প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

রাজস্থানের নাথদ্বারে ৫,৫০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের পরিকাঠামো প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী


রাজসামান্দ ও উদয়পুরে দুই লেনবিশিষ্ট সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

উদয়পুর রেল স্টেশনের পুনরুন্নয়ন এবং গেজ পরিবর্তন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

তিনটি জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের উদ্বোধন

Posted On: 10 MAY 2023 1:43PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১০ মে, ২০২৩


প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ রাজস্থানের নাথদ্বারে ৫,৫০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের পরিকাঠামো প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং তা জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। এই এলাকার পরিকাঠামো এবং সংযোগ ব্যবস্থাকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যে এইসব উন্নয়ন প্রকল্প রেলপথ এবং সড়ক পথে পণ্য পরিবহণ ও যাতায়াতকে আরও মসৃণ করে তুলবে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে এবং এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক বিকাশ সম্ভব হবে।

সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মেওয়ারে ভগবান শ্রীনাথ-এর ভূমিতে আসতে পারার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। দিনের শুরুতে নাথদ্বারে শ্রীনাথজি মন্দিরে পুজো ও দর্শনের কথা স্মরণ করে ‘আজাদি কা অমৃতকাল’-এ ‘বিকশিত ভারত’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাঁর আশীর্বাদ পাথেয় হবে বলে তিনি জানান।

যে সমস্ত প্রকল্পের আজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন হল তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইসব প্রকল্পগুলির মধ্য দিয়ে রাজস্থানের সংযোগ ব্যবস্থা আরও বেশি প্রসারিত হবে। জাতীয় মহাসড়কের উদয়পুর-শামলাজি সেকশনকে ছ’লেনে রূপান্তরিত করায় উদয়পুর, দুঙ্গারপুর এবং বাঁশওয়ারা অঞ্চলের প্রভূত উন্নতি হবে। ২৫ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের বিলারা-যোধপুর সেকশন যোধপুর থেকে সীমান্ত এলাকায় যাওয়া অনেক সহজ করে দেবে। জয়পুর থেকে যোধপুরের মধ্যে যাত্রার সময় তিন ঘন্টা কমে যাবে। কুম্ভলগড় এবং হলদি ঘাটির মতো বিশ্ব ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানে যাওয়া অনেক সহজ হবে। নাথদ্বার থেকে নতুন রেললাইন মেওয়ার এবং মারওয়ারকে যুক্ত করবে। এর ফলে মার্বেল, গ্র্যানাইট এবং খনি শিল্পক্ষেত্র প্রভূত উপকৃত হবে তিনি জানান।

রাজস্থানকে দেশের সর্ববৃহৎ রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার মনে করে রাষ্ট্রের বিকাশের জন্য রাজ্যের বিকাশ জরুরি। তিনি বলেন, এই রাজ্য দেশের বীরত্ব, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গরিমা বহন করে আসছে। তিনি বলেন, দেশে দ্রুতগতির বিকাশ হার রাজস্থানের বিকাশের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এ রাজ্যে আধুনিক পরিকাঠামোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। আধুনিক পরিকাঠামো কেবল রেলপথ ও সড়ক পথে সীমাবদ্ধ নয়, শহর এবং গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ সম্প্রসারণের সঙ্গেও তা যুক্ত বলে তিনি জানান। সমাজে বিভিন্ন সুবিধার প্রসার লাভের ক্ষেত্রেও তা সম্পর্কিত। ডিজিটাল সংযোগ ব্যবস্থার ফলে তা মানুষের জীবনে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসবে। শ্রী মোদী আরও বলেন, আধুনিক পরিকাঠামো কেবলমাত্র এখানকার ঐতিহ্যের প্রসার ঘটাবে তাই নয়, উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তা সক্রিয় শক্তি প্রদান করবে। তিনি বলেন, আগামী ২৫ বছর ‘বিকশিত ভারত’-এর সঙ্কল্প পূরণে আধুনিক পরিকাঠামো এক শক্তি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। দেশের সম্ভাব্য সমস্ত রকম পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব বিনিয়োগ হচ্ছে যার ফলে সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার পরিকাঠামো ক্ষেত্রে – তা রেলপথ, বিমানপথ বা মহাসড়ক যাই-ই হোক না কেন, হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। বাজেটে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ১০ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের সংস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে যদি এই পরিমাণ বিনিয়োগ হয় তাহলে তা নিঃসন্দেহে এলাকার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ক্ষেত্রের উন্নতিসাধন করবে। তিনি বলেন, ভারত সরকারের এই সমস্ত প্রকল্প অর্থনীতিকে নতুন শক্তি যোগাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন যে দেশে নেতিবাচক প্রচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নেতিবাচকরা আটা এবং ডাটা, সড়ক ও উপগ্রহের মধ্যে অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, বুনিয়াদি সুবিধার পাশাপাশি আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলাও অনুরূপ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ভোটের রাজনীতি করে দেশের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করা অসম্ভব। স্বল্প সম্পদ সৃষ্টির স্বল্পমেয়াদি চিন্তার হীনতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন যে নতুন নতুন চাহিদা দ্রুত পূরণের ক্ষেত্রে তা অসমর্থ থেকে যাবে। এই জাতীয় চিন্তাভাবনা পরিকাঠামো ক্ষেত্রকে অবহেলা করে যার ফলে দেশকে চরম মূল্য দিতে হয়।

দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে দূরদর্শী এই দৃষ্টিভঙ্গির অভাবের ফলে রাজস্থানকে প্রভূত ভুগতে হয়েছে বলে জানান শ্রী মোদী। তিনি বলেন, মানুষের যে সমস্ত অসুবিধা ভোগ করতে হচ্ছে তা কেবল এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, কৃষি, ব্যবসা, শিল্প – সবকিছুর ওপরই এর প্রভাব পড়ছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’র কাজ শুরু হয়েছে ২০০০ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে। ২০১৪ পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৮০ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মিত হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। সেই তুলনায় বর্তমান সরকারের আমলে গত ৯ বছরেই প্রায় ৩.৫ লক্ষ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে ৭০ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক তৈরি হয়েছে রাজস্থানের গ্রামাঞ্চলে। তিনি বলেন, আজ দেশের বেশিরভাগ গ্রামই পাকা সড়ক দ্বারা সংযুক্ত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার গ্রামে সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি শহরগুলিকে আধুনিক মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করছে। জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণের কাজ ২০১৪-র পূর্ববর্তী সময়কালের তুলনায় দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে চলেছে। এক্ষেত্রে তিনি দৌসায় দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ের একটি সেকশনকে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করার কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের ভারত উচ্চাকাঙ্ক্ষী। অনেক কম সময়ে মানুষ অনেক বেশি সুবিধা পেতে চাইছেন। দেশের এবং রাজস্থানের মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ আমাদের দায়িত্ব বলে তিনি জানান। সাধারণ নাগরিকদের জীবনে রেলের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহুবিধ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে রেল ব্যবস্থাকে আধুনিক করে তোলা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে আধুনিক ট্রেন, রেল স্টেশন এবং রেললাইন। তিনি বলেন, রাজস্থান ইতিমধ্যেই তার প্রথম বন্দে ভারত ট্রেন পেয়েছে। মাভলি-মারওয়ার বিভাগে গেজ পরিবর্তন এবং আমেদাবাদ ও উদয়পুর রুটকে ব্রডগেজে রূপান্তর করার চাহিদাও পূর্ণ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রহরীবিহীন রেল গেট উঠিয়ে দেওয়ার পর সরকার এখন দেশের সার্বিক রেল নেটওয়ার্ককে বৈদ্যুতিকরণ করে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। তিনি জানান, দেশের কয়েকশ’ রেল স্টেশনের আধুনিকীকরণের কাজের মতো উদয়পুর রেল স্টেশনকেও আধুনিক করে তোলার কাজ চলছে। সেইসঙ্গে, যাত্রী পরিবহণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রেনের জন্য ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর তৈরি করা হচ্ছে। তিনি জানান, ২০১৪-র তুলনায় রেল বাজেটে রাজস্থানের জন্য বরাদ্দ ১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজস্থানে রেল নেটওয়ার্কের ৭৫ শতাংশেরই বৈদ্যুতিকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং দুঙ্গারপুর, উদয়পুর, চিত্তোর, পালি, সিরোহি এবং রাজসামান্দের মতো জেলাগুলি ডবল লাইনের সুবিধা ভোগ করছে। শ্রী মোদী বলেন, সেদিন আর দূরে নেই যখন রাজস্থানের ১০০ শতাংশ রেলপথই বৈদ্যুতিকরণ হয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী সম্প্রারিত এই যোগাযোগ ব্যবস্থায় পর্যটন এবং রাজস্থানের বিভিন্ন তীর্থস্থানের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। মহারানা প্রতাপের অসীম বিক্রমের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে ভামাশাহ-এর উদারতা এবং বীর পান্না দাই-এর কথাও বলেন তিনি। শ্রী মোদী বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের ঐতিহ্য রক্ষার কাজে সরকার সক্রিয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন তীর্থস্থানকে সংযুক্ত করা হচ্ছে। রাজস্থানে গোবিন্দ দেবজি, খাতু শ্যামজি এবং শ্রীনাথজির দর্শনকে সহজ করে তুলতে কৃষ্ণ সার্কিটকে নতুনভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। সেবার মনোভাব নিয়ে সরকার কাজ করে চলেছে। সরকারের অগ্রাধিকার হল সাধারণ মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বিধান – একথা বলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শেষ করেন।

অনুষ্ঠানে রাজস্থানের রাজ্যপাল শ্রী কলরাজ মিশ্র, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী অশোক গেহলট, সাংসদগণ ও রাজস্থান সরকারের মন্ত্রীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।


PG/AB/DM/



(Release ID: 1924528) Visitor Counter : 107