প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
“স্বপ্নের বাস্তবায়নের মূলে রয়েছে নীতি ও সদিচ্ছা – এই দুটি বিষয়”
গুজরাটের ভারুচে আট হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গকালে বললেন প্রধানমন্ত্রী
উন্নয়ন প্রচেষ্টায় আদিবাসী সমাজের অবদানের কথা স্মরণ করলেন তিনি
Posted On:
10 OCT 2022 1:09PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১০ অক্টোবর ২০২২
গুজরাটের ভারুচের আমোদ-এ ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের আজ শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। জাতির উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত এই প্রকল্পগুলি হল – জাম্বুসারে একটি বড় ধরনের ‘ড্রাগ পার্ক’, দহেজ-এ গভীর সমুদ্রে পাইপলাইন স্থাপন সংক্রান্ত প্রকল্প, অঙ্কলেশ্বর বিমানবন্দরের প্রথম পর্যায় এবং অঙ্কলেশ্বর ও পানোলি-তে বিভিন্ন স্তরের শিল্প শেড স্থাপন। গুজরাটে রাসায়নিক শিল্পকে আরও উন্নত করে তোলা সম্পর্কিত কয়েকটি প্রকল্পও আজ জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলির মধ্যে ছিল – জিএসিএল প্রকল্প, ভারুচে ভূগর্ভস্থ জল নিকাশি ব্যবস্থা এবং আইওসিএল-এর দহেজ কয়ালি পাইপলাইন স্থাপন।
অনুষ্ঠানের সূচনায় প্রয়াত শ্রী মুলায়ম সিং যাদবের স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “মুলায়ম সিং-জির সঙ্গে আমার সম্পর্কের এক বিশেষ মাত্রা গড়ে উঠেছিল। যখনই আমরা আলাপ-আলোচনায় মিলিত হতাম পরস্পরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পেত।” প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে শ্রী মোদী বলেন যে সেই সময় মুলায়ম সিং-জি তাঁকে যেভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন তা আজও তাঁর কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সময়ে মুলায়ম সিং-জির আশীর্বাদও অকুন্ঠভাবে তাঁর ওপর বর্ষিত হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মুলায়ম সিং-জি বরাবরই সকলের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখার চেষ্টা করতেন। তাই, “গুজরাট এবং মা নর্মদার তটভূমিতে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধেয় মুলায়ম সিং-জির প্রতি আজ আমি আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করছি। তাঁর পরিবার-পরিজন ও অনুগামীরা যাতে এই অপূরণীয় ক্ষতি বহন করার মতো শক্তি লাভ করেন সেজন্য আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাই।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারুচের অনেক কৃতী সন্তানই তাঁদের কর্মকৃতিত্ব ও কুশলতার মাধ্যমে দেশকে এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত করেছেন। সোমনাথ আন্দোলনে সর্দার প্যাটেলের ভূমিকা, কানাহাইয়ালাল মানেকলাল মুন্সী এবং ভারতীয় সঙ্গীত গুরু পণ্ডিত ওঙ্কারনাথ ঠাকুরের অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গুজরাট তথা সমগ্র দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় ভারুচের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যখনই আমরা ভারতের ইতিহাস এবং দেশের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে আলোচনা করি তখনই গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয় ভারুচের নাম। ভারুচ জেলা যে ক্রমশ সব প্রদেশের নাগরিকদেরই এক মিলনক্ষেত্র রূপে গড়ে উঠতে চলেছে, একথারও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রী মোদী বলেন, ভারুচ এই প্রথম একটি বড় ধরনের ‘ড্রাগ পার্ক’ উপহার পেতে চলেছে। রাসায়নিক ক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটি বড় ধরনের প্রকল্প এখানে গড়ে উঠবে। এছাড়াও সংযোগ ও যোগাযোগের প্রসারে আরও দুটি বড় প্রকল্পের আজ এখানে সূচনা হল। ভারুচের বিমানযাত্রীদের যাতে বরোদা অথবা সুরাট বিমানবন্দরের ওপর নির্ভরশীল থাকতে না হয় তা নিশ্চিত করতে অঙ্কলেশ্বরে ভারুচ বিমানবন্দর স্থাপনের শিলান্যাসও আজ অনুষ্ঠিত হল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারুচ হল এমন একটি জেলা যেখানে দেশের অন্যান্য ক্ষুদ্র রাজ্যগুলির তুলনায় শিল্পের সংখ্যা অনেক বেশি। এর সঙ্গে নতুন বিমানবন্দর গড়ার কাজ সম্পূর্ণ হলে উন্নয়নের এক নতুন শিখরে আরোহন করবে এই অঞ্চলটি। শ্রী মোদী বলেন, গুজরাট এখন নতুনভাবে গড়ে উঠছে। গত দু’দশকে এই রাজ্যটি পিছিয়ে পড়া একটি রাজ্য থেকে শিল্প ও কৃষিতে উন্নত একটি রাজ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। এখানকার ব্যস্ত নৌ-বন্দর এবং উপকূলরেখা বরাবর উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণের সুবাদে এখানকার আদিবাসী ও মৎস্যজীবীদের জীবনযাত্রায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। গুজরাটের অধিবাসীরা পরিশ্রমী ও কষ্ট সহিষ্ণু। এই কারণে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবকালে রাজ্যের তরুণ ও যুবক-যুবতীদের কাছে এক সোনালী যুগের সূচনা হতে চলেছে। বাধামুক্ত কাজের পরিবেশ গড়ে তোলার এই সুযোগকে কখনই হাতছাড়া করা উচিৎ নয় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে প্রয়োজন নীতি ও সদিচ্ছার। ভারুচের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে এখন অনেকটাই উন্নত, একথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। বেশ কয়েক বছরের চেষ্টায় এখানকার কৃষি, স্বাস্থ্য ও পানীয় জলের যোগান পরিস্থিতিও এখন অনেকটাই উন্নত। এখনকার শিশুরা জানে না কার্ফু কি জিনিস যা এক সময় এখানে একটি আকছার ঘটনা ছিল। এখানকার কন্যাসন্তানরা এখন শুধু এক মর্যাদার জীবনই যাপন করেন না, সেইসঙ্গে কর্মব্যস্ত থাকেন অনেক রাত পর্যন্তও। এইভাবেই সমাজ ও সমষ্টির জীবনধারায় তাঁরা পরিবর্তন এনে দিয়েছেন। ভারুচে একদিকে যেমন শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে, অন্যদিকে তেমনই তরুণ ও যুবকদের সামনে নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধাও এখন উপস্থিত। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং অব্যবহৃত সহায়সম্পদকে কাজে লাগিয়ে গুজরাট বর্তমানে উৎপাদন এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রচেষ্টার এক বিশেষ কেন্দ্র রূপে গড়ে উঠেছে। সম্প্রসারিত হয়েছে বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধাও। কেন্দ্র ও রাজ্য পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে এই রূপান্তর প্রচেষ্টায় সামিল হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
স্থানীয় তথা আঞ্চলিক উৎপাদনের সপক্ষে প্রচার ও অভিযান শুরু করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে পণ্য আমদানির ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় ও আঞ্চলিক স্তরে উৎপাদিত পণ্যের বিপণন সম্ভব করে তুলতে প্রত্যেক নাগরিকেরই এগিয়ে আসা উচিৎ। আত্মনির্ভর ভারত গঠনের কাজে এইভাবেই তাঁরা আত্মনিয়োগ করতে পারেন। আসন্ন দীপাবলি উৎসবে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পীদের তৈরি পণ্য ব্যবহারের আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ভারতীয় অর্থনীতি ছিল দশম স্থানে কিন্তু বর্তমানে তা পঞ্চম স্থান অধিকার করার সাফল্য অর্জন করেছে। ঔপনিবেশিক মানসিকতা পরিহার ও বর্জন করার মধ্য দিয়েই এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই সাফল্যের জন্য কৃষক, শ্রমিক-কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শিল্পপতি – সকলেই কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন। ওষুধ উৎপাদনের মাধ্যমে মানুষের জীবন রক্ষার কাজে এগিয়ে আসার জন্য ভারুচের অধিবাসীদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অতিমারী পরিস্থিতি ওষুধ শিল্পের গুরুত্বকে এখন আরও বেশি করে তুলে ধরেছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুজরাট দেশকে নানাভাবে সাহায্য করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের ওষুধ রপ্তানি ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ অংশ রয়েছে এই রাজ্যটির।
ভারুচের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় কিছু দুষ্কৃতী ও দুর্বৃত্ত এক সময় যেভাবে বাধাদানের চেষ্টা করেছিল, সেকথারও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে সমস্ত রকম বাধা-বিপত্তি সমূলে উৎপাটিত হয়েছে। সর্দার সরোবর বাঁধের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় উগ্রপন্থীদের বাধাদানের ঘটনার কথাও স্মরণ করেন তিনি। ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশের কয়েকটি অঞ্চল এবং মহারাষ্ট্রে উগ্রপন্থীদের তৎপরতা এখনও রয়েছে বলে তিনি জানান। দুর্বৃত্ত দমনে গুজরাটবাসীদের ভূমিকার সপ্রশংস উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রী মোদী বলেন, গণিত ও বিজ্ঞানে সুশিক্ষাই ইতিবাচক কাজের সুযোগ গড়ে তুলতে পারে। আদিবাসী, যুবক ও তরুণ-তরুণীরা এখন নানা ধরনের প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়ে চিকিৎসা, বিজ্ঞান ও আইনকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। গুজরাট তথা সারা দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় আদিবাসী সম্প্রদায়গুলির ভূমিকার কথাও তাঁর বক্তব্যে আজ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আদিবাসী সম্প্রদায়ের অবদানকে সম্মান জানাতে ‘জনজাতীয় গৌরব দিবস’ আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উদ্দেশে উৎসর্গ করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বিরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকীতেই উদযাপিত হবে এই বিশেষ দিনটি।
পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেদাবাদ ও গান্ধীনগর – এই দুটি শহরের আদর্শে গড়ে তোলা হবে ভারুচ ও অঙ্কলেশ্বরকে। “মানুষ যেভাবে নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সি – এই দুটি শহরের কথা আলোচনা করে, ঠিক তেমনভাবেই একদিন ভারুচ ও অঙ্কলেশ্বর উঠে আসবে তাঁদের সপ্রশংস উল্লেখের তালিকায়”।
PG/SKD/DM
(Release ID: 1866565)
Visitor Counter : 155
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Assamese
,
Manipuri
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam