প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

সংসদ ভবনে উপ-রাষ্ট্রপতি শ্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডুর বিদায়ী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 08 AUG 2022 10:28PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০৮ অগাস্ট, ২০২২

 

মাননীয় উপ-রাষ্ট্রপতি, সংসদের বর্ষীয়ান সদস্য ও অন্য প্রতিনিধিরা এবং আজ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট জনেরা।

আমি যতদূর ভেঙ্কাইয়াজীকে চিনি, আমার মনে হয় না তাঁর কোনও বিদায় অনুষ্ঠান সম্ভব। এমনকি, ১১ তারিখের পরও আপনি কোনও কাজের বা তথ্যের জন্য কিংবা আপনার জীবনের কোনও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বিষয়ে জানতে চেয়ে তিনি আপনাকে ফোন করতেই পারেন। এটাই হ’ল তাঁর চলার পথ। তিনি সর্বদাই কর্মচঞ্চল। প্রত্যেকের মাঝে সবসময় উপস্থিত থাকেন তিনি। যদি তাঁর জীবনের দিকে পেছন ফিরে তাকাই, তা হলে আমি বলতে চাইবো সেই সময়ের কথা, যখন অটলজীর সরকার গঠিত হয়েছিল এবং আমি দলের সাংগঠনিক কাজ করতাম। আমি যেহেতু সাংগঠনিক কাজে যুক্ত ছিলাম, তাই স্বাভাবিকভাবেই আমার ও ভেঙ্কাইয়াজীর মধ্যে একটু বেশি কথা হ’ত। তখন এটি মনে করা হচ্ছিল যে, দক্ষিণ ভারত থেকে ভেঙ্কাইয়াজীর মতো কোনও বর্ষীয়ান নেতা অবশ্যই মন্ত্রী হবেন। তখন তিনি আমায় বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব ব্যাপার – কাকে কোন মন্ত্রকের দায়িত্ব দেবেন। কিন্তু, ব্যক্তিগতভাবে তিনি কোনও উল্লেখযোগ্য মন্ত্রকের দায়িত্ব চান না। তিনি বলেন, যদি প্রধানমন্ত্রী কিছু মনে না করেন, তবে তিনি গ্রামোন্নয়নের জন্য কাজ করতে আগ্রহী। গ্রামোন্নয়ন ছিল, তখন তাঁর মনে। এটি প্রমাণ করে, কাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতাকে।

অটলজীর মনে ভেঙ্কাইয়াজীর জন্য অন্য ভাবনা ছিল এবং সেই মতো তিনি সিদ্ধান্ত নেন। ভেঙ্কাইয়াজী সেখানে তাঁর দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারুভাবে পালন করেন। এখন আরও একটি বিষয়ে তাঁর অবদানের কথা বলতেই হয়। ভেঙ্কাইয়াজী হলেন সম্ভবত এমন একজন ব্যক্তি, যিনি কেবলমাত্র গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক বেছেছেন তা নয়, পাশাপাশি নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছেন। এভাবেই তিনি উন্নয়নের দুই মূল ধারায় তাঁর দক্ষতা দেখিয়েছেন।

তিনি সম্ভবত প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি, রাজ্যসভার প্রথম চেয়ারম্যান, যিনি রাজ্যসভার সদস্যও ছিলেন। খুব কম মানুষেরই এই সৌভাগ্য হয়। সম্ভবত, ভেঙ্কাইয়াজী একমাত্র ব্যক্তি, যিনি এই সুযোগ পেয়েছেন। এখন কথা হ’ল – যিনি কিনা দীর্ঘ সময় রাজ্যসভায় ছিলেন এবং সংসদ বিষয়ক দায়িত্ব সামলেছেন। তিনি সভার বিষয়ে সবটুকুই জানেন। এমনকি, বিভিন্ন দল যা করে এবং ট্রেজারি বেঞ্চের সম্ভাব্য পদক্ষেপ – সবকিছুই তাঁর নখদর্পণে। চেয়ারম্যান হিসাবে সভার দু’দিক সম্পর্কেই ছিলেন তিনি ওয়াকিবহাল। তিনি দেশের জন্য সভায় ভালোভাবে যাতে কাজ চলতে পারে, সে বিষয়ে উদ্যোগী হন। সংসদ বিষয়ক কমিটিগুলির কাজ যেন আরও ফলপ্রসূ হয়। সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করেন তিনি। সংসদীয় কমিটির কাজকর্মের বিষয়ে এতটা যত্নশীল হওয়া সম্ভবত প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ভেঙ্কাইয়াজী। তিনি সর্বদাই তাঁর সন্তোষ ও অসন্তোষ জানিয়ে কাজের মানোন্নয়নের চেষ্টা চালিয়েছেন।

আমি আশা করি, আজ আমরা ভেঙ্কাইয়াজীর কাজের প্রশংসা করবো। পাশাপাশি, চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি আমাদের থেকে যা চাইতেন, তা পূরণেরও চেষ্টা করবো। আমাদের জীবনে আমরা যদি তাঁর পরামর্শ মেনে চলি, তবে বিশেষভাবে উপকৃত হব।

ভেঙ্কাইয়াজী তাঁর দায়িত্বকালের একটি বড় সময় সফর করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি বিভিন্ন জায়গায় গেছেন – এটিই ছিল তাঁর গত পাঁচ দশকের জীবন। করোনাকালে একদিন আমরা এমনই বসেছিলাম ও সাধারণ কথা বলছিলাম। আমি তাঁকে জিজ্ঞেসা করি যে, এই অতিমারী ও লকডাউন পরিস্থিতিতে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন? সকলেই আমার প্রশ্নে অবাক হন। আমি আমি আবারও জিজ্ঞেস করি, কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন? কেউ কোনও জবাব দেননি। তাই, বাধ্য হয়ে আমিই বলি, এই পরিস্থিতিতে ‘সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছেন ভেঙ্কাইয়া নাইডুজী’। কারণ, তিনি সর্বদাই কাজের মধ্যে থাকেন। একজায়গায় বসে থাকা তাঁর কাছে শাস্তিস্বরূপ। কিন্তু, তিনি একজন উদ্যোগী ব্যক্তি। করোনাকালকেও তিনি বিশেষভাবে ব্যবহার করেন। তিনি শুরু করেন, ‘টেলি ট্রাভেল’। আমি জানি না, এই কথাটি ঠিক না ভুল। তবে, কেনো আমি একথা বললাম, তা বলি। ভেঙ্কাইয়াজী প্রতিদিন সকালে তাঁর টেলিফোন ডায়েরী নিয়ে বসতেন এবং তাঁর ৫০ বছরের চেনা ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে ৩০, ৪০ বা ৫০ জনকে ফোন করতেন। তাঁদের ভালো-মন্দের খোঁজ নিতেন। করোনার জন্য তাঁদের সমস্যার কথা জানতে চাইতেন এবং সম্ভব হলে সাহায্য করতেন।

তিনি তাঁর সময়কে যথাযথ ব্যবহার করেছেন। তিনি যখন দেশের দূরবর্তী অঞ্চলের সাধারণ কোনও কর্মীকে ফোন করেছেন, তখন সেই ব্যক্তি-বিশেষ খুব উৎসাহিত হয়েছেন। করোনার সময় ভেঙ্কাইয়াজীর ফোন পাননি, এমন একজন সাংসদও খুব সম্ভবত নেই। তিনি প্রত্যেকের ভালো-মন্দের খোঁজ নিয়েছেন এবং তাঁদের টিকার বিষয়ে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাড়ির কর্তার মতো তিনি প্রত্যেকের যত্ন নিয়েছেন। এভাবেই কাজ করেছেন তিনি।

ভেঙ্কাইয়াজীর অন্য আরেকটি গুণ রয়েছে। আমি বলি যে, তিনি কখনই আমাদের থেকে দূরে থাকতে পারেন না। এ বিষয়ে আমি একটা উদাহরণ দিই। একবার ভোটের প্রচারের সময় তিনি বিহারে গিয়েছিলেন। আচমকাই তাঁর হেলিকপ্টারটিকে ভূমিতে অবতরণ করতে হয়। ঐ এলাকার কিছু নিরাপত্তাজনিত সমস্যাও ছিল। কিন্তু, কাছাকাছি এলাকার একজন কৃষক এগিয়ে আসেন এবং তাঁর মোটর সাইকেলে করে ভেঙ্কাইয়াজীকে নিকটবর্তী থানায় নিয়ে যান।

এখন দেশে তাঁর জনজীবনের কথা যদি দেখি, তা হলে বর্তমানে ভেঙ্কাইয়াজীর আজও ঐ কৃষক পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এটাই হলেন তিনি। বিপদের সময় বিহারের কোনও দূরবর্তী গ্রামে একজন কৃষক তাঁকে সাহায্য করেছিলেন, ভেঙ্কাইয়াজী আজও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।

আমি বলি, তিনি সর্বদাই আমাদের সঙ্গে আছেন। একজন কর্মতৎপর সহকর্মী এবং একজন পথপ্রদর্শক হিসাবে তিনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন। তাঁর অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য বিশেষ উপকারী হবে। ভেঙ্কাইয়াজী এখন সমাজের প্রতি নতুন দায়িত্ব পালনের জন্য এগিয়ে চলেছেন। আজ সকালে তিনি আমাকে বলছিলেন, তিনি যখন উপ-রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তিনি ব্যাথিত ছিলেন। তার কারণ হ’ল – যে দলের জন্য তিনি তাঁর গোটা জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই দল থেকে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। সাংবিধানিক কিছু বাধ্যবাধকতার জন্য তাঁকে এই কাজ করতে হয়। তবে আমি নিশ্চিত যে, পাঁচ বছরের অভাব তিনি পূরণ করে নেবেন। তাঁর পুরনো বন্ধুদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেওয়ার কাজ তিনি চালিয়ে যাবেন। ভেঙ্কাইয়াজীর জীবন আমাদের জন্য এক বিশাল সম্পদ। আসুন, তাঁর কাছ থেকে আমরা যা শিখেছি, তা অন্যকে বিতরণ করি। মাতৃভাষার প্রসারে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

আপনি যদি এ বিষয়ে উৎসাহী থাকেন, তবে আমি আপনাকে ‘ভাষিনী’ কথা বলবো। এটি হ’ল – ভারত সরকারের চালু করা একটি ওয়েবসাইট। এতে ভারতীয় ভাষার অনুবাদের সুবিধা রয়েছে। এটি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট। আমি অন্য কিছু ভাবনা রয়েছে। আমি চাই, অধ্যক্ষ মহোদয় ও হরিবংশজীকে এই বিষয়টি দেখার জন্য। হরিবংশজীর এ বিশয়ে জ্ঞান রয়েছে। তাই, নিশ্চিতভাবে তিনি এই কাজটি করতে পারবেন। বিশ্বের অভিধানে নতুন নতুন শব্দ যোগ করার ঐতিহ্য রয়েছে। এই শব্দগুলিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাও করা হয়। কোনও দেশের বিশেষ কোনও ভাষার বিশেষ কোনও শব্দ যখন ইংরাজী অভিধানে স্থান করে নেয়, তখন তা অত্যন্ত গর্বের বিষয় হয়ে ওঠে। উদাহরণ-স্বরূপ আমি বলতে পারি, ‘গুরু’ শব্দটি ইংরাজী অভিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ ধরনের আরও বিভিন্ন শব্দ রয়েছে।

সংসদের উভয় সভায় যখন বিভিন্ন সাংসদরা মাতৃভাষায় তাঁদের বক্তব্য রাখেন, তখন অনেক সুন্দর শব্দ উঠে আসে। যাঁরা ঐ ভাষাটি জানেন, তাঁদের জন্য বিশেষ বিশেষ শব্দ অত্যন্ত উপযোগী ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। আমাদের সংসদের উভয় সভায় কি প্রতি বছর এ ধরনের নতুন শব্দগুলি সঙ্কলনের সুযোগ হতে পারে? আমরা যদি এই কাজটি করতে পারি, তা হলে মাতৃভাষার প্রতি ভেঙ্কাইয়াজীর যে বিশেষ ভালোবাসা রয়েছে, সেই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। আমরা যখনই এই কাজটি করবো, তখনই আমরা ভেঙ্কাইয়াজীকে মনে করবো।

আমি আরও একবার আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাই। ভেঙ্কাইয়াজীকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। তাঁর পুরো পরিবারকে জানাই আমার শুভ কামনা।

নমস্কার।

প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে ছিল।

 

PG/PM/SB



(Release ID: 1850347) Visitor Counter : 117