প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

চেন্নাইয়ে আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণ

Posted On: 29 JUL 2022 12:37PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৯ জুলাই, ২০২২

তামিলনাড়ুর সম্মানীয় রাজ্যপাল শ্রী আর এন রবিজি, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী শ্রী এম কে স্তালিনজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী এল মুরুগনজি, অন্যান্য মন্ত্রীগণ ও অতিথি-অভ্যাগতগণ, আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ আর ভেলরাজজি, আমার তরুণ বন্ধুরা, তাঁদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা – “অনৈবকুম্ভ ভানাক্কম।”

প্রথমেই আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আজ যাঁরা স্নাতক হচ্ছেন তাঁদের সকলকে অভিনন্দন। আপনারা ইতিমধ্যেই আপনাদের মনে ভবিষ্যৎ গঠন করেছেন। তাই আজ শুধু সাফল্যের দিন নয়, লক্ষ্য পূরণের দিনও। আপনাদের সব স্বপ্ন পূরণ হোক, আমি এই কামনা করি। আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারীদের জন্য এ এক বিশেষ মুহূর্ত। আপনারা দেশ গঠন করছেন, আগামীদিনের নেতা তৈরি করছেন। আপনারা অনেক পড়ুয়ার দলকে আসতে ও যেতে দেখেছেন। প্রতিটি দলই কোনও না কোনভাবে বিশেষ। তাদের নিজেদের কিছু স্মৃতিকথা রয়েছে। যাঁরা আজ স্নাতক হচ্ছেন, বিশেষভাবে তাঁদের অভিভাবকদের আমি অভিনন্দন জানাই। আপনাদের সন্তানের সাফল্যের জন্য আপনাদের ত্যাগ বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।

আজ আমরা চেন্নাইয়ের তরুণ যুবাদের সাফল্য উদযাপন করছি। ১২৫ বছর আগে ১৮৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বামী বিবেকানন্দ মাদ্রাজ টাইমস-এ বক্তব্য রেখেছিলেন। তাঁকে ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, “দেশের তরুণ সম্প্রদায়ের ওপর আমার বিশ্বাস, আধুনিক প্রজন্ম হবে আমার যোদ্ধা। তাঁরা সিংহের মতো সব সমস্যার সমাধান করবেন।” আজও সেই শব্দগুলি সমান প্রাসঙ্গিক, কিন্তু বর্তমান সময়ে কেবলমাত্র ভারত তার তরুণ প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তা নয়, গোটা বিশ্ব আশা নিয়ে ভারতের তরুণদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কারণ, তাঁরাই দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি এবং ভারত হল বিশ্বের উন্নয়নের অন্যতম ইঞ্জিন। এটা অত্যন্ত সম্মানের। পাশাপাশি, এর দায়িত্বও অনেক। আমি আশা করি আপনারা সকলেই তা পূরণ করবেন।

বন্ধুগণ,

আমরা যখন আমাদের তরুণদের ওপর বিশ্বাস নিয়ে কথা বলি, তখন ভারতরত্ন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এ পি জে আব্দুল কালামের কথা কি করে ভুলতে পারি? আমি নিশ্চিত, আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের জন্য এটি অত্যন্ত গর্বের যে ডঃ কালাম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। আমি শুনেছি, তিনি যে ঘরটিতে থাকতেন সেটিকে একটি সংগ্রহশালায় পরিণত করা হয়েছে। তাঁর চিন্তাভাবনা ও মূল্যবোধ আমাদের তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করুক।

বন্ধুগণ,

আপনারা এক বিশেষ সময়ে স্নাতক হচ্ছেন। কিছু মানুষ একে বিশ্বে অনিশ্চয়তার সময় বলে মনে করতে পারেন, কিন্তু আমি বলব এটি এক বিশেষ সুযোগের সময়। কোভিড-১৯ অতিমারী ছিল একটি বিশেষ ঘটনা, এই শতকের অন্যতম গুরুতর সঙ্কট। প্রতি দেশেই এর ছোঁয়া লেগেছে। ভারত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই সঙ্কটের মোকাবিলা করছে। এজন্য ধন্যবাদ জানাই আমাদের বিজ্ঞানীদের, স্বাস্থ্যকর্মীদের ও সাধারণ জনগণকে যার ফলশ্রুতিতে আজ ভারত প্রায় সবক্ষেত্রেই এক নতুন জীবনের সঞ্চার করছে, তা শিল্প হোক, উদ্ভাবন হোক, বিনিয়োগ হোক বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য - সবক্ষেত্রেই ভারত এগিয়ে রয়েছে সামনের দিকে। আমাদের শিল্প বেড়েছে অনেকটাই। উদাহরণের জন্য বলতে হয় ইলেক্ট্রনিক্স উৎপাদনের ক্ষেত্রটির কথা। গত বছরে ভারত ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক দেশ। উদ্ভাবন এখন জীবনযাত্রার অন্যতম অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র ছয় বছরে মান্যতাপ্রাপ্ত স্টার্ট-আপ-এর সংখ্যা বেড়ে ১৫ হাজার শতাংশে পৌঁছেছে! হ্যাঁ, আপনারা ঠিক শুনছেন, ১৫ হাজার শতাংশ! ২০১৬ সালে এটি ছিল মাত্র ৪৭০, আর এখন তা প্রায় ৭৩ হাজার! যখন শিল্প এবং উদ্ভাবন ভালো কাজ করে, তখন বিনিয়োগ আপনা থেকেই আসে। গত বছর ভারত রেকর্ড সংখ্যক এফডিআই পেয়েছে যার পরিমাণ ছিল ৮৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। অতিমারী-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমাদের স্টার্ট-আপও রেকর্ড সংখ্যক বিনিয়োগ পেয়েছে। সর্বোপরি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে ভারতের স্থান এখন এযাবৎকালের মধ্যে সেরা। পণ্য ও পরিষেবা ক্ষেত্রে রপ্তানিতে ভারত এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে। বিশ্বের এক কঠিন সময়ে আমরা খাদ্যশস্য রপ্তানি করেছি। সাম্প্রতিককালে আমরা আমাদের পশ্চিমে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর সঙ্গে এবং পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। ভারত এখন বাধা-বিঘ্নকে সুযোগে পরিবর্তন করছে।

বন্ধুগণ,

আপনাদের অধিকাংশই ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এই শতকে প্রযুক্তি-নির্ভর ক্ষেত্রের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আপনাদের কাছে তিনটি মূল বিষয় গুরুত্ব পাবে। এর প্রথমটি হল, প্রযুক্তি আপনারা পছন্দ করেছেন। প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে আপনাদের স্বাচ্ছন্দ্য রয়েছে। এমনকি, দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তিও বর্তমানে এটি গ্রহণ করছে। কৃষকরা বাজার, আবহাওয়া এবং জিনিসপত্রের মূল্য সম্পর্কে তথ্য জানতে অ্যাপ ব্যবহার করছেন। জীবনযাত্রাকে সহজ করতে গৃহিনীরা ব্যবহার করছেন প্রযুক্তি। শিশুরা পড়াশোনা করছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। ছোট ছোট বিক্রেতারাও ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন করছেন। আপনারা যদি তাঁদের নগদে টাকা দিতে চান, অনেকেই বলবেন তাঁরা লেনদেনের জন্য ডিজিটাল মাধ্যমই পছন্দ করেন। ডিজিটাল লেনদেন ও ফিনটেক-এর ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের অন্যতম নেতা। আপনার যাদু দেখানোর জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এক বিশাল সম্ভাবনার বাজার আপনার অপেক্ষায়।

দ্বিতীয় যে বিষয়টির কথা আমি বলব তা হল ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বাস। কিছুদিন আগে পর্যন্ত সামাজিক ব্যবস্থাপনায় কোনও তরুণের নিজেকে একজন উদ্যোগপতি হিসেবে পরিচয় দেওয়া কঠিন ছিল। সাধারণভাবে মানুষ তাঁদের বলতেন জীবনে দাঁড়ানোর জন্য অর্থাৎ, মাস মাইনের চাকরি পাওয়ার জন্য। কিন্তু, বর্তমানে ছবিটা পালটে গেছে সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে। মানুষ এখন জিজ্ঞাসা করেন, আপনি নিজে কিছু করার চেষ্টা করছেন কিনা! এমনকি, কেউ যদি চাকরিও করেন তাহলেও তাঁকে একজন স্টার্ট-আপ হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়। আপনি এখন নিজেই ঝুঁকি নিতে পারছেন আবার অন্যের তৈরি করা সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার করতে পারছেন।

তৃতীয় যে বিষয়টির কথা আমি বলব তা হল – সংস্কারের ইচ্ছে। এর আগে দেশের কাছে মজবুত সরকারের অর্থ ছিল, প্রত্যেকের প্রতিটা কিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু আমরা এই ধারণা পালটে দিয়েছি। এক মজবুত সরকার কখনই প্রতি মানুষের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে না। এক বলিষ্ঠ সরকার দায়িত্বশীল। সে তার নিজের ক্ষমতা জানে এবং অন্যদের সম্ভাবনা বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। এক বলিষ্ঠ সরকারের শক্তি অন্যের কাজ করার ক্ষমতা স্বীকার মধ্য দিয়েই পরিস্ফুট হয়। এক বলিষ্ঠ সরকার এটা স্বীকার করে যে সে সবকিছু জানতে বা করতে পারে না। তাই, আপনারা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংস্কার দেখতে পাচ্ছেন এবং এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনভাবে সাধারণ মানুষের কাজ করার অধিকারের বিষয়টিও।

নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি তরুণ প্রজন্মকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। জীবনযাত্রা সহজ করার জন্য সাম্প্রতিককালে প্রায় ২৫ হাজার নীতি বাতিল করা হয়েছে। কর কাঠামোর সংস্কার করা হয়েছে, শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে ড্রোন, মহাকাশ সহ বিভিন্ন নতুন ক্ষেত্র আরও উন্মোচিত করার জন্য সেখানেও সংস্কার আনা হচ্ছে ব্যাপক পরিমাণে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ‘পিএম গতি শক্তি মাস্টার প্ল্যান’-এর মাধ্যমে ব্যাপক সংস্কার করা হচ্ছে। এসব কিছুই আপনাদের উন্নয়নের জন্য নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে।

আগামী ২৫ বছর আপনার জন্য ও ভারতের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এটি অমৃতকাল। আমরা আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষের দিকে এগিয়ে চলেছি। আমরা ভাগ্যবান যে আপনাদের মতো অনেক তরুণ তাঁদের নিজেদের ভবিষ্যৎ তৈরির পাশাপাশি দেশের ভবিষ্যতও গঠন করবেন। তাই আপনাদের উন্নতি ভারতের উন্নতি। আপনার শিক্ষা ভারতের শিক্ষা। আপনার জয় ভারতের জয়। তাই আপনি যখন আপনার বা আপনার পরিবারের জন্য কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন ... মনে রাখবেন, স্বাভাবিকভাবেই এটি কিন্তু ভারতের পরিকল্পনাও হবে। কেবলমাত্র আপনাদের প্রজন্মের কাছেই এই ঐতিহাসিক সুযোগ রয়েছে। একে গ্রহণ করুন এবং এর সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার করুন। আরও একবার, আপনাদের সকলকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

PG/PM/DM



(Release ID: 1846243) Visitor Counter : 128