প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ভারতের নাগাপট্টিনাম এবং শ্রীলঙ্কার কঙ্কেসানথুরাইয়ের মধ্যে ফেরি সার্ভিসের আজ সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী

এর মধ্য দিয়ে দুটি দেশই কূটনৈতিক তথা অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে চলেছে বলে উল্লেখ করলেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী

এই ফেরি সার্ভিসের মধ্য দিয়ে দু’দেশের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কে আবার নতুন প্রাণসঞ্চার ঘটবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 14 OCT 2023 8:58AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩

 

ভারতের নাগাপট্টিনাম এবং শ্রীলঙ্কার কঙ্কেসানথুরাইয়ের মধ্যে আজ ফেরি সার্ভিসের সূচনা হল। এই পরিষেবার আনুষ্ঠানিক সূচনা করে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন যে ভারত ও শ্রীলঙ্কা বর্তমানে কূটনৈতিক তথা অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক বিশেষ সময়কালে উপনীত। দু’দেশের মধ্যে এই ফেরি সার্ভিসের সূচনা পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তুলবে বলে তিনি মনে করেন।

এই উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে ভাষণদানকালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সুপ্রাচীন বাণিজ্য, সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ইতিহাসের অবতারণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, নাগাপট্টিনাম এবং তার নিকটস্থ শহরগুলি শ্রীলঙ্কা সহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নৌ-বাণিজ্যের সূত্রেই সুপরিচিত। এমনকি, প্রাচীন তামিল সাহিত্যেও ঐতিহাসিক পুম্পুহার বন্দরের উল্লেখ রয়েছে। এই প্রসঙ্গে পাত্তিনাপালাই ও মণিমেকালাইয়ের মতো প্রাচীন সাহিত্যের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই সাহিত্যে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে নৌ-চলাচলের বিশদ বর্ণনাও রয়েছে। বিশিষ্ট কবি সুব্রহ্মনিয়া ভারতীর ‘সিন্ধু নধিইন মিসাই’ গানটির কথাও উল্লেখ করেন এই প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ঐ সঙ্গীত রচনার মধ্যে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সেতুবন্ধনের বর্ণনা রয়েছে। সেই অর্থে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ফেরি সার্ভিসের সূচনা ঐতিহাসিক তথা সাংস্কৃতিক সেই সম্পর্ককেই আরও একবার আমাদের সামনে জীবন্ত করে তুলেছে। 

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বিক্রমসিঙ্ঘের সাম্প্রতিক ভারত সফরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক নিবিড় সম্পর্কের বাতাবরণ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে যৌথ অংশীদারিত্বের এক খসড়াও ঐ সময় প্রস্তুত করা হয়। দু’দেশের মধ্যে সংযোগ বলতে শুধুমাত্র দুটি শহরকে পরস্পরের আরও কাছে নিয়ে আসা মাত্র নয়, একইসঙ্গে তা দুটি দেশ তথা দু’দেশের জনসাধারণের হৃদয়কেও পরস্পরের আরও নিবিড় সান্নিধ্যে নিয়ে আসা। সংযোগের এই প্রসারের মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য, পর্যটন এবং সুনাগরিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে চলেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এর ফলে দু’দেশের যুব সমাজই বিশেষভাবে উপকৃত হবে। কারণ, তাঁদের জন্য গড়ে উঠবে নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা।

২০১৫ সালে তাঁর শ্রীলঙ্কা সফরের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন যে ঐ সময় দিল্লি ও কলম্বোর মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবার সূচনা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, শ্রীলঙ্কা থেকে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণ কুশিনগরের মতো একটি তীর্থক্ষেত্রও স্পর্শ করেছিল। এই উপলক্ষটি ছিল দু’দেশের মধ্যে এক বিশেষ উদযাপনের মুহূর্ত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চেন্নাই ও জাফনার মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হয় ২০১৯ সালে। তাই, নাগাপট্টিনাম এবং কঙ্কেসানথুরাইয়ের মধ্যে ফেরি সার্ভিসের সূচনার মধ্য দিয়ে দুটি দেশ সুসম্পর্কের এক নতুন পর্বে প্রবেশ করতে চলেছে। 

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বিশেষ জোর দিয়ে বলেন যে আমাদের এই সংযোগ ও যোগাযোগের প্রসার শুধুমাত্র পরিবহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সম্পর্কের প্রসার ঘটেছে ফিনটেক এবং শক্তি তথা জ্বালানি ক্ষেত্রেও। ইউপিআই ব্যবস্থার কল্যাণে ডিজিটাল লেনদেন বর্তমানে ভারতে এক জন-আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। তাই, ইউপিআই এবং লঙ্কা পে – এই দুটিকে যুক্ত করতে দু’দেশের সরকারই বিশেষভাবে কাজ করে চলেছে। জ্বালানি ক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রসারে দু’দেশ বিশেষভাবে সচেষ্ট রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জ্বালানি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ভারত ও শ্রীলঙ্কা – এই দুটি দেশের উন্নয়নের যাত্রাপথে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। 

অগ্রগতি ও উন্নয়ন ভারত ও শ্রীলঙ্কার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মতে, দু’দেশের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গী হল উন্নয়নের সুফল প্রত্যেকের কাছেই পৌঁছে দেওয়া। 

শ্রী মোদী বলেন, ভারতের সহায়তায় শ্রীলঙ্কায় যে সমস্ত প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে এবং হয়েছে তা দু’দেশের জনগণের হৃদয়কেই স্পর্শ করতে পেরেছে। বাসস্থান নির্মাণ, জল সরবরাহ, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং জীবিকা উপার্জনের ক্ষেত্রে যে প্রকল্পগুলির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল, তা ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কার নর্দান প্রভিন্স-এ সম্পূর্ণ হয়েছে। কঙ্কেসানথুরাই বন্দরের উন্নয়নের কাজে ভারত সাহায্য ও সহায়তা করার সুযোগ পেয়ে বিশেষ আনন্দিত বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত রেল লাইনগুলির সংস্কার ও পুনরুদ্ধার তথা জাফনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ প্রচেষ্টা – সবক’টি ক্ষেত্রেই ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, শ্রীলঙ্কার সর্বত্র আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাও ভারত পৌঁছে দিতে পেরেছে। ডিক ওয়া-য় একটি মাল্টি-স্পেশালিটি হাসপাতালও গড়ে তোলা হয়েছে। এইভাবেই সকলকে সঙ্গে নিয়ে সকলের বিশ্বাস এবং প্রচেষ্টাকে সম্বল করে সার্বিক কল্যাণের পথে ভারত এগিয়ে চলেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ভারতে সদ্য সমাপ্ত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের প্রসঙ্গটিও এদিন স্পর্শ করে যায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, ভারতের আদর্শই হল ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ যা আজ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই আদর্শ আমাদের পথ দেখিয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকালে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডরের সূচনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এটি হল একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ ও যোগাযোগের করিডর যা সমগ্র অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ব্যাপক জোয়ার নিয়ে আসতে পারে। শ্রীলঙ্কার জনসাধারণও এর সুফল থেকে বঞ্চিত থাকবেন না। কারণ, দু’দেশের মধ্যে বিভিন্নভাবে সংযোগ ও যোগাযোগের প্রসার ঘটাতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।

আজ এই সফল ফেরি সার্ভিসের সূচনার জন্য শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট, ঐ দেশের সরকার এবং জনসাধারণের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে রামেশ্বরম এবং তালাইমান্নারের মধ্যে ফেরি সার্ভিসটির পুনরুদ্ধারের জন্য দুটি দেশই নিবিড় সহযোগিতার মধ্য দিয়ে কাজ করে চলেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারত শ্রীলঙ্কার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কারণ, আমাদের লক্ষ্য হল দু’দেশের জনসাধারণের পারস্পরিক কল্যাণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তোলা। 


PG/SKD/DM



(Release ID: 1967806) Visitor Counter : 67