প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

ভারতের রাজ্যগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের ‘চিন্তন শিবির’ – এ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 28 OCT 2022 6:33PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৮ অক্টোবর, ২০২২

নমস্কার!

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী শ্রী অমিত শাহ, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, রাজ্যগুলির পুলিশ মহানির্দেশক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকগণ, অন্যান্য সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ! দেশে এখন উৎসবের আবহ। ওনম, ঈদ, দশেরা, দুর্গাপূজা, দীপাবলি সহ অনেক উৎসব দেশবাসী শান্তি ও সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে উদযাপন করেছেন। ছট পূজা সহ আরও অনেক উৎসব এখনও রয়েছে। নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও এসব উৎসবে দেশের ঐক্যকে সুদৃঢ় করা আপনাদের প্রস্তুতিরই প্রতিফলন। সংবিধানে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব রাজ্যের হলেও দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতার সঙ্গে রাজ্যগুলি সমানভাবে জড়িত। সুরজকুণ্ডে আয়োজিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের এই চিন্তন শিবিরটিও  যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এক্ষেত্রে প্রতিটি রাজ্যের পরস্পরের কাছ থেকে শেখা উচিৎ, একে অপরের থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া উচিৎ, দেশের উন্নতির জন্য একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা উচিত, এটিই সংবিধানের ভাবনা এবং তা সুনিশ্চিত করা দেশবাসীর প্রতি আমাদের দায়িত্বও।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার অমৃতকাল আমাদের সামনে। আগামী ২৫ বছর ধরে দেশে অমৃত প্রজন্ম গড়তে হবে। পাঁচটি শপথের সংকল্পকে আত্মস্থ করেএই অমৃত প্রজন্ম তৈরি হবে । একটি উন্নত ভারত গড়ে তোলা, দাসত্বের প্রতিটি চিন্তা থেকে মুক্তি, ঐতিহ্যের গর্ব, ঐক্য ও সংহতি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক কর্তব্য; আপনারা সবাই ভাল করেই জানেন, এই পাঁচটি শপথের গুরুত্ব বোঝেন। এটি একটি বিশাল সংকল্প, যা শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র সকলের প্রচেষ্টায় পূর্ণ হতে পারে। পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে, পথ, অগ্রাধিকার ভিন্ন হতে পারে, তবু দেশের প্রতিটি রাজ্যে এই পঞ্চপ্রাণ আমাদের শাসনের অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত। যখন এগুলো সুশাসনের মূলে থাকবে, তখন ভারতের সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হবে। যখন দেশের শক্তি বাড়বে, তখন দেশের প্রত্যেক নাগরিকের, প্রতিটি পরিবারের শক্তি বাড়বে। এটাই সুশাসন, যার সুফল পৌঁছবে দেশের প্রতিটি রাজ্যের শেষ প্রান্তে থাকা মানুষের কাছে। এতে আপনাদের সকলের বড় ভূমিকা রয়েছে।

বন্ধুগণ,

এখানে আপনারা অধিকাংশই হয় রাজ্যের নেতৃত্বে রয়েছেন, নয়তো সরাসরি আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার দ্বায়িত্ব পালন করছেন। আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে রাজ্যের উন্নয়ন প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। অতএব, রাজ্যের উন্নয়নের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে আপনাদের সিদ্ধান্ত এবং নীতি আর আপনার অনুশীলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বন্ধুগণ,

সমগ্র আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা নির্ভরযোগ্য হওয়া, জনগণের মধ্যে তাদের ধারণা কী, এটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা দেখেছেন, যখনই কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে, তখন সেই দিনগুলিতে এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ –এর জওয়ানদের তৎপরতা জনমনে তাঁদের স্বাক্ষর রেখে যায়। তাঁদের ইউনিফর্ম, তাঁরা সংকটের সময় আগেই পৌঁছে যান -  এসব কারণে দেশবাসীর মনে একটা বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে ভাই, তাঁরা এসে গেছেন, তাঁরা পরিস্থিতি সামলে নেবেন, তাঁরা যা বলছেন তা  আমাদের বিশ্বাস করা উচিত। তাঁদের কথা মেনে নিলে আমাদের ক্ষতি কম হবে। আর আপনারা দেখুন, এনডিআরএফ - এ কে আছেন? এসডিআরএফ-এ কারা আছেন?  আপনাদের  আপনজনেরাই আছেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলির সদস্যরা আছেন। কিন্তু সমাজে তাঁদের জন্য অনেক সম্মান রয়েছে। দুর্যোগের সময় এনডিআরএফ -এসডিআরএফ দল পৌঁছানোর সাথে সাথেই মানুষ সন্তুষ্ট বোধ করেন যে, এখন বিশেষজ্ঞ দল পৌঁছেছে, এখন তাঁরা তাঁদের কাজ করবেন।

বন্ধুগণ,

যে কোনো অপরাধের জায়গায় পুলিশ পৌঁছনো মাত্রই সরকার পৌঁছে গেছে বলে জনগণের মধ্যে অনুভূতি তৈরি হয়। এমনকি, করোনার সময়েও আমরা দেখেছি যে, পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা উন্নত হয়েছে। পুলিশ কর্মীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে অসহায়দের সাহায্য করছিলেন, প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহ করছিলেন। অর্থাৎ, কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠার কোনও খামতি না রেখে মনের মধ্যে শুভচেতনা, ভালো উপলব্ধিও রাখতে হবে। এর জন্য পুলিশ বাহিনীকে উদ্বুদ্ধ করা, পরিকল্পনা করা, প্রতিটি ছোটখাটো বিষয়ে প্রতিনিয়ত পথ দেখানো, কিছু ভুল হলে থামানো – এসব প্রক্রিয়াই আমাদের উপর থেকে নিচে – সর্বস্তরে পালন করা উচিৎ।

বন্ধুগণ,

আমাদের আরও একটি জিনিস বুঝতে হবে। এখন আইন-শৃঙ্খলা আর কোনও এক রাজ্যের আওতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ব্যবস্থা নয়। এখন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। অর্থাৎ, প্রযুক্তির সাহায্যে এক রাজ্যে বসে থাকা অপরাধীরা অন্য রাজ্যে ভয়ঙ্কর অপরাধ সংঘটিত করার ক্ষমতা রাখে। দেশের সীমানার বাইরে বসে থাকা অপরাধীরাও প্রযুক্তির অপব্যবহার করে আঘাত হানছে। তাই, প্রতিটি রাজ্যের সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয়, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আপনারা জানেন যে, আমি ডিজিপি সম্মেলনে বলেছিলাম, প্রত্যেক সংলগ্ন রাজ্য, সংলগ্ন জেলার ক্ষেত্রে পরস্পরের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে পর্যায়ক্রমে একসঙ্গে বসে উভয় রাজ্যের উভয় জেলার সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের জন্য একসাথে কাজ করা উচিৎ। এর থেকেই উপায় বের হবে। কখনও কখনও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে একাধিক রাজ্যে একযোগে তদন্ত করতে হয়, অন্য দেশেও যেতে হয়। সেজন্য, প্রতিটি রাজ্যের দায়িত্ব হল,  রাজ্যের একটি সংস্থা তদন্ত করুক, কিংবা কেন্দ্রের কোনও সংস্থা, পার্শ্ববর্তী বা অন্য কোনও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সংস্থা; প্রত্যেকেই যেন পরস্পরকে পূর্ণ সহযোগিতা করেন তা দেখতে হবে। কেউ বড়, কেউ ছোট, কার অধিকার আছে; মাঝে মাঝে দেখি একটাও এফআইআর  নথিভুক্ত হয়নি! কেন হয়নি? কারণ, তখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি যে অপরাধের জায়গাটা কোন থানায় আওতায় পড়ে। এই সমস্যা শুধু থানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, রাজ্যগুলির মধ্যেও রয়েছে, কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে রয়েছে, দেশ এবং বিদেশের মধ্যে আছে। অতএব, আমাদের দক্ষতার খাতিরে, দ্রুত অপরাধের গোড়ায় পৌঁছুতে ও আমাদের সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে, আমাদের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা অত্যন্ত অপরিহার্য। সেজন্য সমন্বয় ও সহযোগিতা যত বাড়বে, আপনার রাজ্যের শক্তিও তত বাড়বে।

বন্ধুগণ,

সাইবার ক্রাইম হোক বা অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার করতে আমাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। এখন দেখুন আমরা ফাইভ-জি’র যুগে প্রবেশ করেছি, ফাইভ-জি দ্রুত পৌঁছাতে চলেছে। এখন ফাইভ –জি’র যত সুবিধা আছে, ততটা সচেতনতারও দরকার হবে। ফাইভ-জি ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি, স্বয়ংক্রিয় নম্বর-প্লেট শনাক্তকরণ প্রযুক্তি, ড্রোন এবং সিসিটিভি  প্রযুক্তির কর্মক্ষমতা বহুগুণ উন্নত করতে চলেছে। কিন্তু আমরা যত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি, অপরাধের বিশ্বেও তেমনি  বিশ্বায়ন হয়ে গেছে। তারাও সমানভাবে অগ্রসর হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে তারা এগিয়ে আছে। তাই আমাদের এখন তাদের থেকে দশ ধাপ এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের আইন –শৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে স্মার্ট করার জন্য আমাদেরকে অত্যন্ত তৎপরতার সাথে কাজ করতে হবে।

বন্ধুগণ,

আমারও অনুরোধ, প্রযুক্তিকে বাজেটের দাঁড়িপাল্লা দিয়ে ওজন করবেন না। আমি সকল শ্রদ্ধেয় মুখ্যমন্ত্রী ও সকল শ্রদ্ধেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের কাছে এই বিষয়ে একটি টিম তৈরি করার আবেদন রাখছি। বিশ্বের কোন কোন প্রযুক্তিতে অপরাধ জগত এগিয়ে আছে, কোন আধুনিক প্রযুক্তি কীভাবে আমাদের জনগণকে নিরাপত্তা দিতে পারে, তা আমাদের মিলেমিশে  গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করতে হবে, আর এতে যে বাজেট বরাদ্দ হবে, তা দেখবেন অনেকগুণ খরচ বাঁচানোর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর সে কারণেই প্রযুক্তির আরও ভালো ব্যবহার শুধু পুরো পুলিশ ব্যবস্থাকেই শক্তিশালী করে না, সাধারণ মানুষকে রক্ষা করাটাও সুনিশ্চিত করে। আধুনিক প্রযুক্তি অপরাধ প্রতিরোধে এবং অপরাধ শনাক্তকরণেও সহায়তা করে, এটি অপরাধ তদন্তেও খুব কার্যকর। আজ দেখুন, সিসিটিভির কারণে কত অপরাধী ধরা পড়ছে। স্মার্ট সিটি ক্যাম্পেইনের আওতায় শহরগুলোতে তৈরি করা হয়েছে, আধুনিক কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেমও অনেক কাজে লাগছে।

বন্ধুগণ,

এই ধরনের নতুন প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পুলিশ প্রযুক্তি মিশনও শুরু করেছে। অনেক রাজ্যও তাদের মতো করে কাজ করছে। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে যে, আমাদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে আমাদের প্রযুক্তি একে অপরের সঙ্গে খাপ খায় না, এবং তাই আমাদের শক্তির অপচয় হয়। প্রযুক্তি যাই হোক না কেন, তার ব্যবহার সেই রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সেজন্যেই আমাদের ‘কমন প্ল্যাটফর্ম’ বা যৌথ মঞ্চ তৈরি করে নিয়ে বড় মন দিয়ে ভাবতে হবে। যদি কারো কাছে খুব ভালো প্রযুক্তি বা উপায় থাকে, তবে এটা আমার কাছে আছে বলে ধরে নিয়ে বসে থাকবেন না, আমি কাউকে দেব না, আমি আমার শক্তি বজায় রাখব – এমন ভাববেন না। এমন একটা সময় আসবে, যখন যত বড় প্রযুক্তিই থাকুক না কেন, তা দেশের মানুষের কাজে না লাগলে একদিন তেমন ব্যবহার না হওয়ায় অকেজো হয়ে পড়বে। আর তাই, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করা, আমাদের সমস্ত সেরা অনুশীলন, সেরা উদ্ভাবনগুলির মধ্যে ‘কমন লিঙ্ক’ থাকা উচিত, সেগুলি ‘ইন্টার অপারেবল’ বা আন্তঃচালিত হওয়া উচিত, এই ব্যবস্থাগুলি পরস্পরের সঙ্গে যাতে ক্রমাগত সম্পর্ক রেখে সহজে কথা বলতে সক্ষম হয়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

বন্ধুগণ,

আজ ফরেনসিক সায়েন্সের গুরুত্ব বাড়ছে, এবং তার প্রয়োজন শুধু পুলিশ বিভাগেই সীমাবদ্ধ নয়। আইন পেশায় যুক্ত সবাইকে ফরেনসিক বিজ্ঞান বুঝতে হবে, বিচার বিভাগকে ফরেনসিক বিজ্ঞান বুঝতে হবে, এমনকি হাসপাতালগুলিকেও ফরেনসিক বিজ্ঞান বুঝতে হবে। এই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অপরাধ দমন ও অপরাধীকে শাস্তি দিতে ফরেনসিক সায়েন্সের ব্যবহার অনেক কাজে আসতে পারে। আমাদেরপুলিশের কাছে ফরেনসিক সায়েন্সের কিছু ব্যবস্থা আছে, তা যথেষ্ট নয়। আর সেই কারণেই প্রতিটি রাজ্যের উচিত আমাদের গান্ধীনগরে অবস্থিত ন্যাশনাল ফরেনসিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা। একটি সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং এর সম্ভাবনা রয়েছে। আজ বিশ্বের ৬০-৭০টি দেশ আমাদের এই ফরেনসিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটির পরিষেবা নিচ্ছে। আমাদের রাজ্যগুলিরও উচিত এই ফরেনসিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটির পরিষেবা নেওয়া। এই ফরেনসিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতে একটি সম্পূর্ণ ভবিষ্যৎমুখী প্রযুক্তি চালিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্যও গবেষণা হচ্ছে, নতুন প্রযুক্তির টুল তৈরির কাজও চলছে। এই ফরেনসিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটির গবেষণাগারটি খুব কঠিন কেস সমাধানের ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। আমি মনে করি, সমস্ত রাজ্য সরকার সক্রিয়ভাবে এই সিস্টেম ব্যবহার করতে পারে।

বন্ধুগণ,

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা একটি ২৪X৭ ঘণ্টার কাজ। কিন্তু যে কোনও ক্ষেত্রে সাফল্য পেতে  আমাদের ক্রমাগত প্রক্রিয়াগুলোকে উন্নত করা, সেগুলোকে আধুনিক করে রাখার প্রয়োজন রয়েছে। বিগত বছরগুলিতে ভারত সরকারের  আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সংস্কারগুলি সমগ্র দেশে শান্তির পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করেছে। ভারতের বৈচিত্র্য ও  বিশালতার কারণে আমাদের আইন প্রয়োগকারী ব্যবস্থার উপর কতটা চাপ রয়েছে - তা আপনারাও জানেন। এই কারণেই আমাদের ব্যবস্থা যাতে সঠিক পথে শক্তিপ্রয়োগ করতে পারে তা সুনিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আমরা দেখেছি, অনেক অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ছোটখাটো ভুল তদন্তে পুলিশ বিভাগের শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে, আমরা এখন ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত অনেক বিধানকে অপরাধমুক্ত করেছি, সেগুলোকে অপরাধের শ্রেণী থেকে বের করে নিয়েছি। দেড় হাজারের বেশি পুরনো অপ্রয়োজনীয় ও পরস্পরবিরোধী আইন বাতিল করে ভবিষ্যতের বিশাল বোঝা কমানো হয়েছে। আমি রাজ্যগুলিকেও অনুরোধ করছি, আপনারাও নিজেদের আইনগুলিকে মূল্যায়ন করুন। স্বাধীনতার আগে থেকে চলে আসা সকল আইনকে বর্তমান প্রয়োজনের নিরিখে পর্যালোচনা করে বদলান। প্রতিটি আইনে সবাইকে অপরাধী হিসেবে দেখার মানসিকতা  নিরপরাধ নাগরিকদের কষ্ট দিচ্ছে, সেগুলি বাতিল করতে হবে।

বন্ধুগণ,

সরকার এখন যেমন দেশের গ্রামে গ্রামে ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে ‘স্বামিত্ব যোজনা’ প্রকল্পের আওতায় ‘প্রপার্টি কার্ড’ বিতরণ করছে। ফলে জমি সংক্রান্ত বিরোধও কমছে আর গ্রামে কলহের সংখ্যাও কমছে। গ্রামে এক ফুট জমি নিয়ে গ্রামে অনেক বড় বড় ঝগড়া ও মারামারির ঘটনা হয়।

বন্ধুগণ,

এই ধরনের অনেক প্রচেষ্টা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে তাদের অগ্রাধিকার নির্ধারণে সাহায্য করেছে। কিন্তু আমরা যদি পুরো ক্যানভাসে সমস্যাগুলিকে বা অপরাধকে রেখে আমাদের কৌশল পরিবর্তন না করি, অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে ২০-৩০-৫০ বছরের পুরোনো পদ্ধতি অনুসরণ করি, তা হলে হয়তো এই প্রচেষ্টাগুলি জনগণের কোনও উপকারেই আসবে না। বিগত বছরগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক প্রণীত আইনগুলি দেশে  আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছে। সন্ত্রাস দমন থেকে শুরু করে, হাওয়ালা নেটওয়ার্ক কিংবা  দুর্নীতি দমন – সব ক্ষেত্রেই দেশে আজ নজিরবিহীন কঠোরতা দেখানো হচ্ছে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। ইউএপিএ-এর মতো আইন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক লড়াইয়ে আমাদের ব্যবস্থালিকে শক্তি জুগিয়েছে। অর্থাৎ, একদিকে যেমন আমরা দেশের আইন প্রয়োগকারী ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়াচ্ছি, অন্যদিকে তাদের ওপর থেকে অপ্রয়োজনীয় বোঝাও দূর করতে পারছি।

বন্ধুগণ,

আমাদের দেশে পুলিশের জন্য আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে যেভাবে ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ - এর ব্যবস্থা করা হয়েছে, ‘এক দেশ, - এক মোবিলিটি কার্ড’ - এর ব্যবস্থা করা হয়েছে, ‘এক দেশ, এক গ্রিড’ তৈরি করা হয়েছে, ‘এক দেশ - এক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ’ তৈরি করা হয়েছে, তেমনি পুলিশের ইউনিফর্ম –এর ক্ষেত্রেও অনুরূপ পন্থাও অবলম্বন করা যেতে পারে। আমাদের রাজ্যগুলি কি এই বিষয়ে আলোচনা করতে একসঙ্গে বসবে?  এরকম করতে পারলে অনেক সুবিধা হবে, একটি গুণমানসম্পন্ন উৎকৃষ্ট পণ্য হতে পারে, কারণ এটি ব্যাপক মাত্রায় হবে। টুপির ক্ষেত্রে কোটি কোটি টুপি, বেল্ট চাইলে কোটি বেল্ট লাগবে। আর যে কোনও নাগরিক দেশের যে কোনো জায়গায় তাঁদেরকে দেখলেই বুঝবেন যে তিনি একজন পুলিশ। এখন পোস্ট অফিসের ডাকবাক্স দেখলে যেমন ভারতের যে কোনো শিক্ষিত ও নিরক্ষর ব্যক্তি জানেন যে এটি ডাকবাক্স। অর্থাৎ সেখানে ঠিকানা লিখে  কাগজ ফেললে উদ্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যায়। একটা পরিচয় রয়েছে। আমাদের পুলিশের ইউনিফর্মের ক্ষেত্রে এটাও দরকার যে আমাদের দেশের পুলিশ এই বিষয়ে একসাথে চিন্তা করি, কারো উপর চাপিয়ে দেওয়ার দরকার নেই, আমাদের একসঙ্গে বসে আলোচনা করে এটি ঠিক করতে হবে। দেখবেন, খুব লাভ হবে এবং আমরা পরস্পরের শক্তি বাড়াতে পারবো। ‘এক দেশ, এক পুলিশ ইউনিফর্ম’, হ্যাঁ প্রত্যেক রাজ্যের একটা ট্যাগ থাকতে পারে, প্রত্যেক রাজ্যের একটা নম্বর থাকতে পারে, কিন্তু পরিচয়টা কমন হওয়া উচিত। এটা নিয়ে ভাবুন, আমি সেটা একটা ধারণা হিসেবে রাখছি। এমনকি, আমি আপনাদের অনুরোধও করছি না। এটা আমার একটা ভাবনা। এই ভাবনা নিয়ে আলোচনা করুন। যদি মনে হয় ৫ বছর, ৫০ বছর, ১০০ বছর পরেও কাজে লাগবে, তাহলে অবশ্যই ভাবুন। একইভাবে পুলিশের বিভিন্ন ধরনের নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ বিভাগ গড়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ,

এখন দেখুন, বিশ্বে পর্যটনের বিশাল বাজার রয়েছে। ভারতে পর্যটনের সম্ভাবনা অনেক বাড়ছে। সারা পৃথিবী থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের প্রবাহ ভারতে বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে, যারা পর্যটনের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে। সেসব দেশে পর্যটনকেন্দ্রিক পুলিশ রয়েছে। তাঁদের প্রশিক্ষণ আলাদা। তাঁদের দেশি বিদেশি অনেক ভাষাও শেখানো হয়। তাঁদের আচরণ সম্পূর্ণরূপে পৃথক। আর ভ্রমণপিপাসুরাও বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের চেনেন। তাঁরা জানেন যে ভাই, এই পুলিশি ব্যবস্থা তাঁদেরকে সাহায্য করার জন্য। একজন পুলিশ হওয়ার ফলে  তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অনেক সহজ সমন্বয়ের মাধ্যমে পুলিশ এনফোর্সমেন্ট সুনিশ্চিত করতে সক্ষম হন। কখনও কখনও আমাদের দেশে এই পরিষেবার র দক্ষতা উন্নয়ন করতেই হবে। যাতে সারা বিশ্ব থেকে ভারতে ঘুরতে আসা  পর্যটকদের পাশাপাশি মূলধন বিনিয়োগের জন্য বাণিজ্য পর্যটনে আসা ব্যক্তিরাও নিরাপত্তা অনুভব করেন। এই দুই ধরণের পর্যটকের মধ্যে একটি বড় পার্থক্য রয়েছে।

পর্যটকরা দ্রুত আপনার অঘোষিত রাষ্ট্রদূত হয়ে ওঠেন। তিনি যেমন আমাদের ভালো জিনিস নিয়ে যাবেন, খারাপ জিনিসও তেমনি নিয়ে যাবেন। কিন্তু যিনি পুঁজি বিনিয়োগ করেন, তাঁর এই কাজে অনেক সময় লাগে, তাঁকে যাচাই করতে হয়, যাতে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল না হয়ে যায়! কিন্তু সাধারণ পর্যটক  দুদিনের মধ্যেই  খবর দেন, ওরে ভাই, এই অবস্থা এখানে। আর সেই কারণেই আজ ভারতেও মধ্যবিত্তের সংখ্যা এত বেশি বাড়ছে, পর্যটন নিয়েও অনেক পরিবর্তন আসছে। এখন পর্যটনের ক্ষেত্রে যানজট একটি নতুন সমস্যা। এখন যদি আমরা আগাম না ভাবি, পর্যায়ক্রমে না ভাবি, তাহলে আমাদের পর্যটন কেন্দ্র বদলাবে না। আমরা যদি কাউকে বলি, ভাই, আপনি সিমলায় না গিয়ে অমুক জায়গায় যান, তাহলে চলবে না, কারণ যিনি সিমলা যেতে চান তিনি সিমলাতেই যাবেন। নৈনিতাল যেতে হলে তিনি নৈনিতালেই যাবেন, শ্রীনগর যেতে হলে, তিনি শ্রীনগরেই যাবেন, গুলমার্গ যেতে হলে, তিনি যাবেন গুলমার্গ। আমাদের ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে।

বন্ধুগণ,

আমরা দেখেছি, করোনার সময়ে যখন পুলিশকর্মীরা ফোন করে তাঁদের এলাকার নাগরিকদের জিজ্ঞাসা করতেন এবং বিশেষ করে, আমি কিছু শহরে দেখেছি, পুলিশে কর্মরত বয়স্ক কর্মীরা, যাঁদেরকে এখন বেশি পরিশ্রমের কাজ দেওয়া যায় না, তাঁরা স্বেচ্ছায় এ ধরনের কাজ নিয়ে প্রবীণ নাগরিকদের খোঁজখবর নিয়েছেন। তাঁরা নিয়মিত প্রবীণ নাগরিকদের জিজ্ঞাসা করেছেন, আপনি কি কোথাও বেরোতে যাচ্ছেন? আপনি কি ঘরে তালা দিতে যাচ্ছেন? বা আপনি এখন বেরোবেন না, আমরা পরিষেবা পৌছোনোর ব্যবস্থা করছি! এর ফলে নাগরিকদের আস্থা বেড়েছে। একভাবে তাঁরা তখন আপনার শক্তি হয়ে উঠেছেন। আমরা এই আজ এই প্রক্রিয়াকে যতটা পেশাদার পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারবো, সম্পূর্ণ সজীবভাবে সংবেদনশীল থাকতে পারবো, আপনারা সমাজ জীবনে দেখবেন, যদি আপনাদের এমন ফোন  সপ্তাহে একবারও কোনও বয়স্ক নাগরিকের কাছে যায়, তিনি সারা মাস ধরে সবাইকে বলতে থাকেন যে, থানা থেকে ফোন আসে, প্রতি বুধবার, আমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমার কোন সমস্যা আছে কিনা -, এই জিনিসগুলির অনেক ক্ষমতা আছে। এই যে ভাবনার দ্বন্দ্ব, দেখবেন, জনগণই আপনাদের সমস্ত উপলব্ধিকে সমৃদ্ধ করবে।

আমাদের আরও একটি বিষয়ে খুব সচেতন হওয়া দরকার, প্রযুক্তিগত বুদ্ধিমত্তার নিজস্ব শক্তি আছে, এর ব্যবহার আছে, কিন্তু আমরা মানব বুদ্ধিমত্তাকে অস্বীকার করতে পারি না। পুলিশ বিভাগ আজ থেকে একশ বছর আগে যে পদ্ধতিগুলি গ্রহণ করেছে, প্রযুক্তি যতই পরিবর্তন হোক না কেন, ১০০ বছর পরেও সেগুলির প্রয়োজন হতে পারে। সেই প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানকে যতটা সম্ভব শক্তিশালী করুন।  এর মধ্যে যে শক্তি, তার নজর, সামান্য কথোপকথনের মাধ্যমেই যা অপরাধ বা সমস্যার গোড়ায় যেতে সাহায্য করে, এটাই আপনাদের বড় শক্তি। আর যদি উভয় ক্ষেত্রের শক্তির সমন্বয় ঘটে, তাহলে খুব সহজেই আপনি কল্পনা করতে পারবেন যে ভাই এটা একটা সম্ভাবনা, দশ দিন পর এটা হতে পারে, এটা চলছে, দেখা যাক, এখানে কিছু লোক আসে আর যায়, আপনি যদি নাগরিকদের সতর্ক করেন, তাহলে কিছু হলে, আপনি অবিলম্বে জানতে পারবেন। আমি মনে করি এই সমন্বয় আমাদের ব্যবস্থাকে খুব শক্ত করে তুলবে। যা অপরাধীদের ৫০ বার ভাবতে বাধ্য করবে।

বন্ধুগণ,

আমাদের আরেকটি বিষয় বুঝতে হবে। আজ আন্তর্জাতিক স্তরে ভারত যত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে, ততটাই দ্রুতগতিতে ভারতের সামনে অনেক সমস্যা বাড়তে চলেছে। আগে যতই উপেক্ষা করা হোক, হাসিমজা করা হোক, তবুও আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু, এখন প্রতিযোগিতার আবহ এসে গেছে। নানারকম প্রতিস্পর্ধা শুরু হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে শত্রুতায় পর্যবসিত হয়। বিশ্বের অনেক শক্তি রয়েছে, যারা চায় না যে ভারত তাদের দেশের তুলনায় সামর্থবান হয়ে ওঠে। কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ে তাদের যে বিশেষজ্ঞতা রয়েছে, সেখানে যেন ভারত না নাক গলাতে পারে! অমুক পণ্যের বাজারে তাদের রমরমা রয়েছে, সেই পণ্যের উৎপাদন যদি ভারতে বেশি হয়, তা হলে সেই বাজারে ভারতের রমরমা হয়ে পড়বে। ভারত অনেক বড় বাজার। ভারত যদি নিজেই উৎপাদন করে তার প্রয়োজন মেটাতে শুরু করে, তা হলে আমাদের পণ্য কোথায় বিক্রি করবো!

কাজেই অনেক ধরনের প্রতিকূলতা এবং প্রতিস্পর্ধার সম্মুখীন আমাদের হতে হবে। সেজন্য আমাদের এই সমস্ত সমস্যাকে গভীরে গিয়ে বুঝতে হবে, যাতে কেউ আমাদের ক্ষতি না করতে পারে। কিছু কিছু মানুষের স্বভাব হ’ল নিজের প্রচার করা। আমার দু’জন আধিকারিককে দিয়ে যদি কোনও পণ্যের প্রমোশন করাতে পারি, তা হলে সেই বাজারে আমি থেকে যাব। একথা ভেবে যারা ১০ বছর আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে থাকে। এটা সারা পৃথিবীতেই হয়। সেজন্য আমি বলছি, কিছুটা দূরদৃষ্টি নিয়ে আমাদের সামর্থকে নিরাপদ আবহ এবং যথাযথ বার্তার          মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখে সমস্ত সমস্যাগুলির মোকাবিলা করলে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অনেক পার্থক্য আসবে। আগে যা ছিল, তাকে তো বজায় রাখতে হবেই। কিন্তু, নতুনের জন্যও আমাদের নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে যে শক্তিগুলি উঠে দাঁড়াচ্ছে, তাদের চিনতে হবে। যেভাবে আমাদের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সেই নেতিবাচক শক্তিগুলির বিরুদ্ধে, সেই আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী শক্তিগুলির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেওয়া এবং কঠোরতর পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে কোনও উদারতা চলবে না। কারণ, যারা আইন মেনে চলছেন, তাঁরা কোথায় যাবেন। আমাদের কাজ হ’ল এরকম ৯৯ শতাংশ নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদান। বাকি ১ শতাংশকে নিয়েই যত সমস্যা। আমাদের আইন পালনকারী ৯৯ শতাংশ জনগণের আস্থা রক্ষার জন্য বাকি ১ শতাংশের প্রতি সামান্যতম উদারতা দেখানোর কোনও প্রয়োজন নেই।

বন্ধুগণ,

সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তিকে বুঝতে হবে। শুধু আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের কাজকে সহজ করে তুলব, এতটুকু ভাবাটাই যথেষ্ট নয়। একটি ছোট্ট গুজব গোটা দেশে বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আমরা জানি, সংরক্ষণ নিয়ে এরকম একটি গুজব ছড়ানোর ফলে আমাদের দেশে কত সমস্যা হয়েছিল। ৬-৮ ঘন্টা পর যখন আমরা বুঝতে পারলাম, তখন সব শান্ত করা গেল। কিন্তু, ততক্ষণে অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। আর সেজন্য আমাদের জনগণের পাশে থাকতে হবে, তাঁদেরকে একজোট করে রাখতে হবে, কোনও কিছু আমাদের সামনে এলে, সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফরওয়ার্ড করার আগে দশবার ভাবতে হবে। আগে যাচাই করে দেখুন। সমস্ত প্ল্যাটফর্মেই যাচাই করার ব্যবস্থা থাকে। আপনারা দু-একটা জায়গায় গিয়ে যাচাই করুন, তা হলে নতুন কিছু তথ্য পেতে পারেন। আমাদের সকলকে মিলেমিশে এটা করতে হবে। এভাবেই আমরা আমাদের সমাজকে গুজব তাড়িত হওয়া থেকে, সন্ত্রস্থ হওয়া থেকে বাঁচাতে হবে। প্রযুক্তির শক্তিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে।

বন্ধুগণ,

আমাদের সামাজিক জীবনে অসামরিক প্রতিরক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। একটু আগেই অমিতভাই যেমনটি বলছিলেন, কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলি থেকে আমাদের নজর সরে যাচ্ছে। অমিত ভাই সেই বিষয়গুলিকে সঠিকভাবে তুলে ধরেছেন। এই অসামরিক প্রতিরক্ষার ব্যবহার অনেক বছর ধরেই চলছে। আমাদের স্কুল-কলেজে অসামরিক প্রতিরক্ষার বিষয়টি যেন থাকে, প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কে যেন পড়ানো হয়, যেমনটি আগেও হ’ত। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান ও তার অনুশীলনও আগের মতোই করে যেতে হবে। প্রত্যেক নগরপালিকা, মহানগরপালিকায় সপ্তাহে একদিন ফায়ার ফাইটিং ফোর্স ও পুলিশ কর্মীরা  কোনও একটি স্কুলে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। স্কুলের ছেলেমেয়েরা এই অনুশীলন দেখলে তারা এ বিষয়গুলি সম্পর্কে সচেতন হবে। আমাদের ব্যবস্থা সম্পর্কে তারা অবহিত হবে, হাতে-কলমেও শিখবে। পরের সপ্তাহে অন্য স্কুলে এটা হতে পারে। এতে প্রত্যেক প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অসামরিক প্রতিরক্ষা ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত হবে। আপনারাও সহজেই এর মাধ্যমে অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠবেন।

বন্ধুগণ,

বিগত বছরগুলিতে সন্ত্রাসের ঘাঁটি ও জাল বিধ্বস্ত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি, সমস্ত রাজ্য সরকার অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে কিছু না কিছু করার চেষ্টা করেছে। কোথাও সাফল্য আগে এসেছে আবার কোথাও পরে। কিন্তু, প্রত্যেকেই আন্তরিকতার সঙ্গে এই সমস্যাকে বুঝে তার সমাধানে এগিয়ে এসেছেন। এখন আমাদের সকলের শক্তিকে যুক্ত করে মিলেমিশে এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। তেমনই নকশালবাদকে যে কোনও অবস্থাতেই নিঃশেষ করতে হবে। বন্দুকধারী হোক কিংবা কলমধারী – এদের সকলকে আমাদের কেটে ফেলতে হবে। আমাদের নবীন প্রজন্মও যেন এই ভ্রমে না থাকে যে, এ ধরনের শিশুসুলভ কথা বলে পার পেয়ে যাবে। এতে দেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, তাকে বাড়তে দিলে আগামী দিনে একে কেউ সামলাতে পারবে না। সেজন্য আমাদের নকশাল অধ্যুষিত জেলাগুলিকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে, তেমনই আমাদের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যারা এই মতবাদকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, যা তাদের মধ্যে বিকৃত মানসিকতা সৃষ্টি করতে পারে, সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণীর প্রতি দ্বেষ সৃষ্টি করতে পারে, তাদের কোমল আবেগকে উস্কে দিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে, বিচ্ছিন্নতা তৈরি করতে পারে – তাদের প্রতি আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল যেন আমাদের দেশের একতা ও অখন্ডতার প্রেরণা হয়ে ওঠেন। আমাদের বুদ্ধিবলে এই প্রবণতার প্রতিরোধ করতে হবে। আমাদের ‘ফাইট ফোর্সেস’গুলির মধ্যেও এই প্রবণতা মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞতা গড়ে তুলতে হবে। কোনও রাজ্যে যদি তেমন কোনও ঘটনা ঘটে, তা হলে আমাদের উচ্চস্তরীয় বিশেষজ্ঞদের সরেজমিনে তদন্তের জন্য পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তিন দিন সেখানে থেকে, যা হয়েছে, সেই ঘটনাকে কিভাবে হ্যান্ডেল করা হয়েছে, সমস্যা কিভাবে অঙ্কুরিত হয়েছিল, সেখান থেকে আমাদের শিখতে হবে। শেখার জন্য আমাদের ক্রমাগত চেষ্টা করে যেতে হবে। এরকম অনেক আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ও সংস্থা রয়েছে, যারা খুব চালাক, যাদের চেহারা অত্যন্ত সাত্ত্বিক। কিন্তু, তারা সেই মুখোশের আড়ালে আমাদের দেশে অশান্তি সৃষ্টি করার ইন্ধন যোগায়। তারা সংবিধান এবং আইনের ভাষায় কথা বললেও প্রবৃত্তি অন্যরকম। এই সমস্ত বিষয়গুলিকে আমাদের গভীরে গিয়ে বুঝতে হবে, বোঝার সামর্থ আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলির মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের স্থায়ী শান্তির জন্য দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়া অনেক জরুরি।

বন্ধুগণ,

জম্মু – কাশ্মীর থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্ব ভারত সর্বত্র জনগণের মনে আমাদের ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়ছে। অনেক ধ্বংসকারী শক্তিও এখন মূলস্রোতে ফিরে আসতে চাইছে। যখন তারা আমাদের উন্নয়নযজ্ঞকে দেখছে, পরিকাঠামো উন্নয়নকে দেখছে, যখন তাদের অনেক প্রত্যাশা এমনিতেই পূরণ হচ্ছে, তখন তারা অস্ত্র পরিহার করে আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। একইরকম ভাবে সীমান্ত এলাকা ও সমুদ্রতটীয় এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা উন্নত করতে আমাদের উন্নয়নকেই হাতিয়ার করতে হবে। আমাদের বাজেটেও ‘ভাইব্রেন্ট ভিলেজ’ – এর কথা বলা হয়েছে। আপনারা এই বিষয়টি নিয়ে ভাবুন। আপনাদের উচ্চস্তরীয় আধিকারিকরা সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে গিয়ে রাত কাটিয়ে আসুন। আমি তো মন্ত্রীদেরকেও বলব যে, কমপক্ষে বছরে ৫-৭টি সীমান্তবর্তী বা সমুদ্র তটবর্তী গ্রামে গিয়ে ২-৩ ঘন্টা কাটিয়ে আসুন। আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি ছাড়াও রাজ্যের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে আপনাদের উপস্থিতি অনেক পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। আপনারা অনেক কিছু খুঁটিনাটি জানতে পারবেন।

বন্ধুগণ,

অস্ত্রশস্ত্র ও মাদক চোরাচালান তো আগে থেকেই ছিল, এখন নতুন সঙ্কট হ’ল ড্রোনের অনুপ্রবেশ। আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকা ও তটবর্তী এলাকার মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমরা যদি বলি, অমুকে এটা করবে না, এটা সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর এটা কাজ না, এটা তটরক্ষী বাহিনীর কাজ নয় – তা হলে চলবে না। আমাদের পরস্পরের মধ্যে সমন্বয়কে খুব ভালোভাবে বাড়াতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যদি আমরা মিলেমিশে জাতীয় স্বার্থে একসঙ্গে এগোই, মিলেমিশে কাজ করি – তা হলে প্রত্যেক সমস্যাকেই আমরা সমাধান করতে পারব। সমস্ত প্রতিকূলতা সমাধানেই আমাদের শক্তি বেড়ে যাবে। আমার বিশ্বাস, আজকের এই শিবিরে যা নিয়ে আলোচনা হবে, তা থেকে কোনও না কোনও ‘অ্যাকশনেবল পয়েন্ট’ বা ‘পদক্ষেপ গ্রহণকারী উপায়’ বেরিয়ে আসবে। একটি সম্মিলিত পথচিত্র রচিত হবে, যা রাজ্যগুলিকে একসঙ্গে কাজ করতে সাহায্য করবে। এটা তোমার এলাকা, এটা আমার এলাকা, ওখানে তোমার অধিকার, এখানে আমার – তা নিয়ে যদি আমরা লড়তে থাকি, তা হলে সমাজ বিরোধী শক্তিগুলি সবচেয়ে লাভবান হবে। আইন অমান্যকারীরা এই পরিস্থিতির সুযোগ নেবে। সেজন্য আমাদের মধ্যে সমন্বয়, পরস্পরকে বোঝা, বিশ্বাস – এইসব গুণগুলিকে পেশাদারিত্বের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এই দায়িত্ব আমাদের পুলিশ আধিকারিকদের। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা সকলে মিলেমিশে কাজ করলে এই গুরু দায়িত্ব আমরা ভালোভাবেই পালন করতে পারব। যেমনটা পরিণাম চাই, তা পাব। দেশের জন্য যত সুযোগ তৈরি হয়েছে, তাকে প্রথম দৃষ্টিতে ঐক্যবদ্ধ ইউনিফর্ম ফোর্সের মাধ্যমেই কাজে লাগাতে হবে, যাতে ইউনিফর্ম ফোর্সগুলির প্রতি মানুষের বিশ্বাস বাড়ে। আমরা সেই বিশ্বাসকে যতটা শক্তিশালী করে তুলব, যত বেশি দূরদৃষ্টি নিয়ে কর্মসক্ষম করে তুলব, যত বেশি নাগরিকদের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারব - তত বেশি সাফল্য পাব।

ডিজিপি কনফারেন্সে আমি কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। আমি সমস্ত মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের অনুরোধ জানাই যে, আমাদের বিগত ডিজিপি কনফারেন্স যেভাবে একটি খুব ভালো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে, খোলাখুলি আলোচনা হয়েছে, যেখানে কোনও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব ছিল না, সেখান থেকে যে বিষয়গুলি বেরিয়ে এসেছে, তা স্বরাষ্ট্র বিভাগের সমস্ত সচিবদের উপস্থিতিতে আইএএস আধিকারিকদের উপস্থিতিতে যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে, আমাদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে যাঁরা সরকার পরিচালনা করেন, তাঁরা যেন সেই সিদ্ধান্তগুলি সম্পর্কে  অবহিত হন। এই ডিজিপি কনফারেন্সে যে পদক্ষেপ গ্রহণকারী সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে, সেগুলি নিজেদের রাজ্যে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োগ করুন। তা হলে প্রত্যেকেই লাভবান হবেন। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় এই সিদ্ধান্তগুলি অনেক কার্যকরি প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন একটি পরামর্শ এসেছিল যে, আমাদের পুলিশের আবাসনগুলিকে উন্নত করতে হবে। আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম, বিশেষ করে বড় শহরগুলিতে যে থানা বা পুলিশ স্টেশনগুলি রয়েছে, সেগুলিকে কিভাবে বহুতল বাড়িতে পরিণত করা যায়, যেখানে নীচে থানার কাজ চলবে আর উপরে পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীদের আবাসনস্থল থাকবে। বড় পুলিশ স্টেশনের ক্ষেত্রে এমনকি ২০তল ভবন তৈরি করা যেতে পারে। তা হলে আজ যে আধিকারিক বা পুলিশ কর্মী ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে থানায় ডিউটি করতে আসেন, তাঁর যেমন সুবিধা হবে, তেমনই যখন প্রয়োজন তখনই ডাকলে তাঁকে পাওয়া গেলে, থানার কাজের ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বা নগরপালিকার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে পারি। এতে আধিকারিক ও পুলিশ কর্মীদের পাশাপাশি, তাঁদের পরিবারেরও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে। আমি মনে করি, প্রত্যেক বড় শহরে ২৫-৫০টি এমন থানা অবশ্যই রয়েছে, যেখানে এ ধরনের বহুতল করে দেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী যে থানায় এমন করা সম্ভব নয়, সেখানকার আধিকারিক ও পুলিশ কর্মীদের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একটু আগেই অমিত ভাই যেমন বলছিলেন যে, অনেক ক্ষেত্রেই বাজেটের সদ্ব্যবহার হয় না, এমন একটা পরিস্থিতি যে, কেন্দ্রীয় সরকারকে বারবার অনুরোধ করতে হয়, যে কাজের জন্য তার বাজেট বরাদ্দ হয়েছে, সেকাজেই তা ব্যবহার করুন। আর নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই তা ব্যবহার করুন। আমাদের নিজেদের শক্তি ও সামর্থ বাড়াতে হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের শক্তিও বাড়াতে হবে। তবেই আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই অর্থ সদ্ব্যবহার করতে পারব। আর অর্থের অপচয়ও রোধ করতে পারব।

আরেকটি বিষয়ের দিকে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সমস্ত রাজ্যের পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীগুলির প্রতি আমার অনুরোধ, আমরা যে নতুন স্ক্র্যাপিং নীতি প্রণয়ন করেছি, তা ভালোভাবে পড়ুন ও জানুন। আপনাদের যত পুরনো যানবাহন আছে, সেগুলিকে স্ক্র্যাপ করানোর পদক্ষেপ নিন। পুলিশের কাছে পুরনো যানবাহন থাকা উচিৎ নয়, এতে তাঁদের দক্ষতা হ্রাস পায়। এর ফলে, দুটি লাভ হবে। স্ক্র্যাপিং ব্যবসার জন্য এগিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত হবেন যে, অমুক রাজ্যে ২ হাজার যানবাহনকে ইতিমধ্যেই স্ক্র্যাপিং – এর জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। তা হলে আমরা সেখানে একটি ইউনিট চালু করতে পারি। পুনর্ব্যবহারের বৃত্তীয় অর্থনীতির অনুকূলে কাজ হবে। সেই  ২ হাজার যানবাহনের জায়গায় যে নতুন ২ হাজার যানবাহন কেনা হবে, তা বিক্রি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে দাম-দর করে অনেক অর্থও সাশ্রয় করতে পারবেন। আমরা যে মানের গাড়ি চাই, ভালো প্যাকেজে সেই গাড়ি পেতে পারি। এভাবে আমাদের সমস্ত রাজ্যের পুলিশ বাহিনীর কাছে অত্যাধুনিক যানবাহন আসতে পারে। এই বিষয়টি নিয়ে আমি সবাইকে ভাবার জন্য অনুরোধ করি। মন্ত্রীরা উদ্যোগ নিন। যাঁরা স্ক্র্যাপিং ব্যবসা করছেন, তাঁদের প্রয়োজনে জমির ব্যবস্থা করুন। পুনর্ব্যবহারের বৃত্তীয় অর্থনীতি গড়ে তোলার কাজ করুন। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ইউনিটও তাদের সমস্ত পুরনো আবর্জনা বের করে দিন। এতে আমাদের পরিবেশ দূষণ কমবে, এমনকি দক্ষতাও বাড়বে। এরকম ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আপনারা যদি সর্বসম্মতিক্রমে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আর তা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়িত করেন, তা হলে দেখবেন, আপনারা জনগণের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি, দেশের উন্নয়নেও অনেক বড় অংশীদার হয়ে উঠতে পারেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা এই শিবিরে যতটা গুরুত্ব সহকারে অংশগ্রহণ করেছেন, আপনারা সুফল পাবেনই।  বিশেষ করে এত বড় সংখ্যায় মুখ্যমন্ত্রীরা নিজেরা অংশগ্রহণ করেছেন, তা দেখে আমার ইচ্ছে করছে যে, আমি আপনাদের মাঝে গিয়ে বসি। আমার বসা উচিৎ ছিল। কিন্ত, পূর্বনির্ধারিত কিছু কর্মসূচির চাপে আমি ওখানে আসতে পারিনি। কিন্তু, যখন এতজন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী সেখানে রয়েছেন, তখন একজন প্রধানমন্ত্রীর সেখানে যাওয়ার ইচ্ছে হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমিও আপনাদের সঙ্গে চা পান করতে করতে অনেক আলাপ-আলোচনা করতাম। কিন্তু, এবার আর পারলাম না। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীজী আপনাদের সঙ্গে রয়েছেন। আপনারা তাঁর সঙ্গে যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলবেন, আমি তা অবশ্যই জানতে পারব। আর আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে, আমি সমস্ত মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, তা অবশ্যই পালন করব। আপনাদের আশা-আকাঙ্খা পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও অনেক অনেক শুভকামনা।

 

PG/SB/SB




(Release ID: 1872138) Visitor Counter : 407