রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়
রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্বভার গ্রহণের পর দেশবাসীর প্রতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মুর বার্তা
प्रविष्टि तिथि:
25 JUL 2022 12:48PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৫ জুলাই, ২০২২
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে স্বাধীন ভারতের নাগরিকদের উচিৎ এই অমৃতকালে দ্রুততার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করা। এই ২৫ বছরে ‘সবকা প্রয়াস’ এবং ‘সবকা কর্তব্য’ – এই দুটি পথ ধরে লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে কর্তব্যের মধ্য দিয়েই সমবেত প্রচেষ্টায় আমাদের সামিল হওয়া প্রয়োজন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এক ভাষণে একথা বলেছেন দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি বলেন, আগামী ২৬ জুলাই আমরা কার্গিল বিজয় দিবস উদযাপন করতে চলেছি। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কাছে এই দিনটি হল শৌর্য ও সংযমের এক বিশেষ প্রতীক। এই উপলক্ষে দেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং সমস্ত নাগরিকদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের পূর্বাঞ্চলে ওড়িশার এক ক্ষুদ্র আদিবাসী গ্রামে আমার জন্ম। যে পটভূমিতে আমি বড় হয়েছি সেখানে প্রাথমিক শিক্ষালাভও ছিল এক স্বপ্নের মতো ঘটনা। কিন্তু, সমস্তরকম বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আমার মনোবল ছিল অটুট এবং আমিই ছিলাম ঐ গ্রামের প্রথম কন্যা যে কলেজে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিল। এক আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি আমি। একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ আমার জীবনে এসেছিল এবং তা থেকেই আমার উত্তরণ ঘটেছে আজ ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে। এখানেই আমার ভারতের মহত্ত্ব। গণতন্ত্রের জননী হল আমাদের এই জন্মভূমি। প্রত্যন্ত এক আদিবাসী অঞ্চলের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করে আমি যে আজ ভারতের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে আসতে পেরেছি এজন্য দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়াকে আমি আমার ব্যক্তিগত সাফল্য বলে মনে করি না। এই সাফল্য ভারতের প্রত্যেকটি দরিদ্র মানুষের। একজন দরিদ্র নাগরিকেরও যে স্বপ্ন থাকতে পারে এবং সেই স্বপ্ন পূরণ সফল হয়ে উঠতে পারে, রাষ্ট্রপতি পদে আমার নির্বাচন তারই প্রমাণ।
শ্রীমতী মুর্মু বলেন, আমার কাছে এটি এক পরম সন্তোষের বিষয় যে বহু শতক ধরে যে সমস্ত দরিদ্র, অনগ্রসর, দলিত এবং আদিবাসী মানুষ উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তাঁরা আজ আমার মধ্যে তাঁদের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন। রাষ্ট্রপতি পদে আমার নির্বাচন দেশের দরিদ্র সাধারণ মানুষের আশীর্বাদের জন্যই সম্ভব হয়েছে বলে আমি মনে করি। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে দেশের কোটি কোটি নারী ও কন্যার স্বপ্ন ও সম্ভাবনা।
রাষ্ট্রপতি বলেন, চেনা বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে এসে নতুন পথের যাত্রী হওয়ার জন্য ভারতের যুব সমাজ যে আজ প্রস্তুত, রাষ্ট্রপতি পদে আমার নির্বাচন তারই এক দৃষ্টান্ত। প্রগতিশীল ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়ে আজ আমি গর্বিত। আমি দেশের সকল নাগরিক, বিশেষত দেশের যুব সমাজকে এবং সেইসঙ্গে ভারতের নারী সমাজকে এই মর্মে আশ্বাস দিতে চাই যে তাঁদের স্বার্থরক্ষাই হবে আমার কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। ভারতের রাষ্ট্রপতি পদের উত্তরাধিকার এমনই এক বিশেষ ঐতিহ্য যা দেশের গণতন্ত্রের মর্যাদাকে বিশ্বজনের কাছে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ থেকে শুরু করে শ্রী রামনাথ কোবিন্দজি পর্যন্ত মহীরুহরা এই পদ অলঙ্কৃত করে এসেছেন। এই পদে আমাকে নির্বাচিত করে এই মহান ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমার ওপর ন্যস্ত করেছে দেশবাসী। সংবিধানকে অনুসরণ করে নিষ্ঠার সঙ্গেই আমি সেই দায়িত্ব পালন করে যাব। ভারতের গণতান্ত্রিক তথা সাংস্কৃতিক আদর্শ এবং ভারতের নাগরিক সমাজ হল আমার কর্মশক্তির প্রেরণা।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এক বিশেষ জাতি হিসেবে উত্তরণের জন্য ভারতের নতুন যাত্রাপথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল এক নিরন্তর ত্যাগ ও সংগ্রামের ঘটনা প্রবাহ যা স্বাধীন ভারতের বহু আদর্শ ও সম্ভাবনাকে জন্ম দিয়েছিল। ভারতের সাংস্কৃতিক আদর্শ যাতে আমরা ভালোভাবে অনুভব ও উপলব্ধি করতে পারি, সেজন্য শ্রদ্ধেয় ‘বাপু’জি ‘স্বরাজ’, ‘স্বদেশী’, ‘স্বচ্ছতা’ ও ‘সত্যাগ্রহ’-এর পথ অবলম্বন করেছিলেন। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস, নেহরুজি, সর্দার প্যাটেল, বাবাসাহেব আম্বেদকর, ভগৎ সিং, সুখদেব, রাজগুরু এবং চন্দ্রশেখর আজাদের মতো অসংখ্য ব্যক্তিত্ব জাতির গর্বকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখার শিক্ষা আমাদের দিয়ে গেছেন। রানী লক্ষ্মীবাঈ, রানী ভেলু নাচিয়ার, রানী গইদিনলিউ এবং রানী চেন্নাম্মা দেশ গঠন ও জাতির সুরক্ষায় দেশের নারীশক্তির ভূমিকাকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন।
শ্রীমতী মুর্মু বলেন, সাঁওতাল বিদ্রোহ, পাইকা বিদ্রোহ, কোল বিদ্রোহ এবং ভিল বিদ্রোহ – এই সমস্ত কিছুই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আদিবাসীদের অবদানকে আরও জোরদার করে তুলেছিল। সামাজিক উন্নয়ন এবং দেশাত্মবোধের জন্য ভগবান বিরসা মুন্ডার আত্মোৎসর্গ আমাদের মধ্যে প্রেরণার জন্ম দিয়েছিল। আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভূমিকাকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহু সংগ্রহশালা গড়ে উঠেছে। একটি সংসদীয় গণতন্ত্র হিসেবে বিগত ৭৫ বছরে সকলের অংশগ্রহণ ও সহমতকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলার সঙ্কল্পকে ভারত সুদৃঢ় করেছে। এক বিশাল বৈচিত্র্যের সমাহার রয়েছে আমাদের দেশে। বহু ভাষা, বহু ধর্ম, নানা খাদ্যাভ্যাস ও জীবনশৈলী এবং প্রথা ও রীতিনীতির মধ্য দিয়ে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ গড়ে তোলার আদর্শে আমরা উদ্বুদ্ধ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এক বিশেষ অমৃতকাল যা নতুন ভারত গড়ে তোলার এক সঙ্কল্পবিশেষ। নতুন নতুন চিন্তাভাবনা এবং অনুপ্রেরণার মধ্য দিয়ে এই নতুন যুগকে আমরা স্বাগত জানাতে চলেছি। দেশের সবক’টি ক্ষেত্রেই যুক্ত হবে উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায়। ভারত তার সর্বশক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে যেভাবে করোনা সঙ্কটের মোকাবিলা করেছে তাতে সমগ্র বিশ্বের কাছে ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতবাসী হিসেবে আমরা শুধু বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলিকেই গ্রহণ করিনি, সেইসঙ্গে এক নতুন বিশ্বমানেরও আমরা সন্ধান দিতে পেরেছি। মাত্র কয়েক দিন আগেই ২০০ কোটি করোনা ভ্যাক্সিন ডোজের মাত্রা অতিক্রম করে ভারত এক বিশেষ নজির সৃষ্টি করেছে। এই সঙ্কটকালে সাহসিকতা ও সহযোগিতার যে পরিচয় ভারতীয়রা রেখেছেন তা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার শক্তি ও সংবেদনশীলতারই এক প্রতীকবিশেষ। শুধুমাত্র নিজেকে বাঁচানোই নয়, সেইসঙ্গে সমগ্র বিশ্বকে বাঁচানোর পথ দেখিয়েছে ভারত। করোনা অতিমারীজনিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রতি এক নতুন আস্থা ও বিশ্বাসের বাতাবরণ গড়ে উঠেছে বিশ্বজনের কাছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং শান্তি ও সরবরাহ শৃঙ্খল অক্ষুণ্ণ রাখার কাজে ভারত যে ভূমিকা পালন করেছে তাতে বিশ্বের বিভিন্ন জনসমষ্টি আজ ভারতের দিকে বহু আশার দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। ভারতের নেতৃত্বে যে জি-২০ গোষ্ঠীর সম্মেলন শুরু হতে চলেছে তাতে বিশ্বের ২০টি বড় বড় রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক বিষয়গুলির ওপর মতবিনিময় করবে। আমি নিশ্চিত যে ভারতে আয়োজিত এই সম্মেলনে যে নীতি ও সিদ্ধান্তগুলি গৃহীত হবে তা আগামী দশকগুলির জন্য এক নতুন দিশার সন্ধান দেবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কয়েকদিন পরেই আমরা শ্রী অরবিন্দের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন করব। বেশ কয়েক দশক আগে রাইরাংপুর-এ শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল স্কুলে শিক্ষকতার সুযোগ আমার হয়েছিল। শিক্ষা সম্পর্কে শ্রী অরবিন্দের চিন্তাভাবনা আজও আমাকে অনুপ্রাণিত করে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নানাভাবে আমি যুক্ত থেকেছি এবং দেশের যুব সমাজের আত্মবিশ্বাস ও উৎসাহকেও আমি খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করেছি। আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় অটলজি বলতেন যে দেশের যুব সমাজ যখন এগিয়ে চলে তখন তারা শুধুমাত্র নিজের ভাগ্যকেই গড়ে তোলে না, দেশকেও গড়ে তোলে। তাঁর এই কথার সত্যতা আজ আমরা অনুভব ও উপলব্ধি করছি। রেকর্ড সংখ্যক স্টার্ট-আপ স্থাপন, উদ্ভাবনী কর্মপ্রচেষ্টা এবং দূরদুরান্তে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের যুব সমাজ এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
শ্রীমতী মুর্মু বলেন, নারীর বিকাশের লক্ষ্যে গত কয়েক বছরে যে সমস্ত নীতি ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তা দেশের কর্মপ্রচেষ্টায় এক নতুন শক্তি যুগিয়েছে। জাতি গঠনের কাজে দেশের কন্যা ও ভগিনীরা যাতে অবদান সৃষ্টি করতে পারেন, সেজন্য তাঁদের আরও বেশি করে ক্ষমতায়ন প্রচেষ্টায় আমি আগ্রহী। ভারতের যুব সমাজের উদ্দেশে আমার এক বিশেষ বার্তা হল যে শুধুমাত্র নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাই নয়, ভবিষ্যৎ ভারতের ভিত গড়ে তোলাও হবে তোমাদের লক্ষ্য। ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমি সকল সময় আমার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিকাশ ও অগ্রগতি – এর অর্থই হল নিরন্তর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু, অতীতকে জানা ও উপলব্ধি করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বসুন্ধরার সুরক্ষা সম্পর্কে বিশ্ববাসী আজ সচেতন। এই প্রচেষ্টায় ভারতের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ও জীবনশৈলী এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে যে আদিবাসী ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে তার জল-হাওয়াতেই আমি বড় হয়ে উঠেছি। তাই, আমার জীবনে নদী ও অরণ্যের গুরুত্ব আমি উপলব্ধি করেছি। প্রকৃতি থেকে আমরা যেমন সম্পদ আহরণ করি, প্রকৃতিকেও আমরা সম্ভ্রমের সঙ্গে রক্ষা করার চেষ্টা করি। এই সংবেদনশীলতাই আজ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভারত যে সমগ্র বিশ্বকে নেতৃত্বদান করছে, এই ঘটনায় আমি আনন্দিত। সমগ্র বিশ্বের কল্যাণের স্বার্থে নিষ্ঠা ও উৎসর্গের মনোভাব নিয়ে আমি সর্বদা কাজ করে যেতে আগ্রহী। সেইসঙ্গে, এক আত্মনির্ভর উজ্জ্বল ভারত গড়ে তোলার কাজে আসুন আমরা সকলে মিলিতভাবে আমাদের কর্তব্যের পথ অনুসরণ করি।
PG/SKD/DM
(रिलीज़ आईडी: 1844672)
आगंतुक पटल : 457
इस विज्ञप्ति को इन भाषाओं में पढ़ें:
English
,
Urdu
,
हिन्दी
,
Marathi
,
Manipuri
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam