অর্থমন্ত্রক
ক্রমবর্ধমান কর্মশক্তির চাহিদা পূরণে ভারতীয় অর্থনীতিকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কৃষি বহির্ভুত ক্ষেত্রে বার্ষিক ৭৮.৫ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যখন কৃত্রিম মেধার শিকড় চারিয়ে যাচ্ছে তখন সবার কল্যাণের জন্য প্রযুক্তিকে চালিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
শ্রমশক্তির সামাজিক নিরাপত্তার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বিধি ২০২০-র আওতায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে
২০২৪ আর্থিক বছরে ভারতের কর্পোরেট ক্ষেত্রের মুনাফাযোগ্যতা ১৫ বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সময়কালের তুলনায় মুনাফাযোগ্যতা বেড়েছে ৪ গুণ
কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও তা বজায় রাখার নিরিখে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিচর্যা ক্ষেত্র অর্থনীতির দুটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে উঠে এসেছে
Posted On:
22 JUL 2024 3:19PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২২ জুলাই, ২০২৪
বিশ্ব শ্রম বাজারের ‘বিপত্তি’ এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জেরে এর ক্রমাগত রূপ বদলের মধ্যেই কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন সংসদে ২০২৩-২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদন পেশ করেছেন। যে রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে বিশ্ব চলেছে, ভারত তার প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে না বলে সমীক্ষায় স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।
২০৩৬ সাল পর্যন্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা
২০২৩-২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান কর্মশক্তির চাহিদা পূরণে ভারতীয় অর্থনীতিকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কৃষি বহির্ভুত ক্ষেত্রে বার্ষিক ৭৮.৫ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমানে উৎপাদনভিত্তিক উৎসাহদান (পিএলআই) (৫ বছরে ৬০ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি), মিত্র বস্ত্রবয়ন প্রকল্প (২০ লক্ষ কর্মংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি), মুদ্রা সহ যেসব প্রকল্প চালু রয়েছে সেগুলির রূপায়নে আরও জোর দেওয়া দরকার বলে সমীক্ষায় মতপ্রকাশ করা হয়েছে।
কৃত্রিম মেধা : সব থেকে বড় ব্যাঘাত
কৃত্রিম মেধার ব্যবহার যেমন দ্রুতহারে বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এটি সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ২০২৩-২৪এর অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, জনসংখ্যাগত সুবিধা এবং তরুণ জনগোষ্ঠী নিয়ে ভারত এক্ষেত্রে ঝুঁকি ও সম্ভাবনার এক অনন্য অবস্থানে রয়েছে। বিপিও ক্ষেত্র নিয়ে বিশেষ আশঙ্কার কারণ রয়েছে। সেখানে কৃত্রিম মেধার মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। সাধারণ প্রাত্যহিক কাজকর্ম চ্যাটবট-এর মাধ্যমে সেরে ফেলা হচ্ছে। ফলে আগামী ১০ বছরে এই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
তবে কৃত্রিম মেধার বিস্তার পরবর্তী দশকগুলিতে ধীরে ধীরে উৎপাদনশীলতা বাড়াবে বলে আশা করা যায়।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতের তরুণ প্রজন্ম যেভাবে প্রযুক্তির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে, ডিজিটাল জনপরিকাঠামো গড়ে উঠছে এবং সরকার ও শিল্প মহল যে রকম সক্রিয়ভাবে এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করছে, তাতে কৃত্রিম মেধার যুগে ভারত এক অগ্রণী দেশ হয়ে উঠবে।
ভারতে কৃত্রিম মেধার সর্বাধিক সদ্ব্যবহার
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় এই ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। কৃত্রিম মেধা ক্ষেত্রে একটি আন্তঃসংস্থা সমন্বয় কর্তৃপক্ষ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে, যেটি কৃত্রিম মেধা ও কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে।
কৃত্রিম মেধাকে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করতে এবং দেশের যুব সমাজের সঙ্গে কৃত্রিম মেধার সংযোগ গড়ে তুলতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে ‘ফিউচার স্কিলস প্রাইম’, স্কুল পড়ুয়াদের সঙ্গে কৃত্রিম মেধার সম্পর্ক স্থাপনে ‘ইয়ুথ ফর উন্নতি অ্যান্ড বিকাশ উইথ এআই’, ‘রেসপন্সেবল এআই ফর ইয়ুথ ২০২২’ প্রভৃতি প্রয়াস উল্লেখযোগ্য। ২০২৪ সালে ইন্ডিয়া এআই মিশনের জন্য ১০,৩০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।
অস্থায়ী কর্মীনির্ভর অর্থনীতির দিকে
নীতি আয়োগের জাতীয় শ্রমশক্তি সমীক্ষার তথ্য অনুসারে ২০২০-২১ সালে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করতেন ৭৭ লক্ষ মানুষ। ২০২৩-২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে ভারতে অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা বেড়ে ২ কোটি ৩৫ লক্ষে পৌঁছতে পারে। এই সংখ্যা কৃষি বহির্ভুত শ্রমশক্তির ৬.৭ শতাংশ এবং মোট জীবিকার ৪.১ শতাংশ হতে পারে।
সেইজন্য সমীক্ষায় অস্থায়ী কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা বিধি ২০২০ এক উল্লেখযোগ্য প্রয়াস বলে সমীক্ষায় মতপ্রকাশ করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণমুক্ত জ্বালানী
জলবায়ু পরির্বতনকে বর্তমান সময়ের এক কঠিন বাস্তবতা হিসেবে স্বীকার করে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, চরম আবহাওয়ার কারণে কর্মসংস্থান এবং উৎপাদনশীলতার ক্ষতি হতে পারে।
জলবায়ু পরির্বতনের কুফল প্রশমিত করতে দূষণমুক্ত প্রযুক্তি ও দূষণমুক্ত বিকল্প জ্বালানীর দিকে এগোতে হবে। ব্যবসায়িক মহলও এর প্রয়োজনীয়তা বুঝেছে। এই লক্ষ্যে যেসব বিনিয়োগ করা হচ্ছে তাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতের কর্পোরেট ক্ষেত্রের বিকাশ
২০২৪ আর্থিক বছরে ভারতের কর্পোরেট ক্ষেত্রের মুনাফাযোগ্যতা ১৫ বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সময়কালের তুলনায় মুনাফাযোগ্যতা বেড়েছে ৪ গুণ।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, নিয়োজিত মূলধন ও শ্রমের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করার একটা দায়িত্ব ব্যবসায়িক মহলের রয়েছে। কৃত্রিম মেধার প্রতি অত্যধিক আগ্রহে বা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ভয়ে ব্যবসায়ীরা এই দায়িত্ব পালন থেকে পিছিয়ে আসতে পারেন না। তাঁদের মনে রাখতে হবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির গুরু দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে রয়েছে। তাতে কোনো বিচ্যুতি হলে তার প্রভাব সামাজিক সুস্থিতির ওপর পড়বে।
উচ্চ গুণমানের কর্মসংস্থানের জন্য কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিচর্যা ক্ষেত্র
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারত তার বিভিন্ন কৃষি জলবায়ু অঞ্চলের পণ্য উৎপাদনে গ্রামীণ শ্রমশক্তিকে সুচারুভাবে ব্যবহার করতে পারে। এতে বহু মহিলা আংশিক সময়ের কাজ পাবেন। শিক্ষিত যুব সম্প্রদায়কেও কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে ছোট থেকে মাঝারি মাপের কৃষি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে কাজে লাগানো যেতে পারে।
১০০ দিনের প্রকল্পে যারা কাজ করছেন, তাদের আরও উৎপাদনশীল এবং আর্থিকভাবে লাভজনক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে সমীক্ষায় মতপ্রকাশ করা হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কম হওয়ায় এবং স্থানীয় খাদ্য পণ্যের বৈচিত্রপূর্ণ চাহিদা থাকায় এখানে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের একটা পৃথক চাহিদা রয়েছে। এক্ষেত্রে মেগা ফুড পার্ক, স্কিল ইন্ডিয়া, মুদ্রা, এক জেলা এক পণ্য প্রভৃতি প্রকল্পের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে শ্রম, সরবরাহ, ঋণ ও বিপণনের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হতে পারে।
ভারতের মতো দেশে যেখানে জনসংখ্যাগত ও লিঙ্গগত সুবিধা রয়েছে, সেখানে পরিচর্যা ক্ষেত্র বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে জনসংখ্যায় প্রবীণদের ভাগ যখন বাড়বে, তখনকার কথা মাথায় রেখে অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩-২৪এ পরিচর্যার সংজ্ঞা নিরূপণ এবং একে একটি কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আগামী ২৫ বছরে পরিচর্যা ক্ষেত্রের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। ২০৫০ সালের মধ্যে জনসংখ্যায় শিশুদের ভাগ কমে দাঁড়াবে ১৮ শতাংশ (অর্থাৎ ৩০ কোটি), অন্যদিকে বয়স্ক মানুষের ভাগ বেড়ে দাঁড়াবে ২০.৮ শতাংশ (অর্থাৎ ৩৪.৭ কোটি)। তাই ২০২২ সালে যেখানে ৫০.৭ কোটি মানুষের পরিচর্যার প্রয়োজন ছিল, সেখানে ২০৫০ সাল নাগাদ ৬৪.৭ কোটি মানুষের পরিচর্যার প্রয়োজন হবে।
সারা বিশ্বের সঙ্গে ভারতেও শ্রমশক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার কম। স্বাভাবিকভাবেই মহিলাদের পরিচর্যা করার মতো মহিলা কর্মীর সংখ্যাও অত্যন্ত কম। এই সমস্যার সমাধানে সমীক্ষায়, পরিচর্যা ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এবং অবৈতনিক পরিচর্যার পরিসর কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পরিচর্যা ক্ষেত্রের বিকাশ হলে তার দ্বিমুখী অর্থনৈতিক সুফল পাওয়া যায়। একদিকে যেমন শ্রমশক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ে, তেমনি কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতে যদি এক্ষেত্রে জিডিপি-র ২ শতাংশ সরকারি বিনিয়োগ করা হয়, তাহলে ১ কোটি ১০ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে, যার সুফলভোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশই হবেন মহিলা।
ভারতে বয়স্ক পরিচর্যা সংস্কার
জনসংখ্যায় বয়স্কদের ভাগ বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতের জন্য একটি সার্বিক বয়স্ক পরিচর্যা নীতি প্রণয়নের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার সংকল্প পূরণ করতে হলে ভারতকে পরিচর্যা ক্ষেত্রের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের প্রতিবেদন অনুসারে ৬০-৬৯ বছর বয়সী এই জনসংখ্যার কর্মক্ষমতা ব্যবহার করা গেলে এশীয় অর্থনীতির জিডিপি গড়ে ১.৫ শতাংশ হারে বাড়তে পারে।
PG/SD/NS
(Release ID: 2035793)
Visitor Counter : 96
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam