প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

দিল্লিতে আয়োজিত ‘উদ্যমী ভারত’ কর্মসূচি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 30 JUN 2022 3:56PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩০ জুন, ২০২২

 

আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী নারায়ণ রাণেজী, শ্রী ভানু প্রতাপ সিং ভার্মাজী, মন্ত্রিসভার অন্যান্য সকল সদস্য, দেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য থেকে আগত মন্ত্রীগণ, সারা দেশের অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আমার সকল শিল্পোদ্যোগী ভাই ও বোনেরা, উপস্থিত অন্যান্য শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,

আমাদের দেশে ছোটবেলাতেই একটি শ্লোক শেখানো হয় আর এই শ্লোক আমরা সকলেই শুনেছি। ‘উদ্যমেন হী সিধ্যন্তি কার্যানি না মনৌরথেঃ’

অর্থাৎ, উদ্যম নিলেই সিদ্ধিলাভ সম্ভব। কেবল ভাবতে থাকলে কিছু হয় না। ভাবতে থাকা মানুষের সংখ্যা কম নয়। এই শ্লোকের অর্থকে যদি আমি আজকের সময়ের হিসাবে একটু বদলে দিয়ে বলি যে, অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের উদ্যমেই আত্মনির্ভর ভারত অভিযান সিদ্ধি পাবে, ভারত শক্তিশালী হবে, যতই আপনাদেরকে অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগী বলা হোক না কেন, কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর ভারত যে উচ্চতা অর্জন করবে, সেখানে আপনাদের সকলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

ভারতের রপ্তানী যেন ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়, ভারতীয় পণ্য যেন নতুন নতুন বাজারে পৌঁছয়, তা সুনিশ্চিত করতে দেশের অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্র শক্তিশালী হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের সরকার আপনাদের এই সামর্থ্য, এই ক্ষেত্রের অসীম সম্ভাবনাগুলিকে মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। নতুন নতুন নীতি প্রণয়ন করছে। আমাদের দেশের প্রত্যেক জেলায়, প্রত্যেক অংশে যে অদ্ভুত বৈচিত্রময় পণ্য উৎপাদিত হয়, সেই লোকাল পণ্যগুলিকে আমরা গ্লোবাল করে তোলার সংকল্প নিয়েছি।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র জন্য আমরা স্থানীয় সরবরাহ-শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করে তোলার চেষ্টা করছি, যা ভারতের বিদেশের উপর নির্ভরতাকে হ্রাস করতে পারে। এখন সেজন্য অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রকে আরও বিস্তারিত করতে ব্যাপক জোর দেওয়া হচ্ছে। এই পর্যায়ে আজ এখান থেকে অনেক নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হ’ল। হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে এই প্রকল্পগুলি অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের উৎকর্ষ এবং সম্প্রসারণের সঙ্গে যুক্ত। অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের ইকো সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করতে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার ‘র‍্যাম্প স্কিম’ থেকে শুরু করে প্রথমবার যাঁরা রপ্তানী করবেন, সেই শিল্পোদ্যোগীদের উৎসাহ প্রদানের কর্মসূচি এবং প্রধানমন্ত্রী রোজগার সৃজন কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত, সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টাগুলির মাধ্যমে ভারতের অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্র আরও গতিশীল হবে।

কিছুক্ষণ আগে দেশের ১৮ হাজার অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগকে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আপনাদের সামনেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্রান্সফার করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যেই এই টাকা তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। ৫০ হাজার কোটি টাকার সেলফ রিলায়েন্ট ইন্ডিয়া ফান্ডের মাধ্যমে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ অতিক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির জন্য দেওয়া হয়েছে। সমস্ত সুফলভোগীদেরকে, সমগ্র অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রকে আমি এর জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাই।

মঞ্চে আসার একটু আগেই আমার অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ সুবিধাভোগীদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। যাঁরা কোনও না কোনোভাবে সরকারের কোনও প্রকল্প থেকে লাভবান হয়েছেন, আর তার সঙ্গে নিজেদের প্রতিভা, পরিশ্রম ও দক্ষতাকে জুড়ে একটি নিজস্ব নতুন বিশ্ব গড়ে তুলেছেন।

তাঁদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই যুবক-যুবতীদের যেরকম আত্মবিশ্বাস দেখেছি, এর মধ্যে আমাদের মা, বোনেরাও ছিলেন। এইসব শিল্পোদ্যোগীদের সঙ্গে কথা বলে আমি অনুভব করছিলাম, তাঁদের প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ আত্মবিশ্বাস, যা আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকে সুনিশ্চিতভাবে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আমার যদি আরেকটু সময় হ’ত, তা হলে হয়তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁদের সঙ্গে কথা বলতাম। তাঁদের প্রত্যেকেরই গর্ব করার মতো অনেক কিছু বলার ছিল। তাঁদের কাছে নিজস্ব অভিজ্ঞতা ছিল। তাঁরা প্রত্যেকেই অসম সাহসী এবং নিজেদের ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। এটা একটা অত্যন্ত সুখকর অভিজ্ঞতা।

আজ অনেক বন্ধু এখানে পুরস্কারও পেয়েছেন। যে বন্ধুরা পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদেরকে আমি অনেক শুভেচ্ছা জানাই। কিন্তু, যখন আমরা কোনও পুরস্কার পাই, তখন আমাদের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা একটু বেশিই বেড়ে যায়। আমি চাই, আপনারা যে সাফল্য পেয়েছেন, তাকে সম্বল করে এখন একটি বড় লাফ দিন। আপনাদের সাফল্য যেন আরও অনেককে প্রেরণা যোগায়। আর আমরা সকলে মিলে যেন এমন একটি আবহ তৈরি করতে পারি, যখন আমরা সবাই এগিয়ে যাব।

বন্ধুগণ,

আপনারাও জানেন যে, আমরা অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ বলি ঠিকই, প্রযুক্তির ভাষায় এর বিস্তার হয় মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস। কিন্তু, এই অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি ভারতের উন্নয়ন যাত্রার অনেক বড় ভিত্তি। ভারতের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অংশীদারিত্ব এই অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রেরই। সহজ শব্দে যদি বলি, ভারত আজ যদি ১০০ টাকা রোজগার করে, তার ৩০ শতাংশেরও বেশি আমার অণু,ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রের কারণেই আসে। আবার অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে শক্তিশালী করার মানে গোটা সমাজকে শক্তিশালী করা। সকল দেশবাসীকে লাভের অংশীদার করে তোলা। সবাইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত কোটি কোটি বন্ধুরা দেশের গ্রামীণ এলাকা থেকেই উঠে এসেছেন। তাই, অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্র দেশের সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের অন্যতম।

বন্ধুগণ,

আজ গোটা বিশ্ব ভারতের অর্থনীতির গতি দেখে প্রভাবিত, আর এই গতিতে অনেক বড় ভূমিকা আমাদের অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির রয়েছে। সেজন্য আজ আমাদের অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি ম্যাক্রো ইকোনমিকে শক্তিশালী করতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করবে। আজ ভারত যত রপ্তানী করে, তার একটা অনেক বড় অংশ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের উৎপাদিত পণ্য। সেজন্য অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে আজ সর্বোচ্চ রপ্তানীর জন্য এগিয়ে আসতে হবে। অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করে তুলতে বিগত ৮ বছর ধরে আমাদের সরকার বাজেটে এই বাবদ ৬৫০ শতাংশেরও বেশি অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়েছে। তাই, এখন আমাদের জন্য এমএসএমই-র মানে হ’ল ‘ম্যাক্সিমাম সাপোর্ট টু মাইক্রো স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইসেস’।

এই অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রের সঙ্গে ১১ কোটিরও বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন। সেজন্য অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রটির সম্প্রসারণ আজ সর্বোচ্চ কর্মসংস্থানের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই, যখন ১০০ বছরের সর্ববৃহৎ সঙ্কট এসেছিল, আমরা নিজেদের ছোট ছোট শিল্পোদ্যমগুলিকে বাঁচানোর পাশাপাশি, তাদের নতুন শক্তিতে সঞ্জীবিত করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেন্দ্রীয় সরকার এমার্জেন্সি ক্রেডিট লাইন গ্যারান্টি সিস্টেমের মাধ্যমে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির সহায়তার জন্য সুনিশ্চিত করেছে।

একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর ফলে প্রায় দেড় কোটি কর্মসংস্থান রক্ষা পেয়েছে। এটা অনেক বড় পরিসংখ্যান। বিশ্বের অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার এই পরিসংখ্যান আপনাদের সাফল্যের কথা বলে। বিপর্যয়ের সময় সরকারের পক্ষ থেকে এই সহায়তা আজ দেশের অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রকে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উৎসাহ যোগাচ্ছে। আমরা এ বছরের বাজেটে এমার্জেন্সি ক্রেডিট লাইন গ্যারান্টি স্কিম-কে আগামী বছরের মার্চ মাস অবধি মেয়াদ বাড়িয়েছি। যাঁরাই এর কর্মসূচির অধীনে এসেছেন, তাঁদেরকে ৫০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এর মানে ১০ গুণ বাড়িয়েছি।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার এই অমৃতকালে আমাদের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি ভারতের আত্মনির্ভরতার বিরাট লক্ষ্য প্রাপ্তিরও অনেক বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। একটা সময় ছিল, যখন পূর্ববর্তী সরকারগুলি এই ক্ষেত্রের শক্তির উপর ভরসা করেনি। এই ক্ষেত্রটিকে এক প্রকার বেঁধে রেখেছিল। তাঁদের ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছিল। তাঁরা নিজেদের চেষ্টায় যদি কিছু সাফল্য পান, তা হলে কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু, তাঁদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ ছিল না। আমাদের দেশে অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির যতই সম্ভাবনা থাকুক না কেন, এদের ছোট বানিয়েই রেখে দেওয়া হ’ত। অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির জন্য এত ছোট পরিভাষা তৈরি করা হয়েছিল যে, আপনাদের সকলের উপর সর্বদা চাপ থাকতো যে আরেকটু বড় ব্যবসা হলে এখন যে লাভগুলি পাই, সেগুলি বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য সুযোগ পেলেও আপনারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে আর বড় করতে চাইতেন না। আর ব্যবসা বাড়লেও কাগজে-কলমে দেখাতেন না। লুকিয়ে লুকিয়ে কিছুটা লাভের মুখ দেখার চেষ্টা করতেন। আমি আপনাদের কথা বলছি না, অন্যদের কথা বলছি। আপনারা এসব বাজে কাজ করতে পারেন না। আপনারা তো ভালো মানুষ।

এর আরেকটা কুপ্রভাব কর্মসংস্থানের উপরও পড়েছিল। যে কোম্পানি বেশি মানুষকে রোজগার দিতে পারতো, তারাও দিত না। কারণ, তা হলে তাঁদের অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের পরিধি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ভয় থাকতো। এই ভাবনা আর এই নীতিগুলির কারণেই অনেক শিল্পোদ্যোগের বিকাশ ও অগ্রগতি থেমে ছিল।

আমরা এই থেমে থাকাকে দূর করতে অণু,ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির পরিভাষাকে বদলে দিই, আর পাশাপাশি, তাঁদের প্রয়োজনগুলির উপরও লক্ষ্য রাখি। আর সেজন্য আমরা তাঁদের অগ্রগতিকে সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় লাভ ও সাহায্যও সুনিশ্চিত করি। আজ আপনারা যদি কোনও শিল্পোদ্যোগকে সম্প্রসারিত করতে চান, তা হলে সরকার তাকে শুধু সহযোগিতাই করছে না, প্রয়োজনে আপনাদের অনুকূলে যুক্তিসম্মত নীতি পরিবর্তনও করছে।

আজ পাইকারি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে খুচরো ব্যবসায়ী ও খুচরো বিক্রেতা – এই সমস্ত ব্যবসায়ীকে অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের নতুন পরিভাষার অন্তর্গত প্রায়োরিটি সেক্টর লেন্ডিং-এর মাধ্যমে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনারা জানেন কি এর মানে কী? পণ্য উৎপাদন ও পরিষেবা ক্ষেত্রের মধ্যে ব্যবধানকেও দূর করা হচ্ছে। আজ অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি গভর্নমেন্ট ই-মার্কেটের মাধ্যমে সরকারকে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি ও পরিষেবা প্রদানে একটি প্ল্যাটফর্ম পেয়েছে। আমি আপনাদের সবাইকে এবং আপনাদের মাধ্যমে আপনাদের সমস্ত অ্যাসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানাই, অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের সবাই নিজেদেরকে এই গভর্মেন্ট ই-মার্কেট পোর্টালে নথিভুক্ত করান।

সরকারি দপ্তর ও বিভাগগুলি যখনই কিছু কিনবে, তখন তাদের এই জিইএম পোর্টালের মাধ্যমেই কিনতে হবে। হ্যাঁ, আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি সরবরাহ করতে পারবেন না, তা হলে অন্য কারও কাছে যাবে। এত বড় সিদ্ধান্ত অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির জন্য অনেক বড় সুযোগ নিয়ে এসেছে। আর সরকার অনেক বড় ক্রেতা। তার অনেক জিনিসের প্রয়োজন হয়। আর সেই জিনিসগুলির মধ্যে অধিকাংশই আপনারা উৎপাদন করেন। সেজন্য আমি চাই, জেম পোর্টালে আপনারা মিশন মোড-এ যোগদান করুন। নিজেদের ব্যবসা বৃদ্ধি অভিযানে সফল হন। আজ প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ এই পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের পন্য সরকার কিনছে, তা হলে ৩-৪ কোটি মানুষ কেন যুক্ত হতে পারবেন না! এক্ষেত্রে আপনাদেরও লাভ সরকারেরও লাভ। আর সরকারের কাছে চয়েস বাড়বে।

দেখুন, আগে এই অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির সরকারের কাছে পণ্য বিক্রি করা কত কঠিন ছিল। আপনারা ভাবতেন, সরকারের এত বড় চাহিদা, এত বড় টেন্ডার আমরা কিভাবে সুযোগ পাবো! এখন আর এমন ভাবতে হয় না। আপনি যদি একটা থার্মাসও বিক্রি করতে চান, তা হলেও জেম পোর্টাল থেকে সরকার সেটা কিনতে পারে।

একবার আমার অফিসে একটি থার্মাসের প্রয়োজন ছিল, তখন আমরা জেম পোর্টালে যাই, সেখানে তামিলনাডুর গ্রামের এক মহিলা বলেন, আমি দিতে পারবো! তখন প্রধানমন্ত্রী অফিসে তামিলনাডুর গ্রাম থেকে থার্মাস আসে। আর সেই মহিলা সহজেই টাকা পেয়ে যান। এখন ঐ থার্মাস থেকেই আমি গরম চা খাই। এই জেম পোর্টালের এত শক্তি। আর এটা আপনাদের লাভের কথা ভেবেই তৈরি করা হয়েছে। আপনারা এর থেকে যতটা সুফল পেতে পারেন, সেই সুযোগ নিন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে এখন গ্লোবাল টেন্ডার হবে না। এর মানে একপ্রকার আপনাদের জন্য রিজার্ভেশন হয়ে গেল। কিন্তু, এমন যেন না হয় যে, ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত মূল্যের পণ্য সরকারকে এখন আমাদের থেকেই নিতে হবে, আমরা যেমন-তেমন পণ্য গছিয়ে দেব, মোদী যাবে কোথায়, তাঁকে তো নিতেই হবে। খবরদার এমনটা করবেন না! কোয়ালিটিতে কম্প্রোমাইজ করবেন না, বরং সর্বোৎকৃষ্ট পণ্য সরবরাহ করে দেখান, সরকার যাতে উৎসাহিত হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় যে আগামী দিনে ২০০ কোটি টাকার জায়গায় ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত গ্লোবাল টেন্ডার না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যদি আপনারা নিজেদের প্রমাণ করতে পারেন, তা হলে আমাদের সরকার ভবিষ্যতে আপনাদের জন্য ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত সংরক্ষণ চালু করতে প্রস্তুত। আমরা একটা স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার দিকে এগিয়ে চলেছি।

বন্ধুগণ,

আন্তর্জাতিক বাজারেও আমাদের অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি দেশের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকাকে যাতে আরও উঁচুতে ওড়াতে পারে, তা সুনিশ্চিত করতে ক্রমাগত উৎসাহ যোগানো হচ্ছে। এই লক্ষ্যেই প্রথমবারের এমএসএমই রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর্থিক সহায়তা থেকে শুরু করে শংসায়ন সংক্রান্ত সমস্ত সাহায্য, এই সব সুবিধা এদের জন্য রপ্তানী প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তুলবে। আমি আপনাদের আহ্বান জানাই যে, আপনারা আরও বেশি করে আন্তর্জাতিক বাজারের দিকে তাকান, রপ্তানী করুন। আপনারা এটা ভাববেন না যে, আপনাদের কারখানা অনেক ছোট, আপনারা অনেক কম পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করেন – এসব ভাববেন না! আপনারা খুঁজতে থাকুন, দেখবেন, বিশ্বের কোথাও না কোথাও কেউ আপনার উৎপাদিত পণ্যের অপেক্ষায় রয়েছেন।

আমি তো আমার মিশনকেও বলেছি, যাঁরা বিদেশ বিভাগে রয়েছেন, তাঁদেরকে বলেছি, আপনারা নিজেদের নিয়মমাফিক কূটনৈতিক কাজকর্ম যা করেন, তা করতে থাকুন। কিন্তু, আরও ৩টি কাজ আপনাদের করতে হবে। আমি আমাদের বিদেশ মিশনগুলির মূল্যায়নে ৩টি নতুন জিনিস যুক্ত করেছি। একটি হ’ল – বাণিজ্য, দ্বিতীয়টি – প্রযুক্তি এবং তৃতীয়টি – পর্যটন। যদি আপনি দেশের প্রতিনিধি হন, তা হলে আপনাকে এটা বলতে হবে যে, যে দেশে আপনি নিযুক্ত রয়েছেন, সে দেশে ভারত কতগুলি পণ্য রপ্তানী করে। এই হিসাব আমিও রাখবো।

দ্বিতীয়ত, আমি স্পষ্টভাবে বলেছি, যদি সেই দেশে কোনও উন্নত প্রযুক্তি থাকে, তা আপনারা ভারতে আনতে সক্ষম হয়েছেন কি না! সেজন্য আপনারা কতটা চেষ্টা করেছেন, সেটা পরিমাপ করা হবে। আর তৃতীয়ত, আপনি যে দেশে নিযুক্ত রয়েছেন, সেই দেশ থেকে কতজন পর্যটক ভারতে বেড়াতে এসেছেন! এই যে ‘থ্রি টি’ আমি ঠিক করে দিয়েছি, তা বাস্তবায়নে আজ আমাদের প্রতিটি আন্তর্জাতিক মিশন কর্মরত। কিন্তু, আপনারা যদি সেই মিশনগুলির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি না করেন, আপনারা যদি তাঁদেরকে না জানান যে, ভাই আমরা অমুক জিনিস তৈরি করি, যার চাহিদা অমুক দেশে রয়েছে, তাহলে তো আর মিশন আধিকারিকরা আপনাদের জন্য কিছু করতে পারবেন না! সরকার আপনাদের সাহায্যের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু, আপনাদেরকেও আপনাদের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রি নিজ নিজ গ্রামে, নিজ নিজ রাজ্যে ও নিজের দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নিজেদের ব্র্যান্ডকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে! আজ আপনারা এখান থেকে এই স্বপ্ন নিয়ে যান! আগামীবার যখন দেখা হবে, তখন আমি জিজ্ঞেস করবো। আর এখন যাঁরা ৫টি দেশে পণ্য রপ্তানী করছেন, তাঁরা ৫০টি দেশে রপ্তানী করুন। আপনারা সফল হচ্ছেন কিনা আমি খবর নেব।

বন্ধুগণ,

বিগত ৮ বছরে অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রটি এতটা যে বিস্তারলাভ করেছে, তার পেছনে রয়েছে আমাদের সরকারের দেশের অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির প্রতি, কুটির উদ্যোগের প্রতি হস্তচালিত তাঁত ও হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত বন্ধুদের সামর্থ্যের উপর ভরসা। আমাদের মনোভাব ও নিষ্ঠা পরিষ্কার। আর এর পরিণামই এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা কিভাবে পরিবর্তন এনেছি, তার একটি উদাহরণ প্রধানমন্ত্রী রোজগার সৃজন কর্মসূচিও। ২০০৮ সালে যখন ভারত তথা সমগ্র বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কবলে ছিল, তখনই এই প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। তখন দাবি করা হয়েছিল যে, পরবর্তী চার বছরে অর্থাৎ ২০১২ সালের মধ্যে কয়েক লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। কিন্তু, তৎকালীন সরকার পরবর্তী চার বছরে এই লক্ষ্যের অর্ধাংশও পূরণ করতে পারেনি।

২০১৪’র পর আমরা দেশের অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির স্বার্থে, দেশের যুবসম্প্রদায়ের স্বার্থে এই প্রকল্পগুলি চালু করতে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করি। নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করি এবং নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের এই অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর কারণে প্রতিহত হয়। আরও অনেক ছোটখাটো সঙ্কটের মুখোমুখী আমরা হই। আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন, সারা পৃথিবীতে কী চলছে! তা সত্ত্বেও বিগত বছরগুলিতে এই প্রকল্পের মাধ্যমেই আমাদের অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিতে ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

এই সময়ে এই শিল্পোদ্যোগগুলিকে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার ‘মার্জিন মানি’তে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, দেশে লক্ষ লক্ষ নতুন শিল্পোদ্যোগ চালু হয়েছে। দেশের বড় সংখ্যক যুবসম্প্রদায়ের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করতে এই প্রকল্প আজ নতুন নতুন মাত্রা যুক্ত করে চলেছে। এখন এই প্রকল্পের আওতায় আসা প্রকল্পগুলির খরচের সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পণ্য উৎপাদন ক্ষেত্রে এই খরচের সীমা ২৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লক্ষ করা হয়েছে। তেমনই, পরিষেবা ক্ষেত্রে প্রকল্পগুলির খরচের সীমা ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, উভয় ক্ষেত্রেই খরচের সীমা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

শুধু তাই নয়, আমাদের দেশে যে ১০০টিরও বেশি উচ্চাকাঙ্খী জেলা রয়েছে; আপনারা দেখেছেন, আজ অনেকগুলি উচ্চাকাঙ্খী জেলা এত ভালো কাজ করেছে যে, তাদের আজ সম্মানিত করা হয়েছে। এই জেলাগুলিকে আগে তাদের রাজ্যই গুরুত্ব দিত না। এখন সেই জেলাগুলিই এতটাই সামর্থ্য অর্জন করেছে যে, জাতীয় পর্যায়ে সম্মানিত হওয়ার সাফল্য অর্জন করেছে। এই পরিবর্তন কিভাবে এসেছে, তার একটা নমুনা আমি তুলে ধরছি। আর উচ্চাকাঙ্খী জেলাগুলির যুবসম্প্রদায়কে যাতে আমরা সাহায্য করতে পারি, তারও একটা বড় উদ্যোগ আমাদের সরকার নিয়েছে। আমাদের যে ট্রান্স জেন্ডাররা রয়েছেন, ঈশ্বর তাঁদের সঙ্গে যত অবিচার করেই থাকুন না কেন, তাঁরা যেন আগের তুলনায় অনেক বেশি সুযোগ পান, তা সুনিশ্চিত করতে প্রথমবারের মতো তাঁদেরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে যে ক্ষমতা রয়েছে, তা বিকাশের সুযোগ দিতে আমরা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। পরিবর্তন কিভাবে আসে, এটা তার একটি বড় উদাহরণ।

বন্ধুগণ,

সঠিক নীতি এবং সকলের প্রচেষ্টায় কিভাবে পরিবর্তন আসে, এর আরেকটি বড় উদাহরণ আমরা একটু আগেই এখানে যে খাদি নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো হয়েছিল, সেখানে দেখছিলাম। স্বাধীনতার প্রাক্-লগ্নে এবং দেশ স্বাধীনতার পরপর খাদি নিয়ে যে উন্মাদনা ছিল, ধীরে ধীরে তা সঙ্কুচিত হয়ে শুধু নেতাদের পরিধানে সীমাবদ্ধ থাকে। শুধু রাজনৈতিক নেতারাই খাদিকে বাঁচিয়ে রাখেন। বড় বড় কুর্তা-পায়জামা পরা আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। আমাদের দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়াই এভাবে খাদিকে কোনও মতে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু, এই খাদি নিয়ে আমাদের পূর্ববর্তী সরকারগুলির কেমন সব নীতি ছিল, তা আজ দেশ খুব ভালোভাবেই জানে।

আমরা সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথমবার দেশে খাদি ও গ্রামোদ্যোগের আয় ১ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এটা এভাবে সম্ভব হয়েছে, কারণ আমাদের গ্রামে গ্রামে ছোট ছোট শিল্পোদ্যোগীরা, আমাদের বোন ও মেয়েরা অনেক পরিশ্রম করেছেন। সরকারের উৎসাহদানের ফলে গত ৮ বছরে খাদির বিক্রিও চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ৮ বছরে খাদি ও গ্রামোদ্যোগে দেড় কোটিরও বেশি বন্ধুদের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন ভারতের খাদি লোকাল থেকে গ্লোবাল হয়ে উঠছে। অনেক বিদেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ডও খাদির দিকে আকর্ষিত হচ্ছে। আমাদের এই সাফল্যকে ভরসা করতে হবে। আমরা যদি নিজেদের উপর ভরসা না রাখি, তা হলে বিশ্ব কেন আমাদের উপর ভরসা করবে। আপনারা যদি নিজের বাড়িতে নিজের সন্তানের চিন্তাভাবনা সম্মান না করেন, তা ভলে প্রতিবেশীরা কি সম্মান করবেন? – এমনটা কি হতে পারে? নতুন নতুন ক্ষেত্রে নতুন নতুন বাজারের জন্য নতুন পথ তৈরি হচ্ছে। এর ফলে, ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগগুলি অত্যন্ত লাভবান হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

নতুন শিল্পোদ্যোগগুলি আজ আমাদের গ্রামে গ্রামে গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির জন্য ছোট শহর এবং মফঃস্বল এলাকায় বসবাসকারী গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির জন্য সহজ বিকল্প হয়ে উঠছে। এর একটা বড় কারণ হ’ল – সহজভাবে ঋণ পাওয়ার সুবিধা। ২০১৪ সালের আগে ভারতে সাধারণ মানুষ ব্যাঙ্কের দরজায় সহজে পৌঁছতে পারতেন না। কোনও রকম গ্যারান্টি ছাড়া ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। গ্রামের গরীব ভূমিহীন, ছোট কৃষক ও দোকানদারদের গ্যারান্টি কে নেবে? আর কোনও রকম গ্যারান্টি ছাড়া ঋণ না পেলে তাঁরা বাধ্য হয়ে সুদখোর মহাজনদের কাছে যেতে বাধ্য হতেন। এভাবে তাঁরা ঋণের বোঝায় নিমজ্জিত হতেন। আর সেজন্য অত্যন্ত প্রতিরক্ষামূলক জীবনযাপনের জন্য বাধ্য হতেন। এহেন পরিস্থিতিতে গ্রামে বসবাসকারী গরীব, দলিত, বঞ্চিত, শোষিত, পিছিয়ে পড়া, জনজাতি ও বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ ও তাঁদের পুত্রকন্যারা স্বনির্ভর হওয়ার কথা ভাবতেই পারতেন না। তাঁরা রোজগারের সন্ধানে নিকটবর্তী বা দূরবর্তী কোনও শহরে গিয়ে বস্তিতে বসবাস করতে বাধ্য হতেন। ফুটপাতে বা রেললাইনের দু’ধারে পসরা সাজাতে বাধ্য হতেন। এখন আমাদের বোন ও মেয়েদের সামনে আমরা অনেক নতুন বিকল্প নিয়ে এসেছি। পূর্ববর্তী সীমিত বিকল্পগুলির আওতার বাইরে তাঁদের বের করে আনার চেষ্টা আমরা করেছি, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বন্ধুগণ,

আজ সকলকে সঙ্গে নিয়েই এত বড় দেশের দ্রুতগতিতে উন্নয়ন সম্ভব। সেজন্য ২০১৪ সালে আমরা ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ – এই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলার পরিধিকে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেজন্য আমরা সংস্কারের পথ বেছে নিয়েছি। নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং ঋণ পাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধির পথ বেছে নিয়েছি। নতুন নতুন শিল্পোদ্যোগ গড়ে তোলার মানসিকতাকে প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য সহজ করে তুলতে আমরা যে মুদ্রা যোজনা চালু করেছি, তা অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে। কোনও রকম গ্যারান্টি ছাড়াই ব্যাঙ্ক ঋণ প্রদানের এই প্রকল্প বিশেষ করে আমাদের মহিলা শিল্পোদ্যোগী, দলিত শিল্পোদ্যোগী, সমাজ থেকে পিছিয়ে পড়া ও জনজাতি সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা শিল্পোদ্যোগীদের একটা বড় সংখ্যায় তৈরি করেছে। এই শিল্পোদ্যোগীরা নতুন নতুন ক্ষেত্র বেছে নিয়েছেন। দূর-দূরান্তের গ্রামেও শিল্প স্থাপন করেছেন।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৯ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ হিসাবে দেওয়া হয়েছে। আর ঋণ গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৭ কোটি এমন শিল্পোদ্যোগী রয়েছেন, যাঁরা প্রথমবার কোনও শিল্পোদ্যোগ শুরু করেছেন, আর এই ঋণের অর্থ দিয়েই তিনি শিল্পোদ্যোগী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অর্থাৎ, মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে ৭ কোটিরও বেশি বন্ধুরা প্রথমবার স্বনির্ভরতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আর শুধু নিজেরাই যুক্ত হয়েছেন, এমনটি নয়, কেউ একজনকে, কেউ দু’জনকে আবার কেউবা তিন বা ততধিক মানুষকে কর্মসংস্থান দিয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁরা আর চাকরির প্রত্যাশী নন, তাঁরাই এখন কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী হয়ে উঠেছেন।

বন্ধুগণ,

অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্র সম্পূর্ণভাবে ‘ফর্মাল’ না হলেও ঋণ পাওয়ার সুযোগ ‘ফর্মাল’  হয়ে উঠছে। ভারতের অর্থনীতির মূল্যাঙ্কন যাঁরা করেন, তাঁরা এই দিকটি নিয়ে বেশি আলোচনা করেন না। আর এক্ষেত্রে আমরা ১০-২০ হাজার টাকার কথা বলছি না। আগে ১০-২০ হাজার টাকাকে মাইক্রো ফাইনান্স বলে মনে করা হ’ত। এখানে আমরা ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোনও রকম গ্যারান্টি ছাড়া বিনামূল্যে ঋণ প্রদানের কথা বলছি। এর মাধ্যমে আজ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছেন মহিলা শিল্পোদ্যোগীরা।

আগে যেখানে মহিলা শিল্পোদ্যোগীদের জন্য মাইক্রো ফাইন্যান্স শুধুই পশুপালন, বুনন শিল্পে সীমাবদ্ধ ছিল…. আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন মাঝে মধ্যে সরকারের এ ধরনের প্রকল্প আসতো; আমার মনে আছে। মুরগী পালনের জন্য টাকা দেওয়া হ’ত, আর বলা হ’ত, মুরগী নিন, এতগুলি ডিম হবে, তা থেকে এতগুলি মুরগী হবে, আর তা থেকে এতগুলি ডিম হবে। সেই বেচারারা ঋণ নিতেন, ৫টি মুরগী নিয়ে আসতেন, আর সন্ধ্যার সময় লালগাড়িতে করে আধিকারিকরা বাড়িতে চলে আসতেন, আর বলতেন যে রাতে থাকবো। এখন রাতে থাকার মানে কী, আপনারা ভালোই বুঝতে পারছেন, ৫টি মুরগীর মধ্যে ২টি মুরগী গেল। আমরা সবাই এসব দেখেছি।

আজ সময় বদলেছে বন্ধুগণ। এখন আর এরকম ছোট ছোট সীমার মধ্যে কাউকে আটকে রাখা হয়নি। আমরা মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ গ্রাফটাকেই বদলে দিয়েছি। আর সাধারণ মানুষের সাহস বাড়িয়ে দিয়েছি। ১০ লক্ষ টাকা চাই, কোথাও কিছু করো। একথা জেনে আমার খুব ভালো লেগেছে যে, ইতিমধ্যেই উদ্যম পোর্টালে নথিভুক্ত মোট অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ শিল্পোদ্যোগী হলেন মহিলা। এই পরিসংখ্যান নিজেই অনেক কথা বলে। খুব ভালো কথা। এই অংশীদারিত্ব যেন আরও বাড়ে, তা সুনিশ্চিত করতে আমাদের মিলেমিশে কাজ করতে হবে।

বন্ধুগণ,

নতুন শিল্পোদ্যোগগুলির মধ্যে এই অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রক্রিয়া এই অর্থনৈতিক সংহতি-ই প্রকৃত অর্থে সামাজিক ন্যায়। আপনারা কি কখনও ভেবেছেন, পথের দু’পাশে ঠেলাওয়ালা, হকার, রেললাইনের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বন্ধুরাও কখনও কোনও রকম গ্যারান্টি ছাড়া ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাবেন! আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছি, যাঁরা ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের বাড়িতে অনেক বছর ধরে শাক-সব্জি পৌঁছে দিতেন, খবরের কাগজ বিলি করতেন, তাঁদেরকেও হয়তো সেই ব্যাঙ্ক আধিকারিকরা কখনও ঋণ দেননি। এর মানে এটা নয় যে, তাঁরা তাঁদের বিশ্বাস করতেন না। এর মানে এটা নয় যে, তাঁরা ভাবতেন, ঋণ দিলে টাকা ফেরৎ পাব না। তাঁরা ব্যাঙ্কের ঋণ দেওয়ার নিয়মের বেড়াজালের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারতেন না।

আজ সেই পথের দু’পাশে ঠেলাওয়ালা, হকার, রেললাইনের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বন্ধুরাও ব্যাঙ্কের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালে কোনও রকম গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ দেওয়া হয়। আর একেই আমরা নাম দিয়েছি স্বনিধি। আজ পিএম-স্বনিধি যোজনার মাধ্যমে আমরা এরকম লক্ষ লক্ষ বন্ধুদের ঋণ পাবার ব্যবস্থা করেছি। আর তাঁদের ছোট ব্যবসাকে বড় করার পথও খুলে দিয়েছি। আমাদের যে বন্ধুরা গ্রাম থেকে শহরে আসেন, সরকার সেই বন্ধুদেরও সাহায্য করছে, যাতে তাঁরা পরিশ্রম করে নিজেদের পরিবারকে দারিদ্র্য সীমার উপরে তুলে আনতে পারেন – সরকার সেই চেষ্টাই করছে।

আপনারা শুনলে খুশি হবেন, আপনারা আজও অনেকে ডিজিটাল পেমেন্ট করতে ৫০ বার ভাবেন। আপনারা হয়তো ভাবেন, ডিজিটাল পেমেন্ট করলে রেকর্ড তৈরি হবে, রেকর্ড তৈরি করলে মোদী দেখবে, মোদী দেখলে কোনও ইনকাম ট্যাক্সওয়ালাকে পাঠাবে – তাই ডিজিটাল করবো না! কিন্তু, আপনারা শুনলে খুশি হবেন যে, দেশের সাধারণ সব্জিওয়ালারা, দুধ বিক্রেতারা, পথের দু’পাশে ঠেলাওয়ালা, হকার, রেললাইনের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বন্ধুরাও ডিজিটাল পেমেন্ট করছেন। আর আমি মনে করি, বন্ধুগণ, এই উন্নয়ন যজ্ঞে আমাদের সকলেরই শরিক হওয়া উচিৎ। এই উন্নয়ন যাত্রায় আপনাদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে। এগিয়ে আসুন বন্ধুগণ, আমি আপনাদের সঙ্গে চলার জন্য প্রস্তুত। এটাই সত্যিকরের প্রগতি। এটাই প্রকৃত উন্নয়ন।

আমি আজ এই কর্মসূচির মাধ্যমে অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত আমাদের প্রত্যেক ভাই-বোনকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, কেন্দ্রীয় সরকার আপনাদের প্রয়োজনগুলি পূরণের জন্য নীতি প্রণয়নের জন্য প্রস্তুত। যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত। আর এগিয়ে এসে আপনাদের হাত ধরে চলার জন্য প্রস্তুত। আপনারা এগিয়ে আসুন বন্ধুগণ।

উদ্যমী ভারত – এর প্রতিটি সাফল্যে আপনাদের অবদান অনস্বীকার্য। আমার মনে এ নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই। আত্মনির্ভর ভারতের প্রাণশক্তি অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির মধ্যে রয়েছে বন্ধুগণ। আপনাদের পরিশ্রমের মধ্যে রয়েছে বন্ধুগণ। আমার মনে দেশের এই অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রের উপর, আপনাদের সকলের উপর, দেশের নবীন প্রজন্মের উপর, আর বিশেষ করে আমাদের বোন ও মেয়েদের সাহজের উপর ভরসা রয়েছে। সেজন্য আমি বলি, এই দেশ তার সব স্বপ্নগুলি আমাদের চোখের সামনে সিদ্ধ হতে দেখবে। আপনারা নিজেদের চোখের সামনে দেখবেন যে, হ্যাঁ, এই পরিবর্তন এসেছে, এই সাফল্য এসেছে – আপনারা অবশ্যই দেখবেন।

দেশের অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত সকলের প্রতি আমার অনুরোধ, কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পগুলির সুবিধা নিন। আমি আপনাদের অ্যাসোসিয়েশনে যাব। আজ থেকে দেখতে শুরু করবো যে, আপনাদের অংশীদারিত্ব জেম পোর্টালে এই সপ্তাহে ১ কোটির বেশি নথিভুক্ত হ’ল কি হ’ল না! আমি দেখতে চাই, অ্যাসোসিয়েশনের বন্ধুরা মাঠে নেমে আসুন। সরকার আপনাদের থেকে জিনিস কিনতে প্রস্তুত। আপনারা অবশ্যই যুক্ত হন। আপনারা শুধু সরকারকে জানান যে, আমরা অমুক পণ্য তৈরি করি। তা হলেই দেখবেন, কত মসৃণভাবে আপনাদের উৎপাদিত উৎকৃষ্ট পণ্য সরকার কিনে নিচ্ছে।

বন্ধুগণ,

এখানে এসে আমার খুব ভালো লেগেছে, যে বন্ধুদের সম্মানিত করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, তাঁদেরকে শুভেচ্ছা জানাই, আর যাঁরা সম্মানিত হননি, তার মানে এই নয় যে আপনারা কাজ করেন না। আপনারাও প্রস্তুতি নিন, আগামীবার যাতে আমার আপনাদেরকে সম্মানিত করার সৌভাগ্য হয়। যাঁরা সাফল্যের শীর্ষে উঠবেন, তাঁদের সম্মানিত করার সৌভাগ্য যেন আমার হয়। আপনারা প্রত্যেকেই সাফল্যের শীর্ষে আরোহন করুন।

আপনাদের সকলকে আমার অনেক অনেক শুভকামনা।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

PG/SB/SB



(Release ID: 1838668) Visitor Counter : 173