প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ে একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 12 OCT 2023 9:12PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১২ অক্টোবর, ২০২৩

 

ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!

উত্তরাখণ্ডের জনপ্রিয় তরুণ মুখ্যমন্ত্রী ভাই পুষ্কর সিং ধামিজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী অজয় ভাটজি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্কজি, ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি মহেন্দ্র ভাটজি, উত্তরাখণ্ড সরকারের মন্ত্রীরা, উপস্থিত সকল সাংসদ, বিধায়ক, অন্যান্য বিশিষ্টজন এবং দেবভূমিতে আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যবৃন্দ, আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই। আজ উত্তরাখণ্ড নানা আশ্বর্যের কাজ করে চলেছে। হয় তো এর আগে কারুরই এধরণের অভিজ্ঞতা হয়নি। আজ সকাল থেকে আমি উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার সময় আপনাদের অফুরন্ত ভালোবাসা ও আশীর্বাদ পেয়েছি, মনে হচ্ছিল আমি যেন ভালোবাসায় গঙ্গায় ভেসে চলেছি।  

আধ্যাত্মিকতার এই পবিত্র ভূমিকে আমি প্রণাম জানাই। এই ভূমির সাহসিকতা অনবদ্য। আমি সেইসব বীর মায়েদের প্রণাম জানাই। বদ্রিনাথ ধামে জয়বদ্রি বিশাল ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে যখন চারদিক, তখন গাড়ওয়াল রাইফেলসের সাহসী যোদ্ধাদের শৌর্য ও  সাহসী মানসিকতা প্রতিফলিত হয়। যখন গঙ্গোলিহাটের কালিকা মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে জয় মহাকালির ধ্বনি অনুরণিত হয়, তখন কুমায়ুন রেজিমেন্টের নায়কদের অদম্য সাহস জাগ্রত হয়। মানসখণ্ডের বাগেশ্বর, বৈজনাথ, নন্দাদেবী, গোলুদেবতা, পূর্ণগিরি, কাশরদেবী, কাইঞ্চিধাম, কাটারমল, নানাকমাট্টা, রিঠা সাহিব সহ অগুণিত তীর্থস্থান এখানে রয়েছে। এই অঞ্চল সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্যে ভরপুর। আমি যখন জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং আধ্যাত্মিকতার এই কেন্দ্রে তীর্থযাত্রা করি, বিশ্বাস করুন, তখন নিজেকে আশীর্বাদ ধন্য বলে মনে হয়। 

আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যবৃন্দ,

এখানে আসার আগে আমার পার্বতী কুন্ড এবং যোগেশ্বর ধাম দর্শন করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমি তাঁদের কাছে প্রত্যেক দেশবাসীর সুস্বাস্থ্য কামনা করেছি, উন্নত ভারত গড়ে তোলার যে সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি তা বাস্তবায়নের শক্তি যাতে আমরা সকলে পাই সেই প্রার্থনা করেছি, আমার উত্তরাখণ্ডের জনসাধারণের সমস্ত স্বপ্ন যাতে পূরণ হয়, সেই কামনা করেছি। কিছুক্ষণ আগে আমি আমাদের সীমান্ত অঞ্চলের প্রহরী এবং সৈনিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। স্থানীয় শিল্প এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যুক্ত আমার সকল ভাই বোনেদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার সুযোগ আমার হয়েছে। এইভাবেই ভারতের সংস্কৃতি, ভারতের সুরক্ষা এবং ভারতের সমৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত সকলের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের শক্তি অপ্রতিরোধ্য। বাবা কেদারের চরণতলে আমি নিজেকে সমর্পিত করেছি। আমি বিশ্বাস করি, এই দশক উত্তরাখণ্ডের। আর আজ আমি যখন আদি কৈলাশ দর্শন করতে গিয়েছিলাম, তখন আমার মনে আবারও সেই আস্থা শক্তিশালী হয়েছে।

উত্তরাখণ্ডের উন্নয়ন যাতে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছয়, যাতে আপনাদের জীবনযাত্রা আরও সহজ হয়, তা নিশ্চিত করতে আমাদের সরকার নিরন্তর কাজ করে চলেছে। আমাদের লক্ষ্য একটি। আজ এখানে একটি অনুষ্ঠানে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের একগুচ্ছ প্রকল্পের হয় উদ্বোধন হয়েছে, নয় তো শিলান্যাস করা হয়েছে। আমার প্রিয় উত্তরাখণ্ডের ভাই ও বোনেরা, ভাবতে পারছেন, একটা মাত্র অনুষ্ঠানে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রকল্প! এই প্রকল্পগুলির জন্য আপনাদের সবাইকে আমি অভিনন্দন জানাই। 

আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যবৃন্দ, 

এই পথ আমার জন্যও নতুন নয়, আপনাদের কাছেও নতুন নয়। আপনারা সকলে আমার সঙ্গে সবসময়ে যোগাযোগ রেখে চলেন। যার মধ্য দিয়ে ভালোবাসা ও একাত্মবোধ লালিত হয়। উত্তরাখণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও অনেক বন্ধু আমাকে চিঠি লেখেন। তাঁরা আমার ভালো সময়ে ও খারাপ সময়েও আমার পাশে থাকেন। পরিবারের নতুন সদস্যের আগমনের খবর যেমন তাঁরা আমাকে জানান, আবার বাড়ির মেয়েটি পড়াশুনায় ভালো করলেও তার খবরও আপনারা আমাকে পাঠান, অর্থাৎ উত্তরাখণ্ড আমার সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে আছে, যেন সমগ্র উত্তরাখণ্ড পরিবারের আমি একজন সদস্য।  

আমাদের দেশ যখন বড় কোনো সাফল্য অর্জন করে, তখন আপনারা সকলে সেই আনন্দে মেতে ওঠেন। কোথাও উন্নয়নের কোনো সম্ভাবনা দেখা দিলে নির্দ্বিধায় আপনারা সেই তথ্য আমার সঙ্গে ভাগ করে নেন। সম্প্রতি দেশ এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লোকসভা এবং বিধানসভাগুলিতে ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ৩০ বা ৪০ বছর ধরে যে কাজগুলি বকেয়া ছিল, আমার মা এবং বোনেদের আশীর্বাদে আপনাদের ভাই বা ছেলে এখন সেই কাজ সম্পন্ন করছে। আর মজার কথা হল সেই সময়কালেও বোনেরা আমার কাছে প্রচুর চিঠি পাঠিয়েছেন।
 
আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যবৃন্দ, 

আপনাদের সকলের আশীর্বাদে ভারত আজ উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ভারত এবং ভারতবাসী বিশ্বের সর্বত্রই প্রশংসিত হচ্ছে। ভারতের কণ্ঠস্বর সারা বিশ্বজুড়ে শোনা যাচ্ছে। তাই না? একটা সময় ছিল যখন চতুর্দিক নিরাশায় মগ্ন ছিল। সারা দেশ নিরাশায় নিমজ্জিত থাকতো। সেই সময় আমরা প্রত্যেকটি মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করতাম, ভারত যেন তার সমস্ত সঙ্কট থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারে। প্রত্যেক ভারতবাসী দেশকে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি থেকে মুক্ত করতে চাইতেন। ভারত যেন তার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারে, সকলে সেই প্রার্থনাই করতেন। আজ সারা বিশ্ব নানা সমস্যার সম্মুখীন। আপনারা তা উপলব্ধি করতে পারছেন। কিন্তু ভারতের বক্তব্য এই সমস্ত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও স্পষ্টভাবে ধ্বনিত হচ্ছে। সপ্তাহ কয়েক আগে জি২০ –র মতো একটি বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন সেখানে সারা বিশ্ব কিভাবে আমাদের – ভারতীয়দের ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আচ্ছা বলুন তো, যখন সারা বিশ্ব ভারতের প্রশংসা করে, যখন ভারতের কণ্ঠ সারা বিশ্বে অনুরণিত হয় তখন আপনাদের তা ভালো লাগে কি না? আমি আপনাদের কাছে জানতে চাইছি, আপনারা আমাকে জানান? ভারতের নাম যখন বিশ্বের দরবারে উজ্জ্বল হয় আপনাদের কি সেটা ভালো লাগে? জোর গলায় বলুন? ভারত যখন সারা বিশ্বকে পথ দেখায় আপনাদের তখন কেমন লাগে? 

কারা এই কাজগুলি করছেন? কারা এই কাজগুলি করছেন? মোদী এই কাজ করেনি। যা যা কাজ হয়েছে সেগুলি আপনারা করেছেন, আমার পরিবারের সদস্যরা করেছেন। এই সাফল্যের কৃতিত্ব যদি কারোর থাকে তাহলে সেটি জনসাধারণের। কেন? কারণ ৩০ বছর পরে আপনারা দিল্লিতে একটি স্থায়ী ও শক্তিশালী সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং আপনাদেরকে সেবা করার জন্য আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। এটি আপনাদের নির্বাচিত করার ক্ষমতা। আপনারা দেখেছেন আমি বিশ্বের নানা প্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে করমর্দন করি। আমি তাঁদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলি। তাঁরা যখন আমার দিকে তাকান, তখন তাঁরা আমাকে দেখেন না, ১৪০ কোটি ভারতবাসীকে দেখেন।  

আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যবৃন্দ,

যাঁরা প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলে থাকেন এবং দেশের দূরবর্তী স্থানে বাস করেন, আমরা তাঁদের কথা ভাবি। আর তাই মাত্র ৫ বছরে ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ দারিদ্রের কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন। ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ – সংখ্যাটা আপনাদের মনে থাকবে তো। আজ সারা বিশ্ব আশ্বর্য হয়েছে যে ৫ বছরে ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ দারিদ্রের কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন। কারা এই ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ? এঁদের মধ্যে অনেকেই আপনাদের মতোই প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলে বাস করেন। ভারত যে দারিদ্রের নাগপাশ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারে তার উদাহরণ এই ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ।

বন্ধুরা,    

এর আগেও গরিবী হঠাও শ্লোগান তোলা হয়েছিল, অর্থাৎ তাঁরা আপনাদের বলেছিল দারিদ্রকে দূর করতে। কিন্তু মোদী বলে একযোগে আমাদের দারিদ্র দূর করতে হবে। আমরা এই দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছি এবং গুরুত্ব সহকারে তা পূরণ করার চেষ্টা করছি। আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উড়ছে, আরও উঁচুতে উড়ছে। অন্য কোনো দেশ যেখানে পৌঁছতে পারেনি, সেখানে আমাদের চন্দ্রযান পৌঁছে গেছে। চন্দ্রযান যে জায়গাটিকে স্পর্শ করেছে ভারত সেই জায়গাটির নাম রেখেছে শিব শক্তি। আমার উত্তরাখণ্ডের ভাই বোনেরা এই শিব শক্তি নামকরণে আপনারা খুশি হয়েছেন তো? আমার উত্তরাখণ্ডের পরিচিতি কিন্তু সেখানে অবধি পৌঁছে গেছে। উত্তরাখণ্ডের মানুষকে শিব এবং শক্তির একত্রিত হওয়ার তাৎপর্য সম্পর্কে জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই। এখানে প্রতিটি পদক্ষেপে তা অনুভূত হয়।  
 
বন্ধুগণ, 

আজ সারা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করছে ভারতের শক্তি শুধু মহাকাশে নয়, ক্রীড়া জগতেও সমানভাবে অনুভূত হচ্ছে। দিনকয়েক আগে এশিয়ান গেম শেষ হয়েছে। এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ভারত সব ঐতিহাসিক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এই প্রথমবার ভারতীয় খেলোয়াড়রা ১০০-র বেশি পদক জয় করেছেন। আপনারা একটু জোরে হাততালি দিন। এই এশিয়ান গেমসে উত্তরাখণ্ডের ৮ জন ছেলে-মেয়ে অংশগ্রহণ করেন। আমাদের লক্ষ্য সেনের দল একটি পদক জয় করেছে, বন্দনা কাটারিয়ার হকি দলও দেশের জন্য পদক নিয়ে এসেছে। উত্তরাখণ্ডের এইসব ছেলে মেয়েরা দারুন দারুন কাজ করেছেন! আচ্ছা, আপনারা একটা কাজ করবেন? আপনাদের মোবাইল ফোন বের করুন, ফ্ল্যাশ লাইটটা জ্বালান, এইভাবে খেলোয়াড়দের অভিনন্দিত করুন। অনেক ধন্যবাদ। উত্তরাখণ্ডের ছেলে মেয়েদের এইভাবেই আমরা অভিনন্দিত করলাম। আমি আরও একবার দেবভূমির তরুণ তরুণীদের এবং এইসব খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানাই।  
 
বন্ধুগণ,  

আপনারা বসুন! আমি আপনাদের সকলের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। ভারতের খেলোয়াড়দের সরকার সব ধরণের সহযোগিতা করছে যাতে তাঁরা দেশে বিদেশে সাফল্যের নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারেন। সুষম খাদ্য, অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সরকার এর জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। এটা যেমন সত্যি আবার এর উল্টোটাও রয়েছে। সরকার খেলোয়াড়দের জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যর পরিবার এবং লক্ষ্য-ও আমার জন্য বিশেষ মিষ্টি নিয়ে আসে, যখনই সে কোনো প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে। খেলোয়াড়দের যাতে বেশি দূরে যেতে না হয় তার জন্য সরকার বিভিন্ন স্থানে খেলার মাঠ তৈরি করছে। আজও হলদোয়ানিতে একটি হকি খেলার মাঠ নির্মাণের জন্য শিলান্যাস করা করা হয়েছে, রুদ্রপুরে ভেলোড্রোম স্টেডিয়ামের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে। আমার তরুণ বন্ধুরা জোরে হাততালি দিন। এই কাজগুলো কিন্তু আপনাদের কথা ভেবেই করা হচ্ছে। উত্তরাখণ্ডের যুব সম্প্রদায় এর থেকে উপকৃত হবেন। জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় আমি ধামিজি এবং তার মন্ত্রিসভার সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানাই।  

আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যবৃন্দ, 

উত্তরাখণ্ডের প্রতিটি গ্রামে দেশের প্রহরীরা রয়েছেন। সাহসী মায়েরা তাঁদের সাহসী পুত্র সন্তানের জন্ম দেন যাঁরা আমার দেশকে রক্ষা করেন। তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এক পদ এক পেনশনের। আমাদের সরকার সেই দাবি পুরণ করেছে। এপর্যন্ত প্রাক্তন সেনানীদের এক পদ এক পেনশন প্রকল্পে ৭০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের ৭৫ হাজারের বেশি সেনা কর্মীদের পরিবার এর ফলে উপকৃত হয়েছেন। দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের উন্নয়ন আমাদের সরকারের আরেকটি অগ্রাধিকারের জায়গা। আজ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দ্রুত গতিতে নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। আপনাদের মনে হতেই পারে, আপনারা কি অন্যায় করেছিলেন যার জন্য পূর্ববর্তী সরকার এই কাজগুলো করেনি। আসলে ভুলটা আপনাদের নয়, পূর্ববর্তী সরকারগুলি সীমান্ত অঞ্চলের উন্নয়ন করতো না ভয়ের কারণে। তারা ভাবতো শত্রু পক্ষ এর সুযোগ নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে দেশের ভেতর ঢুকে পড়বে। তারা এই যুক্তিই দিতো। কিন্তু এখন নতুন ভারত এগিয়ে চলেছে। সে পূর্ববর্তী সরকারের আতঙ্কের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসেছে। আপনা ভয় পাইও না, মানুষকে ভয় দেখাইও না। আমরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অত্যাধুনিক সড়ক, সুড়ঙ্গ এবং সেতু নির্মাণ করে চলেছি। গত ৯ বছরে এই অঞ্চলে ৪ হাজার ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক পথ নির্মিত হয়েছে, ২৫০টি গুরুত্বপূর্ণ সেতু এবং ২২টি সুড়ঙ্গের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে, আজ এই অনুষ্ঠানে অনেক নতুন সেতুর শিলান্যাস করা হয়েছে। আর এখন আমরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছি। উত্তরাখণ্ডও এই পরিবর্তিত ভাবনা চিন্তার সুফল পাবে।

আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যবৃন্দ,

আগে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের গ্রামগুলিকে দেশের শেষ গ্রাম বলে বিবেচনা করা হতো। অর্থাৎ উন্নয়নের নিরিখে বলা যায়, এই অঞ্চলগুলিকে অগ্রাধিকারের তালিকার নীচে রাখা হতো। আমরা সেই পুরনো ভাবনাকে সরিয়ে এই গ্রামগুলিকে দেশের প্রথম গ্রাম বলে বিবেচনা করছি। সীমান্তবর্তী গ্রামে উন্নয়ন শুরু হয়েছে। ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ কর্মসূচির আওতায় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে উন্নয়ন চলছে। এই অঞ্চল থেকে যাঁরা চলে গেছিলেন তাঁরা যাতে আবার ফিরে আসেন, আমরা সেই উদ্যোগই নিয়েছি। এইসব গ্রামে পর্যটন এবং তীর্থযাত্রার প্রসার ঘটানো হচ্ছে। 

আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যবৃন্দ, 

একটি প্রবাদে বলা হয়, পার্বত্য অঞ্চলে জল এবং যুবশক্তিকে এই অঞ্চল ব্যবহার করতে পারে না। আমি এই ধারণাতে পরিবর্তন নিয়ে আসবো। আপনারা দেখেছেন অতীতের ভুল নীতির কারণে উত্তরাখণ্ডের বহু গ্রাম জনশূন্য হয়ে গিয়েছে। এই অঞ্চলে সড়ক, বিদ্যুৎ, জল, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থা, কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ ছিল না। ফলে সবাই নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। অনেক বন্ধুই আবার তাঁদের গ্রামে ফিরে আসছেন। এটা সম্ভব হয়েছে তার কারণ ডাবল ইঞ্জিন সরকার মানুষকে তাঁদের গ্রামে দ্রুত ফিরে আসতে সাহায্য করছে। আর তাই সড়ক, বিদ্যুৎ, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ এবং মোবাইল ফোনের টাওয়ারের জন্য প্রচুর বিনিয়োগ করা হচ্ছে। আজ এইসব প্রকল্পগুলির কাজ শুরু হয়েছে।

এই অঞ্চলে আপেল বাগিচা, ফলের বাগান এবং শাক-সব্জি চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে রাস্তা তৈরি হচ্ছে, জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, ফলে আমার কৃষক ভাই বোনেরা উৎসাহিত হচ্ছেন। আজ বহুমুখী উন্নয়নের পরিকল্পনা অনুসারে এখানে আপেল বাগিচার জন্য পলিহাউজ নির্মাণ প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলিতে ১১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। উত্তরাখণ্ডে আমাদের ক্ষুদ্র কৃষকদের এরফলে সুবিধা হবে। পিএম কিষান সম্মান নিধি যোজনায় রাজ্যের কৃষকরা ২২০০ কোটি টাকারও বেশি পেয়েছেন।  

বন্ধুগণ,  

বহু প্রজন্ম ধরে মোটা দানার শস্য – শ্রীঅন্ন উৎপাদন করা হয়। আমি যখন এখানে থাকতাম তখন আপনাদের সঙ্গে বহু সময় কাটিয়েছি। সেই সময় দেখেছি প্রত্যেক বাড়িতে মোটা দানার শস্য দিয়ে খাবার তৈরি করা হচ্ছে। আর এখন কেন্দ্রীয় সরকার চায় বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে মোটা দানার শস্যকে পৌঁছে দিতে। একারণে দেশজুড়ে এক অভিযানের সূচনা হয়েছে। এই উদ্যোগগুলির ফলে উত্তরাখণ্ডের ক্ষুদ্র কৃষকরা উপকৃত হবেন। 

আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যবৃন্দ, 

আমাদের মা ও বোনেদের সবরকমের কষ্ট দূর করতে, সমস্যা দূর করতে আমাদের সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। আর তাই দরিদ্র বোনেদের জন্য বর্তমান সরকার পাকা বাড়ির ব্যবস্থা করছে। আমরা আমাদের বোন এবং মেয়েদের জন্য শৌচালয় নির্মাণ করছি, তাঁদের কাছে রান্নার গ্যাস পৌঁছে দিচ্ছি, তাঁদের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ব্যবস্থা করছি এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছি। আজও বিনামূল্যে রেশন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে যাতে দরিদ্র মানুষরা অভুক্ত না থাকেন। 

হর ঘর যোজনায় উত্তরাখণ্ডের ১১ লক্ষ পরিবারের বোন বর্তমানে নলবাহিত পানীয় জল পাচ্ছেন। এখন তাঁদের জন্য আরেকটি কাজ শুরু হয়েছে। এবছর লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমি ঘোষণা করেছিলাম, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের জন্য ড্রোনের ব্যবস্থা করবো। এই ড্রোন কীটনাশক, সার, বীজ সহ কৃষি ক্ষেত্রের নানা কাজে ব্যবহার করা হবে। এই ড্রোনের সাহায্যে উৎপাদিত ফল-মূল ও তরিতরকারি নিকটবর্তী বাজারে নিয়ে যাওয়া হবে। ড্রোনের মাধ্যমে সহজে পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ওষুধও পৌঁছে দেওয়া যাবে। এভাবে মহিলা পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি উত্তরাখণ্ডকে আধুনিকতার এক নতুন উচ্চতায় এগিয়ে নিয়ে যাবে। 

আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যবৃন্দ,

উত্তরাখণ্ডের প্রতিটি গ্রামে গঙ্গা ও গঙ্গোত্রী রয়েছে। ভগবান শিব এবং নন্দ তুষারাবৃত শৈলচুড়ায় বসবাস করেন। এই রাজ্যের মেলা, কাঔথিগ, থাউল, সঙ্গীত ও খাদ্য সম্ভারের অনন্য ভান্ডার রয়েছে। এই অঞ্চল পান্ডবনৃত্য, ছোলিয়ানৃত্য, মঙ্গলগীত, ফুল দেই উৎসব, হারেলা, বাগওয়াল এবং রামমানের মতো সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উপাদানে ভরপুর। পল্লি অঞ্চলের রোট, আরসে, ঝাঙ্গোরের ক্ষির, কাফুলি, পকৌরা, রায়তা, আলমোড়া বাল মিঠাই এবং সিঙ্গোরির স্বাদ কে ভুলতে পারে বলুন। আর আমার কালিগঙ্গার এই ভূমির সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। যেমন রয়েছে চম্পাবৎ-এর অদ্বৈত আশ্রমের সঙ্গে। আমার জীবনের এগুলি এক একটি অধ্যায়।  

এই অঞ্চলে আসলেই অনেক স্মৃতি ভীড় জমায়। এই পবিত্র ভূমিতে আমি আরও বেশি সময় কাটাতে চাই। কিন্তু কাল দিল্লিতে জি২০ –র একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন রয়েছে। জি২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সংসদের অধ্যক্ষদের সম্মেলন হবে। সে কারণে আমি চম্পাবৎ-এর অদ্বৈত আশ্রমে যেতে পারছি না। ঈশ্বর যেন আমাকে সেখানে যাওয়ার সুযোগ খুব শীঘ্রই করে দেন। 

আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যবৃন্দ,

ডাবল ইঞ্জিন সরকারের উদ্যোগে উত্তরাখণ্ডে পর্যটন এবং তীর্থ ক্ষেত্রের উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। তার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। এবছর উত্তরাখণ্ডের চারধাম যাত্রায় ৫০ লক্ষ বেশি তীর্থযাত্রী এসেছেন। এটি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বাবা কেদারের আশীর্বাদে কেদারনাথ ধামের পুনর্নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শ্রী বদ্রিনাথ ধামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। কেদারনাথ ধাম এবং শ্রী হেমকুন্ড সাহিবের রোপওয়ের কাজ শেষ হলেই ভিন্নভাবে সক্ষম এবং প্রবীণ তীর্থযাত্রীরা উপকৃত হবেন। কেদারখন্ডের পাশাপাশি মানসখন্ডকেও উন্নত করে তুলতে আমাদের সরকার উদ্যোগী হয়েছে। আমরা কেদারখণ্ড এবং মানসখন্ডের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে কাজ করছি। যাঁরা কেদারনাথ এবং বদ্রিনাথ দর্শন করবেন তাঁরা যাতে যোগেশ্বর ধাম, আদি কৈলাশ এবং ওম পর্বত খুব সহজেই যেতে পারেন সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মানসখন্ড মন্দির মেলা মিশনের আওতায় কুমায়ুন অঞ্চলের বহু মন্দিরে আগামী দিনে সহজেই পৌঁছনো যাবে। 

আমি দেখেছি যাঁরা বদ্রিনাথ এবং কেদারনাথে আসেন তাঁরা অনেকেই এই অঞ্চল সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না। আজ সবাই যখন টিভি-তে দেখছেন মোদী এই জায়গাগুলি দর্শন করছেন, তখন তাঁরা ভাবেন তাহলে এই জায়গারও নিশ্চই কোনো মাহাত্ম্য রয়েছে। বন্ধুরা আপনারা প্রস্তুত থাকুন, আগামী দিনে এই অঞ্চলেও প্রচুর দর্শনার্থী আসবেন। মানসখন্ডে বহু মানুষ আসবেন।  

বন্ধুগণ, 

উত্তরাখণ্ডে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানোর ফলে এই অঞ্চলের উন্নয়ন এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। চারধাম মহাপরিযোজনা এবং সারা বছরের ব্যবহারযোগ্য সড়ক পথের সুফল আপনারা পাচ্ছেন। হৃষিকেশ-কর্ণপ্রয়াগ রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হলে গোটা অঞ্চলে বিপুল পরিবর্তন আসবে। উড়ান প্রকল্পের আওতায় সমগ্র অঞ্চলে ব্যয় সাশ্রয়ী বিমান পরিষেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আজ বাগেশ্বর থেকে কানালিচিন্না, গঙ্গোলিহাট থেকে আলমোড়া এবং টনকপুর ঘাট থেকে পিথোড়াগড় পর্যন্ত সড়ক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের যেমন সুবিধা হবে পাশাপাশি পর্যটন শিল্পেরও নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হবে। সরকার এই অঞ্চলে হোম স্টেতে উৎসাহ দেওয়ার ফলে পর্যটন শিল্পে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে অথচ এক্ষেত্রে কম পুঁজি লাগবে। আজ সারা বিশ্ব ভারতে আসতে চায়, ভারতকে জানতে চায় তাই পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে। আর যাঁরা ভারতে আসবেন, তাঁদের ভারত সফর উত্তরাখণ্ডে না আসলে সম্পূর্ণ হবে না।   

আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যবৃন্দ,

আমি জানি অতীতে উত্তরাখণ্ড বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। আমরা আমাদের প্রিয় জনেদের হারিয়েছি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলায় আমাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। আর তাই আগামী ৪-৫ বছরে এইখাতে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এর ফলে বিপর্যয়ের সময়ে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ দ্রুত শুরু করা সম্ভব হবে। 

আমার পরিবারের প্রিয় সদস্যবৃন্দ,

ভারতের অমৃতকাল চলছে। অমৃতকালের এই সময়ে দেশের প্রতিটি অঞ্চল সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। বাবা কেদার, বদ্রি বিশাল এবং আদি কৈলাশের আশীর্বাদে আমাদের সকল সংকল্প যে পূরণ হবে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। আরও একবার আপনাদের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই! সত্যি বলতে কি আমার মনের ভাব আমি মুখে প্রকাশ করতে পারছি না। হেলিকপ্টার থেকে নেমে আমি ৭ কিলোমিটার পথ এসেছি। আমি দেখেছি কোনো মনুষ্য শৃঙ্খল নয়, এই ৭ কিলোমিটার পথে মনুষ্য প্রাচীর তৈরি হয়েছে। মনে হচ্ছিল যেন পরিবারের কোনো উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। পবিত্র উৎসবের সময় সকলে যেমন নতুন নতুন পোষাক পরেন, সেই পোষাক তাঁরা পরে আছেন। মায়েরা আরতির মাধ্যমে ফুল ছুড়ে আশীর্বাদ করছেন। আমি আপ্লুত হয়ে পড়েছি। আজ মানসখন্ড আমাকে যে ভালোবাসা দেখিয়েছে তার জন্য পিথোড়াগড়ের মানুষকে এবং সমগ্র অঞ্চলের মানুষকে আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।   

আরও একবার আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাই। দু হাত তুলে জোর গলায় আমার সঙ্গে বলুন

ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!

ভারত মাতা কি জয়!

অনেক অনেক ধন্যবাদ

(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে ছিল)

PG/CB/SKD



(Release ID: 1974620) Visitor Counter : 99