প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

গুজরাটের ভাবনগরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 29 SEP 2022 6:14PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ভাবনগরের সকল প্রিয়জনদের নবরাত্রি উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা। সবার আগে ভাবনগরের কাছে আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ, এর আগে কখনও এত দীর্ঘ ব্যবধানের পর ভাবনগরে আসিনি। এই দীর্ঘ দিন পর আসার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। তবুও আজ আপনারা যে বিপুল সংখ্যায় এখানে এসেছেন, আমাকে আশীর্বাদ ও ভালোবাসা দিয়েছেন, তা আমি কখনও ভুলবো না। যত দূর দেখতে পাচ্ছি, শুধু মাথা দেখা যাচ্ছে। এত প্রচন্ড গরমে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের আগমন; আপনাদের সকলকে শত শত প্রণাম জানাই।

আজ আমার ভাবনগরের সঙ্গে এই সাক্ষাৎকার অত্যন্ত বিশেষ। একদিকে যেমন দেশ স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উৎসব পালন সম্পন্ন করছে, অন্যদিকে এ বছরই ভাবনগর তার প্রতিষ্ঠার ৩০০ বছর পূর্তি পালন করতে চলেছে। ভাবনগর তার এই ৩০০ বছরের যাত্রাপথে প্রতিনিয়ত উন্নয়নের মাধ্যমে সৌরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক রাজধানী রূপে নিজস্ব একটি পরিচয় গড়ে তুলেছে। এই উন্নয়ন যাত্রাকে নতুন মাত্রা দেওয়ার জন্য আজ এখানে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগে একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস হয়েছে। এই প্রকল্পগুলি ভাবনগরের পরিচয়কে আরও শক্তিশালী করবে। সৌরাষ্ট্রের কৃষকদের সেচের ক্ষেত্রে অনেক নতুন উপহার দেবে। আর এইভাবেই আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকে আরও শক্তিশালী করবে। ক্ষেত্রীয় বিজ্ঞান কেন্দ্র গড়ে ওঠার ফলে শিক্ষা ও সংস্কৃতির শহর রূপে ভাবনগরের পরিচয় আরও সমৃদ্ধ হবে। এইসব প্রকল্পের জন্য আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

ভাই ও বোনেরা,

আমি যখনই ভাবনগরে এসেছি, একটি কথা অবশ্যই বারবার উচ্চারণ করেছি। বিগত আড়াই-তিন দশকে যে সমৃদ্ধির গুঞ্জরণ সুরাট, ভদোদরা এবং আমেদাবাদে শোনা গেছে, এখন সেই গুঞ্জরণ রাজকোট, জামনগর ও ভাবনগরে শোনা যাবে। সৌরাষ্ট্রের সমৃদ্ধি সম্পর্কে আমার বিশ্বাস এ জন্য অত্যন্ত প্রগাঢ়। কারণ, এখানে শিল্পোদ্যোগ, কৃষি ও পর্যটন – এই তিনটিরই অভূতপূর্ব সম্ভাবনা রয়েছে। আজকের এই কর্মসূচি এই লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়া ডবল ইঞ্জিন সরকারের প্রচেষ্টাগুলির একটি প্রত্যক্ষ প্রমাণ। ভাবনগর সমুদ্র তটবর্তী একটি জেলা। গুজরাট দেশের সর্ববৃহৎ সমুদ্র তট সম্পন্ন রাজ্য। কিন্তু, স্বাধীনতার পর অনেক দশক ধরে দেশের তটবর্তী এলাকাগুলির উন্নয়নকে ততটা গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে এই বিশাল তটবর্তী এলাকায় বসবাসকারী জনজীবন অনেক সমস্যা-সঙ্কুল হয়ে উঠেছিল। সমুদ্রের লবণাক্ত জল এই এলাকার মানুষের কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একের পর এক তটবর্তী গ্রামের মানুষ গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া শুরু করেছিলেন। নবীন প্রজন্মের অনেক মানুষ সুরাটে যেতেন, সেখানে এক কামরায় ১০-১৫-২০ জন অনেক কষ্টে বসবাস করতেন। অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি ছিল।

বন্ধুগণ,

বিগত দুই দশকে গুজরাটের তটবর্তী এলাকাকে ভারতের সমৃদ্ধির সিংহ দরজা হিসাবে গড়ে তোলার জন্য আমরা সততার সঙ্গে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। এর ফলে, কর্মসংস্থানের অনেক নতুন নতুন সুযোগ গড়ে উঠেছে। বিগত দিনে আমরা গুজরাটে অনেক নতুন সমুদ্র বন্দর গড়ে তুলেছি, অনেক পুরনো সমুদ্র বন্দরের আধুনিকীকরণ করিয়েছি। গুজরাটে আজ ৩টি বড় বড় এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে, পেট্রোকেমিকেল হাব গড়ে উঠেছে এবং দেশের মধ্যে গুজরাটই প্রথম রাজ্য যেখানে এলএনজি টার্মিনাল গড়ে উঠেছে। রাজ্যের তটবর্তী এলাকাগুলিতে আমরা কয়েকশো তটবর্তী শিল্পোদ্যোগ গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করেছি, ছোট বড় অনেক শিল্পোদ্যোগ গড়ে উঠেছে। এই শিল্পোদ্যোগগুলির জ্বালানীর চাহিদা পূরণ করতে আমরা ‘কোল টার্মিনালস্‌’ – এর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। আজ গুজরাটের তটবর্তী এলাকাগুলিতে এমন অনেক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, যা শুধু গুজরাট নয়, সারা দেশকেই জ্বালানী সরবরাহ করে। আমাদের মৎস্যজীবী ভাই ও বোনদের সাহায্য করার জন্য আমরা বেশ কিছু মৎস্য বন্দর গড়ে তুলেছি। ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার্স এবং মৎস্য প্রক্রিয়াকরণকেও উৎসাহ যুগিয়েছি। মৎস্য বন্দরগুলির এমন অনেক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক আমরা গড়ে তুলেছি, আর তারপর সেগুলিকে ক্রমাগত বিস্তারিত করে চলেছি। আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়াও সমানতালে এগিয়ে চলেছে। গুজরাটের তটবর্তী এলাকাগুলিতে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের প্রসারের জন্য আমরা তটবর্তী বাস্তুতন্ত্রকে আরও সুরক্ষিত ও শক্তিশালী করে তুলেছি। কেন্দ্রীয় সরকারের তৎকালীন একজন মন্ত্রী বলেছিলেন যে, ম্যানগ্রোভ অরণ্য কিভাবে বাড়ানো যায়, তা ভারতের সমস্ত তটবর্তী রাজ্যের উচিৎ গুজরাটের কাছ থেকে শেখা।

আমরা অ্যাকুয়া কালচার – এর বিকাশকেও আমরা ক্রমাগত উৎসাহ যুগিয়েছি। সমুদ্র গুটিকা চাষের ক্ষেত্রে দেশের অগ্রণী রাজ্যগুলির মধ্যে গুজরাট অন্যতম। আজ গুজরাটের তটবর্তী এলাকা দেশে আমদানী-রপ্তানীর ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালনের পাশাপাশি, লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমও হয়ে উঠেছে। আজ গুজরাটের তটবর্তী এলাকা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন এবং হাইড্রোজেন বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রেও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। আমরা সৌরাষ্ট্রকেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। সৌরাষ্ট্র যত বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমৃদ্ধ হবে, গুজরাট তথা দেশ ততই লাভবান হবে। সেজন্য এই অঞ্চলকে বিদ্যুৎ  উৎপাদনের হাব হিসাবে গড়ে তুলতে আমরা নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছি। এখন এই এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে উঠতে শুরু করেছে। আজ পালিতানায় যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটির উদ্বোধন হ’ল, তারফলে ঐ এলাকার অনেক পরিবার সুলভে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাবেন। একটা সময় ছিল, আজ যার বয়স ২০-২২ বছর তাঁরা কল্পনাও করতে পারবেন না যে, আমাদের গুজরাটে একটা এমন সময় ছিল, যখন সন্ধ্যায় খাবার সময় বিদ্যুৎ এসে গেলে সকলে খুব খুশি হয়ে যেতেন। আমার মনে আছে যে, যখন আমি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলাম, প্রথম দিন থেকেই মানুষের দাবি ছিল যে, সন্ধ্যায় খেতে বসার সময় যাতে বিদ্যুৎ থাকে, সেই ব্যবস্থা করুন। সেই সমস্ত দুঃখের দিন আজ অতীত।

আজ গুজরাটে পর্যাপ্ত বিদ্যুতএর যোগান থাকার ফলে নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ গড়ে উঠছে, শিল্পোদ্যোগ গড়ে উঠছে। ধোলেরাতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন, মহাকাশ এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্প ক্ষেত্রে যে পরিমাণ বিনিয়োগ আসছে, তার ফলে ভাবনগরের জনগণ উপকৃত হবেন। ভাবনগরের প্রতিবেশী এলাকাগুলির উন্নয়নের ফলে সেইদিন আর দূরে নেই, যখন আমেদাবাদ থেকে ধোলেরা হয়ে ভাবনগর পর্যন্ত গোটা এলাকার উন্নয়ন নতুন নতুন উচ্চতা স্পর্শ করবে।

ভাই ও বোনেরা,

ভাবনগর আজ বন্দর-কেন্দ্রিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে বিকশিত হচ্ছে। এই বন্দরগুলির সঙ্গে সারা দেশে ভিন্ন ভিন্ন শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রগুলির বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। মাল গাড়ির জন্য যে স্বতন্ত্র রেল লাইন পাতা হচ্ছে, সেগুলিও এই বন্দরগুলিকে ঐ বন্দরগুলিকে শিল্প হাবগুলির সঙ্গে যুক্ত করবে। এছাড়াও, মহাসড়ক ও রেলপথের নতুন নতুন নেটওয়ার্কও গড়ে উঠবে। পিএম গতিশক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান এই যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রকল্পগুলিকে নতুন শক্তি যোগাতে চলেছে। অর্থাৎ, ভাবনগর সমুদ্র বন্দর আত্মনির্ভর গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা পালন করবে এবং শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও গড়ে তুলবে। এখানে গুদামজাতকরণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পরিবহণ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যবসা সম্প্রসারিত হবে। এই বন্দর পুরনোগাড়ি স্ক্র্যাপিং, কন্টেনার উৎপাদন এবং ধোলেরা স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট রিজিয়নের মতো বড় বড় প্রকল্পগুলির প্রয়োজনও মেটাবে। এর ফলে, এখানে নতুন নতুন কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভর প্রকল্পের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

বন্ধুগণ,

আলং ইতিমধ্যেই বিশ্বের বৃহত্তম শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড হিসাবে গড়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকার যে নতুন ভেহিকেলস্‌ স্ক্র্যাপিং নীতি রচনা করেছে, তা যখন বাস্তবায়িত হবে, আমি জোর দিয়ে বলেছি যে, সারা ভারতে যখন এই নীতি বাস্তবায়িত হবে, তখন আপনারাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। কারণ, এই স্ক্র্যাপিং সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা অধিকাংশ এখানেই রয়েছেন। আপনারা বড় বড় জাহাজগুলিকে কিভাবে স্ক্র্যাপিং করে ফেলেন, ছোট যানবাহন স্ক্র্যাপিং-এর ক্ষেত্রে আপনারাই এখানে দেশের বৃহত্তম কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারবেন। আমি জানি, আমার ভাবনগরে চৌকস শিল্পোদ্যোগীদের এটা শেখাতে হবে না যে, তাঁরা শুধু দেশ নয়, বিদেশ থেকেও পুরনো গাড়ি আমদানী করে এখানে স্ক্র্যাপিং শুরু করে দেবেন।

বন্ধুগণ,

জাহাজ ভেঙ্গে যত লোহা বের করা হয়, এখনও পর্যন্ত তা শুধু নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত হ’ত। সম্প্রতি আমরা দেখছি যে, কন্টেনারের ক্ষেত্রে কোনও একটি দেশের উপর নির্ভর করলে বড় সঙ্কট তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে ভাবনগরের সামনে একটি নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। একদিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারতের অংশীদারিত্ব বাড়ছে আর অন্যদিকে বিশ্বের অনেক দেশ কন্টেনারের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য সরবরাহকারী সন্ধানে রয়েছে। সারা বিশ্বে আজ লক্ষ লক্ষ কন্টেনারের চাহিদা রয়েছে। ভাবনগরে নির্মীয়মান কন্টেনারগুলি আত্মনির্ভর ভারতকেও প্রাণশক্তি যোগাবে। আর এখানে অসংখ্য কর্মসংস্থানের সুযোগও গড়ে তুলবে।

বন্ধুগণ,

যখন কারও মনে সেবা ভাব ও পরিবর্তন আনার ইচ্ছাশক্তি থাকে, তখনই বড় বড় লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হয়। সুরাট থেকে ভাবনগর পর্যন্ত পরিবহণ ব্যবস্থা কেমন ছিল, তা আপনারা ভালোভাবেই জানেন। অনেক প্রতিবন্ধকতা দূর করে আমরা ঘোঘা – দহেজ ফেরি পরিষেবা চালু করে অনেক ঘণ্টার যাত্রা, সড়ক দুর্ঘটনা, জ্বালানী খরচ – এই সকল সমস্যার সমাধান আমরা করতে পেরেছি। অর্থ ও সময় – দুটিই বাঁচাতে পেরেছি। ঘোঘা – হাজিরা রো রো ফেরি পরিষেবা সৌরাষ্ট্র ও সুরাটের মধ্যে দূরত্ব ৪০০ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ১০০ কিলোমিটারেরও কম করে দিয়েছে। এই পরিষেবা শুরু হওয়ার পর সামান্য সময়ের মধ্যেই প্রায় ৩ লক্ষ যাত্রী এই পরিষেবা দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। ৮০ হাজারেরও বেশি গাড়ি পারাপার করেছে। এ বছর এখনও পর্যন্ত ৪০ লক্ষ লিটারেরও বেশি পেট্রোল-ডিজেল সাশ্রয় হয়েছে। অর্থাৎ, আপনাদের এই পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। আর আজ থেকে এই জলপথে বড় জাহাজ আসা-যাওয়ার পথও খুলে গেছে।

বন্ধুগণ,

আপনারা বুঝতে পারছেন যে, এই এলাকার সাধারণ মানুষ, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জীবনে এই পরিষেবা কত বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। কিন্তু, কোনও রকম হৈচৈ না করে বড় বড় বিজ্ঞাপনের পেছনে খরচ না করে এই কাজ হচ্ছে বন্ধুগণ। কারণ, আমরা কখনও ক্ষমতাকে প্রেরণা আর লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করিনি। আমরা শাসন ক্ষমতাকে সেবার মাধ্যম বলে মনে করি। এই সাফল্যগুলি আমাদের সেবার সংকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে যে কর্মযজ্ঞ চলছে তারি ফল। এই সেবা ভাবের ফলেই আমরা আপনাদের এত ভালোবাসা পেয়েছি। ক্রমাগত আপনাদের আশীর্বাদ আমাদের প্রতি আরও অধিক বর্ষিত হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের এসব পদক্ষেপের ফলে শুধু যে এই এলাকায় যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণে সুবিধা হয়েছে, তা নয়, পর্যটনও নতুন প্রাণশক্তি পেয়েছে। আমাদের সমুদ্র তটবর্তী ঐতিহ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে এই এলাকার পর্যটন সম্ভাবনাকে শক্তিশালী করে তুলতে গুজরাটের তটবর্তী এলাকায় অভূতপূর্ব গতিতে কাজ চলছে। লোথালে নির্মীয়মান মেরিটাইম মিউজিয়াম এক সময় বিশ্ববাসীর আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠবে, যেমন – কেওরিয়ার স্ট্যাচু অফ ইউনিটি ইতিমধ্যেই একটি নিজস্ব পরিচিতি গড়ে তুলছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, বিশ্বের প্রাচীণতম সমুদ্র বন্দর লোথাল আমাদের গুজরাটের সমুদ্র তটে অবস্থিত, আমাদের ভাবনগরের প্রান্তসীমায় রয়েছে। এই লোথাল আমাদের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যাকে সারা বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করে গড়ে তুলতে অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে। লোথালের পাশাপাশি, ভেলাওয়াদর ন্যাশনাল পার্ককে ইকো টুরিজম সার্কিটে যুক্ত করার ফলে ভাবনগর উপকৃত হবে। বিশেষ করে, ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীরা এর দ্বারা বিশেষ উপকৃত হবেন।

ভাই ও বোনেরা,

সৌরাষ্ট্রে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জীবনে বিগত দু’দশকে অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। একটা সময় ছিল, যখন তথ্যের অভাবে গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকার করতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের অনেক বিপদে পড়তে হ’ত। এমনকি, প্রাণ সঙ্কটও হ’ত। যখন আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন মৎস্যজীবীদের প্রত্যেককে সরকারের পক্ষ থেকে একটি লাল রঙের বাস্কেট দেওয়া হয়েছিল, যাতে ভিন্ন ভিন্ন বোতাম লাগানো ছিল। দুর্ঘটনার কবলে পড়লে সেই বোতাম টিপলে সরাসরি কোস্ট গার্ড অফিসে বার্তা পৌঁছতো, যাতে কোস্ট গার্ড তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করতে পারেন। ২০১৪ সালের পর এই ভাবনা থেকে আমি সারা দেশের জন্য এই ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া, মৎস্যজীবীদের নৌকাগুলির আধুনিকীকরণের জন্য ঋণে ভর্তুকির ব্যবস্থা আর কৃষকদের মতোই মৎস্যজীবীদের জন্য কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের ব্যবস্থা করেছি।

বন্ধুগণ,

আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, যখন সৌনি প্রকল্পের সুফল হিসাবে তাঁদের জীবনে পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি, আমার মনে পড়ে, যখন সৌরাষ্ট্রের রাজকোটে এসে এই সৌনি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলাম, তখন সমস্ত সংবাদ মাধ্যম বলছিল, দেখুন, নির্বাচন এসেছে তাই মোদীজী এসে ঘোষণা করে দিয়েছেন। নির্বাচনের পর ভুলে যাবেন। কিন্তু আমি বুক ঠুকে বলছি যে, তাদের সকলকে আমি ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছি। আজ সৌনি প্রকল্পের মাধ্যমে মা নর্মদার জলকে আমরা যেখানে যেখানে পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প করেছিলাম, সব জায়গাতেই দ্রুতগতিতে পৌঁছে যাচ্ছে। ভাই ও বোনেরা, আমরা যা বলি তাই করি। কারণ, আমরা সমাজের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করি।

বন্ধুগণ,

আজ এই সৌনি প্রকল্পের একটা অংশের শুভ উদ্বোধন হ’ল। আর অন্য বেশ কয়েকটি অংশ গড়ে তোলার কাজ শুরু হ’ল। আমরা কাজকে থেমে থাকতে দিই না। আজ যে অংশটির শুভ উদ্বোধন হ’ল, তার ফলে ভাবনগর এবং আম্রেলি জেলার অনেকগুলি বাঁধ পর্যন্ত জল পৌঁছে যাচ্ছে। এর ফলে, ভাবনগরের গারিয়াধার, জেসর, মহুওয়ার তালুক এবং আম্রেলি জেলার রাজুলা ও খাম্বা তালুকের অনেক গ্রামের কৃষকরা লাভবান হবেন। ভাবনগর, গির সোমনাথ, আম্রেলি, বোটাদ, জুনাগড়, রাজকোট ও পোরবন্দরের মতো জেলাগুলি কয়েকশো গ্রাম ও কয়েক ডজন শহরে মা নর্মদার জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্পের কাজ নতুনভাবে শুরু হ’ল।

ভাই ও বোনেরা,

সাধারণ মানুষের অভাব দূর করা, যাঁরা উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে পেছনে পড়ে রয়েছেন, তাঁদের হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া – এটাই আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকারের দায়বদ্ধতা। দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষের সামনে কর্মসংস্থানের পথ খুলে দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। সরকারের কাছ থেকে সামান্য সাহায্য পেলেই তাঁরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন, দিনরাত পরিশ্রম করেন এবং দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে দারিদ্রকে পরাজিত করেন। আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন প্রায়ই গরীব কল্যাণ মেলার আয়োজন করতাম। তেমনই একটি কর্মসূচিতে ভাবনগরের এক দিব্যাঙ্গ বোনকে আমি তিন চাকার একটি সাইকেল দিয়েছিলাম, তখন সেই বোনটি আমাকে যা বলেছিলেন, তা আমার আজও মনে আছে। তাঁর এই বক্তব্যে ভাবনগর তথা গুজরাটবাসীর মেজাজ বোঝা যায়। তিনি বলেছিলেন, আমি তো সাইকেল চালাতে পারি না, আমাকে ইলেক্ট্রিকাল ট্রাই সাইকেল দিন। আমার উপর ভাবনগর তথা গুজরাটবাসীর এই ভরসাই আমার সবচেয়ে বড় পুঁজি। গরীবদের এই স্বপ্ন ও আকাঙ্খাগুলি আমাকে নিরন্তর কাজ করার প্রাণশক্তি যোগায়। আপনাদের আশীর্বাদের এই প্রাণশক্তি আপনাদের ভালোবাসা যেন এভাবেই আমার উপর বর্ষিত হতে থাকে। আজ আমি অবশ্যই অনেক বছর পর এসেছি, দেরীতে এসেছি কিন্তু খালি হাতে আসিনি। বিগত বছরগুলির যত বকেয়া ছিল, সব নিয়ে এসেছি। আর এমনিতেও ভাবনগরের জনগণের উপর আমার অধিকার রয়েছে। যখনই ভাবনগরে আসি, তখন নরসিবাপা গাঁঠিয়া ও পেঁড়ার কথা মনে পড়ে। আর যখন গাঁঠিয়া আর পেঁড়ার কথা মনে পড়ে, তখন হরি সিং দাদার কথাই বেশি করে মনে পড়ে। অনেক বছর আগে যখন আমি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করিনি, তখন কার্যকর্তা রূপে এখানে আসতাম। তখন হরি সিং দাদাই আমাকে এই গাঁঠিয়া আর পেঁড়া খাওয়া শিখিয়েছিলেন। এরপর, যখন আমি আমেদাবাদে থাকা শুরু করলাম, তখন তিনি আমার জন্য গাঁঠিয়া পাঠাতেন, আমার কথা ভাবতেন। আজ যখন ভাবনগর এসেছি, তখন নবরাত্রির ব্রত চলছে। এখন এইসব খাবারের কথা ভেবে লাভ নেই। তবুও বলবো, ভাবনগরের গাঁঠিয়া ইতিমধ্যেই দেশ তথা বিশ্বে অনেক মানুষের প্রিয় হয়ে উঠেছে। এটা কম কথা নয় বন্ধুগণ, এটাই ভাবনগরের শক্তি। বন্ধুগণ, আজ আমি এখানে অনেকগুলি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এসেছি। বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধনের পাশাপাশি, অনেকগুলি প্রকল্পের শিলান্যাসও করেছি। তাই দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলছি, এই প্রকল্পগুলি ভাবনগরের নবীন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করবে। কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না যে, কত দ্রুতগতিতে এই প্রকল্পগুলি ভাবনগরের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এর ফলে, সমগ্র সৌরাষ্ট্র তথা গুজরাট লাভবান হবে, দেশও লাভবান হবে। ভাই ও বোনেরা, আপনারা আজ যত ভালোবাসা ও আশীর্বাদ বর্ষণ করেছেন, যত বিপুল সংখ্যায় এসেছেন, তার জন্য আমি অন্তর থেকে আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার সঙ্গে দু’হাত উপরে তুলে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে বলুন –

ভারত মাতা কি – জয়

ভারত মাতা কি - জয়

ভারত মাতা কি - জয়

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

বিঃদ্রঃ : প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণের কিছু অংশ গুজরাটিতে ছিল আর বাকিটা হিন্দিতে।

PG/SB/SB



(Release ID: 1863860) Visitor Counter : 118