প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

সন্ত শিরোমণি আচার্য শ্রী ১০৮ বিদ্যাসাগরজি মহারাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিবেদন

Posted On: 21 FEB 2024 12:47PM by PIB Kolkata

 

সন্ত শিরোমণি আচার্য শ্রী ১০৮ বিদ্যাসাগরজি মহারাজজি সমাধিস্থ হয়েছেন এবং আমাদের সবাইকে শোকাহত করে তিনি চলে গিয়েছেন। অন্তর্ভেদী প্রজ্ঞা, সীমাহীন দয়া এবং মানবতার উন্নয়নে নিরলস অঙ্গীকার, সব মিলিয়ে তাঁর জীবনকালে এক সমৃদ্ধ আধ্যাত্মিক ভাবনার সাক্ষ্য রেখে গেছেন তিনি। অসংখ্য অনুষ্ঠানে তাঁর আশীর্বাদ গ্রহণের সুযোগ হয়েছিল আমার। আমি এবং অসংখ্য মানুষকে যিনি জীবনের পথ দেখিয়েছেন, তাঁর প্রয়াণে আমি প্রিয়জনের বিয়োগ যন্ত্রণা অনুভব করছি। তাঁর উষ্ণ স্নেহ ও আশীর্বাদ শুধুমাত্র সৌজন্যের ছিল না, সেইসঙ্গে তা ছিল আধ্যাত্মিক শক্তি, ক্ষমতায়ন এবং প্রেরণার। আমরা যাঁরা তাঁর সান্নিধ্যে এসেছি, তাঁরা অত্যন্ত ভাগ্যবান।

 

পূজ্য আচার্যজি তাঁর জ্ঞান, অনুকম্পা এবং সেবার জন্য সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে তপস্বী, যাঁর মধ্যে ভগবান মহাবীরের জীবনের প্রতিরূপ দেখতে পাওয়া যায়। তাঁর কাজকর্ম এবং শিক্ষাদানের মধ্য দিয়ে তিনি জৈন ধর্মের মূল নীতিকে তুলে ধরেছেন। সততা, সত্যবাদিতা এবং কর্মই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র অবলম্বন। তিনি অত্যন্ত সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন। জৈন সম্প্রদায়ের মধ্যে তিনি বিশেষ পরিচিতি লাভ করলেও, তাঁর প্রভাব শুধুমাত্র একটি সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ধর্মীয় বিশ্বাস, অঞ্চল এবং সংস্কৃতি নির্বিশেষে সব ধরনের মানুষ তাঁর সান্নিধ্যে এসেছেন এবং আধ্যাত্মিক চেতনার জাগরণের লক্ষ্যে তিনি বিশেষত, তরুণদের মধ্যে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।

 

শিক্ষা ছিল তাঁর অন্তরের একেবারে কাছাকাছি। বিদ্যাধর (তাঁর শৈশবের নাম) থেকে বিদ্যাসাগর পর্যন্ত তাঁর উত্তরণ ছিল জ্ঞানার্জন এবং জ্ঞানদানের প্রতি গভীর অঙ্গীকারের যাত্রাপথ। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা হল ন্যায় ও সমাজকে আলোকিত করার হাতিয়ার। প্রকৃত জ্ঞানার্জনের জন্য তিনি আত্ম-চর্চা ও আত্ম-সচেতনতার গুরুত্বের ওপর জোর দিতেন এবং তাঁর অনুগামীদের জীবনভর শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য আর্জি জানাতেন।

 

একইসঙ্গে, সন্ত শিরোমণি আচার্য বিদ্যাসাগরজি মহারাজজি আমাদের তরুণদের এমন এক শিক্ষাদান করতে চেয়েছিলেন, যার শিকড় প্রোথিত রয়েছে আমাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের মধ্যে। তিনি প্রায়ই বলতেন, অতীতের শিক্ষা থেকে সরে এলে, আমরা জলের ঘাটতির মতো গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলির সমাধান বের করতে পারব না। তিনি দক্ষতা এবং উদ্ভাবনমূলক শিক্ষায় বিশ্বাস করতেন। ভারতের ভাষাগত বৈচিত্র্য নিয়ে তিনি প্রভূত গর্ববোধ করতেন এবং তরুণদের ভারতীয় ভাষা শিক্ষার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন।

 

পূজ্য আচার্যজি নিজে সংস্কৃত, প্রাকৃত এবং হিন্দিতে প্রচুর লিখেছেন। সন্ত হিসেবে তিনি যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন এবং তিনি কীভাবে মাটির কাছাকাছি থাকতেন, তা তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি মুখমতির মধ্য দিয়েই প্রতিভাত হয়। তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে তিনি সমাজের নিপীড়িতদের জাগ্রত করেছিলেন।

 

স্বাস্থ্য পরিচর্যার ক্ষেত্রেও পূজ্য আচার্যজি পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করেছেন। তিনি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রের সঙ্গে, বিশেষত পিছিয়ে পড়া এলাকার কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রতি তাঁর সর্বাত্মক দৃষ্টিভঙ্গী ছিল, যেখানে আধ্যাত্মিক ভাবনার সঙ্গে শারীরিক সুস্থতাকে একসূত্রে গেঁথেছিলেন তিনি।

 

দেশ গড়ার ক্ষেত্রে সন্ত শিরোমণি আচার্য শ্রী বিদ্যাসাগরজি মহারাজজি-র অঙ্গীকার নিয়ে চর্চার জন্য আমি আগামী প্রজন্মের কাছে বিশেষভাবে আর্জি জানাচ্ছি। সংকীর্ণ ভাবনা ছেড়ে দেশের স্বার্থে কাজ করার জন্য তিনি মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন। ভোটদানের পক্ষে তিনি ছিলেন এক অন্যতম শক্তিশালী যোদ্ধা, কারণ তিনি মনে করতেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এটি হল মত প্রকাশের হাতিয়ার। তিনি সুস্থ এবং স্বচ্ছ রাজনীতির পক্ষে সওয়াল করতেন। তিনি বলতেন, ব্যক্তি স্বার্থ নয়, মানুষের কল্যাণেই নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

 

তিনি বিশ্বাস করতেন, নাগরিকদের নিজেদের প্রতি, পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতি এবং দেশের প্রতি দায়দায়িত্ব শক্তিশালী দেশ গঠনের ভিত্তি তৈরি করে। সততা, অখণ্ডতা এবং আত্মনির্ভরতার মতো গুণাবলী চর্চার জন্য তিনি মানুষকে অনুপ্রাণিত করতেন। ‘বিকশিত ভারত’ গড়ার লক্ষ্যে আমরা এখন যে কাজ করে চলেছি, তিনি তার প্রতি এখানে গুরুত্ব দিয়েছেন।

 

বিশ্বজুড়ে যেখানে পরিবেশগত অবনমন দিন দিন বেড়ে চলেছে, সেখানে প্রকৃতির ক্ষতি যাতে ন্যূনতম হয়, সেই লক্ষ্যে জীবনযাপনের ডাক দিয়েছিলেন পূজ্য আচার্যজি। দেশের অর্থনীতিতে কৃষিক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলতেন তিনি। সেইসঙ্গে, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দিতেন। জেলবন্দিদের অবস্থার উন্নয়নেও তিনি কাজ করেছেন।

 

হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের এই ভূমির সৌন্দর্য বর্তমান, আমাদের এই মাটি বহু মহান সন্তানের জন্ম দিয়েছে, যাঁরা অন্যদের আলো দেখিয়েছেন এবং সমাজকে উন্নত করেছেন। পূজ্য আচার্যজি যা কিছু করেছেন, তা শুধুমাত্র বর্তমানের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও ভেবেছিলেন তিনি। গত বছর নভেম্বর মাসে ছত্তিশগড়ের ডোঙ্গরগড়ের চন্দ্রগিরি জৈন মন্দির দর্শনের সুযোগ হয়েছিল আমার। আমি ভাবতে পারিনি, সেটাই হবে পূজ্য আচার্যজির সঙ্গে আমার শেষ সাক্ষাৎ। সেই মুহূর্তগুলি ছিল আমার কাছে বিশেষ মুহূর্ত। তিনি আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলেছিলেন। দেশের সেবায় আমার প্রয়াসকে আশীর্বাদ জানিয়েছিলেন তিনি। আমাদের দেশ যে পথে এগোচ্ছে এবং বিশ্বমঞ্চে ভারত যেভাবে সমীহ আদায় করে নিচ্ছে, তা নিয়ে তিনি আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর শান্ত চাহনি এবং মৃদু হাসি সব সময় শান্তি ও লক্ষ্য পূরণের অনুভূতি প্রোথিত করার পক্ষে যথেষ্ট। তাঁর আশীর্বাদ যেন আত্মার ওপর মলমের মৃদু প্রলেপের মতো, নিজের চারিদিকে ঐশ্বরিক অস্তিত্বের অনুভূতির মতো।

 

সন্ত শিরোমণি আচার্য শ্রী ১০৮ বিদ্যাসাগরজি মহারাজজিকে যাঁরা চিনতেন এবং তাঁর শিক্ষা ও জীবনাদর্শ যাঁদের স্পর্শ করেছে, তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁর অভাব গভীরভাবে অনুভব করবেন। যদিও যাঁদের তিনি প্রেরণা যুগিয়েছিলেন, তাঁদের অন্তরে ও হৃদয়ে তিনি সর্বদা বেঁচে থাকবেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা তাঁর মূল্যবোধকে মূর্ত করে তোলার অঙ্গীকার করছি। এভাবে আমরা তাঁর মহান আত্মার প্রতি শুধু শ্রদ্ধা নিবেদন করব না, সেইসঙ্গে আমাদের দেশ ও মানুষের কাছে তাঁর মিশনকে ছড়িয়ে দিতে পারব।

PG/MP/DM/…..



(Release ID: 2007697) Visitor Counter : 55