প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

লোকসভায় রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের ওপর ধন্যবাদ সূচক প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর জবাবি ভাষণ


আমার ভাষণ শুরু করার আগে আমি লতা দিদিকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই; সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে তিনি দেশের একতাকে মজবুত করেছিলেন

আজাদি কা অমৃত মহোৎসব এই সংকল্প গ্রহণের উপযুক্ত সময় যখন আগামী বছরগুলিতে ভারত বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করতে পারে

আমরা এটা বিশ্বাস করি যে, সমালোচনা গণতন্ত্রের এক অভিন্ন অঙ্গ; কিন্তু প্রতি বিষয়ে অন্ধ বিরোধিতা গণতন্ত্রকে উপেক্ষার সামিল

আমরা যদি ভোকাল ফর লোকালের কথা বলি তাহলে কি আমরা মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্নকেই পূরণ করছি না ? বিরোধীরা কেন এবিষয়ে উপহাস করছেন ?

জীবৎকালে এরকম একবারই ঘটা বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময় সমগ্র বিশ্ব ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেছে

মহামারীর সময় ৮০ কোটির বেশি ভারতীয় যাতে নিখরচায় খাদ্যশস্য পান ভারত সরকার তা নিশ্চিত করেছে; কোন ভারতীয়ই যাতে ক্ষুধার্থ না থাকেন তা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকার

ভারতের অগ্রগতির জন্য প্রান্তিক কৃষকদের ক্ষমতায়ন জরুরী; আসলে প্রান্তিক কৃষকরাই ভারতের অগ্রগতিকে আরও দৃঢ় করবেন

পিএম গতি শক্তি এমন এক সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গী যার উদ্দেশ্য হল আমাদের পরিকাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলির সমাধান করা; আমরা তাই উপযুক্ত যো

Posted On: 07 FEB 2022 7:17PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি,  ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

 

সংসদে রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের ওপর প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ লোকসভায় ধন্যবাদ সূচক প্রস্তাবে জবাবি ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শুরু করার আগে ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকরকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, আমার ভাষণ শুরু করার আগে আমি লতা দিদিকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে তিনি দেশের একতাকে মজবুত করেছিলেন। 

প্রধানমন্ত্রী নতুন সংকল্প গ্রহণ এবং দেশ গঠনের কাজে পুনরায় নিজেদের আত্মোৎসর্গ করার জন্য বর্তমান সময়ের গুরুত্ব বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আজাদি কা অমৃত মহোৎসব এই সংকল্প গ্রহণের উপযুক্ত সময়, যেখানে আগামী বছরগুলিতে ভারত বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে কি ধরণের ভূমিকা পালন করতে পারে। এটা সমান সত্য যে ভারত গত কয়েক বছরে অগ্রগতির লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠতে চলেছে। তাই ভারতের কাছে এটা সুযোগ গ্রহণের এক উপযুক্ত সময়। 

প্রধানমন্ত্রী বঞ্চিত ও দরিদ্র মানুষের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, এখন এই শ্রেণীর মানুষ সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে মর্যাদার সঙ্গে নিজেদের নতুন পরিচিতি গড়ে তুলছেন। তিনি বলেন, আগে বাড়িতে রান্নার গ্যাস সংযোগ ছিল আভিজাত্যের পরিচয়। এখন দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষও রান্নার গ্যাসের সংযোগ পাচ্ছেন। আর একারণেই পরিবর্তিত এই পরিস্থিতি সকলের কাছে আনন্দদায়ক হয়ে উঠেছে। প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর বা ডিবিটি-র মাধ্যমে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে... এগুলি সবই নিঃসন্দেহে বড় পরিবর্তন। শ্রী মোদী বলেন, যখন দরিদ্র মানুষ নিজের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে যাওয়ায় খুশি প্রকাশ করেন, তখন তার এই খুশি সমগ্র দেশকে আরও শক্তি যোগায়। নিখরচায় রান্নার গ্যাস সংযোগের ফলে দরিদ্র পরিবারে রান্নাঘরগুলি ধোঁয়া মুক্ত হয়ে উঠেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার গুরুত্বের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী ভারতের কয়েক শতাব্দী প্রাচীন গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দৃঢ় বিশ্বাসী। আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে, সমালোচনা গণতন্ত্রের অপরিহার্য অঙ্গ। কিন্তু প্রতিটি বিষয়ে অন্ধ বিরোধিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে চলা যায় না। মহামারীজনিত পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ঘটনায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। লকডাউনের সময় নীতি-নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল যে, সাধারণ মানুষ যেখানে রয়েছেন সেখানে থেকেই যাবতীয় নীতি-নির্দেশিকা মেনে চলবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে মুম্বাই ও দিল্লি থেকে সেই সমস্ত মানুষকে নিজেদের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে চলে যেতে বলা হয়। এরকম ঘটনার তিনি কড়া সমালোচনা করেন। 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী সার্বিক ভাবে সেই সমস্ত প্রয়াসের প্রতি সমর্থন দেখানোর পরিবর্তে বিরোধীরা যে সংকীর্ণ মনোভাব দেখিয়েছিলেন তার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমরা যদি ভোকাল ফর লোকালের কথা বলি তাহলে কি আমরা মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্নকেই পূরণ করছি না ? বিরোধীরা কেন এবিষয়ে উপহাস করছেন ?  আমরা যোগ চর্চা ও ফিট ইন্ডিয়ার মত প্রয়াস গ্রহণ করেছি। কিন্তু বিরোধীরা এই প্রয়াসেরও উপহাস করেছেন। জীবৎকালে এরকম একবারই ঘটা বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময় সমগ্র বিশ্ব ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী অভিমত প্রকাশ করেন। এক শতাব্দী আগে ফ্লু মহামারীর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ ছিল ক্ষুধা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বর্তমান মহামারীর সময় কোন ভারতীয়ই যাতে ক্ষুধার কারণে মারা না যান, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। এই লক্ষ্যে আমরা এক বৃহৎ সামাজিক সুরক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। তিনি বলেন, মহামারীর সময় ৮০ কোটির বেশি ভারতীয় যাতে নিখরচায় খাদ্যশস্য পান ভারত সরকার তা নিশ্চিত করেছে। কোন ভারতীয়ই যাতে ক্ষুধার্থ না থাকেন তা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকার। 

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, দারিদ্র মোকাবিলাই সর্বোত্তম কার্যকর পন্থা হল প্রান্তিক চাষীদের যাবতীয় উদ্বেগ দূর করা। তিনি পরিতাপ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে প্রান্তিক চাষীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। যারা বহু বছর ধরে দেশের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন এবং যারা প্রাসাদোপম মহলে বাস করে আসছেন তারা এখন প্রান্তিক কৃষকদের কল্যাণের কথা ভুলে গেছেন। এবিষয়ে পরিতাপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের অগ্রগতির জন্য প্রান্তিক কৃষকদের ক্ষমতায়ণ জরুরী। আসলে প্রান্তিক কৃষকরাই ভারতের অগ্রগতিকে আরও দৃঢ় করবেন। 

প্রধানমন্ত্রী নতুন প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া এবং সরকারের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বিশদে বলেন। তিনি উত্তরপ্রদেশে সরয়ূ নাহারের মত দীর্ঘদিন পড়ে থাকা জাতীয় প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান সরকার এই প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করেছে। পিএম গতি শক্তির উদাহরণ দিয়ে শ্রী মোদী বলেন, দেশে পরিকাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলির সমাধানে এক সার্বিক প্রয়াসের অঙ্গ হিসেবেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে শিল্প সংস্থাগুলির লজিস্টিক খাতে খরচ কমবে। প্রধানমন্ত্রী দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসঙ্গ পুনরায় উল্লেখ করেন। এসম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সংজ্ঞায় পরিবর্তন করেছে এবং এই ক্ষেত্রকে সাহায্য দিয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে নতুন মানসিকতা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। এবিষয়ে তিনি বলেন, আত্মনির্ভর হয়ে উঠার ক্ষেত্রে সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি দেশের প্রতিভাবান যুব সম্প্রদায়ের মেধাকে কাজে লাগাতে নতুন নতুন ক্ষেত্র শুরু করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা এটা বিশ্বাস করি না যে, কেবল সরকারই সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমরা দেশের মানুষের এবং দেশের যুব সম্প্রদায়ের ওপর ভরসা করি। তিনি এসম্পর্কে স্টার্ট আপ ক্ষেত্রের উদাহরণ দিয়ে বলেন, দেশে এধরণের সংস্থার সংখ্যা বেড়েছে এবং এরমধ্য দিয়েই সাধারণ মানুষের সক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউনিকর্নগুলির মানোন্নয়ন ঘটেছে বলেও তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যুব সম্প্রদায়, সম্পদ সৃষ্টিকর্তা এবং শিল্পোদ্যোগীদের ভয় দেখানোর নীতিতে আমরা সহমত নই। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, ২০১৪-র আগে দেশে স্টার্ট আপের সংখ্যা ছিল কেবল ৫০০। অবশ্য, দেশে গত ৭ বছরে এই সংখ্যা বেড়ে ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। ভারত ইউনিকর্নের সেঞ্চুরির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্বে স্টার্ট আপ ক্ষেত্রে ভারত তৃতীয় স্থানে পৌঁছেছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগকে উপহাস করা দেশের শিল্পোদ্যোগী ও যুব সম্প্রদায়কে অবজ্ঞা করার সামিল। তিনি আরও বলেন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠা দেশের প্রতি অন্যতম মহান সেবা। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টিকে বিশ্বব্যাপী সমস্যার সঙ্গে জুড়ে অজুহাত হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু আজ ভারত বিশ্বব্যাপী সমস্যা সত্বেও কোন অজুহাত ছাড়াই মুদ্রাস্ফীতিজনিত সমস্যার মোকাবিলা করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্র আমাদের কাছে জীবন্ত আত্মা, যা ক্ষমতায় থাকা বা সরকার পরিচালনার কোন ব্যবস্থা নয়। পুরান এবং সুব্রমণিয়া ভারতীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ভারত এমন এক সর্বব্যাপী ধারণা যেখানে সমগ্র দেশকে জীবন্ত আত্মা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তামিলনাড়ুর মানুষ সদ্য প্রয়াত চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতের প্রতি যে শ্রদ্ধার নিদর্শন রেখেছিলেন, তা ভারতের জাতীয় সহানুভূতির পরিচয় দেয়। 

অমৃত কালের এই পবিত্র সময়ে রাজনৈতিক দল, সাধারণ মানুষ ও যুব সম্প্রদায়কে আরও ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে দেশের উন্নয়নে যোগদান করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ শেষ করেন। 

 

CG/BD/AS/



(Release ID: 1796477) Visitor Counter : 153