মেয়াদের এখনও ১০০ দিন পূর্ণ হয়নি। তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী পরিকাঠামো আধুনিকীকরণ, সামাজিক পরিকাঠামো সম্প্রসারণ এবং সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপর জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত তিন মাসে সরকার দরিদ্র, যুব, মহিলা ও কৃষকদের জন্য অনেক বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাম্প্রতিক সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী গরিবদের জন্য ৩ কোটি পাকা বাড়ি, ইউনিফাইড পেনশন স্কিম, কৃষি পরিকাঠামো সম্প্রসারণের জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল, কৃষকদের জন্য একাধিক ফসল বীজের উন্নত মানের জাতের সূচনা, ২ লক্ষ কোটি টাকার পিএম প্যাকেজ যা সরাসরি ৪ কোটিরও বেশি যুবককে উপকৃত করেছে এবং গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে ১১ লক্ষ নতুন লাখপতি দিদির উত্থানের কথা উল্লেখ করেন। লাখপতি দিদি কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, মহিলাদের আর্থিক ক্ষমতায়নে তা এক বৃহৎ ভূমিকা পালন করেছে।
গতকাল মহারাষ্ট্রের পালঘর সফরের মধ্য দিয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের ভধবন বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ১২ টি নতুন শিল্প নগরী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত, ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ৯টি উচ্চগতির করিডর নির্মাণ এবং ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পুণে, থানে ও ব্যাঙ্গালোর মেট্রোর সম্প্রসারণের কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি জানান, লাদাখে বিশ্বের অন্যতম উচ্চতম সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ যে তিনটি নতুন বন্দে ভারত ট্রেনের সূচনা সেগুলোকে ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে উল্লেখ করেন। সরকারের রূপান্তরমূলক দৃষ্টিভঙ্গির উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের জন্য পরিকাঠামো কেবল দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা বৃদ্ধি করার বিষয় নয়, এটি ভারতের নাগরিকদের জীবনযাত্রার স্বাচ্ছন্দ্যের উন্নতির একটি উপায়।“ প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় রেলের বিবর্তনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ট্রেনের কোচ সবসময়ই তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, বন্দে ভারত-এর মতো আধুনিক ট্রেনগুলি চালু করা হয়েছে যা গতি এবং আরাম উভয়ই প্রদান করে। তিনি বলেন, এই নতুন ট্রেনগুলি চালু করা দেশের পরিবহন পরিকাঠামোতে বিপ্লব আনার একটি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির অংশ, যা দ্রুত আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে জাতির প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার মানোন্নয়নে সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, দেশে আগে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল, কিন্তু আমরা সারা ভারতে আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের একটি নেটওয়ার্ক স্থাপন করছি। তিনি বিশেষ করে ছোট শহরগুলিতে বিমান যোগাযোগ বাড়ানোর ক্রমাগত উদ্যোগের বিষয়ে বিশদ বক্তব্য রাখেন এবং বলেন যে, বিমানবন্দরগুলি আগে থেকেই ছিল, তবে সরকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহরগুলিকে বিমান যোগাযোগের মাধ্যমে সংযুক্ত করছে এবং ভারতের সমস্ত কোণে আধুনিক পরিবহণের সুবিধা নিয়ে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী পিএম গতিশক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান সম্পর্কেও কথা বলেছেন, যার লক্ষ্য সরকারি বিভাগগুলিতে সিলোগুলি ভেঙে দেওয়া এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত, সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা। সরকারের উদ্যোগের ব্যাপক অর্থনৈতিক সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রচেষ্টাগুলি উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসার করছে এবং আমাদের অর্থনীতি ও শিল্পের উপর অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব রাখছে।
শ্রী মোদী ঘোষণা করেন যে, একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক ভারতের জন্য এক উত্থান দশকের মতো। তিনি এই গতি ত্বরান্বিত করার জন্য সম্মিলিত দায়িত্বের ওপর জোর দেন, যাতে উন্নয়নের সুবিধা সারা দেশের সকল নাগরিকের কাছে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করা যায়। ভারতের অর্থনীতিতে পক্ষভুক্ত সংশ্লিষ্ট সকল ও বেসরকারী ক্ষেত্রের অংশীদারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যে স্তম্ভগুলি ভারতের অগ্রগতিকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে চালিত করবে সেগুলির উপর জোর দিয়ে বলেন, “এই স্তম্ভগুলি কেবল ভারতের সমৃদ্ধির ভিত্তি নয়, বিশ্বব্যাপী সমৃদ্ধির স্তম্ভও বটে”। বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপুল সজাগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গিতে অবদান রাখছে এমন সমস্ত সমস্ত উদ্যোগ ও পদক্ষেপের উপর সরকার মদত দেওয়ার কাজ অব্যাহত রাখবে। তিনি একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করে বলেন, সরকার দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে।
শ্রী মোদী বলেন, ভারতকে বিশ্ব উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করা প্রত্যেক ভারতীয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা। তিনি আরও বলেন, ভারতের কাছ থেকে বিশ্বেরও এটাই প্রত্যাশা ছিল এবং আজ দেশে এই লক্ষ্যে বিপ্লব কার্যকরী হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতের তুলনায় আজ দেশে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছে। গৃহীত উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, প্লাগ-এন্ড-প্লে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এবং অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণ করা হচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির উৎপাদনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পিএলআই প্রকল্পগুলি ভারতে যে সাফল্য অর্জন করেছে তা নজিরবিহীন।
ঔপনিবেশিক দাসত্বের আগের সময়ের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সমৃদ্ধির একটি প্রধান ভিত্তি ছিল আমাদের জ্ঞান ব্যবস্থা, যা উন্নত ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভও বটে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারতকে দক্ষতা, জ্ঞান, গবেষণা এবং উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে সরকার শিল্প ও শিক্ষা ক্ষেত্রকে অংশীদার করে তুলছে। শ্রী মোদী আরও বলেন, চলতি বছরের বাজেটে এই বিষয়ে অনেক জোর দেওয়া হয়েছে, যা ১ লক্ষ কোটি টাকার গবেষণা তহবিলে প্রতিফলিত হয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের বিদেশে পড়াশোনার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, সরকার অতিরিক্ত ব্যয় থেকে মানুষকে সহায়তা করার জন্য ভারতে শীর্ষস্থানীয় বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্যাম্পাস খোলার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। শ্রী মোদী বলেন, স্বাধীনতার পর প্রথম সাত দশকে ৮০ হাজারের সংখ্যার তুলনায় গত দশকে প্রায় ১ লক্ষ নতুন এমবিবিএস-এমডি আসন তৈরি করা হয়েছে। এ বছরের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে আগামী পাঁচ বছরে ৭৫ হাজার নতুন মেডিকেল আসন তৈরির যে ঘোষণা করা হয়েছিল তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তা অদূর ভবিষ্যতে ভারতকে বিশ্বের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত করবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘গ্লোবাল ফুড বাস্কেট’ হওয়ার জন্য দেশের অঙ্গীকারের কথা ব্যাক্ত করেন এবং সরকারের সংকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন যে বিশ্বের প্রতিটি ডাইনিং টেবিলে কমপক্ষে একটি খাদ্য পণ্য ভারতে তৈরি হওয়া উচিত। এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবায়িত করতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার একই সঙ্গে ভারতের দুগ্ধ ও সামুদ্রিক খাদ্য পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি জৈব ও প্রাকৃতিক চাষাবাদকে উৎসাহিত করছে। ভারতের সাম্প্রতিক সাফল্যের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী আন্তর্জাতিক বাজরা বর্ষ উদযাপনের কথা তুলে ধরেন। “বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজরা উৎপাদক কে”? প্রকৃতি এবং অগ্রগতি উভয়ের জন্য সুপারফুডের দ্বৈত সুবিধার উপর জোর দিয়ে তিনি গর্বের সাথে উল্লেখ করেন “এটি ভারত”। প্রধানমন্ত্রী শীর্ষস্থানীয় বিশ্ব খাদ্য ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে ভারতের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, যা খাদ্য শিল্পে দেশের ক্রমবর্ধমান মর্যাদার ইঙ্গিত দেয়।
বিকশিত ভারতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের দিকে মনোনিবেশ করে প্রধানমন্ত্রী সবুজ শক্তি ক্ষেত্রের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি জি-২০ সম্মেলনে ভারতের সাফল্যের ওপর আলোকপাত করেন, যেখানে গ্রিন হাইড্রোজেন উদ্যোগ সকল দেশের সমর্থন পেয়েছে এবং একই বছরে ৫০০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ লক্ষ টন গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনের ক্ষমতা বিকাশের জন্য ভারতের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রযুক্তির পাশাপাশি ভারতের বিকাশের একটি শক্তিশালী স্তম্ভ হিসাবে পর্যটনের ভূমিকার উপর জোর দিয়েছিলেন, যা ইতিমধ্যে দেশের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে। ভারতের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থানগুলির প্রসার এবং ছোট সমুদ্র সৈকতগুলির বিকাশের জন্য চলমান প্রচেষ্টার উপর জোর দিয়ে তিনি ঘোষণা করেন, “ভারত বিশ্বব্যাপী সমস্ত বিভাগে পর্যটকদের জন্য শীর্ষ গন্তব্য হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে”। তিনি ‘দেখো আপনা দেশ, পিপলস চয়েস’ প্রচারাভিযানের কথাও তুলে ধরেন, যেখানে নাগরিকরা ভারতের শীর্ষ পর্যটন গন্তব্যগুলি চিহ্নিত করার জন্য ভোট দিচ্ছেন যা পরে মিশন মোডে উন্নত করা হবে। তিনি আরও বলেন, এই উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
প্রধানমন্ত্রী অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব ব্যাপী উন্নয়ন, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের জন্য গুরুত্ব দেবার ওপর জোর দেন। ভারতের জি-২০ প্রেসিডেন্সির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভারত দক্ষিণী বিশ্বের কণ্ঠস্বরকে প্রশস্ত করেছে এবং আমাদের আফ্রিকার বন্ধুদের ক্ষমতায়নে সহায়তা করেছে।“ তিনি এমন এক ভবিষ্যতের কল্পনা করেন যেখানে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের চেতনায় ভারত এই দেশগুলির জন্য একটি কণ্ঠস্বর হিসাবে কাজ করবে। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি বিশ্ব ব্যবস্থা চাই যা সকলের জন্য, বিশেষ করে দক্ষিণী বিশ্বের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করে।“
বিশ্বের গতিশীল প্রকৃতির কথা স্বীকার করে শ্রী মোদী ভারত সরকারের নীতি ও কৌশলগুলির অভিযোজনযোগ্যতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের নজর ভবিষ্যতের দিকে। গ্রিন হাইড্রোজেন মিশন, কোয়ান্টাম মিশন, সেমিকন্ডাক্টর মিশন এবং ডিপ ওশান মিশনের মতো উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আজ দেশকে আগামীর চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগের জন্য প্রস্তুত করছি। মহাকাশ প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করতে সরকারের সাম্প্রতিক ১,০০০ কোটি টাকার বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকের ভারত সুযোগের দেশ এবং আমরা বিশ্বাস করি ভারতের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে”।
প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর সমাপনী ভাষণে ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের বিকাশিত ভারত হওয়ার সংকল্পের কথা আবারো ব্যক্ত করেন। তিনি সমস্ত নাগরিক ও সংশ্লিষ্টদের এই যাত্রায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেন এবং ভারতে আরও বেশি সংখ্যক সংস্থাকে বিশ্ব ব্যাপী ব্র্যান্ডে পরিণত হতে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "আমরা চাই ভারত বিশ্বের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিক”। তিনি বলেন, “আমরা একটি স্থিতিশীল নীতি ব্যবস্থা ও প্রবৃদ্ধিকে সহজতর, সংস্কার এবং সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আপনাদেরও উদ্ভাবন, সম্পাদন, ইতিবাচক ব্যাঘাত সৃষ্টি এবং উচ্চ মানের দিকে মনোনিবেশ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া উচিত। প্রত্যেককে বড় করে চিন্তা করার এবং ভারতের সাফল্যের গল্প লেখার জন্য সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আজকের ভারত সম্পদ সৃষ্টিকারীদের সম্মান করে। এক সমৃদ্ধ ভারত বিশ্ব সমৃদ্ধির পথ সুগম করতে পারে”। উদ্ভাবন, অন্তর্ভুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মন্ত্রগুলি স্মরণ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী এবং দেশে ও বিদেশে বসবাসকারী প্রত্যেক ভারতীয়কে আহ্বান জানান, “আসুন আমরা এই পথে একসাথে চলি, কারণ ভারতের সমৃদ্ধিতেই বিশ্বের সমৃদ্ধি নিহিত রয়েছে”। এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব বলে তিনি আস্থা ব্যক্ত করে বক্তব্য শেষ করেন।
***
SKC/ADK/KMD
(Release ID: 2050594)
Visitor Counter : 67